শরদিন্দু সংখ্যা
অবসর (বিশেষ) সংখ্যা , এপ্রিল ৩০, ২০১৫
রোমাঞ্চময় ঝিন্দ
ডঃ সোমা মুখোপাধ্যায়
৫০-শের দশকে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক জুটির মোহমায়ায় যখন সারা বাংলা ভেসে যাচ্ছে সেই সময় হঠাৎ অন্য এক রোমাঞ্চের দিক উন্মোচিত হলো। এলেন তপন সিনহা। ৬০-এর দশকের শুরুতে নিয়ে এলেন বাংলা সিনেমায় এক অন্য দিক। বাঙালী দর্শকের মনে নতুন উত্তেজনা ও স্বপ্নালু আবেশ ছড়ালো তপন সিনহার পরিচালনায় প্রথমে “ক্ষুধিত পাষাণ” এবং তারপর “ঝিন্দের বন্দী”। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর “ঝিন্দের বন্দী” সিনেমা আকারে আবির্ভূত হলো আমার জন্মের ঠিক কয়েকদিন আগে। কাজেই যাকে কথায় বলে সঙ্গে নিয়ে বেড়ে ওঠা- রামায়ণ, মহাভারত, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখের সাথে জ্ঞান হওয়া থেকে জড়িয়ে যেতে লাগলো ‘পথে হলো দেরী’, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ‘ঝিন্দের বন্দী’ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মামারবাড়িতে পারিবারিক সূত্রের বন্ধুত্বের খাতিরে উত্তমকুমার ও তরুণকুমার কে ঘরোয়া পরিবেশে জানার ফলে উত্তম-সুচিত্রার আকর্ষণ ছেড়ে ছোটবেলার রোমাঞ্চিত আকর্ষণ অনেক বেশি করে তৈরী হলো ঝিন্দের বন্দীর প্রতি। ছোটবেলায় ঐসব সিনেমা দেখার কোনো প্রশ্নই নেই, এমনকি শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর উপন্যাস হাতে পাওয়া ও পড়ারও উপায় নেই। কাজেই বড়দের ছেঁড়া ছেঁড়া আলোচনা থেকে নিজের মনে সাজিয়ে নিয়ে কিশোরী মনের মাধুরী দিয়ে তৈরী হতে লাগলো সেই পর্বত মাঝে ঝিন্দের রাজত্ব, ময়ূরবাহন, উদিতনারায়ণ, দেওয়ানজী, শংকরসিং ও কস্তুরীবাইয়ের জগত ঘিরে নিজের কল্পনার জগত। উত্তমকুমার, সৌমিত্র ও অরুন্ধতীদেবী- সবার সৌন্দর্য়েই দর্শক-রা মুগ্ধ, কাজেই কল্পনার রূপকথার জগত আরও সুন্দর অথচ রহস্য পূর্ণ হতে থাকে। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় তাঁর-ও জন্মের আগের বই "Prisoner of Zenda" কে নিয়ে লিখলেন রহস্যময় ও আবেগ-আপ্লুত বই "ঝিন্দের বন্দী" এবং তাকে এত সুন্দর করে চলচ্চিত্রে রূপ দিলেন তপন সিনহা, যে প্রত্যেকটি সৃষ্টি যেন একে অন্যকে ছাপিয়ে যেতে লাগলো, যা ধারণা পেলাম। মনে মনে আগ্রহ বাড়তে লাগলো ওই সিনেমা দেখার, নিদেন পক্ষে বই-টি পড়ার। তৎকালীন দুই বাঘা অভিনেতা উত্তম ও সৌমিত্র একই সাথে, উত্তম কুমার-এর দ্বৈত ভূমিকা, খলনায়কের ভূমিকায় সৌমিত্র, সব মিলিয়ে এক দুর্দমনীয় আকর্ষণ ঝিন্দের বন্দী এবং তাই সিনেমাটি দেখার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা বাড়তেই লাগলো বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে; যদিও আশা ক্ষীণ ।
এর পরে সত্তর দশকের গোড়ায় এলো “শজারুর কাঁটা”। যেহেতু ডিটেকটিভ সিনেমা, ছোট হলেও বাড়ি থেকে দেখার অনুমতি মিললো ও দেখাও হলো। গা-ছমছমে ভাব নিয়ে পাড়ার সিনেমা হল থেকে বাড়িশুদ্ধু সবাই এবং পাড়া-প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় গোটা পঁচিশজন বাংলার শার্লক হোমস ওরফে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে আলোচনা ও তুলনা করতে করতে নাইট শো থেকে ফেরা হলো। তখন একটা নতুন জিনিস লক্ষ করলাম মনের মধ্যে। “ঝিন্দের বন্দী”র প্রতি মোহময় রোমাঞ্চ তখনো আছে কিন্তু লেখকের দিকে এতদিন নজর পড়েনি। এতদিন স্রষ্টার থেকে সৃষ্টির প্রতি আকর্ষণ-ই গড়ে উঠেছিল বেশি। এবারে “শজারুর কাঁটা” দেখার পর যখন গায়ে কাঁটা দিতে শুরু করলো তখন নজর পড়ল রহস্য গল্পের স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর ওপর এবং সেই সঙ্গে তার সৃষ্ট চরিত্র সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ ও তার সাথী ও সহকারী অজিতের দিকে। “শজারুর কাঁটা”র আগে অবশ্য মুক্তি পায় শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর ব্যোমকেশকে নিয়ে প্রথম সিনেমা “চিড়িয়াখানা”; কিন্তু মনে পড়ে সত্যজিত রায় ও উত্তম কুমার-এর জাপানী ফটোগ্রাফারের ভূমিকায় অভিনয় নিয়েই বেশি উত্তেজনা ছিল দর্শকদের মধ্যে এবং বড়দের বই বলে সেটা দেখার অনুমতি মেলেনি। কাজেই শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় ও ব্যোমকেশ বক্সী নজর কাড়লেন শজারুর কাঁটার খোঁচায়। তখন-ও বই হাতে আসেনি কিন্তু একটা কল্পনা মনের মধ্যে গড়ে উঠলো; ভাবলেই আজও মজা লাগে। আমার সেজমামার নাম ছিল “শরবিন্দু” এবং তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন “অজিত”। আমার সেজমামার বড় সুন্দর দীপ্তিময় চেহারা; মাঝে মাঝেই কাউকে না বলে উধাও হয়ে যেতেন কিছুদিনের জন্য । আমার মামারবাড়ি ‘রায়’ হলেও সেটা উপাধি, পদবী অনুযায়ী বন্দোপাধ্যায়; কাজেই ছোটবেলায় দৃঢ় ধারণা ছিল আমার মামাই একটু বদলে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় বলে লেখেন ও তিনি নিজে ব্যোমকেশ এবং তার বাল্যবয়েসের অভিন্নহৃদয় সুহৃদটি অজিত নামেই একই ভাবেই রহস্য উপন্যাসেও তার সাথী হয়ে রয়েছেন। আমি ছোটবেলা থেকে বই ও বই পড়ার পরিবেশে বড় হয়েছি এবং নিজের খুব ছোট থেকে গল্পের বই পড়ার নেশা ছিল তাই জন্মদিন বা পূজোতে বই না পেলে উপহার পাবার আনন্দটা কিছুটা মলিন হয়ে যেত। কিন্তু ইচ্ছেমত সব বই-ই যে হাতে পাওয়া যেত পড়ার জন্য তা নয়, ব্যোমকেশের গল্প তার মধ্যে অন্যতম। অনেক কায়দা করে আমি ও আমারই মত (কিম্বা বেশি) গল্পের বই পাগল এক বন্ধু মিলে অনেক কষ্টে একটু বাঁকা পথে ক্লাস এইট-এ যোগাড় করে ফেলতে পারলাম গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর বই (কিভাবে সেই বিশদবিবরণে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে এখানে)। অল্প সময়ের মধ্যে গোগ্রাসে পড়ে ফেললাম প্রায় সব গোয়েন্দা গল্প। অবাক হলাম শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় তাঁর নিজের বইতেই ( আদিম রিপু) আবার উল্লেখ করেছেন Prisoner of Zenda-র কথা । মামা ‘শরবিন্দু’ যে ‘শরদিন্দু’ নন সে কথা পরিষ্কার ততদিনে। কিন্তু পেলাম না ঝিন্দের বন্দী পড়ার অবকাশ; সিনেমাও দেখা হয় নি তখনও। তারপর বহুদিন এইসব ইচ্ছেগুলো চাপাই ছিল মনের মধ্যে ।
বহুবছর বাদে এক অদ্ভুত যোগাযোগ ! আমার বই পড়ার আগ্রহের নেপথ্যে মূলতঃ আমার বাবা-র অবদান-ই প্রধান। আমাদের পরীক্ষার পর কলকাতা ইউনিভার্সিটি-র দৌলতে যখন প্রায় বছর খানেক অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফলাফলের জন্য, তখন সল্ট লেকে পাড়ায় একটি নতুন সরকারি লাইব্রেরী-তে কাজ করার সুযোগ পেলাম বেশ কয়েক মাস স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। বাবা-ই সন্ধান ও উৎসাহ দিয়েছিলেন এই কাজে। এ যে কি বড় পাওনা ছিল জীবনে; এত বই-এর মধ্যে কাজ করছি বই নিয়ে! আমার কাজের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ লাইব্রেরীতে আমার পছন্দসই ১০০-টি বই কেনা হয়েছিল, সেটাই ছিল অমূল্য উপহার। এর মধ্যে ছিল শরদিন্দু রচনা সমগ্র। তখন সব বইগুলোই সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে পড়তে পেরেছিলাম। রহস্য গল্পের মধ্যে “শজারুর কাঁটা”, “পথের কাঁটা” ও “মাকড়সার রস” নিয়ে মাঝে মাঝেই ভাবতাম আরো বেশী, কারণ সেগুলো আমার পড়ার দিক দিয়ে প্রাণীতত্ত্ব ও শারীরতত্ত্বের আঙ্গিকে। “শজারুর কাঁটায়” অস্ত্র ছোরা-ছুরির বদলে শজারুর কাঁটা, “পথের কাঁটা”য় সেই কাঁটা ছুঁড়েই হত্যা কিন্তু সাইকেলের বেলের মাধ্যমে গুলতির মত ছোঁড়া হচ্ছে হৃৎপিণ্ড লক্ষ করে আর বিষাক্ত “মাকড়সার রস”-এ নেশাগ্রস্ত নন্দদুলাল দত্ত বাবু। সবেতেই মানুষ-প্রাণী মিলে মিশে গেছে রহস্যের ফাঁদে। বাঁ-দিকের বদলে ডান দিক ঘেঁষা হৃৎপিণ্ডর বিরল নজির চিকিৎসা শাস্ত্রে থাকলেও অন্য ঘটনাগুলোর বাস্তব যৌক্তিকতা প্রশ্নসাপেক্ষ- এসব ভাবনা থাকলেও ঝিন্দের আকর্ষণ সেই একই আছে দেখে নিজেই অবাক হতাম ।
এর পরে আবার ঘটল আর এক উত্তেজনাকর ঘটনা। বই পড়তে ভালোবাসলেও শুধু বই-এ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার পাত্রী ছিলাম না কোনদিন, গান-কবিতা-নাটক ইত্যাদিতে আকর্ষণ-ও দুর্বার । সেবছর পূজোতে যে নাটক ঠিক হলো তা শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-এর ঝিন্দের বন্দীর ছায়াবলম্বনে শৈলেশ গুহনিয়োগীর লেখা নাটক “আজকের ঝিন্দের বন্দী”। আমাদের পাড়ার নাটক-এর নাম বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশে। সেবছর বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হলেন মনোজ মিত্র আর আমি সেই নাটকের মুখ্য নায়িকার ভূমিকায়। কি আশ্চর্য় ! সেই কল্পনার ঝিন্দে আজ আমি এক কুশীলব!! অবশ্য “আজকের ঝিন্দের বন্দী” বলে নায়িকার নাম ছিল ‘কস্তুরীবাই’ নয় ‘দুলারী’; আর যাকে দেওয়ানজী নিয়ে গেলেন রাজা শংকর সিংহের বদলি হিসেবে তার নাম পেটো-পাঁচু এবং এই নাটকে পেটো-পাঁচুর সাথে দুলারী চলেই এলো ঝিন্দ ছেড়ে কলকাতায়। বেশ জমাটি নাটক; ভালই হয়েছিল কারণ পেয়েছিলাম হাজার খানেক দর্শকের হাততালি ও মনোজ মিত্রের প্রশংসা।
শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় এর বিভিন্ন গল্প নাটক-এর সাথে এমন যোগাযোগ ঘটে গেছিল যে ভাবলেই আশর্য লাগে। ওনার লেখা ঐতিহাসিক গল্পের মধ্যে বেশি টানত “তুঙ্গভদ্রার তীরে” এবং তার থেকেও বেশী “চুয়া-চন্দন” । আমার পৈতৃক সূত্রে দেশ যশোর হলেও ঠাকুরদাদা বাড়ি করেছিলেন নবদ্বীপ-এ। নবদ্বীপ শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেবের জন্মভূমি, বৈষ্ণবদের তীর্থস্থান; সেখানে গঙ্গায় আমরাও চান করেছি। সেই গঙ্গায় রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে "চুয়া-চন্দনে" আবার বৈষ্ণবপীঠস্থানে শরদিন্দু দেখিয়েছেন শক্তিশালী শাক্তদের প্রভাব। ধন্দ লাগলেও বারবার দেখেছি উনি উল্লেখ করে গেছেন যে গল্পের চরিত্র কাল্পনিক থাকলেও ইতিহাসকে তিনি বিকৃত করেন নি। প্রত্যেকটির জন্য অনেক পড়াশুনা করে তবে লিখেছেন ঐতিহাসিক উপন্যাস বা গল্প, যেমনটি পরবর্তীকালে করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “সেই সময়” ও অনান্য উপন্যাসে।
দিন বদলের পালায় স্বদেশ ছেড়ে বিদেশবাসী হলাম। মাঝে মাঝে নিজের মনকে নেড়েচেড়ে দেখতাম ঝিন্দের রোমাঞ্চ একই আছে। যখন সুযোগ এলো প্রথমেই দুটো ভিডিও ক্যাসেট কিনলাম "ঝিন্দের বন্দী" ও "নিশি-পদ্ম"। অবশেষে সেই রোমাঞ্চময়, কল্পনাময় ঝিন্দ নিজের বাড়িতে রুপোলী পর্দায় ফুটে উঠলো। সিনেমা, গল্প, অভিনেতা, সঙ্গীত সম্বন্ধে যা যা শুনেছিলাম দেখলাম সব সত্যি, একটুও অতিরঞ্জিত নয়।
২০১০-এ ব্যোমকেশ বক্সিকে নিয়ে অঞ্জন দত্তের সিনেমা হল। তার আগে ৯০ এর দশকে বাসু চ্যাটার্জির টিভি সিরিয়ালও হয়েছিল; কিন্তু দেশে না থাকায় সেগুলো কোনটাই দেখার সুযোগ হয় নি। আজকাল ইউ-টিউব এর কল্যাণে অনেক কিছুই সহজলভ্য তবুও এই সব সিরিয়াল এর থেকেও আমার কাছে অনেক বেশি রোমাঞ্চময় হয়েই রয়ে গেছে সেই পঞ্চাশ বছরের আগে তৈরী “ঝিন্দের বন্দী”।
আর একটা মজার ঘটনা, শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় এর উদ্ভাবিত “শজারুর কাঁটা” ও "মাকড়সার রস” এর কাহিনী আমাকে আমার বর্তমান অধ্যাপনার পেশায় এনে দিয়েছে এক নতুনত্বের ছোঁয়া। "শজারুর কাঁটা"য় প্রবাল অব্যর্থ নিশানায় হৃৎপিন্ডে শজারুর কাঁটা (যা ছোরা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে) বিদ্ধ করলেও দেবাশিস বেঁচে যায়, কারণ স্বাভাবিক মানুষের হৃৎপিন্ড থাকে বাঁ দিক ঘেষে আর দেবাশিসের ছিল ডান দিকে ঘেঁষা হৃৎপিন্ড। এই ঘটনা লেখক শরদিন্দুর সম্পূর্ণ মনগড়া নয়। ডান দিকে ঘেঁষা হৃৎপিন্ড-কে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় ডেক্সট্রোকার্ডিয়া (Dextrocardia) যা প্রায় কোটিতে একটা দেখা যায় । আমাদের শরীরে ভ্রুণ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিভাবে তৈরী হবে তা ঠিক করে কিছু জিন (Homeo-box gene), তাদের কাজে গন্ডগোল হলে এরকম ধরণের অস্বাভাবিকত্ব দেখা যেতে পারে। অন্য গল্প "মাকড়সার রস"-এ দত্ত বাবু নেশা করতেন অতি সামান্য পরিমাণে মাকড়সার রস পান করে। একসময়ে স্পেন ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা ওখানে পাওয়া অতি বিষধর মাকড়সা 'টারানটুলা'-র রস পান করত শারীরিক উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য। সাংঘাতিক বিষ খুব সামান্য পরিমাণে শরীরে ঢোকানো গেলে সাময়িক উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। তাই গল্পেও দেখানো হয়েছে অনেক টাকা দিয়ে উত্তেজনাবর্ধক মাকড়সার রস আনাতেন নন্দদুলাল দত্ত । আমাদের মস্তিস্কের স্নায়ুকোষ-এর খবরাখবর আদান-প্রদানের স্বাভাবিক কাজের ধরণ-ই ইলেকট্রিক স্পার্ক -এর মত (nerve impulse)। কিন্তু যখন সেই সব কোষ এলোমেলো ভাবে উদ্দীপিত হয় তখন বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা যায়, এপিলেপ্সী (Epilepsy) যার মধ্যে অন্যতম। শারীরবিদ্যা এবং মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞানে স্নায়ুকোষকে উদ্দীপিত করে কিছুটা নেশাগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে দিয়ে এপিলেপ্সী বা অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য এই টারানটুলার বিষ নিয়ে গবেষণা চলছ। কাজেই এইসব জটিল শারীরতত্ত্ব-র উদাহরণ আমার ক্লাসে ডাক্তারি ও আনুষঙ্গিক শারীরিক বিষয়ে পঠনরত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গল্পের ছলে বুঝিয়ে দিতে খুব সুবিধে হয়। সেইসঙ্গে একঘেঁয়ে বক্তৃতার মাঝে গল্পগুলো নিয়ে আসে কিছু বৈচিত্র্য। শুধু সেই অংশগুলো বাদ দিয়ে রাখি, যে পেনের লালকালি অনেক বেশি বিষাক্ত এবং শজারুর কাঁটা মারণাস্ত্র হতে পারে। তবুও যখনি দেখি ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহ করে শুনছে শার্লক হোমস নয়, আমাদের বাংলার গোয়েন্দা গল্পের লেখকের কথা ও তাঁর কাহিনী, তখন মনে মনে আবার রোমাঞ্চিত হই শ্রদ্ধেয় শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়-কে নিয়ে ।
লেখক পরিচিতি - লেখক পরিচিতি- কলকাতার ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি থেকে ডক্টরেট করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটিতে পোস্টডক্টরাল রিসার্চ করেন। বিগত আঠারো বছর ধরে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি, ও সিনসিনাটির বিভিন্ন কলেজে হিউম্যান অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি নিয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে জর্জিয়া রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনাতে যুক্ত। সঙ্গীতে ডিগ্রি ও মাস কম্যুনিকেশনে ডিপ্লোমার অধিকারী। স্কুল জীবন থেকেই পড়াশোনার সঙ্গে নাটক, আবৃত্তি, ফোটোগ্রাফিতে উৎসাহী। মঞ্চে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। মিড আমেরিকা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের 'মাতৃকা' পত্রিকার সম্পাদিকা।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।