সুকুমার রায় স্মরণে
অবসর (বিশেষ) সংখ্যা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
বোম্বাগড়ের...পাঁউরুটি
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
‘কেউ কি জানো সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা-
ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখে আমসত্ত্ব ভাজা?
রানীর মাথায় অষ্টপ্রহর কেন বালিশ বাঁধা?
পাঁউরুটিতে পেরেক ঠোকে কেন রানীর দাদা?’
ঠিক মনে পড়ে না, এইটা নাকি.....
‘হাঁস ছিল সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে— “বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”’
ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের কোন ছড়াটা যে প্রথম কোথায় শুনে একেবারে অবা......ক হয়ে গিয়েছিলাম তা আজ ঠিক মনে নেই। প্রথম যখন তাঁর সমগ্র সাহিত্য এক মলাটে বেরোল, তারপরই সুকুমার রায়ের লেখা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। সেই সময়ের আগে খুব বেশি সুকুমার-চর্চাও হয়েছিল কি! যেটুকু ছিল, তা ঐ ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সৌজন্যে। মনে আছে, বইমেলা উপলক্ষে একবার ‘আবোল তাবোল’ আর ‘খাই খাই’ বেরোল খুদে, মিনি বই আকারে। কার বুদ্ধি ছিল জানি না, তবে রীতিমত মারামারি হতে দেখেছি সেই মিনি সংস্করণ সংগ্রহ করতে।
রায় পরিবারের সৃজনশীলতা তখন চূড়ান্ত প্রকাশ পাচ্ছে সুকুমার-তনয় সত্যজিৎ রায়ের গগনচুম্বী আন্তর্জাতিক খ্যাতির সৌজন্যে। একের পর এক ল্যান্ডমার্ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি গর্বিত করছেন বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অর্জন করছেন প্রশস্তি আর সম্মান। কী জানি, মাত্র আড়াই বছর যখন ছেলের বয়েস, সেই সময় জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে যাবার আগে পিতার কর্তব্য হিসেবে শিশু মানিকের মগজে কী অস্ত্র শান দিয়ে রেখে গিয়েছিলেন সুকুমার রায়, যে মগজাস্ত্রের দৌলতে অমন অবিশ্বাস্য বহুমুখী প্রতিভার মানুষটি নিজে তো প্রায় ঢাকাই পড়ে গেলেন ছেলের প্রতিভায়। সত্যি কথা বলতে কী, ষাট-সত্তরের দশক থেকে বাঙালি যেভাবে সত্যজিতে মেতেছে, তাঁর অকালপ্রয়াত জিনিয়াস পিতাটিকে সেভাবে চেনেনি। শিশু সাহিত্যিকের গণ্ডিটুকুতেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে তাঁকে। উপেন্দ্রকিশোরের কথাও ভুললে চলবে না। লেখার, রেখার মুনশিয়ানায় এমন বিস্মিত করা ধারাবাহিক ঐতিহ্যের তিন প্রজন্ম বিশ্বসাহিত্য-শিল্পকলার ইতিহাসে আর আছে কি?
উপেন্দ্রকিশোর সুকুমার সত্যজিত
|
সত্তর দশকের মাঝামাঝি, যখন বাংলার রাজনীতির একটা উত্তাল, আতঙ্কিত সময় অতিক্রান্ত, মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার উপক্রম করছে, তখনই, সম্ভবত ১৯৭৬ সালে, এল ‘সুকুমার সমগ্র’। ছোট বড় সবার মনেই পদ্যে, গদ্যে ছড়ায় সুকুমার রায়ের রচনা, অনেককাল আগের হলেও, এনে দিয়েছিল খুশির আর আনন্দের টাটকা বাতাস।
ছোটবেলায় ব্যাকরণে অনেক রকম সন্ধির কথা পড়েছিলাম। তার মধ্যে একটা ছিল বেশ মজার- ‘নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি’। যা হয় না কোনকালে, তাকেই সন্ধি করে মিলিয়ে দেওয়া। সুকুমার রায়ের রচনা পড়তে পড়তে আমার বার বার নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির কথা মনে পড়ে। অসম্ভবকে অনায়াসে সম্ভব করে তোলায়, নানারকম উদ্ভট কাণ্ড ঘটানোয়, বিচিত্র সব শব্দকে অনন্য কৌশলে জব্দ করতে পাশাপাশি বসানোয় সুকুমার রায়ের সত্যি জুড়ি নেই।
বাংলা সাহিত্যে স্বীকৃত কিছ গুলবাজ চরিত্র আছে সবার জানা। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা, গৌরকিশোর ঘোষের ব্রজদা – থ্রি মাস্কেটিয়ার্স! আরো কেউ থাকতে পারেন, তবে এই ত্রয়ীর জনপ্রিয়তা তর্কাতীত। কিন্তু এঁদের অনেক আগে, বাংলা সাহিত্যে বিচিত্র এক ভাষা, ধুন্ধুমার শব্দ আর উদ্ভট গল্পের অবতারণা করেছিলেন সুকুমার রায়। আর কী আশ্চর্য, এমনই জাদু সে রচনায়, এমন এক মজারু দুনিয়ায় হৈ হৈ করে এনে ফেলে আমাদের, মুঠো মুঠো খুশি যেন ঝরে ঝরে পড়ে। উচ্চারণে এতটুকু অসুবিধে হয় না। পড়তে পড়তে যেন একটা বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে – এমন তো হতেই পারে! এমন কেন সত্যি হয় না আহা! সত্যি, যদি এমন হত!
একই ছড়া ছোটদের মুখে শুনতে যেমন মজা, বড়দের মুখেও দিব্যি মানানসই। এমন রচনা সত্যিই দুর্লভ। সবে কথা বলতে শিখেছে যে, সব কথার মানে না বুঝলেও, মজাটা যেন সে বুঝতে পারে অনায়াসে।
দুর্লভ কিছু শব্দ, নিজের হাতে জম্পেশ করে গড়া কিছু শব্দ, উত্তুঙ্গ কল্পনায় এক নয়, এক পাল গরুকে নিপুণ দক্ষতায় হৈ হৈ করে শুধু গাছেই তোলা নয়, একেবারে মগডালে তুলে, সদ্য গজিয়ে ওঠা কচি পাতার অনাঘ্রাত শিরায় শিরায় পলকে তাদের দৌড় করিয়েছেন সুকুমার রায়। পড়তে পড়তে আমরাও নির্দ্বিধায় চলে যাই পিছু পিছু সেই পথ বেয়ে, যে পথে আর কারোর চরণচিহ্ন পড়েনি আগে... ভালোও লাগে।
পদার্থবিদ্যার সঙ্গে রসায়নের কোনও সংঘাত নেই। বেশ ভাল কথা। বিজ্ঞানের এই দুটি শাখাতেই স্নাতক হওয়া গেল। তারপর কী যে হল তাঁর মনে, চলে গেলেন লন্ডনে, উচ্চশিক্ষার অভিলাষ তখন মুদ্রণে। ভাবনার এই বিচিত্র বৈপরীত্যই কি যত আজগুবি লেখার উৎস?
সুকুমার রায়ের নিজের পড়াশোনার জগৎটাও ছিল বিশাল, সুবিস্তৃত। যা পড়েছেন, যা যা জেনেছেন, তাই নিয়েও তাঁর অজস্র রচনা- বিশেষ করে গদ্য। সম্প্রতি বাংলা সাহিত্যের চারজন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের রচনার সঙ্গে ছোটদের পরিচয় করিয়ে দিতে একটা কাজ করেছি। ‘মজা আনলিমিটেড’। সেখানে রায় পরিবারের সুপরিচিত তিন প্রজন্মের প্রথম আর মধ্যম পুরুষটি উপস্থিত। উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমার। এই কাজের আগেই আবার নতুন করে পড়া হল সুকুমার রায়। সুকুমারের সাহিত্যের যেটুকু নিয়ে আলোচনা হয়, তার বাইরেও যে কত মণিমুক্তো ছড়িয়ে আছে! কত যে অদ্ভুত বিষয়ের সমাহার সেখানে– গল্পও যত, প্রবন্ধও তত। সবকিছু থেকেই একটা শেখবার অবকাশ রয়ে যায়। ‘মজা আনলিমিটেড’-এর অনেকটা জুড়েই আছেন সুকুমার, গল্পে। ছোটদের জন্যে বেছে নিয়েছিলাম বিচিত্র তিনটে গল্প। ‘ঠুকে মারি মুখে মারি’ , ‘সত্যি’ আর ‘লোরির পাহারা’। মনে হয়েছিল, খুব চেনা নয় বলেই এই গল্পগুলো শুনে সুকুমারের আরো আরো অজানা গল্প খুঁজে পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে ছোটদের মনে। এই তিনটে গল্প পুরোপুরি তিন জগতের। মিল একটাই- অঢেল মজা।
যা খুশি নিয়ে লেখার কী এক আশ্চর্য কলম তাঁর! নইলে বাঃ, যদি, বটে, কিন্তু, তবু – এ হেন শব্দ দিয়ে কী করে এক একটা চরিত্র আর এক একটা ভরপুর ছড়া পটাপট গড়া যেতে পারে! ছোটরা এক একটি চরিত্র সেজে অভিনয় করলেও দারুণ মজাদার হবে।
আবার ফুলের মত নরম, কোমল একটি বস্তু, সে ফুলের ফোটা নাকি শোনা যায়! সেই ফোটা নিয়ে অমন বোমারু শব্দ ব্যবহার করতে কী কী থাকা দরকার মগজে, আজও তাই নিয়ে গবেষণা চলতে পারে বিস্তর। সারা পৃথিবীতে স্রেফ একজনই এই সব শব্দ শুনেছেন, জানেন। তাই, ছড়ার অক্ষরে অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে গেছেন সেই ধ্বনি।
কী করে এমন লেখা যেতে পারে-
‘ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম্ দ্রাম্, শুনে লাগে খটকা
ফুল ফোটে? তাই বল। আমি ভাবি পটকা!
শাঁই শাঁই পনপন্, ভয়ে কান্ বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে-ফুলের গন্ধ?’
ছোট বড় সকলের জন্যে আমার বলতে খুব ভালো লাগে ঠিকানা কবিতাটা।
“আরে আরে জগমোহন- এসো, এসো, এসো
বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেসো?
আদ্যানাথের নাম শোননি? খগেনকে তো চেনো?
শ্যাম বাগ্চি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো।...”
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সেই অর্থে কোনও তুলনার প্রশ্নই নেই। তবে একেবারে ছোটদের বাংলা কবিতা কি ছড়া শেখাতে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে সুকুমার হাতে তুলে দিলেই ছড়া কবিতার সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে তাড়াতাড়ি। সেই সখ্য খুব আনন্দেরও হয়। যদিও ছোটদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথের যেসব কবিতা, তাতে অনুভবের গভীরতা অসীম। হালকা চালের লেখা– তাও তাঁর কিছু কম নয়। তবু মানতেই হবে, এই খামখেয়ালের ছড়ায় সুকুমার রায় তাঁর ইনিংস ছক্কায় আর চারে ভরে দিয়েছেন।
ছোটদের যাদের বাংলা ভাষায় কথা বলার অভ্যসে আছে, বা যারা এখনো পড়তে শেখেনি, শুধু মুখে মুখে শুনে শুনেই বলে, দেখেছি তারাও এই সব শব্দ বলে দারুণ মজা পায়। আরো একটা লক্ষ্য করার বিষয় হল, শব্দগুলোর মধ্যে তার ভাব বা এক্সপ্রেশনটাও যেন গেঁথে দেওয়া আছে। উচ্চারণ করলেই এক্সপ্রেশনটা মুখে ফুটে ওঠে আপনা থেকেই- অটোমেটিক্যালি। হয়তো অনেকসময় না বুঝেই ছোটরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয় শুধু শব্দগুলো উচ্চারণ করেই। আর একটু বুঝিয়ে দিলে তো আনন্দে থৈ থৈ!
আসলে সুকুমার রায়ের লেখার একট আলাদা মেজাজ আছে। বিশেষ করে ছোটদের জন্যে তাঁর মত এমন ছুটন্ত, প্রাণবন্ত, অনন্ত বাংলা ছড়া- কবিতা আর কেউ লিখতে পারেননি।
বিদেশে থাকা এক ইংরেজি-বলা বঙ্গশিশু ‘গল্প বলা’ ছড়াটা শিখেছে। ‘এক যে রাজা, থাম না দাদা...।’ থেকে থেকেই তুবড়ির মত বলে, বেশ গলা ছেড়ে।
ক’দিন পর সে বাবার সঙ্গে গাড়ি করে রাস্তায় যাচ্ছে। পাশ দিয়ে আর একটি গাড়ি সিগিন্যাল না দিয়েই লেন চেঞ্জ করে আচমকা সামনে ঢুকে পড়ল। বাচ্চাটি গাড়ির পেছনে। কার সীটে। ঘটনাটা ভাল করে দেখতেই পায়নি। শুধু শুনল গাড়ির চালকের উত্তেজিত স্বগতোক্তি, ‘হি নিডস্ টু গেট সাম লেসনস্’।
অমনি পেছন থেকে শিশুটির মন্তব্য, ড্যাডি, ইউ শ্যুড সে-
‘ধরব ঠেসে টুঁটির ’পরে,
পিট্ব তোমার মুণ্ডু ধরে-’
ভাবা যায়! কী অব্যর্থ সুকুমার প্রয়োগ!
খুব অবাক হয়েছিলাম ‘হারকিউলিস’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। বুকশেলফ্ থেকে সুকুমার সমগ্র পেড়ে পাতা ওল্টাচ্ছি। ৬৬ পাতায় চোখ আটকে গেল। ‘বুদ্ধিমানের সাজা’। ভাবলাম তা কী করে হয়? বুদ্ধিমান কী করে সাজা পায়! পড়ে ফেললাম। ভারি মজার গল্প। যেখানে এ গল্পের শেষ, তারপরেই শুরু ‘হারকিউলিস’।
“মহাভারতে যেমন ভীম, গ্রীস দেশের পুরাণে তেমনই হারকিউলিস। হারকিউলিস দেবরাজ জুপিটারের পুত্র কিন্তু তার মা এই পৃথিবীরই এক রাজকন্যা, সুতরাং তিনিও ভীমের মত এই পৃথিবীরই মানুষ, গদাযুদ্ধে আর মল্লযুদ্ধে তাঁর সমান কেহ নাই। মেজাজটি তাঁর ভীমের চাইতেও অনেকটা নরম, কিন্তু তাঁর এক একটি কীর্তি এমনি অদ্ভুত যে, পড়িতে পড়িতে ভীম, অর্জুন, কৃষ্ণ আর হনুমান এই চার মহাবীরের কথা মনে পড়ে।”
একে ছোটবেলা থেকেই রামায়ণ-মহাভারতের পোকা। তার ওপর হারকিউলিস নামটাই জানা- মহাবীর। যদিও বীরত্বের কাহিনি তেমন বিশদ করে জানা ছিল না। অন্যান্য গল্পের তুলনায় হারকিউলিসের গল্প বেশ বড়। পাঁচ কলাম জুড়ে। মানে প্রায় আড়াই পাতা।
এক নিঃশ্বাসে শেষ। কী চমৎকার বর্ণনা! কী তার শৌর্য বীর্য! মহাকাব্যের ট্র্যাজিক চরিত্রের কী নিদারুণ জীবনের অবসান! সব মিলিয়ে ঐটুকু অবসরে যেন অন্য এক সময়, অন্য এক লোক থেকে ঘুরে এলাম টাইম মেশিনে চড়ে। এই রচনাগুলো পড়লে বোঝা যায় সুকুমার রায় মানে শুধু ছন্দ নয়। অসামান্য ভাষার ব্যঞ্জনাও। ঠিক করে ফেললাম, রেডিয়োর রহস্য রোমাঞ্চ ধারাবাহিক, ‘আসছে সে আসছে’-তে করতেই হবে এটা। শুরু করে দিলাম হারকিউলিস-এর নাট্যরূপ। আরো একবার ডুবে গেলাম সেই মহাকাব্যের অতলে। যেন রূপকথার অপরূপ জগত। দেবরাজ জুপিটার, রাজা ইউরিসথিউস, নেমিয়ার জঙ্গল, সেরিনিয়ার হরিণ, রাণী হিপোলাইটের চন্দ্রহার- আরও কত কী! রেডিয়োতে এর আগে হারকিউলিসকে নিয়ে কোনও কাজ হয়নি। প্রথম করার সৌভাগ্য হল আমার। অভাবিত প্রতিক্রিয়া। সুকুমার রায়ের অনুপম রচনাশৈলীর কাছে চিরঋণী হয়ে রইলাম।
সুকুমার রায়ের ছবি দেখে যে ইমপ্রেশন হয় তা রীতিমত শহুরে সফিস্টিকেটেড। কোনও মজার মানুষের ধারপাশ দিয়েই যান না। ভাবাই যায় না এই মানুষটির মগজের খাঁজে মজার জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি, বরফান মুলুক সব গিজ গিজ করছে। খুব নিবিষ্ট হয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ক্ষীণভাবে খুঁজে পাওয়া যায় এক চিলতে ইন্টেলেকচুয়াল হাসি।
তার মানে কি তাঁর কলমে শুধুই মজার বাস? এতটুকু ট্র্যাজেডি ঠাঁই পায়নি কোনদিন? এই তুরুপের তাসটা বোধহয় তিনি তুলে রেখেছিলেন সযত্নে। ‘আবোল তাবোল’-এর শেষ লেখাটির শুরু বেশ রহস্যঘন। অথচ মজার।
মেঘমুলুকে ঝাপসারাতে,
রামধনুকের আবছায়াতে,
তারপর ক’লাইন না এগোতেই চমক জাগানো মোচড়-
আজকে দাদা যাবার আগে
বলব যা মোর চিত্তে লাগে-
আর কলম তুলে নেবার আগে, এই হাজার মজার মানুষটি কী অনায়াসে চোখের কোণা ভিজিয়ে দিয়ে গেলেন বাছাই করা আটটি শব্দে-
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর।
নিজেকে নিয়ে অবলীলায় এমন রসিকতাও করা যায়!
এই নিবন্ধ অন্ত হল
এবার তবে যাই, ছুটি!
সবাই মিলে ভাগ করে খান
বোম্বাগড়ের পাঁউরুটি।
লেখক পরিচিতিঃ ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল ছবি আঁকাকেই জীবিকা করার। ঘটনাচক্রে তা হয়ে ওঠেনি। রংতুলির প্রতি সেই ভালবাসা ফিরে এল একটু অন্যভাবে। ক্যানভাসে রং বোলানোর বদলে অভিনয়ের মাধ্যমে নানা রঙ্গের চরিত্র রূপায়ন। নেশা থেকে কখন সেটাই হয়ে গেল পেশা।
ঈশ্বরপ্রদত্ত কন্ঠের সুচারু ব্যবহার সকলকেই মুগ্ধ করে। দূরদর্শনে সংবাদপাঠ, মঞ্চে আবৃত্তি, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং অভিনয়ের সব কটি মাধ্যমেই সমান স্বচ্ছন্দ। দেশে-বিদেশে অসংখ্য অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মন জয়। সাহিত্যের প্রতি অপরিসীম অনুরাগ। গল্প পড়া এবং শোনানোর প্রতি গভীর ভালবাসা। আর একটা ভালবাসার জায়গা গান। প্রাণের আনন্দে গেয়ে ওঠেন যখনই সময় পান।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।