গান:
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বাংলা গানের রেকর্ড
রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় হয় তিরিশ দশকে
- মূলতঃ বাংলা রেকর্ডের মাধ্যমে। ডিস্ক রেকর্ডের জগতে সুরকার
ও গীতিকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল অবশ্য অনেক
আগে। ১৯০৫ সালে পি.সি.বোসের (পুর্ণ চন্দ্র বোস) গাওয়া গান "অয়ি
ভুবন মোহিনী" 'নিকোল' কোম্পানীর লেবেলে বার হয়। সম্ভবতঃ
এই গানটিই ডিস্ক রেকর্ড-এ করা প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত। সিলিণ্ডার
রেকর্ড-এ রবীন্দ্রনাথ নিজের কণ্ঠ দিয়েছিলেন অবশ্য এরও আগে। নিকোল
ছাড়া 'বেকা' 'বেকা-গ্রানড' 'ওডিঅন' লেবেলেও কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত
প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৬ সালে গ্রামাফোন কোম্পানীর বেলেঘাটা কারখানায়
বৈদ্যুতিক রেকর্ডিং-এর উদ্বোধন-এর দিন কবিকণ্ঠ রেকর্ড করা হয়েছিল।১৯২৭
সালে তিনটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়,তার মধ্যে কবির গাওয়া গান "আমি
সংসারে মন দিয়েছিনু" এবং অপরপিঠে "অন্ধজনে দেহ আলো"
। ৩০-এর দশক থেকে বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত জনপ্রিয়তা
অর্জন করতে থাকে। এই সব শিল্পীরা হলেন কনক দাস,উমা বসু,ধীরেন
দাস,পঙ্কজ মল্লিক, কে.এল.সাইগল, অমিতা সেন, সাহানা দেবী, অমিয়া
ঠাকুর, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষ প্রমুখেরা। হিন্দুস্থান,
হিজ মাষ্টার্্স্ ভয়েস, সেনোলা প্রভৃতি কোম্পানী থেকে বহু শিল্পীর
রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হল, সাহানা দেবীর কণ্ঠে "আমার আঁধার ভালো" ও "এবার
দুঃখ আমার অসীম পাথার", পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে "গগনে
গগনে আপনার মনে" ও "যৌবন সরসী নীড়ে মিলন শতদল",
কনক দাসের কণ্ঠে "আমার মন চেয়ে রয়" ও "আমি সন্ধ্যাদীপের
শিখা", কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কণ্ঠে, "ঐ মালতীলতা
দোলে" ও "ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে", ধীরেন
দাসের কণ্ঠে, "আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে" ও "ও
আমার দেশের মাটি", শৈল দেবীর কণ্ঠে, "হে নুতন দেখা
দিক আরবার " ও "সমুখে শান্তি পারাবার "।
এছাড়া বোম্বাই ছায়াচিত্র
জগতের অনিন্দিতা গায়িকা ও অভিনেত্রী শান্তা আপ্তের দ্বিতীয় বাংলা
গানের রেকর্ড "দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে"
এবং "জাগরণে যায় বিভাবরী" এবং রাজেশ্বরী বাসুদেব(দত্ত)-এর
কণ্ঠে "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল" ইত্যাদি গানের রেকর্ড
গুলি রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে বিশেষ মুল্যবান। ৩০-এর দশকে সর্বাধিক
সংখ্যক রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেন কনক দাস।
রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্রিয়
করে তোলার ব্যাপারে পঙ্কজ মল্লিকের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখের
দাবী রাখে। তিনিই প্রথম চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচলন
করেন।প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত মুক্তি ছবিতে প্রথম কানন দেবী ও
পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যায়।গানগুলি হল "তার
বিদায়বেলার মালাখানি" ও "আজ সবার রঙে রঙ মেলাতে হবে"-কানন
দেবী এবং "আমি কান পেতে রই" ও "দিনের শেষে ঘুমের
দেশে"-পঙ্কজ মল্লিক।
নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড
হয় ১৯২৬ সালে,গানটি হল "জাতের নমে বজ্জাতি সব"- শিল্পী
হরেন দত্ত।নজরুল সুরারোপিত গানে সুরের বৈচিত্র্য লক্ষণীয়।বিভিন্ন
রাগ রাগিনীকে তিনি নিপুণভাবে তার গানে প্রয়োগ করেছেন। তিনি নিজে
নতুন নতুন রাগও সৃষ্টি করেছেন।বিভিন্ন ধারার গান রচনা ও সুর
সংযোজনার ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
নজরুল রচিত বহু গানে আমরা
অন্যান্য বিখ্যাত সুরকারদের (ধীরেন দাস,কমল দাশগুপ্ত,হিমাংশু
দত্ত,সুবল দাশগুপ্ত,চিত্ত রায়,শৈলেশ দত্তগুপ্ত) সুরের প্রাধান্য
লক্ষ করি। নজরুলের গানের বিশিষ্ট শিল্পীরা হলেন-আঙুরবালা, যুথিকা
রায়, বীণাপাণি দেবী, ইন্দুবালা, নিতাই ঘটক, কে.মল্লিক, আব্দুল
লতিফ, আব্বাসউদ্দিন আহম্মদ, জ্ঞান গোস্বামী প্রভৃতিরা।
কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে
বাংলা সিনেমার যোগাযোগ প্রত্যক্ষ। বিদ্যাপতি ও সাপুড়ে চিত্রতে
তিনি ছিলেন কাহিনীকার। ধ্রুব ছবির গীতিকার, সুরকার, গায়ক, অভিনেতা
ও অন্যতম পরিচালক - সবই তিনি ছিলেন। চৌরঙ্গী ও গোড়া ছবির তিনি
ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক।
কাজী সাহেবের জনপ্রিয় গান
হল - শচীন দেব বর্মনের গাওয়া পল্লীগীতি "চোখ গেল চোখ গেল
" এবং "পদ্মার ঢেউরে"। আঙুরবালার কণ্ঠে গান হল
"আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়,এছাড়া "বিদায় সন্ধ্যা
আসিল ঐ"।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)