প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫

 

পরিচারিকা

দীপক সেনগুপ্ত


আমাদের সমাজের নারীদের জীবন চিরকালই ছিল অবহেলিত। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর মেয়েদের দুর্দশাময় সে জীবন কাহিনী খুব সামান্য হলেও বিধৃত রয়েছে সমসাময়িক কিছু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রচনায়, সংবাদে বা তাদেরই কয়েকজনের রচিত আত্মজীবনীতে। কুলীনদের সঙ্গে, এমন কি কুল রক্ষা করতে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধের সঙ্গে বিবাহের পর অকাল বৈধব্য নিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসা, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, স্বামীর ও শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার সহ্য করা, বহু কুসংস্কার ও বিধি নিষেধের বলি হওয়া এবং সময়ে সময়ে স্বামীর মৃত্যুর পর সহমরণে প্রবেশ করা, এ সবই ছিল তার অবর্ণনীয় জীবন যন্ত্রণার এক একটি করুণ অধ্যায়। পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোক প্রাপ্ত যুক্তিবাদী ও উদারমনের কিছু লোক এগিয়ে এলেন মেয়েদের মুক্তির পথের দিশা দেখাতে। এ কাজে তাদের সহায়ক হয়েছিলেন ব্রাহ্মসমাজের কিছু ব্যক্তি এবং কতিপয় সংস্কারপন্থী ইংরেজ। বেথুন সাহেবের প্রচেষ্টা এ প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। মেয়েদের মুক্তির পথ উন্মুক্ত করতে স্ত্রী-শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন এটা সকলেই অনুভব করলেন। ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় স্থাপিত হল প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। কিছু লোক এগিয়ে এলেন পত্রিকা প্রকাশ করে বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয়ে রচনা প্রকাশের মাধ্যমে মেয়েদের সচেতন করে তুলতে।

১৮৫৪-র ১৬ই আগষ্ট ডিরোজিও-র দুই ছাত্র-শিষ্যর উদ্যোগে প্রকাশিত হল মেয়েদের জন্য প্রথম কাগজ 'মাসিক পত্রিকা'। এর বিবরণ আগেই দেওয়া হয়েছে। ১৮৬৩-র আগষ্টে বের হয় 'বামাবোধিনী পত্রিকা'। 'অবলাবান্ধব' প্রকাশিত হয় ১৮৬৯-এর ২২ শে মে। এ ধরণের প্রচেষ্টারই আর একটি ফসল মাসিক পত্রিকা 'পরিচারিকা', প্রথম প্রকাশিত হয় ১২৮৫ (১৮৭৮) বঙ্গাব্দের ১লা জ্যৈষ্ঠ। ‘পরিচারিকা’ প্রকাশিত হয় ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে গিরিশচন্দ্র সেনের উদ্যোগে। গিরিশচন্দ্র তার ‘আত্ম জীবন’-এ লিখেছেন - “আমারই প্রস্তাবে ও উদ্যোগে নারীদিগের জন্য পরিচারিকা নাম্নী মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হইতে থাকে, তাহার সম্পাদকীয় পদ গ্রহণ না করিলেও বহুকাল অবধি একজন নিয়মিত লেখক ছিলাম।” প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রতাপচন্দ্র মজুমদার।

পত্রিকায় প্রকাশিত কযেকটি লেখার নমুনা - ৩য় খণ্ড (বর্ষ) ১২৮৭-র ভাদ্র সংখ্যায় (৪র্থ সংখ্যা) প্রকাশিত হয়েছে - বৃহদাকার গ্রহ ইউরেনস ও নেপচিউন, কপটতা নারীর ধর্ম (?), পাঠে উন্নতি, ঈশার ইন্দ্রজাল, প্রাচীন হিন্দু বিবাহপ্রণালী, আর্য্য নারীসমাজের কার্য্য বিবরণ, শৈশব কুসুম (কবিতা), নদীকন্যা পুনশ্চ, বিধান ভারত, স্বর্ণরেণু।
‘স্বর্ণরেণু’ বিভাগটি পত্রিকাটিতে প্রায় শেষ অবধি চালু ছিল। এতে ছোট ছোট উপদেশ এবং নীতিকথা পরিবেশিত হত। যেমন, একটি সংখ্যায় তিনটি নীতিকথা লেখা হয়েছে -

“সৎ লোকের কর্ণ বিবর সর্পের গর্ত্ত, কুবাক্যরূপ বিষধর তাহাকে আশ্রয় করিয়া থাকে। সৎপ্রসঙ্গ ঈশ্বর প্রসঙ্গের স্থান হয় না।”

“ব্রহ্মাণ্ডের স্বামী ঈশ্বর জিহ্বার স্বামী, যে জিহ্বা ঈশ্বর গুণকীর্ত্তন না করিয়া অন্য কথা বলে সে জিহ্বা অসতী। পাঠিকা, তুমি অসতী জিহ্বাকে পোষণ করিও না, তোমার জিহ্বা যেন সতী হয়।”

“কথায় বলে গাধা সকল ভার গ্রহন করিতে পারে, কেবল ভাতের কাটির বোঝা বহিতে পারে না। অভক্ত সংসারী লোকের অবস্থা এইরূপ; তাহারা সংসারের সব ভার বহন করিতে পারে, কেবল হরিনামের ভার বহিতে পারে না। এই নাম লইতেই তাহাদের প্রাণ ছটফট করে।”

এ রকম নীতিবাক্য ইংরাজি ভাষাতেও শেষের দিকের সংখ্যায় চোখে পড়ে। Selections শিরোনামে এগুলি কোন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির উক্তি বা কোন বিখ্যাত গ্রন্থ থেকে চয়ন করা হত। যেমন বৈশাখ ১৩১১ সংখ্যায় উধৃত হয়েছে -

“Look within. Within is the fountain of good, and it will ever bubble up if thou will ever dig।” - Marcus Aurelius।

“Music is one of the paths by which we escape from the unrest of time, and enter into the peace of eternity।” - T. T. Munger। ইত্যাদি।

ইংরাজি ভাষা শিক্ষায় মহিলাদের আগ্রহী করে তুলতেই কি এই চেষ্টা?

স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তার এবং মহিলাদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কতিপয় পত্রিকার প্রচেষ্টাকে ফলপ্রসূ করতে মাঝে মাঝে কিন্তু বাধ সেধেছেন ইংরেজরা নয় এদেশীয়রাই। কলকাতার মেটকাপ হল পুস্তকাগারে এক দেশীয় মহিলাকে চাকরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ১২৯৭-এর ভাদ্র সংখ্যা ‘সংবাদ’ বিভাগে ‘পরিচারিকা’র ব্যঙ্গোক্তি -
“কলিকাতা মেটকাপ হল নামক পুস্তকাগারে প্রধান কর্ম্মচারী পদ খালি হওয়ায় কয়েকটি ইংরাজ সভ্য তৎ পদে বি. এ উপাধিধারী কোন কোন শ্রীমতীকে নিযুক্ত করিবার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার প্রভৃতির প্রতিবাদে তাহা রহিত হইয়াছে। একেই তো বাবুদের এখন চাকরী জোটে না, তার উপর যদি মেয়েরা ইহাতে ভাগ বসান, তাহা হইলে ঘরে ঘরে বিবাদ লাগিবে।” ঐ একই সংখ্যায় অপর একটি কৌতুকপ্রদ (?) সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। সেটি হল -

“চীন দেশের লোকেরা কন্যাকে লেখাপড়া শিক্ষা দেয় না। তাহারা বলে, বিবাহের পর সে যখন পর হইয়া যাইবে, তখন আমরা কেন তাহার জন্য বৃথা ব্যয় করিব? যদি ইচ্ছা হয়, ইহার পর যাহাদের বধূ তাহারা শিক্ষা দিবে। ইহাদের ভিতর এমন নীচ প্রথা প্রচলিত আছে, যে বিবাহের পর কন্যার শ্বশুরের নিকট হইতে অবিবাহিত কালের ভরণ পোষণের মূল্য ধরিয়া লয়।”

১২৮৮ বঙ্গাব্দের (৪র্থ খণ্ড) ভাদ্র-আশ্বিন (৪র্থ ও ৫ম) সংখ্যা একত্রে প্রকাশিত হয়। এর পর পত্রিকা কি কিছু সময় বন্ধ ছিল? কারণ, ১২৮৯-এর বৈশাখ সংখ্যাটি ৫ম খন্ড (ভুল বশতঃ ৪র্থ খন্ড ছাপা হয়েছে) ১ম সংখ্যা হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম সংখ্যার প্রকাশ জ্যৈষ্ঠ মাসের পরিবর্তে বৈশাখ থেকে শুরু হয়েছে। শুরুতেই ‘পরিচারিকার নিবেদন’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে -

“প্রায় তিন বৎসর হইল পরিচারিকা জন্মগ্রহণ করিয়া সাধ্যমতে আর্য্যনারীগণের পরিচর্য্যা করিয়া আসিতেছিল। সহসা অদ্য প্রায় ছয় মাস হইল পরিচারিকা বিষম রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িয়াছে। যার ঔষধ নাই, পথ্য নাই, উপায় নাই, তবে পরিচারিকা বাঁচে কিরূপে? যিনি জন্মদাতা পিতা তিনি পীড়ার যন্ত্রণায় অস্থির। আর আমার প্রতি স্নেহ দয়া করিতে তার অবসর নাই। ....

“মুমূর্ষুর সহায় আচার্য্য। তাঁহার কৃপাদৃষ্টি পড়িল। তিনি একজন চিকিৎসককে আমার স্বাস্থ্যবিধান জন্য নিযুক্ত করিয়াছেন। এখন আশা হইতেছে এ যাত্রা বাঁচিতে পারিব। কিন্তু মানুষের দয়ার প্রতি বিশ্বাস করিতে ইচ্ছা হয় না। কেন না ইহা যেমন চঞ্চল ও ক্ষণভঙ্গুর এমন আর দ্বিতীয় নাই। তাই আমি দুঃখিনী পরিচারিকাদিগের চরণে বিনীতভাবে নিবেদন করিতেছি, দুঃখিনী রোগে পড়িয়া শয্যাগত ছিল তাই এতদিন আপনাদিগের সেবা করিতে পারেন নাই। আশা করি এই অপরাধের জন্য আপনাদিগের নিকট অবশ্য ক্ষমা পাইব। আপনারা পরিচারিকা বলিয়া ঘৃণা করিবেন না, আশীর্ব্বাদ করুন যেন আবার পূর্ব্বের ন্যায় আপনাদিগের সেবা করিয়া কৃতার্থ হইতে পারি।”

প্রথম দিকে প্রকাশিত কোন সংখ্যাতেই লেখক বা লেখিকাদের নাম ছিল না। শেষের কযেক বছর কিছু রচনার শেষে তাদের কয়েকজনের নাম দেখা যায়। পত্রিকার মূল্য ছিল বার্ষিক দু’টাকা।

‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজে’র মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত পত্রিকাটি ১২৯৮-এ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরের বছরই ‘আর্য্যনারী সমাজে’র মুখপত্র হিসাবে পুনঃপ্রকাশিত হয়, সম্পাদিকা ছিলেন কেশবচন্দ্র সেনের জ্যেষ্ঠা পুত্রবধূ মোহিনী দেবী। তার মৃত্যুর পর ১৩০২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে ময়ুরভঞ্জের মহারাণী সুচারু দেবী এবং শেষ দু-এক বছর সহোদরা মণিকা দেবী সম্পাদনার কাজ দেখাশোনা করেছেন। এভাবে প্রথমে ব্রাহ্মসমাজ ও পরে আর্য্য নারীসমাজের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত হয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর চলার পর ‘পরিচারিকা’ বন্ধ হয়ে যায়।

১৩২৩ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে কুচবিহারের মহারাণী নিরুপমা দেবীর সম্পাদনায় (সহ-সম্পাদক জানকীবল্লভ বিশ্বাস) ‘পরিচারিকা’ (নবপর্য্যায়) সচিত্র আকারে প্রকাশিত হতে থাকে। দায়িত্ব নিয়ে নিরূপমা দেবী লিখেছেন –

“কালের রঙ্গভূমিতে দৃশ্য ও পট পরিবর্তন অনিবার্য। কিন্তু কোথাও বিশ্রাম নেই। অভিনয় সমান ভাবেই চলিতে থাকে, কখনও বন্ধ হয় না। তখনকার দিনে মুখ্যভাবে যাহা স্ত্রীশিক্ষার জন্য প্রকাশিত হইয়াছিল এখনকার দিনে পরিবর্তনের মধ্য দিয়া ঠিক যদি সেই উদ্দেশ্যেই আবার আসিয়া থাকে তবে তাহার ললাটে বোধ হয় লজ্জার ছাপ পরিবে না।”

সম্পাদিকার লেখা ‘উদ্বোধন’ কবিতা দিয়ে পত্রিকার সূচনা। কবিতা লিখেছেন কালিদাস রায়, অনুরূপা দেবী, পুলকচন্দ্র সিংহ, প্রিয়ম্বদা দেবী, আমোদিনী ঘোষ, বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ – ‘কামরূপের পুরাতত্ব উদ্ধার উপকরণ’ (নগেন্দ্রনাথ বসু), ‘মহিলা মঙ্গল’ (ইন্দুভূষণ মজুমদার), ‘কলাগাছ’ (যোগেশচন্দ্র রায়)। গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন শরচ্চন্দ্র ঘোষাল ও জানকীবল্লভ বিশ্বাস; জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর রসরচনা ও সম্পাদিকার ‘মালাবার ভ্রমণ কাহিনী’ রয়েছে প্রথম সংখ্যায়। ‘মাসিক কবিতা সমালোচনা’ বিভাগে নগেন্দ্রনাথ সেন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতার সমালোচনা করেছেন। ‘সঙ্গীত’ বিভাগে নিরুপমা দেবীশর রচিত গানের স্বরলিপি তৈরি করেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী।

প্রারম্ভিক পৃষ্ঠার নীচে ভগবদ্গীতার ‘তে প্রাপ্নুবন্তি মামেব সর্ব্বভূতহিতেরতাঃ’ শ্লোকটি যুক্ত থাকত।

‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ বিভাগে সমসাময়িক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এবং তার পক্ষে ও বিপক্ষে সমালোচনাও প্রকাশিত হত। অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদও এই বিভাগে স্থান পেত। ১৩২৯-এর চৈত্র সংখ্যায় এই বিভাগে ‘নারী পুলিস’ শীর্ষক সংবাদ বিষয়ে প্রকাশিত রচনার কিছুটা অংশ এখানে তুলে দেওয়া হ’ল –

“কলিকাতার ইংরেজেরা তাঁহাদের আয়াদের পাহারা দিবার জন্য নারী-পুলিস চাহিতেছেন। কিন্তু আয়াদের পাহারা অপেক্ষা আরও অনেক গুরুতর কাজের জন্যও তাহারা বিশেষ প্রয়োজন হইয়াছে। এখন মেয়েরা বাহিরে যাইতেছেন এবং ক্রমেই আরও যাইবেন। কিন্তু আমাদের দেশের পুরুষেরা এখনও তাহাতে অভ্যস্ত না হওয়ায় তাঁহাদের যে রকম সভ্যতার জ্ঞানমাত্রের অভাবের পরিচয় সর্ব্বত্র পাওয়া যায়, তাহাতে তাহাদের রক্ষার জন্যই নারী পুলিসের আবশ্যক। বিশেষতঃ আমাদের মেয়েরা বাহিরে গেলেও পুরুষের সঙ্গে তেমন করিয়া কথা কহিতে এখনও পারেন না, আর পুরুষ পুলিসেরাও সংস্কার বশে ভাল চোখে দেখে না ও সহজে তাঁহাদের সাহায্যে অগ্রসর হয় না। মেয়েরাও লজ্জাবশে তাহাদের ভাব দেখিয়া সাহায্য গ্রহণ করিতে কুন্ঠিত হন। ...... নারী পুলিস হইলে অনেক দুষ্ট লোকের শিক্ষা হইতে পারে। মেয়েরাও একটু সম্ভ্রম স্বাচ্ছন্দ্যের প্রাথমিক অধিকারটুকে উপভোগ করিতে পারেন, এটুকু তাহাদের একান্তই ন্যায্য দাবী। তাঁহারাও যখন দেশে বাস করেন তাঁহাদের মান সম্ভ্রম রক্ষার ভার লওয়া রাষ্ট্রের একটি মুখ্য কর্ত্তব্য।”

‘বঙ্গনারী’ মাসিক পত্রিকার প্রকাশিত খবরটি উদ্ধৃত করেছে ‘পরিচারিকা’। কিন্তু এটির একটি সমালোচনাও প্রকাশিত হয়েছে ‘পরিচারিকা’য়। সেটির কিয়দংশ -

“মেমদের জন্য মেয়ে পুলিসের আবশ্যক নাই, -আবশ্যক আয়াদের জন্য। কারণ, মেমরা আত্মরক্ষায় পটু – সবল সাহেব তাহাদের পশ্চাতে আছে – একথা অত্যাচারীর মনে সদা জাগ্রত,- একটি মেম অপমানিতা হইলে সমগ্র ইংরেজ সমাজ তাহার প্রতিকারের জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগে – অত্যাচারীর শাস্তি না হইলে কিছুতেই তাঁহারা ক্ষান্ত হয় না – একথা আততায়ীর জানিতে বাকী নাই,- তাহার ফলে মেমের দিকে তাহারা তাকাইতেও ভীত, আর অসহায়া আয়াদের সে সাহস নাই, - বঙ্গনারীরও সেই অবস্থা,- সম্মুখে নারী নিগ্রহ হইতে দেখিলেও সহজে কেহ সাহায্যে অগ্রসর হইতে চায় না, - একবার একটি অসহায়া নারীকে রেল ষ্টেশনে দুর্বৃত্ত রেল কর্ম্মচারীর কুচক্র হইতে রক্ষা করিতে এ সত্য অনুভব করিয়াছি,- উপস্থিত ভদ্র আখ্যাধারী নর-পশুরা সে কার্য্যে সাহায্য করা ত দূরের কথা,- যুবতীর সাহায্যে অগ্রসর হওয়ায় প্রকাশ্যে অশ্লীল বিদ্রূপে বিদ্ধ করিয়া ইতরামী করিতে ছাড়েন নাই! দেশের লোকের মনের এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটিলে মেয়ে পুলিস পেছনে বাঁধিয়া কি ফল? সে আরও উপসর্গ বৃদ্ধি করা!”

লক্ষ্য করার বিষয় হ’ল প্রায় একশ’ বছর আগে প্রকাশিত খবরের অনেক অংশ আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক।

১৩৩২ বঙ্গাব্দে পত্রিকা সম্পাদক হ’ন জানকীবল্লভ বিশ্বাস। ১৩৩৫-এ ‘পরিচারিকা’ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। ‘পরিচারিকা’ ছিল আধুনিকতায় বিশ্বাসী একটি প্রগতিশীল পত্রিকা।

নীচে পত্রিকার কতগুলি প্রতিলিপি দেওয়া হল -


চিত্র ১ : ১৩১০ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার সূচীপত্র।

চিত্র ২ : নিরুপমা দেবী সম্পাদিত পত্রিকার একটি সংখ্যার আখ্যাপত্র।

চিত্র ৩ : জানকীবল্লভ বিদ্যাবিনোদের সম্পাদনায় একটি আখ্যাপত্র।



চিত্র ৪ : পত্রিকার (নবপর্য্যায়) ২য় বর্ষ ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত
একটি ছবি। ছবিটির নীচে লেখা
– “একজন কিউবান কৃষকের বাটি। সম্মুখেই ডানদিকে একটি তামাকের ক্ষেত।”



লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর ( IIEST,shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।