প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

প্রাচীন ভারত

সুকুমারী ভট্টাচার্য স্মরণ সংখ্যা , জুন ৩০, ২০১৫

 

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস – কিছু প্রশ্ন

উদয়ন ব্যানার্জী


স্কুলে ইতিহাস পড়তে হলেই গায়ে জ্বর আসত। নাম ... তারিখ মুখস্থ করা ... ওরে বাবারে।
তার পর আস্তে আস্তে, প্রায় নিজেরই অজান্তে, আগ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর ইতিহাস পড়তে শুরু করি। পেতে থাকি অনেক নতুন তথ্য। আবার কিছু স্কুলে পড়া ইতিহাস মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় সিন্ধু সভ্যতার কথা - মনে পড়ে যায় আর্যদের ভারতে আগমনের কথা।

কিন্তু তার পরেই লাগে খটকা।

আচ্ছা, আর্যরা তো মধ্য এশিয়া বা পূর্ব-ইউরোপ থেকে ঘোড়ায় চড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত বিশ্বে। তাদের ভাষাই তো হল সব ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উৎস। তাহলে শুধুমাত্র ভারতের ইতিহাসে ওদের কথা পাওয়া যায় কেন? আমি অনেক বিশ্ব-ইতিহাস এর বই তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ছাড়া তাদের উল্লেখ আর কোথাওই পাইনি।

এতে আমার কৌতূহল আর বেড়ে যায়। পড়তে শুরু করি সিন্ধু সভ্যতার কথা। জানতে চেষ্টা করি আর্যদের ভারতে আসার মতবাদ কোথা থেকে এল। খুঁজতে থাকলাম প্রত্নতত্ত্ব থেকে আমরা কি জানতে পেরেছি গত পঞ্চাশ বছরে। বোঝার চেষ্টা করলাম “আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরির” ভাষাতত্ত্বের ভিত্তি কি। পড়লাম জেনেটিক গবেষণা থেকে আমরা কি জানতে পেরেছি।

যত পড়লাম, খটকা কিন্তু ততই বেড়ে গেল। সব কিছু ঠিক যেন মিলছে না। মনে অনেক প্রশ্ন এল।

সেই প্রশ্নগুলোই আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। কিন্তু তার আগে “আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরি” একটু ঝালিয়ে নিলে বোধয় ভাল হয়।

আর্যদের ইতিহাস

১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম জোন্স এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটি বক্তৃতাতে বলেন যে সংস্কৃত ভাষা গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার চেয়ে বেশি উন্নত এবং বিজ্ঞান সম্মত। তিনি আরো বলেন যে এই তিনটি ভাষার মধ্যে এমন কিছু মিল আছে যা একমাত্র সম্ভব যদি এদের উৎপত্তি একই আদি ভাষা থেকে হয়ে থাকে।

এই হল “আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরির” উৎস। এর পর দেড়শ বছর ধরে ভাষাতাত্ত্বিকরা এই নিয়ে অনেক গবেষণা করে যে থিয়োরিটা দাঁড় করান তার চারটি মূল বক্তব্য আছে;-

১) এই থিয়োরিতে একটি এমন আদি ভাষার কথা ভাবা হয়েছে যার থেকে সমস্ত ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। ভাষাতাত্ত্বিক রা এই ভাষাটিকে বলেন – ‘আদি-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা’।

২) এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষজন দের বসবাস ছিল মধ্য এশিয়ায় অথবা পূর্ব-ইউরোপে।

৩) এই তত্ত্ব অনুযায়ী, খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০০ সালে এই ভাষার জন্ম আর খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালের আগে আর্যদের ভারতভূমিতে পদার্পণ ঘটেনি।

৪) আর্যরা তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল ঘোড়া, নিয়ে এসেছিল সংস্কৃতি। আর এনেছিল  সংস্কৃত ভাষা, যে ভাষাতে লেখা হয়েছিল ঋক্‌বেদ। দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা গুলি ছাড়া অন্য সবগুলি  ভারতীয় ভাষারই উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে।

আর্যদের আদি বাসভূমির সন্ধান সম্পর্কে এখনো অবধি সংশয় কাটেনি। কিছুকালের জন্য ভাষাবিদরা ভাবতে শুরু করেছিলেন যে ভারতই সেই বাসভূমি, কিন্তু তা পরে ভাবনা চিন্তা করে খারিজ করে দেওয়া হয়।
তার পর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে হল হরপ্পা এবং মহেঞ্জদারোর আবিষ্কার।

সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার

জানা গেল যে এই সভ্যতা মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার সমসাময়িক – অর্থাৎ আর্যদের ভারতে আসার অনেক আগে। এও জানা গেল যে এই সভ্যতা ছিল খুবই উন্নত। এদের ভাষা কি ছিল তা এখনও বোঝা যায়নি।

কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগল যে সে ভাষার হল কি? এদের ভাষা কি বিলুপ্ত হয়ে গেল?

ভাষাতাত্ত্বিকেরা বলেন – হ্যাঁ তাই।  সংস্কৃত ভাষা ভারতে আসে আর্যদের সঙ্গে। তাতে ভারতের কোন ভাষার প্রভাব একদমই নেই। সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয় আর্যদের আসার সময় বা তার আগে।

যখন স্কুলে পড়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল যে হতেই পারে। দুটি তো মাত্র শহর - হরপ্পা আর মহেঞ্জোদারো। এত বড় দেশে কতটুকুই বা প্রভাব ফেলবে দুটি শহর?
তাও প্রশ্নটা ঠিক মন থেকে গেল না।
তার পর যখন প্রত্নতত্ত্ব নিয়া নাড়াচাড়া করতে লাগলাম তখন দেখলাম যে আমরা শুধু দুটি শহরের কথা বলছি না !

গত পঞ্চাশ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

মেহরগড়, লোথাল, কালিবাঙ্গান, ধোলাভিরা, রাখিগরি, গানেরিওয়ালা, বনয়ারি, চানহুদারো ... আর কত নাম করব? কয়েক হাজার বড় ছোট বসতি পাওয়া গেছে। ভারতের গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ... পাকিস্তানের সিন্ধ, পাঞ্জাব, বালুচিস্তান ... এমনকি সুদূর আফগানিস্তানেও। বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছিল এই সভ্যতা !
এত বড়, এত বর্ধিষ্ণু সভ্যতার ভাষা তো একটা ছিল নিশ্চয়! সেটা যে কি ভাষা তা আমরা জানি বা না জানি ... ভাষা যে ছিল সে বিষয় কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

তার ফলে সেই প্রশ্ন আবার এল - সে ভাষার তবে হল কি?

বিগত ৩০০০ বছর ধরে অভিযান, আক্রমণ তো ভারতে কম হয়নি – “শক, হূণ, দল, মোগল, পাঠান, ” ছাড়াও গ্রীক, ইংরেজ, তুর্কী, ফরাসী, পর্তুগীজ – কেউই প্রায় বাদ ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের ভাষার অস্তিত্ব তো বিলোপ হয়নি। নিঃসন্দেহে আমরা অন্যান্য ভাষা থেকে অনেক শব্দ নিয়েছি, কিন্তু কোন ভাষাই সেভাবে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি।

ভাষাতাত্ত্বিকরা বলেন – আসলে আর্যরা সিন্ধু সভ্যতার বাসিন্দাদের ঠেলে দক্ষিণ ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
একটু ভেবে দেখুন – এত লোককে ঠেলে দক্ষিণ ভারতে পাঠিয়ে দিতে হলে কত বড় বিধ্বংসী যুদ্ধ হতে হবে? সেরকম তো কোন চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না ! আমরা বরং দেখতে পাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

সিন্ধু সভ্যতার ক্ষয়

সিন্ধু সভ্যতার স্বর্ণ যুগ ছিল খ্রীষ্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ১৯০০ সালে পর্যন্ত। স্বর্ণ যুগের পরেই কিন্তু এই সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, অন্তত ৬০০ বছর ধরে আস্তে আস্তে আস্ত গিয়েছিল। এই মানুষদের উত্তর ভারত থেকে ঠেলে দক্ষিণ ভারতে পাঠানোর কোন চিহ্ন মাত্র নেই।

তারপরে দেখুন ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে আর্যদের ভারত আগমন হয় খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০  সালের মধ্যে। তারা আসে হিন্দুকুশ পর্বত শ্রেণী পেরিয়ে, সিন্ধু নদী পেরিয়া গঙ্গার তীরে – অর্থাৎ সিন্ধু সভ্যতার বিস্তীর্ণ এলাকা পেরিয়ে। যেহেতু আমরা যুদ্ধর কোন চিহ্ন দেখতে পাই না, সেহেতু আমাদের মেনে নিতে হবে যে আর্যরা স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে ছিল।

এটা তাহলে আমরা কি করে মেনে নিই যে স্থানীয় লোকেরা হঠাৎ একদিন নিজেদের ভাষা ভুলে গিয়ে সংস্কৃত বলতে শুরু করে দিল !

এটা একমাত্র সম্ভব যদি আর্যরা স্থানীয় লোকেরা চেয়ে অনেক বেশী হত। সম্প্রতি কালের জেনেটিক গবেষণা কিন্তু তা বলে না !

জেনেটিক গবেষণা

ভারতের বিপুল জনসংখ্যার উৎস নিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে অনেক জেনেটিক গবেষণা হয়েছে এবং আরও গবেষণা চলছে। বলই বাহুল্য যে বিশেষজ্ঞরা সব বিষয়ে এখনও এক মত হননি। কিন্তু একটা তথ্য সব গবেষণা থেকেই পাওয়া গেছে – যদি আর্যরা এসেও থাকে তাহলে তাদের সংখ্যা খুব বেশী নয় এবং সংশয়াতীত ভাবে একথা বলা যেতে পারে যে খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালের পরে সেই রকম কোন বড় মাপের জিনগত পরিবর্তন হয়নি জাতে  স্থানীয় লোকেরা একেবারে সংখ্যালঘু হয়ে যেতে পারে।

যদি আর্যরা বিপুল সংখ্যায়>না এসে থাকেন হবে তবে স্থানীয় লোকেদের ভাষাটা গেল কোথায়?

এই প্রশ্নের উত্তর ভাষাতাত্ত্বিকরা দিতে পারেন না। শুধু তাই নয়, এও প্রায় নিশ্চিত ভাবে জানা গেছে যে আর্যরা ভারতে যারা এসেছিল তারা প্রায় সবাই পুরুষ। মহিলাদের সংখ্যা একদমই নগণ্য।

তাহলে স্থানীয় ভাষাটাইমাতৃভাষা হিসাবে থেকে যাওয়ার কথা নয় কি?

এর উত্তরে ভাষাতাত্ত্বিকরা কিঞ্চিৎ রুষ্ট হয়ে বলেন যে - ‘এরা (স্বদেশী-মনোভাবাপন্নরা) কি আর মানতে পারবে, যে তাদের গর্বের ভারতীয় সংস্কৃতি বস্তুটি আসলে বিদেশ থেকে আমদানি? তাই উল্টোপাল্টা যুক্তি খাড়া করছে।’

আচ্ছা, , আপনাদের মনে কি প্রশ্ন জাগছে যে খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালের কি এতখানি গুরুত্ব? আমাদের তো শুধু ভাষার মিল কোথা থেকে এল তাই প্রমাণ করতে হবে। আর্যরা এর চাইতে অনেক আগে এসেছে এই কথাটা ধরে নিতে বাধা কি?

এইখানেই হল “আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরির” মুল সমস্যা।

১৫০ বছরের গবেষণা

আসল সমস্যাটা হল যে ১৫০ বছরের গবেষণায় এই থিয়োরির যুক্তিগুলো এমন ভাবে খাড়া করা হয়েছে যে খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০০ সালের আগে ‘আদি-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার’ জন্ম মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তার ফলে এও মেনে নেওয়া সম্ভব নয় যে আর্যদের ভারত আগমন হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালের আগে।

মেনে নিতে গেলেই পুরো থিয়োরিটা যুক্তিসমেত হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে তাসের বাড়ির মত। ১৫০ বছরের গবেষণা কি এক কথায়  রাস্তায় ফেলে দেওয়া যায়? কত বিশেষজ্ঞর কত পরিশ্রম রয়েছে এই গবেষণা পেছনে। এ কি এক কথায় বাতিল করে দেওয়া যায়?

তাই জন্যে ভাষাতাত্ত্বিকরা একটু বেশিই রুষ্ট হয়ে বলেন প্রত্নতাত্ত্বিকদের -  ‘আপনারা তো ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষ অবহিত নন, কাজেই এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য করাটা সমীচীন হবে না’।

হ্যাঁ – এই কথাই শুনতে হয়েছিল “ম্যাকডোনাল্ড ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজিক্যাল রিসার্চ” এর এক সিনিয়র ফেলো এবং খ্যাতিমান প্রত্নতাত্ত্বিক কলিন রেনফ্রাঊকে।

আনাতোলিয়ান উপপত্তি (Anatolian Hypothesis)

উনি খুব সাহস করে একবার ঘোষণা করেই ফেলেন যে আসলে  আদি-ইন্দো-ইউরোপীয়, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা সমূহের জন্মদাতা, তার উৎপত্তি হয়েছিল সম্ভাব্য ৯০০০ বছর আগে, আনাতোলিয়াতে এবং কৃষির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা এগিয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কিরকম সমালোচনা হয়েছিল, তার একটি নমুনা নীচের অনুচ্ছেদটি -

‘... প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণগুলি খুবই কৌতূহলোদ্দীপক! কিন্তু রেনফ্রাউ এর তো তুলনামূলক এবং ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বের কোন ধারণাই নেই ... উনি চাইছেন একটি প্রতিষ্ঠিত মত যেটা ওনার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, সেটিকে উল্টিয়ে দিতে, তাও বিদগ্ধ, পাণ্ডিত্যপূর্ণ চিন্তার মাধ্যমে নয়, একেবারেই ওনার নিজস্ব আদর্শগত কারণে ...’

তার ফলে অনেক বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে মুখ খোলেন না, কারণ তাঁদের একটি ভীতি আছে যে মুখ খুললেই ‘গোঁড়া স্বদেশী’ আখ্যা পেতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা যাই বলুন বা ভাবুন আমরা কিন্তু দেখতে পাচ্ছি যে আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরি একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে।

আর্যদের ভারত আগমন খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালের পূর্বে হওয়ার সম্ভাবনা কে সমর্থন করে আরও একটি তথ্য। তা হল সরস্বতী নদী।

সরস্বতী নদী

এবার আমরা সরস্বতী নদীতে একটু ঝাঁপ দিই !

যদিও ঋক্‌বেদ সরস্বতী নদীর বিশেষ উল্লেখ আছে, আজ ভারতে সরস্বতী নদীর কোন অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের গবেষণার ফলে একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে এখনকার ঘাঘর-হরকা নদীটিই ছিল ঋক্‌বেদ বর্ণিত সরস্বতী। ঘাঘর-হরকা এখন একটি খুব ক্ষীণ নদী – কিন্তু এই নদীই যে এক সময় ‘আপনবেগে পাগলপারা’ ছিল তার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তিনটি তথ্য থেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে ...

  • যে জায়গাগুলি জুড়ে সিন্ধুসভ্যতার খোঁজ পাওয়া গেছে, সম্ভবতঃ এই নদী সেখান দিয়েই বইত
  • যমুনা ও শতদ্রু নদী এই নদীতে এসে মিলিত হওয়ার যে চিহ্ন পাওয়া গেছে
  • যে পথ দিয়ে নদীটি বইত তার নীচের জলস্তরের অগভীরতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে নদীটি আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ সালের পূর্বেই শুকিয়ে যায়।
ঋক্‌বেদের এ যে সরস্বতীর কথা পাওয়া যায় সে নদীটি প্রবলবেগে সমুদ্রে প্রবহমান কিন্তু মহাভারতে দেখা যায় এই নদীটি মাটির ভিতরে ঢুকে গেছে। অর্থাৎ যদি সরস্বতী নদীর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ঋক্‌বেদ এর রচনাকাল কে ২০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দর আগে ধরতে হবে।

যেহেতু ঋক্‌বেদে কোন বিদেশী বাসভূমির উল্লেখ নেই, তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ঋক্‌বেদ রচনা হয়ে ছিল অন্তত আর্যদের আগমনের ২০০ বছর পরে। এই ২০০ বছর তাদের বিদেশি বাসভূমির কথা ভুলতে লেগেছিল। তার ফলে আর্যদের আগমনের তারিখ  পিছিয়ে যাই অন্ততপক্ষে খ্রীষ্টপূর্ব ২২০০ সালের আগে।

“তাতে আর্যদের ভারত আগমনের থিয়োরি” আরও একটু বেশী নড়বড়ে হয়ে যায় না কি !

পরিশেষে

প্রিয় পাঠকবন্ধুরা, আমি পেশাদারি ইতিহাস-রচয়িতা নই ... প্রত্নতাত্ত্বিক নই ... ভাষাবিদ নই ... আবার জেনেটিক বৈজ্ঞানিকও নই। যা পড়েছি, যা বুঝেছি ... তাই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
তিনটে প্রশ্ন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ...

  • আমি কি কোন তথ্য ভুল ভাবে পেশ করেছি?
  • আমি কি কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিয়েছি?
  • আমার যুক্তির পরম্পরার মধ্যে কি কোন রকম অসংলগ্নতা আছে?

আপনারা যদি মনে করেন যে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তরই ‘না’, তাহলে কিন্তু মেনে নিতে হবে যে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস একটু নতুন ভাবে চিন্তা ভাবনা করার সময় এসেছে !

কলিন রেনফ্রাউ এর এনাতোলিয়ান উপপত্তি দিয়েই একটি খুব চমৎকার সূচনা হতে পারে। যদি সত্যিই প্রমাণ করা যায় যে কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাও প্রসারিত হতে শুরু করেছিল, তাহলে তার মানে দাঁড়াবে যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরাও সংস্কৃতর মতই বা কাছাকাছি কোন একটা  ভাষাতে কথা বলত।

অথবা মারিও আলিনেই এর প্রস্তাবিত প্যালিওলিথিক ধারাবাহিকতা তত্ত্ব (বা প্রচলিত মত) দিয়েও শুরু করা যেতে পারে। এই মত অনুযায়ী, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা কৃষিকাজের চেয়ে প্রাচীন।


উৎস -

Kivisild TBamshad MJ, et al,  Deep common ancestry of Indian and western-Eurasian mitochondrial DNA lineages, Current Biology, 1999
T. KivisildS. Rootsi, et al,  The Genetic Heritage of the Earliest Settlers Persists Both in Indian Tribal and Caste Populations, The American Journal of Human Genetics, 2003
Sanghamitra SenguptaLev A. Zhivotovsky, et al, Polarity and Temporality of High-Resolution Y-Chromosome Distributions in India Identify Both Indigenous and Exogenous Expansions and Reveal Minor Genetic Influence of Central Asian Pastoralist, The American Journal of Human Genetics, 2006
Mait Metspalu , Irene Gallego Romero, et al, Shared and Unique Components of Human Population Structure and Genome-Wide Signals of Positive Selection in South Asia, The American Journal of Human Genetics, 2011
David ReichKumarasamy Thangaraj, et al, Reconstructing Indian population history,  Nature, 2009
Title: Genetic Evidence for Recent Population Mixture in India
Authors: Priya Moorjani , Kumarasamy Thangaraj, et. al, Genetic Evidence for Recent Population Mixture in India, The American Journal of Human Genetics, 2013



লেখক পরিচিতি - লেখক কানপুর আই আই টি-র প্রাক্তন ছাত্র ও তথ্যপ্রযুক্তির আদিকাল থেকেই তার সাথে যুক্ত। বর্তমানে ব্যাঙ্গালোর নিবাসী। সংগীতপ্রেমী। সময় পেলেই প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন ও নিজের ব্লগে ইতিহাস, তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করতে ভালোবাসেন।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।