প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িক ও সংবাদপত্র: সমাচার দর্পণ(সূচী)

     ‘দিগ্দর্শন’ প্রকাশিত হবার মাসখানেক পরেই ১৮১৮ সালের ২৩শে মে (১২২৫ বঙ্গাব্দের ১০ই জৈষ্ঠ্য) শনিবার প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সংবাদ পত্র ‘সমাচার দর্পণ’; ‘দিগ্দর্শন’-এর সঙ্গে এটিরও সম্পাদক ছিলেন জে. সি. মার্শম্যান। প্রত্যেক শনিবার পত্রিকাটি শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হত। এটি প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রথম সংখ্যায়; বিজ্ঞপ্তি ছিল এই রকম : “সমাচার দর্পণ। - কথক মাস হইল শ্রীরামপুরের ছাপাখানা হইতে এই ক্ষুদ্র পুস্তক প্রকাশ হইয়াছিল ও সেই পুস্তক মাস ২ ছাপাইবার কল্পও ছিল তাহার অভিপ্রায় এই যে এতদ্দেশীয় লোকেরদের নিকটে সকল প্রকার বিদ্যা প্রকাশ হয় কিন্তু সে পুস্তকে সকলের সম্মতি হইল না এই প্রযুক্ত যদি সে পুস্তক মাস২ ছাপা যাইত তবে কাহারও উপকার হইত না অতএব তাহার পরিবর্ত্তে এই সমাচারের পত্র ছাপাইতে আরম্ভ করা গিয়াছে। ইহার নাম সমাচার দর্পণ।”- পত্রিকাটির এই বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত পৃষ্ঠার একটি প্রতিলিপি দেওয়া হল। স্বাভাবিক কারণেই দু’শ বছর আগে মুদ্রিত কোন পৃষ্ঠার সুস্পষ্ট প্রতিলিপি পাওয়া খুব শক্ত।

       মার্শম্যান নামে মাত্র সম্পাদক ছিলেন, পত্রিকাটি কার্যতঃ চালাতেন কিছু এদেশীয় পণ্ডিত ব্যক্তি; কারণ ১৮৩৩ সালের ২৬শে অক্টোবর একটি খবর প্রকাশিত হয় “আমারদের পণ্ডিতগণ আগামি সোমবারপর্য্যন্ত স্ব ২ বাটী হইতে প্রত্যাগত হইবেন না অতএব এই কালের মধ্যে দর্পণে নূতন২ সম্বাদ প্রকাশ না হওয়াতে পাঠক মহাশয়েরা ত্রুটি মার্জ্জনা করিবেন।” ১৮৩২ সালের ১১ই জানুয়ারী থেকে শনিবার ছাড়াও প্রতি বুধবারও পত্রিকাটি বেরোতে থাকে; তবে এটা বেশী দিন স্থায়ী হয নি; কারণ সম্পাদক জানিয়েছেন “পাঠক মাহাশয়েরদিগকে অতিখেদপূর্ব্বক আমরা জ্ঞাপন করিতেছি যে ইহার পূর্ব্বে এতদ্দেশীয় সম্বাদপত্রে যে মাশুল নির্দ্দিষ্ট ছিল তাহা সম্প্রতি গবর্ণমেন্টের হুকুমক্রমে দ্বিগুণ হওয়াতে ইহার পর অবধিই আমারদের বুধবাসরীয় দর্পণ প্রকাশ রহিত করিতে হইল|” এই পর্যায়ের ‘সমাচার দর্পণ’-এর শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর।

      ১৮৩৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ( ১২৪২ বঙ্গাব্দের ২১শে ভাদ্র ) সংখ্যায় প্রকাশিত “কলিকাতার পুস্তকালয়” সম্বন্ধে একটি সংবাদ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। সেটি ছিল :
“কলিকাতার পুস্তকালয়
গত সোমবার পূর্বাহ্ণে টৌনহলে বহুতর ব্যক্তির এক বৈঠক হয় তাহার অভিপ্রায় এই যে কলিকাতা নগরে সর্ব্বসাধারণ লোকের উপকারার্থে সাধারণ এক পুস্তকালয় সংস্থাপনের সুনিয়মবিষয়ক বিবেচনা হয়। ঐ সমাজে শ্রীযুত সর জন গ্রান্ট সাহেব অধিপতি ছিলেন। পরে ২৪ ব্যক্তি লইয়া এক কমিটি স্থির হইল তাঁহারা ঐ পুস্তকালয়ের নিয়মসকল নির্দ্ধার্য্য করিয়া টৌনহলে সাধারণ বৈঠকে তাহা জ্ঞাপন করেন। কলিকাতা নগরে নানাবিধ পুস্তক সংগ্রহ পূর্ব্বক অতিশীঘ্রই এক পুস্তকালয় স্থাপিত হইবে এবং তদ্দারা যে এতদ্দেশে সাধারণ বিদ্যার বৃদ্ধি হইবে তাহাতে সন্দেহ নাই|”
এর পরে রামগোপাল ঘোষ ও তার কতিপয় বন্ধুর চেষ্টায় পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশিত হয় ১৮৪২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে; ইংরিজী ও বাংলা উভয় ভাষাতেই সম্পাদক ছিলেন ভূতপূর্ব ‘জ্ঞানদীপিকা’ সম্পাদক ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায়। তবে এই পর্যায়ের ‘সমাচার দর্পণ’ ১৮৪৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে আর প্রকাশিত হয় নি। এর পরে শ্রীরামপুর মিশন পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশ করবার ব্যবস্থা করে এবং ১৮৫১ সালের ৩রা মে,শনিবার থেকে আবার এর প্রকাশনা শুরু হয়। বছর দেড়েক এটি চলেছিল; পরে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। সমাচার দর্পণের অবলুপ্তি সম্বন্ধে ১২৬০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ (১২ই এপ্রিল, ১৮৫৩) ‘সংবাদ প্রভাকর’ মন্তব্য প্রকাশ করে – “সমাচার দর্পণ পত্র শ্রীরামপুরে গঙ্গার জলে প্রাণত্যাগ করে।”

      ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশের সময়ে মিশনারিদের মধ্যে মতভেদ হয়েছিল। ডঃ কেরি পত্রিকা প্রকাশ করে শাসককুলকে রুষ্ট করতে চান নি। পরে স্থির হয়, প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হবার পরেই ইংরাজি অনুবাদ সহ একখানি কপি গভর্ণমেণ্টকে পাঠান হবে এবং অনুমতি পেলে তবেই পত্রিকা প্রকাশ চালিয়ে যাওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ডঃ মার্শম্যান ভাইস প্রেসিদেন্ত মিঃ এডমনস্টোন, চিফ সেক্রেটারি ও গভর্ণর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস-এদের প্রত্যেককে অনুবাদ সহ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা পৌঁছে দেবার জন্য কলকাতায় রওনা হন। লর্ড হেস্টিংস স্বহস্তে চিঠি লিখে মার্শম্যানকে এদেশে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর সঙ্কল্পে পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রশংসা করেন। এর পরে পত্রিকা প্রকাশনে আর কোন বাধা রইল না।

      ‘সমাচার দর্পণ’ প্রতি শনিবার শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হত। প্রথম তিন সপ্তাহ এটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। যারা বাংলা ভাষা জানতেন না তাদের জন্য একটি ফার্সি সংস্করণও ১৮২৬-এর ৬ই মে থেকে প্রকাশিত হত, তবে এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নি। ১৮২৯ সালের ১১ই জুলাই থেকে বাংলার সঙ্গে ‘সমাচার দর্পণ’-এর ইংরাজি সংস্করণও বেরোতে থাকে। চাহিদা বৃদ্ধির জন্য ১৮৩২ সালের ১১ই জানুয়ারি থেকে পত্রিকাটি প্রতি বুধবার ও শনিবার অর্থাৎ সপ্তাহে দু’বার করে প্রকাশিত হয়; দাম ধার্য হয় মাসিক দেড় টাকা। তবে ১৮৩৪-এর ৮ই নভেম্বর থেকে পত্রিকাটি আবার সাপ্তাহিক রূপে ফিরে আসে|

      ‘সমাচার দর্পণে’র পুরাণো সংখ্যার দুস্প্রাপ্যতা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ের গবেষকদের বিভিন্ন মন্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’র ৪র্থ সংখ্যায় (১৩০৫ বঙ্গাব্দ) মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি জানিয়েছেন – “”সমাচার-দর্পণের” কোন ফাইল প্রথমতঃ পাই নাই। এ বিষয়ে আমাদের স্নেহাস্পদ সাহিত্য-জীবী সত্যেন্দ্রনাথ পাইনকে উহার অন্বেষণ-নিবন্ধন ভারার্পণ করিয়াছিলাম। তিনি উত্তরপাড়া লাইব্রেরী ও শ্রীরামপুর কলেজ-লাইব্রেরীতে বহু অনুসন্ধান করিয়াও, কোন সন্ধান পান নাই। “ ঐ সংখ্যাতেই পত্রিকার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি আবার বলেছেন – “১৮৩১ ৪ঠা জুন হইতে ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দের ২৮এ জানুয়ারি তারিখ পর্য্যন্ত যে সংখ্যাগুলির ফাইল , ডাক্তার হেমচন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের নিকট পাঠার্থ প্রাপ্ত হওয়া গেল, তাহাতে ইংরাজি ও বাঙ্গালা দুই ভাষার সমাবেশ রহিয়াছে। “ আবার গবেষক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় লিখেছেন – “... কিন্তু পুরাতন বাংলা সংবাদপত্র আজকাল এমনই দুস্প্রাপ্য হইয়া উঠিয়াছে যে, নানা স্থানে অনুসন্ধান করিয়াও একমাত্র ‘সমাচার দর্পণে’র প্রায় সকল সংখ্যা এবং ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘বঙ্গদূত’ ও ‘সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়’ পত্রের কতকগুলি খুচরা সংখ্যা ভিন্ন ১৮৪০ সনের পূর্ব্বেকার অন্য কোন সাময়িক-পত্র আমি দেখিতে পাই নাই।” মূলতঃ ‘সমাচার দর্পণ’ অবলম্বন করেই তিনি ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা’ (২ খণ্ড) রচনা করেছেন।

       এখানে প্রায় দু’শ বছর আগে প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার একটি প্রতিলিপি দেওয়া হল।

দীপক সেনগুপ্ত।

সমাচার দর্পণের প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্টার প্রতিলিপি

 

 

 

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।



Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।