প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

শরদিন্দু সংখ্যা

অবসর (বিশেষ) সংখ্যা , এপ্রিল ৩০, ২০১৫

 

ফিরে দেখা

দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য


শিশু কিশোরদের জন্যে সাহিত্যসৃজন সম্পর্কে জনমত হল, “ওটি বড়ো সহজ বস্তু নয়।” ছোটোদের পত্রিকা চালাবার কারণে বহু সু কিংবা স্বল্প পরিচিত বিদগ্ধ কলমচিকে পত্রিকায় লিখতে বলতে গিয়ে এই কথাটা বারংবার শুনেছি এবং শুনেও চলেছি।

প্রশ্ন রেখেছি, কেন? সকলেই তার জবাব স্পষ্টভাবে দিতে পারেন নি, কারণ যে বিশেষ সামাজিক প্রেক্ষিত একজন মানুষকে একটি বিশেষ ইজম বা নীতি বা পদ্ধতি বা কাজকর্মের কোন নির্দিষ্ট টেমপ্লেটে বিশ্বাস করায় সেটিতে প্রভাবিত হলেও তাকে সম্যক অনুধাবন করে সুনিপুণ ভাষায় প্রকাশ করাটা সকলের সাধ্যের মধ্যে পড়ে না। তবে কাউকে কাউকে আরো একটু বেশি খুঁচিয়ে, সময় দিয়ে এ প্রশ্নের যে টুকরোটাকরা উত্তর জোটানো গিয়েছে সেগুলোকে একত্র করলে তাঁদের বিশ্বাস ও ধারণার এই ছবিটা মেলেঃ

ডু’জ অ্যান্ড ডোন্টস্‌ অব শিশুকিশোরসাহিত্য

ছোটোদের লেখা তৈরি করতে গেলে কিছু ডু’জ এবং ডোন্ট’স এর গণ্ডিতে থেকে কাজ করতে হয়। একেকজনের কাছে সেই ডু’জ এবং ডোন্ট’স এর যা সংজ্ঞা সেগুলো নীচের তালিকার থেকে একাধিক উপাদান নিয়ে তৈরি হয়ঃ (কারো ক্ষেত্রেই এর সবগুলো শর্তকে একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে দেখিনি)

ক) ওতে কিছু নীতিকথা এবং/অথবা কোন বার্তা থাকতে হবে
খ) ভাষা ও চিত্রকল্পকে হতেই হবে সরল, সহজপাচ্য ও সহজবোধ্য
গ) “এডাল্ট উপকরণ”, যথা নারীপুরুষের প্রেম ভালোবাসা, যুদ্ধ, রক্তপাত, ইত্যদি থাকবে না।
ঘ) যুক্তিবাদী হতে হবে। অলৌকিক, ভয় ইত্যাদি চলবে না।
ঙ) সমাজসচেতনতা গড়তে হবে (পড়ার চাপ, গ্রামনিধন ও হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সারল্যের নাগরিক মূল্যায়ন, লেখকের ছোটোবেলায় কেমন সব স্বর্গীয় সময় ছিল সেইসব জাবর কেটে ছোটোদের বুঝিয়ে দেয়া তারা কী বেজায় খারাপ আছে ইত্যাদি)

মোটামুটি বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের ল্যান্ডস্কেপে এই টেমপ্লেটটাকেই মেনে চলা হয়। (ব্যতিক্রম হল বুড়িয়ে ও ফুরিয়ে যাওয়া গতকালের সেইসব স্বল্পসংখ্যক সাহিত্যিক, যাঁদের নাম আজও বিক্রয়যোগ্য। পত্রিকায় এঁদের নামটা থাকলেই হল। কী লিখছেন সে বস্তু দেবভোগ্য না ছাঁইপাশ তা নিয়ে বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক, কোন পত্রিকাই মাথা ঘামাবে না। সেইটেই আইন।)

একেকটি পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা ও ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ ওপরের এই টেমপ্লেটটিকে ধরে, তাদের কিছু চলরাশিকে নিয়ে ও বাকিগুলোকে শূন্য ধরে তৈরি করে চলেন যাঁর যাঁর প্রকাশনের একমাত্রিক, রৈখিক ফর্মুলা।
এই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়েই শরদিন্দুর শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে কিছু কথা বলবার ছিল।

কিছু তথ্য

আলোচনাটিকে সহজ করবার জন্য শরদিন্দুর শিশু-কিশোর সাহিত্যকে আমরা তাঁর অমনিবাসের চতুর্থ খণ্ডে সংগৃহীত কাহিনীগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব। ব্যোমকেশ সিরিজ এবং বরদা সিরিজের অনেক কাহিনীকেও এই দলে আনা যায়, তবে এই আলোচনাটিকে সেই সম্পূর্ণ সেটটিকে না ধরে তার একটি প্রতিনিধিস্থানীয় নমুনাতেই সীমাবদ্ধ রাখা হল।

সমগ্র সাহিত্যিক জীবনে শিশু-কিশোরদের জন্যে শরদিন্দুর মোট কাজ আঠাশটি। প্রথম কাজ মোক্তার ভূত (১৯৩২ সাল)।(প্রসঙ্গত এই একই বছরে ব্যোমকেশ বক্সীর আবির্ভাব) সাঁইত্রিশ বছর বাদে এই ধারার শেষ গল্পটি তিনি লিখলেন ১৯৬৯ সালে, নন্দনগড় রহস্য।

আঠাশটা কাহিনীর মধ্যে সিরিজ রয়েছে দুটো। রাজশেখর বসুর উৎসাহে শিবাজির সময়কে প্রেক্ষাপট করে সদাশিব নামে এক কিশোর যোদ্ধার নানান অভিযান নিয়ে এই সিরিজে রয়েছে মোট পাঁচটা কাহিনী। তা বাদে বাকি তেইশটা গল্পের মধ্যে তিনটে গল্প হল টাউন স্কুল-মিশন স্কুল সিরিজের। বাকিগুলো একক গল্প। লেখাগুলোর বিষয়গত বিভাজন এইরকমঃ

বিষয়

নাম

সংখ্যা

রোমান্সঃ

বনের বিহঙ্গ, বীর্যশুল্কা, ময়ূরকূট, স্যমন্তক, ভূমিকম্পের পটভূমি, নন্দনগড় রহস্য

ইতিহাসাশ্রয়ীঃ

ঝিলম নদীর তীরে, সদাশিব সিরিজ(পাঁচটি)

অলৌকিকঃ

পিন্টু (শিকার),উভয় সংকট(শিকার)মোক্তার ভূত(মজার), রাতের অতিথি(গ্রোটেস্ক), যাত্রী (গ্রোটেস্ক),

ছেলেদের বাল্য ও কৈশোরলীলাঃ

টিকিমেধ, জেনারেল ন্যাপলা, গাধার কান, স্বামী চপেটানন্দ( এই তিনটে গল্প টাউন স্কুল-মিশন স্কুল সিরিজের), বিনুর জলপানি।

রূপকথাঃ

পরীর চুমু, আঙুর পরী ডালিম পরী, ভালুকের বিয়ে, পান্নাদিঘির জোড়া রুই

জীবজন্তুকেন্দ্রিক

পুষি ভুলোর বনবাস

রহস্যভেদঃ

সাপের হাঁচি

  
আরো একটি আকর্ষণীয় দিকে পাঠকের নজর আকর্ষণ করতে চাইব নিচের সারণীটি দিয়ে

বিষয়

কাহিনী

কাহিনীসংখ্যা

যৌবনের দিকে এগোনো কিংবা যৌবনে পা দেয়া নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের পরিণতিলাভ (বিবাহ, ট্র্যাজেডি, ভাইবোন সম্পর্কস্থাপন)

বনের বিহঙ্গ, বীর্যশুল্কা, ময়ূরকূট, স্যমন্তক, ভূমিকম্পের পটভূমি, নন্দনগড় রহস্য, সদাশিব সিরিজ(পাঁচটি),পান্নাদিঘির জোড়া রুই, ভালুকের বিয়ে

১৩

বাস্তব, পৌরাণিক বা কাল্পনিক প্লট অবলম্বন করে ঐতিহাসিক/পৌরাণিক ভারতবর্ষের সমাজ, প্রকৃতির সঙ্গে পাঠককে আলাপ করে দেয়া

ঝিলম নদীর তীরে, বনের বিহঙ্গ, বীর্যশুল্কা, ময়ূরকূট, স্যমন্তক,সদাশিব সিরিজ (পাঁচটি)

১০

যুদ্ধ, পৌরুষ, বীরত্ব

ঝিলম নদীর তীরে, বনের বিহঙ্গ, বীর্যশুল্কা, ময়ূরকূট, স্যমন্তক,সদাশিব সিরিজ(পাঁচটি)

১০


বাংলার চিরন্তন শিশু-কিশোর সাহিত্যের ধারা

এই শ্রেণীবিভাজনটি নিয়ে আরো কিছু কথা বলবার আগে বাংলা ভাষার ট্র্যাডিশনাল শিশু কিশোর কাহিনীর উপাদান নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।(অন্যান্য ভারতীয় ও অভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এ কথাগুলো একইভাবে প্রযোজ্য)

বাংলার চিরকেলে সেইসব কাহিনীর  কিছু কিছু সংকলিত হয়েছে ঠাকুরমার ঝুলি, ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদিদির থলে, টুনটুনির বই, বাংলার উপকথা ইত্যাদি বইগুলিতে। রয়েছে ‘গোপাল ভাঁড়ের গল্প’ হেন ছলচাতুরিতে ভরা কাহিনীর সম্ভারও। সে বাদে এই ধরণের গল্পের আরো এক বিস্তীর্ণ ভাঁড়ার এখনও ছড়িয়ে আছে বাংলার গ্রামগঞ্জে লোকজনের মুখেমুখে। এখনও ছাপাখানার মুখ দেখেনি তারা। ছোটোবেলায় পিসির মুখে শোনা সেই পরচিত্তহরা নামের মোহিনী রাজকন্যার গল্প যেমন।

এইসমস্ত গল্পে রাক্ষস কড়মড়িয়ে সন্তানের হাড় চিবোয়, রাজপুত্র তলোয়ার চালিয়ে রাক্ষসপুরীতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেন। রাজপুত্র একঝলক কোন অচিনপুরীর রাজকন্যাকে দেখে প্রেমে একেবারে দিওয়ানা হয়ে  পথে পথে ঘোরেন, কখনো প্রাণ তুচ্ছ করে ডুব দেন গহন জলাশয়ের অতলে—রাক্ষসের প্রাণভোমরাকে খতম করে প্রিয়তমাটিকে পেয়ে যাবার স্বপ্ন নিয়ে। রাক্ষসী গার্জেনের নজরের আড়ালে রাজপুত্তুরের চুপিচুপি এসে রাজকন্যার সঙ্গে লিভ ইন করা আর রাক্ষুসী এলেই লুকিয়ে থাকা-সে গল্পও আছে, বাংলায় এবং পশ্চিমে দু জায়গাতেই।

সময় বদলেছে। কিন্তু সে বদলের অভিঘাত সয়ে এ গল্পেরা এখনো পর্যন্ত ছাপার অক্ষরে, অ্যানিমেশনে, অডিও নাটকে, নৃত্যনাটকে তাদের অস্তিত্ত্বকে ধরে রেখেছে সমানভাবে। প্রিয় পাঠক, আপনি আপনার কসমোপলিটন বৃত্তের শিশুপাঠকের ‘ঠাকুমার ঝুলি ওয়াট্‌স দ্যাট্‌?’ শুনে একে উড়িয়ে দেবেন না। সে বৃত্তের এবং তাকে ঘিরে চল্লিশ-পঞ্চাশ কিলোমিটারের প্রভাববৃত্তকে ছাড়িয়ে বাইরে বিরাটতর বঙ্গভাষী অঞ্চলের অনেকটা এলাকাতেই অবিকৃত রয়েছে সে প্রভাব। কমপিউটার স্যাভি টেকবাঙালির অন্দরমহলেও আর প্রভাবের আন্দাজ পাবেন Thakurmar jhuli  বা সে জাতীয় শব্দবন্ধ দিয়ে গুগল সার্চ করলে। প্রাপ্ত সাইটগুলোতে গিয়ে তাদের অ্যানিমেশন ভিডিও, টেক্‌স্‌ট, অডিও ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ফাইলের ভিউ ও ডাউনলোডের সংখ্যাগুলোকে একটু দেখে নিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

শরদিন্দু কোন পথে

ট্র্যাডিশনাল, নাকি আধুনিক টেমপ্লেট-শাসিত? কোন পথের মানুষ ছিলেন শরদিন্দু? ওপরের সারণীগুলোতে একবার চোখ বোলালেই বোঝা যাবে, দুই শাখাতেই অবদান রাখলেও সংখ্যাগতভাবে তাঁর  ঝোঁক কিন্তু সেই ট্রাডিশনাল পথের দিকে। আবার, রচনাকাল অনুযায়ী লেখাগুলোকে সাজালে অন্য একটা ছবি পাওয়া যাচ্ছে-

বনের বিহঙ্গ বেরিয়েছিল ১৯৩৩ সনে। বনের কিশোর কংক তার কিশোরী বন্ধু রট্টাকে ভালোবাসে। ভাইবোনের সে মধুর ভালোবাসার পথে কাঁটা হল রট্টাকে হরণ করে নিয়ে যাওয়া উজ্জয়িনীর রাজপুত্র। প্রেমিকপ্রেমিকার ভালোবাসার ব্যাপারে কংক অনবহিত। তার কাছে এই হরণটরণ বিষম একটা ক্রাইম। বিশেষ করে বন্ধুর বাবা, একজন পরিণতবয়ষ্ক পুরুষ তাঁকে সেইটেই বুঝিয়েছেন।

বেজায় সাহসে বুক বেঁধে নানা অ্যাডভেঞ্চার করে যখন কিশোর সেই ভিলেন রাজপুত্তুরকে মারবার জন্যে তার শোবার ঘরে গিয়ে পৌঁছোল, তখন প্রেমে বিভোর নবদম্পতির দিকে তাকিয়ে সুখের এক নতুন সংজ্ঞার কথা বুঝতে পেল সে। তার কিশোর মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুম ভাঙা চিরকেলে অভিভাবক পুরুষ, তার স্নেহের বোনটির জন্য তার স্বামীর কাছে প্রশ্ন করল, “তুমি রট্টাকে ভালোবাসো? চিরদিন ভালোবাসবে?”
এবং তার উত্তর শুনে, গুরুজনের শিখিয়ে দেয়া প্রতিশোধের পথটিকে নিজের সিদ্ধান্তে পরিহার করে সে তার জীবনের প্রথম পরিণতবয়ষ্ক সিদ্ধান্তটি নিল, এবং এইভাবেই সেই কিশোর বড়ো হয়ে ওঠবার পথে একধাপ এগিয়ে গেল।

১৯৩৪ সালে বের হল বীর্যশুল্কা। তক্ষশীলার উদ্ধত রাজকন্যার মনে এক বাঙালি রাজপুত্রের আপন বীরত্বের প্রদর্শনে ভালোবাসা জাগিয়ে তোলবার এক অবিস্মরণীয় গল্প। সে গল্পের ক্লাইম্যাক্সে এসে নারীত্বের প্রতীক দীর্ঘ বেণীর মধ্যে পৌরুষের প্রতীক জ্যা-নির্গত তীরের আমূল প্রোথিত হওয়া ও তার সঙ্গেসঙ্গেই রাজকন্যার মনের পরিবর্তনের প্রদর্শনীটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখবে।

এর পরবর্তী দীর্ঘ একটা সময় ধরে , একমাত্র ১৯৩৯ সালের ময়ূরকূট ছাড়া, তিনি পরপর লিখে গিয়েছেন টেমপ্লেটধর্মী শিশুকিশোরসাহিত্য। সালতামামি দিয়ে এ লেখাকে ভারাক্রান্ত করছি না। কৌতুহলী পাঠক শরদিন্দু অমনিবাসের চতুর্থ খণ্ডের পরিশিষ্টে চোখ বোলালেই তা পেয়ে যাবেন।

এরপর ১৯৫১ সালে স্যমন্তক প্রকাশের সময় থেকে দেখছি হঠাৎ একটা বড়ো পরিবর্তন এসেছে। এই সময় থেকেই বাংলায় বসবাসের পাট উঠছিল তাঁর। তারপর ১৯৫২ সাল থেকে বাংলা ছেড়ে পুনায় পাকাপাকি বাস এবং, মোটামুটি সাহিত্যিকজীবনের বাকি সময়টা ধরে যতগুলি শিশুকিশোরপাঠ্য লেখা বেরিয়েছে তাঁর, তার সবকটিতেই এই টেমপ্লেট ভাঙার খেলা রয়েছে (স্যমন্তক, ভালুকের বিয়ে, পান্না দিঘির জোড়া রুই, সদাশিব সিরিজ, ভুমিকম্পের পটভূমি, নন্দনগড় রহস্য—মোট দশটি কাজ।)

দেখা যাচ্ছে, লেখকজীবনের আদি ও মধ্যযুগটিতে, যখন বাজারে সেল ভ্যালুটি বাড়ছে আস্তে আস্তে, কিন্তু যখন সম্পাদক ডেকে একজন লেখককে বলতে পারেন মশায় ছোটোদের জন্য এই লেখাটা এইভাবে লিখুন দেখি, অথবা ওই লেখাটা নিতে পারব না, সেই সময়টা মাঝেমধ্যে দুচারটে পরীক্ষানিরীক্ষা বাদে শিশু-কিশোর সাহিত্য তৈরিতে তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে গিয়েছেন প্রচলিত বিষয়নির্বাচন ও ট্রিটমেন্টের মধ্যেই। তারপর, সুপ্রতিষ্ঠিত হবার পর, এবং বাংলার সীমা পাকাপাকি ত্যাগ করবার পরে ছোটোদের জন্য কলম ধরলেই ক্লাসিকাল বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের মূল উপাদানগুলোকে ফের একবার পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছেন এবং শেষ অবধি সেই পথটিকেই ধরে রেখেছেন।

কোন পথটা ঠিক?

শিক্ষা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র সর্বত্র বারংবার একটা প্রশ্ন উঠে আসে, একটি শিশুকে বা কিশোরবয়স্ককে ঠিক কোন ধরণের মননের খাদ্য সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয়। এর একটা ধারায় রয়েছে এখনকার ওই টেমপ্লেট। সেখানে একজন বড়োমানুষ প্রচলিত আদর্শ (বাস্তব নয়) মূল্যবোধের নিরীখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন খুদেটিকে কী দিলে তার মনের বিকাশ তাঁর মতে আদর্শভাবে ঘটবে। সেখানে তাঁর নিজের ভালোলাগা মন্দলাগা, পাপবোধ, পূণ্যবোধগুলোই প্রধান সিদ্ধান্তকারী প্রভাবক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছোটোটি কী দিলে আনন্দ পাবে তার চেয়েও তাঁর কাছে, কী দিলে তার (তাঁর নিজের হিসেবে) মঙ্গল হবে বলে তাঁর মনে হয়, সেই চিন্তাটাই বড়ো। এমনকি তার জন্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা এবং কিশোরবয়ষ্করা কী দিলে আনন্দ পাবে সেটা জানলেও তাকে সভয়ে পরিহার করে যাচ্ছেন তিনি।তার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় শিশুকিশোরসাহিত্যে এ যুগের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, ট্যাব ও মোবাইলভিত্তিক খেলা ও জনসংযোগপদ্ধতিগুলির বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারের  তুলনামূলক অপ্রতুলতায়।

অন্যদিকে, বড়ো হয়ে তাকে জগতের আলো আর কালো এই দুটো দিকেই বড়োদের জগতের যে বিভিন্ন আনন্দ ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, সেই ভালোবাসা, হিংস্রতা, আতংক, আহ্লাদ সেইসমস্ত দিকগুলো নিয়ে তাকে সচেতন করে তোলবার প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করা যায় না। অথচ তা করতে গেলেও সমস্যা কম নয়। প্রেমের গপ্পো বলতে গিয়ে তাকে যাও পাখি, কালবেলা পড়ালেও বিপদ। সে বেচারা অনুপমার প্রেম-এর অনুপমা হয়ে উঠে বারো বছরে প্রেমভিক্ষেয় বেরোলে, কিংবা মাধ্যমিকের পর অপরিপক্ক মাথা আর হাতে যথাক্রমে দুষ্টের দমন ইত্যাদির স্বপ্ন আর হাতবোমা তুলে নিতে গেলেও সেটা কাম্য হবে না। অর্থাৎ সমস্যাটা হচ্ছে, ছোটোদের বড়ো করে তুলবার জন্য বড়োদের দুনিয়ার আলো আর কালো দিকগুলো নিয়ে তাকে সচেতন করে তোলাও দরকার আবার যাতে তার তখনো পেকে না ওঠা মাথাটা উপযুক্ত সময়ের খানিক আগেই সে সেই আবর্তে গিয়ে  হাবুডুবু না খেতে শুরু করে সেইটেও নিশ্চিত করবার প্রয়োজন, এবং একই সঙ্গে তার কী ভালোলাগা উচিৎ সেইটে একজন ধেড়েমুণ্ডুর নিজের বিচারে নিষ্পন্ন না করে তার কী ভালো লাগে সেইটে জেনে নিয়ে সেই পথেই তাকে জীবনের সঠিক পাঠটি দেয়া ।

ক্লাসিকাল রূপকথার জগতে সমস্যাটার সমাধান করা হয় একটা বিচিত্র পথে। তাকে বলতে পারি অ্যালিয়েনেশন টেকনিক। ছোটোটিকে বড়োদের জগতটা দেখাও কিন্তু তার ঘটনাস্থলকে সরিয়ে নিয়ে যাও এমন একটা জায়গায় যেটির সঙ্গে সে নিজের পরিপার্শ্বকে মেলাতে পারবে না। রাজপুত্তুর অচিনপুরের রাজকন্যাকে দেখে ভালোবাসার প্রেমে পাগল হন ও তলোয়ারের গুঁতোয় দুষ্টু রাক্ষসের হাত পা মুন্ডু কেটে রক্তগঙ্গা করে শেষে রাজকন্যাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরেন। কিংবা, রন আর হার্মিওনের মধ্যে অনুচ্চকিত প্রেমটি জমে ওঠে এবং সেইসঙ্গে তাদের মরণপণ সংগ্রাম চলতে থাকে অশুভের বিরুদ্ধে। নিষ্ঠুরতা, ভালোবাসা, সবই সেখানে আসে। কিন্তু দুটোই ঘটে চলে একটি কল্পজগতের পটভূমিতে।

পাঠক শিশু/কিশোরটির প্রত্যক্ষ দৈনন্দিন জীবনের পরিপার্শ্বে সেই একই জীবননাট্য ঘটে চললেও, তার অপরিণত বোধ তার সঙ্গে কল্পনার সে দুনিয়ার সরাসরি তুলনা টানতে পারে না। ফলত, একদিকে বড়োদের প্রেম ভালোবাসার ম্যাজিকাল দুনিয়া আর দুষ্টের সমন শিষ্টের পালনের কঠোর কর্তব্যের দুনিয়ার সঙ্গে তার আলাপটাও হয়ে যাবে, অন্যদিকে তেমনই রোজকার জীবনে সেই ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ এই বোধটা মাথায় কাজ করায় সে সে অভিজ্ঞতাগুলোকে সরাসরি তুলনা ও প্রয়োগ করবার জন্য ব্যস্তও হয়ে ওঠে না।

তারপর একদিন, চিন্তাশক্তিটা যখন আরো পরিণত হয়ে উঠবে তার, যখন কল্পনা আর বাস্তবের জগতের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাবার ক্ষমতা আসবে তার মস্তিষ্কের, তখন হয়ত সে কলেজের সঙ্গিনীটির মধ্যে একদিন হঠাৎ করে খুঁজে পাবে অচিনপুরের রাজকন্যাকে বা জাদুকন্যা হার্মিওনকে, সামাজিক অন্যায় দেখলে তার মধ্যে থেকে চিনে নিতে পারবে রূপকথার রাক্ষস বা জাদুকর ভোল্ডেমর্টকে। সে’সময় আর সেই নতুন জগতকে সম্পূর্ণ অপরিচিত ঠেকবে না তার। নিজের কর্তব্য অকর্তব্যটিকেও বুঝে নিতে পারবে তুলনামূলক সহজভাবে।

শিশুকিশোরদের জন্য লেখাগুলোর একটা বড়ো অংশ জুড়ে শরদিন্দু সেই কাজটাই করেছেন নিপুণভাবে, বিশেষ করে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের পরিণততম লগ্নে এসে। সদাশিবের অ্যাডভেঞ্চার সিরিজটাই ধরুন। সেখানে সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবোধ এবং দুই কিশোরকিশোরীর প্রেমের গল্প ও পরিণতি এই সবকিছুই কী অসাধারণ ঋদ্ধ ভঙ্গীতে তুলে ধরা হয়েছে পরপর পাঁচটি লেখায়। শুধু পরিবেশটিকে তুলে নিয়ে সংস্থাপিত করা হয়েছে শিবাজির আমলের মহারাষ্ট্রে। পোশাক, খাদ্য, রণপদ্ধতি--গল্পে ব্যবহৃত এই সমস্ত উপকরণগুলোকেও সযত্নে বাছাই করা হয়েছে দেশ ও কালকে পাঠকের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত, অতএব তার নিরীখে কাল্পনিক একটি দুনিয়ায়।

সদাশিব সিরিজ এবং অন্যান্য ইতিহাসাশ্রয়ী এই রোমান্সগুলোতে আরো যে দুটো দিকে সদাসতর্ক নজর রেখে গিয়েছেন লেখক, সেদুটি হল, নির্মল আনন্দ, অ্যাডভেঞ্চার রস ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা। বাংলার রাজপুত্রের তক্ষশীলা অভিযান, ময়ূরকূটের অপরূপ প্রাকৃতিক বিবরণী, ঝকমকে ফাইট সিকোয়েন্স, এই সবকিছুর দিয়ে চঞ্চল অ্যাডোলেসেন্ট পাঠকের মনকে আবদ্ধ রেখে তাকে জীবনের শিক্ষাটুকু সযত্নে দিয়ে দেবার পাশাপাশি সচেতন করে তোলা হয়েছে তার দেশের বিভিন্ন কালের ইতিহাসের ধারা, তার বিভিন্ন চিরায়ত মানবিক মূল্যবোধের অপরিবর্তনশীলতার মত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতেও। কোন ভাবগম্ভীর লেকচার না দিয়েও অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গীতে দেখানো হয়েছে কীভাবে সদাশিব সেই ভাঙা অন্দিরের গ্রামবালিকার কথাটি সাফল্যের উজ্জ্বল আলোতে বসেও ভুলে না গিয়ে ফিরতি পথে তার জন্য সংগ্রহ করে আনে তার ইচ্ছার উপহার, কীভাবে সুন্দর উপবনে বেড়াতে থাকা ক্ষণপ্রভা আর মেঘবাহনের আলাপচারীর মধ্যেই রাজা এসে জানিয়ে দিয়ে যান, “আমি কিন্তু তোমাদের চেয়েও শতগুণে বেশি ভালোবাসি—আমার এই পাহাড় ভরা কঠিন মাতৃভূমিকে।” মনে করিয়ে দেন, “বলো দেখি, আমাদের জন্মভূমি কি স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী নয়?”(ময়ূরকূট), কীভাবে জমিদারের কাছে চূড়ান্ত অপমানিত বিনু প্রতিশোধস্পৃহাকে ভুলে গিয়ে প্রাণ হাতে করে জমিদারের বাড়িতে ডাকাতি করতে যাওয়া দলটাকে ধরিয়ে দেয় (বিনুর জলপানি), কীভাবে পুতুল নামে ছোট্ট অসুস্থ মেয়েটার মুখে হাসি ফোটাবার জন্য তেরো বছরের নীলু তার সমস্ত ইগোকে হজম করে ফেলে তার সাধের টিকিটি কেটে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে জীবনের প্রথম প্রাপ্তবয়ষ্ক সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলে।

তিনি নিজে কী বলেন?

বিভিন্নভাবে গল্পগুলোকে সময় ও বিষয়ানুগভাবে ভাগ করে তার সঙ্গে তাদের উপাদানগুলোকে তুলনা করে  কিছু অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছোনো গেল। লেখার শেষবেলায় এসে এইবারে পেডান্টিক পাঠক মুচকি হেসে হয়ত বলবেন, এসব কথা শরদিন্দু নিজেও ভাবেন নি হে।

গল্পে আছে সত্যজিতের কোন এক সিনেমায় নাকি শেষদৃশ্যে নায়কনায়িকা দুদিকে হাঁটা আরম্ভ করতেই মাঝখানে থাকা স্ট্রিটল্যাম্পটি নিভে যায়। তার প্রতীকী ব্যঞ্জনা নিয়ে গড়ে ওঠা চায়ের পেয়ালায় তুফানটি নাকি রায়মশাই এই বলে থামিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর ওতে কোন ভূমিকা ছিল না। ওই মুহূর্তে রাস্তার আলোটা লোডশেডিং হয়ে নিভে গিয়েছিল। এ লেখার ক্ষেত্রেও সে প্রশ্ন উঠতেও পারে। অতএব প্রয়োজন হবে লেখক নিজে কীভাবে একে দেখেছেন সেইটে একবার দেখে নেবার।

অমনিবাসের এই খন্ডের ভুমিকায় তাঁর বক্তব্যের একটা অংশ উদ্ধৃত করছি-

“শিশুরা যখন একটু বড়ো হয়ে কৈশোরে পদার্পণ করে তখন আবার তাদের গল্পের চাহিদা বদলে যায়। তখন আর বাঘ ভালুক বুদ্ধু ভুতুম ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর গল্পে মন ভরে না। জীবনের সঙ্গে পরিচয় শুরু হয়েছে, জীবনের অফুরন্ত সম্ভাবনা চোখের দৃষ্টিকে রঙিন করে তুলেছে। তারা চায় অ্যাডভেঞ্চার, বিজ্ঞান-বিচিত্র কাহিনী, নতুনত্বের স্বাদ, রোমান্সের গন্ধ—-- তারপর কৈশোর পেরিয়ে যখন তারা যৌবনে উপনীত হয় তখনও তাদের গল্পের নেশা কাটেনা। কর্মজীবনে শৈশব কৈশোরের গল্পজগতকে তারা বাস্তবকরে তুলতে চায়, গল্প শোনার ভিতর দিয়ে যে আদর্শ অজ্ঞাতসারে মনের মধ্যে গড়ে উঠেছে তাকে মূর্ত করে তোলে--”

এক কথায়, শিশুর একরকম মানসিকতা ও চাহিদা, তারপর কৈশোরে পদার্পণ করবার পর তার মনে আধোঘুম, আধোজাগরণে থাকা হবু প্রাপ্তবয়স্কটির হাতে তুলে দিতে হবে তার চাহিদামতন বড়োদের দুনিয়ার আনন্দবেদনার জগতের একটি প্রতিচ্ছবি, জানিয়ে দিতে হবে সেই দুনিয়ায় তার আদর্শ ও কর্তব্য-অকর্তব্যের একটি রোডম্যাপ।

আর গল্পগুলোর উপাদান আর রচনাশৈলীর মধ্যে দিয়ে সেই কাজটি করবার পদ্ধতিগত গাইডেন্সটিও তিনি দিয়ে গিয়েছেন উত্তরসূরী লেখকপ্রজন্মের হাতে-

ঘটনাস্থল ও পরিপার্শ্বটিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এমন একটি জায়গায় যার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ পরিপার্শ্বের মিল থাকবে কম যাতে সে তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে গল্পে পড়া অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে নিয়ে আধপাকা মাথায় কাজে নেমে পড়তে না উদ্বুদ্ধ হয়, (কদিন আগে সল্ট লেকের সেই ক্লাস নাইনের ছোকরার কুস্তির শো দেখে বাস্তবে সেটাকে করবার জন্য গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলবার কথাটা মনে করুন।) অথচ পরিণত বয়সে যখন সেই অবস্থাগুলিতে সে এসে পড়বে তখন কৈশোরকালের সেইসব গল্পে দেখিয়ে দেয়া দেয়া কর্তব্য-অকর্তব্যের আদর্শগত গাইডলাইনটি তাকে চালিত করে নিয়ে যাবে সঠিক রাস্তায়।

আশায় বাঁচে চাষা

কাজটা সহজ নয়। সে মাপের মাথার একেবারেই অভাব এ সময়ের শিশুকিশোরসাহিত্যের লেখক কুলে। হাজারো পত্রিকায় তাঁদের লেখা আধকাঁচা, মাথামুণ্ডুহীন টেমপ্লেট মান্য করা রহস্য, গোয়েন্দা আর অ্যাডভেঞ্চারের রাবিশগুলো পড়তে পড়তেও মাঝে মাঝে একেকবার এক একটা মৃদু ঝলক দেখে চমকে উঠি। আঁকুপাকু করে লেখকের পরের লেখাটা পড়তে গিয়ে ফের হতাশ হই, আর আশায় আশায় থাকি, একদিন নিশ্চয় কারো কলম থেকে হঠাৎ করেই পেয়ে যাবো পরপর কয়েকটা সেই স্তরের গল্প, যা আমাকে আমার সেই ক্লাস এইটে প্রথম পড়া শরদিন্দুর সদাশিব, বীর্যশুল্কা ময়ূরকূটের রোমান্সকে ফিরিয়ে দেবে।
আর যদ্দিন তা না আসবে তদ্দিন ঐ দু একখানা মৃদু ঝলক বাদে আমাদের হ্যারি পটার, লর্ড অব দা রিং আর এরাগনই ভরসা।

প্রিয় বাংলার শিশুকিশোরসাহিত্যিকগণ, পাঠক অপেক্ষায় আছেন।


লেখক পরিচিতি - জন্ম , বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা উত্তর চব্বিশ-পরগনার নৈহাটির কাছে দেউলপাড়া গ্রামে। রাজ্য ও তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল  সার্ভিস কর্মসূত্রে দেশের নানান জায়গায় বাস ও প্রবাস। বর্তমানে সরকারী কাজ ছেড়ে ইন্টারনেটের কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কর প্রশাসণের আইনকানুনের সরকারী মাস্টারগিরিতে যুক্ত। তারই মধ্যে চলে বেড়ানো আর ছোটদের জন্য দুটো ওয়েব পত্রিকা পরিচালনা। বাংলাভাষার ওয়েবম্যাগ, কাগুজে পত্রিকা আর চিরায়ত সাহিত্যকে ইন্টারনেটের সাহায্যে পাঠকের কাছে পৌঁছোবার জন্য পদক্ষেপ নামে একটা লিংক পোর্টাল পরিচালনা। অসমের বাংলা কাগজে লিখে লিখেই বাংলা লেখায় হাতেখড়ি। তারপর থেকে পরবাস, সৃষ্টি, শুকতারা, দেশ, আনন্দবাজার, সন্দেশ এইরকম নানান পত্রপত্রিকায় লেখা চলছে। বেশ কয়েকটা বই প্রকাশিত হয়েছে সুচেতনা, আনন্দ আর সৃষ্টিসুখ থেকে। ভারতীয় গুহাচিত্র আর উত্তরপূর্ব ভারতের অর্থনীতির ওপরে গুটিকয় গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে কমনওয়েলথ প্রকাশন ও “হেরিটেজ” নামের ভারতত্ত্বের গবেষণা পত্রিকায়।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।