প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ: সারোগেট মাদারহুড (surrogate motherhood)

ইংরেজি surrogate কথাটা ল্যাটিন surrogo থেকে এসেছে - যার অর্থ কারোর পরিবর্তে। surrogate mother বলতে বোঝায় আসল মায়ের অবর্তমানে যে মায়ের ভূমিকা নিয়েছে। আজকাল অবশ্য Surrogate motherhood বা মাতৃভূমিকা পালন কথাটা ব্যবহার করা হয় একটি বিশেষ প্রসঙ্গে - সেটা হল নিঃসন্তান দম্পতির জন্য নিজের গর্ভে তাদের সন্তান ধারণ করে জন্মের পর তাদের সেই সন্তানকে দিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে 'তাদের' কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে একটু ব্যাপক অর্থে। অনেক সময়ে সেই নিঃসন্তান দম্পতির স্বামীর শুক্র কৃত্রিম উপায়ে surrogate mother বা মাতৃভূমিকা পালিকা নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়। অর্থাত্, সেই পুরুষের সন্তান নারী ধারণ করে। সন্তানের জন্ম হলে নিঃসন্তান দম্পতি সন্তানটি লাভ করে। এক্ষেত্রে সন্তানটির সঙ্গে মাতৃভূমিকা পালিতা নারীর একটি জৈবিক যোগ থেকে যাচ্ছে, কারণ সন্তানটি তারও সন্তান। এইসব ক্ষেত্রে 'নিজের' সন্তান পরিত্যাগ করার সময়ে একটি প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে নারীটি যেতে পারে।*

তবে আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই নিঃসন্তান দম্পতির নিজেদের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কাজে লাগানো হয়। যদি সেগুলির কোনও একটিতে অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে তৃতীয় কোনও নারী বা পুরুষের ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ব্যবহৃত হয়। শুক্রাণু দিয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হয় একটি টেস্ট টিউব-এ। এই পদ্ধতিকে IVF বা in vitro fertilization* বলা হয়। স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহৃত হলে টেস্ট টিউব-এ যে ভ্রুণের সৃষ্টি হয়, সেটি এই দম্পতিরই আপন সন্তান। এই ভ্রুণকে পরে surrogate mother-এর গর্ভাশয় ব জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে surrogate mother-এর জরায়ুটা বা গর্ভাশয়কে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যের সন্তানকে বড় করতে দেওয়ার জন্য। সেইজন্য অনেক সময়ে womb for rent কথাটা ব্যবহার করা হয়।

অনেক দেশেই এইভাবে সন্তান লাভ আইন-সঙ্গত নয়। সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইত্যাদি ইউরোপের কতগুলি দেশে surrogate mother-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিছু কিছু দেশে এটির ব্যাপক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আনুষঙ্গিক চিকিত্সা সংক্রান্ত খরচ ছাড়া এ বিষয়ে লেনদেনকে বে-আইনী ঘোষিত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি সন্তানহীন দম্পতিকে আপন সন্তান লাভের সুযোগ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিবর্তে অন্য একটি নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব ফেলছে - তা মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। যে নারী surrogate মায়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাঁর নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এতে বিপন্ন হতে পারে - গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে এবং সন্তানকে হস্তান্তর করার সময়ে।

ভারতবর্ষে surrogate mother-এর ব্যাপারে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয় নি। Indian Council of Medical Research-এর কিছু নির্দেশিকা এ ব্যাপারে আছে, কিন্তু সেটি মেনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দেশাবলীর মধ্যে রয়েছে: যেসব ক্লিনিক-এই ব্যাপারে জড়িত তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। surrogate মায়ের নাম এবং যে দম্পতির সন্তান সে বহন করছে - তাদের দুজনের নামই রেজিস্ট্রিতে রাখতে হবে। কোনও নারীই তিনবারের বেশি surrogate মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারবে না,; surrogate মায়ের গর্ভ সংক্রান্ত সমস্ত খর্চা সন্তানের আইন-সম্মত পিতামাতাকে বহন করতে হবে। surrogate মা-কে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে, ইত্যাদি।

surrogate মায়েদের টাকা নেবার অধিকার আমেরিকাতেও রয়েছে। সেখানে সাধারণতঃ ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার , অর্থাত্ প্রায় সাড়ে চার থেকে ৯ লক্ষ টাকা এই দায়িত্বের জন্য surrogate মায়েরা পায়। তারওপর আনুষঙ্গিক ডাক্তারী খর্চাতো আছেই। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়ার খর্চা ষাট হাজার ডলার বা ২৭ লক্ষ টাকার মত হওয়া বিচিত্র নয়। ভারতবর্ষে সেই তুলনায় অনেক কম পয়সায় surrogate মা পাওয়া যায়। টাইম্স অফ ইণ্ডিয়ার খবর অনুযায়ী surrogate মায়েদের জন্য এই খর্চা ভারতবর্ষে ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষের মধ্যে। ক্লিনিক ইত্যাদির খরচ নিয়ে পুরো ব্যাপারটা পাঁচ সাড়ে পাঁচ লক্ষের মধ্যেই চুকে যায়। এর অর্থ 'রিপ্রোডাক্টিভ ট্যুরিজম' ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে বাড়বে। সেটা কতটা বাঞ্ছনীয় সেটা অবশ্যই একটা প্রশ্ন। সানন্দে এই কাজ খুব অল্প নারীই নেয়। এই দায়িত্ব পালন করতে স্বীকৃত হন সাধারণভাবে দুঃস্থ নারীরা - যাঁদের অর্থের বিশেষ প্রয়োজনে। গরীব দেশে যেখানে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর, লোকে অপুষ্টিতে ভুগছে, সেখানে কোনও দুঃস্থ নারীর গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা-সঙ্কুল। এছাড়া সামাজিক ও মানসিক চাপের ব্যাপারটাও উপেক্ষণীয় নয়। পয়সার বিনিময়ে গর্ভধারণ এবং পরে সেই সন্তানকে 'পরিত্যাগ' করা বহু নারীর পক্ষেই একটি তীব্র মানসিক ধাক্কা। রিপ্রোডাক্টিভ ট্যুরিজম-এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এলেও বিদেশী দম্পতিদের সুবিধার্থে দেশের দুঃস্থ নারীদের শরীরকে এ ভাবে ব্যবহার করতে দেওয়ার বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে উঠছে।

রচনাকাল - ২০১০

* প্রসঙ্গতঃ এই ধরণের প্রথা একটু অন্যভাবে এককালে আমাদের দেশে চল ছিল। ক্ষেত্রজ পুত্রের ক্ষেত্রে অসমর্থ স্বামীর পরিবর্তে অন্য কোনো আত্মীয় বা গুরুস্থানীয় পুরুষের ঔরসে নারীর সন্তান লাভ করার কথা আমাদের পুরাণের কিছু কিছু গল্পে রয়েছে। কিন্তু সেই সন্তান নারীর সন্তান বলেই গণ্য হত। surrogate mother-এর ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা সন্তান সৃষ্টির 'যন্ত্র' হিসেবে, সেখানে মায়ের ভূমিকা নেই।

 

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।