প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬

 

দাসী

দীপক সেনগুপ্ত


 “বঙ্গীয় পুরুষ এবং রমণীগণের হৃদয়ে সেবার ভাব জাগাইয়া দেওয়াই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য”- এই ব্রত নিয়ে ‘দাসী’ মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১২৯৯-এর আষাঢ় (১৮৯২ সাল) মাসে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়| প্রতি ইংরাজি মাসের ২১ তারিখে ‘দাসী’ প্রকাশিত হত| বার্ষিক গ্রাহক মূল্য ছিল সডাক একটাকা| ‘দাসী’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার শুরুতেই ‘প্রস্তাবনা’ অংশে পত্রিকার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে সেটা এখানে তুলে দেওয়া হল|
  

   “ বঙ্গসাহিত্য-সংসারে মাসিক পত্রিকার অভাব নাই| এতগুলি মাসিক পত্রিকা থাকিতে আমরা কেন আর একটি ক্ষুদ্র পত্রিকা প্রকাশিত করিতেছি, এই প্রশ্ন সকলেই জিজ্ঞাসা করিতে পারেন| রাজনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য, প্রত্নতত্ত্ব বা বিজ্ঞানের অনুশীলন আমাদের উদ্দেশ্য নয়| বঙ্গীয় পুরুষ এবং রমণীগণের হৃদয়ে সেবার ভাব জাগাইয়া দেওয়াই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য| আমাদের এতাদৃশ দুষ্কর কার্য্যের অনুরূপ শক্তি নাই| আমরা বিশ্বসেবা-ব্রত ধারণের উপযুক্ত নই| কিন্তু সংসারে কেহই অলস ভাবে জীবন যাপন করিবার জন্য সৃষ্ট হন নাই| যাঁহার যতটুকু শক্তি, তিনি ততটুকুই জীবের সেবায় নিয়োজিত করিবেন, ইহাই ভগবানের আদেশ| পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যা-সমাগমে পূর্ণচন্দ্র উদিত হইবা মাত্র অন্ধকার বিদূরিত হয়| কিন্তু তাই বলিয়া তারকাগণ, চন্দ্রালোকে নিষ্প্রভ হইয়া পড়িলেও, নিজ নিজ ক্ষীণরশ্মি বিকীর্ণ করিতে ক্ষান্ত হয় না| জগতের অতি নিকৃষ্ট জীবও বৃথা জীবন ধারণ করে না| তাহার দ্বারাও সংসারে হিত সাধিত হয়| উচ্চাভিলাষ বা যশোলিপ্সা প্রণোদিত হইয়া আমরা এই কার্য্যে হস্তক্ষেপ করি নাই| কেবল এই ভরসায় কার্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছি, যে, যদি ভগবানের কৃপা থাকে, আমাদের ক্ষুদ্রচেষ্টা ফলবতী হইবেই হইবে|
    “বর্ত্তমানে বঙ্গদেশকে দুঃখের জলধি বলিলেও অত্যুক্তি হয় না| দেশে দুর্ভিক্ষ ত লাগিয়াই আছে| অনাহারক্লিষ্ট নরনারীর জন্য, কাহার প্রাণ না কাঁদে? এই বর্ষার দিনে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইলে যখন প্রকৃতির মুখ বিষাদগম্ভীর হইয়া উঠে, তখন কোন সহৃদয় ব্যক্তির প্রাণে শত শত নিরাশ্রয় নরনারীর বিষাদের ছায়া পতিত না হয়? ইহার উপর আবার জ্বর, বসন্ত, বিসূচিকা প্রভৃতির উপদ্রবে জনসাধারণ ব্যতিব্যস্ত| অনেক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা এবং শুশ্রূষার অভাবে কোন কোন গ্রাম অধিবাসিশূণ্য হইয়া পড়ে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না| তাহার পর গ্রীষ্ম ঋতুতে বর্ষে বর্ষে ‘জল!’ ‘জল!’ এই যে তৃষ্ণার্ত্তের আর্ত্তনাদ আকাশ ভেদ করিয়া উঠে, ইহার কি আর বিরাম হইবে না? দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং জলকষ্টের কথা ছাড়িয়া দিলেও দেখা যায় যে বঙ্গদেশে দুঃখের অভাব নাই| দরিদ্রা বহুসন্তানবতী বিধবা জননীর ক্লেশ , অর্থহীন বিদ্যার্থীর মনোবেদনা, দুরারোগ্য পীড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির নৈরাশ্য ও রোগযন্ত্রণা, মহানগরীতে অসহায় পীড়িত ব্যক্তিগণের দুর্দ্দশা, প্রভৃতি, - অস্মদ্দেশে এই সকলের নূতন করিয়া পরিচয় দিতে হইবে না| তাহার পর, সহস্র সহস্র বঙ্গীয় যুবক এবং প্রৌঢ় ব্যক্তিগণের নৈতিক অধোগতির কারণ পানদোষ এবং ব্যভিচারের নিয়ত-প্রবহমান স্রোতে কত নর-নারীর, কত পরিবারের সুখ শান্তি ভাসিয়া যাইতেছে, ইহা ভাবিলেও হৃদয় অবসন্ন হইয়া পড়ে| কোন সরলপ্রাণা রমণীর একবার পদস্খলন হইলে, কে তাহার প্রতি করুণা প্রদর্শন করে? কে তাহাকে অনন্ত করুণাময়ী বিশ্বজননীর অপার দয়ার কথা বলে? সে ক্রমেই গভীর হইতে গভীরতম পাপপঙ্কে নিমগ্ন হইতে থাকে|
     “দুঃখময় বঙ্গদেশে সেবা কথাটি নূতন নহে| অপর দেশের কথা জানি না, কিন্তু মনে হয় বুঝি বা বঙ্গকুলললনাগণ, বিশেষতঃ বঙ্গবিধবাগণ অপেক্ষা করুণাময়ী সেবাপরায়ণা রমণী জগতে আর নাই| নানা কারণে তাহাদের কার্য্যক্ষেত্র পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে, কিন্তু তাহা হইলেও তাঁহাদের অনেকেরই জীবনে সেবাব্রত-মাহাত্ম্যের সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়| বঙ্গদেশের নর-নারীগণ এই সেবাপরায়ণা মহিলাগণেরই ত পুত্র কন্যা ভ্রাতা ভগিনী? তাঁহাদের চক্ষের সম্মুখে দুঃখ-দারিদ্র্যের চিত্র প্রসারিত করিলে নিশ্চয়ই তাঁহাদের হৃদয় দ্রবীভূত হইবে| মতুবা ‘দাসী’র এমন কি শক্তি আছে যে উল্লিখিত দুঃখরাশি অপসারিত করে? ‘দাসী’ কেবল সকলকে স্মরণ করাইয়া দিবে যে সংসারে দুঃখীর অভাব নাই, দয়াবৃত্তি পরিচালনের যথেষ্ট প্রয়োজন এবং সুযোগ আছে| ‘দাসী’ নিজ শক্তি অনুসারে মানব-সেবা-ব্রতে নিযুক্ত থাকিবে| সকলকে দুঃখীর জন্য অন্ততঃ অশ্রুপাত করিয়াও এই ব্রত পালন করিতে বলিবে| বিলাসিতা ও স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে স্বার্থপর করিয়া ফেলে| বিলাসী সুখশয্যায় শয়ন করিয়া মোহাবেশে নিজ প্রতিবেশীর আর্ত্তনাদ শুনিতে পান না| ভগবান ‘দাসী’র মস্তকে কৃপাবারি বর্ষণ করুন| ‘দাসী’ যেন এই মোহনিদ্রা ভাঙ্গিয়া দিতে সমর্থ হয়।”  

     দরিদ্র ও দুঃস্থ মহিলাদের সাহাযার্থে ‘দাসাশ্রম’ নামে একটি আশ্রম স্থাপিত হয় ১৮৯১ সালের ২৭শে জুন| দাসাশ্রমের সেবক ও সেবিকারা নিজেদের ‘দাস’ এবং ‘দাসী’ বলিতেন। এই আশ্রমেরই মুখপত্র হিসাবে ‘দাসী’ প্রকাশিত হয়| ‘দাসাশ্রম’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়| ১৩৫০ অগ্রহায়ণ সংখ্যার ‘প্রবাসী’তে রামানন্দ-কন্যা শান্তা দেবী লিখেছেন – “এখন কলিকাতায় যে আতুরাশ্রম আছে, ইহার প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল প্রায় ৫৫ বৎসর আগে। কয়েকটি ব্রাহ্ম ভদ্রলোক ও তাঁহাদের পত্নীরা নিজেরা পথের ধার হইতে রুগ্ন মরণাপন্ন লোকদের কুড়াইয়া আনিয়া একটি গৃহে আশ্রয় দিতেন এবং নিজেরাই তাহাদের সেবা করিতেন।...... এই আশ্রমটির নাম ছিল দাসাশ্রম।... এই দাসাশ্রমের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পিতৃদেব। প্রথম প্রথম ভিক্ষালব্ধ অর্থেই ইহার ব্যয় চলিত। ক্রমে একটি চিকিৎসালয় হইল, তাহার আয় ইহারই কাজে লাগিত। তাহার পর হইল “দাসী” মাসিক পত্রিকা।”
     অন্য একটি প্রবন্ধে শান্তা দেবী জানিয়েছেন –

“ ‘দাসী’র সূচনার পূর্ব্বেই রামানন্দ মানবসেবাব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন। নিজ জীবিকার ব্যবস্থা হইবার আগেই জনহিতের নানা কল্পনা ও কাজ তাঁহাকে দিবারাত্রি মাতাইয়া রাখিত। একটি কোন আশ্রম কিম্বা ‘কুলি সংরক্ষিণী সভা’ খুলিবার ইচ্ছা ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দে নিঃসম্বল অবস্থাতেই তাঁহার মনে ঘুরিতেছিল। ...... কলিকাতার দাসাশ্রম প্রথম দিকে পতীতা রমণীদের কন্যাদের উদ্ধারের ভারও গ্রহণ করেন। তাঁরা স্থির করেন এরকম কয়েকটি বালিকাকে সেখানে রাখিয়া নানা শিক্ষা দেওয়া হইবে এবং সেই বাড়ীতেই কয়েকটি রোগী রাখিয়া বালিকাগুলিকে সেবাধর্ম্মের উপযোগী করিয়া গড়িয়া তোলা হইবে। কিছুদিন পরে দেখা গেল আইনের মারপ্যাঁচে এই বালিকাদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কাজেই উদ্ধার কমিটি উঠিয়া গেল।”

     সিটি কলেজের অধ্যাপক ও সেবাব্রতী রামানন্দ তার নিজের বেতনের অধিকাংশই দান করতেন আশ্রমে| সংস্থাটির আদর্শ প্রচার এবং অর্থ সংগ্রহ করার লক্ষ্যে মূলতঃ রামানন্দের পরিকল্পনাতেই পত্রিকাটির জন্ম| সমাজ সংস্কার ও ধর্মভাব নিয়ে দরিদ্রদের সেবা করার নীতির সমর্থনে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে| তবে পত্রিকাটিতে শুধু যে সেবাধর্মী রচনা প্রকাশিত হত তা নয়| উপন্যাস, জীবনী, গল্প ও ধর্ম বিষয়ক রচনাও পত্রিকাটিতে স্থান পেত| রামানন্দ নিজে বহু লেখা ‘দাসী’তে লিখেছেন| শান্তা দেবীর ভাষায় – “পুরা প্রথম ও দ্বিতীয় বৎসরের অর্দ্ধেক সময় ‘দাসী’র অধিকাংশ লেখা সম্পাদক স্বয়ং লিখিতেন। গল্প এবং কবিতাও তিনি মাঝে মাঝে লিখিয়াছ্বন। একজন পুরাতন সেবক বলেন,

“ ‘দাসী’র তিন-চতুর্থাংশ লিখিতেন রামানন্দবাবু আর এক-চতুর্থাংশ ইন্দু বাবু [দাসাশ্রমের কর্মী ও সাধক ইন্দু ভূষণ রায়] ।”

   ‘দাসী’র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলে – ‘প্রস্তাবনা’, ‘দাসীর আকিঞ্চন’, ‘সেবালয় - বিধুর মা (সত্য ঘটনা)’, ‘দাসাশ্রমের প্রথম বার্ষিক কার্য্যবিবরণ’, ‘দীর্ঘজীবন লাভ’, ‘একটি সৎকার্য্য’, ‘ভিক্ষার ব্যবস্থা’, ‘শিক্ষারম্ভের বয়স’, ‘বিবিধ’ ও ‘ভাই একবার হরিনাম লও না’| প্রথম সংখ্যায় লেখা রয়েছে – “৫/১ মহেন্দ্র গোস্বামীর লেন হইতে শ্রীমৃগাঙ্কধর রায়চৌধুরীর কর্ত্তৃক প্রকাশিত; ১৭নং রঘুনাথ চাটুয্যের ষ্ট্রীট, ‘মণিকা যন্ত্রে’ শ্রীহরিপদ পাল দ্বারা মুদ্রিত।” প্রকাশক পরে পরিবর্ত্তিত হয়েছে| বাংলা বিহার আসাম ও উড়িষ্যা সহ পত্রিকার প্রচার সংখ্যা চার হাজার ছিল বলে জানা যায়।     

    “কেবল সেবাধর্ম্ম ও জনহিতৈষণার কথায় সাধারণ মানুষের আনন্দ হয় না এবং গ্রাহক সংখ্যা ইচ্ছামত বৃদ্ধির আশা করা যায় না। এই জন্য দেড় বৎসর পরে স্থির হয় যে ‘দাসী’তে উপন্যাস, কবিতা, বৈজ্ঞানিক কথা, পুরাতত্ত্ব, পুস্তক-সমালোচনা প্রভৃতি নানা বিষয়ে লেখা বাহির হইবে।”  সময়ের সঙ্গে ‘দাসী’র যখন কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে, তখন লেখক হিসাবে অনেকেই এতে লিখেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জলধর সেন, দীনেন্দ্রকুমার রায়, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, দীনেশচন্দ্র সেন, হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, রাজনারায়ণ বসু, যোগীন্দ্রনাথ বসু, সখারাম গনেশ দেউস্কর, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখেরা|  জগদীশ চন্দ্র বসুর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ ‘দাসী’-তেই প্রথম প্রকাশিত হয়| বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস ‘সীতারাম’ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’র সমালোচনা, মধুসূদনের মেঘনাদ বধ কাব্য ও ‘রবিবাবুর চৈতালী সমালোচানা’ও ‘দাসী’তে প্রকাশিত হয়েছিল| জনসাধারণের মনে সেবার ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে কুমারী ডিন, কেট মার্সডেন, ফ্লরেন্স নাইটিঙ্গেল, ভগিনী ডোরা, গ্রেস ডার্লিং, এলিজাবেথ ফ্রাই প্রভৃতি পাশ্চাত্যের সেবাপরায়ণা মহিলাদের জীবনী প্রথম বছর থেকেই পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে।

পত্রিকাটি সম্বন্ধে সম্পাদক লিখেছেন:

“ দাসী তে যাহা কিছু প্রকাশিত হয়, তন্মধ্যে কেবল দাসাশ্রমের মাসিক কার্যবিবরণ এবং দাসাশ্রম ঘটিত অন্যবিধ সংবাদ, প্রার্থনাদির জন্যই দাসাশ্রম দায়ী| আর যাহা কিছু লিখিত হয়, তন্মধ্যে যিনি যাহা লিখেন, তজ্জন্য তিনিই দায়ী| সম্পাদক কেবল নিজের লেখার জন্যই দায়ী| দাসাশ্রম সম্পাদকীয় কোনও মতামতের জন্যও দায়ী নহেন| কারণ কোন বিষয়ে কোন বিশেষ মত প্রচার দাসাশ্রমের উদ্দেশ্য নয়| কেবল সেবাধর্ম্মের প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ইহার অন্যতম উদ্দেশ্য| ........  ১৮৯৩ সালের নভেম্বর (?) মাসের ‘দাসী’তে আমরা একটি প্রবন্ধে এই কথা লিখিয়াছিলেম যে, অতঃপর ‘দাসী’তে জনহিতৈষণা ব্যতীত অন্যবিষয়ক প্রবন্ধাদিও থাকিবে| সুতরাং তদবধিই ‘দাসী’তে নানাবিধ প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়া আসিতেছে।”

সেবামূলক কাজে স্বার্থহীন ভাবে আত্মনিয়োগের জন্য দাসাশ্রম এবং ‘দাসী’ সমাজে যথেষ্ট    সম্মান লাভ করেছিল। ড: মহেন্দ্রলাল সরকারের মত লব্ধপ্রতিষ্ঠ নামী চিকিৎসকও দাসাশ্রমের সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন। সভায় বক্তাদের মধ্যে অন্যান্যদের সঙ্গে রাসবিহারী ঘোষ, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত স্বনামধন্য ব্যক্তিরাও ছিলেন।  

‘দাসাশ্রম মেডিকেল হল’ নামে আশ্রমের একটি ঔষধালয়ও ছিল| ঋণ নিয়ে ঔষধালয়টি স্থাপন করা হয়েছিল| ওষুধ বিক্রির লাভ থেকে ঋণ পরিশোধ করে বাকি অংশ আশ্রমের আয় হিসাবে দেখান হত| এ ছাড়া বেশ কয়েকটি সেবাশ্রম ছিল মফস্বলের বিভিন্ন অঞ্চলে|

পূর্ববঙ্গের দুর্ভিক্ষে সাহায্য প্রার্থনা করে ‘দাসী’তে প্রকাশিত আবেদনে সাড়া দিয়ে কয়েকজন তাদের সাধ্যমত দান পাঠিয়েছিলেন। ১৮৯৩ অক্টোবর সংখ্যার পত্রিকায় ‘পূর্ব্ববঙ্গে দুর্ভিক্ষ’ নামে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে তার প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে এবং নতুন করে দান পাঠাতে আবেদনও করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি ছিল -

“আমাদের প্রার্থনানুসারে পূর্ব্ব বঙ্গের দুর্ভিক্ষের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ আমাদের কাছে কিছু অর্থ পাঠাইয়া দিয়াছেন। আমরা তাহা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের কাছে পাঠাইয়া দিয়াছি। যিনি যাহা দিবেন, তাহা সত্বর আমাদের কাছে পাঠাইয়া দিবেন। আমরা ‘দাসী’তে রীতিমত প্রাপ্তিস্বীকার করিব। - বাবু জগন্নাথপ্রসাদ গুপ্ত নসীপুর দু’টাকা, শ্রীমতী কুন্দকুমারী গুপ্তা ঐ দশ টাকা, সরস্বতী বিবি এক টাকা, তিনটি মহিলা কলকাতা চার আনা, গরিব হিতসাধিনী সভা পাঁচ টাকা।”  

পত্রিকার মূল্য নিয়মিত পরিশোধ না করাটা বহু ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। অনেক পত্রিকাতেই মূল্য পাঠিয়ে দিতে একাধিকবার গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়েছে। ‘দাসীর’ ক্ষেত্রেও এর অন্যথা দেখা যায় নি। ‘নিবেদন’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি ছিল –

“  ‘দাসী’র গ্রাহক এবং গ্রাহিকাবর্গের নিকট আমাদের এই প্রার্থনা, যেন তাঁহারা অবিলম্বে ‘দাসী’র বর্ত্তমান বর্ষের প্রাপ্য টাকা পাঠাইয়া আমাদিগকে বাধিত ও উপকৃত করেন। যে সকল গ্রাহক মহোদয়ের নিকট সাবেক চাঁদা বাকি আছে, তাঁহারাও যেন এ সময় উক্ত ঋণ পরিশোধে আর উদাসীন না থাকেন। ‘দাসী’র ন্যায় একটি মাসিক পত্রিকা পরিচালনা করা যে কত ব্যয়সাপেক্ষ, তাহা সকলেই অবগত আছেন। ‘দাসী’র নিয়মিত প্রকাশ সম্বন্ধে আমরা কিরূপ যত্ন ও পরিশ্রম করিতেছি, তাহা সকলেই বুঝিতে পারিতেছেন। আশা করি, পূজার পূর্ব্বেই ‘দাসী’র বাবতে প্রাপ্য যাবতীয় টাকা প্রদান করিয়া আমাদিগকে অনুগৃহীত করিবেন।  - শ্রীসুশীলচন্দ্র বসু, ‘দাসী’ কার্য্যাধ্যক্ষ। ৭২!১!১ মুক্তারাম বাবুর ষ্ট্রীট, কলিকাতা।”

একই বিষয়ে ১৮৯৩-এর সেপ্টেম্বর সংখ্যায় লেখা হয়েছে –

“ ‘দাসী’র কোন কোন গ্রাহক দ্বিতীয় বৎসরের টাকার জন্য তাগিদ দেওয়ায় তাঁহারা বলিতেছেন এখনও ত দ্বিতীয় বৎসর শেষ হয় নাই, ইহার মধ্যেই এক টাকা পাওনা হইল কিরূপে ? তাঁহাদের পত্রের উত্তরে আমাদের বক্তব্য এই যে, ‘দাসী’র মূল্য অগ্রিম দেয়। দ্বিতীয় বৎসরের তিন সংখ্যা পাইয়াছেন, এখন ত সকলেরই টাকা দেওয়া উচিত। কোন কোন গ্রাহক দ্বিতীয় বৎসরের ২ সংখ্যা পাইয়া তাহার পর কাগজ ছাড়িয়া দিয়াছেন, অথচ ঐ দুই বৎসরের মূল্য দেন নাই। দাসাশ্রমকে এইরূপে ক্ষতিগ্রস্ত করা কখনই উচিত নয়। কাগজ ছাড়িয়া দিতে ইচ্ছা করিলে আমাদের সমস্ত পাওনা শেষ করিয়া দেওয়া উচিত।”

 একশ তেইশ বছর আগেও মনুষ্য চরিত্রের কিছু কিছু দিক একই রকম ছিল।  

‘দাসাশ্রমের মাসিক কার্য্যবিবরণ’ ‘দাসী’তে নিয়মিত প্রকাশিত হত। এই বিবরণিতে যে সব রোগীদের চিকিৎসা করা হত তাদের সম্বন্ধে বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন –

“ দাসাশ্রমের চিকিৎসা প্রধানতঃ হোমিওপ্যাথী মতেই হইয়া থাকে। আবশ্যক হইলে অ্যালোপ্যাথী ও কবিরাজীর সাহায্য লওয়া হয়। রোগ, চিকিৎসা ও ঔষধ সম্বন্ধীয় মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নহেন।”

রোগীদের কথা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল যথেষ্ট বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে কয়েকটি বিবরণ তুলে দেওয়া হল।

“ রাদু – একটি আশ্রয়হীনা বিধবা রমণী। ভিক্ষা করিয়া আহার সংগ্রহ করিত, ও নাটুবাবুর বাজারের নিকট পড়িয়া থাকিত। ইহার বয়স ৩৫ বৎসর, জাতিতে উগ্রক্ষত্রিয়, বাড়ী বালেশ্বর জেলা। বাতে প্রায় চলৎশক্তি বিহীন হইয়া পড়িয়াছিল ও জ্বরে কাঁপিতেছিল। এমন সময় একজন দাস তাহাকে দেখিতে পাইয়া সেবালয়ে আনয়ন করেন, ও তাহার রীতিমত চিকিৎসা আরম্ভ করা হয়। রোগী আফিং খাইত ও গুলি খাইত, তথাপি চিকিৎসা ও সেবায় রোগী জ্বর-শূণ্য হয়। আমাদের ইচ্ছা ছিল যে তাহাকে একটু সবল করিয়া ছাড়িয়া দিব, কিন্তু জ্বর থাকিতে থাকিতেই একদিন পলায়ন করিয়া বৃষ্টিতে ভিজিয়া গুলি খাইতে যায়। তাহাতে জ্বর ও বাত বৃদ্ধি পায়। জ্বর মুক্ত হইয়াও একদিন ভিজিতে ভিজিতে গুলি খাইতে পলাইয়া যায়। এইজন্য তাহাকে দুর্ব্বল অবস্থাতেই বিদায় দেওয়া হয়। সর্ব্বশুদ্ধ সে ১১ দিন সেবালয়ে ছিল।” (শ্রাবণ ১২৯৯)।

“ কৃষ্ণ মালী – আসামের ফেরত কুলি। ইহার দুর্দ্দশার কথা কে বর্ণন করিবে? ভয়ঙ্কর উদরাময় রোগে অন্ত্রসকল পচিয়া বাহির হইতেছিল। হতভাগ্য উড়িষ্যাবাসীকে কোন নৃশংস ব্যক্তি কুলি করিয়া চালান দিয়াছিল। এখন মুমুর্ষু অবস্থায় কি জানি কোথা হইতে সেবালয়ের দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইল। ডাক্তার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্য মহাশয় অনেক চিকিৎসা করিলেন, কিন্তু কোন ফলোদয় হইল না। হতভাগ্যের পিতামাতা দেশে আছে। সে কাতরকন্ঠে “মা” “মা” “বাবা” “বাবা” রব যাহার কর্ণে গিয়াছে, সেই বিগলিত হইয়াছে। বেলা একটার সময় দারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করিয়া মানবলীলা সম্বরণ করিল। ইহার পিতামাতার ঠিকানা পর্যন্ত বলিতে পারে নাই সুতরাং তাহাদিগকে সংবাদ দেওয়া হইল না। ভগবান ইহার আত্মার কল্যাণ করুন।”  (জ্যৈষ্ঠ ১৩০০)।

“ কামিনী(২) – নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলের শিক্ষক বাবু গিরিশচন্দ্র মিত্র মহাশয় ইহাকে রাস্তা হইতে উঠাইয়া লইয়া আসেন। ইহার নিবাস তারকেশ্বরের নিকটবর্ত্তী মজিলপুর গ্রামে। তথায় তাহার ভগিনী ও ভগিনীপতি আছে। অবস্থা দেখিয়া স্পষ্টই বুঝা গেল যে হতভাগিনী দাসীবৃত্তি করিত এবং অসচ্চরিত্রা ছিল। বয়স ২৪!২৫ হইবে। ডাক্তার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্য পরীক্ষা করিয়া বলেন যে তাহার যক্ষা হইয়াছে, আরোগ্য লাভের আশা নাই। রোগ সংক্রামক বলিয়া পাছে অপর রোগীদের অনিষ্ট হয়, এই জন্য আমরা যক্ষারোগীদিগকে সেবালয়ে লইতে পারি না। যদি কখনও সেবালয়ের গৃহ হাঁসপাতালের মত স্বাস্থ্যকর করিয়া নির্ম্মাণ করিতে পারা যায়, তখন আমরা সর্ব্ববিধ রোগী লইতে পারিব। বর্ত্তমানে অপরাপর যাক্ষারোগীদের ন্যায় ইহাকেও হাঁসপাতালে পাঠাইবার বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু হাঁসপাতালে যাইতে অস্বীকার করাতে ও মৃত্যু সময়ে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে থাকিবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করায়, আমাদের একজন সহায় তাহাকে দেশে রাখিয়া আসেন। গিরিশ বাবু অনুগ্রহ করিয়া তাহার খরচ দান করেন।”  (জ্যৈষ্ঠ ১৩০০)।

‘দাসী’ সম্বন্ধে সমকালীন সংবাদপত্রের মতামত কি ছিল ? এখানে কিছু নমুনা দেওয়া হল।

“বিগত জুবিলি উপ্লক্ষে অনেক মকাসিক ও সাপ্তাহিক পত্র উজ্জ্বল আকারে বাহির হইয়াছে। উহাদের মধ্যে সখ-সাথী ও দাসী বিশেষ প্রশংসার যোগ্য। বহু চিত্র ও উৎকৃষ্ট মুদ্রাঙ্কনে এই দুই পত্র পরম রমণীয় হইয়াছে, আবার ভিতরের লেখাও সেইরূপ সুন্দর হইয়াছে। বাহ্যিক আকারে দর্শন ও ভিতরের লেখা পাঠ এই উভয়েই আমরা তুল্য আনন্দ পাইয়াছি। আমরা এইস্থলে বলিতে বাধ্য যে চিত্র মুদ্রাঙ্কনে মুকুল, সখ-সাথী ও দাসী ভারতীয় মুদ্রাঙ্কনে যুগান্তর উপস্থিত করিয়াছেন। ভারতে এরূপ সুন্দর মুদ্রিত চিত্র পূর্ব্বে কেহ কখন দেখেন নাই। এই কারণে উপরোক্ত পত্রগুলির উদ্যোগী পরিচালকগণ পাঠক সাধারণের বিশেষ ধন্যবাদের পাত্র।”   (‘সময়’)।

“দাসী – জুন ১৮৯৭। জুবিলি সংখ্যা সচিত্র। ছবি গুলি ভাল। লেখা উত্তম। দাসী এই কয়েক মাসে অনেক উন্নতি লাভ করিয়াছে।”    (‘এডুকেশন গেজেট’)।

বিভিন্ন মাসিকপত্রেও ‘দাসী’র সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত ‘সাহিত্য’ ছিল একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা। এতে প্রকাশিত দুটি সমালোচনা দেখা যাক।

“ দাসী।–জুন। “স্বর্গীয় ভূদেব মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে দুই চারিটি কথা”  শ্রীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ বসুর রচনা। প্রবন্ধটি সুখপাঠ্য ও শিক্ষাপ্রদ হইয়াছে। “কালীকৃষ্ণ মিত্র” প্রবন্ধটি একবার “ধর্ম্মবন্ধু”তে প্রকাশিত হইয়াছিল। কালীকৃষ্ণ বাবুর জীবন উপদেশপূর্ণ বলিয়া কিঞ্চিৎ পরিবর্ত্তন করিয়া আবার দাসীতে প্রকাশ করা ভাল হয় নাই।”  (‘সাহিত্য’, শ্রাবণ ১৩০১)।

“ দাসী। চতুর্থ ভাগ, প্রথম সংখ্যা; জানুয়ারী। দাসী এই বৎসর হইতে বর্দ্ধিত ও পরিবর্ত্তিত আকারে প্রকাশিত হইতেছে। আমরা সর্ব্বান্তঃকরণে “দাসী”র ক্রমোন্নতি প্রার্থনা করি। দাসীর প্রথম প্রকাশসময়ে ইহাতে কেবল সেবাব্রতবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হইত ;-সুতরাং দাসীর একটু বিশেষত্ব ছিল। কিন্তু এক্ষণে আর সে বিশেষত্ব রক্ষিত হইতেছে না। দেশে বিবিধ বিষয়ক মাসিক পত্রের অভাব নাই, কিন্তু লোকসেবাবিষয়ক সাহিত্যের আমাদের বিশেষ অভাব। এরূপ অবস্থায়, দাসী সাধারণ মাসিক পত্রের দলভুক্ত হইয়া ভাল করিলেন, বলা যায় না। আশা করি, সম্পাদক মহাশয়, সেবাব্রতকেই দাসীর প্রধান আলোচ্য করিয়া দেশের ও সাহিত্যের একটি গুরুতর অভাব মোচন করিবেন। শ্রীমতী বিনয়কুমারী ধরের “নির্ব্বাসিতা” একটি কবিতা। আরম্ভটি যেমন সুন্দর, উপসংহার তেমন হয় নাই। শ্রীযুক্ত অপূর্ব্বচন্দ্র দত্ত “জীবনচরিত” প্রবন্ধে, জীবনচরিত কিরূপে সঙ্কলিত করিতে হয়, সে সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন। “লাভেরিয়ে”, “দানব ও মানব” এবং “কীটসের কবিতা”, এই তিনটি প্রবন্ধও উল্লেখযোগ্য। (‘সাহিত্য’, ফাল্গুন ১৩০১)।

‘দাসী’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল আষাঢ় ১২৯৯ বঙ্গাব্দে। ১৩০০-এর জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বাংল মাস ধরেই পত্রিকা বেরিয়েছে ; কিন্তু এর পরেই পত্রিকার দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাস থেকে। এই পরিবর্তনের হয় ত কোন কারণ ছিল, কিন্তু এর কোন ব্যাখ্যা চোখে পড়ে নি। ১৮৯৭-এর মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসের মিলিত ভাবে একটি সংখ্যা বেরিয়েছে। এর পরে জুন সংখ্যাটি ছিল ‘হীরক জুবিলী’ সংখ্যা। “রাজরাজেশ্বরী ব্রিটিস সাম্রাজ্যেশ্বরী ভিক্টোরিয়ার ষষ্টিবর্ষ” পূর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। ‘আমাদের মহারাণী’ শীর্ষক এক দীর্ঘ রচনার পরে রয়েছে ভিক্টোরিয়া যুগের উন্নতির খতিয়ান ও প্রশস্তি। এজন্য সম্পাদককে অনেক প্রতিকূল সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় প্রকাশিত এরকম একটি সমালোচনার ঝাঁঝালো উত্তর প্রকাশিত হয়েছে ‘দাসী’র ১৮৯৭ আগষ্ট সংখ্যার ‘প্রাপ্ত গ্রন্থের সমালোচনা’ বিভাগে।

সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকা ও গ্রন্থের সমালোচনাও ‘দাসী’তে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। শেষের দিকে কিছুদিন গোবিন্দচন্দ্র গুহ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন বলে জানা যায়। যথেষ্ট আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা সত্বেও পত্রিকাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। ‘দাসী’র শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১৮৯৭-এর ডিসেম্বর মাসে।

চিত্র পরিচয় :



চিত্র ১ : পত্রিকার একটি আখ্যাপত্র।



চিত্র ২ : ‘দাসী’র একটি সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার প্রতিলিপি।


চিত্র ৩ : পত্রিকায় ‘ড্রপ লেটারে’র একটি নিদর্শন। প্রসঙ্গতঃ ‘ড্রপ লেটারে’র প্রথম ব্যবহার হয় ‘বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ’ পত্রিকায়।
এই রীতিতে কোনো রচনার শুরুর প্রথম অক্ষরটি বড় করে মুদ্রিত হয় ও অলঙ্কৃত থাকে। এখানে প্রথম অক্ষরের পরিবর্তে
প্রথম শব্দটিই ‘ড্রপ লেটারের’ রীতিতে মুদ্রিত হয়েছে। 



চিত্র – ৪ : ১৮৯৪-এর ৩রা আগষ্ট সংখ্যায় প্রকাশিত একটি ছবি। ছবিটি ‘কাঠ খোদাই’ করা ব্লকের দ্বারা মুদ্রিত।
কাঠে খোদাই করে কি নিঁখুত ভাবে তাজমহলের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেখে বিস্মিত হতে হয়। জলে
প্রতিফলিত ছায়াটিও লক্ষণীয়। ছবিটি বড় করে দেখলে খুঁটিনাটি আরও বিশদ ভাবে চোখে পড়বে।



চিত্র – ৫ : ১৮৯৭ অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন।  



লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর ( IIEST,shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।