অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

অক্টোবর ১, ২০১৭

 

কৃষক

দীপক সেনগুপ্ত

সাময়িক পত্রের উদ্দেশ্য হ’ল বিভিন্ন রচনা প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্য, শিল্প, সমাজ ব্যবস্থা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে জনসাধারণকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলা এবং একই সঙ্গে লেখক ও পাঠক গোষ্ঠিকে সম্প্রসারিত করা। অনেক সময়ে কোন বিশেষ মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে, সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে জনমত সংগঠিত করতে বা নির্দ্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়ের মুখপত্র হিসাবেও পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমানে আলোচ্য ‘কৃষক’ পত্রিকাটি মূলতঃ কৃষি বিষয়ক পত্রিকা। যারা কৃষিকার্যের সঙ্গে যুক্ত, কৃষি ও উৎপাদন সংক্রান্ত নানা জ্ঞাতব্য বিষয়ে বিবিধ রচনা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের সহায়তা করাই ছিল পত্রিকার উদ্দেশ্য। যদিও পত্রিকার শীর্ষদেশে ছাপা হয়েছে – “কৃষি, সাহিত্য, সংবাদাদি বিষয়ক সাপ্তাহিক পত্র”, কিন্তু কিছু কিছু সংবাদ পরিবেশিত হলেও সাহিত্য বিষয়ক রচনার সংখ্যা ছিল নিতান্তই নগণ্য। শুরুতে ‘কৃষক’ ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এটির ১ম খন্ড ১ম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ৮ই আশ্বিন সোমবার ১৩০৭ বঙ্গাব্দে, পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১৬। সম্পাদক ছিলেন সিটি কলেজের অঙ্কশাস্ত্র ও বিজ্ঞানের ভূতপূর্ব অধ্যাপক নগেন্দ্রনাথ স্বর্ণকার এম, এ। প্রথম সংখ্যার বিষয়সূচী ছিল – ‘সূচনা’, ‘বিবিধ সংবাদ’, ‘কলিকাতা সহরে বন্যা’, ‘গাছের নাম নিরূপণ’, ‘কৃষি সংবাদ’, ‘কলিকাতা গেজেট’, ‘কলিকাতা’, ‘মফঃস্বল সংবাদ’, ‘যুদ্ধ সংবাদ’, ‘মৃত্তিকা তত্ত্ব’, ‘প্রকৃত ঘটনা’, ‘বাবলা’, ‘বাগানের মাসিক কার্য্য’, ‘পত্রাদি’, ‘ইক্ষুরোগ’।

যে কোনো পত্রিকার সূচনা অংশে সাধারণত পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ও দিশা সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়। ১ম খন্ড ১ম সংখ্যার ‘সূচনা’ থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি –

“ আজকাল আমাদের দেশে জনসাধারণের মন কিয়ৎপরিমানে বাণিজ্য ব্যবসায়ের দিকে আকৃষ্ট হইয়াছে। অনেকে ইহাকে উন্নতির লক্ষণ বলিয়া মনে করেন। অবশ্য ইউরোপ অথবা আমেরিকায় বাণিজ্য ও ব্যবসায়ে যেরূপ উৎসাহ ও আগ্রহ দৃষ্ট হইয়া থাকে এতদ্দেশে তাহার সহস্রাংশের একাংশও দেখিতে পাওয়া যায় না এবং আমাদের অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিলে তাহা আশা করাও অন্যায়। কিন্তু অতি ক্ষীণ হইলেও সামান্য যে উৎসাহ শিখা দেখা দিয়াছে তাহা নিবাইতে দেওয়া উচিত নহে। হয়ত সময়োচিত ইন্ধন পাইলেই তাহা কালক্রমে উজ্জ্বল আলোতে পরিণত হইতে পারে। ।
“ কৃষি ব্যবসায়ের একটি প্রধান অঙ্গ। ভারতবর্ষের লোককে ইহা বিশদভাবে বুঝাইতে হইবে না, কারণ কৃষিজীবির সংখ্যা ভারতবর্ষের ন্যায় অপর কোন দেশেই দৃষ্ট হয় না। কিন্তু কৃষিজীবির সংখ্যা অত্যধিক হইলেও কৃষিকার্য্যে উন্নতির অন্তরায় এত অধিক য, আমাদের দেশের কৃষক বিদেশীয় কৃষকদের সহিত প্রতিযোগিতা করা দূরে থাকুক , তাহারা নিজেদের অন্ন সংস্থানও করিতে পারে না। কৃষিকার্য্যের অন্তরায় নিরাকরণ করা সকল সময়ে কৃষকের সাধ্যায়ত্ত নহে। কিন্তু দেশের জনসাধারণ সকলে মিলিয়া চেষ্টা করিলে বোধ হয় এই সমস্ত অন্তরায়ের কিয়দংশ দূরীভূত হইতে পারে। অস্মদ্দেশীয় শিক্ষিত ব্যক্তিগণ যদি আমাদের কৃষিকার্য্যের দোষগুণাবলী , তৎসমূহ নিরাকরণের উপায়, বিদেশীয় বৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতি এবং দেশ কাল অবস্থা অনুসারে তাহা প্রবর্ত্তনের যুক্তি যুক্ততা সম্যকরূপে আলোচনা করেন, তাহা হইলে কৃষিকার্য্যের কিয়ৎ পরিমাণে উন্নতি হওয়া সম্ভব। আমরা উক্ত আশা প্রণোদিত হইয়াই এই পত্রিকা প্রকাশ করিলাম। এই নভেল-নাটক-প্লাবিত বঙ্গদেশে কেবল কৃষিকার্য্য সম্বন্ধীয় পত্রিকা যে কতদূর আদৃত হইবে, তাহা সকলেই বুঝিতে পারেন। দুই একটি কৃষি-পত্রিকার অদৃষ্ট ইহার বিশেষ পরিচায়ক। আমরা তজ্জন্যই কৃষি প্রবন্ধাদি ভিন্ন অপরাপর সহজপাঠ্য প্রবন্ধ ও সংবাদ এই পত্রিকায় প্রকাশ করিব। এই স্থলে ইহাও বলা আবশ্যক যে অনেক ভদ্রমহোদয়গণ পত্রিকা প্রকাশ হইবার পূর্ব্বেই গ্রাহক হইয়া আমাদের যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করিয়াছেন, তাহারা আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদের পাত্র। অনেক পরিমানে তাহাদের উৎসাহে উৎসাহিত হইয়া এবং আমাদের এসোসিয়েসনের নিকট যে সমস্ত ইংরাজী ভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ উপদেশ, যুক্তি ইত্যাদির জন্য পত্র লিখিয়া থাকেন, তাহাদের সুবিধার্থে আমরা এই পত্রিকা প্রচার করিলাম।
“ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা যে কত ব্যয় ও আয়াস সাধ্য তাহা ভুক্তভোগী ব্যক্তি মাত্রেই জানেন, এস্থলে ইহা বলা বাহুল্য যে, এই পত্রিকার জীবন সম্পূর্ণরূপে দেশ-হিতৈষী মহোদয়গণের সহানুভূতির উপর নির্ভর করিতেছে। পত্রিকা যাহাতে সর্ব্বতোভাবে জনসাধারণের মনোরঞ্জন করিতে পারে এবং দেশীয় কৃষি ব্যবসায়ীগণের সর্ব্ববিধ প্রকারে মঙ্গল সাধন করিতে পারে – ইহার প্রচারকগণ তজ্জন্য বিশেষ চেষ্টিত থাকিবেন। ......”

উপরে যে এসসিয়েসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা ‘ভারতীয় কৃষি-সমতি’। এর পরিচয় পত্রিকার অন্য একটি সংখ্যায় দেওয়া হয়েছে –

“ এই কৃষি-সমিতি (ইন্ডিয়ান গারডেনিং এসসিয়েসন) ১৮৯৭ সালে স্থাপিত। ইতিপূর্ব্বে ই, বি, এস রেলের সোধপুর স্টেসনের নিকট ইহার পরীক্ষা ক্ষেত্র ছিল। ক্রমে ক্ষেত্রটি বাড়াইবার আবশ্যক হওয়ায় এবং অন্য অসুবিধা নিবারণের জন্য দক্ষিণ বারুইপুর স্টেসনের নিকট গোবিন্দপুরে ইহার পরীক্ষা ক্ষেত্র স্থানান্তরিত করা হয়। ইহার চতুর্দ্দিকেই সাধারণ চাষিগণের ক্ষেত্র।”

কৃষিকার্য্যে গবেষণা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যেই এসসিয়েসনের সৃষ্টি। প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত কিছু কিছু রচনার পরিচয় দেওয়া যেতে পারে। ‘বিবিধ সংবাদ’ শিরোনামে পরিবেশন করা হয়েছে কিছু সংবাদ। কয়েকটির উল্লেখ করছি –

“ চৈতন্য লাইব্রেরী – “লাইফ এন্ড টাইমস অফ আকবর” (Life and Times of Akbar) বিষয়ে ইংরাজিতে সর্ব্বোৎকৃষ্ট প্রবন্ধ লেখক চৈতন্য লাইব্রেরী হইতে “উডবারণ সুবর্ণপদক” (The Woodburn Gold Medal) পুরস্কার পাইবেন। ছোটলাট এই প্রবন্ধটি পছন্দ করিয়া দিয়াছেন। এবং “দুর্ভিক্ষ তাহার কারণ ও নিবারণের উপায়” সম্বন্ধে বাঙ্গালা ভাষায় সর্ব্বোৎকৃষ্ট দুইটি রচনার জন্য দুইটি রৌপ্য পদক উক্ত লাইব্রেরী হইতে পুরস্কার দেওয়া হইবে।
“ মজুরের অভাব – আজকাল পঞ্জাবে আবাদের সময়, এজন্য কৃষি মজুরের খুব অভাব দাঁড়াইয়াছে। গভর্নমেন্ট উক্ত প্রদেশে দুর্ভিক্ষ সাহায্য ভান্ডার স্থাপিত করিবার আদেশ দিয়াছেন।
“ জীবন সংগ্রাম – পৃথিবী জুড়িয়া জীবন-সংগ্রামের অট্টরোল ধ্বনিত হইতেছে। এই অট্টরোলের ক্ষীণ আভাস দিতেছি। ঘটনা খাস বিলাতের। লন্ডনের পুলিশ আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থিত হইলে সেদিন এক সুপন্ডিত বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী, লর্ড সলিসবারির আত্মীয়; কিন্তু অন্নের সংস্থান নাই। আমার রচনাশক্তি আছে। সংবাদপত্রের রিপোর্টার এই কথাটি যদি স্ব স্ব পত্রে প্রকাশ করেন তাহা হইলে ঘোর বিপদ হইতে হয়ত উদ্ধার হইতে পারি। ম্যাজিষ্ট্রেট রিপোর্টারগণকে সংবাদ প্রকাশ করিতে অনুরোধ করেন। কাজকর্ম্ম কিন্তু জুটে নাই! লর্ড সালিসবারির আত্মীয়ের এই দুর্দ্দশা! অপরম্বা কিং ভবিষ্যতি!”

এর পরের রচনা ‘কলিকাতা সহরে বন্যা’। এই রচনাটির সবটুকুই উধৃত করছি, কারণ প্রায় ১২৫ বছর আগের কলকাতার সঙ্গে এখনকার বানভাসি কলকাতার সাদৃশ্য স্পষ্ট। উল্লেখিত বর্ণনায় ‘রিপোর্টারের পত্র – বৃহস্পতিবার’ শিরোনামে বলা হয়েছে –

“ গত মঙ্গলবার হইতে দিবারাত্র অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাত হইতেছে। সহরের প্রায় অধিকাংশ জলে নিমগ্ন, চারিদিকে জলে জলময়। অলি গলিরত কথাই নাই। বড় রাস্তাগুলি প্রায় সমস্ত জলমগ্ন। স্থানে স্থানে রাস্তা সামান্য জাগিয়া আছে মাত্র। জোড়াসাঁকোতো সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবিয়া যায়। হেদুয়া তালাও, লাল দীঘি, গোল দীঘি জলপ্লাবিত হইয়া রাস্তার সহিত একাকার হইয়াছে। রাস্তাগুলি স্রোতস্বিণীতে পরিণত হইয়াছে। চতুর্দ্দিকে খরস্রোত চলিতেছে। রাস্তায় মৎস্যকূল ক্রীড়া করিতেছে, বিস্তর লোক মাছ ধরিতেছে। বিডন স্কোয়ার, ঠনঠনে কালীতলা, হাটখোলা, জোড়াসাঁকোতো সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবিয়া যায়। এবার সার্কুলার রোডের ফুটপাত পর্য্যন্ত ডুবিয়াছে। ব্যাপার নিতান্তই গুরুতর বলিতে হইবে। এ দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। ৮!১০ বৎসর পূর্ব্বে ১ বৎসর রাস্তায় পান্সি চলিবার উপক্রম হইয়াছিল। কিন্তু এমনটি হয় নাই – দৃশ্য চমৎকার। ট্রাম বন্ধ হইয়াছে রাস্তায় যান বাহনাদি কিছুই নাই। বাটীর দ্বারদেশ ধৌত করিয়া কল কল শব্দে স্রোত বহিতেছে। দৃশ্য অপূর্ব্ব হইলেও ভয়ানক। বস্তিগুলি একেবারে জলে ডুবিয়া গিয়াছে। গরীব প্রজা সকলের উঠানে এক হাঁটু জল, রন্ধনশালা হইতে হাঁড়ি ভাসিয়া গিয়াছে, শয়ন ঘরের মেজেতেও জল উঠিয়াছে। কেহ কেহ সামান্য তৈজস পত্রাদি লইয়া তক্তপোষ আশ্রয় করিয়াছে, কাহাকেও গৃহ পরিত্যাগ করিয়া কোন গৃহস্থের রোয়াক বা গাড়ীবারান্ডার নীচে আশ্রয় লইতে হইয়াছে। বৃষ্টিতে কেরাণীকুলকে আকুল করিয়াছে। অনেকে লোক পাঠাইয়া বা নিজে যাইয়া ট্রাম ছাড়িবে কিনা খোঁজ লইতেছেন – অনেকেরই আজ mail day (মেলের দিন) কেহ বা খাজাঞ্চি কেহ বড় বাবু কামাই করেন কি সাধ্য! - কেহ বা কি জানি কিসে কি হয় ভাবিয়া বাহির হইতে বাধ্য হইয়াছেন – অন্ন চিন্তা চমৎকারা! দুই এক জন বা অতিকষ্টে অনেক যোগাড় যন্ত্র করিয়া সন্তরণশীল অশ্বযোজিত শকটে আরোহনপূর্ব্বক সুবিস্তীর্ণ জলরাশিকে তরঙ্গাকুল করিয়া চিত্রবৈচিত্রে দৃশ্যটিকে সুন্দর হইতে সুন্দরতর করিয়া অফিস যাইতেছেন। আমাদের মিউনিসিপালিটীর অনুগ্রহে কালক্রমে পরিণামে আমরা আরোও কত কি দেখিতে পাইব!
“ বৃষ্টির এখনও বিশ্রাম নাই। জলও কমিতেছে না। অধিকক্ষণ এরূপ অবস্থা থাকিলে গরীব লোক গৃহশূণ্য হইতে হইবে। ......”

এ পর্যন্ত আলোচিত রচনায় কৃষি সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। পরের রচনাটিকে রচনা না ব’লে বিজ্ঞপ্তি বলা যায়। ‘গাছের নাম নিরূপণ’ শিরোনামে জানানো হয়েছে – “ ‘কৃষকের’ পাঠকদিগের মধ্যে কাহারও কোনো গাছের নাম জানিতে হইলে, ফুল সমেত সেই গাছের ছোট্ট একটি ডাল সম্পাদকের নামে পাঠাইবেন। ফুলসহ শাখাটি ব্লটিং কাগজের মধ্যে রাখিয়া দুই পিঠে দুই খানি শক্ত পিসবোর্ড দ্বারা চ্যাপ্টাভাবে প্যাক করিয়া স্যাম্পল পোষ্টে পাঠাইতে হইবে। বেয়ারিং পত্রাদি গৃহীত হইবে না।”

‘কৃষি সংবাদ’ শীর্ষক রচনায় রপ্তানির সংবাদে জানান হয়েছে – “সাতাইশ হাজার মণ শস্য শীঘ্রই কলিকাতা হইতে চীনে প্রেরিত হইবে। চীনে যে আগুন লাগিয়াছে।” (এখানে ‘আগুন লাগিয়াছে’ অর্থ ঠিক পরিষ্কার নয় )। ‘তুর্কীর গোলাপ চাষ’ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘স্কোয়াস বা বিলাতী কদু’ সম্বন্ধে লেখা হয়েছে –

“ বিলাতী কদু বা লাউ চারা এক প্রকার পোকায় দুই পাঁচ দিনের মধ্যে পাতা খাইয়া নষ্ট করিয়া ফেলে। এই কীটসকল স্কোয়াসে চারা উৎপন্ন হইবার পূর্ব্বে বাগানের কোন স্থানে দৃষ্ট না হইলেও চারা উৎপন্ন মাত্রই দলে দলে আসিয়া পাতা খাইয়া গাছ নষ্ট করে। স্কোয়াসের বীজ তারপিন তেলে ভিজাইয়া বপন করিলে , ছোট চারায় তারপিনের গন্ধ থাকে এবং উক্ত কীট সকল ইহার পাতা নষ্ট করিতে পারে না। কথিত প্রনালী পরীক্ষা করিয়া দেখা উচিত।”

এছাড়াও আলোচিত হয়েছে ‘আলুর পচন নিবারণের উপায়’ ইত্যাদি।

‘কলিকাতা গেজেট’ (১৯শে সেপ্টেম্বর ১৯০০) শিরোনামে কলকাতায় বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের বদলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। অধিকাংশ রচনাতেই লেখকের নাম ছিল না। তবে ‘মৃত্তিকা তত্ত্ব’ রচনায় প্রবোধচন্দ্র দে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ধরণের মাটি এবং কৃষি বিষয়ে তাদের উপযোগিতার কথা বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।

‘প্রকৃত ঘটনা’ শিরোনামে একটি সত্য ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এটির সঙ্গে কৃষির কোন যোগ না থাকলেও সেকালের সমাজ ব্যবস্থার (একালে এখনো রয়েছে) একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। ঘটনাটি উধৃত করা যাক –

“ জেলা মেদিনীপুরে, নিশ্চিন্তপুর মহকুমায়, ধর্ম্মদাস বাবু মুনসেফী করেন। মৌলিক কায়স্থ, পিতার একমাত্র পুত্র। পিতা বৃদ্ধ বয়সে, একমাত্র পিতৃভক্ত পুত্রের উপার্জনে বিশিষ্টরূপে সংসারক্ষেত্রে সম্ভ্রান্তভাবে দিনপাত করেন। প্রতিমাসে বেতনের সমস্ত টাকা ধর্ম্মদাস পিতার নিকটে পাঠাইয়া দেন। পিতাও মাসে মাসে পুত্রের আবশ্যক মত সমস্ত খরচ পত্র দেন। আজ ২ মাস হইল পুত্র আর পিতাকে টাকাও পাঠান না, পত্রও লিখেন না। অবশ্য বধূমাতা পুত্রের নিকটে আছেন। বৃদ্ধ পিতা মনক্ষোভে, অভিমানে আজ তিন দিনের পথ অতিক্রম করিয়া পুত্রের নিকট আসিয়া উপস্থিত। পরস্পর প্রণামালিঙ্গনের ও কুশলসংপ্রশ্নের পর, টাকা না পাঠাইবার কারণ পিতা জিজ্ঞাসা করিলেন। পুত্র কহিল – পিতা বন্ধকী সম্পত্তি যতদিন দায়মুক্ত না হয় ততদিন সত্ত্বাধিকারীর ত কোন অধিকার থাকে না। পিতা উত্তর দিলেন – বাপু বন্ধকী সম্পত্তি কি ? - আমি ত বুঝিলাম না। পুত্র। পিতা, বুঝিলে বোধ হয় এ সর্ব্বনাশ ঘটিত না। স্মরণ আছে কি আমাকে বন্ধক দিয়া আপনি এক দিন ৩০০০ টাকা লইয়াছিলেন। যতদিন সুদসমেত সেই ৩০০০ টাকা পরিশোধ করিতে না পারি; ততদিন আমার অর্থ আপনার নহে। ততদিন আমি আপনার পুত্র নহি। পিতা। স্থির হও ধর্ম্মদাস, স্থির হও। তোমার মস্তিষ্ক বিকৃত হইয়াছে। ছুটি লইয়া বাটী চল; আমি তথায় বৈদ্য দ্বারা চিকিৎসা করাইব। পুত্র। চিকিৎসা পরে করাইবেন। আপাততঃ যাহা করিয়াছি শুনুন :- স্মরণ আছে কি ১১ বৎসর পূর্ব্বে এই নিশ্চিন্তপুরে এক নিরীহ ভদ্রলোকের কন্যার সহিত আমার বিবাহ দিয়াছিলেন। কালমাহাত্ম্যে আপনার ন্যায় সদাশিবের মস্তিষ্ক বিলোড়িত হইয়াছিল। নগদ ৩০০০ টাকা লইয়া আপনার পুত্রের বিবাহ দিয়াছিলেন। আপনি জানিলেন – বিবাহ দিলেন, আমিও তখন তাহাই বুঝিয়াছিলাম। কিন্তু এখন দেখিতেছি, আমার মস্তকে বজ্রাঘাত পড়িয়াছে। শ্বশুর মহাশয় তাহার ভদ্রাসন জমাজমী প্রভৃতি সমস্ত বন্ধক দিয়া সেই ৩০০০ টাকা সংগ্রহ করিয়াছিলেন। ঋণ পরিশোধের উপায় কিছু না পাইয়া, উত্তমর্ণের কটুক্তি অসহ্য বোধে, উদ্বন্ধনে দেহ বিসর্জ্জন করিয়াছেন। বিধবা অল্পদিন পরে উত্তমর্ণের তাড়নায় সামান্য কুটির আশ্রয় করিয়া, কোন দিন অনশনে কোন দিন অর্দ্ধাসনে দিনপাত করিতেছিলেন। আমি সন্ধান পাইয়া তাঁহাকে তাঁহার ভদ্রাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছি। স্বয়ং সেই উত্তমর্ণদিগের নিকট গিয়া বন্দোবস্ত করিয়া ভদ্রাসন তাঁহার নামে করিয়া দিয়াছি। আমার সামান্য খরচ ও সপুত্র বিধবার গ্রাসাচ্ছদনের ব্যয় করিয়া আমার বেতনের যাহা অবশিষ্ট থাকে, গত দুই মাস সেই সমস্ত উত্তমর্ণকে দিয়াছি। ভবিষ্যতে যত দিন ঋণ পরিশোধ না হইবে, এই নিয়মে টাকা পরিশোধ করিতে প্রিতাজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছি। পিতা। আঃ! আবাগের বেটা! বলিস কি ? পুত্র। আবার বলাবলি কি ? প্রথমেইত বলিয়াছি যে আমি আপনার বন্ধকী সম্পত্তি। যতদিন ঋণ পরিশোধ না হয়, এবং বিধবার সেই অপগন্ড সন্তানের কোন একটা বন্দোবস্ত করিতে না পারি, ততদিন আমি আপনার পুত্র নহি এবং আপনি আমার পিতা নহেন। নির্দ্দিষ্ট কালাবসানে আপনার পুত্র আপনারই থাকিবে। পিতা অধোমুখে নিরুত্তরে, ভগ্নহৃদয়ে, ম্লানবদনে, মন্দগমনে গৃহে প্রত্যাগমন করিলেন। বলা বাহুল্য ধর্ম্মদাস প্রতিজ্ঞাপালিনে বিমুখ হন নাই। বঙ্গীয় যুবক, সাবধান! উন্মত্ত ধনলিপ্সু পিতার লোভে বশীভুত হইয়া চিরজীবন ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য হইও না। .........”

‘কলিকাতা’ শীর্ষক রচনায় কলকাতার আশেপাশের সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। দু’একটি নমুনা –

“প্রবেশিকা পরীক্ষা – প্রেসিডেন্সি বিভাগভুক্ত যে সকল ছাত্র কোন বিদ্যালয়ে পাঠ করেনা কিম্বা যাহারা শিক্ষকতা কার্য্যে নিযুক্ত থাকিয়া প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ইচ্ছা করে তাহাদের নির্ব্বাচন পরীক্ষা ১৯০১ সালের ৭ই ও ৮ই জানুয়ারিতে কলিকাতা ৪নং ডালহাউসি স্কোয়ার ইনস্পেক্টার অফ স্কুল অফিসে গৃহীত হইবে। “নূতন ষ্টেশনের প্রস্তাব – উল্টাডিঙ্গির রাস্তায় যেখানে রেলবর্ত্ম আছে, সেই স্থানে একটা ষ্টেশন সংস্থাপনের জন্য বহু লোকের স্বাক্ষরিত একখানি দরখাস্ত ইষ্টার্ণ-বেঙ্গল-ষ্টেট রেলওয়ের কার্য্যাধ্যক্ষ সমীপে দাখিল করা হইয়াছে। প্রকৃতপক্ষে এই ষ্টেশন সংস্থাপিত হইলে অনেকের বিশেষতঃ ব্যবসায়ীদিগের বিশেষ সুবিধা হইবে।”

‘মফঃস্বল সংবাদ’-এ মুর্শিদাবাদ, রাঁচি ও দিল্লীর সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। ‘ইক্ষুরোগ’ শীর্ষক রচনায় আখ চাষ ও আখের কিছু রোগ সম্বন্ধে আলোচনা রয়েছে। কৃষি সংক্রান্ত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে সম্পাদক সেটা জানাতে বলেছেন। তারই সূত্র ধরে আসামের বড় পাথর এলাকার দেবেশ্বর গোস্বামী তার আখের ক্ষেতে ইক্ষুরোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করে সম্পাদকের নির্দেশ অনুসারে দু’বান্ডিল আখ প্যাক ক’রে পাঠিয়েছিলেন। সেই রোগের বিবরণ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে ২য় সংখ্যায় বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পাদক মহাশয় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রতি সংখ্যাতেই ‘যুদ্ধ সংবাদ’ বা ‘যুদ্ধ প্রসঙ্গ’ নামক একটি রচনা প্রকাশিত হয়েছে। ‘কৃষক’ পত্রিকা সাপ্তাহিক থাকাকালীন যে সব রচনা বেরিয়েছে তার কয়েকটির উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘মফঃস্বল সংবাদ’, ‘কৃষি সংবাদ’, ‘যুদ্ধ সংবাদ’, ‘পত্রাদি’, ‘কলিকাতা গেজেট’, ‘বিবিধ সংবাদ’, ‘বাগানের মাসিক কার্য্য’ প্রভৃতি কয়েকটি বিভাগ নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে – ‘দেশী সবজী’, ‘নারিকেল’, ‘গাছে জল দেবার ব্যবস্থা’, ‘খোয়াড় সংস্কার’, ‘কলিকাতার বাজার দর’, ‘বেগুন গাছে পোকা’, ‘দন্ত ও পান’, ‘নূতন কৃষিযন্ত্রের পরীক্ষা’, ‘কাপাস তুলা’, ‘ক্ষেত্রে উই’, ‘শিল্পনাশে সর্ব্বনাশ’, ‘নীতিকথা’, ‘অর্থকরী বিদ্যার অর্থ কি ?’, ‘বীজ শীঘ্র অঙ্কুরিত করিবার একটি সহজ উপায়’ ইত্যাদি। ১ম খন্ডে ছয় মাসে ২৪টি সংখ্যা বেরিয়ে ‘কৃষক’ মাসিকে পরিণত হয়। ১৩০৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখে ২য় খন্ডের ১ম সংখ্যাটি মাসিক হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এ সম্বন্ধে উক্ত সংখ্যায় ‘বিবিধ সংবাদ ও মন্তব্য’ শিরোনামে সম্পাদক লিখেছেন –

“ ‘কৃষক’ ছয়মাস কাল সাপ্তাহিক নিয়মে ২৪শ সংখ্যা প্রকাশিত হইয়া প্রথম খন্ড শেষ হইয়াছে। দ্বিতীয় খন্ডের প্রারম্ভ হইতে ‘কৃষক’কে মাসিক নিয়মে প্রকাশিত করিতে বাধ্য হইলাম। সাধারণের সহানুভূতির অভাবেই যে ‘কৃষক’ মাসিক হইল তাহাতে সন্দেহ নাই। প্রথম খন্ডের শেষ সংখ্যা প্রকাশকালে আমরা ভাবি নাই যে ‘কৃষক’কে দ্বিতীয় খন্ডের প্রথম সংখ্যা হইতেই মাসিক করিতে হইবে। সে যাহা হউক, ‘কৃষক’ মাসিক হইল বলিয়া, ‘কৃষক’ যে উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হইয়াছিল, তৎসাধনে কোনরূপ ত্রুটি বা অবহেলা প্রদর্শিত হইবে না – বলাই বাহুল্য। যাহাতে গ্রাহকবর্গের অধিকতর মনোরঞ্জন হয়, তৎপক্ষে ‘কৃষকে’র পরিচালকগণ বিশেশ চেষ্টিত থাকিবেন। ‘কৃষক’ এক্ষণে বর্দ্ধিত কলেবরে অর্থাৎ বিজ্ঞাপন অংশ বাদে ছয় ফর্ম্মা করিয়া উৎকৃষ্ট কাগজে প্রতিমাসে প্রকাশিত হইবে। মধ্যে মধ্যে চিত্রাদির দ্বারা ‘কৃষকে’র শোভাবর্দ্ধন করা যাইবে।.........”

‘কৃষকে’র বিভিন্ন সংখ্যায় সবই প্রায় কৃষি-বিষয়ক জ্ঞাতব্য তথ্য সমৃদ্ধ রচনা। অন্য বিষয়ের লেখা খুবই নগণ্য। কৃষি সংক্রান্ত কিছু লেখার উল্লেখ করা যেতে পারে – ‘ফজলী আম্র’, ‘বীজবপন বিধি’, ‘আনারস’, ‘জলকষ্ট’, ‘তরমুজ’, ‘কলম করিবার প্রণালী’, ‘ছোলা’, ‘কামরাঙ্গা’, ‘আমে পোকা ও টক আম মিষ্ট করিবার উপায়’, ‘নারিকেল গাছের সংস্কার’, ‘শাঁক আলু’, ‘কাঁটালের ব্যাধি’, ‘পানের চাষ’, ‘কাঁচা তরকারী ও ফল’, ‘কৃষিকার্য্য অবহেলা বা ঘৃণার কার্য্য নহে’, ‘আলুর রোগ’, ‘গোলাপ ও গোলাপ জাত দ্রব্যাদি’, ‘গাঁদা ও জিনিয়া’, ‘গোরক্ষা ও গোহত্যা’, ‘গোপালন ও দুগ্ধ ব্যবসা’, ‘পটল চাষ সম্বন্ধে দুই চারিটি কথা’, ‘গো-বিজ্ঞান (এগ্রিকলচারল এন্ড ডেয়ারি স্টুডেন্ট লিখিত)’, ‘বাগ বা বাগিচার বেড়া’, ‘ক্ষেতের জল নিকাশ’ প্রভৃতি। ‘বাগানের মাসিক কার্য্য’ প্রতিমাসেই নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া কৃষি বিষয়ে বিবিধ জ্ঞাতব্য তথ্য নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে ‘দেশের ও দশের কথা’। ১৩১৪ বঙ্গাব্দ বৈশাখ থেকে উদ্ভিদ তত্ত্ববিদ নিকুঞ্জবিহারী দত্ত নগেন্দ্রনাথ স্বর্ণকারের সঙ্গে যুগ্মভাবে সম্পাদনার কাজ শুরু করেন, কিন্তু দু’বছর পরেই তার নাম আর দেখা যায় নি। কয়েক বছর পরে তিনি একক ভাবে পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনার কাজে যুক্ত হয়েছেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেশ চন্দ্র চৌধুরী, নলিনীকান্ত রায়চৌধুরী, যামিনীরঞ্জন মজুমদার। ১৩১৭-এর বৈশাখ থেকে পত্রিকার আখ্যাপত্রে ‘ইন্ডিয়ান গার্ডেনিং এসোসিয়েসনের মুখপত্র’ কথাটি মুদ্রিত হতে থাকে। ২য় খন্ড ৩য় সংখ্যায় (আষাঢ় ১৩০৮) ‘ইন্ডিয়ান গার্ডেনিং এসোসিয়েসন’ (১৮১, আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা) সংস্থাটির ‘পেট্রন’ ও ‘গ্রাহক শ্রেণীভুক্ত হইবার নিয়মাবলী’ বিজ্ঞাপিত হয়েছে। সেইসঙ্গে সদস্যদের বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেবার কথাও ঘোষিত হয়েছে। মাসিক পত্রিকার প্রতি সংখ্যার অগ্রিম বার্ষিক মূল্য ছিল দু’টাকা, প্রতি সংখ্যা তিন আনা। সাড়ে তিন আনার ডাক টিকিট পাঠালে এক সংখ্যা নমুনা হিসাবে পাঠানোর কথাও জানান হয়েছে। পরে অবশ্য বার্ষিক মুল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল তিন টাকা তিন আনা এবং প্রতি সংখ্যা পাঁচ আনা। কৃষি প্রধান দেশে কৃষি বিষয়ক একাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে সেসময়ে কৃষিকার্যে নিরত অনেকের পক্ষে এসব পত্রিকা পড়ে কাজে লাগানোর মত যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা হয় ত ছিল না। কৃষি বিষয়ে প্রকাশিত অন্য কয়েকটি পত্রিকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১২৮৫-র মাঘ মাসে ‘পাইকপাড়া নর্শরি’ থেকে নৃত্যগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের প্রকাশনায় বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কৃষিতত্ত্ব’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। পরে সম্পাদকের নাম ছাড়া শুধু প্রকাশকের নাম দিয়েই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি সংখ্যার আখ্যাপত্রে উদ্ধৃত হ’ত সংস্কৃত একটি শ্লোক – “কৃষির্ধন্যা কৃষির্ম্মেধা জন্তুনাং জীবনং কৃষিঃ।” পত্রিকাটির প্রকাশনা সাময়িক ভাবে সম্ভবত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, দীর্ঘ ২১ বছর পরে ১৩০৬-এর মাঘ মাসে বাগবাজার ইম্পিরিয়াল নার্সারি থেকে একই নামে ‘কৃষি-বিষয়ক সচিত্র মাসিক পত্র’-টির প্রকাশক ছিলেন নৃত্যগোপাল চট্টোপাধ্যায়। বরানগর নার্সারি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ‘কৃষি পদ্ধতি’ নামক মাসিক পত্রিকা, সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ; প্রকাশকাল অগ্রহায়ণ ১২৯০। ‘কৃষি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা’ ‘কৃষি গেজেট’ বেরিয়েছিল ১২৯২-এর বৈশাখে ; সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গিরিশচন্দ বসু। ‘একমাত্র কৃষিবিষয়ক মাসিকপত্র’ শিরোনামে ‘কৃষি-সম্পদ’ পত্রিকা নিশি কান্ত ঘোষের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ১৩১৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে। বর্তমানে আলোচ্য ‘কৃষক’ পত্রিকাটি দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বেশি সময় সচল ছিল। বিভিন্ন সময়ে সম্পাদক পরিবর্তিত হলেও প্রত্যেকেই কৃষি-বিষয়ক মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশ করে কৃষকদের সাহায্যার্থে আন্তরিক ভাবে সচেষ্ট ছিলেন।


চিত্র – ১ : ‘কৃষক’ পত্রিকার একটি সংখ্যার আখ্যাপত্র।


চিত্র – ২ : পত্রিকায় প্রকাশিত বিবিধ বিজ্ঞাপন।

  চিত্র – ৩ : পত্রিকায় প্রকাশিত বিবিধ বিজ্ঞাপন।



    চিত্র - ৪ :পত্রিকায় প্রকাশিত বিবিধ বিজ্ঞাপন।



চিত্র - ৫ : কৃষি সংক্রান্ত পত্রিকা ‘কৃষি-সম্পদে’র একটি প্রচ্ছদ পত্র।



লেখক পরিচিতি: বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর (IIEST,shibpur) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.