প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

প্রাচীন ভারত

সুকুমারী ভট্টাচার্য স্মরণ সংখ্যা , জুন ৩০, ২০১৫

 

সম্পাদকীয়


প্রাচীন ভারতের ইতিহাস খুব মনোরম ও চিত্তাকর্ষক, সেখানে বেদ মন্ত্রে উচ্চারিত হয় দেবতাদের সাথে প্রকৃতির উপাসনা, ঋষিরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে কি ছিল সেই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আর এক ভারতসম্রাট রাজর্ষি যুদ্ধ-বিহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। সুকুমারী ভট্টাচার্য - সকলের প্রিয় সুকুমারীদি, ছিলেন এমনই একজন, যিনি সেই প্রাচীন ভারতের ধূসর রাজপথে, অলিন্দে অনায়াসে বিচরণ করেও নিজের মনটি রেখেছিলেন সবুজ ও চিরনবীন। তাই তাঁর বিপুল জ্ঞানের ভাণ্ডারে বৈদিক সাহিত্য, সমাজ, নারী, ধ্রুপদী সংস্কৃত সাহিত্য থেকে রবীন্দ্রনাথ – কি নেই।

সাল ১৯২১ থেকে ২০১৪, অনেকটা ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি, তাঁর চোখের সামনে বদলে গেছে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি। অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। ক্রিশ্চান নারী বলে সংস্কৃত পড়তে বাধা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সব বাধা ভেসে গেছে তাঁর সংকল্পের কাছে। সেজন্যেই ভারতীয় নারীদের নিয়ে তাঁর গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে ‘প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ’,  ‘বিবাহ প্রসঙ্গ’ ও ‘এয়োতি এবং’ ইত্যাদি বইগুলিতে ও ব্যক্তিগতভাবেও তিনি আজীবন নারীত্বের অবমাননা আর অবহেলার প্রতিবাদ করে গেছেন। ঋগ্বেদ-উত্তর যুগ থেকে সমাজে নারীদের সম্মানের ক্রমাবনতি, এমনকি সাধারণ সামাজিক আচার-ব্যবহারের মধ্যেও পুরুষশাসিত সমাজের পক্ষপাতিত্ব, তিনি সকলের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁর গবেষণার মাধ্যমে। সনাতন হিন্দুধর্ম কেমনভাবে ও কখন ব্রাহ্মণদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল সেই বিবর্তনের কথা বলেছেন তাঁর ‘ইতিহাসের আলোকে বৈদিক সাহিত্য’ বইটিতে। পরাধীন ভারতে বৈদিক সাহিত্যের মহিমাগাথাগুলি নিয়ে অতিশয়োক্তি ছিল পরাধীনতার হীনমন্যতা থেকে উদ্ভূত একজাতীয় কল্পিত গৌরব, একথা তাঁর সাহসী কলম বলতে দ্বিধা করে নি এবং এর সাথে তিনি আক্ষেপও করেছেন যে আমাদের অন্তঃসারশূন্য গর্ববোধ বৈদিক সাহিত্যের সারবান গবেষণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেয় নি।

তাঁর অদম্য সাহসী মনোভাবের জন্য যারা তাঁকে একদিন বাধা দিয়েছিলে, আজ কে মনে রেখেছে সেই বাধা প্রদানকারীদের? কিন্তু সুকুমারীদিকে সারা পৃথিবী মনে রেখেছে তাঁর গবেষণা ও জ্ঞানের জন্য। অবসর-এর প্রাচীন ভারত সংখ্যার জন্য আমি দেশ-বিদেশের যেসব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইন্দোলজিস্ট ও সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের সাথে (যেমন রোমিলা থাপার, মাইকেল উইট্‌জেল, ওয়েন্ডি ডনিগার, মাধব দেশপাণ্ডে, দীপক ভট্টাচার্য, দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ ঝা, প্রমুখ) যোগাযোগ করেছি, তাঁরা সকলেই সুকুমারীদির গবেষণার সাথে সুপরিচিত। এঁদের সকলেই যে সবসময় সুকুমারীদির সাথে একমত ছিলেন তা নয়, কিন্তু জ্ঞানের যে ক্ষেত্রে তিনি বিচরণ করতেন সেখানে কারাই বা সর্বদা একমত?

এক পণ্ডিত খেদ প্রকাশ করছিলেন যে ভারতে ইন্দোলজির সুগভীর চর্চা এখন আর কতটুকু হয়। আর ভারতীয় ইন্দোলজিস্টদের মধ্যে একজন, যাকে  রোমিলা থাপার তাঁর সময়ের ইন্দোলজিস্টদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলেছেন, যিনি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় প্রচুর লিখেছেন, তিনিও চলে গেলেন, বছরখানেক আগে। তিনি চিরজীবী হয়ে থাকবেন আমাদের মতো তাঁর অজস্র গুণগ্রাহীদের মাঝে। অবসর-এর প্রাচীন ভারত সংখ্যাটি তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল।   

                               
দিলীপ দাস
অতিথি সম্পাদক


 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।