প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভারতের যৌনকর্মী: ক্ষমতায়নে তাঁদের প্রচেষ্টা

যৌনকর্মী, ক্ষমতায়ন - কোনওটাই খুব প্রচলিত শব্দ নয়। আগে যাঁদের বেশ্যা, পতিতা, গণিকা, বারাঙ্গনা, দেহোপজীবিনী, বারবণিতা ইত্যাদি নামে বলা হত, গত দশ-পনেরো বছর ধরে অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের যৌনকর্মী নামে উল্লেখ করা হচ্ছে। আজকাল পৃথিবীর সব দেশেই তাঁরা নিজেদের সেক্স ওয়ার্কার বা এর কোনও প্রতিশব্দে অভিহিত হতে চান, কারণ তাঁরা মনে করেন অন্যান্য পেশার মতই যৌনকর্মও একটি পেশা।

Empowerment-এর প্রতিশব্দ হিসেবে সম্প্রতি 'ক্ষমতায়ন' শব্দটির ব্যবহার চালু হয়েছে, বিশেষভাবে নারীর ক্ষমতাকে পুরুষের ক্ষমতার সমতুল্য করার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। যৌনকর্মীদের বেশীরভাগই নারী এবং ক্ষমতার মাপকাঠিতে নারীদের মধ্যেও তাঁদের অবস্থান সবচেয়ে নীচের দিকে। নারীর ক্ষমতায়ন সম্বন্ধে গত তিন-চার দশকে প্রভূত পরিমানে লেখালেখি হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের কথা এই যে যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রায় কিছুই লেখা হয় নি, কোনও দেশেই। ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের কিছু অঞ্চলের যৌনকর্মীরা সঙঘবদ্ধ হয়ে তাঁদের শোচনীয় অবস্থা ও অসহায়তা থেকে বেরিয়ে নিজেদের ন্যায্য মানবিক অধিকারের বা ক্ষমতায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য তারই একটু আভাস দেওয়া।


শোচনীয় অবস্থা ও অসহায়তা:

ভারতের পুরাণ, মহাকাব্য, জাতক সংহিতা, বাত্স্যায়নের কামসূত্র, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি সাহিত্যে যৌনকর্মীদের সম্বন্ধে কিছু বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। বৃটিশ আমলে কলকাতা, চেন্নাই. মুম্বাই ইত্যাদি শহরের নথিপত্রে এবং বিংশ শতাব্দীতে লেখা অনেক গল্প-উপন্যাসে যৌনকর্মীদের জীবন-যাপনের কিছু বিবরণ পাওযা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ভারতের যৌনকর্মীদের সম্বন্ধে অনুসন্ধানমূলক তথ্যাদি খুবই সীমিত।

গত দু-দশকে এড্স নিবারণের উদ্দেশ্যে ভারতের কয়েকটি লালবাতি এলাকায় যৌনকর্মীদের মধ্যে বিশেষ প্রকল্প শুরু হয়েছে ও সেই সূত্রে তাঁদের জীবনযাত্রা, পেশাগত কার্যকলাপ, নানাবিধ সমস্যা ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্যাদি সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু লালবাতি এলাকার বাসিন্দা ছাড়াও ভারতে আরও অনেক রকমের যৌনকর্মী আছেন। তাঁদের সংখ্যাই অনুপাতে বেশী। উপরোক্ত রিপোর্টগুলি ছাড়া, ভারতের যৌনকর্মীদের সম্বন্ধে আরও যেসব তথ্যাদি বিভিন্ন বই, প্রবন্ধ, পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, নীচের বিবরণটি তারই ভিত্তিতে লেখা।

ভারতে আনুমানিক ২৫ - ৩০ লক্ষ যৌনকর্মীদের মোটামুটি এই কয়েকটি শ্রেণীরে ভাগ করা যায়: (১) লালবাতি এলাকার ভেতরে বা বাইরে যৌনকর্মালয়ে (ব্রথেল-এ) বসবাসকারী যৌনকর্মী; (২) পথচারী বা ভাসমান (ফ্লোটিং) যৌনকর্মী; (৩) ছোটবেলায় পারিবারিক দারিদ্রের জন্য দেবদাসী হিসেবে উত্সর্গীকৃত মেয়েরা যাদের বেশীর ভাগকেই পরে যৌনকর্মী হতে হয়; (৪) যাযাবর শ্রেণীর যেসব মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই যৌনকর্মী হওয়ার তালিম দেওযা হয় এবং পরে পারিবারিক অভাব মেটাবার জন্য যৌনকর্মে নিযুক্ত করা হয়; (৫) যেসব মেয়েদের পূর্বপুরুষরা প্রথাগতভাবে পারিবারিক ভরণ-পোষণের জন্য মেয়েদের নাচগান পরিবেশনের উপর নির্ভর করতেন, তাঁদের অনেকে আজকাল বাঈজী, নাচনী ইত্যাদি নামে যৌনকর্মে নিযুক্ত থাকেন; (৬) কলগার্ল, যাঁদের অনেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত এবং নিজেদের জীবনযাত্রার মান বাড়াবার জন্য আংশিক বা পুরোভাবে যৌনকার্যে নিযুক্ত থাকেন; (৭) পুরুষ বা হিজড়ে যৌনকর্মী যাঁরা টাকার বিনিময়ে প্রধানতঃ সমকামী বা উভয়কামী পুরুষদের যৌনক্ষুধা মেটান এবং (৮) শিশু যৌনকর্মী যারা কলগার্ল ছাড়া উপরের সব শ্রেণীরই অন্তর্ভুক্ত এবং যাদের বেশির ভাগই ট্র্যাফিকিং-এর মর্মান্তিক শিকার।

বেশীর ভাগ যৌনকর্মীকেই ছলে-বলে-কৌশলে যৌনকার্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ দৈব-দুর্বিপাকে এমন চরম দুর্দশার মুখে পড়েছেন যে নিছক বেঁচে থাকার তাগিদে যৌনপেশায় যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। যৌনকর্মীদের প্রতি সামাজিক বিরূপতা বা ঘৃণা এত গভীর ও ব্যাপক যে, যাঁর উপর একবার যৌনকর্মীর ছাপ পড়ে যায় তাঁর পক্ষে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার কোনও উপায় থাকে না। ন্যুনতম মানবিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে চরম দারিদ্রে, জঘন্য পরিবেশে নানাভাবে নিপীড়িত হয়ে তাঁকে বেঁচে থাকতে হয়।


যৌনকর্মীদের মধ্যে এড্স-এর প্রকোপ:

ভারতের বেশীর ভাগ যৌনকর্মী কোনও না কোনও যৌনরোগে প্রায়ই ভোগেন। আজকাল তাঁদের অনেককেই অ্যাণ্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু যৌন-সংসর্গের মাধ্যমে এইচ-আই-ভি নামক ভাইরাস শরীরে সংক্রামিত হলে যে জীবন-নাশক এড্স রোগের উত্পত্তি হয়, তার কোনও প্রতিষেধক টিকা বা আরোগ্যকর ওষুধ এখনও বেরোয় নি। যৌনকর্মীরাই এড্স-এর সবচেযে বড় শিকার, কারণ নিছক জীবিকার জন্য তাঁদের অনেক খদ্দেরকে যৌনতৃপ্তি দিতে হয় এবং বেশীর ভাগ খদ্দের কণ্ডোম ব্যবহার করতে চান না।

এড্স-নিবারণ প্রকল্পের সহায়তায় যে সব যৌনকর্মীরা কণ্ডোম ব্যবহারের অপরিহার্যতা সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন তাঁরাও দারিদ্রের কারণে কণ্ডোম ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক খদ্দেরকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। সেজন্য ভারতের কিছু শহরের লালবাতি এলাকার যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচ-আই-ভি/এড্স-এর প্রসার ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে গেছে এবং তার ফলে তাঁদের খদ্দেরদের মধ্যেও বাড়ছে। এইচ-আই-ভি আক্রান্ত খদ্দেরদের মাধ্যমে তাঁদের স্ত্রীদের শরীরেও এই ভাইরাস সংক্রামিত হচ্ছে। আবার স্ত্রীদের মাধ্যমে তাঁদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সন্তান এই ভাইরাসের শিকার হচ্ছে।

১৯৯০ দশকের প্রথম থেকে ভারতের কিছু শহরের লালবাতি এলাকায় যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচ-আই-ভি/এড্স নিবারক প্রকল্প কার্যকারী হয়। কলকাতার সোনাগাছি এলাকায় যৌনকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় ১৯৯২ সালে। এই প্রকল্পের একটি অঙ্গ হিসেবে ঐ এলাকার কিছু বাছাই করা যৌনকর্মীকে এইচ-আই-ভি/এড্স, কণ্ডোম ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে 'পিয়ার এডুকেটর' হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। রোজ কিছু সময় অন্যান্য যৌনকর্মীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাঁদের এইচ-আই-ভি/এড্স সম্বন্ধে সচেতন করো ও কণ্ডোম ব্যবহারের পদ্ধতি ইত্যাদি শিখিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে একটি মাসোহারা বরাদ্দ করা হয়।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পিয়ার এডুকেটররা বুঝতে পারলেন যে, যৌনকর্মীরা তাঁদের খদ্দেরদের সঙ্গে যৌন সংসর্গের সময়ে কণ্ডোম ব্যবহার করতে যথেষ্ট আগ্রহী হলেও, খদ্দেররা সাধারণভাবে তা করতে একেবারেই অনিচ্ছুক। এটাও বুঝতে পারলেন যে, কোনও যৌনকর্মী তাঁর কণ্ডোন ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক খদ্দেরকে প্রত্যাখ্যান করলে, সেই খদ্দেরের পক্ষে একটু বেশী টাকা খরচ করলে কণ্ডোম ব্যবহার না করেই যৌন সংসর্গে রাজী এরকম যৌনকর্মীকে আশেপাশেই পাওয়া শক্ত হয় না। ফলে কণ্ডোমের ব্যবহারের অনুপাত প্রায় কিছুই বাড়ছিল না।


দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি:

এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্যে সোনাগাছির পিয়ার এডুকেটররা, প্রকল্পের ডাক্তার, সমাজসেবিকা ইত্যাদির সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করলেন যে, ওখানকার যৌনকর্মীদের সঙঘবদ্ধ হতে হবে এবং তাঁদের খদ্দেরদের কাছে দলবদ্ধভাবে কণ্ডোম ব্যবহারের দাবী করতে হবে। পিয়ার এডুকেটরদের উদ্যোগে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (সংক্ষেপে দুর্বার) নামে যৌনকর্মীদের একটি সংস্থা তৈরী হল। এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে ঘোষণা করা হল যে, যৌনকর্মকে একটি ন্যায্য পেশার স্বীকৃতির দাবী করা, সাধারণ নাগরিকদের যেসব ন্যুনতম অধিকার আছে যৌনকর্মীদের পক্ষ থেকে সেসব অধিকার দাবী করা এবং এইসব অধিকার আদায় করার জন্য সঙঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করে যাওয়া।

প্রথম লড়াই শুরু হল খদ্দেরদের সঙ্গে যাতে তাঁরা যৌন সংসর্গে কণ্ডোম ব্যবহার করেন। খদ্দেররা যখন দেখলেন যে কণ্ডোম ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক বলে কোনও যৌনকর্মীর কাছে প্রত্যাখ্যত হলে আশেপাশের সব যৌনকর্মীর কাছ থেকেই তিনি একই কারণে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন - বেশী টাকা দিতে চাইলেও, তখন তাঁরা কণ্ডোম ব্যবহার করতে রাজী হতে থাকলেন। এর ফলে সোনাগাছি এলাকায় যৌনকর্মীদের মধ্যে কণ্ডোম ব্যবহার বেশ দ্রুত হারে বাড়তে থাকল এবং তাঁদের যৌনরোগের সংক্রমণ কমতে থাকল। এইচ-আই-ভি আক্রান্তের সংখ্যাও ভারতের অন্যান্য জায়গার যৌনকর্মীদের মধ্যে যতটা বাড়তে থাকল, সোনাগাছিতে ততটা বাড়ল না। ২০০৬ সালে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচ-আই-ভি আক্রান্তের অনুপাত শতকরা ৬-এর মত, কিন্তু মুম্বাই-এর কামাতিপুর এলাকায় শতকরা ৫০-এর বেশী এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক জায়গায় শতকরা ৩০-এর বেশী।

সোনাগাছির যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচ-আই-ভি আক্রান্তের অনুপাত অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার কারণ হল তাঁদের খদ্দেরদের কণ্ডোম ব্যবহার করতে রাজী বা বাধ্য করার ক্ষমতা তৈরী হয়েছে বলে। দুর্বারের নানাবিধ কার্যক্রম মাধ্যমে তাঁরা জীবনের অন্যান্য আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও ক্ষমতায়নের দিকে এগিযেছেন। এর একটা প্রধান উদাহরণ হল উষা কো-অপরেটিভ নামে নিজেদের একটি সমবায় সংস্থার সৃষ্টি করে স্থানীয় সূদখোর কুসীদজীবিদের শোষণ থেকে অব্যাহতি পাওয়া। যৌনকর্মীদের অনেকেই দৈনিক রোজগার থেকে কিছু টাকা এই সংস্থায় জমা রাখেন এবং অসুখ-বিসুখ বা অন্য কারণে বাড়তি তাকার দরকার হলে এই সংস্থা থেকে অল্প-সূদে টাকা ধার করতে পারেন। উষা কো-অপরেটিভের সদস্য সংখ্যাপ্রায় ৭০০০ এবং সারা বছরে এর মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বেশী লেনদেন হয়।

স্থানীয় দালাল, গুণ্ডা ও অন্যান্য দুর্বৃত্তরা যারা আগে যৌনকর্মীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাঁদের নানাভাবে নিপীড়িত করত, তাদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ আন্দোলনে তারা অনেকটা দমিত হয়েছে। নানা রকম সভা-সমিতি, শোভাযাত্রা ইত্যাদি করে যৌনকর্মীরা তাঁদের ন্যায্য নাগরিক অধিকার প্রকাশ্যে দাবী করছেন। গত দু-দশকে দুর্বারের পক্ষ থেকে কলকাতায় চারটি যৌনকর্মীদের জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সল্ট লেক স্পোর্ট্স স্টেডিযামে অুনষ্ঠিত প্রত্যেকটি সম্মেলনে ২০০০ - ৩০০০ যৌনকর্মী যোগ দিয়ে তাঁদের নানাবিধ সমস্যার কথা আলোচনা করেছেন এবং সর্বসমক্ষে নিজেদের দাবী প্রকাশ করেছেন।


যৌনকর্মীদের জাতীয় আন্দোলন:

দুর্বারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতের অন্যান্য কিছু এলাকার যৌনকর্মীরাও তাঁদের নিজস্ব সংস্থা গড়ে তুলেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: পঞ্চম (বিহার), সাভেরা (দিল্লী, উত্তর প্রদেশ ও বিহার) , সেক্স ওয়ার্কার্স ফোরাম (কেরল), বেশ্যা এড্স মুকাবিলা পরিষদ (মহারাষ্ট্র) এবং উইমেন্স ইনিশিয়েটিভ (তিরুপতি)।

ভারতে যৌনপেশা সম্পর্কীত এখন যে আইন চালু আছে (ইম্‌মরাল ট্র্যাফিক প্রিভেন্শন অ্যাক্ট, ১৯৫৬), তার সংশোধনের জন্য ভারত সরকার সম্প্রতি যে প্রস্তাবের খসরা তৈরী করেছে, তার প্রতিবাদের দুর্বার এবং উপরোক্ত সংস্থার প্রায় ৪০০০ যৌনকর্মী প্রতিনিধি দিল্লীতে গত ৩ থেকে ৮ মার্চ সমবেত হন এবং সভা-সমিতি, র‌্যালি , পথনাটিকা ইত্যাদির মাধ্যমে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি প্রকাশ করেন। সবচেয়ে বেশী আপত্তি হল এই সংশোধনী প্রস্তাবের একটি ধারা সম্বন্ধে যাতে যৌনকর্মীর খদ্দেরদের আইনত অপরাধী হিসেবে শাস্তি দেওযা হবে। ৮ মার্চ তাঁরা একটি শোভাযাত্রা করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে একটি মেমোরাণ্ডাম পেশ করেন। সেটাতে তাঁরা এই সংশোধনী প্রস্তাবটি বিলোপ করা ও পিটা আইনের কিছু ধারার সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন।

ভারতের লক্ষ লক্ষ যৌনকর্মীদের পক্ষে সঙঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের নানাবিধ অধিকারের দাবী করা এবং ইতিমধ্যে অতি অল্প হলেও তার কিছুটা আদায় করা তাঁদের নিজেদের কাছে বা অন্যদের কাছেও ১৫ বছর আগে প্রায় স্বপ্নেরও অতীত ছিল। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের কিছু দেশে যৌনকর্মীরা বেশ কয়েক বছর হল তাঁদের নিজেদের কিছু দাবী-দাওয়া আদায় করতে পেরেছেন। কিন্তু এইসব যৌনকর্মীরা ভারতের ও অন্যান্য অনুন্নত দেশের যৌনকর্মীদের মত এত দরিদ্র, এত নির্যাতিত ও এত অসহায় কখনোই ছিলেন না। ভারতের যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়নের যে আন্দোলন শুরু হযেছে, আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে তা আরও জোরালো হবে এবং অন্যান্য অনুন্নত দেশের যৌনকর্মীদের পক্ষে পথ-প্রদর্শক হিসেবে গণ্য হবে।

মণি নাগ

সূত্র: Moni Nag, Sex Workers of India: Diversity in Practice of Prostitution and Ways of Life (New Delhi: Allied Publishers, 2006)

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।