বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
জুন ৩০, ২০১৬
কারবন গুদামজাতকরণে - আইস্ল্যাণ্ডের একটি সফল প্রচেষ্টা
শঙ্কর সেন
বিশ্ব-ঊষ্ণায়ন- ও জলবায়ু-পরিবর্তন-এর থেকে নিস্তার পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের একটি প্রস্তাব- কারবন ডাই অক্সাইড বন্দী- ও গুদামজাত-করণ । ' অবসর '-এ পূর্বে এই পদ্ধতি আলোচিত হয়েছে [ দেখুন পরিবেশ বিভাগে : জীবাশ্মজ্বালানি (৬)- কারবন বন্দী- ও গুদামজাত-করণ ] ।
উপরোক্ত আলোচনায় গুদামজাতকরণের জন্য পাঁচটি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে একটি হল- 'অব্যবহিত গভীর লোনাজল-সম্পৃক্ত পাথুরে আধার ' । বলা যায়, বর্তমান প্রবন্ধে আলোচিত Iceland-এর Carbfix -প্রোজেক্ট এরই একটি বিশেষ প্রয়োগ ।
যুক্তরাজ্যের সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্রজেক্টে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ২৩০- মেট্রিক টন কারবন ডাই অক্সাইড গ্যাস ভূগর্ভে গুদামজাত করা হয়, যেখানে আছে ভূমিকম্পজাত ক্ষারীয় আগ্নেয়শিলা ( বাসাল্ট ) প্রস্তর । বাসাল্ট এই গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষারীয় খনিজ- কারবনেট-এ পরিণত করে যা হল কঠিন, অর্থাৎ লিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই । ধারণা ছিল, কঠিন বস্তুতে পরিণত হতে সময়ের প্রয়োজন হবে- একশো বছর বা হাজার । গবেষকগণ বিস্ময়ান্বিত হয়ে দেখেন যে কত তাড়াতাড়ি, মাত্র দু' বছরে, ৯৫-শতাংশ গ্যাস পরিণত হয়েছে কঠিন বস্তুতে ।
আইস্ল্যাণ্ডের Hellisheidi ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উদ্গত গ্যাসকে প্রথমে জলে দ্রবীভূত করা হয় সব রকমের ' লিক ' নিবারণ করার জন্য ; পরে ভূগর্ভে ৪০০-৫০০-মিটার নীচে ব্যাসাল্ট-স্তরে একে অনুবিদ্ধ(inject)করা হয় ।
সাফল্যে উজ্জ্বীবিত হয়ে ১০,০০০ মেট্রিক টন গ্যাস গুদামজাত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । এই প্রোজেক্টের সুবিধা হল এখানে ব্যয় কম । প্রজেক্টটির একমাত্র অসুবিধা হল প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়- প্রতি টন কারবন ডাই অক্সাইডের জন্য ২৫-টন জল । অবশ্য সমুদ্রের জল ব্যবহার করা যাবে । আর একটি অসুবিধা হল ভূগর্ভস্থ জীবাণু- যারা বাসাল্ট-দ্বারা বিক্রিয়ালব্ধ কঠিন কারবনেটকে ভেঙ্গে মিথেন গ্যাসে পরিণত করতে পারে -- তবে আইসল্যাণ্ডের প্রোজেক্টে এটি দেখা যায়নি ।
কারবন ডাই অক্সাইড ছাড়াও হাইড্রোজেন সালফাইড ব্যবহার করা হবে যা পরিণত হবে খনিজে । ওমান-এ আরেক ধরণের প্রস্তর-ভূখণ্ডে পরীক্ষারত আছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ; এখানে কারবন ডাই অক্সাইড রূপান্তরিত হবে কঠিন পদার্থে, যা বাসাল্টের থেকেও উৎকৃষ্ট ।
ইয়োরোপের উত্তর সাগরের নীচে খালি হয়ে যাওয়া তৈলক্ষেত্রে পাললিক শিলায় গুদামজাতকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিল । এ ধরণের পাললিক আধারে যেহেতু বাসাল্টের মত প্রস্তর নেই যার দ্বারা গ্যাসকে কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত করা যায়, ' লিক ' দেখা গিয়েছিল । এর জন্য সদাজাগ্রত দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন- যা খরচ বৃদ্ধি করবে । লিকের ফলে জন-প্রতিবাদ এসেছে- নেদারল্যাণ্ড ও জার্মানিতে মূল ভূখণ্ডের অনেক প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে ।
ভূগর্ভে বাসাল্ট পাওয়া গেছে এমন অঞ্চলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে । যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও ওরেগন-এ । ভারতে তো প্রচুর কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যেগুলি প্রবল কারবন-নিঃসরণ ঘটাচ্ছে । এদের জন্য রয়েছে দাক্ষিণাত্য ( ডেকান) অঞ্চলের ভূগর্ভে প্রচুর বাসাল্ট ।
জুন ১৮, ২০১৬
লেখক পরিচিতি - শিক্ষাবিদ। বি.ই. কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর। এক সময় পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। অবসর-এর যুক্ত প্রায় জন্মকাল থেকেই। অবসর-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।