শরদিন্দু সংখ্যা
অবসর (বিশেষ) সংখ্যা , এপ্রিল ৩০, ২০১৫
গোয়েন্দা শরদিন্দু
বিকাশ বসু
মোটর বিকল হওয়ায় নির্জন বনপথে দু নারী মমতা ও সতী যখন বেশ বিপাকে – তখন সতী বলে ওঠে, -‘ও দিদি, দ্যাখ, দ্যাখ – ধোঁয়া।’
সতীর উল্লাসের কারণ ও জানা যায় পরের বাক্যেই – ‘নিশ্চয় ওখানে সাঁওতালদের বস্তি আছে।’
জনবিরল স্থানে ধোঁয়া মানেই আশার আলো – নিকটেই মনুষ্য-বসতি আছে। ধোঁয়া দেখে সতীর এই সিদ্ধান্ত।
দিদি মমতা অবশ্য সন্দেহ প্রকাশ করে – ‘যদি বস্তি না হয়। যদি জঙ্গলে আগুন লেগে থাকে।’
সতী তৎক্ষণাৎ মমতার এই যুক্তি খণ্ডন করে দেয় –‘জঙ্গলে আগুন লাগলে কি ধোঁয়া অমন তালগাছের মত সোজা ওঠে?’
অনেকটা কোনো গোয়েন্দা গল্পের নায়ক ও তার সহকারীর মধ্যেকার সংলাপের মত নয় কি? অথচ এটি সুমধুর দুই নারী চরিত্রের কথোপকথনের অংশবিশেষ মাত্র। আর রচনাটিও গোয়েন্দা-সম্পর্কহীন একটি খাঁটি রোমান্টিক গল্প – ‘কানু কহে রাই’। লেখক শরদিন্দু বলেই কি?
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়েন্দা সাহিত্যও রচনায় অভ্যস্ত ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর অ-গোয়েন্দা গল্প উপন্যাসেও জায়গায় জায়গায় সহজভাবে ডিটেকটিভ উপাদান এসে যাওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়, তবে এটা লক্ষ করার মতো বিষয়ও নয় কি?
গোয়েন্দা গল্পের দিগবিজয়ী কালজয়ী লেখক কোনান ডয়েলের নিজের জীবনে সফল গোয়েন্দাগিরির গল্প সকলেরই জানা আছে। আমাদের শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও ব্যক্তিগত ছোটোবড়ো ঘটনায়, অঘটনায় গোয়েন্দাবুদ্ধির পরিচয় দিতেন কিনা – তা বলতে পারবেন তাঁর স্বজন, পরিজন, নিকটজন, স্নিগ্ধজন।
গল্পের শুধু নায়কই নন, কখনো বা পার্শ্বচরিত্র ও শরদিন্দুর নিজস্ব গোয়েন্দা মনমেজাজের অংশীদার হয়ে পড়ে। ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ তাঁর একটি নির্ভেজাল ঐতিহাসিক উপন্যাস। ভেজাল যদি কিছু থাকে তা রোমান্সের – আর এটাই প্রত্যাশিত, কেন-না পটভূমি সুদূর অতীতের।
সময়ের দূরত্ব রোমান্সে জন্ম দেবে এটা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু যা বিশেষভাবে বিবেচ্য ও লক্ষ করার বিষয় – বলরাম নামক লোকটা পেশায় কর্মকার – নিতান্তই কর্ম করানোই যার কাজ হওয়ার কথা – সেও নায়ক অর্জুন বর্মার নিত্যসঙ্গী তুচ্ছ এক লাঠি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করে। এ কি কোনো কর্মকারের সাধারণ কর্মের মধ্যে পড়ে? অথচ বলরামের মনে হয় – অর্জুন বর্মার নিত্যসঙ্গী ঐ লাঠির মধ্যে রহস্য আছে। এমনকি বলরাম সেই লাঠি রহস্য ভেদও করে ফেলে একসময়। এবং তার পরীক্ষা নিরীক্ষার ধরণ ধারণ ও চিন্তা প্রকরণ অনেকটাই গোয়েন্দা সুলভ। লেখক শরদিন্দু বলেই না।
বলরামের চিন্তাধারা এই রকম। প্রথমত অর্জুন বর্মার হাতে একটির জায়গায় দুটি লাঠি। অথচ অর্জুন লাঠি দুটিকে নজরছাড়া করতে চায় না। এই দুটি কারণে স্বতঃই একটা সন্দেহ জাগে। ঐ লাঠি দুটির মধ্যে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে।
এই তো গেল কর্মকার বলরামের চিন্তাধারা। তারপর একসময় যখন সুযোগ এলো, তখন সত্যিই সে লাঠি দুটিকে পরীক্ষার কাজে লেগে গেল। আর একজন ডিটেকটিভ যে রীতিতে পরীক্ষা করে ঠিক সেইভাবে।
‘সে দেখল বাঁশের লাঠি দুটি বাংলাদেশের লাঠির মতই, বিশেষ পার্থক্য নাই। ছয় হাত লম্বা, ঘনসন্নিবিষ্ট, দুই প্রান্তে পিতলের তারের বন্ধন; যেমনি দৃঢ়, তেমনি লঘু। এরূপ একটি লাঠি থাকলে পঞ্চাশ জনের মহড়া দেওয়া যায়। কিন্তু লাঠি দুটি কেন?
সাধারণভাবে কৌতূহলাক্রান্ত হয়ে এবংবিধ চিন্তা অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু এর অব্যবহিত পরে বলরাম যা করে তাকে একেবারে ডিটেকটিভ সুলভ ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই বলা সম্ভব নয়। কারণ-
‘বলরাম লাঠি দুটি তৌল করিয়া দেখিল তাহাদের গর্ভে সোনারূপা লুকানো থাকিলে এত লঘু হইত না, জলে পড়িয়া ডুবিয়া যাইত।’
আগেই দেখা গিয়েছে অর্জুন বর্মার নিত্যসঙ্গী এই লাঠি দুটি তার পাশে নদীজলে ‘ভাসতে ভাসতে’ এসে পৌঁছেছে। ধাতব কোন পদার্থ লুকোনো থাকলে লাঠি দুটি ভেসে না থেকে ডুবে যেত। তাই বলরামের এই সিদ্ধান্ত।
বলরাম পেশায় কর্মকার, তবু সে এভাবে হিসেব করে শরদিন্দুর হাতে গড়া কর্মকার বলেই নয় কি? যুগপৎ যুক্তি, বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা – তিন মিলিয়ে অঙ্ক কষে তার এই লাঠি রহস্য সমাধানের চেষ্টা – তারপরও চলে তার সত্যান্বেষণ।
তবে অর্জুন বর্মা লাঠি দুটি হাত ছাড়া করিতে চায়না কেন? ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া ভাবিতে ভাবিতে হঠাৎ একটা কথা তাহার মনে হইল, সে আবার লাঠি দুটিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করিল। ‘ও-এই ব্যাপার।’
‘এই ব্যাপার’ – কি ব্যাপার? স্বতঃই প্রশ্ন জাগে পাঠকের মনে। সে যেন সত্যান্বেষী গোয়েন্দার স্বল্পবুদ্ধি সহকারী হয়ে যায়। - এমনি পরিবেশনা। ঘটনার কাহিনীও হয়ে যায় গোয়েন্দা কাহিনী সদৃশ শরদিন্দুর কলমে। অথচ বলরাম সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ নয় – পেশায় সে কর্মকার।
দ্বিতীয়বার পরীক্ষা ও ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে বলরাম আবিষ্কার করল – লাঠির গায়ে গ্রন্থি এবং সঙ্গে সঙ্গে তার সিদ্ধান্ত – এ দুটি লাঠিকে রণ পা হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। তাহলে অর্জুন বর্মার ক্ষিপ্রগতির এই রহস্য।
রহস্য আর রহস্য থাকেনা, বলরামের গোয়েন্দা বুদ্ধির কাছে তা অনাবৃত হয়ে পড়ে। লেখক আগেই জানিয়ে রেখেছেন পাঠককে অর্জুন অসম্ভব ক্ষিপ্রগতি – একরাতের মধ্যে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে স্থানান্তরে চলে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হল এই তথ্য – লাঠি একটি নয় দুটি। তাই লাঠির দেহে গ্রন্থি। সাধারণ মানুষের এত দেখার বা ভাবার বা জানার কথা নয়। কিন্তু শরদিন্দুর কর্মকার নিছক কর্মকার নয় – অংশত সে গোয়েন্দাও। এইটাই কারণ – যে লক্ষ করে অর্জুন লাঠি কাছছাড়া করে না, এবং এভাবেই তার মনে সন্দেহের সূচনা ঠিক গোয়েন্দা গল্পের মতোই, তাই নয় কি?
বলরাম কোন শখের ডিটেকটিভ নয় আর ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ ও নয় কোন গোয়েন্দা উপন্যাস। তবু যে এই ঐতিহাসিক গল্পের মধ্যে ডিটেকটিভ উপাদান, রস, স্বাদ এসে গেল তার কারণ এ গল্পের লেখক শরদিন্দু। তাঁর গোয়েন্দা মনের বিশেষ ধারার ছাপ তাঁর কলমে। গাঢ় ছাপ নয়, ফিকে – কিন্তু সেটাই মানিয়ে যায় রোম্যান্টিক গল্পে, ঐতিহাসিক উপন্যাসে।
এদিকে শরদিন্দুর ‘চন্দন মূর্তি’ নামে একটি গল্প আছে। ডিটেকটিভ গল্প নয়, কিশোররঞ্জন কোন এডভেঞ্চার ও নয়, বর্তমান যুগের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর বুদ্ধ প্রেমের এক রোমান্টিক কাহিনি। কিন্তু গল্পের লেখক যেহেতু শরদিন্দু, এটি একটি ডিটেকটিভোপম গল্প হয়ে উঠেছে। গল্পটা এইরকম:
কোন এক বিশেষ বৌদ্ধমূর্তি আবিষ্কারের নেশায় ভিক্ষু অভিরাম ও তাঁর সঙ্গী লেখক হিমালয় নদীর উপলা প্রপাতের ধারে এসে পৌঁছলেন। ওপারে সত্যি একটি পাষাণস্তম্ভ দেখা গেল। তাঁরা আশ্বস্ত হলেন। কেননা জেতবিহারে প্রাপ্ত শিলালিপির বয়ানে উল্লেখ আছে যে ওই রকম একটি পাষাণ স্তম্ভের মধ্যেই বুদ্ধদেবের জীবৎকালের একমাত্র মূর্তিটি লোকচক্ষুর অন্তরালে সুরক্ষিত আছে।
এর পরের ঘটনা – নিকটবর্তী গ্রামের মোড়ল জানাল, ‘প্রবাদ চলিয়া আসিতেছে যে বুদ্ধদেব স্বয়ং এই স্তম্ভে অবস্থান করিতেছেন, তাঁহার দেহ হইতে নিরন্তর চন্দন গন্ধ নির্গত হয়।’
পাষাণস্তম্ভ থেকে চন্দনের গন্ধ? – ভিক্ষু অভিরাম আরও আশান্বিত হয়ে উঠলেন তাঁর অভিযানের সাফল্য সম্বন্ধে। কেন না জেতবিহার থেকে প্রাপ্ত শিলালিপি অনুযায়ী বুদ্ধের আদি মূর্তিটি ছিল চন্দনকাঠ নির্মিত।
এখন পাষাণ স্তম্ভটিকে ভাঙলে বা উত্তমরূপে পরীক্ষা করলেই হয়। সাফল্য সম্পর্কে যখন ভিক্ষু অভীরাম ও তাঁর সঙ্গী লেখক প্রবল আশান্বিত, ঠিক সেই সময় মোড়লের কুটীর কাঁপিয়ে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হল। চাঞ্চল্য তো দূরের কথা, এই ভূকম্পন গ্রামবাসীদের একেবারেই বিচলিত করতে পারল না। ভিক্ষু অভিরাম এই বিসদৃশ ঘটনা লক্ষ করে প্রায় গোয়েন্দার ঢং ও ভাষায় বলে উঠলেন –
‘আর সন্দেহ নেই। আমরা ঠিক জায়গায় এসে পোঁছে গেছি।’
স্বতঃই পাঠকের মন বলে ওঠে, এই বৌদ্ধ ভিক্ষু যে দেখছি ছদ্মবেশী ব্যোমকেশ। কীসে তার সন্দেহ নিরসন হলও তাতো বুঝতে পারছিনা।
এদিকে ভিক্ষু অভিরাম পণ্ডিত ব্যক্তি অবশ্যই, কিন্তু ডিটেকটিভ তো নন, অথচ কথাটা বললেন ডিটেকটিভের ঢঙ্গে, ভাষায়। ভূকম্পনের সঙ্গে ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছনোর সম্পর্ক কি? সঙ্গী লেখক হয়তো সেই কথাই ভাবছিলেন।
কিন্তু সে প্রশ্ন করার আগেই উত্তর পেয়ে গেলেন লেখক। সঙ্গে আনা প্রাকৃত ভাষায় লেখা শিলালিপির অনুলিপি পড়ে অভিরাম লেখককে শুনিয়ে দিলেন – ‘ধর্মাশোকের কালে হিমালয়ের স্পন্দনশীল জঙ্ঘাপ্রদেশে ইহা (পাষাণস্তম্ভ) নির্মাণ করা হইয়াছিল।’
তাহলে এই সেই শিলালিপি বর্ণিত হিমালয়ের স্পন্দনশীল জঙ্ঘাপ্রদেশ। প্রথমে পাষাণস্তম্ভ, তারপর চন্দন গন্ধ, শেষে ভূকম্পন – অতএব শিলালিপির বয়ানের সঙ্গে চমৎকার মিলে গেল। অভিযান সফল।
যতটুকু শরদিন্দু পড়েছি, তাতে দেখেছি – তার অনেক অ-গোয়েন্দা গল্পেই বিশেষ বুদ্ধির কিছু না কিছু ছাপছোপ, চাপা দ্যুতি, গোয়েন্দা উপাদানের ফিকে উপস্থিতি। তাঁর ঐতিহাসিক সামাজিক গল্প উপন্যাসের কোন কোন নায়কের সাধারণ নায়কোচিত গুণাবলী তো থাকেই, সঙ্গে একটি অতিরিক্ত গুণ যোগ হয় – গোয়েন্দা গুণ।
‘কুমারসম্ভবের কবি’ নামে অণু-উপন্যাসে কবি কালিদাসের শ্বশুরমশাই কুন্তলরাজকে দিয়েও ছোট্ট একটু গোয়েন্দার কাজ করিয়ে নিয়েছেন শরদিন্দু।
সেখানে সমস্যাটা ছিল এই রকম। সৌরাষ্ট্রের যুবরাজ এই নকল পরিচয়ে কালিদাসের বিয়ে হয়ে গেছে রাজকন্যার সঙ্গে। এদিকে সৌরাষ্ট্রের আসল যুবরাজ মকরবর্মা ধূলি-কর্দম-চর্চিত অবস্থায় রাজধানীতে পৌঁছেই দাবি করেছেন তিনিই সৌরাষ্ট্রের আসল যুবরাজ। রাজকন্যা হৈমশ্রীর সঙ্গে যার বিয়ে হয়েছে সে প্রতারক মাত্র। প্রমাণস্বরূপ – ‘মকরবর্মা অঙ্গুরীয় খুলিয়া রাজার হাতে দিলেন।’
এ সব ক্ষেত্রে আসল নকল বিচার সহজ নয়। অঙ্গুরীয় অন্য উপায়ে সংগ্রহ হরেও এমন দাবি করা যায়। অতএব সত্যাসত্য নির্ধারণ হবে কি উপায়ে? কাজটি তো সহজ নয়। কিন্তু কুন্তলরাজ সহজেই বুঝতে পারলেন – ধূলিধূসরিত এই মকরবর্মাই সৌরাষ্ট্রের আসল যুবরাজ।
কি করে বুঝলেন তিনি?
স্রেফ গোয়েন্দাসুলভ একটি পর্যবেক্ষণীয়র সাহায্যে। শরদিন্দুর নিজের ভাষায় –
‘রাজা লক্ষ করিলেন, তর্জনীর মূলে অঙ্গুরীয় পরিধানের চক্রচিহ্ন রহিয়াছে। এ ব্যক্তি যে অঙ্গুরীয় কুড়াইয়া পাইয়া বা চুরি করিয়া সদ্য অঙ্গুরী পরিধান করিয়াছে তাহা নয়।’
এই দৃষ্টি, এই সিদ্ধান্ত ডিটেকটিভের। আর এভাবে ডিটেকটিভ উপাদানের সহজ প্রবল আবেদন কখনও জ্ঞাতসারে, কখনও অতি মৃদু পদসঞ্চারে তার অগোচরে শরদিন্দুর অ-গোয়েন্দা গল্প উপন্যাসকে আরও উপাদেয়, মোহনীয়, ঋদ্ধ করে তুলেছে।
সার্থক গোয়েন্দা গল্পের লেখকের মনের ধারা কিছুটা সত্যি ডিটেকটিভের মতো হবেই। এ জন্য শার্লক হোমসের জন্মদাতা কোনান ডয়েল হোমস-অনুরাগী পাঠকদের দ্বারা অনেকসময় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা ব্যক্তিগত ‘কেস’ নিয়ে এক সময় ডয়েলের কাছে হাজির হতে শুরু করেন। এই আশা নিয়ে আসতেন তাঁরা যে হোমসের স্রষ্টা নিশ্চয়ই অনেক গোয়েন্দাবুদ্ধি ধরেন এবং সাগ্রহে ও সহজে তাঁদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন।
গোয়েন্দা গল্পলেখক নিজেও কিছু গোয়েন্দা বুদ্ধির মালিক – কথাটা মিথ্যে নয়। হোমস অনুরাগী ঐ পাঠকদের দোষ দেওয়া যায়না। তাঁদের অনুমান বা আশা কোনোটাই অস্বাভাবিক বা হাস্যকর কিছু নয়। প্রথম দিকে এড়িয়ে গেলেও ডয়েল শেষপর্যন্ত এরকম কয়েকটি কেস নিয়ে মাথা ঘামান এবং অন্তত: দুটি কঠিন কেসের চমৎকার সমাধান দেন। এটাই স্বাভাবিক।
ডিটেকটিভ গল্পের নায়কের সঙ্গে ডিটেকটিভ গল্পলেখকের দৃষ্টি, বুদ্ধি, যুক্তির মিল থাকবেই। লেখকের মনোভূমিতেই চরিত্রের জন্ম। গোয়েন্দা গল্পের লেখকের মগজই গল্পের নায়কের একমাত্র সহায়। কোনান ডয়েলের নাছোড়বান্দা ভক্তের মতো কোনো শরদিন্দু ভক্ত কখনও ব্যোমকেশ স্রষ্টার কাছে ব্যক্তিগত ‘কেস’ নিয়ে গেছিলেন কিনা জানি না। তবে গেলে যে হতাশ হতেন না, তা সুনিশ্চিত বলতে পারি।
লেখক পরিচিতি - বিকাশ বসু (১৯৩৪ – ২০১২) - বাংলার সুখ্যাত প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও কবি। এই লেখাটি তাঁর গ্রন্থ (বিকাশ বসু গদ্যসংগ্রহ, প্রতিভাস থেকে প্রকাশক ও সত্ত্বাধিকারির অনুমতিগ্রহণ পূর্বক পুনঃপ্রকাশিত।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।