প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

অক্টোবর ৩০, ২০১৬

 

হিতকরী

দীপক সেনগুপ্ত


কাঙাল হরিনাথের (হরিনাথ মজুমদার) উদ্যোগে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ মাসিক পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১২৭০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ (১৮৬৩ এপ্রিল) মাসে অবিভক্ত নদীয়া জেলার কুমারখালি (বর্তমানে কুষ্ঠিয়ায়) গ্রাম থেকে। সে সময়ে শহরাঞ্চলেই শিক্ষার হার ছিল খুব কম, গ্রামাঞ্চলের অবস্থা না বলাই ভাল। অশিক্ষা, কুসংস্কার, দারিদ্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সাধারণ লোকের অবস্থা ছিল শোচনীয়; এর উপর ছিল জমিদার ও খাজনা আদায়কারীদের অত্যাচার। নিপীড়িত মানুষ ও প্রজাদের করুণ আর্তনাদ অনেক সময়েই ইংরেজ শাসকবর্গের কর্ণগোচর হত না, হলেও অনেক সময়ে প্রতিকারের চেষ্টা ছিল না। সাধারণ লোকের বঞ্চনা ও অত্যাচারের সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করতে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ ছিল অকুতোভয়। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় –

“ইহার [পত্রিকার] অভ্যুদয়ে পূর্ব্বে ধনবানাদি সবল লোকেরা দুর্ব্বলের প্রতি প্রকাশ্যরূপে সহসা যে প্রকার অত্যাচার করিতেন, তদ্রূপ করিতে সাহসী হইতেন না।”

তবে অত্যাচারের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে পত্রিকাটি “পল্লীবাসীদের যতদূর উপকার সাধন করিয়াছিল, আমি ততদূর অত্যাচারী লোকদের বিষনেত্রে পড়িয়া নানা প্রকারে উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত হইতে লাগিলাম” –একথা হরিনাথ নিজেই জানিয়েছেন। একথা এখন আর অজানা নয় যে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রজা শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মহর্ষির লেঠেলদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণসংশয় হয়েছিল হরিনাথের। সে সময়ে সে গ্রামেরই স্বনামধন্য ব্যক্তি লালন সাঁই তার দলবল নিয়ে হরিনাথের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ বন্ধ হয়ে গেলে দরিদ্র গ্রামবাসী প্রজাদের আর্তি ও দুঃখের কাহিনী প্রকাশ্যে তুলে ধরার মত কোন সংবাদ মাধ্যম সে সময়ে তেমন ছিল না। কেউই জমিদার ও শাসকবর্গকে চটাতে চাইত না। গ্রামবার্ত্তার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে এবং এই পত্রিকারই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রকাশিত হয় আর একটি দরিদ্র-বান্ধব ও লোকহিতকর পত্রিকা ‘হিতকরী’। ‘হিতকরীর’ প্রকাশ যার চেষ্টায় সফল হয়েছিল সেই মীর মুশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১১) ছিলেন একজন নামকরা ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও লেখক। তাকে বলা হয়েছে ‘নব্য-উত্থিত মুসলিম মধ্যশ্রেণীর সাংস্কৃতিক মুখপাত্র।’ বিখ্যাত উপাখ্যান ‘বিষাদ-সিন্ধু’ তারই অমর কীর্তি। তার অপর একটি উল্লেখযোগ্য রচনা ‘জমিদার দর্পণ’ নামক নাটক। মুক্তমনের অধিকারী এই সাহিত্যিক ছিলেন সম্পূর্ণরূপে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। তার সাংবাদিক জীবনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’র সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬) ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায় ।

পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা সম্বন্ধে বলার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জেনে নেওয়া ভাল। ‘হিতকরী’র প্রথম প্রকাশ ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১৫ই বৈশাখ। এটি প্রথমে ছিল একটি পাক্ষিক পত্রিকা। ১ম ভাগ ১ম সংখ্যায় বলা হয়েছে –“ হে! অনন্তশক্তি সম্পন্ন করুণাময়, কৃপাময়, ভববন্ধু ভগবান! তোমারই অনন্তগুণ আশ্রয় ও সহায় করিয়া হিতকরী ১২৯৭ সালের ১৫ই বৈশাখ প্রকাশ হইল। তুমিই রক্ষক, তুমিই প্রতিপালক। জীবনমরণ সকলই তোমার হস্তে। যাহা তোমার ইচ্ছা।” উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে –

“সকলের হিতকথা, যাহাতে সর্ব্বসাধারণের হিতের আশা থাকে, সেই সকল কথাই হিতকরীতে প্রকাশ হয়। জাতিগত, কি ধর্ম্মগত কোন পক্ষকে লক্ষ্য করিয়া কিছু প্রকাশ হয় না।” বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায় –“হিতকরী একখানি পাক্ষিক সংবাদ পত্রিকা। কুমারখালী মথুরানাথ যন্ত্রালয় হইতে প্রকাশিত। মূল্য মায় ডাকমাশুল বার্ষিক দু’টাকা। প্রতি মাসের ১৫ই আর সংক্রান্তির দিনে প্রকাশ হয়। ...... এজেন্টগণ নিকট ও হিতকরী আপীষ ঠিকানায় মূল্য পাঠাইলেই হিতকরী পাওয়া যায়।”

‘হিতকরী’ প্রকাশিত হত কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া থেকে, মুদ্রাকর ছিলেন রজনীকান্ত ঘোষ ও প্রকাশক দেবনাথ বিশ্বাস। সম্পাদকের নাম প্রকাশিত হত না। পত্রিকায় অনেক বিরুদ্ধ সমালোচনা প্রকাশিত হওয়ায় তিনি হয় ত একটু আড়ালেই থাকতে চাইতেন। তবে মীর মশাররফ হোসেনের আত্মজীবনী থেকেই জানা গেছে সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজেই।

‘হিতবাদী’র মতই ‘হিতকরী’ একটি দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা। মীর মশাররফ হোসেন ‘হিতকরী’ ছাড়াও আর একটি পত্রিকা বের করেছিলেন, সেটি ছিল ‘আজীজন নেহার’। এটির একটি সংখ্যাও কোথাও পাওয়া যায় নি বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ‘হিতকরী’ পত্রিকার যে কয়টি সংখ্যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব প্রখ্যাত লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লেখন আবুল আহসান চৌধুরীর প্রাপ্য। তিনি জানিয়েছেন –

“দেশ-বিদেশের কোন গ্রন্থাগারেই এর হদিশ মেলেনি। তবে দু’একজনের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার সুবাদে হিতকরী পত্রিকাটি দেখার সুযোগ মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক পুথিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী আহমেদের কল্যাণে হিতকরীর বেশ কিছু সংখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়।”

সম্প্রতি প্রথম বর্ষের (১২৯৭-পাক্ষিক) ১১টি সংখ্যা ও দ্বিতীয় বর্ষের (১২৯৮-দাশাহিক) ২১টি সংখ্যা – মোট ৩২টি সংখ্যা পুনর্মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ’ থেকে। প্রসঙ্গত: ‘হিতকরী’ প্রথমে পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশিত হলেও চাহিদার কারণে দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ‘দাশাহিকে’ (দশ দিন অন্তর) রূপান্তরিত হয়। ‘হিতকরী স্থায়ী হয়েছিল পাঁচ বছর, প্রকাশ ছিল অনিয়মিত। প্রকাশিত বিপুল সংখ্যক পত্রিকার সামান্য যে কয়টির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে ৩২টি মাত্র পাঠযোগ্য। পত্রিকার কাগজ ছিল নরম ও স্বল্পকালিতে ছাপা। ১৫টি সংখ্যা অতিরিক্ত কীটদষ্ট হওয়ায় ব্যবহার করা যায় নি বলে জানানো হয়েছে। উদ্বোধনী প্রথম সংখ্যাটিই অনুপস্থিত। আবুল হাসান চৌধুরীর মন্তব্য –

“...... তবে প্রায় ১২৫ বছরের পত্রিকা যে কালের করাল গ্রাস থেকে আংশিক রক্ষা পেয়েছে, সেও তো উত্তর প্রজন্মের জন্যে বড়ো সৌভগ্যের কথা।”

“ দ্বিতীয় বর্ষে ‘হিতকরী’ টাঙ্গাইলে স্থানান্তরিত হয়” –ব্রজেন্দ্রনাথের এই তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। পত্রিকাটি স্থানান্তরিত হয়েছিল তৃতীয় বর্ষে, টাঙ্গাইলে আহমদী প্রেসে ছাপা হত সেটি। ১২৯৯ সালের ১০ই ভাদ্র সংখ্যায় সম্পাদক মোসলেমউদ্দীন খাঁ ও মুদ্রাকর সাধু সরকারের নাম ছাপা হয়েছে, কিন্তু মশাররফ হোসেনই ছিলেন প্রকৃতপক্ষে সম্পাদক। সরকারি কর্মকর্তাদের নজর এড়াতেই তিনি প্রকাশ্যে আসেন নি। তৃতীয় বর্ষে ‘হিতকরী’ কতদিন চলেছিল সে তথ্য জানা যায় নি, তবে সম্ভবত: মশাররফ টাঙ্গাইল ছেড়ে চলে যাবার সঙ্গেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এর সাত বছর পর ‘কোহিনুর’ পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে - চতুর্থ বর্ষে “‘হিতকরী’ ১৩০৬ সালের শুভ বৈশাখ হইতে নূতন প্রণালীতে খাঁটি নিখুঁত মুসলমানীভাবে বাহির হইবে।” শেষ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমানীভাবে প্রকাশিত হয়েছিল কিনা জানা যায় না, তবে পত্রিকা মুদ্রিত হত কাঙাল হরিনাথ প্রতিষ্ঠিত কুমারখালীর মথুরানাথ যন্ত্রে। পঞ্চম বর্ষের পত্রিকা ১৩০৭ সালের বৈশাখ মাস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল, সম্পাদক ছিলেন জ্যোতিপ্রসাদ সান্যাল। ১৩০৭-এর পর ‘হিতকরী’ আর প্রকাশিত হয় নি। অর্থাৎ পত্রিকাটি চলেছিল ১২৯৭-১২৯৯, ১৩০৬ ও ১৩০৭ – এই পাঁচ বছর। আবুল আহসান চৌধুরী জানিয়েছেন –

“তবে ১৩০০ থেকে ১৩০৫ এই ছয় বছর হিতকরীর প্রকাশ পুরোপুরি বন্ধ ছিল কিনা সে তথ্য অজ্ঞাত। এ-ছাড়া এ-রহস্যেরও সমাধান হয় নি, হিতকরী পূর্ব্ব ঘোষিত যৌথ সম্পাদনায় ‘খাঁটি নিখুঁত নুসলমানীভাবে’ না বেরিয়ে হিন্দু সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে কেন প্রকাশিত হয়েছিল। যা-হোক, হিতকরীর অন্তিম-পর্ব্বে পত্রিকা বিষয়ে মশাররফের কোন আগ্রহ বা সক্রিয় ভূমিকা ছিলনা, যদিও তিনিই ছিলেন পত্রিকার স্বত্ত্বাধিকারী।”

মীর মশাররফ হোসেন যে আন্তরিকভাবেই মুক্তমনা ও ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন সেটা তার ব্যবহৃত ‘ভগবান’ শব্দটির দ্বারাই বোঝা যায়। পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় সূচনা অংশ ছাড়াও এই শব্দটি অনেকবারই ব্যবহৃত হয়েছে। ১২৯৮-এর ২০শে আষাঢ় সংখ্যায় সম্পাদকীয় মন্তব্যে লেখা হয়েছে –

“ঈশ্বর না রক্ষা করিলে, “হিতকরী”র প্রত্যক্ষ আশা কিছুই নাই, সেই অদ্বিতীয় ভগবান কৃপাতেই হিতকরী দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করিয়াছে।” অথবা –“...... যত্নের সহিত ত্রুটী স্বীকার মাথায় বহন করিব, দয়াময় ভগবানের কৃপায় সংশোধনের চেষ্টা করিব।”

পত্রিকায় ব্যবহৃত বাংলা ভাষার সঙ্গে মাঝে মাঝে উর্দুভাষার মিশ্রণ ঘটায় একটি চিঠিতে অনুযোগের সংবাদ সম্বন্ধে বলা হয়েছে –

“ ঢাকা অঞ্চলের কোন এক সহযোগী পরিচালক বন্ধুভাবে লোকমুখে বলিয়া পাঠাইয়াছেন যে, “হিতকরী” পাঠ করিয়া আমরা বড়ই সুখী হইতেছি, কিন্তু দুইটি কারণে দুঃখিত হইয়াছি, ১ম কারণ প্রায় কাগজ বর্ণাশুদ্ধি, ২য়, কোন কোন প্রস্তাবে প্রেরিত পত্রে সংবাদে মুসলমানী কথা থাকা। দ্বিতীয় অনুযোগটি সম্বন্ধে সম্পাদকের মন্তব্য –“বঙ্গভাষার সহিত যদি ইংরাজি ভাষা মিশিতে পারে, তবে উর্দ্দুভাষা কেন মিশিবে না, ভাষার মিলনে ভালবাসার বৃদ্ধি। ইহাও আমাদের কম সৌভাগ্যের কথা নহে।”

‘হিতকরী’ নির্ভিকভাবে দুঃখী জনগণের দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। ১২৯৮-এর ১০ই বৈশাখ সংখ্যায় ‘হিতকরীর আত্মকথা’ শীর্ষক নিবন্ধে পত্রিকা কর্ত্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও আদর্শের কথা স্পষ্ট এবং দৃঢ় ভাবে ঘোষিত হয়েছে –

“দুই দশ টাকা লাভের জন্য হিতকরী প্রকাশ হয় নাই। জীবিকা-নির্ব্বাহের কোন উপায় না পাইয়া এই কুটিল ও জটিল পথ আশ্রয় করা হয় নাই। ন্যায্য বলিব, সত্য প্রকাশ করিব, সত্যাশ্রয়ে থাকিব, সাধারণের হিতকর কার্য্যে অবশ্যই যোগ দিব। আমরা পূর্ব্ব হইতেই বলিয়া আসিতেছি যে, আমরা কোন সম্প্রদায়ভুক্ত নহি, আমরা সকলের। একচখো দৃষ্টি আমাদের নাই। যেখানে অন্যায়, সেখানেই আমরা, যেখানে অত্যাচার, যেখানে অবিচার সেই খানেই আমাদের কথা। আমরা প্রশংসার প্রত্যাশী নহি। আর্থিক সাহায্যের আশাও রাখি না। সুতরাং আমাদের ভয়ের কোন কারণ নাই।”

এর পরে একই সাথে লেখা হয়েছে –

“প্রথম সূচনায় বলিয়াছি, আমাদের প্রথম পূজনীয় ঈশ্বর, তৎপরে রাজা; গ্রাহকমাত্র না থাকুক, সাধারণে হিতকরী পাঠ না করুক ক্ষতি নাই। যাঁহার নিকট জানাইলে দেশের উপকার হইবে, অত্যাচার অবিচার কমিবে, অন্যায়ের সুবিচার হইবে, কেবল তাঁহাকেই জানাইব। আর দেশের মান্যগণ্য লোক যাঁহাদের হৃদয় আছে, তাঁহাদের নিকট উপহার স্বরূপ উপস্থিত হইব। আর ভয় কি, কিসের আশঙ্কা ?”

এই শেষের অংশটি দেখে আবুল আহসান চৌধুরীর মন্তব্য –

“এখানে লক্ষণীয় যে, রাজভক্তি ও রাজানুগত্যের প্রশ্নে হিতকরী তার যুগকে অস্বীকার বা অতিক্রম করতে পারে নি। তাই রাজদ্বারে আবেদন-নিবেদনের মাধ্যমে সমস্যা দূরীকরণের প্রয়াসই অবলম্বন করেছিল হিতকরী।”

এজন্যই হয় ত অনেকের মনে হয়েছে যে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’র প্রতিবাদের সুর অনেক তীব্র ও আপোষহীন ছিল।

যাই হোক, ‘হিতকরী’তে দুর্নীতি ও অত্যাচারের অনেক কাহিনীই প্রকাশিত হত এবং সে জন্য পত্রিকা কর্ত্তৃপক্ষকে অনেক লাঞ্ছনা ও কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। ২০শে ভাদ্র ১২৯৮ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি পত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার ছোট আদালতের জজ বরদাপ্রসন্ন সোম তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত নানা অভিযোগের উত্তরে ‘হিতকরী’কে আদালত কক্ষেই ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পত্রিকার সহকারী সম্পাদক উকিল রাইচরণ দাসকে অন্যায়ভাবে ভর্ৎসনা ও অপমান করেন ও তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। পত্রিকার কাছে প্রস্তাব যায় বিচারকের সপক্ষে লেখার, কিন্তু ‘হিতকরী’ অনমনীয় থাকে।

সহবাস সম্মতি আইনকে কেন্দ্র করে হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। ‘হিতকরী’ এই আইনের সমর্থনে মত প্রকাশ করায় রাজসাহীর দশজন, টাঙ্গাইলের পাঁচজন, ময়মনসিংহের বার জন গ্রাহক পত্রিকাটি ছেড়ে দিয়ে সম্পাদককে চিঠি দিয়েছেন। ১২৯৮-এর ২০শে বৈশাখ সংখ্যায় সম্পাদক লিখেছেন –

“পাঠক দেখুন! আর একটি ভদ্রলোক আমাদের কার্য্যাধ্যক্ষ শ্রীদেবনাথ বিশ্বাসকে কিভাবে একখানি পত্র লিখিয়াছেন। পত্র, একখানি পোষ্টকার্ড,-নাম সহি নাই। ডাক মোহর নাটর লিখা আছে।”

পত্রটি ছিল –

“মহাশয়! আপনার কাগজ দেখিয়া বোধ হয় যে, আপনি ছোট লোকের ছেলে। এতদ্বারা আপনাকে জানান যাইতেছে যে আগামী ১৫ই বৈশাখ হইতে ১লা জ্যৈষ্ঠের মধ্যে শুধু আপনার বাড়ীতে মহৎ একটি অশুভ ঘটনা ঘটিবেক। সেই জন্য লিখি যে আপনি ওই তারিখের মধ্যে বাড়ীতে পুলিশ প্রহরি ইতাদি সব রাখিবেন। আপনি যে কাগজ বাহির করেন, তাহা হিন্দুধর্ম্ম বিরুদ্ধ। কি করিয়া হিন্দু সন্তান হইয়া কুলাঙ্গারের কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, তাহা কিছু বুঝিতে পারি না। সাবধানে কাগজ পত্র বাহির করিবেন। আবার যদি ঐ সকল হিন্দুধর্ম্ম বিরুদ্ধ কথা দেখিতে পাই, তবে সমুচিত দন্ড দিব।”

অবশ্য ‘হিতকরী’র প্রতিবাদী লেখনী প্রশংসিতও হয়েছে। ১২৯৮-এর ৩০শে জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় জনৈক গ্রাহক লিখেছেন-

“আমি আপনার হিতকরীর একজন গ্রাহক। হিতকরীতে ‘মনের কথা’ পাঠ করিয়া বড়ই দুঃখিত হইলাম। ইতিপূর্ব্বে ও কয়েক সংখ্যাতে হিতকরীর প্রতি সাধারণের বিদ্বেষ ভাবের কথা প্রকাশিত হইয়াছে। হিতকরী কেন যে লোকের বিষনয়নে পড়িতেছে কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। আমি এই এক বৎসর হিতকরী পাঠ করিতেছি, কিন্তু কৈ একটীও তো হিন্দুধর্ম্ম বা কোনও ধর্ম্মবিরুদ্ধ কথা পাঠ করি নাই, হিতকরী ন্যায়ের পথ অবলম্বন করিয়া লোকসেবা-ব্রতে জীবন উৎসর্গ করিয়াছেন। অত্যাচারীর অত্যাচার কাহিনী, অন্যায়ের প্রতিবাদ, ন্যায়ের সমর্থন, স্বদেশবাসীর মঙ্গল চিন্তা, এই সকল বিষয়ই তো হিতকরীতে দেখিতে পাই। ন্যায়পরতা কি হিন্দুধর্ম্ম বিরুদ্ধ ? কুষ্টিয়ার বড়ই সৌভাগ্য বলিতে হইবে যে, হিতকরীর মত একটি উচ্চ ও উদার মতের পত্রিকা প্রকাশিত হইয়া দেশের দুঃখ কষ্টের কথা সাধারণ ও কর্ত্তৃপক্ষীয়দিগের নিকট জানাইতেছেন।”

অভাব অভিযোগ সংক্রান্ত চিঠিপত্র, সম্পাদকীয় মন্তব্য, স্থানীয় এবং দেশের বিদেশের সংবাদ ছাড়াও কখনো কখনো কিছু সাহিত্যধর্মী রচনাও পত্রিকায় স্থান পেয়েছে। কুমারখালী ইংরাজী স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র জ্যোতিশ্চন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পরলোক গমনে শোকার্ত হৃদয়ে একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেছেন। ১২৯৮-এর ২০শে শ্রাবণ সংখ্যায় সেটি মুদ্রিত হয়েছে। কিছু অংশ –

“...... ভেঙ্গে গেল নাট্যশালা – জনমের তরে,
ঈশ্বর চলিয়া গেল ঈশ্বর আগারে।
ভারত ঈশ্বর লুপ্ত জগৎ ঈশ্বরে,
কাঁদে রে ভারতবাসী সে ঈশ্বর স্মরে-
মগ্ন সবে শোকনীরে,
কে কারে সান্ত্বনা করে,
ভারত কাঁদে রে আজ ঈশ্বরের তরে,
ঈশ্বরে স্মরিতে ভাই পরাণ বিদরে!
দয়ার সাগর ভাই বিদ্যার সাগর,
গুণের আধার ভাই বুদ্ধির আকর!
হেন জন এ সংসারে,
আর কি জন্মিতে পারে,
অনাথে রক্ষিবে কে গো করুণা বিতরে,
অনাথ অনাথ হ’ল সে নাথের তরে। ......”
২০শে ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে কুষ্টিয়াবাসী শৈলেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘মাতৃবিয়োগে শোকোচ্ছ্বাস’ নামক কবিতা। এটির কয়েক পঙক্তি –
“ মা অতি সুন্দরনাম অমিয়জড়িত,
হারানু এ নামসুধা জনমের মত।
অস্তাচলে দিনমণি করিল গমন,
দিবসের কার্য্য যত করিয়া সাধন;
গোধুলি সময়ে কাল, লইলি মায়েরে,
সংসার আলয় হ’তে চিরদিন তরে।
****
কত উপদ্রব আমি করিয়াছি হায়,
নিদারুণ বাক্য কত বলেছি তোমায়,
অপাঙ্গে নয়ননীর শুকায়েছে কত
কাঁদিব স্মরিয়া মাগো জনমের মত। ......”

‘হিতকরী’ ছিল মুখ্যত একটি সংবাদ পত্রিকা। এখানে মূল বানান অপরিবর্তিত রেখে কিছু নির্বাচিত সংবাদের অংশ তুলে দিচ্ছি, যা থেকে সে সময়ের সাধারণ জীবনযাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি ইত্যাদি সম্বন্ধে সমাজজীবনের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ফুটে উঠবে। পরিবেশিত সংবাদের মধ্যে রয়েছে যেমন রহস্যময়তা তেমনি রয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবচিত্র যা মেনে নিয়েই সে সময়ের মানুষকে জীবনসংগ্রাম চালাতে হয়েছিল। তুলনা করলে হয় ত দেখা যাবে, অনেক ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বিকতায় কিছু পরিবর্তন ছাড়া মানুষের মূল প্রবৃত্তি ও মানসিকতা প্রায় অপরিবর্তিতই থেকে গেছে।

“ যশোহর জেলার বনগ্রাম সাবডিভিসনে একটি আশ্চর্য্য ঘটনা হইয়া গিয়াছে। জনৈক চট্টোপাধ্যায় এক জন উকীল ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের এজলাসে বক্তৃতা করিতে করিতে সহসা মূর্ছিত হইয়া পড়েন। ডাক্তারেরা পরীক্ষা করিয়া মৃত্যু হওয়া স্থির করায় মৃতদেহ দাহনার্থে নদীতীরে দাহনকার্য্য আরম্ভ করিলে হঠাৎ ভয়ানক একটি শব্দ হইল ও মৃতদেহ উপরের দিকে উঠিতে লাগিল এবং প্রায় ১০০ ফুট উঠিয়া নদীগর্ভে পতিত হইল ও ডুবিয়া গেল।”
( ‘স্থানীয় সংবাদ ও মন্তব্য’। ১২৯৭ সাল ১৫ই আষাঢ় )।

“ সারস্বত পত্রিকায় একটি অদ্ভুত জীবের বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। ঢাকার অন্তর্গত কালী পাড়ার নিকট পদ্মার ভাঙ্গনে ১২৮৬ সালে বর্ষাকালে এই প্রাণী দৃষ্ট হয়। ইহার অবয়ব মানুষের মত, কেশগুলি প্রায় তিন হাত দীর্ঘ, বক্ষঃস্থলে স্ত্রীলোকের ন্যায় দুটি স্তন আছে; মুখখানি অবিকল একটি সুন্দরী স্ত্রীলোকের ন্যায়; দুই খানি হাত আছে, তাহাও মানুষের মত; কিন্তু কটিদেশ হইতে পাদমূল পর্যন্ত কিছুই মানুষের ন্যায় নহে; যেন দুখানি পা যোড় করিয়া এক খানি হইয়া গিয়েছে এবং শেষ অংশটি রোহিত অথবা পঞ্জিকায় চিত্রিত মকরের পুচ্ছের ন্যায়। স্বর অতি সুমিষ্ট। নদীর ধারে জমির উপর অর্দ্ধশায়ীত অবস্থায় ছিল, দেখিতে দেখিতে জলে ডুব দিল আর দৃষ্ট হইল না। সাহিত্য সন্দর্ভে নাকি এইরূপ প্রাণীর প্রতিকৃতি বিশিষ্ট একটা জীবের কাহিনী লিখিত আছে। ঈশ্বরের রাজ্যে জল ও গ্রহ মধ্যে যে মানুষের ন্যায় প্রাণী থাকিবে তাহাতে আশ্চর্য্য কি ?”
( ‘বিবিধ সংবাদ ও মন্তব্য’। ১২৯৭ সাল ৩০শে শ্রাবণ )।

“ কুষ্টিয়ার বালিকা বিদ্যালয়ের বুঝি মা বাপ নাই। কয়েকটি বালিকা লইয়া শিক্ষক বাবু রামলাল সাহা রাতদিন স্কুলটি বড় কষ্টের চালাইয়া আসিতেছেন। বালিকাদিগের অভিভাবকগণ এ বিষয়ে বড় উদাসীন। বালিকাদিগের ইচ্ছা হইল স্কুলে আসিল, আর ইচ্ছা হইল না – আসিল না। বড় কিছু বাঁধাবাঁধি নাই। পন্ডিত মহাশয়ও দেখিয়া শুনিয়া হাল ছাড়িয়া দিয়াছেন। বালিকাদিগের অভিভাবকগণের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে নিজ নিজ পুত্র কন্যার শিক্ষা বিধানে যত্নের তারতম্য দেখাইয়া থাকেন। আমরা সুযোগ্য সম্পাদক মহাশয়ের নিকট তাদৃশ তারতম্য প্রত্যাশা করি না। ভরসা করি ইহার সদুপায় করিবেন।”
( ‘সম্পাদকীয় মন্তব্য’ – ১২৯৭ সাল ১৫ই শ্রাবণ )।

“ ইনকমট্যাকস দেখিতে দেখিতে একটি ভয়াবহ জিনিস হইয়া উঠিল। এতদ্দারা যে কেবল এ দেশের অর্থশোষণ হইবে; এমত নহে, তৎসহ অনেক ব্যবসা সম্বন্ধীয় উন্নতির পথ অনায়াসেই রুদ্ধ হইবে। এই ট্যাকসের আবশকতার মূলে গবর্ণমেন্টের টাকার আবশ্যকতা ব্যাতীত ট্যাকস দাতাগণের বিশেষ হিতকর কোন উদ্দেশ্য দৃষ্ট হয় না। সে যাহা হউক এই ট্যাকস যে প্রণালীতে ধার্য্য হয় তাহা অতীব আপত্তিজনক। আসেসর বাবু আপনি সুবিধানুসারে দুইএক জনকে জিজ্ঞাসা করিয়া বা না করিয়া আপন খুসিতে এক তরফা ট্যাকস ধার্য্য করেন, তাহাই চূড়ান্ত হইয়া যায়। ইহার দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি রহিয়াছে। বর্ত্তমান বর্ষে কুষ্টিয়ায় একজন উকিলের ট্যাকস দশ টাকা হইতে পনেরো টাকা হইল; তাহাতে তাহার আপত্তি থাকুক বা না থাকুক ঐ ট্যাক্স ন্যায্য বা অন্যায্য হউক সে স্বতন্ত্র কথা; কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় সে বেচারী জানিতে পারিল না কে ট্যাক্স ধরিল কখন ধরিল। টাকা দেওয়ার সময় কেবল একটি কথা জানিতে পারিল যে তাহাকে ঐ হারে ট্যাক্স দিতে হইবে, চূড়ান্ত হুকুম হইয়াছে তাহা আর খন্ডন হইবে না।”
( ১২৯৭ সাল, ১৫ই কার্ত্তিক )।

“ ...... যাঁহারা কুমারখালী অঞ্চলের জলপ্লাবন স্বচক্ষে দেখিয়াছেন, তাঁহারা একটু অনুসন্ধান করিলে জানিতে পারিবেন, পদ্মার দক্ষিণ তীরে চিনিরগোলা মহেন্দ্রপুর প্রভৃতি নিম্নস্থান দিয়া জল প্রবাহ প্রবল বেগে আষাঢ় মাসেই ক্ষেতে পতিত হইয়া শস্যাদি নষ্ট করিয়া ফেলে। ঐ সকল স্থানে বাঁধ দিলে আশু জল প্লাবন নিবারণ হইতে পারে। ইহার মধ্যে শস্যও পক্ক হইয়া উঠে। পরে শ্রাবণের শেষে যখন সকল স্থান দিয়া জল আসিতে থাকে, তখন শস্যের বিশেষ কোন হানি হয় না। এই বাঁধের জন্য কতবার চীৎকার করা হইয়াছে, কেহই তাহাতে কর্ণপাত করেন নাই। এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি। তিনি এদেশের শারীরিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক সর্ব্ব প্রকারের হিত কামনায় বহুল অর্থ ব্যয় করিয়াছেন ও করিতেছেন; কিন্তু এই ভয়ানক শোচনীয় ব্যাপারটি কি তাঁহার কর্ণগোচর হয় নাই ? আমরা আশা করি তিনি দরিদ্র প্রজাদের এই কষ্ট নিবারণ করিয়া অর্থেরও সার্থকতা ও নামের গৌরব রক্ষা করিবেন। .........”
( ‘বড়ই দুঃখের কথা’ – ১২৯৭ সাল ২০শে আষাঢ় )।

“ গত ২৪এ নবেম্বর আগ্রায় বড় লাঠ সাহেবের দরবার বসিয়াছিল। আগ্রার উন্নতি দেখিয়া লাট বাহাদুর সন্তোষ লাভ করিয়াছেন। হিন্দু মুসলমানের বিবাদ যেরূপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছিল, তথায় এবার মহরমের সময় সেরূপ কোনই গোলোযোগ ঘটে নাই বলিয়া তিনি আনন্দ প্রকাশ করিয়াছেন ও ভারতেশ্বরীকে এই সংবাদ জানাইবেন বলিয়াছেন। রাজপুতনায় অনেক শিক্ষিত লোক সভা করিয়া বিবাহের পণ রহিতের চেষ্টায় আছেন; এই অনুষ্ঠানে লাট বাহাদুরের বিলক্ষণ সহানুভূতি আছে। আমাদের বড় লাট সাহেব বাস্তবিকই উদার প্রকৃতির লোক।”
( ১২৯৭ সাল ২৯শে অগ্রহায়ণ )।

“ দশবৎসর পূর্ব্বে হিন্দু-মুসলমানে এই বঙ্গে যে রূপ পিরীত প্রণয় ছিল, এইক্ষণ তাহার অনেক হ্রাস হইয়াছে। শত্রুতার ভাব যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে। যতই শিক্ষার পথ পরিষ্কার হইতেছে, বিদ্বেষভাব, বিকারভাব ততই বৃদ্ধি পাইতেছে। বাঙ্গালা নাটক, উপন্যাস, পাঠ্য পুস্তক সংবাদ পত্রিকা প্রভৃতিতে ঐ রূপ বিদ্বেষ ভাব থাকাও পত্রিকার এক প্রধান কারণ। যত দিন হিন্দু ভ্রাতৃগণ ঐ বিষয়টি ভালরূপে হৃদয়ঙ্গম না করিবেন, তত দিন হিন্দু মুসলমানে পরস্পরে অন্তরের সহিত কখনই সোণায় সোহাগার ন্যায় মিল হইবে না। কতকগুলি হিন্দু অভিমানী গ্রন্থকার এবং পত্রিকার সম্পাদক ইঁহারাই হইতেছেন এই মনোমালিন্যের মূল এবং আমাদের মতে ভারতের কন্টক। যদি যুক্তিতে একথা প্রমাণীত করে যে, ভারতে হিন্দু মুসলমানের মনে মুখে মিলন, ভারতের পক্ষে অকল্যাণ, তবে যেটুকু মিশামিশি ভাব প্রকাশ্যে দেখা যায়, সেটুকু না থাকা ভাল। আর যদি মিলনই শ্রেয়ঃ বোধ হয়, তবে পূর্ব্বে যাহা হইয়াছে, তাহা সংশোধনের চেষ্টা আবশ্যক, ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়াও যুক্তিসঙ্গত। ক্রমে এমন দিন আসিবে যে, মুসলমানগণ ঐ সকল লেখার লাইনে লাইনে প্রতিবাদ করিবে। সে সময়ের শত্রুতাও দৃঢ়, বন্ধুতাও সুদৃঢ়। যিনি যাহাই ভাবুন, আমরা বলি যে হিন্দু মুসলমান উভয়েই সীমা অতিক্রম করিয়া বাহিরে না যান। ভারতে উভয় জাতির ক্ষমতাই সমান।”
( ‘সম্পাদকীয় মন্তব্য – ভাবিবার কথা’। ১২৯৮ সাল ৩০ এ জ্যৈষ্ঠ )।

“ মুসলমান ভাতৃসহ! দেখুন! বঙ্গদেশের মহাত্মা ছোট লাট বাহাদুর সেনসাস দৃষ্টে আপনাদের সম্বন্ধে কি বলিয়াছেন – মনোযোগ পূর্ব্বক শুনুন - “সেনসেস দৃষ্টে মুসলমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত লোকের সংখ্যা যতদূর অল্প তাহাতে এ কথাও বলা যাইতে পারে যে, মুসলমানগণ এখন হইতেই সমস্ত কুসংস্কার দূরীভূত করতঃ বিদ্যাশিক্ষার বিশেষ মনযোগী হইলে হিন্দুসমাজের সমকক্ষ হইতেও মবলগে প্রায় ৪০০ শত বৎসরের প্রয়োজন।” আমিও অনুমান করিয়া বলিতেছি মুসলমান সমাজে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা শতকরা দুইজন ও শিক্ষার্থী লোকের সংখ্যা শতকরা ৪ জনও আছে কিনা সন্দেহ। এমন যে সমাজ, সে সমাজে উন্নতির আশা করা মরুভূমিতে প্রস্ফুটিত কনকপদ্ম লাভ আশার ন্যায় ফলবতী।”
( ‘প্রেরিত পত্র’ - ১২৯৮ সাল ২০শে শ্রাবণ )।

“ অশিক্ষিত পুরুষগণ স্ত্রীশিক্ষার বিশেষ বিরোধী। তাঁহারা মনে করেন স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া শিখিলে চক্ষু ফুটিবে। তাহারা আপনাদের ন্যায্য অধিকার চাহিবে; তাহা হইলে তাহাদের উপর অনর্থক প্রভুত্ব খাটাইতে পারিবেন না; অতএব তাহাদের লেখাপড়া শিখিবার আবশ্যক নাই। তাহারা চিরদিন অন্ধ অবস্থাতেই থাকুক। কিন্তু তাহারা বিবেচনা করেন না যে, স্ত্রীজাতির উন্নতি না হইলে তাঁহাদের উন্নতি হইবে না। এক অঙ্গ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হইলে, অপর অঙ্গ কি প্রকারে কার্য্যক্ষম হইবে? সুশিক্ষিত মাতা না হইলে সুপুত্র কিরূপে হইবে? বাল্যজীবনের শিক্ষা মাতার নিকট হয়, সেই শিক্ষা যদি মন্দ হইল, তবে সেই পুত্র কিরূপে ভাল হইবে? স্ত্রী যদি সুশিক্ষিতা হয়, তবে স্বামী যে কত সুখী হন, তাহা স্বামীমাত্রেই জ্ঞাত আছেন। অশিক্ষিত স্ত্রীলোকেরা হিংসা ও কলহ করিয়া সুখের সংসারে অশান্তি আনিয়া উপস্থিত করেন। তাঁহারা যদি উপযুক্তরূপে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইতেন, তাহা হইলে তাঁহাদের স্বামী কিম্বা পিতার সে যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইত না। তবে একথা অবশ্য স্বীকার্য্য যে, অনেক স্থলে লেখাপড়া শিখিলেই যে শিক্ষিতা হইবে ইহা নিতান্ত ভ্রম। প্রকৃত সৎ শিক্ষা যাহাকে বলে, তাহা সামান্য লেখাপড়া শিখিলে হয়। বিদ্যার সহিত বিনয়, নম্রতা, দয়া, সত্যপ্রিয়তা, নিরহঙ্কার, স্নেহ, পরোপকারিতা প্রভৃতি সদগুণ থাকিলে তাহাকে শিক্ষিত বলা যায়। একজন দাম্ভিক অবিনয়ী বিদ্বান অপেক্ষা, বিনয়ী, সত্যবাদী, ধার্ম্মিক মূর্খ শতগুণে শ্রেষ্ঠ।”
(‘কুষ্টিয়া বালিকাবিদ্যালয়ের পারিতোষিক বিতরণ উপলক্ষে জনৈক বালিকা রচিত’ – ১২৯৮ সাল, ২০শে জ্যৈষ্ঠ )।

“ ১২ই বৈশাখ তারিখের “সময়ে” যে একটি সংবাদ প্রকাশ হইয়াছে, তাহা বড়ই শোচনীয়। নেটিভ প্রতিই ইংরেজগণ রেলওয়ে ষ্টীমারে অত্যাচার করেন, ইহাই জগতে রাষ্ট্র। ইংরাজী রমণী প্রতি ইংরেজের এরূপ অত্যাচার নিতান্তই আশ্চর্য্যজনক বলিতে হইবে। একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারীর কন্যা পশ্চিম রেলওয়ে কর্ডলাইন হইয়া প্রথম শ্রেণীর গাড়িতে কলিকাতায় আসিতেছিলেন মকামা ষ্টেষণ পর্য্যন্ত আসিলে একজন ইংরেজ (রেলওয়ের নিম্নশ্রেণীর কার্য্যকারক) সম্ভ্রান্ত রাজকর্ম্মচারীর কন্যার রূপ মাধুরির জ্বলন্ত তেজ সামলাইতে না পারিয়া মোহিত হইয়া তাহার কামরায় উঠিয়া যাহা তাহার মনে ছিল, সাধন করে। এ দিকে গাড়ি লক্ষীসরাই ষ্টেষণে উপস্থিত হইলে, শ্বেত রাক্ষস চুপে চুপে নামিয়া চলিয়া যায়। কথা প্রকাশ করিতেও কষ্ট হয়। শ্বেত রাক্ষসের অত্যাচারে শ্বেতবরনী বিলাতী যুবতীর প্রাণ বায়ুঃ অনন্ত আকাশে বিলীন হইয়া দেহাখানি মাত্র গাড়ির কামরায় পড়িয়া থাকে। সম্ভ্রান্ত ঘরের কন্যা, সঙ্গে লোকজন অবশ্যই ছিল। লক্ষীসরাই ষ্টেষণে গাড়ি থামিলে তাঁহার সঙ্গী লোকজন যাহারা ঐ গাড়িতেই ভিন্ন গাড়িতে ছিল। মনিবের কোন প্রয়োজন আছে তত্ত্ব তালাস করিতে খবরদারি লইতে নির্দ্দিষ্ট ফাষ্ট ক্লাসের কামরায় যাইয়া যাহা দেখিল, তাহা পূর্ব্বেই বলিয়াছি।-দেহখানি মাত্র পড়িয়া আছে। কি ভীষণ কান্ড !! শ্বেত রাক্ষস চতুরতা করিয়া লক্ষীসরাই ষ্টেষণ হইতে মালগাড়িতে মোকামায় চলিয়া যায়। সন্ধানে শ্বেত রাক্ষস ধরা পড়িয়াছে। নারী হত্যার অপরাধ তাহার মাথার উপর ঘুরিতেছে; দেখি ইহার বিচারে কি হয় !!
(১২৯৮ সাল ২০ই বৈশাখ)।

"কোথাকার কথা কোথায় !! – কোথায় কংগ্রেস আর কোথায়ই বা মণিপুর। বেঙ্গলীর-লন্ডন সংবাদদাতা বলেন ফরাসীপত্রিকা “Local” সোস্যালের মতে ভারতীয় কংগ্রেস এই মণিপুর সংগ্রামের কারণ। মণিপুর সেনাপতি কংগ্রেসের উৎসাহেই প্রোৎসাহিত হইয়া লড়াই করিতেছেন। একথায় আমাদের বাক্য সরিতেছে না। ইহার প্রাসঙ্গিকতা ও যৈক্তিকতা মানুষের মনে লাগে কি ? ইংরেজ গবর্ণমেন্ট একথা হাসিয়া উড়াইবেন সন্দেহ নাই।” (১২৯৮ সাল ২০ই বৈশাখ)।

“ শ্যামবাজার দাঙ্গার মোকদ্দমা আলিপুরের জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে চলিতেছে। আসামীর পক্ষে মিষ্টার ডগনাস হোয়াইট ব্যারিস্টার ও বাবু বঙ্কিমচন্দ্র সেন, এবং ফরিয়াদের পক্ষে আশুতোষ বিশ্বাস ও জর্জ্জ হ্যান্ডার সন। দ্বিতীয় দলের ২০ জন আসামী গ্রেপ্তার হইয়া হাজতে আছে, মোকদ্দমা বিচারের জন্য মুলতুবি আছে।

“ ভারতবর্ষীয় মধ্য প্রদেশীয় রেলওয়ে গত ২৩ শে মে একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। মেল ট্রেন ঝান্সি হইতে আতরাসি যাইতে ভূপালের একটি দুষ্ট মুসলমান স্ত্রীলোকদিগের রিজার্ভ গাড়ীতে জানালা দিয়া প্রচ্ছন্নভাবে প্রবেশ করিয়া একটী স্ত্রীলোককে আক্রমণ করে ও পাশব বৃত্তি চরিতার্থের জন্য তাহাকে নানাপ্রকার ভয় প্রদর্শন করে, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য্য হয় নাই। এই দুরাত্মা আবার না কি স্ত্রীলোকটীর নিকট আত্মীয়। দুষ্ট পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়াছে।
“ পার্লিয়ামেন্টের সভ্য কাপ্তান ভার্নির এক মাসের কারাদণ্ড হইয়াছে। ইহার চরিত্র সম্বন্ধে অনেক কথা শুনা যাইতেছে। বোধহয় ইনি শীঘ্রই পার্লিয়ামেন্ট হইতে বিদায় হইবেন।
“ পুলিশের অত্যাচার – কলিকাতায় ফেনিক বাজার থানার নিকট দিয়া একজন খৃষ্টিয়ান মহিলা কার্য্যস্থানে যাতায়াত করিতেন; ঐ থানার বাবুরা মহিলাটির প্রতি ঠাট্টা বিদ্রূপ করায় তিনি স্বামীকে গিয়া সবিশেষ বলিয়া দেন। স্বামী ঘটনাটি আদ্যোপান্ত জানিবার জন্য নিকটস্থ দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন এমন সময় থানার মুনসি ও জমাদার তাহাকে ধরিয়া গুরুতর প্রহার করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ হইয়াছে। মোকদ্দমা এখন বিচারাধীন।

“ মুরসিদাবাদের নবাব বাহাদুর রাজাগঞ্জ বাঁধ প্রস্তুত করিবার জন্য ৪০০ শত ও গোদাপাড়ার রাস্তার জন্য ১০০ শত টাকা দান করিয়াছেন। এই রাস্তাতেই অনেক বাঁধের কার্য্য হইবে।

“ ললিতাকুড়ির জলপ্লাবনের বিষয় স্মরণ হইলে হৃৎকম্প উপস্থিত হয়, এই দিক এ সময় সকলের দৃষ্টি রাখা উচিত।

“ কলিকাতা-বালি – একটি দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের উপপতিকে বিবাহ করিবার পরামর্শ দিয়াছিল বলিয়া আক্রোশে ঐ স্ত্রীলোকটি পরামর্শদাতার পুত্রকে খুন করিবার উদ্দেশ্যে দা দিয়া কাটিতে যায় ও আঘাত করে। বালিকাটির ক্রন্দনে প্রতিবাসীগণ আসিয়া উপস্থিত হয়; স্ত্রীলোকটি পলায়ন করিয়াছে। বালিকাটি চিকিৎসাধীন আছে। বাঁচিবার আশা বড় কম।

“ মান্দ্রাজ মালবার উপকূলে কনসেন্ট বিলের ন্যায় একটি ঘোর আন্দোলন উপস্থিত। নামুরী নামক ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ও শূদ্র নায়কদিগের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ব্যতীত আর কেহই বিবাহ করিতে পারে না। অন্য অন্য ভ্রাতার পক্ষে উপপত্নী রাখিবার ব্যবস্থা। এই কুরীতি দূর করিবার জন্য ঐ প্রদেশের কয়েকটি সদাশয় ব্যক্তি আইনের সাহায্য

“ শ্রীমতী কাদম্বিনী গাঙ্গুলী বঙ্গনিবাসীর [ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ] নামে মানহানীর বাবদ এক লক্ষ টাকার দাবিতে নালিশ করিয়াছেন। দাবিটা কিছু অতিরিক্ত হইয়াছে।

“ উড়িষ্যার কিয়ঞ্জর রাজ্যের অসভ্য প্রজারা বিদ্রোহী হইয়া রাজভান্ডার লুটিয়াছে। এটা করদরাজ্য; রাজার সাহায্যার্থে ইংলিশ গবর্ণমেন্ট সৈন্য প্রেরণ করিয়াছেন।

“ কৃষ্ণ পাহাড়ের বিদ্রোহীগণ বশ্যতা স্বীকার করিয়াছে।”
( ‘বিবিধ সম্বাদ’, ১২৯৮ সাল, ২০শে জ্যৈষ্ঠ )।

“ বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরী, বার্ষিক রিপোর্ট এবং সংক্ষিপ্ত কার্য্যবিবরণী আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি। উক্ত লাইব্রেরী ১৮৬৩ খ্রৃষ্টাব্দে স্থাপিত, মাননীয় শ্রীযুক্ত বাবু উপেন্দ্রচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় ইহার সম্পাদক। ইংরাজী বাঙ্গালা নানাবিধ পুস্তক, পত্রিকা অতি যত্নে সংরক্ষিত। অনেক কৃতবিদ্য, বহুদর্শী বিচক্ষণ মহাশয়গণ ইহার পৃষ্ঠপোষক। মাসিক সাপ্তাহিক পত্রিকা পঞ্চাশ খান কাগজ নিয়মিতরূপে লাইব্রেরীতে যাইয়া থাকে। বাঙ্গালা পুস্তকসংখ্যা ১২২০, অনেক গ্রন্থকার বিনা মূল্যে বাগবাজার রিডিং লাউব্রেরীর উন্নতিকল্পে আপন আপন গ্রন্থ দান করিয়াছেন। আমরা ঈশ্বরসমীপে ইহার উন্নতি প্রার্থনা করি।”
(১২৯৮ সাল, ৩০শে জ্যৈষ্ঠ )।

“ বালিকা চুরি – বেশ্যাবৃত্তির জন্য বালিকা চুরি নূতন কথা নহে; এ সম্বন্ধে আমরা অনেকবার আন্দোলন করিয়াছি। বেশ্যাগণ বৃদ্ধবয়সে যে সকল পালিতাবালিকার বেশ্যাবৃত্তির উপর জীবিকানির্ব্বাহ করে, তাহারা প্রায়ই বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্যে বিক্রিত। এরূপ বালিকার সংখ্যা বেশ্যাপল্লীতে অনেক; কিন্তু পুলিশের চক্ষু সে দিকে নাই। সেদিন নওপাড়া অধীনে ধুবল সাকিনের কুলসন নাম্নী একটি বিবাহিতা বালিকাকে বেশ্যাবৃত্তির জন্য ভুলাইয়া আনিবার অপরাধে রজনী পেশাকরের ২ বৎসর ৯ মাস সশ্রম কারাদন্ড হইয়াছে। আমরা কুষ্টিয়ার ডেপুটি বাবুর এই সুবিচারে সন্তুষ্ট হইয়াছি। স্ত্রীলোকগণের স্বাধীনতা ও সতীত্ব রক্ষা সম্বন্ধে তাঁহার সুদৃষ্টি থাকায় গত কয়েক বৎসরের মধ্যে স্ত্রীলোকের প্রতি অত্যাচার জনিত অপরাধের সংখ্যা পূর্ব্বের তুলনায় অনেক কমিয়াছে।”
( ১২৯৮ সাল, ১০ই পৌষ )।

বিবিধ সংবাদ মনোযোগের সঙ্গে বিশ্লেষণ করলে সে সময়ের সমাজ জীবনের একটি সার্বিক চিত্র পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এ জন্যই মাসিক পত্রিকা ও সংবাদপত্র ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকৃত।
পাক্ষিক ও দাশাহিক পত্রিকার দু’টি সংখ্যার প্রারম্ভিক পৃষ্ঠার প্রতিলিপি দেওয়া হ’ল।







লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর ( IIEST,shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।