প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিজ্ঞান

ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫

 

কসমিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি (সূচী)

কৌশিক সেনগুপ্ত


স্ফীতি (Inflation) সৃষ্টিতত্ত্ব

ইনফ্লেসন সৃষ্টিতত্ত্ব, অথবা কেবল ইনফ্লেসন বা স্ফীতি, মহাবিশ্বের প্রথম মুহূর্তগুলির বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার শ্রেষ্ঠতম তত্ত্ব অথবা তত্ত্ব গোষ্ঠী বলা যায়। সংক্ষেপে, এই গাণিতিক মডেলটি পরিকল্পিত হয়েছিল মাইক্রোওয়েভ পটভূমি আবির্ভাবের ৩৮০,০০০ বছর আগের ঘটনাগুলির তাত্ত্বিক গবেষণার জন্য।

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের থেকে বহু চিন্তা এবং প্রয়োগকৌশল ধার করে মহাবিশ্বের প্রথম মুহূর্তগুলি বিশ্লেষণ করার কাজ স্ফীতি তত্ত্বের। এর মূল প্রস্তাব হল এই যে কালের বিবর্তনের সঙ্গে যদি মহাবিশ্বের সর্বপ্রান্তে সম তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়, তাহলে সম্প্রসারণের মাত্রা কোন এক সময় সূচকীয় হারে (exponential growth) বৃদ্ধি পেতে হবে। মজার ব্যাপার হল সেই বিশেষ সময়টা হচ্ছে মহাবিস্ফোরণ ঘটার ১০-৩৫ থেকে ১০-৩২ সেকেন্ডের মধ্যে। অতি সংক্ষিপ্ত অথচ নিদারুনভাবে শক্তিশালী স্ফীতি পর্বটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে সম্প্রসারণের হার বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্বের প্রস্তাবিত "স্বাভাবিক" হারে ফিরে আসে।

স্ফীতি তত্ত্ব ১৯৭৯ সালে প্রথম প্রস্তাব করেন অ্যালান গুথ, এবং তারপর ১৯৮১ সালে অ্যালান লিন্ড এবং অন্যান্যরা এই তত্ত্বর অনেক উন্নতিসাধন করেন। দিগন্ত এবং ফ্ল্যাটনেস সমস্যার মতো গোলমেলে উপদ্রবগুলি এই তত্ত্বে অনুপস্থিত বা প্রশমিত। স্ফীতির সময় মহাবিশ্বের ব্যাস ১০৫০ কিম্বা আরও বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শেষপর্যন্ত ১০২২ °K তে পৌঁছল। এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধির সময় মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ এবং শক্তির আবির্ভাব হল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা কোয়ান্টাম তারতম্যের (quantum fluctuations) মাধ্যমে কার্যত শূন্যতা থেকে।

শক্তি ক্ষেত্রর মধ্যে ছোট ছোট তরঙ্গগুলি দ্রুত বিস্তার করে শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বের বৃহদাকার কাঠামোতে পরিণত হয়।

[মহাবিশ্বের প্রথম দিকের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনগুলি মহাবিশ্বের সমস্ত বৃহত্তর কাঠামোর বীজ। এগুলি ক্রমে রূপান্তরিত হয়েছে তারকারাশিতে, নক্ষত্রপুঞ্জে, এবং ছায়াপথে। এটি স্ফীতি তত্ত্বের একটি আশ্চর্য ফল বলা যেতে পারে। 1982 সালে অ্যালেন গুথ এবং অন্যরা এই ফ্লাকচুয়েশনের বর্ণালী গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফ্লাকচুয়েশনগুলি আজ কসমিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমির বুকে ছোট ছোট তরঙ্গের আকার ধারণ করেছে। তরঙ্গগুলি 1992 সালে COBE কৃত্রিম উপগ্রহ প্রথম সনাক্ত করেছিল এবং পরে WMAP এবং প্লাংক উপগ্রহদ্বয় এদের অনেক বেশী সূক্ষ্মতার সঙ্গে পরিমাপ করতে পেরেছিল। যদিও সবচেয়ে মৌলিক স্ফীতি তত্ত্বের মডেলগুলির পূর্বাভাস সঙ্গে বিকিরণের বৈশিষ্ট্য খুব ভাল ভাবে মিলে যায়, তবু কেবল এই ফ্লাকচুয়েশনগুলি উপস্থিতি স্ফীতি তত্ত্বের যথার্থতার সাক্ষী নয় ।

কৃত্রিম উপগ্রহগুলি থেকে গবেষণার ফল পরবর্তী পোস্টে বিষদ ভাবে আলোচিত হবে। ]

স্ফীতি পর্ব খুব দ্রুতই সমাপ্ত হল (বিগ ব্যাং-এর পরে শুধুমাত্র ১০-৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত এর বিস্তার) কিন্তু সংক্ষিপ্ততা সত্বেও স্ফীতির প্রবর্তনে দর্শনীয়ভাবে বিগ ব্যাং-এর বহু সমস্যার সমাধান হয়ে গেল, কিন্তু এ পর্যন্ত সবই কেবল অবস্থাগত প্রমাণ (circumstantial evidence) বলা যেতে পারে। সব সার্থক তত্ত্বরই মত স্ফীতি তত্ত্বরও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি যাচাই করার মত ভবিষ্যদ্বাণী চাই।

কিন্তু চূড়ান্ত প্রশ্নটি হল, স্ফীতি পর্বের আগে শক্তির আবির্ভাব হয়েছিল কিভাবে? বিশ্বাস করা কঠিন, তবু সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত করে, শক্তির আবির্ভাব শূন্যতা থেকেই!

অল্প কাল আগেও মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্বন্ধে তর্ক মূলত ধর্ম ও দর্শনের সীমানার মধ্যে পড়ত। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা বা তত্ত্ব প্রবর্তনে সফল হয়েছেন। এই তত্ত্ব এখনো শৈশবাবস্থায় এবং এখনো এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু অন্ততপক্ষে যে একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাতে পৌছনো গিয়েছে, তা যেন বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টারই জয়লাভ।

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে (বিশেষভাবে হাইজেনবের্গের অনিশ্চয়তা নীতিতে) শক্তির উদ্ভব কিভাবে শূন্যতা থেকে হতে পারে তার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান অনুযায়ী, কণা এবং প্রতিকণা বা বিপরীত কণা (antiparticle) শক্তি সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন না করে একে অপরকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধ্বংস করতে পারে। তথাকথিত ভার্চুয়াল কণাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত ধ্বংস আর সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াকে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন (quantum fluctuations) বলে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষাতে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের লক্ষণ সর্বত্র এবং সব সময় পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, পরমাণুর শক্তি স্তর (energy level) নিরূপণের সময় কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের প্রভাব সঠিকভাবে বিবেচনা না করলে পরীক্ষার ফলও সঠিক হয় না।

মহাবিশ্বের জন্মের আগেও যে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সক্রিয় ছিল তা কল্পনা করা অসম্ভব নয়। অধিকাংশ কণা-প্রতিকণার জোড়গুলি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে পড়ল কিন্তু একটিমাত্র টিকে থেকে স্ফীতি পর্ব শুরু হবার সঠিক অবস্থার সৃষ্টি হল।

কণা পদার্থবিদ্যা এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরিগুলি (GUT) স্ফীতি তত্ত্বের ভিত্তি। গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরিগুলিতে ঋণাত্মক এবং উচ্চ শক্তি সম্পন্ন মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র তৈরির ব্যাপারে কোন বাঁধা নেই। অ্যালান গুথের মতে, বিগ ব্যাং-এর প্রায় ১০-৩৭ সেকন্ড পর অত্যন্ত উষ্ণ মহাবিশ্ব ঋণাত্মক মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র উপাদানের পক্ষে একটি আদর্শ স্থান ছিল। বিশ্বাস করা কঠিন যে প্রায় ১০-২৮সে.মি এর একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু কালক্রমে মহাবিশ্ব উৎপাদনের পক্ষে যথেষ্ট। এই বিন্দুটি বিগ ব্যাং-এর ১০-৩৫ সেকন্ড পর পর্যন্ত অন্তত দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়ে (exponential expansion) অবশেষে একটি মার্বেলের আকার ধারণ করল। এরপর স্ফীতি পর্বের অবসান হয়ে বিগ ব্যাং-এর পর্ব শুরু এবং মূল ক্ষুদ্র মহাবিশ্বটি এবার বিরাট মাত্রায় বিবর্ধিত হয়ে ম্যাক্রোস্কোপিক মহাবিশ্বের পরিণত হল।

অ্যালেন গুথ একসময় মন্তব্য করেছিলেন, মহাবিশ্বর অস্তিত্ব যেন বিনামূল্যে লাঞ্চ খাওয়ার চূড়ান্ত উদাহরণ যদি কোয়ান্টাম ওঠানামা মহাবিশ্বের জন্মের জন্য দায়ী প্রতিপন্নও হয়! এর উৎপত্তি শূন্যতা থেকে এবং এর মোট শক্তির পরিমাণও শূন্য, তবুও মহাবিশ্বের বিস্ময়কর গঠন ও জটিলতা দেখলে অবাক হতে হয়। এমন কি আমাদের থেকে স্বতন্ত্র অন্যান্য মহাবিশ্ব থাকলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু ইনফ্লেসন বা স্ফীতি সত্যি ঘটেছিল কি?

মার্কিনী বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি দক্ষিণ মেরুতে একটি যুগান্তকারী পরীক্ষার সাহায্যে স্ফীতি সৃষ্টিতত্ত্বের সম্ভাব্য প্রমাণ উদ্ঘাটন করেছেন। পরীক্ষাটি কিভাবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পিত হয়েছিল তা বুঝতে হলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের বা gravitational waves-এর (মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কথা পরে আলোচিত হবে) সঙ্গে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের মিথষ্ক্রিয়া (interaction) বোঝা দরকার। কিন্তু তার আগে, দুটি সাম্প্রতিক কালের আবিষ্কারের কথা বলতে হবে যা সৃষ্টিতত্ত্ব ও কণা পদার্থবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে—ডার্ক এনার্জি এবং ডার্ক ম্যাটার (dark energy and dark matter, নীচে দেখুন )। মহাবিশ্বের বিবর্তনের আধুনিক ধারণাগুলির বিকাশ বুঝতে হলে এবং কিভাবে এপর্যন্ত গবেষণালব্ধ আপাত সম্পর্কহীন এই তথ্যগুলি একটি বৃহত্তর কাঠামতে অর্থপূর্ণ ভাবে সাজানো হল, জানতে হলে, এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে একটা সামগ্রিক পরিচয় হওয়া দরকার।

মহাজাগতিক রহস্য

বিংশ শতকের শেষের ভাগে দুটি চমকপ্রদ আবিষ্কার পদার্থবিদ্যার ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথমটি ডার্ক ম্যাটার, যে উপাদান দিয়ে মহাবিশ্বের অধিকাংশ পদার্থ গঠিত। দ্বিতীয়টি ডার্ক এনার্জি, এক রহস্যময় শক্তি যার অস্তিত্ব মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়ান এবং যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করার জন্য দায়ী। সাধারণ পদার্থ বা ordinary matter, যা দিয়ে আমরা তৈরি, তা আসলে আমাদের মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশের জন্য দায়ী। ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি আজ সৃষ্টিতত্বর অসমাধিত রহস্যগুলির অন্যতম এবং এই বিষয়গুলির প্রকৃত চরিত্র উদ্ঘাটন করা আজকের দিনের সক্রিয় গবেষণার বিষয়।

ডার্ক ম্যাটার

ডার্ক ম্যাটার আর একটি মহাজাগতিক রহস্য যার চাবিকাঠি আজও জ্যোতির্পদার্থবিদরা অক্লান্ত ভাবে খুঁজে চলেছেন। ডার্ক ম্যাটার দেখা বা স্পর্শর বাইরে কিন্তু এর উপস্থিতি মহাবিশ্ব জুড়ে। ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি টের পায় পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রপুঞ্জগুলি এর মহাকর্ষীয় টান অনুভব করে। সাম্প্রতিক কালে পরিমাপ করে দেখা গিয়েছে যে দৃষ্টিগোচর গ্রহ, নক্ষত্র, এবং ছায়াপথগুলির সম্মেলিত ভর মহাবিশ্বের মোট ভরের পাঁচ শতাংশেরও (৫%) কম। অপরদিকে ডার্ক ম্যাটার ৬৮%, এবং ডার্ক এনার্জি বাকি ২৭% ভরের জন্যে দায়ী।

[ডার্ক ম্যাটার কি নয় বিজ্ঞানী তা অনেক বেশি ভাল করে জানেন যত না ওঁরা জানেন ডার্ক ম্যাটার সত্যিই কি —
  • ছায়াপথ কিংবা নক্ষত্র নয়। ডার্ক ম্যাটার থেকে কোন আলো নির্গত হয় না তাই সরাসরি দেখাও যায় না। সুতরাং কোনো দৃশ্যমান মহাজাতিক বস্তু হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই
  • প্রতিকণা নয়। প্রতিকণা কণার সংস্পর্শে এলে ধ্বংসাত্বক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যামা রশ্মি উৎপাদন করে। কিন্তু এমন ধ্বংসাত্বক প্রতিক্রিয়ার সংকেত এপর্যন্ত মহাকাশে সনাক্ত করা যায় নি
  • ব্ল্যাক হোল নয়। ব্ল্যাক হোল মহাকর্ষীয় লেন্সের মত আলোকে বক্র পথে চালনা করে। কিন্তু ডার্ক ম্যাটার উপস্থিতি প্রমাণের জন্য যতটা লেন্সিং ঘটার প্রয়োজন, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এপর্যন্ত ততটা সনাক্ত করতে পারেন নি
  • ব্যরিয়ন নয়। সাধারণ বস্তু ব্যরিয়ন কণা দিয়ে তইরী। ডার্ক ম্যাটার যদি ব্যরিয়ন দ্বারা গঠিত হত তাহলে এদের সনাক্ত করা যেত প্রতিফলিত আলোর সাহায্যে।]

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কিছুকাল ধরে অবগত ছিলেন যে ভাস্বরহীন (nonluminous) পদার্থই ছায়াপথগুলির অর্ধেক ভরের জন্য দায়ী। ছায়াপথগুলি যদি শুধুমাত্র ভাস্বর পদার্থ দ্বারা নির্মিত হত, তাহলে আশা করা যায় যে কেন্দ্রের কাছের নক্ষত্রগুলির গতিবেগ পরিধির কাছের নক্ষত্রগুলির থেকে বেশী হবে। অন্য ভাবে বললে দাঁড়ায় যে, ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে একটি নক্ষত্রর দূরত্ব যত বেশী, নক্ষত্রটির গতিবেগ তুলনামূলকভাবে ততটা কম হওয়া উচিৎ। (যেমন, আমাদের সৌরজগতে সূর্যের নিকটবর্তী গ্রহ বুধের গতিবেগ অন্য গ্রহগুলির তুলনায় ক্ষীপ্রতম। আবার ধীরতম হচ্ছে সর্বাপেক্ষা দূরে আবর্তনরত প্লুটো গ্রহের গতিবেগ।) কিন্তু ছায়াপথের বেলাতে আশ্চর্যজনক ভাবে এটা সত্যি নয়। ১৯৭০ সালে, দুজন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ভেরা রুবিন এবং কেন্ট ফোর্ড পরিমাপ করে দেখালেন যে বাইরের দিকের নক্ষত্রগুলি গতিবেগ কেন্দ্রের কাছের আবর্তনশীল নক্ষত্রগুলির তুলনায় মটেই কম নয়। শুধুমাত্র দৃষ্টিগোচর ভাস্বর পদার্থের পরিমাণ দিয়ে বিবেচনা করলে এই ঘটনার ব্যাখ্যা মেলা কঠিন। রুবিন ও ফোর্ডেরও আগে, ১৯৩০ সালে, সুইস-মার্কিনী জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ্ জুইকি প্রমাণ করেছিলেন যে কোমা ছায়াপথগুলির ক্লাস্টারের ভিতর মোট পদার্থর পরিমাণ এর আভ্যন্তরীণ ভাস্বর পদার্থের (দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে যা নিরীক্ষণ করা যায়) সম্মেলিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশী। ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জ্যান অরট্ স্থানীয় ছায়াপথগুলি নিরীক্ষণ করে ওই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছিলেন। জুইকির সিদ্ধান্ত—কোমা ক্লাস্টারের মধ্যে নিশ্চয়ই প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য পদার্থ ছড়িয়ে আছে যাকে তিনি ডার্ক ম্যাটার বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় আকর্ষণ দ্রুত আবর্তনরত ছায়াপথগুলিকে কক্ষপথের থেকে বিচ্যুত হতে দেয় না।

চিত্র ৩: মহাবিশ্বে পদার্থের বিতরণ।

মিনি কম্পিউটারের আবির্ভাবের ফলে জ্যোতির্বিদ্যা শাস্ত্রের কয়েকটি বিশেষ সমস্যার সমাধানে নিউমারিকাল সিমুলেশানের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জেরেমায়া অস্ত্রাইকার এবং জেমস পিবলস্‌ (ইনি সেই একই পিবলস্‌ যার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পঞ্চাশ বছর আগে কসমিক মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ আবিষ্কারের সময় কাজে লেগেছিল), ছায়াপথের বিবর্ধন অধ্যয়নের কাজে N-body সিমুলেশন (simulation) ব্যবহার করেছিলেন। দেখা গেলো, সিমুলেশনের ছায়াপথকে যদি আজকের সর্পিল বা উপবৃত্তাকার ছায়াপথের আকৃতি পেতে হয় তাহলে সিমুলেশনের ভর বিন্দুগুলির (এক একটি ভর বিন্দু একটি করে নক্ষত্র সূচিত করে) উপর একটি ৩ থেকে ১০ গুন বড় ভর বিন্দুর নূতন সংকলন সমান ভাবে বিতরণ করতে হবে। ভর বিন্দুর সংকলন যোগ করা মানে হল ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতিকে অনুকরণ করা। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক গবেষণা বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ করল যে ডার্ক ম্যাটার না থাকলে সর্পিল (spiral) বা উপবৃত্তাকার ছায়াপথগুলির আকৃতিও স্থিতিশীল থাকতে পারত না। ছায়াপথের অভ্যন্তরের তারকাগুলি ক্রমশই কেন্দ্রের কাছে এসে জমাট বাঁধত ফলে সর্পিল কিম্বা উপবৃত্তাকার ছায়াপথগুলির চিহ্ন মহাকাশ থেকে মুছে যেত চিরকালের জন্য।

১৯৭৮ সালে রুবিন এবং তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দল দুই শত ছায়াপথের বর্ণালী বিশ্লেষণ করে দেখালেন যে প্রায় সব ছায়াপথের অন্তরগর্ভেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডার্ক ম্যাটার লুকানো রয়েছে। নক্ষত্রের গতিবেগের বিস্তার চর্চা করে সিদ্ধান্তে পৌছনো গেল যে সর্পিল ছায়াপথগুলির কেন্দ্রের কাছে সাধারণ নক্ষত্রগুলির অবস্থান। কিন্তু পরিধির কাছে ডার্ক ম্যাটারের আধিপত্য অনেক বেশী। এদের সম্মিলিত ভর ছায়াপথের ভাস্বর পদার্থের ভরের দেড় থেকে দ্বিগুণ। সুতরাং রুবিনের গবেষণাতেই ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রথম সরাসরি প্রমাণ মিলল। জেরেমায়া অস্ত্রাইকার এবং জেমস পিবলসের তাত্ত্বিক কাজেরও পর্যবেক্ষণের দ্বারা যাচাই হল।

[কেবল দুজন মহিলা পদার্থবিজ্ঞানী এপর্যন্ত নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। এরা হলেন, ১৯০৩ সালে মেরি কিউরী এবং ১৯৬৩ সালে, মারিয়া গাপার্ট মেয়ার। কিন্তু পুরোপুরি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা রুবিনের এখনও সেই সম্মান লাভের সৌভাগ্য হয় নি। সম্ভ্রমশালী, নিরভিমানী এবং বিদুষী ভেরা রুবিন যে সময় বড় হচ্ছিলেন সে সময়ের রীতি অনুযায়ী খুব কম সংখ্যক মহিলা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হতেন। কিন্তু রুবিন ছিলেন এর ব্যতিক্রম। ১৯৪৮ সালে উনি ভাসার কলেজের জ্যোতির্বিদ্যা শাস্ত্রে স্নাতকের ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার ১৯৭৫ সালের আগে মহিলাদের জন্য খোলা না থাকায় উনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় জ্যোতির্বিদ্যা শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রোগ্রামে যোগদান করেছিলেন। ওখানে ফিলিপ মরিসন, রিচার্ড ফাইনম্যান, এবং হান্স বেটে প্রভৃতি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কদের সংস্পর্শে থেকে পদার্র্থবিদ্যা অধ্যয়ন করেছিলেন। রুবিন ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জর্জ গ্যামোর তত্ত্বাবধানে। গবেষণার বিষয় ছায়াপথের ক্লাস্টারিং।

কর্মজীবনে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন ভেরা রুবিন। ১৯৫০ সালে ছায়াপথ সংক্রান্ত ক্লাস্টারিংএর উপর লেখা তাঁর প্রথম গবেষণাপত্রটি রূঢ় সমালোচনার সম্মুখীন হয়। ১৯৭০ সালে কেন্ট ফোর্ডের সঙ্গে যখন তিনি পূর্বের গবেষণার বিষয়টিকে অনেকাংশে প্রসারিত করে আবার প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলেন তখনও সমালোচনার কিছু কমতি হল না। ফলে বিজ্ঞানীদ্বয় গবেষণার ফোকাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। শেষে প্রায় অনন্যোপায় হয়েই রুবিন ও ফোর্ড আমাদের নিকটবর্তী নড্রোমিডা ছায়াপথের কেন্দ্রের চারিপাশের কক্ষপথে আবর্তনশীল নক্ষত্রমণ্ডলগত (interstellar) পদার্থের গতিবেগে পরিমাপ করা শুরু করলেন। অবশেষে দেখলেন সাফল্যের মুখ। সঠিক পর্যবেক্ষণের দ্বারা ওঁরা প্রমাণ করলেন যে ছায়াপথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডার্ক ম্যাটারের আধিক্য (প্রসঙ্গত অন্যান্য ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করে একই ফলের পাওয়া গিয়েছিল)।

রুবিন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী সমতাতে বিশ্বাসী। বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানে। চারটি সন্তান মানুষ করেছেন ভেরা রুবিন। সকলেই বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এ কৃতিত্ব নিজের প্রশংসনীয় বৈজ্ঞানিক কর্মজীবনের চেয়ে কম কিসের?]

এখন প্রশ্ন হোল, ডার্ক ম্যাটার আসলে কি? বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন ডার্ক ম্যাটার বুঝি প্রোটন, নিউট্রন, এবং ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত সাধারণ ব্যারিয়নিক (baryonic) পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়, কিন্তু এমনই এদের গঠন যে সহজে সনাক্ত করার উপায় নেই। ঊদাহরণে বলা যায়, গ্যাসের মেঘ, অথবা MACHOs-"বৃহদায়তন কম্প্যাক্ট চক্র বস্তু" যার মধ্যে হোয়াইট ডয়ার্ফ (white dwarf) তারকা বা নিউট্রন তারকা, এমনকি ব্ল্যাক হোলের মত মহাজাগতিক বস্তুও অন্তর্গত।

কিন্তু ছায়াপথ গঠনের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে ডার্ক ম্যাটার সাধারণ ভাস্বর পদার্থ থেকে যারপরনাই পৃথক। কিছু কিছু তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মতে ডার্ক ম্যাটার বাস্তবিকই supersymmetric কণা। পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের যে কটি পারমাণবিক কণা অন্তর্গত, supersymmetric কণাগুলি সেগুলিরই প্রকল্পিত সহযোগী কণা। অন্যদের মতে এরা axion বা নিউট্রিনোর মতো খুব হালকা পারমাণবিক কণা। আবার কিছু পদার্থবিদরা মনে করেন ডার্ক ম্যাটার আসলে WIMP (weakly interacting massive particles) জাতীয় কণা। (WIMP এর প্রবর্তন সাম্প্রতিক কালে আধুনিক কণা পদার্থবিদ্যাতে করা হয়েছে। কিন্তু এদের কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নি)। যাই হোক, ডার্ক ম্যাটারের মীমাংসা অদূর ভবিষ্যতে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডরের (LHC) পরিকল্পিত পরীক্ষাগুলিতে হবে বলে আশা করা যায়।

ডার্ক এনার্জি

নিউটনের তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু একে অপরকে মাধ্যাকর্ষণের দ্বারা আকর্ষণ করে। বস্তুর মধ্যে পদার্থও যত (বস্তুর ভর) মাধ্যাকর্ষণের শক্তিও তত। ছায়াপথগুলি উভয় ধরনের পদার্থ দিয়ে গঠিত—ভাস্বর পদার্থ এবং ডার্ক ম্যাটার।

মহাবিশ্বের প্রসারণের কথা বিজ্ঞানীরা ১৯২০ সাল থেকেই জানেন। বিস্তারের হার নির্ধারণও করেছেন তাঁরা। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অপর একটি বস্তুকে আকর্ষণ করে, মহাকর্ষীয় আকর্ষণ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের বিপক্ষে কাজ করে বিস্তারের অন্তরায় সৃষ্টি করবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে গত কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে সম্প্রসারণের গতি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকবে। ১৯৯০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রসারণের এই হার কতটা পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে তা পরিমাপ করার সংকল্প করলেন।

জ্যোতির্পদার্থবিদদের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী—প্রথম দলটির নেতা লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল গবেষণাগারের সল পারল্মাটার (Perlmutter) এবং দ্বিতীয়টির নেতা অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্রায়ান স্মিডট (Schmidt)—একপ্রকারের সুপারনোভা (supernova) ৮ বিস্ফারণের (নক্ষত্রের বিপুল বিস্ফারণ) বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করার কাজে স্বাধীনভাবে উদ্যোগী হলেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যে ওঁদের গবেষণা মহাবিশ্বের বিবর্তনের হার পরিমাপে বিশেষভাবে উপযোগী হবে। যদি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার অপরিবর্তনশীল হয় তাহলে সুপারনোভাগুলির ঔজ্জ্বল্য কি হওয়া উচিত তা মহাকাশের নানা বিন্দুতে গণনা করা যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ কতটা হ্রাস পেল তা মহাকাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সুপারনোভাগুলির ঔজ্জ্বল্য তুলনা করে নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু ফলাফলে ওঁরা যা দেখলেন তাতে রহস্য আরও ঘনীভূত হল। ৬ কিম্বা ৭ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের সুপারনোভাগুলির ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পাওয়ার বদলে হ্রাস পেতে দেখা গেল—সুতরাং সুপারনোভাগুলি যে ছায়াপথের অন্তর্গত, সেই ছায়াপথগুলির দূরত্ব যেন বাড়ছে বই কমছে না।

দুটি দলেরই অনিবার্য সিদ্ধান্তটিতে পৌছতে সময় লাগলো না—মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার কমছে না, বরং বৃদ্ধিই পাচ্ছে।

বস্তুত, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ত্বরণের ব্যাখ্যা শুধু এক ভাবেই দেওয়া যেতে পারে। space বা মহাকাশের মধ্যে যেন একটা বিকর্ষণীয় বলের বা শক্তির অস্তিত্ব আছে যার কাজ মাধ্যাকর্ষণের অন্তর্মুখী প্রভাবকে বিরোধিতা করা। মাধ্যাকর্ষণ যেমন বস্তুকে ভিতরের দিকে আকর্ষণ করে এই নূতন বলটি তেমনি বস্তুকে বাইরের দিকে ঠেলে পাঠায়। পরবর্তীকালের পরিমাপ করে দেখা গেল যে মহাবিশ্বের ভর বা শক্তির ৬৮% ভাগই এই মাধ্যাকর্ষণ বিরোধী ডার্ক এনার্জি, যা ছায়াপথগুলিকে পরস্পর থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার কাজে রপ্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিদরা কিন্তু ডার্ক এনার্জির প্রকৃত স্বরূপ এখনো জানেন না, তাই গবেষণার কাজ এখন পুরোদমে চলেছে।

অচিরেই বোঝা গেল, মাধ্যাকর্ষণ বিরোধী ডার্ক এনার্জি স্থান-কালেরই সহজাত ধর্ম। এর প্রকাশ খুব সম্ভব আইনস্টাইনের বিখ্যাত মহাজাগতিক ধ্রুবকের মধ্য দিয়ে। ১৯১৭ সালে এই ধ্রুবকের অস্তিত্ব আইনস্টাইন প্রথম প্রবর্তন করেন স্থান-কালের ফ্যাব্রিক প্রসারণ করার কাজে। তখন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সমীকরণগুলি মহাবিশ্বকে অপরিবর্তনশীল বা স্ট্যাটিক হওয়ার পক্ষে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আইনস্টাইন মহাজাগতিক ধ্রুবকটিকে পরিত্যাগ করেন যখন এডুইন হাবল মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রমাণ দাখিল করলেন দূরবর্তী ছায়াপথগুলির অপসারণের তথ্য আবিষ্কার করে।

সল পারল্মাটার, ব্রায়ান স্মিডট এবং আদম রিস্ ২০১১ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন উপরোক্ত রহস্যময় শক্তি বা বল, যার অপর নাম ডার্ক এনার্জি, আবিষ্কার করে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ডার্ক এনার্জিই মহাবিশ্বের ত্বরিত হারে সম্প্রসারণের কারণ। বলা বাহুল্য, এই আবিষ্কার ইতিমধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের বহু মৌলিক চিন্তার মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে ফেলেছে।

(চলবে)


সুপারনোভা হল এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ যার ফলস্বরূপ একটি নক্ষত্র সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। খুব দূরবর্তী ছায়াপথের দূরত্ব পরিমাপের কাজে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর সুপারনোভা, টাইপ IA সুপারনোভা, বিশেষ সহায়ক। জ্যোতির্পদার্থবিদরা তাঁদের গবেষণাতে টাইপ IA সুপারনোভা ব্যবহার ব্যাপক ভাবে করে থাকেন। টাইপ IA সুপারনোভার দুটি তারকার সমষ্টির মধ্যে একটি জীবনচক্রের শেষে পর্যায় পৌঁছে হোয়াইট ডয়ার্ফে তারকাতে পরিণত হয়। হোয়াইট ডয়ার্ফটির ভর ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পায় সঙ্গী তারকাটির থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস শোষণ করে। অবশেষে যখন হোয়াইট ডয়ার্ফটির ভর আমাদের সূর্যের ভরের থেকে ৪০% বেশী হয়ে যায়, তখন তার পরিণতি একটি ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বিস্ফোরণ।


লেখক পরিচিতি: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচ ডি করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোস্ট ডক্টরেট করেন। বর্তমানে আই.বি.এম-এ কর্মরত।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।