প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

অগাস্ট ৩০ , ২০১৫

 

তমোলুক পত্রিকা

দীপক সেনগুপ্ত


তমলুক থেকে প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক মাসিক পত্রিকা। এটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১২৮০ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে। আঞ্চলিক পত্রিকার অর্থ যদি আক্ষরিক অর্থে সেই অঞ্চলের সংবাদ, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অনুসৃত রীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ধরা হয়, তবে পত্রিকাটিকে আঞ্চলিক নামে অভিহিত করা ঠিক নয়। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের মতে "পত্রিকার নাম তমোলুক পত্রিকা হলেও তমলুকের নামগন্ধও নেই।" এটি পুরোপুরি ঠিক না হলেও পত্রিকাটি যে বিবিধ বিষয়ে উচ্চমানের রচনা প্রকাশ করত তাতে সন্দেহ নেই। প্রকাশিত কয়েকটি রচনার নাম থেকেই সেটা কিছুটা স্পষ্ট হবে, যেমন - ভারতবর্ষের পুরাবৃত্ত; চীন সম্রাট; সাঁওতালদিগকে সভ্যকরণ; হেনরি টমাস কোলব্রেক; ব্যায়ামশিক্ষা; আর্য্যোতিহাস; রামায়ণ ও মহাভারত; কৃষিকার্য্য; বিদ্যুৎ ও বজ্র; প্রণয়; দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় 'তমোলুক পত্রিকা'কে 'সে যুগের একটি উৎকৃষ্ট মানের পত্রিকা' হিসাবে চিহ্ণিত করেছেন। 'বঙ্গদর্শনে' গ্রন্থ সমালোচনা বিভাগে ১২৮০-এর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় 'তমোলুক পত্রিকা' সম্বন্ধে যে 'সংক্ষিপ্ত সমালোচনা' প্রকাশিত হয়েছে, সেটি হল - 

"তমোলুক পত্রিকা। মাসিকপত্র। কলিকাতা চিৎপুর রোড, সুচারু যন্ত্র।

ইহার দুই খণ্ড প্রাপ্ত হইয়া আমরা আনন্দিত হইয়াছি। আনন্দের প্রথম কারণ এই যে তমলুক হইতে একটি সাহিত্য বিষয়ক পত্র প্রচারারম্ভ হইয়াছে। দ্বিতীয় আনন্দের বিষয় এই যে, এই পত্র খানি উৎকৃষ্ট।

প্রথম খণ্ডে "পত্রিকা সূচনা" "সন্দেহ স্থল" "স্ত্রীলোক দ্বারা শাসিত রাজ্য" "পদ্মমুখী" "জনস্টুয়ার্টমিল", "সাঁওতালদিগের সভ্যকরণ" “মাইকেল মধুসূদন দত্ত" "হিন্দু আচার ব্যবহার সমালোচনা" "সৈনিকত্বপদ দেশীয়দিগের প্রাপ্য" "নূতন গ্রন্থের সমালোচনা"  এই কয়টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। দ্বিতীয় খণ্ডেও ঐ রূপ। সবিশেষ লিখিবার প্রয়োজন নাই।

লেখকদিগের লিপিশক্তি ও পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে ইহা বলিলেই যথেষ্ট হইবে, যে যদিও তমলুক সামান্য নগর, তথাপি তথা যে মাসিক পত্র প্রচারিত হইযাছে, তাহা রাজধানীর অধিকাংশ সাহিত্য বিষয়ক পত্রাপেক্ষা উৎকৃষ্ট।

যাঁহারা এই কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, তাঁহাদিগের বিশেষ প্রশংসা করিতে হয়। তাঁহারা যে দেশ হিতৈষী, সুযোগ্য এবং সাহিত্যপ্রিয় তমোলুক পত্রিকা তাহার প্রমাণ।"

    ‘তমোলুক পত্রিকা’র প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ রক্ষিত। মূল্য ধার্য হয়েছিল বার্ষিক অগ্রিম আড়াই টাকা। পত্রিকার শুরুতেই নিম্নলিখিত শ্লোকটি মুদ্রিত থাকত -
 

   “আপরিতোষাদ্বিদুষাং ন সাধুমন্যে প্রয়োগবিজ্ঞানম
      বলবদপি শিক্ষিতানামাত্মন্যপ্রত্যয়ং চীতঃ।”
    

পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ও দিশা ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রথম সংখ্যার ‘সুচনা’ অংশে। প্রাসঙ্গিক অংশটি দেখে নেওয়া যাক -
  

    " ...... সংবাদপত্রের প্রথম সৃষ্টি হওয়া অবধি পৃথেবীর উন্নতি ভিন্ন অবনতি লক্ষিত হয় না। সম্বাদ পত্র জ্ঞান, ধর্ম্ম, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম্মনীতি, রাজনীতি, সামজিক আচার ব্যবহার , শাসন প্রণালী, শিক্ষা প্রভৃতি সকল বিষয়ের অশেষ উন্নতি বিধায়ক। পৃথিবীর মধ্যে যে দেশে যত কাল এই মহোপকারক বিষয়ের অভাব থাকিবে, ততদিন আশানুরূপ উন্নতি হইবে না, এ কথা সহস্রবার বলা যাইতে পারে, সন্দেহ নাই। সুতরাং একখানি সামান্যাবস্থার মাসিক পত্রিকা দ্বারা যদি এই সামান্য স্থানের অল্প মাত্র উপকার হয়, আপনাদিগকে কৃতার্থম্মন্য মনে করিব। দেশের সর্ব্বাঙ্গীন পুষ্টি সাধন পক্ষে যথা জ্ঞান, যথা মতি চেষ্টা করিব, এবং উপায় সকল প্রদর্শন বিষয়ে, অণুমাত্র শৈথিল্যাবলম্বন করিব না। অকারণ নিন্দাবাদ দ্বারা পত্রিকা বিদূষিত করা ও সম্প্রদায় বিশেষের বিরাগ ভাজন হওয়া অনুচিতই মনে করিব। অযথা বিষয়ের আন্দোলন, এবং আম্রেড়িত বিষয়ের অকারণ যুক্তিবাদ ব্যতীত পুনরুল্লেখ অকর্ত্তব্য মনে করিব। ফলতঃ আমরা যে কঠিন ব্রতে দীক্ষিত হইলাম, অন্তরায় পরিশূন্য হইয়া সেই ব্রত উদ্যাপিত হইলে, অনন্ত শক্তিশালী জগৎ সবিতার প্রসাদেই হইয়াছে মনে করিব। দেশের অনিষ্ট হইতেছে দিব্য চক্ষে দেখিতে পাইলে, আক্রমণ করিতে কুণ্ঠিত হইব না। সাধুকার্য্য যাদৃশ অনুমোদনীয় হইবে, অসাধু কার্য্য তাদৃশ পরিত্যজ্য হইবে। অন্যান্য পত্রিকোপযোগী বিষয়ে যথাভ্যস্ত সমর্থ হইব এরূপ নয়, ভ্রম, অনুদারতা প্রসন্নচিত্তে পরিহার করিব। যাহা ন্যায়োপেত, তাহারই চিরানুসরণ করিব, তজ্জন্য কোন সম্প্রদায়েরই মুখাপেক্ষা করিব না। সুতরাং প্রাচীন "সুদুর্লভাঃ সর্ব্ব মনোরমা গিরঃ" এই মহাকবিবাক্য যত দূর পারি অন্বর্থ করিতে চেষ্টা করিব। উদারাশয় গ্রাহক মণ্ডলীর নিকট সবিনয়ে প্রার্থনা, তাঁহারা যদি এ বিষয়ে অনুকূল হন, তবেই ভরসা, নচেৎ "উত্থায় হৃদি লীয়ন্তে দরিদ্রানাং মনোরথাঃ" এই রূপই হইবে। কোন কার্য্য প্রথমে সর্ব্বঙ্গসুন্দর হয় না, ক্রমশঃ উৎকর্ষলাভ পার্থিব সকল পদার্থেরই নৈসর্গিক নিয়ম বলিতে হইবেক। অতএব প্রথমে জয় হইবার আশা পরিত্যাগ করিয়া কার্য্যে প্রবৃত্তি জম্মান কঠিন। ২।৪ জন কৃতবিদ্য ভ্রাতারা এবিষয়ে সাহায্য করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। সে জন্য তাঁহাদিগকে অন্তরের সহিত অগণ্য ধন্যবাদ প্রদান করিতেছি। আমরা এ বিষয়ে লাভালাভ দৃষ্টি করিব না। লাভের ত কথাই নাই, ক্ষতি স্বীকার করিয়াও পত্রিকা প্রচার পক্ষে সাধ্যানুসারে চেষ্টা করিব। যাহাতে গ্রাহকমণ্ডলীর মনোযোগ আকর্ষণ হয়, তদ্বিষয়েও অণুমাত্র ত্রুটি হইবেক না। উপসংহার কালে বক্তব্য এই যে, আমরা যে গুরুতর বিষয়ে প্রবৃত্ত হইয়াছি, তাহার একটি অঙ্গই যে কতদূর দুরূহ, বলিয়া শেষ করা যায় না। সুতরাং সেই বিষয়টি সমস্ত অঙ্গের সহিত যে উৎকর্ষ প্রাপ্ত হইবে, কে বলিতে পারে? যদি এতদ্দারা মনুষ্য সমাজের যৎকিঞ্চিৎ উপকার হয়, চিরধন্য পরম পুরুষকেই অগণ্য ধন্যবাদ দিব। যেরূপ চ্কিৎসা দ্বারা রোগ শান্তি হয়, তদ্রূপ সংবাদ পত্র দ্বারা মানবমনের মালিন্য, কুসংস্কার প্রভৃতি অপনীত হয়, এবং মন ভূয়ো দর্শন, সদৃষ্টান্ত বার্ত্তাশাস্ত্র সম্ভুত জ্ঞান গ্রহণ করিয়া বিশেষ উন্নত ভাব ধারণ করে। পরিশেষে সকৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করিতেছি যে, "রহস্য-সন্দর্ভের" সুযোগ্য সম্পাদক বহুমানাস্পদ শ্রীযুক্ত বাবু প্রাণনাথ দত্ত মহাশয় আমাদিগকে এবিষয়ে প্রথমতঃ প্রবৃত্তি প্রদান সহ বিশেষ সাহায্য করিয়া চিরবাধিত করিতেছেন। এমন কি ইনি ও পূর্ব্বোক্ত কৃতবিদ্য ভ্রাতৃগণ এবিষয়ে সাহায্য করিতে স্বীকার না করিলে তমোলুক হইতে সংবাদ পত্র প্রচার দুরূহ হইত।..... "   
   

পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় যে সব লেখা বেরিয়েছিল সেগুলি হল – ‘পত্রিকা সূচনা’; ‘সন্দেহ স্থল’; ‘স্ত্রীলোক দ্বারা শাসিত রাজ্য’; ‘পদ্মমুখী’ (‘অর্থাৎ সুবিখ্যাত ইংরাজী লালারূক গ্রন্থের মর্ম্মানুবাদ’) (ক্রমশঃ প্রকাশ্য); ‘জনস্টুয়ার্টমিল’; ‘সাঁওতালদিগকে সভ্যকরণ’; ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’; ‘হিন্দু আচার ব্যবহার সমালোচন’ (ক্রমশঃ প্রকাশ্য); ‘সৈনিকত্বপদ দেশীদিগের প্রাপ্য’ ও ‘নূতন গ্রন্থাদির সমালোচনা’।

 উচ্চশ্রেণীর পত্রিকা হলেও ‘তমোলুক পত্রিকা’ সম্ভবতঃ খুব বেশি দিন চলে নি। পত্রিকায় ব্যবহৃত ভাষা ও বিষয়বস্তুর গভীর ভাব থেকে কাঙ্ক্ষিত রসাস্বাদনে অপারগতাই কি এর কারণ?

সংযোজিত প্রতিলিপি পরিচয় –  


চিত্র ১ – পত্রিকার আখ্যাপত্রের একটি প্রতিলিপি।


চিত্র ২ – মাঘ ১২৮০ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সংবাদ।


চিত্র ৩ – ফাল্গুন ১২৮০ সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার প্রতিলিপি।

বিঃ দ্রঃ  কোন প্রতিলিপি  বড় করে দেখতে হলে  ctrl  টিপে রেখে  +  টিপুন।    


লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর (IIEST, Shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।