প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

নভেম্বর ১৫, ২০১৬

 

শচীনকত্তার সুরের ভুবন এবং কুমিল্লার নদী, মাটি, মানুষ

সোমেন দে


শচীন দেব বর্মণ

কুমিল্লার ষাট বিঘা জমির উপর তৈরি বিরাট রাজপ্রাসাদের বসবাসকারী যুবরাজের সাধারণ লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করাটা রাজ পরিবারের রীতি বিরুদ্ধ ছিল। প্রাসাদে অনেক পরিচারক পরিচারিকা। কিন্তু তাদের সঙ্গে কুমার শচীনের হুকুম দেওয়ার সম্পর্ক। বাবার কাছে নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মণ অবশ্য সঙ্গীত রসিক ছিলেন, সেতার বাজাতেন নিজে। তাই সঙ্গীতের প্রথম তালিম বাবার কাছেই পাওয়া। বাড়ির ছোট বলে ছেলে বাবার একটু বেশিই আদর দিতেন। তবু বালক শচীন্দ্র কি জানি কেন একটা টান অনুভব করত মাটির কাছাকাছি জগতটার জন্যে। তাঁর নিজের কথায় –

‘ ত্রিপুরার ধানের খেতে চাষি গান গাইতে গাইতে ধান চাষ করে, মাঝিরা গানের টান না দিয়ে নৌকা চালাতে জানেনা, জেলেরা গান গেয়ে মাছ ধরে, সেখানের লোকেদের গানের গলা ভগবান প্রদত্ত ’।

কিন্তু সেই জগতে তার অবাধ বিচরণ করার অনুমতি ছিল না। তবে বাবার নির্দেশে সন্ধ্যাবেলায় ভাই বোনেরা মিলে যে উপাসনার আসর বসত, সেখানে উপাসনা ছাড়া মার্গ সঙ্গীত আধারিত গান বাজনার আসরও হত। তাঁর এক দাদা কিরণ কুমার দেববর্মণ আর এক দিদি তিলোত্তমা দেবীও ভাল গাইতেন। এ ছাড়া দোল উৎসবে বিখ্যাত গায়ক গায়িকারা আমন্ত্রিত হয়ে আসতেন তাদের বাড়িতে গান শোনাতে। এ ভাবে বালক শচীন্দ্রের গান বাজনা শিক্ষা চলতে লাগল। ক্লাস ফাইভে উঠে স্কুলে সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে গায়ক শচীন্দ্রের প্রথম পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স। সে গান সবার ভালো লেগেছিল। স্কুলের হেডমাস্টার মশাই তার সুখ্যাতি করে শচীন্দ্রের বাবাকে একটা চিঠি দিয়েই বসলেন। এর পর তার বাবা তাকে প্রথাগত ভাবে গান শেখাতেও আরম্ভ করলেন।

কিন্তু এই শিক্ষায় কোথাও একটা খুঁতখুঁতানি রয়ে যেত কুমার শচীন্দ্রের মনে। কোথাও একটা সেই মাঠে ঘাটে শোনা গান সম্বন্ধে জানার আকুতি তাকে অস্থির করতো। কিন্তু রাজবাড়ির আভিজাত্যের বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠছিল না। কিন্তু একটা উপায় বোধহয় ঈশ্বরই করে দিলেন।

জীবনের উপান্তে এসে,তাঁর স্মৃতি কথায় তাতে তিনি যে দুজন সঙ্গীত গুরুর নাম করেছিলেন, তাঁরা কেও কোনও উস্তাদ সঙ্গীতজ্ঞ নন। তাদের একজনের নাম মাধব আর আর একজনের নাম আনোয়ার। তারা আসলে ছিল রাজবাড়ির দুই পরিচারক।

মাধবের কাজ ছিল ছুটির দিনে দুপুর বেলা বাড়ির সবাইকে রামায়ণ পাঠ করে শোনানো। তার সম্বন্ধে তিনি নিজেই লিখেছিলেন –

‘... সে যখন রামায়ণ পড়ত তখন তান-খটকি ছাড়া সরল-সোজা গানের ধরণ গানের ধরণ আমাকে পাগল করে দিত। ’

আর আনোয়ার সম্বন্ধে -

‘ ... আনোয়ার রাত্রে তার দোতারা বাজিয়ে যখন ভাটিয়ালি গান করত, তখন আমার ব্যাকরণ মুখস্থ করারা দফারফা হয়ে যেত আর পরের দিন স্কুলে মাস্টারমশাই এর কাছে বকুনিও খেতাম। কিন্তু রাত্রে আবার ব্যাকরণ মুখস্থ ও অঙ্ক কষা ছেড়ে আনোয়ারের কোল ঘেঁষে বসে তার ভাটিয়ালি সুরে ও কথায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম। ’

বহু বছর পরে যখন যখন শচীন কত্তা তাঁর বোম্বাইয়ের বাড়িতে বসে বিমল রায়ের ছবির জন্যে সুর করছিলেন –

‘ আজ সজন মোরে অঙ্গ লগালো জনম সফল হো যায়ে
হৃদয় কী পীড়া, দেহ কি অগ্নি সব শীতল হো যায় ...’

তখন হয়ত অলখ থেকে কোথাও হয়ত সেই রামায়ণ পড়া মাধব তাঁকে জুগিয়ে দিচ্ছিলেন সুর।

আবার যখন সুর করছিলেন ‘শুন মেরে বন্ধু রে ’, বিমল রায়ের জন্যে, তখন হয়ত চুপি চুপি তাঁর পাশে এসে বসেছিলেন সেই অঙ্ক ভুল করিয়ে দেওয়া, ভাটিয়ালি গাওয়া সেই ছোটো বেলার আনোয়ার।

কুমিল্লার যুবরাজ কুমার শচীন্দ্রের সঙ্গীত জগতের মুকুটহীন বাদশা হয়ে ওঠার প্রস্তুতি পর্বটা ভালো করে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে একটু বুঝে নিতে হবে সেই সময়টাকে আর সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলার একটা ছোট্টো মফস্বল শহরকে।

বিশের দশকের শেষ আর তিরিশের দশক শুরু এ রকম একটা সময়। পরাধীন দেশ। স্বদেশ চেতনা বাঙ্গালির মর্মে মর্মে প্রবেশ করছে একটু করে। বেশির ভাগ উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা বন্দেমাতরম মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছে। পাড়ায় পাড়ায় ব্যায়াম সমিতি, লাঠি খেলা চর্চা কেন্দ্র গড়ে উঠছে। লুকিয়ে বোমা বাঁধাও শেখা হচ্ছে কোথাও কোথাও। তবু কিছু ছেলে মেয়ে স্বদেশী নেশার থেকে একটু দূরে থেকে লিখছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস। কিছু মেতেছে সঙ্গীত নিয়ে। শুধু কলকাতা নয়, ছোটো ছোটো শহর গুলিতেও গড়ে উঠছে নাটকের দল, সাহিত্য সভা, গানের দল। চলছে একে অপরের হাত ধরে। কুমিল্লাকে ঠিক পুরোপুরি শহর বলা যায় না। দু পা ছাড়া এক একটা পুকুর, প্রচুর গাছপালা, সরু সরু রাস্তাঘাট নিয়ে এ শহরের মধ্যে যেন গা ঢাকা দিয়ে থাকে একটা গ্রাম। তবু একটা কারণে এ শহর বাঙ্গালিদের গায়ে লাগা একটা বদনামের তকমা দূর করেছিল। সে হল এ শহরের বাঙ্গালিদের ব্যাঙ্ক আর ইনস্যুরেন্স কোম্পানি খোলার উদ্যোগ। সে সব কোম্পানি বেশি দিন চলেনি সে অন্য গল্প। তবু উদ্যোগ টা মিথ্যে নয়। কিন্তু আমাদের গল্প-সন্ধান তো অন্য জায়গায়। সেটা এ শহরের সাংস্কৃতিক উন্মাদনার জায়গা। শুধু শচীন দেব বর্মণ নয় এ শহরে সেই সময়টায় ছিল, ‘ডাঁই করা প্রতিভা’। সে সময়ের এক টা চায়ের দোকানের কথা আমরা সোজাসুজি জেনে নিই শ্রী অশোক মিত্র মহাশয়ের কাছে -

‘সেই চায়ের দোকানের আড্ডায় কাকে পাবেন না আপনি, অনুশীলন সমিতির অতীন রায়, ভিক্টোরিয়া কলেজে সদ্য অধ্যাপনায় ব্রতী অজয় ভট্টাচার্য তাঁর অনুজ সঞ্জয় ভট্টাচার্য, তাদের প্রিয় সখা কাজপাগল সত্য প্রসন্ন দত্ত, যিনি ইতিমধ্যেই ‘পূর্বাশা’ পত্রিকার একটি দুটি কপি ছাপাবার সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু সেই ভিড়ে তো পাবেন একগাদা আরও অনেককে, কেউ কেউ কবি কেউ কেউ গায়ক, কেউ কেউ তখনও জানেননা কি হবেন শেষ পর্যন্ত। সুবোধ পুরকায়স্থ, রাগ সঙ্গীত ভক্ত মণিলাল শর্মা, সাহিত্যে একটু আধটু হাত পাকানো নারায়ণ চৌধুরী, ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে দেখা দেওয়া আঁকিয়ে অনিল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ( আলফা-বিটা), শিল্পোদ্যোগী নরেন্দ্র নাথ মশাইয়ের পুত্র বটু দত্ত, একটু একটু বাঁশি বা এস্রাজ বাজানোয় রপ্ত আরেক বটু দত্ত,তাঁর অনুজ কী হবে বা করবেন জানেন না কিন্তু গানের নেশায় মশগুল, হিমাংশু দত্ত। এই ভিড়ে ক্কচিৎ কখনো রাজবাড়ি থেকে দখিনা হাওয়ার মতো শচীন কর্তা, যাঁর খেলা ধুলায়, সেই সঙ্গে সঙ্গীত চর্চায়ও প্রবল উৎসাহ, এসে যোগ দিলে উৎসাহ উথলে উঠতো। শচীন কর্তা প্রায়ই চায়ের দোকানের দায় দরাজ হাতে মেটাতেন। ’

শচীন কর্তার মত না হলেও, কুমিল্লার চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া মানুষগুলি পরে কলকাতায় এসে সাংস্কৃতিক জগতে এক এক জন দিকপাল হয়ে উঠেছিলেন। কেউ সুরকার কেউ গীতিকার, কেউ চলচ্চিত্রকার, কেউ কবি, কেউ সাহিত্যিক। অনেকে পরবর্তীকালে শচীন দেবের সঙ্গে কাজও করেছেন। আরেকটা কথা বোধহয় বলে নেওয়া দরকার, কুমিল্লার গা ঘেঁষা আরেক শহরের ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেটা ছিল উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর জন্ম ভিটে। এ সব দেখে সন্দেহ হতে পারে ঐ অঞ্চলের জলবায়ু তে বিশেষ কিছু একটা দ্রব্যগুণ ছিল। যার প্রভাবে এত গুণী মানুষ ওখান থেকে উঠে এসেছেন।

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি এ পাশ করে ১৯২৪ এ শচীনদেব এলেন কলকাতায়। আরম্ভ হল বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে ত্রিপুরা ভবনে নূতন জীবন। শহর কলকাতা তাকে খুব একটা উৎসাহিত করেন নি। মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখতেন তিনি আবার সেই কুমিল্লার দিঘীর ধারে ঘুরে ঘুরে টিপরাই বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছেন। গাছ পালা ক্ষেত খামার আর খোলা আকাশের নীচে গান বাজনার আনন্দটাকে চিরকাল তিনি মিস করেছেন। এমন কি বোম্বেতে গিয়েও। সেই জন্যেই তাঁর নিজের রচিত সুর দিয়ে সেই ফাঁকটাকে বুজিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন সারা জীবন ধরে। সে কথায় পরে আসবো।

কলকাতায় তিনি এলেন বটে পড়তে। কিন্তু তাঁর আসল উৎসাহ তো অন্য জায়গায়। মাছধরা, খেলাধুলা আর গান বাজনা। গান শেখার জন্যে ভর্তি হলেন স্বয়ং কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে। টেনিস খেলার জন্যে ভর্তি হলেন চৌরঙ্গী ওয়াই এম সি এ তে। মাছধরা ক্কচিৎ কখনো চলত বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে। পড়া শোনায় মন দিতে পারছিলেন না। এক বছর পরে এম এ পড়া ছেড়েই দিলেন। ও দিকে টেনিস খেলার নেশায় অনেকটা সময় চলে যেত এবং তাঁর শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র আবিষ্কার করলেন অতিরিক্ত টেনিস খেলার পরিশ্রমে তাঁর গলা কর্কশ হয়ে যাচ্ছে। অতএব গানের গুরুর নির্দেশে বন্ধ হল টেনিস খেলা। একমনে রেওয়াজ করতে লাগলেন গানের। কিন্তু এম এ পড়া ছেড়ে দিয়েছেন শুনে বাবা খুব অসন্তুষ্ট হলেন। গান বাজনা রাজা রাজড়াদের সখের ব্যাপার। কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া তো দরকার। তিনি একদিন ত্রিপুরা থেকে কলকাতায় এসে শচীন কে ভর্তি করে দিলেন ল কলেজে। তাঁর স্বপ্ন শচীন কে পাঠাবেন বিদেশে। সেখান থেকে ফিরে এসে বড় সড় একটা সরকারি চাকরী করবেন।
কিন্তু গানের টান বড় আজব টান। সেটান অন্তরে লাগলে অন্য সব টান কে তুচ্ছ করে দেয়। কিছুদিন যেতেই বাবাকে প্রচুর দুঃখ দিয়ে ল পড়াও ছেড়ে দিলেন। তিনি কেষ্ট বাবুর সঙ্গে সঙ্গে জলসায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমন কি কখনো কখনো তাঁর সঙ্গে চলে যাচ্ছেন বাইজী বাড়িতে গান শুনতে। কেষ্ট বাবুর অনুমতি নিয়ে গান শিখতে গেলেন সে কালের প্রবীণ ওস্তাদ বাদল খাঁর কাছে। যাঁর কাছে গান শিখেছেন কেষ্টবাবু নিজেও।
তবে কৃষ্ণচন্দ্র দে, যে দৃষ্টিহীন মানুষটির কাছে বাংলা এবং ভারতের সঙ্গীত নানা কারণে চিরকাল ঋণী থাকবেন, সেই সব কারণের মধ্যে একটি অবশ্যই থাকবে তরুণ শচীনদেব কে সঙ্গীতের সঠিক রাস্তাটিকে চিনিয়ে দেবার জন্যে।

তখনকার বিখ্যাত বেনারসি ঘরানার ঠুংরি গায়ক এবং হারমোনিয়াম বাদক শ্যমালাল ক্ষেত্রীর কাছেও গেলেন গান শিখতে। পাগলের মত গান শুনে বেড়াতেন নানা আসরে। এই সব আসরে গিয়ে আলাপ হয়েছিল বিশাল সব সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এবং সঙ্গীত রসিকদের সঙ্গে। ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গিরিজা শঙ্কর চক্রবর্তী, সুধীরেন্দ্র নাথ সান্যাল,হেমেন্দ্র কুমার রায়ের মতন মানুষ দের সান্নিধ্যে শচীন দেবের সাংগীতিক জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হতে লাগল। এর মধ্যে ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ভারতীয় সঙ্গীতের এক জন মহাজ্ঞানী, যাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত নিয়ে পত্র বিতর্ক যে কোনও সঙ্গীত শিক্ষার্থীর মূল্যবান দলিল, তিনি বিশেষ ভাবে গায়ক শচীনদেবের গানের গুণগ্রাহী ছিলেন। নানা ভাবে তাঁকে উৎসাহ দিতেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন –

For temperament ‘mejaj’ or ‘tabiyat’ as it called, kumar sachindra Dev Burman is incomparable among the artist I have heard .

কলকাতায় শচীনদেবের যা কিছু তালিম নেওয়া, যে সব মানুষ দের সান্নিধ্য পাওয়া, তাঁরা সবাই কট্টর ভাবে ধ্রুপদ সঙ্গীত জগতের। তাই শচীনদেবের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল একজন ধ্রুপদ, খেয়াল বা ঠুংরি গায়ক। অথবা তাঁর গানের জগৎ হওয়ার কথা মূলত রাগ প্রধান সঙ্গীত। তিনি হতে পারতেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়,জ্ঞান গোঁসাই, তারাপদ চক্রবর্তী দের পদাঙ্ক অনুসরণকারী আর এক জন রাগপ্রধান বাংলা গানের শিল্পী। কিন্তু তা না হয়ে তিনি চলে গেলেন বোম্বাইয়ের ফিলমি দুনিয়ায়। তার কারণ তাঁর ভিতরকার এক ছটফটে সংগীতস্রষ্টা। তবে তার আগে এই কলকাতাই তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল সৃষ্টিলোকের চাবিকাঠি।

কলকাতায় All India Radio হবার আগে তার নাম ছিল Indian State Broadcasting Co। এই কোম্পানির কর্তাব্যক্তি ছিলেন রাই চাঁদ বড়াল, নৃপেন মজুমদার। ওঁরা তরুণ শচীনদেবকে সুযোগ দিলেন তাঁর নিজের সুরে দু খানি গান রেডিওতে গাইবার। বিনিময়ে দশ টাকা পারিশ্রমিক। সুরকার শচীনদেব বর্মণের যাত্রা এখানেই শুরু হল।

এখন শুনলে খুব আশ্চর্য লাগে এইচ এম ভি কোম্পানি এক সময় তাঁর গান রেকর্ড করতে অস্বীকার করেন তাঁর অনুনাসিক কণ্ঠস্বরের জন্য। সে সময় চণ্ডীচরণ সাহা গড়ে তুলেছিলেন এক দেশীয় রেকর্ড কোম্পানি। সে কোম্পানীর অফিস ছিল ৬/১ অক্রূর দত্ত লেন। কোম্পানীর ব্রান্ড নাম হিন্দুস্থান রেকর্ডস। ১৯৩২ সালে শচীনদেব বর্মণের প্রথম গানের রেকর্ড হয় এই হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি থেকে। গানের কথা ছিল শৈলেন রায় এবং হেমেন্দ্রকুমার রায়ের। সেই প্রথম রেকর্ডের একটি গান – ডাকলে কোকিল রোজ বিহানে (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন , থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

তাঁর এই লোক সঙ্গীতের ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বাউল, জারির সঙ্গে পশ্চিমি ফোক মিশিয়ে বাংলা গানের অন্য ভুবন নির্মাণ করলেন সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের একটি মন্তব্য এখানে প্রাসঙ্গিক হবে -

‘গলার গঠনের একটা বাস্তব ভিত্তি আছে। তা শ্রমপ্রক্রিয়াগত, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ জলমাটি হাওয়াজাত কতকটা জাতি বা গোষ্ঠীগত কতকটা শারীরিকগত কতকটা বাকভঙ্গিগত। গলা ভাঙা, গলার খোঁচ বা লৌকিক অলংকার কোনও শহুরে ওস্তাদ হাজার রেওয়াজ করেও আয়ত্তে আনতে পারেন না। শহুরে কণ্ঠ লোকসংগীতের মেলডিক স্ট্রাকচারটা ঠিকই আয়ত্ত করতে পারেন কিন্তু কণ্ঠ-ভঙ্গিটি আয়ত্ত করতে পারেন না। তাতে করে সেই গানে মাটির গন্ধটি পাওয়া যায় না, বড়ই আরবান মনে হয়। লোকসংগীত গুরুমুখী নয়, গণমুখী, ঘরানা নেই, আছে বাহিরানা। লোকসংগীতের ভাবানুষঙ্গটি সার্বজনীন, অনুভূতিও’

এর পর এই হিন্দুস্থান রেকর্ডস থেকে তিনি ১৩২ টি বাংলা গান রেকর্ড করেছিলেন। এই সব গানের গীতিকার ছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম, হেমেন্দ্র কুমার রায়, শৈলেন রায়, অজয় ভট্টাচার্য, জসিমুদ্দিন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, রবি গুহ মজুমদার, সুবোধ পুরকায়স্থ, মোহিনী চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং মীরা দেব বর্মণ।
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বাংলা বেসিক গানে তিনি এই সময়ে হয়ে উঠেছিলেন এক নম্বর শিল্পী। বেসিক গানের সুরকার হিসেবেও তিনি অসাধারণ কাজ করেন রাগ সঙ্গীতের সঙ্গে লোক গানের মিশ্রণ ঘটিয়ে। তা হলেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওস্তাদরা তাঁর গানে মুগ্ধ ছিলেন।

১৯৩৪ সালে অল ইন্ডিয়ান মিউজিক কনফারেন্সে তিনি গান গেয়ে ওস্তাদ করিম খাঁর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে ঠুমরি পেশ করে আফতাব এ মৌসকী ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁকে মুগ্ধ করেছিলেন।

অন্যদিকে শেখ ভানুর রচনা ‘নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে’ দেহ ও সাধনতত্ত্বের গানটিকে প্রেমের গানে রূপান্তর করলেন মরমী কবি জসীমউদ্দীনকে দিয়ে এবং রূপান্তরিত এই গানটি রেকর্ড করলেন ১৯৩৫ সালে। ২০১৬ সালে এ গান শুনলে এখনো আধুনিক লাগে। গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

লোক সঙ্গীতের সঙ্গে কাব্যসঙ্গীতের এই সমন্বয় এটা শুধুই গান বানানো নয়, এটি একটি অপূর্ব আইডিয়া। সেটিকে সারা জীবন আঁকড়ে থেকেছেন। এর মধ্যে তিনি ঢেলে দিয়েছেন তাঁর শিক্ষা, শ্রুতি, বৈদগ্ধ্য এবং সৃজনশীলতা।

এই সময়ে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রেও সুর দিতে আরম্ভ করেন। কিন্তু এই সময়ে চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, রাই চাঁদ বড়ালরা। শচীনদেব বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রের সুর দিয়েও ঠিক সুবিধে করতে পারলেন না। কেন পারলেন না সেটা বিধাতা পুরুষের কলকাঠি ছাড়া আর কিই বা বলা যেতে পারে। কাড়ন এই সময় বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি সুরকার হিসেবে সফল হলে হয়তো তাঁর আর বোম্বাই যাওয়া হয়ে উঠত না।

**********

দ্বিতীয় পর্ব

**********

বোম্বাই থেকে আগেও ডাক পেয়েছেন। কিন্তু তেমন আগ্রহ দেখাননি। এবার ডাক এলো ফিল্মিস্থানের মালিক শশধর মুখার্জীর কাছ থেকে। তাও দোনামনা করছিলেন। কিন্তু বন্ধু সুশীল মুখার্জীর জেদাজেদিতে হয়তো কিছুটা অভিমান বুকে নিয়েই ১৯৪৪ সালে তিনি পাড়ি দিলেন বোম্বাই।

কিন্তু প্রথমে বোম্বাই নগরীকে কত্তা বিশেষ পছন্দ করেন নি। তাঁর মনে হয়েছিল যে শহরে গঙ্গা নেই সে শহরে প্রাণের সাড়া নেই। আসলে সব বন্ধু বান্ধব সহ কোলকাতা শহরের জন্যে খুব মন কেমন করতো। আর তিনি এটা বুঝতে পারছিলেন বোম্বাই যাওয়া মানে তাঁর সঙ্গে তাঁর প্রাণের কুমিল্লার সম্পর্ক আরও ক্ষীণ হয়ে আসবে। তার উপরে বোম্বাইয়ের সিনেমার সঙ্গীতের জগৎ তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন – নৌশাদ, ফিরোজশাহ মিস্ত্রী, কেশব রাও ভোলে, ও পি নাইয়ার, নাদিম শেরওয়ানি মদন মোহন, অনিল বিশ্বাস। ওখানে কলকে পাওয়াই খুব কঠিন ব্যাপার।

প্রথম সুযোগ এল ফিল্মিস্থানের ছবি ‘শিকারি’ এ সুর করার। সেই সিনেমার একটি অশোক কুমার আর আমরি বাইয়ের গাওয়া একটি গান শুনে নেওয়া যাক। গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন , থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

এ ছবির গান প্রশংসা পেল। কিন্তু গুণীজনের প্রশংসার চেয়ে জনসাধারণের এ গান কেমন লেগেছে তা জানতে শচীন কত্তা খুব উৎসুক। তিনি তার গান কোনও সাধারণ লোককে গুনগুন করে গাইতে শুনতে পেলেন না বলে মন খুঁত খুঁত করতে থাকলো। এই খুঁতখুঁতানিটা তাঁকে সারা জীবন তাড়া করেছে। চিরকাল তিনি Public pulse কে খুব বেশি মূল্য দিতেন। সে কথায় পরে আসা যাবে। এই সময় আরও একটি ছবি করার ভার পেলেন। সে ছবির নাম ‘দো ভাই’। তাতে তিনি একটি দুঃখের গানের সুর বসিয়ে রিহার্সাল করছেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন পাশের ঘর থেকে রুম বয় গুণ গুণ করে সেই গান গাইছে।

এই ঘটনাটিকে তিনি স্মৃতি কথায় বলেছিলেন ‘চলচ্চিত্র জীবনের সব চেয়ে বড় অভিজ্ঞতার উন্মোচন হল’। কারণ তিনি সেইদিন বুঝলেন সিনেমায় ‘হিট’ গান কে হতে হবে সাধারণ মানুষের গাইবার যোগ্য। এ গান সত্যিই প্রচণ্ড হিট হয়ে গেল। তবে এই গানটি শুনতে শুনতে কিন্তু আমাদের আর একটি গানের আদল মনে পড়ে যেতে পারে। সেটি হল ‘রোদন ভরা এ বসন্ত’। বলা যেতে পারে হিন্দি ছবিতে শচীন কত্তার প্রথম সাফল্য এলো রবি ঠাকুরের হাত ধরে। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

Public pulse নিয়ে আর একটি অভিজ্ঞতার কথা তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। একদিন কারদার স্টুডিওতে গিয়ে বিকেলবেলায় তিনি তাঁর গাড়িতে নেমেছেন। গিয়ে দেখেন সেখানে অনেক লোক ভিড় করে আছে তখনকার দিনের ‘তারকা’দের দেখার জন্যে। তাঁর গাড়ি আসতেই তারা ভেবেছিল নিশ্চয় কোনও বড় তারকা এসেছে। একটি লোক কৌতূহল বসে তাঁর গাড়ির সামনে এসে তাঁকে দেখে যখন ফিরে যাচ্ছে তখন কিছু লোক তাকে জিজ্ঞাসা করে গাড়িতে কে এসেছে। লোকটি উত্তর দেয় ‘ আরে ইয়ার ওহ তো এক বান্ডল আদমি হ্যায় ‘। শুনে কদিন খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে ঘুরে ছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন পরে বান্দ্রা স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন মালাডের ট্রেন ধরবেন বলে। সেখানে তিনি দেখলেন কয়েকজন দিনমজুর একসঙ্গে বসে তাদের কোদাল বেলচায় সঙ্গত করতে করতে যে গানটি গাইছে সেটি তাঁর সুর করা ‘শবনম’ ছবির একটি গান। ব্যাস তাঁর সব মন খারাপ ধুয়ে মুছে গেল। কারণ তিনি তো আসলে এটাই চান,এই রকম সাধারণ মানুষের ভালো লাগা গান বানাতে।

এই সময় সন্ধে বেলায় একটা আড্ডা বসতো শচীন কত্তার বাড়িতে। সেখানে হাজির হতেন গুরু দত্ত, চেতন আনন্দ, বিজয় আনন্দ এবং দেব আনন্দর মত ব্যক্তিত্বরা। এঁরা প্রত্যেকেই, বিশেষ করে দেব আনন্দ এবং গুরু দত্ত শচীন কত্তার গানের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। আড্ডায় আলোচনা হত একটি সিনেমা প্রযোজনার কোম্পানি খোলার বিষয়ে। সে কোম্পানি সত্যি খোলা হল একদিন। নাম দেওয়া হল নবকেতন। প্রথম ছবি তৈরি হল ‘অফসর’। চেতন আনন্দ পরিচালক, দেব আনন্দ আর সুরাইয়া নায়ক নায়িকা। ছবি খুব একটা না চললেও একটি গান প্রচণ্ড জনপ্রিয় হল। সেটি ছিল সুরাইয়ার গলায়। সেটি হল, ‘মন মোর হুয়া মতয়ালা’ । (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন , থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

এ ছবিতে আর একটি গান ছিল সুরাইয়ার গলায়। সেটিও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এ গানের সুরে যে কোন গানের প্রভাব সেটা বোধহয় কোন বাঙালি শ্রোতাদের বলে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )।

শচীন দেব বর্মণ ও গীতা দত্ত

নবকেতনে কাজ করে শচীনদেবের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গেল। কারণ তিনি ঠিক যে রকম একটি মুক্ত আবহাওয়া চাইছিলেন কাজ করার জন্য, সেটা সেখানে পেয়ে গেলেন। এর পরে ছবি ‘বাজী’। পরিচালক গুরু দত্ত। গুরু দত্তের সঙ্গে কত্তার বড় মনের মিল। দু জনে মিলে এ ছবির গান নিয়ে নানা রকমের আলোচনা হতে থাকলো। কত্তা ঠিক যে ধরণের গান চাইছিলেন তার জন্যে গানের কথায় একটা বিশেষ ধরন আনতে চাইছিলেন। তার জন্যে এই ছবিতে এক নতুন গীতিকারকে নিয়ে আসা হল প্রধানত শচীনদেবেরই উৎসাহে। তাঁর নাম শাহির লুধায়ানভী। এর পরে এই দুজনের জুটি বহুদিন পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করেছেন। বাজীর প্রায় সব গানই হিট করে গেল। বিশেষ করে ‘তদবীর সে বিগড়ি হুই তগদির বনালে’ গানটি গেয়ে গীতা দত্ত যিনি এর আগে শুধু কোরাসে কণ্ঠ দিতেন, তিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

শচীন দেব বর্মণ, ভি বালসারা ও কিশোরকুমার

আর একটা একটা কাণ্ড হল। সেটা হল দেব আনন্দ,এস ডি বর্মণ আর কিশোর কুমার এই ত্রয়ীর মিলিত যাত্রা, যা হিন্দি ফিল্মের ইতিহাসে একটি আলাদা অধ্যায় দাবি করে, তার শুরু হল এই সিনেমার গান দিয়ে -
কিশোরের সেই গানটি শুনে নেওয়া যেতে পারে – মেরে লব্জোমে দেখো। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )। এই সময়ে রফি সাহেবের রমরমা। অন্যান্য সঙ্গীত পরিচালকেরা লিড সিঙ্গার পুরুষ কণ্ঠ হিসেবে রফি সাহেব ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারতেন না। সে সময় প্রায় জোর করেই কিশোর কুমারকে গানের জগতে নিয়ে আসেন শচীন কত্তা।

এর পরে সে ১৯৫১ এই গুরু দত্ত আর একটি ছবির পরিচালনা করলেন অন্য ব্যানারে। সেটির নাম জাল। সেখানে দেব আনন্দ নায়ক। সে সময় হেমন্ত মুখার্জি বোম্বেতে এসেছেন। কিন্তু তেমন সুবিধে করতে পারছেন না। ভাবছিলেন ফিরেই যাবেন কোলকাতায়। এ সময়ে দেব আনন্দের লিপে শচীন কত্তা একটি গান হেমন্তকে দিয়ে গাওয়ানোর কথা ভাবলেন। হেমন্তের গায়কীতে তখন বাংলাগানের বিশেষ এক স্টাইলের প্রভাব খুব স্পষ্ট। হিন্দি উচ্চারণে কিছু সমস্যা ছিল। তবু প্রচুর খাটাখাটনি করে হেমন্ত কণ্ঠকে দেব আনন্দের লিপ দেবার উপযোগী করে তুললেন। এবারও প্রায় জোর করেই গান গাওয়ালেন হেমন্তকুমার কে দিয়ে। আর সে গানে ভারতবর্ষ মাতোয়ারা হল এবং হেমন্তকুমারকে বোম্বাইয়ের সিনেমা সাদরে গ্রহণ করে জগৎ স্থায়ী আসন করে দিল। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

মান্না দে বম্বেতে গিয়েছিলেন কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দের হাত ধরে। পরে তিনি শচীন কত্তার সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করতে আরম্ভ করেন। ১৯৫০ সালে নীতিন বোসের পরিচালনায় মশাল নামে একটি ছবি হয়। ছবিটিতে মান্না দে একটি গান গাওয়ান শচীন কত্তা। সে গান আজও ফিল্ম সঙ্গীতের জগতে একটি মাইলস্টোন হয়ে রয়ে গেছে। এখন শুনলে বোঝা যায় একদিকে মান্না দের গলায় তখনো তাঁর কাকার গায়কীর স্পষ্ট প্রভাব অন্যাদিকে গানের ফরম্যাটে আই পিটিয়ে, যার সঙ্গে শচীন কত্তা জড়িয়ে ছিলেন সে সময়ে, সেই আই পি টিয়ের গণসঙ্গীতের প্রভাব। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

শচীন দেব বর্মণ ও লতা মঙ্গেশকর

যদিও লতা মঙ্গেশকর তখন অনিল বিশ্বাস, নৌশাদ, খেমচান্দ প্রকাশ, গোলাম হাইদার, সি রামচন্দ্র দের সঙ্গীত পরিচালনায় অয়ানেক গান গাইছিলেন, তবু শচীন কত্তার প্রথম দিকের ছবি গুলিতে মহিলা কণ্ঠের গান গুলি সে সময় গাইয়েছিলেন গীতা দত্ত, সুরাইয়া, আমিরবাই এদের দিয়ে। লতাজীকে প্রথম গান গাওয়ান মশাল ছবিতে। সে গান উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। কিন্তু পরে ১৯৫১ সালে প্রথম সাফল্য আসে নৌজোয়ান ছবিতে এই গানটি গেয়ে। লতার এই গানটি এবং এর আগে রেকর্ড করা গানগুলি শুনলে বোঝা যায়, লতা এই গানে নুরজাহান সুরাইয়ার গায়কী থেকে বেরিয়ে এসে একটা নতুন কণ্ঠ পাবার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেলেন। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )। তার পরে শচীন কত্তার অনবদ্য কম্পোজিশনে আর লতাজির অনন্য কণ্ঠ মিলে অসংখ্য মৃত্যুহীন গান সৃষ্টি হয়েছে তা সকলের জানা।

শচীন দেব বর্মণ ও দেব আনন্দ

শচীন কত্তা মহঃ রফি এবং কিশোর কুমার দুই প্রধান পুরুষ কণ্ঠকেই এমন সুন্দর ভাবে ব্যাবহার করেছেন যে এটা বোঝা খুব মুশকিল যে তাঁর এঁদের দুজনের একজনের প্রতি কোনও পক্ষপাত ছিল কিনা। আসলে তিনি গান তৈরি করার সময়েই ঠিক করে নিতেন তিনি ঠিক কার কণ্ঠকে ব্যবহার করবেন সে গানটির জন্যে। ব্যক্তিগত ভাবে কিশোর কুমারের প্রতি তাঁর স্নেহ একটু বেশি ছিল। কিন্তু তবু যেখানে মনে করেছেন এ গান রফিজীর গলা বেশি খুলবে সেখানে কোনও আপস করেন নি। যেমন ১৯৫৮ সালে নির্মিত ‘কালাপানি’ ছবিতে যদিও নায়ক দেব আনন্দ এবং দেব আনন্দের স্ক্রিন ভয়েসের সঙ্গে কিশোরের সঙ্গীত কণ্ঠ সুন্দর ভাবে মানিয়ে যায় তবু এই গানটি তিনি গাওয়ালেন মহঃ রফিকে দিয়ে – (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

আবার ১৯৫৩ সালে দেব আনন্দের ছবি ট্যাক্সি ড্রাইভার এ দেবজীর লিপে একটি গানে ব্যাবহার করলেন তালাত মেহমুদকে দিয়ে, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল সে গানের সুরে যে ‘হালকা মুড়কি’ আছে তা তালাত মাহমুদের গলায় ভালো খুলবে। বাঙালি শ্রোতা অবশ্য এই গানের চলনে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছায়া আবিষ্কার করে নিতে পারবেন। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

সংখ্যা দিয়ে মাপলে তখনকার প্রধান গায়কদের মধ্যে মুকেশকে দিয়ে শচীনদেব বর্মণ কম গান গাইয়েছিলেন। যাও গাইয়েছেন বেশির ভাগ ডুয়েট গান। কিন্তু যে গানটি মুকেশের সঙ্গীত জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গান সে গানটি এসেছিল শচীন কত্তার কাছ থেকে। বোম্বাই কা বাবু ছবিতে। (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

আশা ভোঁশলের গানের কথা উঠলে সাধারণত ও পি নাইয়ার এবং আর ডি বর্মনের কথা ওঠে। কিন্তু আশাজীর কণ্ঠের যাদুকে প্রথম যে ভাবে ব্যাবহার করেন শচীন কত্তা সে ভাবে তাঁর আগে কেও করেন নি। সুজাতা ছবির এই গানটি শুনলে তাই মনে হবে - (গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন, থামাতে চাইলে আবার ক্লিক করুন )

পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে যে কয়েকটি অবিস্মরণীয় কণ্ঠ হিন্দি সিনেমার গানের জগত কে মাতিয়ে রেখে ছিল সে সব কণ্ঠের সত্যিকারের ম্যাজিকের জায়গা গুলিকে শচীন কত্তা যেমন ভাবে প্রথম আবিষ্কার করে ছিলেন তা বোধহয় আর কোনও সুরকার করতে পারেন নি।

শচীনকত্তা বিশ্বাস করতেন সঙ্গীতের মূল ঐশী শক্তি লুকান থাকে গায়ক/গায়িকার ভোকাল কর্ডের অন্তঃস্থলে। তাকে নিংড়ে নিয়ে এসে কি ভাবে মেলডি সৃষ্টি করতে হয় তিনি জানতেন। গানে যন্ত্র সঙ্গীতের ব্যাবহারের ব্যাপারে তাঁর স্বভাব-কৃপণতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে গান্ধীজীর কৃচ্ছসাধিত জীবনযাপনের সঙ্গে। ষাটের দশকে যখন সলিল চৌধুরী, শঙ্কর জয়কিশনের মত সঙ্গীতকাররা শতাধিক হ্যান্ডস নিয়ে গান রেকর্ড করা শুরু করেছেন, বড়কত্তা তখনো তাঁর ten-piece orchestra theory তে অগাধ বিশ্বাস রেখে চলেছেন। শুধু আড়বাঁশির অনুচ্চ ইন্টারলিউড দিয়ে কি যাদু টাই তিনি সৃষ্টি করতে পারতেন। সেই প্যায়াসা ছবির ‘জানে কেয়া তুনে কহি’ গান্ টির অন্তরার দুটি কলির মাঝে একটি অস্ফুট বংশী ধ্বনি আজও আমাদের হৃদয় মুচড়ে দেয়। কিম্বা অভিমান ছবির ‘ পিয়া বিনা, বাঁশিয়া বাজে না ‘ গানে অসাধারণ বাঁশির ব্যাবহার গানটি কে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

কুমার শচীন্দ্র দেববর্মণ তেমনি ছিলেন বাংলার লোক গানে obsessed একজন সঙ্গীত সাধক। ধ্রুপদ সঙ্গীত সহ এ দেশের সব ধরনের এবং কিছুটা পশ্চিমেরও সঙ্গীত কে তিনি অধ্যয়ন করেছিলেন অনুসন্ধিৎসু ছাত্রের মত। নাড়া বেঁধে সঙ্গীত শিখেছিলেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণ চন্দ্র দে, বাদল খাঁ, আলাউদ্দিন খাঁর মত মার্গ সঙ্গীতের মহীরুহদের কাছে। কিন্তু অন্তরে গ্রহণ করেছিলেন যা কি কিছু তাঁর মন কেড়েছিল তাকেই,তিনি নিজে গান গেয়েছেন সম্পূর্ণ নিজের মেজাজে। সে মেজাজের মধ্যে সুর সৃষ্টি করেছেন খোলা মন নিয়ে,একেবারে নিজের স্টাইলে। সে স্টাইলে ছিল সাংগীতিক মেধার সঙ্গে হৃদয়ের কমনীয়তার এক অসাধারণ মিশ্রণ। তিনি রূপকার ছিলেন লোক সঙ্গীতের সঙ্গে কাব্য সঙ্গীতের অসবর্ণ অথচ সার্থক বিবাহের। কিন্তু সুর রচনার সময়, বিশেষ করে সিনেমার সুর রচনার সময়, সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সাধারণ মানুষের কানের কাছে সে সুরের গ্রহণযোগ্যতা কে।

প্রবীণ বয়সে এসে, যখন তাঁর আশিটি হিন্দি ছবিতে সুর দেওয়া হয়ে গেছে, এবং তার মধ্যে অসংখ্য হিট গান হয়েছে, তখন তাঁর একটি স্বীকারোক্তি আমাদের বিস্মিত করে।

‘সব রকমের সুর আমি রচনা করেছি; কিন্তু লোকসঙ্গীতে আমার আত্মা যেন প্রাণ পায়। আমি যে মাটির মানুষের সঙ্গে, প্রকাশিত হয়েছি, তাই তাদের সহজ-সরল গ্রাম্য সুর আমার গলায় সহজে ফোটে। সে সুরই আমার কল্পনার রাজ্য, আপনা থেকেই জাগে, গলায় আপনা থেকেই তা বেজে ওঠে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা গলায় এসে যায়। এর জন্য কোনও রেওয়াজের প্রয়োজন হয় না- এ সুর নিজের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। ’

শচীন দেব বোম্বাই চলে যাওয়ায় বাংলা গানের যে অনেকটা ক্ষতি হয়েছিল এ কথা স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। বাংলা বেসিক গানের জগতে তাঁর নিজের গাওয়া কয়েকটি গান ছাড়া সুরকার শচীনদেবকে আমরা পাইনি। সলিল চৌধুরী যে ভাবে হিন্দি ফিল্মের জগত এবং বাংলা বেসিক গানের জগতটাকে একসঙ্গে সামলেছিলেন শচীনকত্তা তা করেননি। হয়ত হিন্দি ফিল্মের জগতে তাঁর অতিব্যস্ততা তাঁকে সম্পূর্ণ ভাবে আটকে রেখেছিল তাই বাংলা গানে মন দিতে পারেননি। হয়তো সেই দুঃখটাকে আড়াল করতে চেয়েছেন সেই গানে – বাংলা জনম দিলা আমারে /তোমার পরাণ আমার পরাণ এক নাড়ীতে বাঁধারে/ মা পুতের বাঁধন ছেঁড়ার সাধ্য কারো নাই / সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল।

১৯৭৫ সালের মে মাস। কুমারবাহাদুর শচীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ তখন ষাট বছর বয়সে পৌঁছেছেন। সুর করছেন হৃষীকেশ মুখার্জীর ছবি ‘মিলি’র। এর মাঝে সুর করেছেন শতাধিক ছবির। হিট গানের সংখ্যা অসংখ্য। দেব আনন্দ-গুরুদত্ত থেকে রাজেশ খান্না-অমিতাভ বচ্চন,সুরাইয়া-মধুবালা থেকে শর্মিলা-জয়া দুই প্রজন্মের নায়ক নায়িকারা তাঁর সুরে গানের লিপ দিয়ে হয়ে গেছেন সুপারস্টার। কাশ্মীর থেকে কেরালা, গুজরাট থেকে নাগাল্যান্ডের আমআদমিরা, তাঁর মনোবাঞ্ছা অনুযায়ী, তাঁর সুর করা গান গুন গুন করে গেয়েছেন প্রায় তিন শতক ধরে।

তবু সৃষ্টিশীল মানুষদের জন্যে ষাট বছর কোনও বয়সই নয়। রবীন্দ্রনাথ ষাট বছরের পরে কি অসামান্য সব সুর রচনা করেছেন। বাবা আলাউদ্দিন, ভীমসেন যোশী এই বয়সে চুটিয়ে কাজ করেছেন। শচীন কত্তা অনেক গুলো পাহাড়ের চুড়া ছুঁয়েছেন বটে, তবুও আরও অনেক পাহাড় জয় করা বাকি তখনো। শেষ দিকে তাঁর সঙ্গীতে অর্কেস্ট্রেশনের ধরন পালটাচ্ছিল। পশ্চিমি বাজনা ব্যাবহারের ক্ষেত্রে তাঁর চিরাচরিত minimalist স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। অনেকে বলে থাকেন রাহুল দেব বর্মনের মিউজিক্যাল এরেঞ্জমেন্টকে তিনি আরও বেশি করে গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছিলেন।

কিন্তু এই রকম একটা সময়ে, যখন এক নতুন ‘বর্মণদাদা’কে ইন্ডাস্ট্রি পেতে চলেছে সেই সময় একদিন মিলির রেকর্ডিং চলার সময়ে তাঁর প্যারালেটিক স্ট্রোক হয়ে গেল। গভীর কোমায় চলে যান তিনি। কিশোর কুমারের জন্যে ‘বড়ি শুনি শুনি হ্যায়’ গানের রিহার্সাল হয়ে গেছে। রেকর্ডিং হবে পরের দিন। পরের দিন রেকর্ডিং হল বটে রাহুলের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু বড় কত্তা তখন জীবন মৃত্যুর মাঝখানে অন্য এক ‘শুনি শুনি’ জগতে চলে গেছেন। এই অবস্থায় কোমায় প্রায় পাঁচ মাস বেঁচে ছিলেন। এই সময় পুত্র রাহুল আর স্ত্রী মীরা তাঁর কাছে বসে জোরে জোরে বলতেন কুমিল্লার কথা, পরিবার বন্ধু বান্ধবদের কথা। যদি কিছু সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুতেই তাঁর সাড়া পাওয়া যেত না। রাহুলদেব বলেছিলেন শুধু একবার সেদিনের একটি খবর তাঁর কানের কাছে যখন খুব জোরে বলেছিলেন রাহুল তখন নাকি তিনি একবার চোখ মেলেছিলেন। খবরটা ছিল ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে হারিয়ে দিয়েছে। সঙ্গীতের পর তাঁর দ্বিতীয় প্যাশন ছিল ফুটবল। তাই হয়ত তাঁর প্রিয় ইস্টবেঙ্গল দলের জয়ের কথা শুনে মুহূর্তের জন্যে জীবনের ছোঁয়া পেয়েছিলেন।

১৯৭৫ এর ৩১শে অক্টোবরে এই বিরাট সঙ্গীতপ্রতিভার সৃষ্টিশীলতার জীবন শেষ হয়ে যায়। আগামী পৃথিবীর জন্যে তিনি রেখে যান এক সঙ্গীতশাস্ত্রের সোনার খনি যা ভাঙ্গিয়ে নতুন সৃষ্টির রসদ পাবে বেশ কয়েক প্রজন্ম, আর তাঁর সুযোগ্য পুত্রকে। যিনি উত্তরিধাকারী হলেন এমন এক সঙ্গীতের ধারাবাহিকতার যা মেলডি-হারমনি-রিদম এর তিন সাংগীতিক ব্রহ্মাস্ত্র সম্বল করে এ দেশের লক্ষ লক্ষ আমআদমীর হৃদয়কে স্পর্শ করার কাজটি করে যাবে নতুন ভাবে।

সব সৃষ্টিশীল মানুষই বোধহয় মৃত্যুর ছায়া অনুভব করতে শুরু করলে সব সৃষ্টি ছাপিয়ে গিয়ে একধরণের নির্লিপ্তির মধ্যে চলে যান। আর কোনও পাহাড়ের চুড়া নয় মাটির ধুলার কাছে থেকে যেতে চান। তিন মহান সাংগীতিক মেধা সম্পন্ন বাঙ্গালির লেখা থেকে এমনই অনুভূতির মিল পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন -

যখন রব না আমি মর্ত্যকায়ায়/তখন স্মরিতে যদি হয় মন/তবে তুমি এসো হেথা নিভৃত ছায়ায়/যেথা এই চৈত্রের শালবন।

সলিল চৌধুরী লিখেছিলেন –

ধরণীর পথে পথে ধূলি হয়ে রয়ে যাব এই কামনা, আর কিছু না/ আগামীর পায়ে পায়ে আমিও পৌঁছে যাব সেই ঠিকানা, আর কিছু না।

শচীন কত্তা তাঁর স্মৃতি কথায় লিখে গেছেন –

‘জীবনের সায়াহ্নে আমার শুধু কামনা – আমি আর কিছু চাই না। শুধু চাই, সরগমের নিখাদ হয়ে তলানিতে পড়ে থাকতে। ’



লেখক পরিচিতি - চাকুরী জীবন বেসরকারি এবং আধা সরকারি কর্পোরেট জগতের বিভিন্ন পদে। এখন অবসরপ্রাপ্ত। লেখেন নেহাতই মনের খিদে মেটাতে। লেখেন নানান বিষয় নিয়ে। তবে যাই লেখেন বিষয় নির্বাচনে কিছু অভিনবত্ব থাকে। গান , চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, দিন বদলের ছবি, বাঙ্গালিয়ানা এ রকম আরও অনেক বিষয় এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। তথ্যকে কৌতুকের মোড়কে এবং ভাবনা কে স্বচ্ছতার আবরণে পরিবেশন করতে চেষ্টা করেন। বিষয় যাই হোক ভাষা সব সময়েই ঝরঝরে, রসস্নিগ্ধ এবং মনোগ্রাহী। বেশ কয়েকটি ওয়েব পত্রিকাতে লেখেন। দেশ বিদেশে অনেক গুণগ্রাহী পাঠক আছেন।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।