মধ্যপন্থায়
বিশ্বাসী ‘সম্বাদ সুধাকর’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত
হয় ১৮৩১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী ( ১৩ই ফাল্গুণ, ১২৩৭ বঙ্গাব্দ
) প্রেমচাঁদ রায়ের সম্পাদনায়। তিনি ছিলেন “কাঁচড়াপাড়া
নিবাসী বৈদ্যকুলোদ্ভব”। ২৮শে ফেব্রুয়ারীর ‘সমাচার চন্দ্রিকা’-য়
প্রকাশিত খবর :
“আমরা আল্হাদপূর্ব্বক পাঠকবর্গকে জ্ঞাত করাইতেছি গত ১৩
ফাল্গুণ বুধবার প্রাতে সম্বাদ সুধাকর নামক সমাচার পত্র
এতন্নগরের যোড়াবাগান স্ট্রীটে শ্রীযুত দেবীচরণ প্রামাণিকের
আলয়ে মুদ্রিত হইয়া প্রকাশ হইয়াছে ।”
পত্রিকাটির জন্য একটি আলাদা মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবস্থা করা
হয়েছিল। পত্রিকাটির আয়ু ছিল চার বছর।
‘সম্বাদ সুধাকর’ পত্রিকাটির প্রকাশকাল ও স্থায়িত্ব সম্বন্ধে
গবেষক ব্রজেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য উপরে দেওয়া
হল। এবার সাময়িক পত্রের অন্য এক গবেষক মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি
‘জন্মভূমি’ পত্রিকার ১৩০৪ বৈশাখ সংখ্যায় ‘বাঙ্গালা সংবাদ-পত্রের
ইতিহাস’ শীর্ষক প্রবন্ধে ‘সম্বাদ সুধাকর’ বিষয়ে যা প্রকাশ
করেছেন, সেটা হুবহু নীচে উধৃত হল –
“১৮৩০ খৃষ্টাব্দ (১২৩৭ সাল)
“সংবাদ সুধাকরের” জন্মাব্দ। “সংবাদ প্রভাকরের” জন্ম ঐ
বৎসরেই হইয়াছিল। যতদূর সন্ধান লইতে পারিয়াছি, তাহাতে স্থির
হইল, ঐ দুই পত্রিকা এই বর্ষে প্রকাশিত হয়। “দূত” নামক
পত্রিকায় লিখিত হইয়াছিল – ১৮৩০ খৃষ্টাব্দে “সুধাকর” নামে
এক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। “সংবাদ সুধাকর” এই সম্পূর্ণ নামে
অর্দ্ধাংশ বা দ্বিতীয় ভাগ লইয়া “দূত” সম্পাদক, উহাকে “সুধাকর”
অভিহিত করিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই’ এরূপ সংক্ষিপ্তভাবে
নামের নির্দ্দেশ, অচল নয়। সচরাচর কার্য্যকালে আমরা কি
দেখিতে পাই না যে, “সমাচার-চন্দ্রিকা”, “সংবাদ-প্রভাকর”,
“সংবাদ-রসরাজ”, “সংবাদ-ভাস্কর”, ইন্ডিয়ান মিরর” ইত্যাদিকে
লকে সংক্ষেপে “চন্দ্রিকা”, “প্রভাকর”, “রসরাজ”, “ভাস্কর”,
“মিরর” বলিয়াই পরিচিত করেন। তাহাতে উচ্চারণের সুবিধা হয়
বলিয়াই, ঐরূপ করার প্রবৃত্তি। কেন না, এই বৎসরে “সংবাদ-প্রভাকর”
ও “সংবাদ-সুধাকর” ভিন্ন অন্য পত্রিকার উদ্ভব হয় নাই। ইহার
প্রমাণান্তর আছে। তাহা এই,- ১২৪৭ সালের মাঘের শেষার্দ্ধে
( অর্থাৎ ১৮৪০ খৃষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ) কলিকাতা ক্রিশ্চিয়ান
অবসারভার-নাম্নী পত্রিকায় ঐ অব্দেই “সংবাদ-সুধাকরের” উৎপত্তির
প্রসঙ্গ উল্লিখিত হইয়াছে। সুতরাং ইহা প্রমাণ সিদ্ধ ঘটনা
বটে।
এই পত্রিকা বিষয়ে জ্ঞাতব্য অধিক নাই। প্রেমচাঁদ রায় নামক
এক ব্যক্তি ইহার সম্পাদকতায় ব্রতী ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে
“সংবাদ-সুধাকর” লোকের নিকট বিতরণ করিতেন। এইমাত্র “সুধাকর”
সম্বন্ধে জ্ঞাত বিষয়।
উক্ত সম্পাদক প্রেমচাঁদ রায় কে – তিনি কোন জাতীয় – তাঁহার
নিবাস কোথায় – বিদ্যাবুদ্ধিই তাঁহার কীদৃশী ছিল – পত্রিকা
সম্পাদনাকালে উক্ত সম্পাদকের কোন বিঘ্ন ঘটিয়াছিল কি না
– কত বয়ঃক্রমে সম্পাদকতা গ্রহণ করেন – ইত্যাদি অবশ্য জ্ঞাতব্য
বিবরণ নিতান্তই দুর্জ্ঞেয়। এবল আমরা একটী একান্ত প্রয়োজনীয়
বিষয়ের সারোদ্ধারে সমর্থ হইয়াছি; পত্রিকার পরমায়ু ১১ একাদশ
বৎসর হইয়াছিল।”
এই বিভ্রান্তির সমাধান এখন আর সম্ভব নয়। তবে কাউকে ছোট
না করেই বলা যায়, ব্রজেন্দ্রনাথের হাতে তথ্যভান্ডার ছিল
অনেক বিস্তৃত।
দীপক
সেনগুপ্ত