প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

প্রাচীন ভারত

সুকুমারী ভট্টাচার্য স্মরণ সংখ্যা , জুন ৩০, ২০১৫

 

সুকুমারী ভট্টাচার্য – সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ থেকে প্রায় চুরানব্বই বছর আগে ১৯২১ সালের ১২ই জুলাই মেদিনীপুরে যখন সুকুমারী ভট্টাচার্য পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন, তখন বাড়ীতে উলুধ্বনি কিংবা শাঁখ বেজেছিল কি না আমাদের জানা নেই, কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল এক বাঙালী ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবারে। শোনা যায় যে তাঁর পরিবার মাইকেল মধুসূদন দত্তের বংশের সাথে যুক্ত ছিল। তখন কে জানতো যে এই নবজাতিকা বড় হয়ে সংস্কৃত ও বৈদিক সাহিত্য ও ইন্দোলজির বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবে।

পড়াশোনায় বরাবরই উজ্জ্বল এই ছাত্রীটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাশ করে যখন ১৯৪৩-৪৪ সালে সংস্কৃতে এম এ করার জন্য দরখাস্ত করলেন, তখনকার ব্রাহ্মণশাসিত সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার কর্তাদের পৌরুষ ও ব্রহ্মতেজ জেগে উঠল। একে বিধর্মী তায় মহিলা, শাস্ত্রে বলা আছে এদের বেদাধিকার নেই, অতএব সংস্কৃত পড়ার দরখাস্ত নাকচ হল। বাধ্য হয়ে সুকুমারী ইংরেজীতে এম এ পড়লেন। এই শিক্ষাটা কিন্তু পরে তাঁর কাজে লেগেছিল, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির পৌরাণিক গল্পগাথাগুলি নিয়ে তুলনামূলক গবেষণাতে পি এচ ডি করার সময়, যেটি পরে ১৯৭০ সালে ‘Indian Theogony’ বই হয়ে বের হয়। তাঁর সংস্কৃতে এম এ করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল, ইংরেজীতে এম এ করার বছর দশেক পরে। এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

ইংরেজীতে এম এ পাশ করার পর তিনি লেডী ব্রেবোর্ন কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপনায় রত হন, কিন্তু ১৯৫৭ সালে বুদ্ধদেব বসু্র অনুরোধে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য পড়াতে শুরু করেন। কয়েক বছর পরেই তাঁর সংস্কৃত অনুরাগী মন তাঁকে সংস্কৃত বিভাগে টেনে আনে, যেখানে তিনি ১৯৮৬ সালে অবসর গ্রহণ অবধি অধ্যাপনা করেছেন।

আচার্য সুনীতিকুমারের ছাত্রী সুকুমারী ভট্টাচার্য ব্যক্তিগত জীবনে মার্ক্সবাদী ও নাস্তিক ইন্দোলজিস্ট ও সংস্কৃতজ্ঞ ছিলেন। তাঁর সময়ের অনেক ঐতিহাসিক ও ইন্দোলজিস্ট, যেমন রাম শরণ শর্মা, দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ ঝা, রোমিলা থাপার, ইত্যাদিরা মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী। যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা থেকে তিনি অনেক দূরে থাকতেন এবং অন্য সকলের মতবাদে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁর ছাত্রদের লেখাতে পাওয়া যায় তারা তাঁর সাথে বিভিন্ন মতামত নিয়ে নির্ভয়ে তর্কে বসতে পারত। তিনি তাঁর নিজের মত কারো ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতেন না। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেছেন “ছাত্রছাত্রীরা ওঁর সাথে তর্ক করলে উনি খুশীই হতেন”। তাঁর জ্ঞান ও বিশ্লেষণী শক্তির পরিধি কতদূর সেটা বোঝা যায় তাঁর লেখা ৩৫টি বইগুলিতে চোখ বোলালে, যার তালিকা এই সংখ্যার প্রথম পাতায় দেওয়া আছে।

পুরস্কারের জন্য তিনি কারো খোশামুদি করেন নি, তাই হয়তো তাঁর যোগ্য পুরস্কার তাঁর জোটেনি। তবুও তিনি সুরেশচন্দ্র স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার, পশ্চিম সরকারের সম্মাননার মতো স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
স্বামী অমল ভট্টাচার্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপক ছিলেন। কন্যা তনিকা সরকার ও জামাই সুমিত সরকার দুজনেই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইতিহাসবিদ। ১৯৮৬ সালে অবসরের পরে তিনি তাঁর নাকতলার বাড়ীতেই গবেষণা চালিয়ে গেছেন – যতদিন না মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়ে গেছে।

সুকুমারী ভট্টাচার্য ২৫শে মে ২০১৪ সালে সকলের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু মৃত্যুই তো আর শেষ কথা নয় - তাঁর দেহটি পর্যন্ত  দান করে গিয়েছিলেন আর জি কর হাসপাতালের ছাত্র-শিক্ষকদের গবেষণার জন্য।

দিলীপ দাস


লেখক পরিচিতি - যাদবপুর ও ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্‌টিটিউট অফ সায়েন্সের প্রাক্তনী। বর্তমানে আমেরিকার সেন্ট লুইস্‌ (মিসৌরী) শহরবাসী। ইতিহাস পেশা নয়নেশা। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও Indology নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভালবাসেন।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।