অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

মে ১৫, ২০১৭

 

উদ্বোধন

দীপক সেনগুপ্ত

যে সব পত্রিকা এখনও চালু রয়েছে তার আলোচনা বর্তমান ধারাবাহিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়। তবে ‘উদ্বোধনে’র একটা বিশেষত্ব রয়েছে; এটিই একমাত্র বাংলা পত্রিকা যেটি ১১৮ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা এবং অসাধারণ কর্মক্ষমতার অধিকারী। তিনি ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৯৭ সালে। ত্যাগ, নিঃস্বার্থ সেবা ও প্রকৃত জ্ঞানলাভের মাধ্যমে সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়াই মিশনের আদর্শ। এই ভাবধারাকে সময়োপযোগী করে সাধারণের মধ্যে প্রচার করার উদ্দেশ্যে একটি পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা স্বামীজী অনুভব করেছিলেন।

১৮৯৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে স্বামীজী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে চিঠিতে লিখেছেন

“তোমাদের একটা কিনা কাগজ ছাপাবার কথা ছিল তার খবর কি? সকলের সঙ্গে মিশতে হবে, কাউকে চটাতে হবে না। অল দ্য পাউয়ার্স অফ গুড অ্যাগেনস্ট অল দ্য পাউয়ার্স অফ ইভিল - .......।”

স্বামী বিবেকানন্দ প্রবর্তিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বাংলা ভাষায় লেখা একমাত্র মুখপত্র ‘উদ্বোধন’ প্রকাশিত হয় ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ১লা মাঘ (১৪ই জানুয়ারি, ১৮৯৯ )। ‘উদ্বোধন’ প্রকাশের কিছু আগে ‘ব্রহ্মবাদিন’ ও ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ দুটি ইংরেজি মাসিক পত্রিকা মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সেগুলি প্রথমে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের আনুষ্ঠানিক মুখপত্র ছিল না। ‘ব্রহ্মবাদিন’ ভক্তদের দ্বারা প্রকাশিত হত এবং এখন আর প্রকাশিত হয় না। ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ ১৮৯৮ সালের জুন পর্যন্ত ভক্তদের দ্বারা পরিচালিত হবার পর, জুলাই মাস বন্ধ থেকে অগাস্ট মাস থেকে, প্রথমে আলমোড়া এবং পরে মায়াবতী থেকে, সঙ্ঘের ইংরেজি মাসিক পত্র হিসাবে আজ অবধি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পত্রিকার মুদ্রণ কলকাতায় হচ্ছে।

‘উদ্বোধন’ পত্রিকার শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে স্বামী ভূতেশানন্দ মহারাজের লেখা থেকে কিছু কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি, এতে পত্রিকা প্রকাশের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য আরও সুষ্ঠুভাবে জানা যাবে।

“ পত্রিকা প্রকাশের আগ্রহ অনেককাল থেকেই স্বামীজী মনে মনে পোষণ করছিলেন। শিকাগো থেকেই স্বামীজী আলসিঙ্গাকে লেখেন –“এখন একখানা কাগজ কোনরূপে বার করতে খুব ঝোঁক হয়েছে আমার।” তার এই সত্যসঙ্কল্প বাস্তবে রূপায়িত হয়েছিল ‘ব্রহ্মবাদিন’ পত্রিকা (১৮৯৫-এর ১৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশের মাধ্যমে। শিকাগোর ধর্মমহাসম্মেলন তথা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বেদান্ত প্রচারের ফলে স্বদেশে ও বিদেশে বেদান্ত সম্বন্ধে একটা নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধারণাকে আরও স্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা এবং ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য একটি ইংরেজি মুখপত্র খুব প্রয়োজনীয় ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ‘ব্রহ্মবাদিন’ ছিল খুব উচ্চাঙ্গের দার্শনিক পত্রিকা। স্বামীজী সেইজন্য অপেক্ষাকৃত সহজ আরও একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। সেই ভাবনার ফলশ্রুতি ‘প্রবুদ্ধ পত্রিকা’, যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। ...... সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর একটা বাঙলা মুখপত্র প্রকাশের জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। স্বামীজী তার গুরুভাই ও ভাবানুরাগীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁর পরিকল্পিত মুখপত্রটি প্রকাশ করার জন্য এগিয়ে আসতে। আমেরিকা থেকে ২৫শে সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ তারিখে গুরুভাইদের লক্ষ্য করে একটি পত্রে লিখেছেন –“তোমাদের একটা কিনা কাগজ ছাপবার কথা ছিল, তার কি খবর ? ...... একটা খবরের কাগজ তোমাদের edit [সম্পাদনা] করতে হবে, আদ্দেক বাংলা আদ্দেক হিন্দি – পারতো আর একটা ইংরাজিতে। পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছ – খবরের কাগজের subscriber [গ্রাহক] সংগ্রহ করতে কদিন লাগে ? যারা বাহিরে আছে, subscriber জোগাড় করুক – গুপ্ত [সদানন্দ] হিন্দি দিকটা লিখুক, বা অনেক হিন্দি লিখবার লোক পাওয়া যাবে। মিছে ঘুরে বেড়ালে চলবে না।” সকলে হয়ত এ ব্যাপারে বেশি উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু স্বামীজী সকলকে পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে ক্রমাগত উদ্দীপিত করে চলেছিলেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দকে আমেরিকা থেকে একটা চিঠিতে (১৮৯৫) লিখেছিলেন –“যে খবরের কাগজ বাহির হইবার কথা হইতেছিল, তাহার কি হইল ?”
“...... এইভাবে স্বামীজী উৎসাহ দিয়ে গেলেও আসল কাজটি কিন্তু বাস্তবে রূপায়িত হচ্ছিল না। তার কারণ হয়ত ছিল সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টার অভাব। তাছাড়া মনে হয়, এ ধরণের কাজের সঙ্গে ঠাকুরের সন্তানেরা মানসিক ভাবে তৈরি হন নি। ...... এছাড়া গৃহী ভক্ত ও অনুরাগীদের অনেকের মধ্যেও সে সময় স্বামীজীর পরিকল্পনা নিয়ে নানা সংশয় জেগেছিল। স্বামীজীর শিষ্য শরচ্চন্দ্রের মনেও এই প্রশ্ন উঠেছিল এবং স্বামীজীকে তিনি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে স্বামীজী বলেছিলেন –“পত্রের প্রচার তো গৃহীদের কল্যাণের জন্য। দেশে নবভাব প্রচারের দ্বারা জনসাধারণের কল্যাণ সাধিত হবে। এই ফলাকাঙ্ক্ষা-রহিত কর্ম বুঝি তুই সাধন-ভজনের চেয়ে কম বলে মনে করছিস ? ...... শুধু পরহিতেই আমাদের সকল movement (কাজকর্ম) এটা জেনে রাখবি।” ...... এত চেষ্টা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের দিন কিন্তু নানা কারণে ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে ১লা মে ১৮৯৭ বলরাম বসুর বাড়িতে “রামকৃষ্ণ মিশন” প্রতিষ্ঠা করলেন স্বামীজী। সঙ্ঘের মুখপত্র প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা স্বামীজীর কাছে তখন আরও প্রকট হয়ে দাঁড়াল, আরও অস্থির হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৩০৫ সালের ১লা মাঘ (১৪ই জানুয়ারি ১৮৯৯) কম্বুলিয়াটোলার ১৪নং রামচন্দ্র মৈত্র লেনের গিরীন্দ্রমোহন বসাকের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ‘উদ্বোধন প্রেস’ থেকে স্বামীজীর বহু-আকাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত ‘উদ্বোধন’ পত্রিকা স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করল।”

‘উদ্বোধন’ নামটি স্বামীজীরই দেওয়া। পত্রিকা প্রকাশের পরে স্বামীজীর সঙ্গে শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীর কথাবার্তার কিছুটা অংশ ‘স্বামী-শিষ্য-সংবাদ’ থেকে তুলে দেওয়া হল :

“পত্রের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হইলে শিষ্য একদিন মঠে উপস্থিত হইল। শিষ্য প্রণাম করিয়া উপবেশন করিলে স্বামীজী তাহার সহিত ‘উদ্বোধন’ পত্র সম্বন্ধে এইরূপ কথাবার্তা আরম্ভ করিলেন :
স্বামীজী। (পত্রের নামটি বিকৃত করিয়া পরিহাসচ্ছলে) ‘উদ্বন্ধন’ দেখেছিস ?
শিষ্য। আজ্ঞে হ্যাঁ ; সুন্দর হয়েছে।
স্বামীজী। এই পত্রের ভাব ও ভাষা - সব নূতন ছাঁচে গড়তে হবে।”

সূচনা পর্বে ‘উদ্বোধনে’র কার্যালয় ছিল কম্বুলীটোলায় ১৪নং রামচন্দ্র মৈত্র লেনের গিরীন্দ্রমোহন বসাকের বাড়িতে। আট বছর পরে অফিস স্থানান্তরিত হয় বাগবাজারে ৩০নং বোসপাড়া লেনের ভাড়া বাড়িতে। সম্পাদক ছিলেন স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ। প্রতি সংখ্যার নগদ মূল্য ছিল দু’আনা। এরপর ‘উদ্বোধন’ প্রকাশিত হতে থাকে বাগবাজারে উদ্বোধন লেনের নিজস্ব কার্যালয় থেকে। মুখার্জী লেনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় উদ্বোধন লেন। বর্তমান কার্যালয় ১নং উদ্বোধন লেনে অবস্থিত।

সন্ন্যাসী সঙ্ঘের সভ্যরা ছাড়াও আর যারা ‘উদ্বোধনে’ লিখেছেন তাদের মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ, গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, শ্রীঅরবিন্দ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, নজরুল ইসলাম, ইন্দিরা গান্ধী, বিনয়কুমার সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, জীবনানন্দ দাস, সুরেশচন্দ্র মজুমদার, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, বনফুল, কালিদাস রায়, আশাপূর্ণা দেবী, নরেন্দ্র দেব, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, রমা চৌধুরী, দিলীপকুমার রায়, নন্দলাল বসু, শঙ্করীপ্রসাদ বসু, জ্যোতির্ময়ী দেবী, আশুতোষ দাস, শেখ সদরউদ্দীন, রেজাউল করীম, এস.ওয়াজেদ আলি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, প্রসিত রায়চৌধুরী, রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সান্ত্বনা দাশগুপ্ত, চারুচন্দ্র বসু, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় , প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখ একাল ও সেকালের নাম করা লেখকেরা। একমাত্র রাজনীতি বাদ দিয়ে সব ধরণের লেখাই ‘উদ্বোধনে’ প্রকাশিত হত। একদা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণকারী তরুণ ও যুবকেরা স্বামীজীর তেজদৃপ্ত বাণী ও ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন; ‘উদ্বোধন’-এর বিভিন্ন লেখা তাদের প্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল। তদানীন্তন গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশাল সুপারিন্টেনডেন্ট চার্লস টেগার্ট বৃটিশ সরকারকে ‘উদ্বোধন’ বাজেয়াপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বামীজীর ভাষণ ও গীতা পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

‘উদ্বোধন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১১৭ বছর আগে। সে সময়ে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকায় লেখকদের নাম থাকত না। এদিক থেকে ‘উদ্বোধন’ একটি ব্যতিক্রম। কচিৎ দু’একটি রচনা ছাড়া সব ক্ষেত্রেই লেখকের নাম মুদ্রিত হয়েছে। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি অনেক কষ্ট করে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে প্রকাশিত হয়েছিল ছ’টি রচনা – ‘প্রস্তাবনা’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘রাজযোগ’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘পরমহংসদেবের উপদেশ’(১৭ পর্ব)(স্বামী ব্রহ্মানন্দ), ‘শ্রীশ্রীমুকুন্দমালাস্তোত্রম’ (৪ পর্ব)(স্বামী রামকৃষ্ণানন্দেনানুবাদিতম), ‘সারদানন্দ স্বামীর বক্তৃতার সারাংশ’ (২ পর্ব)(রামকৃষ্ণমিশন সভা, রবিবার ২৮শে আগস্ট), ‘বিবিধ’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ)। প্রথম সংখ্যায় সাধারণ রীতি অনুসারে কোনও ‘সম্পাদকীয়’ নিবন্ধ ছিল না, স্বামী বিবেকানন্দের ‘প্রস্তাবনা’ অংশটিই সে অভাব পূরণ করেছে।

‘রাজযোগ’ প্রবন্ধটির সূচনা অংশে লেখা হয়েছে -

“আমেরিকায় স্বামী বিবেকানন্দ, রাজযোগ সম্বন্ধে কতিপয় ইংরাজি বক্তৃতা দেন; এবং পাতঞ্জল যোগসূত্রের ইংরাজি ভাষ্য করেন। সেই বক্তৃতাগুলি ও ইংরাজি ভাষ্য, একত্রে সংকলন করিয়া পুস্তকাকারে, ইংলন্ডস্থ লংম্যান কোম্পানি বাহির করেন। পুস্তকের নাম দেওয়া হয়-রাজযোগ। ইংলন্ডে ও আমেরিকায় রাজযোগের অনেক সংস্করণ হইয়া গিয়াছে। ইউরোপের যাবতীয় দার্শনিক পণ্ডিতগণ স্বামী বিবেকানন্দকৃত রাজ-যোগের বিশেষ প্রশংসা করিয়া থাকেন। কলিকাতাতে নিউম্যান ও থ্যাকার স্পিঙ্ক এন্ড কোম্পানিরা যতবারই বিলাত হইতে উক্ত রাজযোগ আনয়ন করিয়াছেন, ততবারই দিনকতকের মধ্যেই নিঃশেষিত হইয়া যায়। সম্প্রতি স্বামী বিবেকানন্দ মহোদয়ের আজ্ঞানুসারে ব্রহ্মচারী শুদ্ধানন্দ, অতি সুন্দর বাংলা ভাষায় রাজযোগ অনুবাদ করিয়াছেন। পাঠক মহাশয়গণের তৃপ্তিসাধনের জন্য, সেই অনুবাদিত রাজযোগের ১ম অধ্যায় হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া নিম্নে উদ্বোধনের প্রবন্ধ স্বরূপে দিলাম। ......”

প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে স্বামী শুদ্ধানন্দ স্বামী বিবেকানন্দের বহু ইংরাজি রচনা ও বক্তৃতার মনোজ্ঞ অনুবাদ করে গিয়েছেন।

স্বামী ব্রহ্মানন্দ প্রদত্ত ‘পরমহংসদেবের উপদেশ’ মোট ১৭টি পর্বে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি সবই পরবর্তীকালে শ্রীম-এর কথামৃতে স্থান পেয়েছে। ‘সারদানন্দ স্বামীর বক্তৃতার সারাংশে’ যে বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে সেগুলি হল – ‘সৃষ্টির অনাদিত্ব’, ‘সৃষ্টিপ্রক্রিয়া-প্রাণ ও আকাশ’, ‘সৃষ্টিপ্রক্রিয়া-প্রাণ ও বিজ্ঞান’, ‘সৃষ্টিতত্ত্বে-সাংখ্য ও বেদান্ত’, ‘সাংখ্য ও বেদান্তের প্রভেদ - ঈশ্বর-তত্ত্বে’, ‘বৈদান্তিক ঈশ্বর-বাদের কার্যকারিতা – নিঃস্বার্থপরতা’, ‘ঈশ্বরের প্রকাশ – ব্যক্তি ভেদে’ ও ‘বেদান্ত কি নাস্তিক ?’ স্বামী শুদ্ধানন্দ সংকলিত ‘বিবিধ’ নামক ক্ষুদ্র রচনাটিতে চারটি সংকলন স্থান পেয়েছে। প্রথমটি ছিল – “পাশ্চাত্য দার্শনিক শোপেনহাওয়ার (Schopenhaur) বলিয়াছেন – জগতে উপনিষদের তুল্য উপকারী গ্রন্থ আর দ্বিতীয় নাই। জীবনে ইহা আমায় সান্ত্বনা দিতেছে, মৃত্যুকালেও ইহা আমায় শান্তি দিবে।”

১৩০৫-এর মাঘ থেকে ‘উদ্বোধন’ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বহু মূল্যবান প্রবন্ধ ও তথ্য বিকীর্ণ রয়েছে পত্রিকার পাতায় পাতায়। সুবিধার জন্য মাত্র কয়েকটি রচনার কথা উল্লেখ করছি। প্রথমে ১৩০৫ মাঘ থেকে ১৩১০ পৌষ পর্যন্ত – ‘কর্ম্ম’ (বাবু গিরিশচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক রামকৃষ্ণ মিশনে পঠিত), ‘ধম্মপদ’ (চারুচন্দ্র বসু), ‘আচার্য্য শঙ্কর ও মায়াবাদ’ (প্রমথনাথ তর্কভূষণ), ‘পরমহংসদেবের সত্যনিষ্ঠা’ (স্বামী ব্রহ্মানন্দ), ‘ম্যাক্সমূলার লিখিত পরমহংসদেবের জীবনচরত’, ‘স্বামী বিবেকানন্দর সহিত কথোপকথন’ (‘প্রবুদ্ধ ভারত’ হইতে গৃহীত), ‘প্রাণায়াম’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ১ম বর্ষের ২য় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত কবিতা ‘সখার প্রতি’, যেটির শেষের চার পঙক্তি – “ব্রহ্ম হ’তে কীট পরমাণু, সর্ব্ব-ভূতে সেই প্রেমময় / মন প্রাণ শরীর অর্পণ, কর সখে, এ সবার পায়ে। / বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর / জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।/ ‘আমার তিব্বত ভ্রমণের এক পরিচ্ছেদ’ (১২ পর্বে) (স্বামী শুদ্ধানন্দ), রামচন্দ্র দত্তের প্রয়াণ সংবাদ, ‘বর্ত্তমান ভারত’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘ভাববার কথা’ (৩ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘গৃহস্থ ও সন্ন্যাসী’ (শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী), ‘বৈজ্ঞানিক প্রণালী’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’ (সমালোচনা) (স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ), ‘মানুষের যথার্থ স্বরূপ’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘উপনিষদের বিষয়’ (২ পর্ব) (স্বামী সচ্চিদানন্দ), ‘পরিব্রাজক’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘মায়া ও ঈশ্বরধারণার ক্রমবিকাশ’ (২ পর্ব্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘দেরাদুন’ (শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী), ‘মানব জীবন-উদ্দেশ্য ও উন্নতি’ (অটলচন্দ্র নাথ), ‘বহুত্বে একত্ব’ (২ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘মুর্শিদাবাদ অনাথাশ্রম’ (স্বামী অখন্ডানন্দ), ‘বৈজ্ঞানিক কথা’ (অনুকূলচন্দ্র ঘোষ), ‘অপরোক্ষানুভূতি’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘কৃষিব্যাঙ্ক’ (প্রবোধচন্দ্র দে), ‘কর্মজীবনে বেদান্ত’ (২ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘গীতা শঙ্করভাষ্যানুবাদ’ (৫ পর্ব) (প্রমথনাথ তর্কভূষণ), ‘কালী’ (কবিতা) (স্বামী বিবেকানন্দের ‘Kali the Mother’- এর শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী কৃত অনুবাদ), ‘বৈরাগ্য না উন্মত্ততা’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘ধ্রুবচরিত্র’ (নাটক) (৮ পর্ব) (চন্ডীচরণ বর্দ্ধন), ‘আয়ুর্ব্বেদ ও আয়ুর্ব্বেদীয় চিকিৎসা’ (শ্রীশচন্দ্র কবিরত্ন), ‘মায়া’ (স্বামী সচ্চিদানন্দ), ‘প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে দু’একটি কথা’ (স্বামী বিমলানন্দ), ‘গ্যালিলিও’ (মনোমোহন গঙ্গোপাধ্যায়), ‘পওহারী বাবা’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘কেনোপনিষৎ’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘ভারতে শক্তিপূজা’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘প্যালেন্সটাইন ভ্রমণ’ (২ পর্ব) (মহেন্দ্রনাথ দত্ত), ‘স্বামী বিবেকানন্দের পত্র’, ‘হরিদ্বারে কুম্ভমেলা’ (৩ পর্ব) (স্বামী সত্যকাম), ‘কাশ্মীরে অমরনাথ’ (স্বামী প্রকাশানন্দ), ‘জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘গীতাতত্ব’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘হিমালয়ে কেদারনাথ’ (বসন্ত কুমার ঘোষ), ‘হিঙ্গুলাজ তীর্থযাত্রা’ (নিকুঞ্জবিহারী মল্লিক), ‘তাড়িত-রহস্য’ (৩ পর্ব)(অনাথ নাথ পালিত), ‘নূতন জাপান’ (স্বামী সদানন্দ), ‘জ্ঞান’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘উত্তরাখন্ডে গঙ্গোত্রি ও যমুনোত্রি’ (নিকুঞ্জবিহারী মল্লিক), ‘স্বামী শিষ্য সংবাদ’ (শরচ্চন্দ্র চক্রবর্ত্তী), ‘স্বামীজীর সহিত দুই চারিটা দিন’ (হরিপদ মিত্র), ‘পন্ডরপুর তীর্থ’ (জনৈক মহিলা লিখিত), ‘বঙ্গে অকাল মৃত্যু’ (শশিভূষণ ঘোষ), ‘নচিকেতার ব্রহ্মজ্ঞান লাভ’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘আত্মনিবেদন’ (কবিতা) (কিরণচন্দ্র দত্ত), ‘শ্রীশ্রীরামানুজচরিত’ (স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ), ‘তিব্বতে তিন বৎসর’ (৬ পর্ব) (স্বামী অখন্ডানন্দ), ‘নাচুক তাহাতে শ্যামা’ (কবিতা) (স্বামি বিবেকানন্দ)।

শুধু কয়েকটি মাত্র রচনার উল্লেখ করা হল। এছাড়া শ্রীম- রচিত ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ বহু সংখ্যাতেই আংশিক ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। পত্রিকার একটি নিয়মিত বিভাগ ছিল ‘সমালোচনা’, এতে সে সময়ে নতুন প্রকাশিত বইয়ের আলোচনা থাকত। ‘সংবাদ ও মন্তব্য’ বিভাগে ছিল বিবিধ সংবাদ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোচনা। লক্ষণীয় যে ‘উদ্বোধনে’ শুধুমাত্র যে ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধই স্থান পেত তা কিন্তু নয়। কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ক রচনাও মুদ্রিত হয়েছে। বহু রচনা, বিশেষ করে বিবেকানন্দ রচিত, পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে।

এবার ১৩১১ থেকে ১৩৫০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত কিছু রচনা – ‘সাংখ্য দর্শন’ (মোক্ষদাচরণ সামাধ্যায়ী), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ’ (গিরিশচন্দ্র ঘোষ), ‘ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব’ (বৈকুন্ঠনাথ সান্যাল), ‘স্বামিজীর স্মৃতি’ (সুরেন্দ্রনাথ সেন), ‘রামকৃষ্ণ আরাত্রিক’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ’ (রাজেন্দ্রনাথ ঘোষ), ‘দ্বারকাপুরী’ (নিকুঞ্জবিহারী মল্লিক), ‘স্বামিজীর স্মৃতি’ (প্রিয়নাথ সিংহ), ইহুদী জাতির ইতিহাস’ (মহেন্দ্রনাথ দত্ত), ‘জীবন সংগ্রাম ও প্রাকৃতিক নির্ব্বাচন’ (হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল), ‘বুদ্ধগয়ায় বিবেকানন্দ’ (প্রিয়নাথ সিংহ), ‘জ্ঞান ও ভক্তির একতা’ (স্বামী অচ্যুতানন্দ সরস্বতী), ‘অদ্বৈতবাদ’ (৩ পর্ব) (আশুতোষ দেব), ‘কবি বিহারীলাল ও সুরেন্দ্রনাথ’ (কিরণচন্দ্র দত্ত), ‘পাশ্চাত্য দেশে স্বামী বিবেকানন্দের প্রচার কার্য্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (এস. ই. ওয়াল্ডো) (‘প্রবুদ্ধ ভারত’ থেকে), ‘নাগ মহাশয়’ (শরচ্চন্দ্র চক্রবর্ত্তী), ‘স্বামীজী ও শিল্প’ (প্রিয়নাথ সিংহ), ‘বঙ্গে দুর্ভিক্ষ ও রামকৃষ্ণ মিশন’, ‘কর্জন থিয়েটারে স্বামী অভেদানন্দের বক্তৃতা’ (১৪ই সেপ্টেম্বর [১৯০৬?] স্বামী বিবেকানন্দ বঙ্গীয় যুবকগণকে সম্বোধন করিয়া যে হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা করেন তার বঙ্গানুবাদ), ‘শ্রীহট্টে ভীষণ দুর্ভিক্ষ’ (সংবাদ), ‘নির্জনে শান্তি’ (ব্রহ্মচারী তেজনারায়ণ), ‘অমরনাথ ভ্রমণ’ (২ পর্ব) (জনৈক ব্রহ্মচারী), ‘ভারতে দুর্ভিক্ষ ও রামকৃষ্ণ মিশন’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘সাংখ্য দর্শন’ (শরচ্চন্দ্র চক্রবর্ত্তী), ‘পদব্রজে কাশীযাত্রা’ (৩ পর্ব) (পরিব্রাজক), ‘শান্তি’ (গিরিশচন্দ ঘোষ), ‘ভারতের ঐতিহাসিক তত্ত্ব’ (কুমুদবন্ধু সেন), ‘সন্ন্যাসীর আদর্শ ও তৎপ্রাপ্তির সাধন’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘উত্তরাখন্ডে কঠিন কেদার ও বদরী-বিশাল’ (নিকুঞ্জ বিহারী মল্লিক), ‘ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস’ (৭ পর্ব) (উপেন্দ্রনাথ মোদক), ‘বেদ ও বেদ্য’ (কৃষ্ণচন্দ্র বর্মন), ‘মদীয় আচার্যদেব’ (২ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘তীর্থ সলিল’ (১৩১৫ মাঘ সংখ্যায় ‘সংক্ষিপ্ত আলোচনা’ বিভাগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রণীত এই কাব্য গ্রন্থটির সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। বিবেকানন্দ রচিত ‘Kali The Mother’ শীর্ষক ক্ষুদ্র কবিতাটির সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কৃত হৃদয়গ্রাহী অনুবাদটি উদ্ধৃত হয়েছে। পাঠক বন্দিত এই অনুপম কবিতাটির শেষ দুই পংক্তি – “সাহসে যে দুঃখ দৈন্য চায়,- মৃত্যুরে যে বাঁধে বাহু পাশে,- / কাল-নৃত্য করে উপভোগ,- মাতৃরূপা তারি’ কাছে আসে”/ (সম্পূর্ণ কবিতাটি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার ১৩৭০ কার্তিক সংখ্যায়), ‘কামাখ্যা ভ্রমণ’ ২ পর্ব (স্বামী সত্যকাম), ‘মধুর রস ও বৈষ্ণব কবিকূল’ (৩ পর্ব) (জিতেন্দ্রনাথ বসু), ‘ধর্ম্মবিজ্ঞান’ (৪ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘কহিলে ‘আবার আসিবে’ ’ (কবিতা) (শ্রীম রচিত), ‘পওহারী বাবা’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘ভারতেতর দেশে বেদান্ত প্রচার’, ‘স্বামী অদ্বৈতানন্দের মহাসমাধি’, ‘ভক্তি রহস্য’ (৮ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘মহাসমাধি’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘স্ত্রীশিক্ষা-সমস্যা’, ‘ভারতীয় রমণী-তাদের অতীত, বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ’, ‘মহর্ষি ফ্রান্সিস’ (হরিদাস দত্ত), ‘মহাসমাধি : গিরিশচন্দ্র ঘোষ’, ‘হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামী বিবেকানন্দ’, ‘সন্ন্যাসিনীর আত্মকাহিনী’ (৪ পর্ব)(সরলাবালা দাসী), ‘মহম্মদ’ (উপেন্দ্রনাথ দত্ত), ‘প্রহ্লাদ’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘ঈশদূত যিশুখ্রিস্ট’ (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘স্ত্রীশিক্ষা ও নিবেদিতা’, ‘শোক সংবাদ’ (স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দের প্রয়াণ), ‘আচার্য শ্রীবিবেকানন্দ’ (১২ পর্ব) (সিস্টার নিবেদিতা), ‘ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভস্মাবশেষ অস্থি সম্বন্ধে কয়েকটি কথা’ (স্বামী সারদানন্দ), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের দুর্ভিক্ষ কার্য’, ‘বুদ্ধ ও মার’ (পালি হইতে) (গোকুলদাস দে), ‘রামেশ্বর দর্শন’ (অতুলকৃষ্ণ দাস), ‘প্রকৃতির সামঞ্জস্যে উদ্ভিদের স্থান’ (প্রবোধচন্দ্র দে), ‘বঙ্গে বৌদ্ধধর্ম্ম’ (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী), ‘বৌদ্ধ ও বেদান্ত দর্শনে নির্বাণতত্ব’ (প্রমথনাথ তর্কভূষণ), ‘ব্রজভ্রমণ’ (ব্রহ্মচারী প্রভাস), ‘স্বামীজী ও ভক্তিতত্ত্ব’ (কুমুদবন্ধু সেন), ‘টলস্টয়ের আদর্শ সম্বন্ধে আলোচনা’ (বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়), ‘ব্রাহ্ম ও সমাজ’ (প্রবোধচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), ‘ধর্ম জিনিসটা কি ?’ (২ পর্ব) (স্বামী বিবেকানন্দ), ‘সাহিত্য-সৌন্দর্য্য’ (জিতেন্দ্রপ্রসাদ বসু), ‘স্বামী প্রেমানন্দের পত্র’, ‘আমাদের পল্লীগ্রামের অবস্থা ও তাহার প্রতিকারের উপায়’ (সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়), ‘মানবমনে ধর্ম্মভাব ও তাহার অনিবার্য্য প্রয়োজনীয়তা’ (হেমচন্দ্র দত্ত), ‘এ্যারিষ্টটল ও পরাবিদ্যা’ (২ পর্ব) (কানাইলাল পাল), ‘দ্বারকাধাম ও কয়েকটি তীর্থদর্শন’ (অতুলকৃষ্ণ দাস), ‘মহাসমাধি’ (১৩২৮ বৈশাখ সংখ্যায় স্বামী ব্রহ্মানন্দের মহাসমাধির সংবাদ), ১৩২৮ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যাটি স্বামী ব্রহ্মানন্দ সংখ্যা হিসাবে প্রকাশিত, ‘শ্রীশ্রীমায়ের কথা’ (৩ পর্ব) (যোগেন মা), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্ঘের উদ্দেশ্য’ (স্বামী শিবানন্দ), ‘যাজ্ঞবল্ক্য ও মৈত্রেয়ী’ (নীহারিকা দেবী), ‘নীহারিকা ও নক্ষত্রপুঞ্জ’ (দুর্গাপদ মিত্র), ‘রোঁমা রোঁলার চিঠি’ (অনুবাদ), ‘ব্রাহ্মসমাজ ও মূর্ত্তিপূজা’ (স্বামী চন্দ্রেশ্বরানন্দ), ‘ভগিনী কৃস্টিন’ (স্বামী বশীশ্বর সেন), ‘ভারতের নিকট জগতের ঋণ’ (স্বামী জগদীশ্বরানন্দ), ‘ঈশোপনিষৎ’ (অমরনাথ রায়), ‘আলাহিয়া বেলাবল’ (সঙ্গীত, কথা - দেবী সহায়, সুর-ব্রহ্মচারী বিশ্বচৈতন্য), ‘প্রাচীন বাংলার বিদুষী নারী’ (অবনীমোহন গুপ্ত), ‘মহাসমাধি’ (শ্রীশ্রীমাষ্টার মহাশয়ের প্রয়াণ সংবাদ), ‘সাহিত্যের প্রাণ’ (সুরেশচন্দ্র মজুমদার), ‘শ্রীম সমীপে’ (স্বামী ধর্মেশানন্দ), ‘শ্রীশ্রীলাটু মহারাজের কথা’ (স্বামী সিদ্ধানন্দ), ‘মহাপুরুষজীর মহাসমাধি প্রবেশ’ (স্বামী বাসুদেবানন্দ), ‘গোমুখী যাত্রা’ (৪ পর্ব) (স্বামী সৎপ্রকাশানন্দ), ‘হিমালয়ের তীর্থ’ (স্বামী আত্মবোধানন্দ), ‘কার্পাস চাষ’ (স্বামী কেশবানন্দ), ‘জাগ্রত জাপান’ (৯ পর্ব) (জিতেন্দ্রনাথ সরকার), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ শতবার্ষিকী সংবাদ’, ‘পরমহংস দেব কি অবতার ?’ (ফাল্গুন ১৩৪২, রাজেন্দ্রনাথ ঘোষ), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ও বৌদ্ধধর্ম’ (বৈশাখ ১৩৪৩, রমণীকুমার দত্তগুপ্ত), ‘হিন্দু সঙ্গীত’ (সুরেশচন্দ্র চক্রবর্ত্তী), ‘সাঙ্গীতিকী’ (২ পর্ব) (দিলীপকুমার রায়), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ও কর্মযোগ’ (স্বামী রমানন্দ), ‘ধর্ম ও সমাজ’ (খগেন্দ্রনাথ মিত্র), ‘কবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ’ (ভাদ্র ১৩৪৮), ‘বৈদিক সমাজের ভিত্তি’ (স্বামী গম্ভীরানন্দ), ‘মীরাবাঈ-এর জীবনী ও ভজনাবলী’ (স্বামী জগদীশ্বরানন্দ), ‘অদ্বৈতবাদের ব্যাপ্তি’ (যোগেন্দ্রনাথ তর্কতীর্থ), ‘গীতার বয়স ও শ্লোকসংখ্যা’ (১৩৪৯ জ্যৈষ্ঠ, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ), ‘দেশপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ’ (সুধাংশুবিমল মুখোপাধ্যায়), ‘ভারতীয় সঙ্গীতের কথা’ (স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ), ‘শ্রীঅরবিন্দ’ (গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী)।

১৩৫১ থেকে ২০০০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত পত্রিকার কয়েকটি রচনা - ‘ইসলাম ধর্মের সারকথা’ (১৩৫১ ফাল্গুন, রমণীকুমার দত্তগুপ্ত), ‘পাটলীপুত্র নগরীর ইতিবৃত্ত’ (মনীগোপাল চক্রবর্ত্তী), ‘জাতি গঠনে সঙ্গীত’ (সুধাময় গোস্বামী), ‘চিনের ঋষি কনফুসিয়াস’ (স্বামী জগদীশ্বরানন্দ), ‘রাসায়নিক মৌলিকদের শ্রেণিবিভাগ’ (সুবর্ণকমল রায়), ‘রবীন্দ্রনাথে মিষ্টিসিজম ও রোমান্স’ (মনোজ রায়), ‘কোষ্ঠি বিচারে গ্রহ ও ভাবস্ফুট’ (পঞ্জিকা সংস্কার সম্বন্ধে, ১৩৫৩ ভাদ্র/আশ্বিন, স্বামী চিন্ময়ানন্দ), ‘সাধক কমলাকান্ত’ (১৩৫৪ আশ্বিন, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ), ‘সাহিত্যে সৌন্দর্যানুভূতি’ (শ্রী), ‘লিথোগ্রাফির জন্মকথা’ (সি হারকোর্ট রবার্টসন), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক প্রভাব’ (উপেন্দ্রকুমার কর), ‘শ্রীশ্রীমা’ (প্রভাবতী দেবী সরস্বতী), ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ (আশাপূর্ণা দেবী), ‘দুইটি কাহিনী’ (১৩৬২ অগ্রহায়ণ, কুমুদবন্ধু সেন) [‘অবসরে’ সংকলিত], ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ও নারীদের আদর্শ’ (রমা চৌধুরী), ‘সংস্কৃত শিক্ষার ভবিষ্যৎ’ (রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়), ‘রবীন্দ্রনাথের ‘পঞ্চভূত’ ( ২ পর্ব) (প্রণবরঞ্জন ঘোষ), ‘যত মত তত পথ’ (ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ লীলাঙ্গনে : ধর্মদাস লাহা’ (২ পর্ব) (১৩৭৫ ফাল্গুন, সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী), ‘কঠোপনিষৎ-প্রসঙ্গ’ (৩ পর্ব, মাঘ ১৩৮২, স্বামী ভূতেশানন্দ), ‘স্বামিজীর গানের খাতা’ (৩ পর্ব, স্বামী বিশ্বাশ্রয়ানন্দ), ‘স্বামীজীর ইসলাম প্রীতি’ (মাঘ ১৩৮৫, জলধিকুমার সরকার), ‘সমন্বয় সাধনে কবীর’ (রেজাউল করীম), ‘শিক্ষাক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ মিশনের ভূমিকা’ (স্বামী বীরেশ্বরানন্দ), ‘জগন্নাথের স্বরূপ-সন্ধানে’ (স্বামী গীতানন্দ), ‘শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও মহাত্মা গান্ধী’ (শঙ্করীপ্রসাদ বসু), ‘রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ ’ (১৩৫৮ জ্যৈষ্ঠ, বেলা দে), ‘বেদ-পুরাণ সম্মত প্রাচীন ভারতের ইতিহাস’ (অধ্যাপক গৌরগোবিন্দ গুপ্ত), ‘বেদান্ত বলিতে আমি কি বুঝি’ (২ পর্ব) (ক্রিস্টোফার ইশারউড), ‘জন্মমৃত্যু মোর পদতলে’ (স্বামী শুদ্ধানন্দ), ‘ভক্তি’ (স্বামী বিরজানন্দ), ‘সমাজতন্ত্রবাদ ও স্বামী বিবেকানন্দ’ (৫ পর্ব) (সান্ত্বনা দাশগুপ্ত), ‘স্বামীজীর জীবন-দর্শন’ (লালবাহাদুর শাস্ত্রী), ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর প্রয়াণ সংবাদ’, ‘সন্ন্যাসী কবি বিবেকানন্দ’ (নরেন্দ্র দেব), ‘বিবেকানন্দ-সাহিত্যে হাস্যরস’ (৭ পর্ব) (প্রণবরঞ্জন ঘোষ), ‘শ্রীরামকৃষ্ণের আলোকচিত্র’ (২ পর্ব) (ফাল্গুন ১৩৮৯, পীযূষকান্তি রায়), ‘গিরিশচন্দ্রের রাজরোষে নিষিদ্ধ নাটক’ (শিশির কর), ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার শতবর্ষে পদার্পণ’ (১৪০৪ মাঘ, স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ)।

এখানে ধর্ম বিষয়ক রচনা ছাড়াও অন্যান্য রচনার উল্লেখ করা হ’ল যাতে পত্রিকার বিষয় বৈচিত্র যথাযথ ফুটে ওঠে।

শ্রীরামকৃষ্ণের যে কয়টি আলোকচিত্র পাওয়া গিয়েছে সে সম্বন্ধে প্রকাশিত একটি তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধের কথা আগেই বলা হয়েছে। মনে পড়ে আশির দশকের গোড়ার দিকে ‘দেশ’ পত্রিকায় ঠাকুর সম্ভাব্য কোন পথ দিয়ে হেঁটে ঝামাপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বরে আসতেন, সে সম্বন্ধে একটি মূল্যবান গবেষণা মূলক রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে শ্রীরামকৃষ্ণের দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় অর্থকষ্টে তাড়িত হয়ে উপার্জনের আশায় কলকাতায় এসে বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটে দিগম্বর মিত্রর বাড়ির কাছে একটি চতুষ্পাঠী খুলে বসেন এবং ভাই গদাধরকেও নিয়ে আসেন। শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন সতেরো বছর। পরে রাণী রাসমণি দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করলে নানা গোলযোগের পর রামকুমারকে কালী মন্দিরের পুরোহিত নিযুক্ত করেন। তখন ঠাকুর রামকৃষ্ণ (অবশ্য তখনও রামকৃষ্ণ নাম হয় নি) বার কয়েক ঝামাপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বরে দাদার কাছে এসেছিলেন। উল্লিখিত রচনাটি তার যাতায়াতের সম্ভাব্য পথ নিয়েই। লেখাটি আমি সংগ্রহ করে রাখিনি। পরে আর কোথাও সেটি খুঁজে পাই নি, এমন কি ‘উদ্বোধনে’র পুরানো সংখ্যার মধ্যেও চোখে পড়ল না।

‘উদ্বোধন’-এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ। ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ১লা মাঘ থেকে শুরু করে ১০ম বর্ষ পৌষ ১৩১৪ পর্যন্ত পত্রিকা প্রতি ১৫ দিন অন্তর পাক্ষিক পত্র হিসাবে প্রকাশিত হত। এর পর মাঘ সংখ্যা থেকে সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্বামী সারদানন্দ এবং তখন থেকেই এটি মাসিক পত্রে রূপান্তরিত হয়। আখ্যাপত্রে প্রথমে দেবনাগরী অক্ষরে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলায় লেখা থাকত “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্নিবোধত” শ্লোকটি। পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে যারা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, তারা হলেন : স্বামী ত্রিগুণাতীত (মাঘ ১৩০৫ - পৌষ ১৩০৯); স্বামী শুদ্ধানন্দ (মাঘ ১৩০৯ - পৌষ ১৩১৪, ভাদ্র ১৩৩৪ - আশ্বিন ১৩৪২); স্বামী সারদানন্দ (মাঘ ১৩১৪ - পৌষ ১৩১৮, মাঘ ১৩২২ - পৌষ ১৩২৬, ভাদ্র ১৩২৯ - শ্রাবণ ১৩৩৪); স্বামী প্রজ্ঞানন্দ (মাঘ ১৩১৮ - পৌষ এ১৩২০); স্বামী সারদানন্দ ও স্বামী মাধবানন্দ (মাঘ ১৩২০ - পৌষ ১৩২২); স্বামী সারদানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ (তখন ব্রহ্মচারী বিমল) ও স্বামী গঙ্গেশানন্দ (তখন ব্রহ্মচারী শান্তিচৈতন্য) (মাঘ ১৩২২ – পৌষ ১৩২৬ ); স্বামী বাসুদেবানন্দ (মাঘ ১৩২৬ - আশ্বিন ১৩৪২); স্বামী সুন্দরানন্দ (কার্তিক ১৩৪২ - চৈত্র ১৩৫৮); স্বামী শ্রদ্ধানন্দ (বৈশাখ ১৩৫৯ - পৌষ ১৩৬৩); স্বামী নিরাময়ানন্দ (মাঘ ১৩৬৩ - পৌষ ১৩৭১); স্বামী বিশ্বাশ্রয়ানন্দ (মাঘ ১৩৭১ - পৌষ ১৩৮০); স্বামী ধ্যানানন্দ (মাঘ ১৩৮০ - ভাদ্র ১৩৮৯); স্বামী অব্জজানন্দ (আশ্বিন ১৩৮৯ - কার্তিক ১৩৯২); স্বামী প্রমেয়ানন্দ ( অগ্রহায়ণ ১৩৯২ - আশ্বিন ১৩৯৪); স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ (কার্তিক ১৩৯৪ - বৈশাখ ১৪০৭); স্বামী সর্বগানন্দ (জৈষ্ঠ্য ১৪০৭ - কার্তিক ১৪১২); স্বামী শিবপ্রদানন্দ (অগ্রহায়ণ ১৪১২ - পৌষ ১৪১৫); স্বামী ঋতানন্দ ( মাঘ ১৪১৫ - শ্রাবণ ১৪২০ ) ; ভাদ্র ১৪২০ থেকে সম্পাদনা করছেন স্বামী চৈতন্যানন্দ।

‘উদ্বোধন’ এখনো তার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

“ স্বামীজীর শেষ ইচ্ছা ছিল ‘উদ্বোধন’ যেন নিছক ধর্মীয় পত্রিকা বা নিছক সাহিত্য-পত্রিকা না হয়। তিনি চেয়েছিলেন পত্রিকা-জগতে ‘উদ্বোধন’ বিভিন্ন দিকের পথপ্রদর্শক হবে, সাহিত্যের আঙিনায় এক বিশিষ্ট স্থান পাবে, বাঙলা ভাষার উন্নতি সাধন করবে, আবার ধর্মের ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করবে। ‘উদ্বোধন’-এ কেবলমাত্র গঠনমূলক ভাবের প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে, কোন নেতিবাচক লেখা ‘উদ্বোধন’-এ প্রকাশিত হবে না। স্বামীজী বলেছিলেন যে, একমাত্র গঠনমূলক ভাবই জনসাধারণকে তুলতে পারে।”

মিস ম্যাকলাউড ‘উদ্বোধন’ প্রকাশের জন্য স্বামীজীর হাতে আট শ’ ডলার দিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি ত্রিগুণাতীতানন্দকে দিয়ে একটা প্রেস কিনে ফেলতে বলেন। ত্রিগুণাতীতানন্দ আরও এক হাজার টাকা ধার করে দেড় হাজার টাকা দিয়ে দুটো প্রেস কিনেছিলেন। এখানেই প্রথমে অনেক লেখা ছাপা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ ‘উদ্বোধনে’র ১ম সংখ্যায় ‘সূচনা’ হিসাবে ‘প্রস্তাবনা’ রচনাটি লিখেছেন। তার বহু লেখা ধারাবাহিকভাবে ‘উদ্বোধনে’ বেরিয়ে পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে। ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দে নিবেদিতা ও তুরীয়ানন্দকে সঙ্গে নিয়ে জাহাজে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ত্রিগুণাতীতানন্দের অনুরোধে তিনি জাহাজেই ‘বিলাতযাত্রীর ডায়েরী’ (পরিবর্তিত নাম ‘পরিব্রাজক’) নামক অসাধারণ ভ্রমণ কাহিনীটি রচনা করেন। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে লেখেন ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘বর্ত্তমান ভারত’ প্রভৃতি রচনাগুলি। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ পড়ে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে দীনেশচন্দ্র সেনকে বলেছিলেন- “বিবেকানন্দ চলিত ভাষায় কি অসাধারণ লিখেছেন! চলিত ভাষায় যে কত সুন্দরভাবে উচ্চচিন্তা প্রকাশ করা যায় সেটি বিবেকানন্দ দেখিয়েছেন।”

পরিশেষে স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজের কথা দিয়েই শেষ করি –

“স্বামীজীর ইচ্ছায় ও নির্দ্দেশে ‘উদ্বোধন’ কেবলমাত্র এক ধর্মীয় পত্রিকার গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি – ধর্ম, সাহিত্য, ইতিহাস, লোকসংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভ্রমণ ও স্মৃতিকথা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে সুখপাঠ্য অথচ সুগভীর রচনা প্রকাশ করে একটি পূর্ণাঙ্গ পারিবারিক পত্রিকারূপে ‘উদ্বোধন’ আজ সকলের কাছে সমাদৃত।”

পত্রিকার প্রথম সংখ্যার আখ্যাপত্রের একটি প্রতিলিপি সংযুক্ত হ’ল।



সংযোজন -     
     পরিশেষে ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার পুরানো সংখ্যা থেকে ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ শীর্ষক রচনাটি উদ্ধার করে আগ্রহী পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হ’ল। স্বামীজীর উনসপ্ততিতম জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে পত্রিকার ৩৩ বর্ষ, ফাল্গুন ১৩৩৭ (১৯৩১), ২য় সংখ্যায় প্রকাশিত ক্ষুদ্র প্রবন্ধটির লেখক ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও পরবর্তী কালে ভারতের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণন।
      ( মূল বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। )
          স্বামী বিবেকানন্দ
    অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণনন [রাধাকৃষ্ণন]
     (স্বামীজীর জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে রবিবার এলবার্ট হলে এক বিরাট সভায় সভাপতিরূপে অধ্যাপক শ্রীযুক্ত রাধাকৃষ্ণনন নিম্নলিখিতরূপ বক্তৃতা প্রদান করেন)।
     আমার স্বামিজীর পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য উদ্যক্তাগণকে ধন্যবাদ দিতেছি। স্বামিজীর গ্রন্থাবলী পাঠ করিয়া ছাত্রজীবন হইতেই তাঁহার প্রতি আমি শ্রদ্ধান্বিত হইয়াছিলাম, পরে রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্পর্শে আসিয়া মিশনের কর্ম্মী সন্ন্যাসিগণের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা পোষণ করিয়া আসিতেছি। আমার অনেক ছাত্র ও বন্ধু মিশনের প্রধান প্রধান কেন্দ্রে থাকিয়া স্বামিজীর পরিত্যক্ত কার্য্যাবলী সম্পাদিত করিতেছেন দেখিয়া আমি গর্ব্ব অনুভব করি।
     আমার ছাত্রজীবনে দেখিয়াছি যে, যুবকগণ অশেষ শ্রদ্ধার সহিত স্বামিজীর গ্রন্থাবলী পাঠ করিত। এ যুগের যুবকগণও স্বামিজীর প্রতি তদ্রূপ শ্রদ্ধাই নিবেদন করিয়া থাকে। জগতের বিভিন্ন ধর্ম্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন মতের প্রচলন আছে ; স্বামিজীর গ্রন্থাদি পাঠ করিলে জগতের বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বিগণের মধ্যে একটা ঐক্য স্থাপিত হওয়া সম্ভব। চিরন্তন সত্যের সন্ধানে স্বামিজীর প্রদর্শিত পথই একমাত্র আদর্শ এবং সঠিক। উহার উপর ভিত্তি স্থাপন করিলেই নানা ধর্ম্মের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হইতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন খুব সোজা কথা নয়, রীতিমত সাধনা চাই। এই সাধনাই স্বামিজীর জীবনে পরিস্ফুট হইয়াছে।
     তবে যে আজকাল ছাত্র-সমাজে ধর্ম্মের প্রতি তেমন নিষ্টা [নিষ্ঠা] দেখা যাইতেছে না, তাহার কারণ আমার মতে ‘অশ্রদ্ধা’ নয় বরং ‘উদাসীনতা’। এই উদাসীনতার কারণ হইতেছে – বর্তমান অবস্থায় তাহাদের গভীর আন্তরিক অসন্তোষ। ভারতের প্রতি যে অত্যাচার, উৎপীড়ন হইতেছে, যে অভাবের তাড়ণায় অধিকাংশ লোক দারিদ্র্য ও রোগে কষ্ট পাইয়েছে, তাহার মূল কারণ তিরোহিত হইলে, ধর্ম্মের এই রুদ্ধ গতি তাহার স্বাভাবিক গাম্ভীর্য্যে ও উদারতায় পুনঃ প্রবাহিত হইবে। তাহার জন্য আমরা যেন নিরুৎসাহ না হই। অদূর ভবিষ্যতে স্বামিজীর আদর্শ তাঁহার দেশবাসী আরও ভাল করিয়া বুঝিলে প্রকৃত ধর্ম্মের অর্থ হৃদয়ঙ্গম হইবে।
     যে পর্য্যন্ত রামকৃষ্ণ মিশন স্বামিজীর নির্দ্দেশিত পন্থায় কাজ করিবে, ততদিন স্বামী বিবেকানন্দের নাম ভারতবাসীর চিত্তে চির জাগরুক থাকিবে। রামকৃষ্ণ মিশনের কার্য্যাবলী স্বামিজীর জীবনের প্রতিচ্ছবি। তিনি একটা কথা বলিতেন যে, ধার্ম্মিক সেই – যে বিশ্বমানবের সেবায় তাঁহার সর্ব্বস্ব উৎসর্গ করে এবং প্রতিবেশীকে আপনার মত ভালবাসে। কেবল মন্দ স্ত্রী-পুরুষের হিসাব নিকাশ তৈয়ার করিলেই সমাজ সংস্কার হয় না; সংস্কারক তাহাদের সহিত মিলিয়া স্বীয় ব্যক্তিত্বে প্রভাবে তাহাদের উন্নতি করিলে প্রকৃত সমাজ সংস্কার হয়। স্বামিজী এবম্প্রকারের সংস্কারক ছিলেন।


লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর (IIEST,shibpur) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.