প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িক ও সংবাদপত্র: গসপেল ম্যাগাজিন, ব্রাহ্মণ সেবধি (সূচী)

     ‘সমাচার দর্পণ’ ও ‘বাঙ্গাল গেজেটি’ প্রকাশিত হবার পর অনেকেই এ ধরণের আরো পত্রিকা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। খৃষ্টধর্মের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে Baptist Auxiliary Missionary Society ১৮১৯ সালের ডিসেম্বরে ‘গসপেল ম্যাগাজিন’ নামে একটি মাসিকপত্র প্রকাশ করে। এই দ্বিভাষিক পত্রিকাটিতে বা-দিকে ইংরাজি ও ডানদিকে তার বঙ্গানুবাদ থাকত। তবে মাসখানেক পরেই এর একটি বাংলা সংস্করণও প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকাটি কয়েকমাস পরেই বন্ধ হয়ে যায়।

       সে সময়ে বিশেষ করে ধর্মের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও তত্ত্ব সম্বন্ধে প্রায়ই মতভেদ ও বিতর্ক লেগে থাকত। একটি বিশেষ মত প্রকাশ করে কোন প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে তার যুক্তি খণ্ডন করতে বা বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার প্রয়োজনে একটি সম্পূর্ণ নতুন সাময়িকপত্র প্রকাশিত হওয়া সামায়িকপত্রের ইতিহাসে বিরল ঘটনা নয়। ঠিক এমনই ঘটেছিল ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ পত্রটির ক্ষেত্রে। ১৮২১ সালের ১৪ই জুলাই ‘সমাচার দর্পণ’-এ একটি চিঠি প্রকাশিত হলে রামমোহন রায় সেটিকে হিন্দু ধর্মের উপর মিশনারিদের অবাঞ্ছিত আক্রমণ মনে করে তার উত্তরে ‘সমাচার দর্পণ’-এ একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠাতে মনস্থ করেন। রামমোহন শিবপ্রসাদ শর্মা নাম দিয়ে পত্রটি পাঠান এবং সেটিকে ‘সমাচার দর্পণ’-এ ছাপাবার জন্য সম্পাদককে অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্পাদক মহাশয় সম্পূর্ণ পত্রটি প্রকাশ করতে রাজি হন নি, আংশিক প্রকাশ করতে চেয়ে রামমোহন রায়কে জানিয়ে দেন। সম্পাদকের ১লা সেপ্টেম্বরে লেখা পত্রটি ছিল এইরূপ :
“শ্রীযুত শিবপ্রসাদ শর্মা প্রেরিত পত্র এখানে পঁহুছিয়াছে তাহা না ছাপাইবার কারণ এই যে পত্রে পূর্ব্ব পক্ষের সিদ্ধান্ত ব্যতিরিক্ত অনেক অজিজ্ঞাসিতাবিধান আছে। কিন্তু অভিজ্ঞাসিতাবিধান দোষ বহিষ্কৃত করিয়া কেবল ষড়দর্শনের দোষোদ্ধার পত্র ছাপাইতে অনুমতি দেন তবে ছাপাইবার বাধা নাই অন্যথা সর্ব্ব সমেত অন্যত্র ছাপাইতে বাসনা করেন তাহাতেও হানি নাই।”

       রামমোহন আংশিক পত্র প্রকাশনের শর্তে রাজি না হয়ে নিজেই ১৮২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ব্রাহ্মণ সেবধি ব্রাহ্মণ ও মিসিনারি সম্বাদ সং ১ 1821’ (Brahmunical Magazine. The Missionary & the Brahmin No.1) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি প্রকাশিত হয়েছিল পণ্ডিত শিবপ্রসাদ শর্মার নামে তবে বকলমে রামমোহন রায়ই যে তাতে লিখতেন সেটা জানা ছিল। পত্রিকাটি আকারে ছিল ক্ষুদ্র এবং এর তিনটি সংখ্যার মাত্র সন্ধান পাওয়া গিযেছে। ব্রজেন্দ্রনাথের মন্তব্য “সম্ভবতঃ ইহার আর কোন সংখ্যা প্রকাশিত হয় নাই।” কিন্তু কেদারনাথ মজুমদারের মতে ১২ মাসে মোট ১২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল; তবে কেদারনাথ দেখেছেন মাত্র তিন সংখ্যাই। তিনি লিখেছেন –“ ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’র যে তিন সংখ্যা রামমোহন রায়ের বন্ধু-বান্ধবের সতর্ক যত্নে রক্ষিত হইয়া আসিয়াছে, আমরা সে তিন সংখ্যাই মাত্র দেখিয়াছি; অবশিষ্ট নয় সংখ্যা বঙ্গ সাহিত্য হইতে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে।”

       ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’র পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্রথম সংখ্যায় মাত্র তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। (১) ভূমিকা (২) ১৮২১-এর ১৪ই জুলাই ‘সমাচার দর্পণ’-এ প্রকাশিত পত্র। এটি পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। (৩) পত্রটির উত্তর যা ‘সমাচার দর্পন’-এর সম্পাদক ছাপতে চান নি।

       রামমোহন রায় ওরফে শিবপ্রসাদ শর্মা রচিত প্রবন্ধের ভাষা কেমন ছিল? একটু নমুনা দেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হবে না। নীচে কিছুটা উধৃতি দেওয়া হল:
     “শতার্দ্ধ বৎসর হইতে অধিককাল এদেশে ইংরেজের অধিকার হইয়াছে তাহাতে প্রথম ত্রিশ বৎসরে তাঁহাদের বাক্যের ও ব্যবহারের দ্বারা ইহা সর্ব্বত্র বিখ্যাত ছিল যে তাঁহাদের নিয়ম এই যে কাহারো ধর্ম্মের সহিত বিপক্ষতাচারণ করেন না ও আপনার আপনার ধর্ম সকলে করুক ইহাই তাঁহাদের যথার্থ বাসনা পরে পরে অধিকারের ও বলের আধিক্য পরমেশ্বর ক্রমে ক্রমে করিতেছেন। কিন্তু ইদানীন্তন বিশ বৎসর হিল কতক ব্যক্তি ইংরেজ যাঁহারা মিসনরি নমে বিখ্যাত হিন্দু ও মোছলমানকে ব্যক্ত রূপে তাঁহাদের ধর্ম হইতে প্রচ্যুত করিয়া খ্রীষ্টান করিবার যত্ন নানা প্রকারে করিতেছেন। প্রথম প্রকার এই যে নানাবিধ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পুস্তক সকল রচনা ও ছাপা করিয়া যথেষ্ট প্রদান করেন যাহা হিন্দুর ও মোছলমানের ধর্ম্মের নিন্দা ও হিন্দুর দেবতার ও ঋষির জুগুপ্সা ও কুৎসাতে পরিপূর্ণ হয়, দ্বিতীয় প্রকার এই যে লোকের দ্বারের নিকট অথবা রাজপথে দাঁড়াইয়া আপনার ধর্ম্মের ঔৎকর্ষ্য ও অন্যের ধর্ম্মের অপকৃষ্টতা সূচক উপদেশ Kরেন, তৃতীয় প্রকার এই যে কোন নীচলোক ধনাশয় কিম্বা অন্য কোনো কারণে খ্রীষ্টান হয় তাহাদিগ্যে কর্ম দেন ও প্রতিপালন করেন যাহাতে তাহা দেখিয়া অন্যের ঔৎসুক্য জন্মে।.......”
পূর্বে প্রকাশিত ‘দিগ্দর্শনে’র ভাষা অনেক সরল ও প্রাঞ্জল ছিল। উপরে উধৃত রামমোহন রায়ের এই ভাষা পড়ে অনেকে সাধু ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং এক শ্রেণীর লেখক এটাই অনুসরণ করতে থাকেন। বাংলায় সাধু ভাষার প্রচলন এ ভাবেই শুরু বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। “পরবর্তীকালে অক্ষয়কুমার ও বিদ্যাসাগর ইহারই সংস্কার সাধন ও সুষমা বিধান করিয়াছিলেন।”

দীপক সেনগুপ্ত।

 

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।



Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।