সমাজ ও সংস্কৃতি
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭
প্রবাসী বাঙালির বাংলা
আইভি চট্টোপাধ্যায়
বাংলা ও বাঙালির জাত্যাভিমান প্রসঙ্গে প্রথমে একটু ব্যক্তিগত
কথা। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার বাংলাকে দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক
ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। ২০০০ সালের ১৫ই নভেম্বর বিহার থেকে আলাদা
করে ঝাড়খণ্ড নতুন রাজ্য ঘোষণার পর থেকেই বাংলাকে দ্বিতীয় রাজভাষা
করার দাবি ওঠে। মাতৃভাষা প্রসারের উদ্যোগে যখন বাংলা আরো এগারোটি
ভাষার সঙ্গে দ্বিতীয় রাজভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেল, সে যে কী আনন্দের
ক্ষণ! আমরা ঝাড়খণ্ডবাসী বাঙালিমাত্রেই সে আনন্দ অনুভব করেছি ।
কারণ আমরা জানি, ভাষা তথা মাতৃভাষা ভাব-বিনিময়, ভাবনা বিনিময়ের
সহজতম উপায়। এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী হয়তো বলবেন উৎপাদন সম্পর্কের
কথা, আমি এর সঙ্গে যোগ করতে চাই শিক্ষাসহ জীবন ও জীবিকার সঙ্গে,
কাজের সঙ্গে ভাষার সম্পর্কের কথা। একটি জাতির গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায়
গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলেই একটি জাতির মাতৃভাষা জাতীয়ভাষা(রাজভাষা)
হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
যে কোনো ভাষা আন্দোলন জাত্যাভিমান ও স্বাতন্ত্র্যবোধকে নাড়া
দেয়। স্বাধিকার অর্জনের স্পৃহাও জেগে ওঠে। খুব সামান্য দাবি নিয়ে,
ঝাড়খণ্ডে বাংলা ভাষায় পর্যাপ্ত বই সরবরাহ এবং শিক্ষক নিয়োগের
জন্য আন্দোলন শুরু। বাংলা নিয়ে টানাপোড়েনে ঝাড়খণ্ডবাসী হিসেবে
বাঙালি ও ভিনজাতিদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কতখানি তীব্র হয়েছিল,
সে অভিজ্ঞতা হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, ভাষার জন্যে আবেগে সামান্য
হলেও বিদ্বেষের বীজ বপন হয়েছে। অবশ্য বিদ্বেষের বীজ অঙ্কুরিত
না হলে হয়ত বাঙালির এথনিক আইডেন্টিটি এমন প্রবল হয়েও উঠত না।
ঝাড়খণ্ড ঘন বন ও খনিজ সম্পদের জন্য বিখ্যাত, আদিবাসী কিংবা মাওবাদী
নিয়ে কৌতূহল থাকলেও পাশের রাজ্যের বাঙালিদের ঝাড়খণ্ডে বাঙালির
ভাষার আবেগ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। যখন উত্তরের বিভিন্ন
রাজ্য থেকে বাংলা-ভাষার দাবি নস্যাত করার জোরালো চাপ, পাশের রাজ্য
থেকে সামান্য সহযোগিতা পেলে যে কী ভালই না হত!
বিশ্বায়নের দাপটে ওলোটপালোট হয়েছে ব্যক্তিগত কত আবেগ, হৃদয়বৃত্তি,
জীবন-বোধের দর্শন, নৈতিক মাপদণ্ড। এসময় মাতৃভাষা নিয়ে আবেগ, আন্দোলন
কতখানি যুক্তিযুক্ত সে নিয়ে অ-বঙ্গভাষী মানুষজন বারবার তর্ক তুলেছেন।
হ্যাঁ, ভাবনা আসে বৈকি। কাজকর্মের সঙ্গে যোগ নেই, আমাদের রাজ্যে
বাংলা-মাধ্যম শিক্ষা প্রায় নেই বললেই চলে, তাহলে এই বঙ্গভাষা-আন্দোলনের
প্রযোজন কি? এখানের বহু বঙ্গভাষীও এই আন্দোলন নিয়ে নির্লিপ্ত।
তাহলে?
ভাবনার এই দোলাচলের সময়ই পড়ে ফেললাম একটি আফ্রিকান কবিতার অনুবাদ।
কবিতার নাম Soweto.. কবিতার সূচনায় নৃশংস এক ঘটনার কথা। ট্রান্সভালের
এক শহর সোয়েটো, সেখানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সাদা বোয়ারদের ‘আফ্রিকান্স’
ভাষা চাপিয়ে দেবার সরকারি নির্যাতন চলছিল। তারপর ১৯৭৬ সালের ১৬
জুনের ঘটনা। অন্য কারো ভাষা নয়, মাতৃভাষায় শিখতে চাই.. এই দাবি
নিয়ে স্কুলের ইউনিফর্মে অল্পবয়সীদের এক মিছিল সেদিন। বারো বছরের
এক মেয়েকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ।
কবিতা শুরু হযেছে মৃত সেই মেয়েটির অশ্রুত অদৃশ্য সংলাপ দিয়ে:
‘আমি কোথায়? কেন আমি শুয়ে আছি এই ধুলোয়?’
কথার পর কথার মালায় গড়ে উঠছে তার বারো বছরের আটপৌরে যাপনের ছবি,
তাদের সমবেত প্রতিবাদের কথা। কবিতার শেষে
‘মেয়েটির আর্তধ্বনির
মধ্যে Soweto শব্দটা ভেঙে ভেঙে যায় So-we-to.. So-we, আর অসমাপ্ত
ওই ‘we’ ধ্বনিতে শেষ হয়ে যায় নিবিড় এই কবিতা।’ (সৌজন্যে শ্রী শঙ্খ
ঘোষ)
নতুন করে অনুভব করি, সবদেশে সবকালে একই আবেগ নিয়ে মাতৃভাষার জন্যে
আন্দোলনের গভীর সত্য। একই ধাঁচে পীড়নও যেমন সত্যি।
১৯৫২ সালের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান, আর সালাম-বরকত-রফিক-সইফুদ্দিনের
মতো অসংখ্য ছাত্রের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষা নিয়ে
উন্মাদনায় রক্তাপ্লুত এই গৌরবময় ঘটনায় বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি
যে আমরাও। এ আমাদের গভীর জাত্যাভিমান।
২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ১৮৮টি দেশের ‘মাতৃভাষা
দিবস’ হয়ে উঠেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ (ইউনেস্কো) একুশে
ফেব্রুয়ারীকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আজ কেবল শহীদ দিবস নয়, একটি জাতির আবেগকে চিনে
নেবার দিন।
কী উত্তেজনা সে সময়! এপার বাংলাতেও প্রকাশ্য জনসভায় তারাশঙ্কর
বন্দোপাধ্যায়-মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বাংলা ভাষার
অধিকারের জন্যে দাবি করছেন সাজ্জাদ জহির-কায়ফি আজমি-রাহুল সংকৃত্যায়ন।
প্রতিবাদের কবিতা লিখছেন অমিয় চক্রবর্তী-সমর সেন-সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
আর এই সব নানা উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছেন কিশোর কবি
সুকান্ত ভট্টাচার্য। বিভূতিভূষণ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুবোধ ঘোষ,
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, নবেন্দু ঘোষের অসামান্য হৃদয়স্পর্শী বাংলা
গদ্য.. আই-পি-টি-এ, গণনাট্য সঙ্ঘ.. শম্ভু মিত্রের আবৃত্তি, নাটক..
বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটক.. সতীনাথ ভাদুড়ির সাড়া জাগানো
উপন্যাস ‘জাগরী’। অসংখ্য অসাধারণ লেখা। কত নামই যে করা যায়! বাংলাভাষা
সাহিত্য, গান, নাটকে নবরূপে জাগরিত।
এই দশকেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ শম্ভু মিত্রের হাত ধরে নতুন
করে মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে। সত্যজিত্ রায়ের হাত ধরে বিভুতিভূষণের
‘পথের পাঁচালী’ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেল। অরুণকুমার সরকার, নরেশ
গুহদের স্লোগান ‘আরো কবিতা পড়ুন’.. বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকা,
জীবনানন্দের কবিতা, সঞ্জয় ভট্টাচার্যের ‘পূর্বাশা’.. অচিন্ত্যকুমার
সেনগুপ্ত, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সন্তোষকুমার ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্র
নন্দীর উপন্যাস.. নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অরবিন্দ গুহর কবিতা।
‘কল্লোল’ হয়ে উঠল একটা যুগের প্রতীক। বাংলা সাহিত্যের যুগ।
যখন দেখি, বাংলা ভাষাচর্চার মধ্যেও একরকম তীব্রতা রয়েই গেছে,
সুদূর পরবাসী বাঙালি বাংলা-সাহিত্য চর্চাকে জীবনের অঙ্গ করে রেখেছেন,
মন ভরে থাকে। ওপারে ভাষা-আন্দোলন যে গৌরবময় ধারাবাহিকতার জন্ম
দিয়েছিল, তা অব্যাহত আছে অনেকটাই। বাংলা লিখনপ্রণালী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা,
ভাষার প্রয়োগ, বানান নিয়ে, ছন্দ নিয়ে নানা গবেষণা চলছেই। বড় প্রকাশনার
পাশাপাশি অনেক লিটল ম্যাগাজিন বাংলা ভাষাচর্চার ধারা বজায় রেখেছে।
ইন্টারনেটে চলছে বেশ অনেকগুলো বাংলা পত্রিকা। বহু বিদেশি বাংলা
ভাষাকে ভালোবেসে কাজ করে চলেছেন.. শিকাগোর ডিমক ও ক্লিন্টন সিলি,
জাপানে কাজুও আজুমা, জার্মানির মার্টিন কেম্পশেন, লন্ডনে উইলিয়াম
রাদিচে। এই খবরগুলো জেনে ভরসা হয়। আমাদের প্রাণের ভাষা, ‘আ মরি
বাংলা ভাষা’, যার জন্যে কত প্রাণের বলিদান, এই ভাষা চর্চার ধারা
অব্যাহত থাকুক। এই আশাটুকুই আমাদের ভরসা। এই প্রাণের ভাষার প্রতি
বাঙালির ভালোবাসা আর আবেগ তো মিথ্যে নয়!
এমনিতে আজকের সমাজে যে কারণে নিজের ভাষার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়,
সে পরিবেশ নেই। বহির্বঙ্গে সব স্কুলে বাংলা পড়ানোই হয় না। ইংরেজি
মাধ্যম স্কুলগুলোয় হোমওয়ার্ক-প্রাইভেট টিউশনের চাপ। ভালোবেসে গল্প
কবিতা পড়ার সময় নেই। যেটুকু বাকি সময়, গ্রাস করে নিচ্ছে টেলিভিশন,
কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সেলফোন। সাহিত্যপাঠের সময় কই! খুব চাপাচাপি
করলে হ্যারি পটার কিংবা চেতন ভগত পর্যন্ত পড়ানো যেতে পারে। বাংলা
বইয়ের সে সৌভাগ্য হয় না। বঙ্কিম, শরত্, রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর,
বিভূতিভূষণ, মানিক, জীবনানন্দ, সবাই ব্রাত্য। বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব..
আজকের প্রজন্ম তাঁদের সঙ্গে আদৌ পরিচিত কিনা কে জানে । সুকান্ত,
নজরুল, সুভাষ মুখোপাধ্যায়.. আজকের যুব মানসলোকে এঁদের প্রবেশের
সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। আজকের অনেক শিশুই লীলা মজুমদারকে চেনে না।
তবে আজকাল সব শ্রেণীর লেখক ও পাঠককে সাদরে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে
ইন্টারনেট বেশ ভূমিকা নিচ্ছে। নানা বাংলা পত্রিকা, নতুন কবি লেখকের
সঙ্গেই পুরোনোদের লেখা নতুন করে প্রকাশ করার কাজটি ইন্টারনেটে
দেখা যাচ্ছে। লক্ষণ ভালো, শেষ পর্যন্ত বাংলা পাঠের অভ্যেস কেমন
তৈরি হয় দেখা যাক।
বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের
বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশশতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার
ও বহু কৃতী মনীষীর আবির্ভাবকে। রাজা রামমোহন রায়ের সময় এই নবজাগরণের
শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়ে, যদিও
এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের
বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক। ঊনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার,
ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম ও বিজ্ঞানের
পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার।
আজকের বাংলা ভাষার সাবলীল গতি অনেক দিনের সাধনার ফসল। লিখনরীতি
ও কথনরীতির কমনীয় সমন্বয় বাঙলাকে সাবলীল করেছিল। দীর্ঘ সমাসবহুল
বাক্য একদিন ছোট ছোট বাক্যে ভাঙা শুরু হল। শুরু হল ছেদচিহ্ন ব্যবহার
করে অর্থময় বাক্যাংশ তৈরী হওয়া, তারপর শ্বাস-অনুযায়ী ও অর্থ-অনুযায়ী
বাক্যাংশ সেজে ওঠা। ক্রিয়ারূপ ও শব্দের সরলীকরণ। এসেছে ধ্বনি সামঞ্জস্য,
শালীন অনুপ্রাস, তত্সম শব্দের সঙ্গে তদ্ভব ও দেশি শব্দের সুষম
মিশ্রণে এক কমনীয় সমন্বয়। দিনে দিনে দেশজ ছন্দকে আয়ত্ত করেছে বাংলা
ভাষা।
বাংলাচর্চায় আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল, এই ভাষার স্বাবলম্বন।
সাহস, নিষ্ঠা, সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা আজকের
বাংলা ভাষার পথ-চলা নির্দিষ্ট করেছে। বাংলা সাহিত্য যেন নিজের
অন্তরের তাগিদেই চলতে শুরু করেছে। প্রথম যুগের প্রাথমিক পরিকল্পনা
অতিক্রম করে নিজে নিজেই বেড়ে উঠেছে। বাংলা ভাষায় নানা দেশজ শব্দ,
নানা আঞ্চলিক শব্দের অনুপ্রবেশ হয়েছে সচেতনভাবে, এবং তা ভাষার
উত্কর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। শব্দের মধ্যে, ধ্বনির মধ্যে,
উপমার মধ্যে, অলঙ্কারের মধ্যে স্বকীয় একটা রস। মাধুর্য। এই আমাদের
বাংলা ভাষা।
দিনে দিনে বাংলা রচনার উত্কর্ষ ও রচনার মান আমাদের অবাক করেছে,
শিক্ষিত করেছে। পত্রিকাগুলো সুন্দর সৃষ্টির ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে।
গুণগত মানে বাংলা সাহিত্যে বহু উচ্চাঙ্গের রচনা আছে, যা নোবেল
পুরস্কার পাবার যোগ্য।
কিন্তু দু:খের কথা এই যে, বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্য জায়গা করে
নিতে পারেনি।
যদিও প্রবাসী পরবাসী অনাবাসী লেখক ও পাঠকের চাহিদায় আজকের বাংলা
গল্প-কবিতায়, ভাষায় ও ভাবে এক বিশ্বজনীন ছবি। খাঁটি বাংলা শব্দের
ব্যবহারই নয় শুধু, বদলে যাওয়া কলকাতার ভাষা সেসব গদ্যে-কাব্যে
অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে। ইঙ্গ-বঙ্গ বা মার্কিন-বঙ্গ ভাষা ও দ্বৈত
সত্তায় আজকের বাংলা সাহিত্য বেশ স্মার্ট, ঝকঝকে। এই আটপৌরে ভাবটি
কাম্য।
তবু একটা ভাবনা আসে। রুচি ও রসজ্ঞান; এই দুটো প্রায়ই একসঙ্গে অবস্থান
করে না। আর্টতন্ত্রের রসজ্ঞানশাসিত রুচি বাংলা সাহিত্যকে নিয়ন্ত্রণ
যেন না করে, এই আমাদের কাম্য। ভাবকে ভাষায় রূপ দেওয়াই শুধু নয়,
সাহিত্যে জীবনের অর্থ বোঝানোর একটা তাগিদ থাকা উচিত।
সহজাত স্নেহশীলতা, আর জীবনের মধ্যে চিরশিশুর উপলব্ধি। এই হল সাহিত্য-সৃষ্টির
মূল কথা। বাংলা সাহিত্যের জন্ম কাব্যে, তবে কোন শুভ মূহুর্তে এ
ঘটনা ঘটেছিল, তার নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম
সাহিত্য হল চর্যাপদ। প্রাচীন সাহিত্য মানেই পদ্য-সাহিত্য। আর কাব্যের
ভাষা বলতেই যেটা বুঝি, তা ছন্দের ভাষা। সাধারণ জীবনের ব্যবহারিক
ভাষা আর সাহিত্যের ভাষা এক নয়।
চর্যাপদের কবিরা প্রতীকী শব্দে ভাবনাকে আড়াল করতেন। চর্যাপদ কবিতার
ধারা বদল হাল ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সময়ে। ভাবনা-প্রতীক সময়ের ছবির
রূপ নিল, ভাব-প্রতীকের ভাষায়। মাইকেল এলেন, শাস্ত্রীয় পয়ার ভেঙে
আমূল বদলে দিলেন কবিতার ভাষা। অন্তমিলহীন কবিতা, অন্যমাত্রার অলঙ্কার।
এলেন রবীন্দ্রনাথ। আত্মনিবেদনের কাব্যিক ভাষায় নতুন এক নান্দনিকতার
সৃষ্টি।
রবীন্দ্র-পরবর্তী কাব্যে ইউরোপীয় সমকালীন কাব্যভাবনার ছবি। ইউরোপীয়
প্রতীকবাদে অভ্যস্ত হল বাংলা কবিতা। এই সময়েই এলেন জীবনানন্দ।
নতুন কাব্যভাষায় শব্দ-প্রতীক ব্যবহার শেখালেন তিনি। এলেন সুকুমার
রায়। ধ্বনি আর শব্দ-জোড়ে ‘ননসেন্স’ কাব্যভাষা। বাঙালির মনে প্রাণে
আরাম। সেই থেকে কবিতা নানা গতিপথ ধরে এগিয়েই চলছে।
কালের নিয়মে শব্দের অর্থ বদলে যায়। কিন্তু আদিকাল থেকে কাব্য-সাহিত্যে
বেঁচে আছে একটি দর্শন। বিস্ময়। বিস্ময়। বিস্ময়। এই বিস্ময়বোধ কবি
ও পাঠকের বন্ধন।
গদ্যের ভাষা আর কাব্যের ভাষা আলাদা। মৌখিক গদ্য আর লিখিত গদ্যও
একরকম নয়। ব্রিটিশ আমলে এদেশে গদ্য সাহিত্যের জন্ম। তারপর এত বছর
ধরে আমরা বাংলা গদ্য নিয়ে, বাংলা কবিতা নিয়ে নানা এক্সপেরিমেণ্ট
করেছি। কোন শব্দ কীভাবে বানান করতে হবে, কীভাবে উচ্চারণ করতে হবে
শিখেছি। ব্যাকরণশাস্ত্রের দ্বারা কখনো ভাষাকে শাসন করেছি, কখনো
ভাষার স্ট্রাকচারের সন্ধান জেনেছি।
ভাষা আসলে তৈরী হয়েছিল বহির্জগতের প্রয়োজনে। কিন্তু একই ভাষায়
অন্তর্জগতের প্রযোজন যখন মেটে, তখন তা হয়ে ওঠে প্রাণের ভাষা। নতুন
যুগের নতুন যে নন্দনজিজ্ঞাসা, তার মূলে আছে পশ্চিমি জীবনের ও মননের
প্রায় প্রত্যক্ষ প্রভাব। আজকের বাঙালি আর দেশ-কালে আবদ্ধ নয়, সে
বিশ্বনাগরিক। গ্লোবাল সিটিজেন। তাই অনেক আত্মসচেতন বিদেশি বিজাতীয়
শব্দ ব্যবহার। ভাষার বিমূর্ত রূপটি গভীর পরিবর্তনের জন্যে প্রস্তুত।
আমার কিছু বলার আছে। না বলে আমার শান্তি নেই। যতক্ষণ না বলতে
পারছি, আমার অন্তর উদ্বেল। যে সত্য আমায় নাড়িয়ে দিয়ে যায়, আমাকে
ভাবায়, কাঁদায়, ভালোবাসতে শেখায়, আলো দেখতে শেখায়.. তাকে প্রকাশ
না করতে পারলে নিজের বক্তব্যকেও আবিষ্কার করা যায় না। কমিউনিকেট
করার তাগিদ।
গল্প কবিতা প্রবন্ধ লেখা সেই উপলক্ষ। সাহিত্যের আড়ালে রচনাকার
নিজেকেই দেন। এই দেওয়াটা যিনি গ্রহণ করেন, তাঁর সঙ্গে লেখকের আত্মিক
বন্ধন। গ্রহীতা পাঠক সাহিত্যিকের আত্মদান গ্রহণ করেন, জ্ঞাত হন
একজনের অন্তর।
‘কেমন করে’ লেখা হবে, তা প্রায়ই ‘কী’ লেখা হবে তার চেয়ে আলাদা।
কেমন করে লিখলে লেখাটা ঠিক সুরে বাজবে, ঠিক ছবি দেখাবে, ঠিক ঠিক
অর্থ জানাবে, তা সাহিত্যিককেই ভাবতে হয়। যা দেবার তা প্রথমে জানা,
তারপর দেওয়া।
আজকের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বলতে গেলে এই ভাবটি অনেকটা ‘যেমন
ইচ্ছে তেমন’। কিংবা ‘যা ইচ্ছে তাই’। বহু ক্ষেত্রেই তা যে ‘যাচ্ছেতাই’
হয়ে উঠছে, সেটা অনেক বাঙালি লেখক-পাঠকের কষ্টের কারণ। দুঃখের কথা
হল, এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই ‘শুদ্ধতাবাদী’ তকমা দিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়।
শুধুমাত্র অস্বীকার বা বর্জনের উপায় নেই। মূল্যবোধের ক্ষয়ের কারণে
পুরোনো অভ্যস্ত উচ্চারণ, স্থিরতা, প্রশান্তি এখন উপহাসের বস্তু।
কিন্তু তবু আমার ভাবনা হয়। বাংলা বানান নিয়ে অজ্ঞতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা
এখন অতি স্বাভাবিক ঘটনা। বিসর্গান্ত ও হসন্ত শব্দ বিসর্গহীন ও
অ-কারান্ত রূপে লেখা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। হ্রস্ব-ই কার আর দীর্ঘ-ঈ
কারের প্রয়োগ যা-ইচ্ছে-তাই। য-ফলা, ব-ফলা বাহুল্যবোধে বাদ পড়ে
যাওয়াও এখন নিয়ম।
শব্দপ্রযোগে স্রষ্টার স্বাধীনতার কথা যদি মেনেও নিই, বানানের
ক্ষেত্রে এমন স্বেচ্ছাচারিতা চলে কিনা, এ নিয়ে আমার জোর সওয়াল
আছে। আটপৌরে বাংলা শব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে যে চলতি শব্দগুলো বেশি
প্রচার হচ্ছে, সেগুলো আদৌ বাংলা শব্দ কিনা সে নিয়ে আমার সন্দেহ
আছে। হিন্দি বলয়ের নানা অশিষ্ট অমার্জিত শব্দ, ইংরেজি বাংলা নানা
অমার্জিত শব্দ আজকের বাংলা লেখকরা সজ্ঞানে ব্যবহার করেন। চলতি
কথ্য অনেক শব্দ, নিতান্ত হালকা, প্রায়শই অশিষ্ট, কিছু অশালীন শব্দও
আছে, ব্যঙ্গধর্মী লেখার নামে সে শব্দগুলো বহুল ব্যবহার হচ্ছে।
জোরালো ব্যবহার যাকে বলে।
কিন্তু ভাষার ব্যবহারে কেবল জোর নয়, আরামেরও দরকার আছে। ভাষা
ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় বন্ধনেরই মুক্তি। আবার ভাষাই ব্যক্তিগত
ও সামাজিক পরিচয়ের আশ্রয়। দেশ, জাতি ও মানুষের সঙ্গে ব্যাপক একাত্মতার
প্রক্রিয়া শুরু হয় ভাষা-চর্চার মাধ্যমেই। যেগুলো মুখে মুখে জনপ্রিয়
হয়ে উঠছে, আর যেগুলো লিখিত হবে, দুটোর মধ্যে একটা সীমারেখা থাক
উচিত। ভাষা শিক্ষা এবং একটি ভাষার সাহিত্য সে জাতির পরিচয়। শিক্ষিত
বাঙালি কোন ভাষায় ভাবনার জগতে বিচরণ করবেন, তা গভীর ভাবনার বিষয়।
বাংলা ভাষার এত দুর্গতি হয়েছে যে, সঠিক শব্দচয়ন হবে না? আমরা যারা
বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি, যে ভালোবাসায় অনেকগুলো তাজা প্রাণ শহীদ
হয়েছে, তার একটা সম্মান নেই? শব্দ ব্রহ্ম, সে শব্দকে কি অবহেলায়
অমার্জিত প্রয়োগে ব্যবহার করা সাহিত্যিকের কাজ?
মুশকিল হল আমাদের। প্রবাসী বাঙালিদের। আমরা বাঙালির জাত্যাভিমান
নিয়ে প্রাণের বাংলা ভাষা-রক্ষার তাগিদে সওয়াল-জবাবে জড়িয়ে পড়ি।
প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বাংলা ভাষার অধুনা প্রচলিত শব্দভাণ্ডার
নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়। বাংলা ভাষার স্বাভাবিক মাধুর্য নেই আর, এমন
অভিযোগ ওঠে। মুচকি হেসে অ-বাংলাভাষী মানুষজন আমাদের আবেগ নিয়েই
প্রশ্ন তোলেন।
বাংলা ভাষা নিয়ে গর্বের জায়গাটা কি হারিয়ে ফেলছি আমরা?
সাহিত্যিকের বলার ক্ষেত্রটা শিল্প হয়ে উঠুক, সেটাই কাম্য। রূপদক্ষ
স্রষ্টা নিজের অন্তরের তাগিদে অবাধ স্বাধীনতায় ইচ্ছেমতো সৃষ্টি
করুন। শিল্পীর স্বাধীনতায়। কিন্তু রস বা রূপ কোনো আপেক্ষিক বিষয়
নয়। নিজের সৃষ্টির প্রতি অকরুণ হয়ে কি রূপ-সৃষ্টি হয়? নিতান্ত
আটপৌরে একটি উদাহরণ দিই। নিজের সন্তানকে কি কেউ হাত-পা ভেঙে বিকলাঙ্গ
করে বা ইচ্ছে করে গায়ে নোংরা মাখিয়ে দেখতে বা দেখতে চায়? সৃষ্টি
তো নিজের গর্ভজাত সন্তানের মতোই। এক্সপেরিমেণ্টের চাপে নিজের সৃষ্টিকে
অশিষ্ট অমার্জিত রূপ দিলে স্রষ্টার কষ্ট হয় না? শুদ্ধ জীবনের ছবি,
মুক্ত চিন্তার প্রতিফলনের জন্যে ভাবনার এক্সপেরিমেণ্ট প্রযোজন,
ভাষার নয়। বরং সহজ কথায় সহজ গানের সুরে মনের কথাটি শোনায় ভালো।
তাছাড়া সাহিত্যের বেশির ভাগটাই এখন একটা ইণ্ডাস্ট্রি। যার লক্ষ্য
আর্থিক তাড়না, প্রচার, ক্ষমতালিপ্সা, স্বজনপোষণ, গোষ্ঠীতন্ত্র।
এই সাহিত্য আত্মিক প্রেরণা বা শিল্পের কারণে নয়। তাই আজ মুলস্রোতের
গল্প-কবিতা বলার জায়গাগুলোয় সাহিত্য বাজারের পণ্য। প্রায়ই সে পণ্য
বিকোয় ইণ্ডাস্ট্রি নামক বাজারমনস্কতায়। সেখানে শিল্পের বিশেষ মূল্য
নেই। যা সহজ, তা-ই সুন্দর.. এমন বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। সরল স্বেচ্ছাচারণে
আকাশে ওড়ার মুক্তির স্বাদ দিতে অনীহা। একটু বন্য, একটু আরণ্যক,
সরল সতেজ সজীব সৃষ্টির স্বাদ কি আর সাজানো গোছানো পরিপাটি পেশাদারি
চারণভূমিতে পাওয়া হয়?
প্রায়ই শুনি, কবিতা নিয়ে বা গল্প নিয়ে ওয়ার্কশপ হচ্ছে। সেখানে
নামী কবি বা লেখক গল্প-কবিতা লেখার ক্লাস নেন, তাঁদের বিচারে কিংবা
ওয়ার্কশপের মাপকাঠিতে স্থির হয় কোনো লেখা কবিতা বা গল্প হিসেবে
যোগ্যতা অর্জন করল কিনা। এই সব জায়গা সাহিত্যিকের প্ল্যাটফর্ম
হিসেবে কাজ করে। এই সব জায়গায় গল্প-কবিতা নিয়ে গবেষণা হয়, পাঠের
আয়োজন হয়, গ্রন্থ-প্রকাশ এবং তার বিপণন ও প্রচারের কাজ হয়, এইসব
গ্রন্থের মধ্যে থেকে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়ে যায়। এই ওয়ার্কশপগুলোয়
গদ্য নিয়ে, কবিতা নিয়ে ক্লাস হয়। একটা কোর্সের মত। গল্প-কবিতা
লিখে মাস্টারমশাইদের কাছে জমা দিতে হয় কিনা, হোমটাস্ক করতে হয়
কিনা, তা অবশ্য আমার জানা নেই। কোনো সৃজনধর্মী কাজ ফর্মুলা মেনে
হয় কিনা, বিশেষ ধাঁচে সৃষ্টি সম্ভব কিনা, সে নিয়ে আমার সংশয় আছে।
যে কোনো সাহিত্যের ইতিহাসে, এমনকি কবিতাতেও ছন্দ নিয়ে অনেক পরিবর্তন
হয়েছে, কবির ব্যক্তিগত আয়াসে। সে নিয়ে সম-সময়ে ক্ষণিক আপত্তি থাকলেও
ছন্দ বারবার নিজের গতিপথ স্থির করে নিয়েছে। কোনো পোয়েট্রি-ওয়ার্কশপ
তা স্থির করে দেয় না। গল্প-লেখককে, বা বৃহত্তর অর্থে বলতে গেলে
যে কোনো গদ্যলেখককে সমাজের পটভূমি বা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতে
হয়, শুধু সমাজকে চোখে দেখে বা সমাজের ঘটনাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলেই
গদ্য-সাহিত্য সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে খবরের কাগজের প্রতিবেদনের সঙ্গে
সাহিত্যের পার্থক্য থাকে না। এই পড়াশোনা, এই তাগিদ ওয়ার্কশপ করলে
সম্ভব নয়। কারণ একজন সৃস্টিধর্মী লেখক কী পড়বেন, কী ভাববেন, কী
নিয়ে সংবেদনশীল হবেন, কী ভাষায় সে অনুভুতি প্রকাশ করবেন, তা একান্ত
নিজস্ব হওয়া উচিত। অন্তত সৃষ্টি তাই দাবি করে। তোতাকাহিনী পাঠ
সাহিত্যিকের কাজ নয়।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, সাহিত্য সমাজের দর্পণ। সমসাময়িক সমাজে
বাস্তবতা বাদ দিয়ে সাহিত্য হয় না। চারপাশে যা ঘটছে, মিথ্যাচারিতা
ক্রূরতা বিশ্বাসহীনতা দ্বিচারিতা কিংবা সম্পর্কের জটিলতা, সেসব
বাদ দিয়ে সাহিত্য হয় না। কিন্তু এটাও বাস্তব যে, সৃষ্টির ভাবনা
জীবনবোধের ভাবনা। জীবনসত্য এবং দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরের ভাবনা।
সফল সাহিত্যিক মনে মনে একটা বিবাদ মিটিয়ে ফেলেন। তিনি সত্য বলেন,
সুন্দর করে বলেন। শৈলী সুন্দর, আঙ্গিক সুন্দর। কিন্তু বলার কথাটা
হয়ত অসুন্দর। অসুন্দর, কিন্তু সত্য। একটি ছোটগল্প বা একটি কবিতা
তার সময়ের উত্তাপ, বিপন্নতা, সঙ্কট, সংগ্রাম, হলাহল, আনন্দ, আবেগ
ধারণ করে থাকে। নান্দনিকতার সঙ্গে মিশে যায় সময়ের সংরাগ। এই মেলবন্ধন
তখনই সম্ভব যখন লেখকের মধ্যে থাকে একটি সুন্দর মন, সুন্দর আত্মা।
ভাষার মধ্যে থাকে ব্যঞ্জনা, মধুর আকর্ষণ।
ভাষার লক্ষ্য আগামী কালের জন্যে। সাবেক আয়োজন যা অক্ষয় হয়ে আছে,
আমাদের বাঙালিদের পক্ষে তাই যথেষ্ট। পৃথিবীর অনেক জিনিসই দ্ব্যর্থব্যঞ্জক।
যা আটকে রাখে, তা-ই হয়ে ওঠে আশ্রয়। যা বেঁধে রাখে, তা-ই হয়ে ওঠে
অবলম্বন। জীবনের এই নিয়ম।
প্রবাসী বাঙালির কামনা এই যে, লেখনশৈলীর ক্রমাগত শুদ্ধিতে, সাবলীল
সপ্রতিভ সহজ সুন্দর কথ্যরীতিতে বাংলা ভাষা অপরূপ হয়ে থাকুক। প্রশংসনীয়
অন্তর্দৃষ্টি থেকে সীমা খোঁজা, সীমা ছাড়ানো, ব্যক্তিপ্রকৃতির জটিলতার
উত্তরোত্তর বিবর্তন, সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতর অনুভবের জগতে ভ্রমণ–
এই আমাদের বাংলা ভাষা। চেতনার রূপ গর্ভস্থ অন্ধকার নিয়েও আলোর
বলয়ে উদ্ভাসিত। সামাজিক, ঐতিহাসিক ও নান্দনিক শিল্পমূল্যে সর্বজনীন
আবেদন।
এই বাংলা ভাষা আমাদের গর্বের জায়গা। এই গর্বের উত্তরাধিকার বহন
করুক আগামী প্রজন্ম। বাংলাভাষা-রক্ষা নিয়ে আমাদের আবেগ এইটুকুই।
লেখক পরিচিতি - আইভি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান–জামশেদপুর, ঝাড়খণ্ড। পেশায়– ব্যাঙ্ককর্মী আর নেশা- লেখালেখি, বেড়ানো ও বাগান করা। গদ্য, ছোটগল্প, বড়গল্প,উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ-কথা লিখতে ভালবাসেন। প্রকাশিত বই – নিরবলম্ব (উপন্যাস), রাতপাখি এবং অন্যান্য (ছোটগল্প সঙ্কলন), ছায়াতে আলোতে (ছোটগল্প সঙ্কলন),অপারেশন স্বর্গদ্বার (উপন্যাস), অনির্বাণ এবং (ছোটগল্প সঙ্কলন), রামধনুর দেশে (ছোটদের জন্যে গল্প সঙ্কলন),ভাবনার নানা প্রসঙ্গ (প্রবন্ধ সঙ্কলন) নদী যেমন (ছোটগল্প সঙ্কলন) মহাজীবন (ছোটগল্প সঙ্কলন)।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।