প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র: বঙ্গদূত(সূচী)

       ‘Bengal Herald’ নামে ইংরেজিতে একটি সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশিত হত। এরই সহযোগী পত্রিকা ছিল বাংলায় প্রকাশিত ‘বঙ্গদূত’। পণ্ডিত নীলরতন হালদারের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২৯ সালের ১০ই মে রবিবার । এর পর প্রতি শনিবার এটি প্রকাশিত হতে থাকে । তিনি অবসর গ্রহণ করলে ভোলানাথ সেন পত্রিকাটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন । ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ই মে তারিখের ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় প্রকাশিত খবর :

“এতন্নগরের বারাণসী ঘোষ ষ্ট্রীট নিবাসী শ্রীযুত রাধামোহন সেনের পুত্র শ্রীযুত ভোলানাথ সেন যিনি শ্রীযুত দেওয়ান দ্বারিকানাথ ঠাকুরের অধীনতায় বিষয় কর্ম করেন ঐ সেনজ বঙ্গদূত নামক বাঙ্গালা সমাচার পত্রের প্রকাশক হইয়াছেন প্রায় এক বৎসারাধিক হইবেক এবং তিনি রিফর্মার নামক এক ইংরাজি সমাচার পত্র প্রকাশ করিতেছেন প্রায় মাস ত্রয়াধিক হইবেক ....।”

       অর্থাভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়া ‘বঙ্গদূত’ পুনরায় প্রকাশের উদ্যোগ হয় ১৮৩৯-এর মধ্যভাগে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তর লেখা থেকে জানা যায়, ভোলানাথ সেনের মৃত্যুর পর মহেশচন্দ্র রায় কিছুদিন পত্রিকাটি পরিচালনা করেছিলেন।
‘বঙ্গদূতে’র মাসিক মূল্য ছিল এক টাকা। মোটামুটিভাবে পত্রিকাটি ছিল মধ্যপন্থী। রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তিরা পত্রিকার সঙ্গে ঘণিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। দুটি সংস্কৃত শ্লোকের সঙ্গে বাংলায় লেখা যে কবিতাটি ‘বঙ্গদূতে’র শীর্ষে মুদ্রিত হত, সেটি ছিল -

“ অন্যঅন্যদূতগণ, সামান্য যে বিবরণ, সেইমাত্র কহে সংগোপনে।
তাহাতে সচরাচরে, তত্ত্ব না জানিতে পারে, মুগ্ধ রহে মর্ম্ম অণ্বেষণে।।
অতএব সাধারণ, সর্ব্বজন প্রয়োজন, স্বদেশ বিদেশ সমুদ্ভুত।
সমাচার সমুচ্চয়, প্রকাশ করিয়া কয়, হিতকারী এই বঙ্গদূত।।”

       ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে ‘বঙ্গদূত’ পত্রিকাটির প্রথম বর্ষের কয়েকটি মাত্র সংখ্যা দেখেছেন। সংগৃহীত তথ্য থেকে এখানে কয়েকটি সংবাদ তুলে দেওয়া হল। ‘বঙ্গদূতে’ ব্যবহৃত ভাষা, রচনা শৈলী ও সেকালে সমাজের কয়েকটি চিত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করবে এগুলি।

        ১৮২৯ সালের ২২শে আগস্টে প্রকাশিত –

       “রাধামণি এক স্ত্রীলোকের নিকট দাসী থাকিয়া তাহার কিঞ্চিৎ দ্রব্যাদি চুরি করিয়াছিল এই অপরাধে তাহাকে দুই বৎসরের নিমিত্ত হৌস আফ কারেকশিয়ান অর্থাৎ হরিণবাটীতে কয়েদ থাকিয়া কঠিন শ্রম করিতে আজ্ঞা হইয়াছে।”

        ১৮২৯-এর ২৩শে মে ( ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১২৩৬ ) তারিখে প্রকাশিত –

       “নবীন নিয়ম।। -জেলা হুগলীর অন্তঃপাতি গ্রাম সকলে কয়েক বার ডাকাইতির ঘটনা হইবাতে তন্নিবারণার্থে তত্রস্থ শ্রীযুত বিচারকর্ত্তা কর্ত্তৃক নানাবিধ সদুপায় সাধন সত্ত্বেও দুর্বৃত্তেরা অত্যাচারে ক্ষান্ত নাহইবাতে সম্প্রতি এই এক নবীন নিয়ম স্থাপন করিয়াছেন যে তাঁহার বশীভূত স্থান সকলে দশ দশ গ্রামে এক এক ফাঁড়িদার নিযুক্ত হইবেক আর ঐ দশগ্রামের প্রত্যেক কর্ম্মচারী ও গ্রাম্য প্রহরীরদের নিকট হইতে এইমত অঙ্গীকৃত পত্র লওয়া যাইবেক যে তাহারা পরস্পর প্রত্যেক গ্রামের মঙ্গলামঙ্গলের দায়ী হইবেক।”

         ১০ই অক্টোবর ১৮২৯ (২৫শে আশ্বিন ১২৩৬) তারিখে প্রকাশিত –

       “শারদীয় মহোৎসব।। শ্রীযুত বঙ্গদূত সম্পাদক মহাশয়েষু। - এই কলিকাতা রাজধানীমধ্যে শারদীয়মহোৎসবে ত্রিবিধলোকের আলয়েই জগদীশ্বরীর পূজা হয় সকলে স্বস্বমতে ও বিভবানুসারে নানোপচারে তাঁহার আরাধনা করিয়া থাকেন কেহবা ইতরাঙ্গ রাগরঙ্গের বাহুল্য না করিয়া মুখ্যাঙ্গ হোম যাগ যজ্ঞাদি ও বিবিধোপহারে পূজা সাঙ্গ করেন কেহবা মহাঘটা পূর্ব্বক ঝাড় লন্টন বাদ্য নাচ কাচের আধিক্য পূর্ব্বক প্রকৃত কার্য্য পূজা সংক্ষেপেই সারেন কেহবা উভয়েই সমান আয়োজন করেন তন্মধ্যে কতক লোক ভবনমধ্যে কিরূপ করেন তাহা দুর্গাই জানেন কিন্তু বহির্দ্বারে সারজন সন্তরী স্থাপন করিয়া কিয়দ্ব্যক্তি নিমন্ত্রিত ব্যতীত দর্শনাকাঙ্ক্ষি লোকেরদিগকে ভবন প্রবেশে নিরাশ করেন কিন্তু দ্বারের সম্মুখবর্ত্তি পথ হইয়া গমন করিলে বিহারের পরিবর্ত্তে গাত্রে বেত্র প্রহার করিয়া থাকেন বোধহয় তদ্গৃহপতিরা এই সকল আচরণকেই ভগবতীর সন্তোষের মূল কারণজ্ঞান করেন সে যাহা হউক এবৎসর ৪।৫ স্থানে বৃহৎ সমারোহ হইয়াছিল বিশেষত মহারাজা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের দুই বাটীতে নবমীর রাত্রে শ্রীশ্রীযুত গবরনর জেনেরল লার্ড বেন্টিঙ্ক বাহাদুর ও প্রধান সেনাপতি শ্রীশ্রীযুত লার্ড কম্বরমীর ও প্রধান প্রধান সাহেবলোক আগমন করিয়াছিলেন পরে দুই দণ্ড পর্য্যন্ত নানা আমোদ ও নৃত্যগীতাদি দর্শন ও শ্রবণকরত অবস্থিতি করিয়া প্রীত হইয়া গমন করিলেন। ইংরেজ লোকের গতিবিধি ঐ রাজার দুই বাটী ও রাজা রামচাঁদের বাটী ও দেওয়ান শান্তিরাম সিংহের বাটী এই তিন বাটীতে প্রায় ছিল অন্যত্র অত্যল্প। বিশেষত সিং দেওয়ানের বাটীতে পূজার চিহ্ন যোড়াসাঁকোর চতুরস্র পথে এক গেট নির্ম্মিত হইয়া তদবধি বাটীর দ্বার পর্য্যন্ত পথের উভয় পার্শ্বে আলোক হইয়াছিল তাহাতে যাঁহারা ঐ বাটীর পূজার বার্ত্তা জানেন না তাঁহারাও ঐ গেট অবলোকন করিয়া সমারোহ দর্শনেচ্ছুক হইয়া ঐ অবারিত দ্বার ভবনে গমন করিলেন আপামর সাধারণ কোন লোকের বারণ ছিলনা উপরে নীচে যাঁহার যেখানে ইচ্ছা আসনে উপবিষ্ট হইয়া নৃত্য গীতাদি স্বচ্ছন্দে দর্শন শ্রবণ করিলেন তাহাতে কোন হতাদরের বিষয় নাই। - কস্যচিৎ দর্শকস্য।”

দীপক সেনগুপ্ত

 

 

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।



Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।