বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
কর্দমশিলা-গ্যাস 'বিপ্লব'
THE SHALE REVOLUTION
শঙ্কর সেন
বিশ্বে শক্তিবিজ্ঞান পাল্টে দিচ্ছে কর্দমশিলা-গ্যাস
!
বিশ্বে কর্দমশিলা-গ্যাস বা shale গ্যাস নিষ্কাশনে বিপ্লব ঘটিয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জীবাশ্ম-জ্বালানি ভূক্ত এই প্রাকৃতিক গ্যাস
কয়লা ও তেলের থেকে নির্মল। ১৯৭০-সালের মাঝামাঝি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
পূর্বদিকে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন শুরু হয়।
পরবর্তীকালে উন্নত প্রযুক্তির দৌলতে ভূগর্ভের বেশি অভ্যন্তর থেকে
এই গ্যাস নিষ্কাশনের প্রচেষ্টা রূপ নেয়।
শক্তি-উৎপাদনে ও সংশ্লিষ্ট কর্মে জীবাশ্ম-জ্বালানির তথা, কয়লা,
প্রাকৃতিক তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার সর্ববিদিত। এদের মধ্যে
শেষেরটির আদর বেশি কারণ, তিনটির মধ্যে এটির কারবন ডাই-অক্সাইড
নিঃসরণ সব থেকে কম। ২০১০ খ্রী-তে প্রায় ২১-শতাংশ শক্তির উৎস এই
গন্ধহীন ও বর্ণহীন গ্যাস, কয়েক মিলিয়ন বৎসর ধরে ভূগর্ভে সঞ্চিত
অবস্থায় উৎপন্ন হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে shale গ্যাস দেশের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস-ভাণ্ডারের
৩০-শতাংশ (USDE,2011)এবং এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের গার্হস্থ্য শক্তি
সুরক্ষার পক্ষে একান্ত অত্যাবশ্যক। কর্দমশিলা হল পাললিক দানার
অতি সূক্ষ্ম কর্দমাক্ত প্রস্তর যা মাটি ও নানা খনিজ পদার্থ (যথা,
স্ফটিক এবং কেলাস আকারে calcium carbonate)-এর সংমিশ্রণ, যাদের
অনুপাত অবশ্য স্থানবিশেষে পরিবর্তনশীল। ভূপৃষ্ঠের বহু নীচে কয়েকটি
অভেদ্য seal স্তরের তলায় এই কর্দমশিলা হল অতিক্ষুদ্র গাদ-প্রসূত
শৈল- যা পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উর্বর উৎস। তাই এই গ্যাস
নিষ্কাশনে প্রয়োজন হয় বিশেষ পদ্ধতি ও উপকরণ।
চিত্র ১ ভূগর্ভের ভূতাত্বিক চিত্র : চিরাচরিত এবং অচিরাচরিত অবক্ষেপ।
বিশ্বে সম্ভাব্য ভাণ্ডার
বর্তমানকালে কর্দমশিলা-গ্যাস নিষ্কাশন বিভিন্ন দেশের শক্তি-'পলিসি'-
নির্মাণে প্রাধান্য পাচ্ছে; যেহেতু এই গ্যাস তুলনামূলকভাবে সস্তা
এবং বলা হচ্ছে- ' পরিবেশ-দূষণের দিক থেকে পরিচ্ছন্ন - ব্যবহারে
বায়ুমণ্ডলে কারবন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় না'।
ভূপৃষ্ঠের গভীরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গিয়েছে কর্দমশিলার
বিশেষ স্তর tight oil বা shale-তেল উৎপাদনের। Price WaterhouseCoopers
(PWC)-র এক রিপোর্টে দেখা যায়, ২০৩৫-সাল নাগাদ বিশ্বে Shale-তেল
উৎপাদন বিশ্ব-অর্থনীতিকে উন্নীত করবে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন-ডলার;
সম্ভাবনীয় তেল-উৎপাদন হবে মোট তেল-উৎপাদনের ১২-শতাংশ (দিনপ্রতি
প্রায় ১৪ মিলিয়ন ব্যারেল) যা কিনা আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্ব
শক্তি-বাজারে এনে দেবে এক বৈপ্লবিক বৃদ্ধি।
মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের Energy Information Administration (EIA)-প্রকাশিত
একটি তালিকায় বিশ্বের ৩২-টি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য গ্যাসের ভাণ্ডারের
একটি তালিকা থেকে প্রথম দশটির নাম দেওয়া হল [সারণী ১ ]।
সারণী ১ : বিশ্বে সম্ভাব্য কর্দমশিলা-অবক্ষেপ (প্রথম ১০-টি রাষ্ট্র)
(ট্রিলিয়ন ঘন মিটার)
মোট বিশ্ব- ১৮৭.৬ ট্রিলিয়ন ঘন মিটার।
উৎস: US EIA ⤛An Assessment of 137 Shale Formations in 41 Countries
Outside the United States
কর্দমশিলা-গ্যাস বিপ্লবের ঢেউ প্রসারিত হয়েছে আরও অন্ততঃ তিনটি
দেশে; জুলাই ২০, ২০১৫-সাল পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্র কর্দমশিলা গ্যাস
উৎপাদন করছে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা
এবং চীন, নেতৃত্বে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এই গ্যাস
উৎপাদনে যে স্তরের logistics এবং infrastructure-এর প্রয়োজন (যা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে) তা কানাডা ও চীন ছাড়া অন্য কোনও দেশে
এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। EIA-এর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী গত বৎসরে
(২০১৪-সাল) প্রতি দিন চীন উৎপাদন করেছে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ঘন মিটার,
যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদন করেছে ১.৩ বিলিয়ন ঘন মিটার এবং
কানাডা- ১১৩ মিলিয়ন ঘন মিটার। মেক্সিকো সবে উৎপাদন সুরু করেছে,
এবং পোল্যাণ্ড, আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া ও রাশিয়া প্রসন্ধান
চালাচ্ছে।
নিষ্কাশন প্রক্রিয়া
বিশ্বে প্রচলিত বা চিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের ভাণ্ডার
সাধারণতঃ থাকে ভূপৃষ্ঠের অল্প নীচে- ৫০০- ১,০০০ মিটারের মত। কিন্তু
যখনই আরও নীচে যেতে হয়, অনেক সময় যে কৃৎকৌশল ব্যবহার করা হয় তার
নাম ঔদক বিভঙ্গ (hydraulic fracturing) বা সংক্ষেপে fracking। কর্দমশিলার
স্তর থাকে সাধারণতঃ ভূপৃষ্ঠের ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মিটার নীচে; তাই
এই গ্যাস নিষ্কাশনে ঔদক বিভঙ্গ অপরিহার্য।
চিত্র ২ : কর্দমশিলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস- ঔদক বিভঙ্গ প্রক্রিয়া।
(১) বিভঙ্গ-প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাঙ্কার; (২) একটি পাম্প-সহ
ট্রাক কূপের মধ্যে অনুবিদ্ধ করে বালি,জল ও রাসায়নিকগুলির মিশ্রণ;
(৩) উদ্ধার করা জল প্রথমে জমা হয় একটি খাদে, যেস্থান থেকে নিয়ে
যাওয়া হয় ট্রিটমেণ্ট প্লাণ্টে; (৪) সঞ্চয় ট্যাঙ্ক; (৫) পাইপ মারফৎ
নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে। (ট) বালি ফাটলকে খোলা রাখতে সাহায্য করে;
(ঠ) প্রাকৃতিক গ্যাস ফাটল থেকে কূপ-পথে ভূপৃষ্ঠের দিকে প্রবাহিত
হয়; (ড) জল, বালি ও রাসায়নিক-সংঘটক-এর মিশ্রণ।
কর্দমশিলা গ্যাস নিষ্কাশনের পদ্ধতি হল : (১) শিলাস্তরে আনুভূমিক
ছিদ্র দ্বারা শিলার সঙ্গে ভূছিদ্রের (borehole) সংস্পর্শ বর্ধন,
এবং (২) বড় আয়তনে ভূছিদ্রের দ্বারা চারপাশের শিলাস্তরে ঔদক বিভঙ্গ(hydraulic
fracturing) করা যার ফলে গ্যাসের নিষ্কাশন মসৃণ হয়।
ঔদক বিভঙ্গ কৃৎকৌশল হল প্রচুর জল, তৎসহ বালি এবং কিছু উপাদানের
মিশ্রণ কূপের নলের মধ্য দিয়ে অত্যধিক চাপে বেগে প্রবেশ করানো হয়;
এদের অনুপাত বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না কারণ, ব্যবসায়িকদের
গোপনীয়তা। তবে, অসমর্থিত সংবাদ হল জল ৯০-শতাংশ, ৯-শতাংশ বালি ও
বাকীটা কিছু রাসায়নিক দ্রব্য।
বালির কাজ হল-ফাটলে ঠিকমতো প্রবেশ করে তাকে উন্মুক্ত রাখলো কিনা
তা নিশ্চিত করা। এছাড়া সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয় guar, একটি 'পলিমার'
যা গম থেকে উৎপন্ন; তার সঙ্গে খুব অল্প রাসায়নিক দ্রব্য । ২০১১-সালে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে, ঔদক-বিভঙ্গে
ব্যবহৃত হচ্ছে ২৯-টি রাসায়নিক দ্রব্য, তার মধ্যে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত
এমন রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা মনুষ্যদেহে ক্যানসারোৎপাদক। এগুলি
যুক্তরাষ্ট্রের Safe Drinking Water Act দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জানা
যাচ্ছে,ব্যবহৃত হচ্ছে- অত্যন্ত বিষাক্ত benzene, toluene,xylene,
এবং ethylbenzene। অবশ্য, এই সংবাদ অসমর্থিত। একমাত্র শিল্পগুলিই
জানে বিভঙ্গ-তরলের যথার্থ উপাদান।
তরলের মিশ্রণ নলের আনুভূমিক অঞ্চলে ছিদ্রগুলি দিয়ে বেগে বহির্ভূত
হয়ে কর্দমশিলার স্তরকে বিভঙ্গ করে, ফলে ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং গ্যাস
বেরিয়ে আসে। তরল-মিশ্রণের 'চার্জ' সরিয়ে নিলে এই গ্যাস জল-সহ নলপথেই
নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে আসে; জল পাঠানো হয় খাদে (চিত্র ২) এবং গ্যাস
সঞ্চিত হয় ট্যাঙ্কে- যা পরে পাইপ মারফৎ নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে।
স্থান নির্বাচন
কূপ খনন এবং গ্যাস নিষ্কাশন ব্যয়সাপেক্ষ, তাই সঠিক স্থান নির্বাচন
একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। ঠিক কোনস্থানে কূপ বসানোর ছিদ্র করা হবে
তা নির্ভরশীল বিশেষভাবে অন্তর্ভূপৃষ্ঠ ভূবিদ্যা এবং ভূমধ্যে অবক্ষেপের
গভীরতা ও আয়তনের উপর। অনেক সময়েই ব্যবহৃত হয় শ্রবণোত্তর(ultrasonic)পদ্ধতি।
জমি : কর্দমশিলা গ্যাস নিষ্কাশনে প্রয়োজন হয় বিশাল জমি- এক মূল্যানুমান
অনুযায়ী, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩.১-টি কূপ। শিলা-গ্যাসের ঘনত্ব
অনেক কম- প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ০.২ থেকে ৩.২ বিলিয়ন কিউবিক
মিটার (bcm) , তুলনায় চিরাচরিত গ্যাসের ঘনত্ব- ২ থেকে ৫ bcm ,
যার জন্য অনেক বেশী কূপ খনন করতে হয়। একটি মূল্যানুমানে :২,৫৮০
-৩,০০০ কূপের প্রয়োজন হয় বৎসরে ৯ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস নিষ্কাশনে।
শিলা-কূপের আয়ুষ্কাল চিরাচরিত কূপ অপেক্ষা অনেক কম, ফলে বেশি জমির
প্রয়োজন হয় একই অনুপাতের গ্যাস নিষ্কাশনে।
আবার, প্রতিটি কূপ খননে প্রয়োজন হয় বেশি পরিবহন ব্যবস্থা ও গুদাম।
প্রাকৃতিক চিরাচরিত গ্যাস বনাম কর্দমশিলা অচিরাচরিত গ্যাস
অচিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের মধ্যে পড়ে- কর্দমশিলা গ্যাস ও কয়লা-স্তরের(coal-bed)গ্যাস।
চিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাস অপেক্ষা কর্দমশিলা গ্যাসের অবক্ষেপ
অনেক বেশি গাঢ় (concentrated)। কর্দমশিলা-গ্যাস অল্প ভেদ্যতার(permeability)
প্রস্তরের মধ্যে ধরা থাকে যার ফলে এর প্রবাহ ক্ষুণ্ণ হয় এবং নিষ্কাশনে
বিশেষরূপ অনুপ্রবেশ-যন্ত্র এবং উৎপাদন পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। মূল
ভূখণ্ডে অবস্থিত(onshore) চিরাচরিত-গ্যাসের বেলা প্রতি ১০ বর্গ
কিলোমিটারে প্রয়োজন হয় একটি কূপের, কর্দমশিলা ক্ষেত্রে প্রয়োজন
হয় সাধারণতঃ ১০-টি।
এছাড়া, জমিতে ইউনিট-প্রতি উদ্ধারযোগ্য হাইড্রো-কারবনের স্বল্পতা
হেতু কর্দমশিলা-অবক্ষেপের জন্য প্রয়োজন হয় অনেক বেশি ভৌগোলিক অঞ্চল
যার ফলে অনেক বেশি জনমানুষ প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে একটি অঞ্চলে Marcellus কর্দমশিলার জন্য প্রয়োজন
হয়েছে ২৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার যা ঐ দেশের সব থেকে বড় Kansas Hugoton
প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন এলাকার প্রায় ১০-গুণ।
আনুভূমিক কূপ, বহুস্তরীয় বিভঙ্গ ও slick-water বিভঙ্গ ব্যবহারে
পার্থক্য আনতে 'প্রথাগত' বা conventional গ্যাসকে সাধারণঃ উল্লেখ
করা হয় 'চিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাস' নামে, কর্দমশিলা গ্যাস উল্লিখিত
হয় 'অচিরাচরিত' প্রাকৃতিক গ্যাস নামে।
ঔদক বিভঙ্গ
ঔদক বিভঙ্গ(hydraulic fracturing)- সহ আনুভূমিক ছিদ্রকরণ পদ্ধতি
এনে দিয়েছে সহজ ও লাভজনক উপায়ে স্বল্প-প্রবেশ্য ভূতাত্বিক, বিশেষতঃ
কর্দমশিলা(shale)স্তর-সমষ্টি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে।
আনুভূমিক ছিদ্রকরণ এবং বিভঙ্গকরণ- কোনটাই নূতন কৃৎকৌশল নয়। দু'টোকেই
ব্যবহার করা হয়েছে চিরাচরিত তেল- ও গ্যাস-আধারে। উদাহরণস্বরূপ,
আনুভূমিক ছিদ্রকরণ প্রথা যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত হয়েছে সর্ববৃহৎ ভূপৃষ্ঠের
তৈলক্ষেত্রের বেলা। কিন্তু কর্দমশিলা চিরাচরিত আধারের বহুরন্ধ্রপূর্ণ
শিলা অপেক্ষা অত্যন্ত শক্ত ও কম ভঙ্গুর। মাত্র গত দশ থেকে কুড়ি
বছরের ভিতর বিভঙ্গ-কৃৎকৌশল মানুষ প্রত্যয়ের সঙ্গে আয়ত্তে আনতে
পেরেছে। মনে রাখতে হবে, ১৯৫০-সাল থেকেই বিভঙ্গ-প্রয়োগকৌশল ব্যবহৃত
হয়ে এসেছে তেল- এবং গ্যাস-নিষ্কাশনকে সহজ করতে।
১৯৭০-সালের মাঝামাঝি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বদিকে ব্যবসায়িক
ভিত্তিতে প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন শুরু হয়। এই প্রচেষ্টা থেকেই
পরবর্তীকালে রূপ নেয় কর্দমশিলা প্রস্তর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে
আনুভূমিক কূপ, বহুস্তরীয় বিভঙ্গ ও slick-water বিভঙ্গ ব্যবহারে।
ক্রমে ক্রমে ভূগর্ভে গর্ত করার জন্য downhole drilling motor ও
অন্যান্য সাহায্যকারী যন্ত্রপাতির উদ্ভব হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হল downhole telemetry যন্ত্রগুলি। এইভাবে এল ব্যবসায়িক viability।
পরিবেশ
shale গ্যাস ও আবহাওয়া পরিবর্তন :
যেহেতু shale গ্যাসের বিকাশ কয়লা খনির থেকে স্থানীয় পরিবেশকে কম
দূষণ করে, বিশেষতঃ জলসম্পদ ও স্থানীয় জনস্বাস্থ্যের উপর প্রতিক্রিয়ায়,
অনেকেই মনে করেন এই গ্যাসের ব্যবহার আবহাওয়া-পরিবর্তনের যোগ্য
সমাধান এবং এই গ্যাসের ব্যবহার জীবাশ্ম-জ্বালানি ও পুনর্নবীকরণ-শক্তি
উৎসগুলির মধ্যে একটি "সেতু"। এই চিন্তা কিন্তু সঠিক
নয়।
আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালযের School of Civil and Environmental
Engineering-এর গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, shale-গ্যাস নিষ্কাশনে যে
মিথেন গ্যাস উদ্গত হয় সেই গ্রীণহাউস-গ্যসের বায়ুমণ্ডলের উপর প্রভাব
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকে বেশি, যদিও মিথেন-এর অর্ধজীবন কম। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
তুলনায় মিথেনের বিশ্ব-উষ্ণায়ণ-ক্ষমতা(global warming potential-
GWP) ১০০-বৎসরের গড়ে হল ২৫। ২০ বছরের গড় নিলে এটি দাঁড়ায় ৭২, যদিও
হালের গবেষণায় তা দেখাচ্ছে ১০৫। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা
দেখেছেন যে drilling- কার্যস্থলে মিথেন-গ্যাস উদ্গত হয় বেশ বেশি,
shale-গ্যাস কূপগুলির মোট উৎপাদনের ৩.৬- থেকে ৭.৯-শতাংশের মত।
এর অর্থ হল, কয়লার তুলনায় shale-গ্যাসের 'পদচিহ্ন' অন্ততঃ ২০-শতাংশ
বেশি; ২০-বছরের হিসাবে বোধ করি দ্বিগুণেরও বেশি। সাধারণভাবে বলা
যায় যে, আগামী ২০ বছরে মিথেন গ্যাস বিশ্ব আবহাওয়ার চরম ক্ষতিসাধন
করবে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্বকে আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে
যোগ্য ব্যবস্থা নিতেই হবে।
কূপ : সাধারণতঃ কূপ গড়ে ২,০০০ মিটার বা তার বেশি গভীর, এবং জলপীঠ
৩০০ মিটারের মতন গভীর [চিত্র ২]। সমস্যা হয় যখন কূপের সিমেণ্ট-
আচ্ছাদন থেকে গ্যাস এবং তরল fracking নির্গত হয়ে আশেপাশের অঞ্চলে
প্রবেশ করে।
কূপের উৎকৃষ্টতা
চিত্র-৩ চিত্র ৩ : কূপের বহুধা আচ্ছাদনের
পরিকল্পিত রেখাচিত্র।
উৎস- (USDOE, 2009)
|
ভৌমজল- দূষিত করণে দায়ী হল কূপের ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ। গ্যাস
উৎপাদনে সাফল্য এসেছে কূপের আনুভূমিক অবস্থানের জন্য কারণ এর ফলে
পৃষ্ঠতলের বৃদ্ধি হয়েছে। কূপের থেকে গ্যাস নিঃসরণ রুদ্ধ করতে খনন
করা হয় ক্রম-হ্রাসমান ব্যাসের গর্ত, কূপের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন
আচ্ছাদন দেবার জন্য। অংশগুলি হল : [চিত্র ৩ ]
• মূল নলের আচ্ছাদন(conductor casing): নলের বনিয়াদের জন্য ভূপৃষ্ঠ
থেকে ৩০ মিটারের মতন গভীর;
• পৃষ্ঠস্থল আচ্ছাদন(surface casing): জলপীঠের তলা পর্যন্ত; প্রাথমিক
উদ্দেশ্য- ভৌমজল সংরক্ষণ। সাধারণতঃ সিমেণ্ট ব্যবহার করা হয়।;
• মধ্যবর্তী আচ্ছাদন(intermediate casing): কূপকে অপেয় জলবাহী
থেকে স্বতন্ত্র রাখা যার ফলে অনবস্থা(instability) এবং অস্বাভাবিক
চাপের থেকে মুক্ত থাকে। এখানেও সাধারণতঃ সিমেণ্ট ব্যবহার করা হয়।
ত্রুটি আসে যে কারণে -
(১) কূপ থেকে অকস্মাৎ গ্যাস ও তরল-পদার্থের নিষ্কাশন- যাকে বলা
হয়
(blowout);
(২) বলয়াকার 'লিক' (annular leak): সিমেণ্ট- আচ্ছাদন ত্রুটিপূর্ণ
হলে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন আচ্ছাদন ও আশেপাশের অঞ্চলে; এবং
(৩) অরীয়(radial)'লিক' : ত্রুটিপূর্ণ আচ্ছাদনের ফলে কূপ থেকে আশেপাশের
অঞ্চলে তরল পদার্থের আনুভূমিক নিষ্ক্রমণ।
উৎস : Royal Society and Royal Academy of Engineering, 2012।
জল : একটি আনুভূমিক কূপ খনন এবং ঔদক বিভঙ্গে প্রয়োজন হয় গড়ে ১৩,০০০
ঘন মিটার জল। এই জল কিন্তু কম নয়, অলিম্পিকে সাড়ে পাঁচটি সন্তরণকেন্দ্রের
জলের আয়তনের সমান। সাধারণতঃ জল আসে জলাধারের উপর থেকে, তবে আসতে
পারে ভৌমজল, প্রাইভেট, মিউনিসিপাল, এবং পুনর্ব্যবহৃত জলাধার থেকে।
বেশিরভাগ shale-গ্যাস পরিবাহক্ষেত্রগুলির অবস্থান হল মাঝারি বা
উচ্চ বৃষ্টিপাত এলাকায়; ফলে এই গ্যাস অবক্ষেপকালে আঞ্চলিক প্রয়োজনের
সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
[উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়ায় ২০১১-সালে
১,৫০০ আনুভূমিক কূপ বিভঙ্গে Marcellus Shale drilling ব্যবহারে
প্রতি দিন ব্যবহৃত হয়েছিল প্রায় ৪৫-৭৫ হাজার ঘন মিটার জল, যা ঐ
প্রদেশের দৈনিক ব্যবহারের (৩৬ মিলিয়ন ঘন মিটার) প্রায় ০.১২৫-০.২১
শতাংশ।]
তবে, অন্যান্য শক্তি-উৎপাদন ব্যবস্থার যথা কয়লা বা পারমাণবিকের
সঙ্গে তুলনা করলে shaleগ্যাস উৎপাদনে জলের প্রয়োজন হয় এক ভগ্নাংশ।
প্রতি ১,০০০ মিলিয়ন Btu গ্যাস উৎপাদনে প্রয়োজন প্রায় ২.৩ থেকে
৭ কিউবিক মিটার জল, যা তুলনায় কয়লা দ্বারা একই পরিমাণ শক্তি-উৎপাদনে
জলের প্রয়োজনের ১৫-শতাংশের কম| (উৎস : Chesapeake Energy, Media
Resources: Hydraulic Fracturing Fact Sheet, 2009)। তুলনায়, Susquehanna-নদী
বেসিনে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দিন-প্রতি পরিশ্রুত জলের প্রয়োজন
হয় ৫৭০ হাজার ঘনমিটার, যখন ঐ এলাকায় মারশেলাস কর্দমশিলা কর্মকাণ্ডের
পিকা্ অবস্থায় দৈনিক জলের প্রয়োজন হল ৩২ হাজার ঘনমিটার।
পতিত জল শুদ্ধিকরণ
পূণর্ব্যবহারের জন্য পতিত জলের শুদ্ধিকরণ একটি মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ।
ঔদক-বিভঙ্গ কালে ব্যবহৃত জলের ১০- থেকে ৫০- শতাংশ অতি দূষিত গ্যাস-সহ
ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে কূপগুলির নল-বাহিত হয়ে। এই বহিপ্লাবীর মধ্যে
থাকে বিভঙ্গে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং কর্দমশিলার অভ্যন্তর থেকে ক্ষরিত
ধাতু, খনিজ এবং হাইড্রো-কারবন। কোনও কোনও স্তরে থাকে তেজস্ক্রিয়
খনিজ পদার্থ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় Marcellus-কূপগুলির
দূষিত পশ্চাৎ-প্রবাহে পাওয়া গেছে এত লবণ ও রাসায়নিক যা সাধারণ
কূপের থেকে একশত গুণ। বর্তমানে এই পতিত জল পাঠানো হচ্ছে অতিগভীর
কুয়াতে বা বিশেষ শুদ্ধিকরণ প্ল্যাণ্টে।
এই মূহুর্তে ফ্রান্স, নেদারল্যাণ্ডস এবং লাক্সেমবুর্গে ঔদক বিভঙ্গ
নিষিদ্ধ করা হয়েছে পরিবেশ সংক্রান্ত সংঘাতের কারণে।
ভূকম্পন
২০১১-সালের এপ্রিল মাসে ইংল্যাণ্ডের ব্ল্যাকপুলে (যেখানে ঔদক
বিভঙ্গ করা হচ্ছে) ভূকম্পন হয়। গবেষকরা জানালেন, fracking সম্ভবতঃ
আগের 'ফল্ট'- গুলিকে পুনরুজ্জ্বীবিত করেছে। রিখটার স্কেলে এইসব
ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ১.৫ ও ২.৩-এর মধ্যে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান টেকনলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
Department of Geological and Mining Engineering and Sciences-এর
ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে যে প্রতি বৎসর ৯-লক্ষ ভূকম্পন হচ্ছে যার
মান ২.৫ বা তার কম। সাধারণতঃ এগুলি বোঝা যায় না, তবে seismograph
যন্ত্রে ধরা পড়ে এবং এই ধরণের ভূকম্পনের মান ৩.০-এর নীচে থাকে
ও ভূপৃষ্ঠের উপরে কোনও গঠনকে নষ্ট করেনা।
নিয়ামক-বিধি রূপায়ণ
২০১২ খ্রীষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা(IEA)প্রকাশ করলো
একটি রিপোর্ট- "Golden Rules for a Golden Age of Gas"।
সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলিকে অচিরাচরিত গ্যাসের (যথা, কর্দমশিলা
গ্যাস) নিরাপদ-নিষ্কাশনে নিজ নিজ সুবিধামত নিয়ামক বিধি গঠনের আহ্বান
জানালো যা হবে যথাযোগ্য এবং বলিষ্ঠ। এই আহ্বান রূপায়ণে সাহায্য
হিসাবে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে তা হল :
কি বিষয়ে নিয়ামক?
參 প্রসন্ধান কর্ম : কোম্পানিগুলিকে জাতীয় বা স্থানীয় প্রশাসনের
কাছ থেকে 'শেল'-গ্যাস প্রসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র নিতে
হবে। এর জন্য কোম্পানিগুলিকে দিতে হবে তাদের কর্মকাণ্ডের সকল প্রকার
তথ্য বিশেষতঃ, পরিবেশ ও ভূতাত্ত্বিক impact।
參 রাসায়নিকের ব্যবহার : গ্যাস নিষ্কাশনে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট পরিমাপের
সমস্ত রাসায়নিকগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ
সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেবিধি REACH-মোতাবেক হতে হবে। সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলিকে
ঔদক বিভঙ্গে ব্যবহৃত রাসায়নিকের বিষয়ে সমস্ত তথ্য জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে
প্রকাশ করতে হবে।
參 জলের ব্যবহার : ভৌমজলের ব্যবহার কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
參 জল পরিশ্রুত রাখা : সরকারের যথাযোগ্য বিভাগ দ্বারা নিষ্কাশন
পদ্ধতি থেকে আহরিত জল দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
參 বর্জ্যের নির্বাহ : জল এবং মৃত্তিকা দূষিত করণ নিবৃত্তির জন্য
কঠিন নির্ধারিত পরিমাপ পালন করতে হবে।
參 শব্দদূষণ : শব্দদূষণ-নিরোধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভারত
কর্দমশিলা বিপ্লবে সামিল হতে চলেছে ভারত। ভারত সরকার ২০১৩-সালে
shale গ্যাস বিষয়ে পলিসি স্থির করে ফেলেছে; অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মত এই পলিসি যে কোনও সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। সংবাদে প্রকাশ ভারত
ইতিমধ্যেই লগ্নীর জন্য টেণ্ডার মার্ফৎ আবেদন পত্র চেয়েছে।
ভারতের এই পদক্ষেপে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির
মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রীণহাউস গ্যাস নিঃসরণ বিষয়ে সব থেকে নির্মল
এবং সব থেকে শস্তা। বিশ্বে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার গত ১০-বছরে
বেড়ে ৩০-শতাংশের মত। EIA প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে ভবিষ্যৎবাণী
হল ২০১০ থেকে ২০৩৫-এর মধ্যে চাহিদা বাড়বে ৫০-শতাংশ।
ভারতে বর্তমানে চিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে
ফারাক হল ৪০-শতাংশ। ভারত উচ্চমূল্যে এই গ্যাস ক্রয় করে প্রায় ৩০-শতাংশ;
২০১৩-১৪ সালে ভারতের ঘাটতি ছিল আনুমানিক ০.০৯১ ট্রিলিয়ন ঘন মিটার,
ভারতীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী; ২০১৫-১৬ তা দাঁড়াবে
০.১০৭ ট্রিলিয়ন ঘন মিটারে। ঘাটতির ফলে জনসাধারণ্যের বিশাল অংশ
রান্নার গ্যাস পাচ্ছে না; গ্রামের মাত্র ১২-শতাংশের মত এবং শহরগুলির
৬৫-শতাংশের মত পাচ্ছে রান্নার গ্যাস। তাছাড়া, নাগরিক পরিবহনে গ্যাস
সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে গ্যাসের অভাবে। এই ঘাটতি মেটাতে কর্দমশিলা
গ্যাসকে অনেকই মনে করছেন অতি প্রয়োজনীয়। US- EIA-র ২০১৩-সালের
সমীক্ষা অনুসারে ভারতের সম্ভাব্য কর্দমশিলা-গ্যাসের অবক্ষেপ হল
২.৭ ট্রিলিয়ন ঘন মিটার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্বিক নিরীক্ষণের হিসাব মত ভারতের
মুম্বাই, কাবেরী ও কৃষ্ণা-গোদাবরী (KG-basin) অঞ্চলে কর্দমশিলা-গ্যাসের
সম্ভাব্য অবক্ষেপ হল ০.১৭৩ ট্রিলিয়ন ঘন মিটার, তাছাড়া কিছু গ্যাস
আছে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিম বঙ্গের দামোদর বেসিনে। কিছু প্রাথমিক কাজ
হয়েছে গুজরাটের জামবুশারে, পশ্চিম বঙ্গের দুর্গাপুরে এবং ঝাড়খণ্ডের
হাজারিবাগে।
কিন্তু, ভারতের এই যোগদানের ইচ্ছায় উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন। ভারত
একটি কৃষিপ্রধান দেশ, এর জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যান্য অনেক দেশের
থেকে বেশি এবং জনপ্রতি জলসম্পদ অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,
বিশাল চাষযোগ্য জমি- ও বিশাল বনাঞ্চল-সহ এই দেশে ইকো-ব্যবস্থা
ও জনমানুষের উপর ঔদক বিভঙ্গের প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি হবে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের থেকে; তবে কতটা বেশি, সে বিষয়ে মতান্তর আছে। তাই,
ভারত যেন পরিবেশ-দূষণজনিত কঠিন শর্তাবলীর আইনগ্রাহ্য প্রণয়ন করে
প্রোজেক্ট শুরুর আগেই জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে। এর জন্য
প্রয়োজন, প্রাদেশিক ভাষায় বিজ্ঞপ্তির বহুল প্রচার, গ্রামসভা ও
পঞ্চায়েত স্তরে আলোচনা, প্রশ্নোত্তর ব্যবস্থা।
ভারতের কি করণীয় ?
স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে নিম্নলিখিত পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তার
ব্যবস্থা করা আপোসহীনভাবে :-
(১) প্রতিটি বেসিন বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসন্ধান করা বিশদভাবে
জানার জন্য : কতটা জলের প্রয়োজন; পতিত জলের পরিমাপ কত, কি তার
কোয়ালিটি; অন্যান্য বর্জ্য ও নিঃসারিত বায়ুর লক্ষণাদি; ইত্যাদি।
এই সব তথ্য জনসাধারণে প্রকাশ করতে হবে।
(২) যেহেতু চিরাচরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য প্রণীত নিয়ামক-বিধি
কর্দমশিলা-গ্যাসের জন্য প্রযোজ্য নয়, তাই shale- গ্যাসের জীবনচক্রের
প্রতি নজর রেখে নূতন নিয়ামক বিধি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। এই বিধিগুলিতে
থাকবে বিশদভাবে পরিবেশীয় সংঘাতের পূর্ণ নির্ধারণ, জলের ব্যবহারের
ও দূষণ- নিয়ন্ত্রণের দৃঢ় বিধি, বায়ু-দূষণ (মিথেন-সহ) এবং বর্জ্যের
নিরাপদ বন্দোবস্তের জন্য কঠোর বিধি।
(৩) পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে shale-গ্যাস প্রোজেক্টে- উচ্চ ইকোলজি
এলাকাগুলিতে এবং এমন সব এলাকায় যেখানে জলাভাব তীব্র।
(৪) সকল প্রকার বর্জ্য ম্যানেজ করার উন্নত পরিকাঠামো তৈরি অত্যন্ত
আবশ্যক; এটি না হওয়া পর্যন্ত ঔদক বিভঙ্গ বন্ধ রাখতে হবে।
(৫) পূর্ণ তথ্য জানানো সহ জনসংযোগ বহাল রাখা জরুরী।
source:
(1) US EIA ⤛An Assessment of 137 Shale Formations in 41 Countries
Outside the United States, April 2011
(২) চন্দ্রভূষণ : Shale Trail, Down to Earth, জুলাই, ২০১৫।
(৩) https://en.wikipedia/wiki/Shale
(৪) Hirst, Seong Khor and Buckle- Shale gas and climate change,
Imperial College, London
Grantham Institute for Climate Change, Briefing paper No 10,
October 2013
লেখক পরিচিতি - শিক্ষাবিদ। বি.ই. কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর। এক সময় পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। অবসর-এর যুক্ত প্রায় জন্মকাল থেকেই। অবসর-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।