ফিসফাস কিচেন
অক্টোবর ১৫, ২০১৬
ফিসফাস কিচেন- সকোলাতে
সৌরাংশু
ধরা যাক আপনার আশেপাশে পৃথিবী ভেঙে পড়ছে, আদমসুমারি মহামারিতে আক্রান্ত, আপনার চাকরি চলে যাচ্ছে, আপনার প্রিয়তমা চলে যাচ্ছে আপনাকে ‘অকালবৈশাখী’ বলে গাল পেড়ে, আপনার পিতা মাতা আপনার অকর্মণ্যতায় হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ছিঁচকে চুরির দায়ে ধরা পড়ে গেছেন, গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে, বাসে পকেটমার আপনাকে আদর করে হালকা করে দিয়ে গেছে, দুর্দান্ত এক সেক্সি ডেট হতে চলেছে কাল কিন্তু থুতনির ফুসকুড়িটির জন্য আপনি গত তিন দিন ধরে দাড়ি কাটতে পারেন নি, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি! এমন অবস্থায় কালচে আবলুশ কাঠের থেকে হালকা বাদামী ছোঁয়া লাগানো অসামান্য মিষ্টি ও সামান্য তেঁতো একটি বর্গাকার চকচকে চকোলেটের টুকরো আপনার মুখে পড়ল!
গ্রান্টি দিচ্ছি পাঠক পাঠিকারা! লিখে নিন! আপনার সারা পৃথিবী থেমে গেল, উঠে আসা ঝড় গিলে আসা ঢেউ, ঢুকে আসা মাটির ফাটল এবং পুড়ে আসা ভাতের তলা, মিনিট তিনেকের জন্য স্তব্ধ বিস্ময়ে আপনার সঙ্গে সেই অবর্ণনীয় স্বর্গীয় স্বর্ণিম বাদামী আভার সঙ্গে আত্মার মিলন প্রত্যক্ষ করবে!
প্রিয় আমার ওগো প্রিয়
একটু চকোলেট থাকলে ফ্রিজে
মুখের মধ্যে ভরে নিওওও...
তা এই খেলাটা প্রতিটি বিষয় নিয়েই খেলছি! একটু ভূগোল ঘেঁটে ইতিহাস টেস্ট করছি! তারপর নামছি আসল টেস্ট খেলতে! রেসিপি টেসিপি তো গৌণ! আসল তো গল্প!
তা সেই গল্পই বলছে যে কোকোবীজ গুঁড়ো করে যে কড়া তিক্ত পানীয় তৈরী হত, তা অ্যাজটেকরা বুদ্ধির দেবতা কোয়াতজালকোতল-এর প্রসাদ হিসাবে খেত! ( ওই শেষের ‘ৎ’ আর ‘ল’কে একসঙ্গে উচ্চারণ করতে গিয়ে জিভ ব্যাঙের মতো উলটে গেছিল প্রায়!) তা সে তো যিশুর জন্মের ১৯০০ বছর আগের গল্প! তখন তো কোকোবীজকে মুদ্রার মতো ব্যবহার করত। আর যে তিক্ত পানীয়ের কথা বললাম, তা তৈরী হত কোকো বীজ গুঁড়ো করে তার সঙ্গে, ভুট্টার নির্যাস এবং মশলা মিশিয়ে যার বর্তমান নাম ‘চিলাতে’।
ষোড়শ শতকে কলম্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কোকো বীজ স্পেনে আসে। কলম্বাসের পুত্র ফার্দিনান্দ, উত্তর আমেরিকাবাসীদের একটি বাণিজ্যিক তরী দখল করে তাতে আমণ্ড বাদামের মতো কালো কালো কোকো বীজ দেখতে পান। যা স্থানীয়রা খুব যত্ন সহকারে সরিয়ে রাখছিল। তা যাহোক শুধুমাত্র সহজ শ্রমিক পাবার উদ্দেশ্যে নয়, এই চকোলেট বা নাউহিতি ভাষায় সকোলাতলই মনে হয়ে স্পেনের উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা দখলের গল্প শুরু হল। তবে ঐ তিক্ততা সাধারণ জিহ্বা সম্পন্ন স্পেনীয়রা হজম করতে পারে নি, তাই চিনি বা মধু মিশিয়ে নিতে শুরু করে।
যদিও নাউহিতি সকোলাতলের মানে হল ভুট্টার রস, তবুও স্পেনীয় সকোলাতে তাদের দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ক্রীতদাসের বাজারের বাড়বাড়ন্ত করতে উদ্যোগী করে তোলে। আসলে, কোকো বীজ থেকে চকোলেট করা তো মুখের কথা নয়! ছটি পদক্ষেপে ধাপে ধাপে মানব চক্ষুর ন্যায় কোকো বীজ চকোলেটে পরিণত হয়।
প্রথমে, বীজগুলিকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফেলে রাখা হয় দুদিন থেকে দু সপ্তাহ, যাতে করে তা গেঁজিয়ে যেতে পারে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে, কোকো বীজে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা স্বাদেরও পরিবর্তন করে। এরপর তাকে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। যাতে করে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত, কোকো বীজগুলিকে রোস্ট করা হয়, ঠিক একইভাবে, যে ভাবে কফিবীন্সকে রোস্ট করা হয়, এতে স্বাদের পরিপক্কতা হয়, আর তার সঙ্গে দু সপ্তাহ রাখার জন্য, যে গেঁজিয়ে গেছিল, তার ফলে উদ্রেক হওয়া অম্লতাও যাতে দূর হয়।
তৃতীয়ত, বীজ ফাটিয়ে তাকে খোসামুক্ত করা।
এরপর , ভিতরের অংশগুলিকে রিফাইন করা হয়, অর্থাৎ গুঁড়ো করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কোকো বীজের গুঁড়োর দানাগুলি যেন কোন মতেই ৩০ মাইক্রোমিটারের থেকে বড় না থাকে, যাতে চকোলেট মুখে পড়লে স্বর্গীয় অনুভূতিতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। একইসঙ্গে কোকোর গুঁড়োর সঙ্গে স্বাদ অনুঘটকও মিশ্রিত হয়, যেমন, চিনি, কোকো বাটার, কোকো লিকার, ভ্যানিলা বা দুধ।
পঞ্চমত, যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাকে বলা হয় ‘কঞ্চিং’ বা ‘conching’। এক বিশেষ পদ্ধতিতে প্রায় ৭২ ঘন্টা ধরে কঞ্চিং করা হয় যাতে জিভের স্বাদকোরক আলাদা করে চিনির গুঁড়ো বা কোকোর গুঁড়োকে অনুভব করতে না পারে, এবং চকোলেটের ফ্লেভারের বহুমুখিনতা একত্রে প্রকট হয়।
শেষপর্যন্ত, চকোলেট টেম্পারিং-এর মাধ্যমে চকচকে ভাব এবং সঠিক ‘ক্রাঞ্চ’ পায়। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক বিশেষণ আছে, যার মধ্যে না গেলেই চলে।
তবে কোকোকে প্রসেস করতে গেলে বেরোয় কোকোর মাখন এবং কোকো লিকার। এগুলিকে বিভিন্ন মাত্রায় অন্য স্বাদ অনুঘটকগুলির সঙ্গে মিশিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের চকোলেট তৈরী হয়। যেমন ডার্ক চকোলেটের ক্ষেত্রে, কোকো বাটার ও কোকো লিকারের সঙ্গে চিনি এবং কখনো কখনো ভ্যানিলা মিশ্রিত করা হয়। মিল্ক চকোলেটে, দুধ থাকে। আর হোয়াইট চকোলেটে দুধের সঙ্গে শুধুমাত্র কোকো বাটার ও চিনি মিশিয়ে দেওয়া হয়।
আরে মহায়, তখন থেকে তত্ত্ব এবং তথ্যের কচকচি চলছে! রেসিপি কই? কি বলি বলুন তো? চকোলেটের রেসিপি দিতে গেলে কি এক পিসে কুলোবে? বই হয়ে গিয়েও কম পড়ে যায় যে চকোলেটের মাহাত্ব! তার থেকে তো হাত না দিলেই হতো! কিন্তু তা কি হয়? তার থেকে যা হয় তাতেই খুশী থাকি! আসুন একটা চকোলেট চিজ কেকের রেসিপি শেয়ার করে নিই!
ওভেনটাকে ৩৫০ ডিগ্রিতে প্রিহিট করে নিন, চকোলেট কুকিজ বা ক্র্যাকার গুড়ো করে আনসল্টেড মাখন আর চিনি দিয়ে ভালো করে গুঁড়ো করে মিশিয়ে নিন। এবারে চিজ কেকের জন্য বিশেষ মোল্ডে এই মিশ্রণটিকে সেট করে মিশ্রণটিকে ১৫ মিনিট ধরে সেট করুন। ডবল বয়লারে কম মিষ্টি চকোলেট, বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট হলে ভালো হয়, তা গলিয়ে নিন। ডবল বয়লার বলতে কিন্তু সহজ প্রক্রিয়া, একটি গভীর পাত্রে জল গরম করে তাতে আরেকটি পাত্র রাখুন তাতে চকোলেট দিয়ে বাষ্পে গলিয়ে নিন। তারপর সরিয়ে রাখুন ঠাণ্ডা করতে। এবারে আরেকটি পাত্রে ক্রিম, চীজ, চিনি ভাল করে মিশ্রণ করতে থাকুন এবং চারটি ডিম একটু একটু করে মেশাতে থাকুন। শেষে চকোলেট মিশিয়ে তাকে মোল্ডে ঢালুন। এরপর, ওভেনে প্রায় এক ঘন্টা বেক করুন। শেষে ঘন্টা আটেক ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন! চকোলেট চীজ কেক।
আচ্ছা হ্যান্ড মেড চকোলেট কি ভাবে তৈরী করে? আসুন কয়েকটা দেখে নিই? প্রথমে মিল্ক চকোলেট! ৫ টেবিল চামচ কোকো পাউডার, সোয়া এক কাপ মিল্ক পাউডার, ১/৪ কাপ আনসল্টেড মাখন, ২/৩ কাপ চিনি এবং আধ কাপ জল। কোকো পাউডার ও মিল্ক পাউডার মিলিয়ে নিন। একটি পাত্রে চিনি জলে গুলে নিয়ে সিরাপ তৈরী করুন। গাঢ় হয়ে এলে তাতে মাখন মেশান ধীরে ধীরে। শেষে কোকো ও মিল্ক পাউডারের মিশ্রণ একটি খুন্তির মতো কাঠের চামচ নিয়ে ভাল করে মেশান মিশ্রণটি যতক্ষণ না সমান ভাবে মিলে যাচ্ছে এবং চকচকে ভাব আসছে। এর পর একটি থালার মতো বিস্তৃত পাত্রে মিশ্রণটি ঢেলে স্প্যাটুলা বা কাঠের চামচ দিয়ে সমান করে ঘরোয়া তাপমাত্রায় রাখুন ১০-১৫ মিনিট, শেষে পছন্দ মতো কেটে নিয়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন।
এবারে জলভরা চকোলেট। মানে সন্দেশের ভিতর যদি গুড় ঢুকিয়ে জলভরা হয় তাহলে চকোলেটের ভিতরে অরেঞ্জ মারমালেড, রাম, ওয়াইন, ক্রিম, জেলি, ম্যাঙ্গো জুস ভরে তৈরী করলে সে তো জলভরাই হল তাই না? কিছু না। ডবল বয়লারে চকোলেটে গলিয়ে নিয়ে মিল্ক পাউডার বাটার চিনি মিশিয়ে নিন, তারপরে গাঢ় তরলটি চকোলেট মোল্ডে ঢালুন এবং ভাল করে চামচ দিয়ে চেপে চেপে বসিয়ে দিন যাতে বাবল না থাকে। অবশ্য চকোলেট মোল্ডগুলিতে সামান্য মাখন লাগিয়ে দেবেন যাতে পরে বার করতে অসুবিধা না হয়। তারপর? তারপর আর কি সর্দারদের মতো বালতি উলটে দিন! (গল্পটা বলছি! আগে রেসিপিটা শেষ করি!) মোল্ড উলটে দিলে অতিরিক্ত তরল চকোলেট বেরিয়ে গেল, খালি রয়ে গেল মোটামুটি পাতলা একটা পরত। এবারে এই মোল্ডের ভিতর আপনার জলভরার সামগ্রী ঢালুন! ঠাণ্ডা করার আগে অতিরিক্ত ট্যাম্পার্ড করা চকোলেট দিয়ে ঢাকা দিন। ট্যাম্পার্ড চকোলেটের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গলিত চকোলেট বাটার পেপারের উপর স্প্যাটুলা দিয়ে ছড়িয়ে দিন। তারপর শুকিয়ে গেলে তুলে নিন। এবারে জলভর্তি চকোলেটের পাত্রগুলিকে ভাল করে ঠাণ্ডা করুন ফ্রিজে। তারপর আর কি, মুখে ফেলে উপভোগ করুন!
লিকার চকোলেট তো এক বিশেষ ধরণের প্রজাতি। বিশেষত ওয়াইন ও হুইস্কি ফিল্ড ছোট ছোট লিকার বোতলের মতো লিকার চকোলেট পারিজাত বনে হানা দেবার বাহন হিসাবে ব্যবহৃত হয়!
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করলেন না তো! এই যে চকোলেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গুড়ুম করে লেখাটার নাম রেখে দিলাম সকোলা! কি ব্যাপার? কিছু না! আসলে এই নামে একটা ফিল্ম তৈরী হয়েছিল হলিউডে। ২০০০ সালে সুইডিশ নির্দেশক ল্যাস হালস্টর্মের নির্দেশনায়, অস্কারবিজয়ী জুলিয়েট বিনোশে, জুডি ডেঞ্চ, অ্যালফ্রেড মলিনা এবং বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন জনি ডেপ। কিন্তু কথাটা সেটা না! কথাটা হল, হ্যাণ্ডমেড চকোলেটের উপর ভর করে ফ্রান্সের একটা ছোট্ট গ্রামে কি করে এক সিঙ্গল মাদার সামাজিক বিপ্লব নিয়ে এলেন তার গল্প। গল্পটির প্রতিটি কোরকে চকোলেটের স্বাদগাথা! হালকা লঙ্কার গুঁড়ো দেওয়া মিষ্টি মিল্ক চকোলেট, ডার্ক চকোলেট। সবগুলিই যেন মানবিক সম্পর্ক, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা আবেগ ব্যর্থতা রাগ বিরাগ বীতরাগ সবই যেন চকোলেটের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদমন্থনের মাধ্যমে উঠে এসেছিল।
মোদ্দা কথাটা হল লাতিন বা মধ্য আমেরিকা পেরিয়ে ইউরোপ ছুঁয়ে আজ চকোলেট কিন্তু সমগ্র মানব জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে! আর এই যে মানব জীবনের অঙ্গ, সেখান থেকেই তো উঠে আসে লোককাহিনী। যা সারা দক্ষিণ আমেরিকাময়।
কোন এক রাজকন্যের স্বামী যখন যুদ্ধে গেছেন তখন তাঁর শত্রুরা এসে দাবী করল সব সম্পত্তির। রাজকন্যে হাজার অনুরোধ উপরোধ শেষে অত্যাচারেও মুখ খুললেন না এবং মারা গেলে তাঁর রক্ত থেকে জন্ম নিল কোকো গাছের। কোকো ফলের মধ্যে তাঁর শেষ অধ্যায়ের তিক্ততা জমা রয়ে গেল। কিন্তু তার গভীরে রয়ে গেল স্বামীর প্রতি গভীর ভালবাসা। তিক্ততা পেরিয়েই তো মিষ্টি প্রেম। ডর কে আগে জিত!
চকোলেট, এমন একটি উপাদেয় বস্তু, যা আমাদের চার্লি ও চকোলেট ফ্যাক্টরির স্বপ্নের দুনিয়া পেরিয়ে নিয়ে চলে যায় হ্যানসেল ও গ্রেটেলের ক্যান্ডির বাড়িতে। চকোলেটের সঙ্গে রয়ে গেছে আমাদের শৈশবের স্বপ্ন, কৈশোরের কৃষ্টি, তারুণ্যের তীব্রতা, মধ্যযৌবনের মাধুর্য আর বার্ধক্যের বাধা বিজয়! জীবনটাকে একটু মিষ্টি করে তুলতে মুষ্টিমেয় চকোলেটের বোধহয় কোন জুড়ি নেই! তাই চকোলেটের রূপকথা রয়ে যাক আজীবন, অফুরান!
আর সেই রূপকথাই বেলজিয়ান বা সুইস চকোলেটকে বিশ্বজনীন রূপ দিয়েছে। বেলজিয়াম বা সুইজারল্যান্ডে কোকো উৎপাদন না হওয়া সত্ত্বেও! মিল্ক চকোলেট বলতে সুইস আর ডার্ক বা কম মিষ্টি চকোলেট হলে বেলজিয়ান চকোলেটই নাকি শেষ কথা। আসলে এই দুই দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে দুগ্ধ উৎপাদন প্রচুর আর বেলজিয়ামে চকোলেটের প্রতি পাগলামি। সেই সপ্তদশ শতাব্দী থেকেই বেলজিয়ামে হট চকোলেট বা সেন্টার ফিল্ড চকোলেটের প্রতি অনুগ্রহ যা এখন কিংবদন্তীর পর্যায়। এমনকি ১৮৯৪তে আইন এনে বেলজিয়াম চকোলেটের গুণমান বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে ইউরোপীয় মহাসঙ্ঘের আইনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রিত হয়। বেলজিয়ামের জলভরা চকোলেটকে বলে প্রালিন আর নাটস বা অন্যান্য ড্রাই ফ্রুট বা শুধুমাত্র চকোলেট দিয়ে তৈরী করা বল হল ট্রাফল, যা এখন বিশ্ববিদিত।
শেষ করি একটা ছোট্ট রেসিপি দিয়ে। চকোলেট মুস! একটা প্যানে চারটে ডিমের কুসুম, দুই টেবিল চামচ চিনি আর পৌনে কাপ ক্রিম ভাল করে মেশান, তিন থেকে চার মিনিট! ব্যাস! গরম হতে শুরু করলে, চারশো গ্রাম হাল্কা ডার্ক চকোলেট গলিয়ে তাতে ভ্যানিলা নির্যাস এক চামচ দিয়ে মিশ্রিত করতে থাকুন। মিশ্রিত হয়ে গেলে ঠাণ্ডা হতে দিন। চকোলেট কাস্টার্ড তৈরী। এরপর সোয়া এককাপ ক্রিম এবং দুকাপ চিনি ব্লেন্ডারে ঘুরিয়ে নিন যতক্ষণ না তা শক্ত হতে শুরু করে। এরপর এক তৃতীয়াংশ করে ক্রিম নিয়ে ঠাণ্ডা চকোলেট কাস্টার্ডে দিয়ে হালকা হাতে চকোলেট কাস্টার্ড দিয়ে মুড়ে দিয়ে ফ্রিজে রাখুন তিরিশ মিনিট থেকে তিন দিন। পরিবেশনের সময় ফ্রিজ থেকে বার করে একটু রেখে দেবেন। ব্যাস আর কি? লাঞ্চ বা ডিনারের পরে শুধুমাত্র দুগ্ধজাত মিষ্টান্নে লেহন না করে এই চকোলেটের নদীতে ডুবে যান! আহা! মনে রাখবেন অনুভূতিগুলোকে! গ্রান্টি!
প্রয়োজনহীন পুনশ্চঃ ইহুদীদের হানুকাহ উৎসবে চকোলেটের কয়েন বিতরণ করা হয়।
প্রয়োজনহীন পুনশ্চ ২- ইস্টার এগ তো চকোলেট কনফেকশনারির একেবারেই গোড়ার কথা এবং ঐতিহাসিক ভাবে লিপিবদ্ধ।
প্র পু ৩- ভারতবর্ষের চকোলেট হৃদয় হল নীলগিরি পাহাড়। উটিতে সারে সারে হ্যাণ্ডমেড চকোলেটের দোকান। এবং তাতে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও রূপের চকোলেট মনোলোভা! এমন কি চকোলেট ফ্লেভার্ড চাও।
প্রায় ছ’মাসের একসঙ্গে পথচলার পর সাময়িক বিরাম। শুধু এই কটাই নয় মোট ষোলোটা লেখা নিয়ে দেখা হচ্ছে বইমেলায়। সৃষ্টিসুখের ফিসফাস কিচেনে। আর সেখানেই শেষ নয় কিন্তু! এই যে আপনাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে নিজেও কত কিছু শিখলাম। প্রতিদিন নতুনের খোঁজ, ব্যঞ্জন, স্বাদকোরকের অনুশীলনাদি, চোখ মুখ ও মনের খোরাক। আবার ফিরে আসব বাংলার নববর্ষে নতুন জার্নিতে। আলবিদা তবে সাময়িক। সৃষ্টিসুখের স্টলে ফিসফাস কিচেন নিয়ে আমি থাকব! আর আপনি?
লেখক পরিচিতি : লেখক ভারত সরকারের আধিকারিক। অধুনা দিল্লিবাসী এবং নিয়মিত বাংলা ব্লগার। ফিসফাস-১ ও ফিসফাস-২ নামে লেখকের দুটি বই সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।