প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আইন ও প্রশাসন

অক্টোবর, ৩০, ২০১৫

 

শিশু অধিকার ও বাংলাদেশ

শেখর দত্ত


মনে পড়ে ষাটের দশকে আমরা যখন ছাত্র সংগঠনের দাবিনামা কিংবা জাতীয় দাবিনামা প্রণয়ন করছি; তখন শিশু অধিকার বিষয়টা ইস্যু হিসাবে সামনে ছিল না। তখন বিবেচনায় ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার, জাতীয় অধিকার, মৌলিক অধিকার, সার্বজনীন শিক্ষার অধিকার প্রভৃতি বিষয়। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১-দফায় ছিল কেবল পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার দাবি। আর ঊনসত্তরের ১১-দফায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং নারী শিক্ষার বিষয়টা দাবি হিসাবে তোলা হয়েছিল। তবে যদিও দাবি হিসাবে ছিল না, তবু তখন কচি কাঁচার আসর, খেলাঘর, ব্রতচারী দল মফস্বল শহর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অর্থাৎ শিশু সংগঠন থাকলেও শিশু অধিকারের বিষয়টা ইস্যু হিসাবে জাতির সামনে ছিল না। তবে শিশুর বিষয়টা আমাদের সমাজে সুদূর অতীত থেকেই ছিল। মধ্যযুগের কবি ভারত চন্দ্র রায় গুণাকর ঈশ্বর পাটনীর কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ পরে আধুনিক যুগে রবীন্দ্রনাথ শিশুদের নিয়ে কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। তিনি এক কবিতায় বলেছেন, ‘সব দেবতার আদরের ধন / নিত্যকালের তুই পুরাতন/ তুই প্রভাতের আলোর সম বয়েসী।’ আর জাতীয় কবি নজরুল শিশুদের কল্পনা করেছেন, ‘সকাল বেলার পাখি’ বলে। আর সুকান্ত যা বলেছেন, তা ছিল ষাটের দশকে আমাদের প্রতিজ্ঞা। ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি / নব জাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।’

প্রসঙ্গত ১২১৫ সালে ইংলন্ডে ম্যগনা কার্টায় (জাতীয় চুক্তিনামা) প্রজাদের অধিকার বিষয়টা সামনে আসে এবং গণতন্ত্রের সাথে মানবাধিকার বিষয়টা জড়িত হয়। পুঁজিবাদ বিকাশের ভেতর দিয়ে দেশে দেশে মানবাধিকারে প্রশ্নটি ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অধিকারের প্রশ্নটা আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে। ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকার সনদ ঘোষিত হয়। অনেক পর ১৯৬৯ সালে শিশু বিষয়ে ১০টি অধিকার জাতিসংঘ গ্রহণ করে এবং ১৯৮৯ সালে তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে সনদ আকারে গ্রহণ করা হয়। তবে স্বাধীনতার পর পরই প্রথম ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের বিষয়টা সুস্পষ্ট ও সার্বিকভাবে আমরা গ্রহণ করি। সংবিধানে বলা হয়, ‘..শিশুদের অনুকূলে অগ্রগতির জন্য... বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’

সংবিধানে এই কথা লিখেই বঙ্গবন্ধু সরকার বসে থাকে নাই। ১৯৭৪ সালে প্রণীত হয় শিশু আইন। ১৯৯৪ সালে শিশু নীতি করা হয়। তবে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৩ সালে সময়োপযোগী শিশু অধিকার আইন প্রণীত হয়। এই ইতিহাস নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে হলো, শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টা হঠাৎ উঠে আসে নি। এটা মানব জাতি আর সেই সাথে বাঙালি জাতিরও সংগ্রাম-আন্দোলনের ফসল। সংগ্রাম আন্দোলন করেই দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে যেতে হবে। এটা তো ঠিক যে, সিলেটে শিশু রাজন হত্যা ও ভিডিও চিত্র প্রকাশের পর আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে একটা ঝাঁকুনি দেয়। যে ইস্যু ঝাঁকুনি দিতে সক্ষম হয়, সেই ইস্যু কিন্তু আইনকে খাতাপত্রে রাখে না; বাস্তব প্রয়োগে নামতে সহায়তা করে।

সহজেই ধারণা করা যায় শিশু অধিকারের বিষয়টা এখন কেবলই সামনে আসতে থাকবে। এখানে উল্লেখ্য যে, শিশু অধিকার বলতে বুঝায়, শিশুর বাঁচার গ্যারান্টি, যত্নের গ্যারান্টি, নিরাপত্তার গ্যরান্টি, আনন্দময় বিকাশের গ্যারান্টি, বৈষম্য না হওয়া গ্যারান্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার গ্যারান্টি, শিশু শ্রম বন্ধের গ্যারান্টি নারী শিশুর সমঅধিকারের গ্যারান্টি প্রভৃতি। এই সব গ্যারন্টি বাস্তবায়নের কতক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর থেকে এগিয়ে আছে। তবে এই গ্যারান্টিগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব কেবল রাষ্ট্র বা সরকারের নয়, সমাজ ও পরিবারেরও। এই সব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে মনে হলো, যখন কমিউনিস্ট পার্টি করতাম, তখন মনে হতো বিপ্লবের পর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে এক ধাক্কায় সব সমস্যা সমাধানের দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় জটিল এক বিষয়। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পথও কঠিন ও জটিল। তাই শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়টা সহজ সরল কোনো বিষয় নয়।

শিশুর বাসযোগ্য দেশ ও বিশ্ব গড়ার সংগ্রাম চলছে, চলবে।


লেখক পরিচিতি - রাজনীতিক লেখক সমাজসেবক।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।