হিন্দুস্থানী
ও কর্ণাটী সঙ্গীত পদ্ধতি
বর্তমানে ভারতীয় সঙ্গীতে
দুটি পদ্ধতি প্রচলিত।[১] উত্তর ভারতীয় এবং [২]দক্ষিণ ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতি। সারা উত্তর ভারতে - অর্থাত্, বাংলা, বিহার, উত্তর
ও মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, দিল্লী প্রভৃতি
স্থানে যে সঙ্গীতের চর্চা হয়, তা উত্তর ভারতীয় বা হিন্দুস্থানী
সঙ্গীত পদ্ধতি নামে পরিচিত। মাদ্রাজ,কর্ণাটক,মহীশূর প্রভৃতি
দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত সঙ্গীতকে দক্ষিণ ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতি বা কর্ণাটী সঙ্গীত পদ্ধতি বলা হয়। অনেকে এ-দুটিকে
"উত্তরী পদ্ধতি" ও "দক্ষিণী পদ্ধতিও" বলে
থাকেন।
ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস
অনুধাবন করলে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে ভারতীয় সঙ্গীতে একটি
মাত্র পদ্ধতির প্রচলন ছিল। পণ্ডিতদের মতে গুরুত্বপুর্ণ রাজনৈতিক
ও সামাজিক কারণ সঙ্গীত পদ্ধতির বিভাজনের জন্য দায়ী। খ্রীষ্টীয়
একাদশ শতকে ভারতবর্ষের উত্তরাংশে মুসলমান-শাসন সুরু হয়। এই সময়
উত্তর ভারতে ভারতীয় সঙ্গীতের ওপর আরব ও পারস্য দেশীয় সঙ্গীতের
প্রভাব পড়ে। কিন্তু দক্ষিণ ভারত দীর্ঘকাল যাবত্ মুসলমান প্রভাবের
বাইরে থাকে। এর ফলে ভারতীয় সঙ্গীতে কালক্রমে হিন্দুস্থানী এবং
কর্ণাটী এই দুই পদ্ধতির উদ্ভব হয়। নিচে এই দুটি পদ্ধতির তফাত্গুলি
সংক্ষেপে দেওয়া হল:
উভয় পদ্ধতিতে স্বরের সংখ্যা
বারো হলেও, কয়েকটি স্বরের ক্ষেত্রে ভিন্ন নাম ব্যবহার করা হয়।
হিন্দুস্থানী কোমল রে ও ধ হল কর্ণাটী শুদ্ধ রে ও ধ। হিন্দুস্থানী
শুদ্ধ রে ও ধ কর্ণাটীতে চতুঃশ্রুতি রে ও ধ। হিন্দুস্থানী তীব্র
ম কর্ণাটীর প্রতি ম। হিন্দুস্থানী কোমল গ কর্ণাটীর সাধারণ গ।
কর্ণাটীতে কোন কোমল স্বর নেই।
হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে ঠাটের সংখ্যা দশ, আর কর্ণাটী পদ্ধতিতে
মেলের (ঠাট) সংখ্যা ঊনিশ।
হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে তাল-লয় সঙ্গত করার জন্য তবলা ব্যবহার করা
হয় ও কর্ণাটী সঙ্গীতে ব্যবহার হয় মৃদঙ্গ।
হিন্দুস্থানী পদ্ধতিতে গানের বন্দিশের শুদ্ধতার ওপর গুরুত্ব
দেওয়া হয়। কোন গায়ক বন্দিশ বদল করতে পারেন না। কিন্তু কর্ণাটী
সঙ্গীতে এক্ষেত্রে গায়কের স্বাধীনতা আছে।
হিন্দুস্থানী গায়ন পদ্ধতিতে স্বরের স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের ওপর
বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়,আর কর্ণাটী পদ্ধতিতে স্বরের কম্পন ও চঞ্চলতা
বিশেষভাবে সমাদৃত।
কর্ণাটী পদ্ধতিতে মোট তালের সংখ্যা ৩৫। কিন্তু হিন্দুস্থানী
সঙ্গীতে তালের সংখ্যা সীমিত নয়।
হিন্দুস্থানী পদ্ধতিতে রাগের প্রধানতঃ তিনটি জাতি আছে - সম্পুর্ণ,ষাড়ব,ঔড়ব।
কর্ণাটী পদ্ধতিতে জাতির সংখ্যা পাঁচ - সম্পুর্ণ,ষাড়ব,ঔড়ব,বক্র
ও সঙ্কীর্ণ।