প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ফিসফাস কিচেন

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৬

 

ফিসফাস কিচেন- শিঙাড়া 

সৌরাংশু


যব তক রহেগা সামোসে মে আলু
তেরা রহুঙ্গা ও মেরে শালু...”

দেব কোহলি এবং অনু মালিকের অমর সৃষ্টির মাধ্যমেই জন্মজন্মান্তরের সঙ্গী থাকার সঙ্গে সঙ্গে সামোসা বা ভাষান্তরে শিঙাড়ার অনন্ত যৌবনকেই প্রতীত করা হচ্ছে। মানে মেরি জান গুলবদন মালিকায়ে কোহিনূর যব তক হ্যায় জাহান তব তক উত্তরি ভারত মে ম্যাহকা করেঙ্গে আলুকে সামোসা।

তা এই সামোসায় আলু আসাটা বিরিয়ানিতে আলু আসার মতই জুগাড়পন্তি! সেই কবেকার কাকডাকা ভোরে মধ্যপ্রাচ্যের সামবুসাক তার হৃদয়ের বাঁধন খুলে মাংসের পুর ফেলে দিয়ে গাব্দা গাব্দা সেদ্ধ আলুতে নুন লঙ্কা গুঁড়ো আর হাবিজাবি মশলা মেখে ভারতীয়দের হৃদয়ে স্থান করে নিল আর তার মধ্যে কি ভাবে ফুলকপি বাদাম আলু মটরশুঁটি নিয়ে শিঙাড়ায় রূপান্তরিত হল তা খুলে বসলে মহাভারত হয়ে যাবে।   

তবু কিছুটা তো চেষ্টা করা যাক! দশম শতাব্দীর ইরানী ইতিহাসবিদ আবলফজল বেহাগি তাঁর ‘তারিখ-ই-বেহাগি’তে প্রথম সামবুসাকের কথা উল্লেখ করেন। ভারতবর্ষের কথা ধরতে গেলে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আমির খসরু এই মহার্ঘ্য খাদ্যটিকে সুলতানদের খাবার টেবিলে দেখেন, তখনও আলু ঢোকে নি তাতে। আলু অবশ্য ভারতীয় খানাতেই তখনও ঢোকে নি! সে তো পর্তুগীজদের সঙ্গে প্রবেশ করে। আর ১৩০০ খৃষ্টাব্দে পর্তুগীজরা কোথায়? পর্তুগালকেই ঠিক মতো চিনে উঠতে পারে নি তো আলু আর ভারত! সে যাই হোক। চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতার বয়ানেও পাওয়া যাচ্ছে সুলতানি খাদ্য সম্ভারে এই সামুসাক বা সামবুসাকের গল্প।

তার মানে বোঝাই যাচ্ছে যে এই মাংসের পুর ভরা ত্রিকোণ প্রেমের গল্প পর্তুগীজদের সপ্তদশ শতকে ভারতের পশ্চিম উপকূল জুড়ে আলু চাষের আগে পর্যন্ত আলুর মাখোমাখো ভালোবাসায় হাবুডুবু খায় নি। আর আমার অণুমান, যে হেতু পশ্চিম উপকূল ধরে মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে বর্ণ হিন্দু নিরামিষাশীদের এক বিশাল জনগোষ্ঠী বসবাস করে যারা মাংসের স্বাদ স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় বর্জন করেছে, তাই সামোসার ভিতরে মাংসকে সরিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিল আলু। আর নিরামিষ সামসায় কোন আক্কেলে পেঁয়াজ রসুন থাকে বলুন? তাই আদা ধনে জিরে লঙ্কা ইত্যাদি দিয়ে মণ্ড তৈরী করে তার উপর ময়দার চাদর মুড়ে ডুবো তেলে ভেজে নেওয়া সামোসা।

এই সামোসার শিঙারা হয়ে ওঠার গল্পটাও ধোঁয়াশা তবে একটা ছোট্ট যোগাযোগ কোথাও যেন পাওয়া যাচ্ছে সেটা বলে ফেলি। শিঙাড়াকে ঠিক যে ফলটির মতো দেখতে অর্থাৎ পানিফল, যার জন্ম নাকি কাশ্মীরের হ্রদগুলিতে, তাকে হিন্দিতেও বলা হয় শিঙ্গাড়া! এবার কেউ কেউ বলছেন নাকি, কাশ্মীরের এবং বাংলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছে তন্ত্র সাধনা। তাই দ্য তন্ত্র কানেকশনের মাধ্যমেই শিঙাড়ার নামকরণের উৎস খোঁজার এক বৃথা প্রচেষ্টা করলাম।

যাই হোক সামোসা বা সাম্বুসাক নিয়ে কিছু বলার আগে চলুন একটু এদের জ্ঞাতিগুষ্টিদের খোঁজ নিইঃ

উচপুচমাক বা এচপোচমাকঃ দীনেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস আমার কিশোর মনের উপর প্রগাঢ় প্রভাব ফেলেছিল, এটা অবশ্য ফ্রান্সিস পরবর্তী অধ্যায়ের কথা বলছি। সেটি হল সেই দুর্দান্ত ভয়ডরহীন তাতারের জীবনকথা, ‘দুরন্ত ঈগল’। দক্ষিণ পশ্চিম রাশিয়ার এক বরফে ঘেরা রাজ্য তাতারস্তান। বরফের পাহাড়ে ঢাকা রাজ্যে দিনগুজরান আমরা আরাম কেদারা বা কফি টেবিলে ধোঁয়া তুলে বসে ভাবতেও পারব না। তা সেই তাতারস্তানের জাতীয় খাদ্য হল এই উচপুচমাক বা সোজা বাংলায় ত্রিকোণ। এই ত্রিকোণী উল্লাসের বুকের ভিতর থাকে বিফ, আলু এবং পেঁয়াজের পুর। তার উপরে ত্রিকোণকে বন্ধ করা হয় যেন চামড়ায় সেলাই করা হয়েছে এ ভাবে। দৃষ্টিনন্দন এই খাদ্য কতোটা মুখরোচক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

ফাতায়েরঃ মধ্যপ্রাচ্যের এই সাম্বুসাকের জাতভাইয়ের মধ্যে মাংসের পরিবর্তে পালং শাক ও গোট চীজ দিয়েও তৈরী হয়। আকারে এও ত্রিকোণাকৃতি।

এম্পানাদাঃ নামটি স্পেনীয়, কিন্তু এর উৎস সন্ধানে যেতে হবে পর্তুগাল ও স্পেনের সীমান্ত অঞ্চলে। ধরা হয় যে, ভারতের সঙ্গে পর্তুগালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের পরে পরেই এই এম্পানাদা, পর্তুগাল ও স্পেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পর্তুগালে এর নাম প্যাস্টেল, যার আদিপুরুষ হল সেই সামোসা যাকে পর্তুগালে বলা হয় চামুসা দ্য গোয়া। গোয়ার যোগাযোগ ঠিক খাবারের মাধ্যমে পর্তুগালের সংস্কৃতিতে দেখা যাচ্ছে।

তবে এম্পানাদা আজকের দিনে জনপ্রিয় কিন্তু আর্জেন্টিনায়। ময়দা বা আটার মণ্ড করে তাকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি বা ত্রিকোণাকৃতি পুরভর্তি খাবারটি তৈরী হয়। বুকে থাকে বিফ/ চিকেন/ ডিম/ সব্জি এবং মশলা হিসাবে থাকে জিরা ও প্যাপ্রিকা।

বেলিজে এর নাম পালটে হয়ে যায় প্যানাডেজ এবং তৈরী হয়, ভুট্টার আটা দিয়ে। পুর হিসাবে থাকে মাছ, চিকেন বা বিন্স থাকে। প্যানাডেজ এম্পানাদার থেকে অনেকটাই চ্যাপ্টা দেখতে হয়।

আলু- পাইঃ ত্রিনিদাদের ভারত যোগাযোগ কিন্তু সেই উপনিবেশের দিনগুলি থেকেই। ভারতীয় শ্রমিকদের তুলে নিয়ে গিয়ে পশ্চিম গোলার্ধ্বের পোর্ট অব স্পেন শহর তৈরীতে ব্যবহার করেছিল ইংরেজরা। সেই থেকেই পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোতেই ভারতীয়দের ভিড় বেশী। আর ভারতীয় সংস্কৃতি তো রঙ পাল্টাতে পাল্টাতে এসে হাজির হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু আজকের দিনের আলু-পাইতে, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান পাই এবং ভারতীয় সামোসা বা শিঙাড়ার সুন্দর মেলবন্ধন ঘটেছে। আলু, ছোলার ডাল বা কড়াইশুঁটির পুর আর বাইরেটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি। এই হল দূরস্থ জ্ঞাতির ভিত্তির ইতিহাস।

জ্ঞাতিদের কথা বলতে গেলে তো আকার আয়তনেও পরিবর্তন এসে যায় তাই এবারে আবার সেই সামোসায় ফিরে আসি।

এই যে আমরা যারা বাঙালি, যারা নিজেদের খাদ্যবোধ এবং রুচি নিয়ে অহংকার করি। সেই বাঙালিরা সামসা ফেলে শিঙাড়া কেন খাই? কেন জানি না সামোসা বলতে যে আলু সামোসা বুঝি তার মধ্যে নান্দনিকতার বড়ই অভাব। অবশ্য উত্তর ভারতে, বিশেষত পাঞ্জাবী রান্নায় সবকিছুকে মিশিয়ে ঘ্যাঁট বানাবার একটা প্রবণতা দেখাই যায়। ওই যে আলু ফুলকপি আর কড়াইশুঁটির তরকারি সেটাকেও ঘেঁটে ঘেঁটে তার অরিজিনাল ফর্মটাই দেখা যায় না! ডাল বলুন, নবরত্ন কোর্মা, সবেতেই এই প্রবণতা। তাই সেটা হয়তো খেতে খেতে একটা সময় একঘেয়েমি এসে যেতে পারে। অবশ্য আজকের দিনে বাঙালি বিয়েতেই দেখুন না কেন লোকে রাধাবল্লভী, আলুর দম, ছোলার ডাল, শুক্ত, ঘণ্ট, কুমড়োর ছোঁকা (ছক্কা নয়), এসব ছেড়ে বেবি নান (জিনিসটা আসলে কুলচা), নানপুরি (এমন কিছুর অস্তিত্বই নেই। ওটা পরোটাই হবে), পনির জালফ্রেজি, নবরতন কোর্মা, ইত্যাদি খাচ্ছে। তবুও এটাকে আমার সাময়িক মতিভ্রম বলেই মনে হয়। নিজেকে গ্লোবাল করে তোলার চিন্তা ভাবনা। অচিরেই বৃহত্তর স্বাদ আমাদের মুখে লাগবে এবং এই অপরন্ধ্রণ ধীরে ধীরে মুছে যাবে বলেই আশা করি।
তাহলে শিঙাড়ার রেসিপি?

ভাল করে ময়েন দিয়ে অর্থাৎ সাদা তেল বা ঘি দিয়ে ময়দা মাখুন কালো জিরে ব্যবহার করতে পারেন, এবং নুন। এবারে ডিম্বাকৃতি বেলে নিন, তারপর ডিমটাকে আরও একটু উত্তর ও দক্ষিণে লম্বা করে বেলুন। যেন  পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ পথ। মাঝখান দিয়ে একটা ছুরি দিয়ে কুচুৎ করে অর্ধেক করে নিন, পাশে সরিয়ে রাখুন। ছোট ছোট আলু কেটে নিন, ফুলকপি ছোট ছোট কেটে নিন, গাজর বিন্স এসবও ব্যবহার করতে পারেন তবে দয়া করে কুমড়ো, বেগুন এসব দেবেন না প্লিজ! মানে পরীক্ষা চলতেই পারে তবে অথেনটিক হতে গেলে একেবারেই না! ঢ্যাঁড়সও না! পছন্দ মত মশলা যেমন জিরে ধনে ফোড়ন দিয়ে ফুলকপি, আলু, কড়াইশুঁটি ইত্যাদি সিদ্ধ হবার নিজস্ব সময় অনুযায়ী এক এক করে সাদা তেলে ছাড়ুন। কাঁচা লঙ্কা কুঁচি, গুঁড়ো গরম মশলা দিয়ে ধীরে ধীরে ঢেকে ঢেকে রান্না করে নিন। সিদ্ধ হয়ে গেলে পুর তৈরী।

এবারে কক্ষচ্যুত  কক্ষপথগুলোকে মুড়ে ত্রিকোণাকার পকেট তৈরী করুন, ময়দার উপর ময়দা যেখানে লাগে সেখানে জল দিয়ে জুড়ে দিন। পুর ভরুন, সঙ্গে কিসমিস বাদামও ব্যবহার করতে পারেন। তারপর পকেটের উপরের উঁচু হয়ে থাকা অংশটা ঢাকার মতো টেনে নিয়ে এসে, একটু একটু একটু করে বন্ধ করুন। যেন ময়দার কম্পিত আলপথ তৈরী হয়। এর পর আর কি? ডুবো তেল গরম করে আঁচ কমিয়ে টুপ করে এক এক করে শিঙাড়াগুলি নামিয়ে দিন। আর লাল হবার আগে পর্যন্ত ভাজুন। এটাই ট্রিক, লাল হয়ে গেলে পুড়ে যাবার সম্ভাবনা, আর কম হলে কাঁচা থাকার সম্ভাবনা। একটা ঘিয়ে ঘিয়ে রঙ তৈরী হলে এতদিনের খাদ্যাভ্যাস দিয়ে নিজেই বুঝতে পারবেন। আর কি? চাটনি, সস বা মুড়ির বাটির সঙ্গে পরিবেশন করুন! ও সঙ্গে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা দুধে ভেজানো চা রাখতে ভুলবেন না।

দক্ষিণ ভারতের সামোসার মোড়ক কিন্তু একটু অন্যভাবে তৈরী হয় এবং চ্যাপ্টা হয়। আগে উপরের ঢাকাটা দিয়ে তারপর আড়াআড়ি অংশটির একপ্রান্তকে টেনে এনে অপর প্রান্তের উপর চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। হায়দ্রাবাদের লুকমিতে অবশ্য সেই মাংসের কিমাই ব্যবহৃত হয়। আর ট্র্যাডিশনাল লুকমি কিন্তু বর্গাকার হয়।

বাংলাদেশে দুরকমই হয়, মাংস ও পেঁয়াজের পুরের সামুচা এবং সব্জির শিঙাড়া। মিয়ানমারেও সামুসা পাওয়া যায়। পাকিস্তানে একধরণের মুখরোচক খাদ্য পাওয়া যায় যাকে অনেকটা স্প্রিং রোলের মতো দেখতে, নাম কাঘাজি সামোসা বা কাগজি শিঙ্গাড়া! অবশ্যই এর পাতলা কাগজের মতো কুড়মুড়ে ভাজা আস্তরণের জন্য এই নাম। পাঞ্জাব প্রদেশে সামোসার সঙ্গে একধরণের স্যালাড দেওয়া হয়, কাবুলিচানা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা আর ধনে জিরে আদা দিয়ে মাখো মাখো করে।

এবারে চলুন মালদ্বীপে যাই। কারিপাতা, লঙ্কা, আদা কুঁচি, পেঁয়াজ কুঁচি, নুন আর লেবুর রস দিয়ে সিদ্ধ টুনা মাছের টুকরোগুলো মেশান। সাদা তেলে কারিপাতা এবং পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে সাঁতলান। এবারে একটু চিনি আর টুনা মাছের মিশ্রণটি তাতে দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। ময়দা, তেল, উষ্ণ জল এবং নুন দিয়ে মাখুন। তারপর তা থেকে লেচি বানিয়ে বড় বড় গোলাকৃতি রুটির মতো বেলুন। চার টুকরো করে তাকে পকেটের মতো বানান। তাতে টুনার মিশ্রণটি দিয়ে মুড়ে ফেলুন। জল এবং ময়দা দিয়ে থকথকে একটি মিশ্রণ বানান। তাতে পকেটগুলি ডুবিয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ভেজে তুলুন। ব্যাস মালদ্বীপের সামোসা, ‘বাজিয়া’ তৈরী!

উজবেকিস্তান সহ মধ্যপ্রাচ্যে আবার সামসাগুলিকে বেক করা হয় ওভেনে। তার পকেট তৈরী হয় মোটা করে এবং তার মধ্যে মাংসের পুর পুড়ে একের উপর এক রেখে ডানা মুড়ে বিশেষ ওভেনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

জিবুতি, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ইত্যাদি পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলি, যাদেরকে একত্রে আফ্রিকার শিং বলা হয় এখানে সাম্বুসা বিশেষ উৎসবে ব্যবহৃত হয়।

অবশ্য সাম্বুসা বা সাম্বুসাকের কথা শেষ হয় না যদি ইজ্রায়েলি খানপানে এর গুরুত্ব উল্লেখ না করি। চীজ, মাংস, কাবুলি চানা, পার্স্লে, বাদাম, ইত্যাদি পুর দিয়ে ত্রিকোণিক সাম্বুসাক ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইজরায়েলের ট্র্যাডিশনের অঙ্গ।

সাইজ নিয়েও একটু টানা হিঁচড়া করি বলুন? গুজরাটিরাই প্রথম সামোসাকে মিনিয়েচার ফর্মে নিয়ে এলো! তা ডালই হোক বা ছাতুই হোক বা কড়াইশুঁটি বা ড্রাইফ্রুট। তবে রোস্ট করে নিয়ে বানালে এই সামোসাগুলিই ১০-১২ দিন অনায়াসে রেখে দেওয়া যায়! তবে দোকানে বা প্যাকেটে যেগুলি বিক্রি হয় সেগুলিতে প্রিজারভেটিভস ব্যবহার করা হয়।

অতএব ছাতু বা মুগ ডাল রোষ্ট করে নিয়ে হালকা সাদা তেলে হিং জিরে আদা গুঁড়ো আর ধনে দিয়ে নেড়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করুন। তারপর ছোট ছোট লেচি বানিয়ে তাকে সেই উটপাখির ডিমের মতো বানিয়ে মাঝখান থেকে কেটে পকেটের মতো মুড়ে পুর ভরে ভেজে অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন মৌরি, তেঁতুল আর বেদানার দানা দিয়ে বানানো চাটনির সঙ্গে।

আর নোনতা খেতে খেতে যদি অরুচি ধরে যায় তাহলে আছে ক্ষীরের শিঙাড়া। ময়দার মোড়কে, ছোটএলাচ দিয়ে ক্ষীর ভেজে নিয়ে চিনির রসে ডুবিয়ে স্বাদ বদল। তবে মিষ্টি শিঙাড়ার কথা একটা গল্প না বলে শেষ করা যায় না।

সালটা ছিল ২০০৪! তার আগে এশিয়া পাবলিশিং-এর ভ্রমণ সঙ্গীতে হরিদ্বারের বিষ্ণুঘাটে মালাই সামোসার কথা পড়ে তার স্বর্গীয় স্বাদ আস্বাদনের ইচ্ছা বহুদিন থেকেই। তা ২০০১-এ গিয়ে পাই নি। ২০০৪-এও যখন গেলাম গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলাম নিষ্ফল। তারপর একদিন, বহু হাঁটাহাঁটি করে এক দোকানে বসেছি, চা খেতে, হঠাৎ তার শোকেসে দেখি, সাদা সাদা ত্রিকোণাকৃতি কিছু! জিজ্ঞাসা করতেই বলে কি না, ‘মালাই কা সামোসা’!

হা ভগবান, “যাহারে খুঁজিছ তুমি জগৎ সংসারে, কোল আলো করে আছে দেখ হে অন্তরে!” হাঁউ মাউ করে খান চারেক অর্ডার দিলাম, সরের মোড়কে ক্ষীরের পুর। আহা ইন্দ্রবাবু যখন নন্দনকাননে ঊর্বশীদের হাত থেকে টপাটপ আঙুর খান তখন বোধহয় এরকমই খেতে লাগে। কোথায় লাগে ওমর খৈয়ামের সাকি আর সাকিন। হামিনস্ত হামিনস্ত হামিনস্ত। তখন তো আর সোনার চাঁদ ক্যামেরা ছিল না বা স্বাদে ডুবে গিয়ে ছবি তোলার কথা মনেও ছিল না। গতবছর যখন আবার গেলাম তখন একদম ছবি তুলে নিয়ে এসেছি! হর কি পৌরির কাছেও এখন পাওয়া যাচ্ছে!

 


লেখক পরিচিতি : লেখক ভারত সরকারের আধিকারিক। অধুনা দিল্লিবাসী এবং নিয়মিত বাংলা ব্লগার। ফিসফাস-১ ও ফিসফাস-২ নামে লেখকের দুটি বই সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।