প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

পরিবেশ

অবসর

 

পরিবেশ

এপ্রিল ১৫, ২০১৫

 

নগরায়ন, ২০৫০ (বিশ্ব, ভারত ও বাংলাদেশ)

শঙ্কর সেন


  ১.  বিশ্ব

পৃথিবীর গ্রামাঞ্চল ক্রমশই খালি হয়ে যাচ্ছে ।   মনুষ্যবসতির শুরু থেকে ১৮০০-সাল পর্যন্ত - প্রায় ১০,০০০ বছর লেগেছিল মাত্র ৩-শতাংশ নগরায়িত হতে । এক শতাব্দী পরে, বিশ্বে  নগরায়ন হল ১৪-শতাংশ, আর ২০০৭-সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ ঘোষণা করলো- আমরা পার হয়েছি একটা বিশাল সীমা-প্রস্তর । এই প্রথম বিশ্বের জনমানুষের ৫০-শতাংশের বেশি বাস করছে নগরে, গ্রাম ছেড়ে । ২০৫০-সালের প্রক্ষেপণ হল ৬৬-শতাংশ মানুষ হবে নগরায়িত।  সুমের মহেঞ্জোদারোর-র প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতা শুরু থেকে রোম এবং কনা্‌স্টাণ্টিনোপলের শ্রীবিশিষ্ট সভ্যতার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বহু ফলদায়ী বর্তমান জীবনযাত্রা- সাক্ষ্য দিচ্ছে কৃষি-ব্যবস্থা থেকে মানুষের উত্তরণ  এক সুযোগ-বাহিত শিল্পমুখী নাগরিক জীবনের দিকে ।

১.১   ইতিহাস

আজ থেকে ২০০০ হাজার মত বৎসর আগে বিশ্বে জনসংখ্যা ছিল ২৫০- হাজারের কম, খুব একটা শহর ছিল না যার লোকসংখ্যা ২০-হাজারের বেশি । বলা যায়, ষোড়শ শতাব্দী থেকেই শহর গড়ে উঠতে থাকে যাদের জনসংখ্যা ১০০-হাজারের বেশি । খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ২০০০-সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৬-গুণ, সঙ্গে বাড়ে নগরবাসীদের সংখ্যা । ১৯০০-সালে এক মিলিয়ন জনসংখ্যার শহর হাতে গোনা যেত । একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বিশ্ব-জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ছিল নগরবাসী, আর এক-মিলিয়নের বেশি নাগরিকের শহর ১৯০০-সালের তুলনায় বেড়ে যায় অনেক গুণ ।

পুরাকালের শহরগুলির মধ্যে রোম ছিল অনেক জনমানুষ নিয়ে, রোমান সাম্রাজ্যেই দেখতে পাই প্রথম শহরে পানীয় জলের জন্য ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম জলের-নালা(aquaduct)। শিল্প-বিপ্লবের পর থেকেই প্রযুক্তির উন্নয়ন মানুষকে টেনে আনতে শুরু করে শহরে ।

১.২     এর পর থেকে বর্তমান ( ২০১৪ সাল )

১৯৫০-সাল থেকে বিশ্ব নগরায়িত হয়েছে দ্রুত গতিতে ( ৭৪৬ মিলিয়ন ), ঐ বৎসরে মোট জনসংখ্যা ছিল ৩.৯ বিলিয়ন, এশিয়ায় হয়েছে বিশ্ব নগরায়নের ৫৩-শতাংশ, ইয়োরোপ- ও ল্যাটিন আমেরিকা-ক্যারিবিয়ান যথাক্রমে ১৪- এবং ১৩-শতাংশ ।

১৯৯০-সালে বিশ্বে ছিল দশটি মহানগর ( মেগা-সিটি ) যাদের প্রতিটির জনসংখ্যা ছিল ১০ মিলিয়নের কম-বেশি, মোট জনসংখ্যা- ১৫৩ মিলিয়ন, যা তখনকার বিশ্বের মোট নাগরিক-সংখ্যার ৭- শতাংশের মতো । ২০১৪-সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৮-টি, মোট জনসংখ্যা- ৪৫৩ মিলিয়ন ( বিশ্বের মোট নগরবাসীর প্রায় ১২-শতাংশ [ সারণী ১ ] । এই ২৮-টি মহানগরের ষোলটি আছে এশিয়া মহাদেশে, চারটি- ল্যাটিন আমেরিকায়, আফ্রিকা ও ইয়োরোপের প্রতিটিতে তিনটি, এবং দুটি উত্তর আমেরিকায় ।

সারণী ১ :   নগরায়ন ১৯৯০ থেকে ২০১৪

(*   প্রত্যেকটির জনসংখ্যা ছিল ১০-মিলিয়ন বা তার   বেশি । )

               ২০১৪ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বের জনসংখ্যা  হয়েছে ৭.২ বিলিয়ন, যার ৫৪-শতাংশ হল নগরবাসী ।  
আজ বিশ্বের সব চাইতে নগরায়িত অঞ্চলগুলি অবস্থিত উত্তর আমেরিকা ( ৮২-শতাংশ ), ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারেবিয়ান ( ৮০-শতাংশ ) এবং ইয়োরোপ ( ৭৩-শতাংশ ) । তুলনায়, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বেশির ভাগ হল গ্রামীণ, যথাক্রমে ৬০- ও ৫২-শতাংশ । আগামী দশকগুলিতে সব অঞ্চলই কম বেশি নগরায়িত হবে, আফ্রিকা ও এশিয়া নগরায়িত হবে তাড়াতাড়ি, ২০৫০-সালের প্রক্ষেপণ হল যথাক্রমে ৫৬- ও ৬৪-শতাংশ ।  
নাগরিক-সংখ্যায় টোকিয়ো হল বিশ্বের সব থেকে বড় শহর- ৩৮ মিলিয়ন নাগরিক নিয়ে ; এর পর আসছে- দিল্লি- ২৫ মিলিয়ন, সাংহাই- ২৩ মিলিয়ন, মেক্সিকো শহর, মুম্বাই ও সাও পলো- প্রত্যেকটি ২১ মিলিয়ন, ওসাকা- ২০ মিলিয়নের একটু বেশি, বেইজিং- ২০ মিলিয়নের একটু কম । প্রথম দশটি শহরের মধ্যে আর আছে নিউ ইয়র্ক-ন্যুয়র্ক এবং কায়রো- প্রত্যেকটির জনসংখ্যা প্রায় ১৮.৫ মিলিয়ন । 

বর্তমানে বিশ্বের ৩.৯ বিলিয়ন শহরবাসীদের প্রায় অর্ধেকই বসবাস করে ছোট ছোট জনপদে যাদের জনসংখ্যা হচ্ছে ৫০০,০০০-এর কম । প্রতি আটজনের একজন মতনের বাসস্থান হল ২৮-টি মহানগরে যাদের জনসংখ্যা হল ১০ মিলিয়ন বা তার বেশি । আবার পৃথিবীর দ্রুত বেড়ে ওঠা অনেক শহরগুলি হল এক একটি ছোট উপনিবেশ ।

কিছু শহরে অবশ্য জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ২০০০-সাল থেকে, এশিয়া ও ইয়োরোপের কম উর্বর দেশগুলিতে । জাপান ও কোরীয় রিপাবলিকে ( যথা, নাগাসাকি ও ভুসন ) এবং রুশ ফেডারেশন ও ইউক্রেনে জনসংখ্যা হ্রাস হয়েছে ২০০০ ও ২০১৪-সালের মধ্যে । আর জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া শহরগুলির মধ্যে আছে- ব্রাতিস্লাভা (Slovakia), রিগা (Latvia), সরজেভো (Bosnia and Herzegovina) এবং য়েরেভান (Armenia) ।     

১.২.১    গ্রামীণ      

বিশ্বের গ্রামীণ জনসংখ্যা-বৃদ্ধি হয়েছে ধীরে ১৯৫০- সাল থেকে, এবং আগামী কয়েক বছরেই পৌঁছে যাবে চুড়ায় । এখন পৃথিবীর গ্রামীণ জনসংখ্যা হল ৩.৪ বিলিয়নের  কাছাকাছি , প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৫০-সালে কমে দাঁড়াবে ৩.২ বিলিয়নে, আর আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশ হবে গ্রামীণ-জনসংখ্যার ৯০-শতাংশের বাসস্থল ।
ভারতে আছে সব থেকে বেশি গ্রামীণ জনমানুষ- ৮৫৭ মিলিয়ন, তার পরেই চীনে- ৬৩৫ মিলিয়ন ।

১.৩  প্রক্ষেপণ

১.৩.১  ২০৩০ সাল

             ২০৩০-সালের প্রক্ষেপণে দেখতে পাচ্ছি যে, বিশ্বে হবে মোট ৪১-টি মহানগর, প্রতিটির জনসংখ্যা হবে ১০ মিলিয়নের মতো বা বেশি ( সারণী ২ ) । আর বিশ্বের সে সময়ের নগরবাসীর প্রায় অর্ধেক বাস করবে দ্রুত গড়ে ওঠা ছোট ছোট জনপদে, যাদের প্রত্যেকটির জনসংখ্যা হবে ৫০০,০০০-এর মত ।

সারণী ২

২০৩০ সালে টোকিয়োর জনসংখ্যা কমতে পারে ৩৭ মিলিয়নে, তথাপি এটি থাকবে বিশ্বের সব থেকে জনবহুল নগর । এর পরেই দিল্লি- যার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ৩৬ মিলিয়নে । প্রক্ষেপণ অনুসারে  নিউ ইয়র্ক-নুয়ার্ক ও ওসাকার জনসংখ্যা কমবে, উন্নয়নশীল দেশের মহানগরীগুলি আরও উদ্গত হবে ।

১.৩.২   ২০৫০ সাল

প্রক্ষেপণ অনুসারে ২০৫০-খ্রী-তে এটা  বাড়বে ৬৬-শতাংশে, নগরায়িত  হবে আরও ২.৫ বিলিয়ন মানুষজন [ সারণী ৩ ] ।

সারণী ৩

রাষ্ট্রপুঞ্জের ১০-জুলাই, ২০১৪ তারিখের রিপোর্ট- World Urbanisation Prospects অনুযায়ী এই বৃদ্ধির প্রায় ৯০-শতাংশ ঘটবে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে- দক্ষিণ এশিয়া ৫২-শতাংশ, sub-saharan আফ্রিকা ২১ শতাংশ  ।

নগরায়ন সব থেকে বেশি হবে ভারত, চীন ও নাইজেরিয়াতে, ২০১৪ থেকে ২০৫০-এর বৃদ্ধির ৩৭-শতাংশ হবে এই তিন দেশ মিলে । ২০৫০-সালের নগরবাসী যুক্ত হওয়ার প্রক্ষেপণ হল : ভারত- ৪০৪ মিলিয়ন, চীন- ২৯২ মিলিয়ন এবং নাইজেরিয়া- ২১২ মিলিয়ন ।

১.৪    কেন নগরায়ন ?

নগরায়ন হল একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া যার ফলে মহানগর-, নগর- ও ছোট শহর-গুলির আয়তন বৃদ্ধি পায় বা নূতন নগরের সৃষ্টি হয় । এই প্রক্রিয়ার মূলে আছে গ্রামগুলি থেকে মানুষজন শহরে বসত গড়ে চাকুরীর খোঁজে ও উন্নত জীবনের আশায় । প্রায় সব দেশেই নগরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । নগরগুলি নানা পরিষেবা প্রদান করে এর অধিবাসীদের, যা' গ্রামগুলিতে পাওয়া যায়না । এর মধ্যে আছে, জন-পরিবহন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় জল- ও পয়ঃপ্রণালী-র সুবিধা, নানারকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিনোদনের ব্যবস্থা, বড় বড় ও অতি-উন্নত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ।

ইতিহাস বলছে যে, নগরায়নের পদ্ধতি বিশেষভাবে যুক্ত মুখ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের সঙ্গে, যা' মানুষকে এনে দিয়েছে বর্ধিত ভৌগলিক গতিশীলতা, লম্বা জীবন এবং নিম্ন প্রজনন হার । উন্নয়ন ও দারিদ্র্য-হ্রাসের একটি বিশেষ সারথি হল নগরায়ন, কারণ এটি জাতীয় অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম, ব্যবসায় ও যোগাযোগ বর্ধন দ্বারা নগর ও গ্রামগুলিকে বাঁধে এক সূত্রে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা' আন্তর্জাতিক সীমানা পার হয়ে ।

নাগরিক জীবনে সাধারণত: দেখা যায় উচ্চ মাপের বিদ্যাচর্চা ও শিক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্য, সামাজিক ক্রিয়াকলাপে বেশি সংযোগ, এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মে বর্ধিত যোগদান ।  বেশিরভাগ নগরের সঙ্গে যুক্ত নানা ছোট ও বড় নির্মাণ শিল্প । এগুলি নগরকে দেয় নানা পণ্যদ্রব্য ইত্যাদির খুচরা ব্যবসায়, আয়ের সুযোগ ও সুবিধা, এবং বর্ধিত ট্যাক্স ।

জনমানুষের ঘন সন্নিবেশ অনেক স্থানেই উৎপাদনের সহায় হয়ে উঠেছে এবং ফল-স্বরূপ বিশ্ব-GDP-র প্রায় ৭০-শতাংশ আসছে নগরগুলির জন্য । এর ফলে অনেক অর্থনীতিবিদই নগরায়নকে দেখছেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য-হ্রাসের কেন্দ্র ও ধারক হিসাবে । উদাহরণস্বরূপ,
參   চীনের GDP-র ৫০-শতাংশের মতো উৎপাদিত হচ্ছে নাগরিক  ঘন সন্নিবেশের ফলে যা' ভূখণ্ডের মাত্র ২০-শতাংশ জুড়ে আছে ।
參   ১৯৯০-সালের ভারতীয় অর্থনীতির উন্মোচন বেশ কিছু নগর ও পোতাশ্রিত- শহরে শিল্পের সন্নিবেশ সৃষ্টি করেছে যার ফলস্বরূপ নগরগুলিতে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম বেড়েছে কয়েকগুণ ।

১.৫ নগরায়নের সমস্যা

বর্ধিত নাগরিক জনসংখ্যার ফলে এই দেশগুলি সম্মুখীন হবে নানারকম চ্যালেঞ্জের যথা, গৃহ, পরিবহন, শক্তি, ও 'ইনফ্রাস্ট্রাকচার', তার সঙ্গে থাকছে মৌল বিষয়গুলি যথা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য । পৃথিবী যত নগরায়িত হবে, শহরগুলি ( বিশেষত: অল্প- ও মধ্য- আয়ের দেশগুলির ) ততই বোধ করবে পরিরক্ষিত-উন্নয়নের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলিকে । এর জন্য প্রয়োজন- শহর ও গ্রামগুলির বসবাসকারীদের জীবন উন্নয়নে সার্বিক একীভূত পলিসি রূপায়ন । কিন্তু যখন ত্বরান্বিত নগরায়ন নগরের জনপদগুলিকে পরিণত করছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির চাবিকাঠি হিসাবে, পাশাপাশি যদি দারিদ্র্য থেকে মুক্ত এক জনসমাজ তৈরি করা না যায়, বিশেষত: উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, তা'হলে উন্নয়নের স্থানে হবে অবনয়ন । আর্থিক চাপের দ্বারা আনত সরকারগুলির উপর মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে উন্নত পরিষেবার । 

এটা বুঝতে হবে, দ্রুতগতিতে ও অবৈজ্ঞানিকভাবে নগরায়ন পরিরক্ষিত উন্নয়নের বিরোধী হতে পারে, বিশেষত: যখন প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগুলির ব্যবস্থা ঠিকমত হয়নি বা নাগরিক-জীবনের সুফলগুলি সকল নাগরিক সমানভাবে ভোগ করতে পারেনি । বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নগর এলাকাগুলিতে গ্রামীণ এলাকা থেকে অনেক বেশি অসাম্য, যেহেতু বিশ্বের নগরগুলিতে রয়েছে অনেক দরিদ্র নাগরিক । ফলস্বরূপ, দেখা যায় অপরিকল্পিত, এলোমেলো বা অনুপযুক্তভাবে নগরগুলির বৃদ্ধি, দূষণ, পরিবেশের অবনতি এবং অপরিরক্ষিত উৎপাদন ও অপচয় ।

জুলাই ২০১৩-তে রাষ্ট্রপুঞ্জের ইকনমিক ও সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট সাবধান করল যে, ২০৫০-সালে অতিরিক্ত ২.৪ বিলিয়ন মানুষজনের জন্য প্রয়োজন হবে খাদ্য-উৎপাদনের ৭০-শতাংশ বৃদ্ধি । এর ফলে যে সকল দেশ এখন খাদ্য-সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত পরিবেশগত কারণে, সেখানে বিপদ হবে । রাষ্ট্রপুঞ্জের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতানুসারে এই সব নগরাঞ্চলে প্রধানত নিরাময়- ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে ভালোরকম ।
মহানগরের অর্থ হল গুচ্ছায়িত মানুষ, বাসস্থল ও পরিবহন ব্যবস্থা- ফল জটিল নাগরিক ইকো-ব্যবস্থা । চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা দুই-ই আছে যার মুখোমুখি হতে হবে সার্বিকভাবে । শহরগুলি হল সৃজন, নব-প্রবর্তন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কৃষ্টি-বিকাশের কেন্দ্রস্থল, ফলে এখানে সাধারণত: GDP-র২০-শতাংশ মতন উৎপাদন করা সম্ভব । অন্যদিকে 'সুন্দর জীবন'-এর আশায় অন্য স্থান থেকে ( বিশেষত: গ্রামগুলি থেকে ) পাড়ি জমানো মানুষের নিম্নমানের শিক্ষা, জীবন-যাত্রা, দারিদ্র্য ও কর্মহীনতা হল দুঃখজনক বাস্তব । আর সারা বিশ্বে  শহরগুলি 'শোষণ' করে উৎপন্ন শক্তির প্রায় ৭০-শতাংশ । পরিরক্ষিত উন্নয়নের মডেল সৃষ্টি করতে হলে এখান থেকেই শুরু করতে হবে ।

ইতিহাস দেখিয়েছে যে, গ্রামবাসীদের বাস করার জন্য শহরে আগমন রুখতে যখনই কোনও পলিসি নেওয়া হয়েছে, তা'তে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত অপকারই হয়েছে বেশি । তার বদলে জনসাধারণের জন্য স্থানিক বিন্যাস ও সংস্থাপনের প্রয়োজনে দরকার উপযুক্ত পলিসি গ্রহণ করা ।
কিন্তু যখন ত্বরান্বিত, নগরায়ন নগরের জনপদগুলিকে পরিণত করছে অর্থনৈতিক অগ্রগমনের চাবিকাঠি হিসাবে, পাশাপাশি যদি দারিদ্র্য থেকে মুক্ত এক জনসমাজ তৈরি করা না যায়, বিশেষত: উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, তা'হলে উন্নয়নের স্থানে হবে অধোগমন । আর্থিক চাপের দ্বারা আনত সরকারগুলির উপর মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে উন্নত পরিষেবার ।

জনৈক বিশেষজ্ঞ সঠিকভাবেই প্রস্তাব করেছিলেন যে, যদি বেশিরভাগ সমস্যা উদ্ভূত হয় শহরগুলিতে, তবে তার সমাধান খুঁজতে হবে শহরের মধ্যেই । বর্ধিত পরিবহণ যানজট, দূষণ, ব্যাধি, গৃহ- অপ্রতুলতা, নানা অপরাধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-জনিত সমস্যা ফুটে ওঠে এখনকার রন্ধ্রেরন্ধ্রে । একমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ কৃতকৌশল (ICT) পারে নাগরিক সুশাসন ও নির্বাহের বার্তা নিয়ে আসতে ।

( ক্রমশঃ )


লেখক পরিচিতঃ শিক্ষাবিদ। এক সময়ে বি.ই. কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী ও অবসর-এর উপদেষ্টা-মন্ডলীর সভাপতি।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.

 


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।