ছবিতে ভ্রমণ
মার্চ ৩০, ২০১৫
অন্য রকম ভ্রমণ
ঈশানী রায়চৌধুরী
সোনালি ড্যাফোডিল
..........................
রাণীর দেশ। গ্রীষ্মকাল। এ এক আজব দেশ , সত্যি ! আকাশের যখন মন ভালো , কেমন রোদ ঝিলমিল হাসি। আবার মেজাজ বিগড়ালে মুখখানি থমথমে, চোখে ডুবজল। তারপর কারণে অকারণে দু:খ পেড়ে আনল আঁকশি দিয়ে কোন মুল্লুক থেকে কে জানে ! ব্যস , ছটফটিয়ে ঝরঝরিয়ে কান্না। ঠিক মেয়েদের মনের মতো। হদিশ মেলা ভার। সেই ভয়ে এই ঋতুতে গাছ আর মাটি পশরা সাজিয়ে রাখে খুব। লাল নীল সবুজ হলুদ সাদা গোলাপী কমলা বেগুনী ...ফুল আর ফুল ! গাছ উপচে পড়ে , ঘাসজমিন ভেসে যায়। রঙিন গালিচা বিছিয়ে থাকে পীচের রাস্তা জুড়ে। রংবেরং লজেন্স আর ললিপপ কত ... আকাশের মনমর্জি শরীফ করতে। আর জল। অনেক জল। লেক ডিস্ট্রিক্ট। নীল জলে নীল ছায়া। এখানে তাই অসংখ্য রাজহাঁস তাদের অহঙ্কারী গ্রীবায় রোদ্দুরের রুপোর হাঁসুলি পরে ডানায় জলের মুক্তোবিন্দুর ঝালর দুলিয়ে ঝমরঝমর চলে। ধবধবে সাদা কবুতর নির্ভয়ে মখমলী সবুজ ঘাসের বীজ খুঁজে খুঁটে খুঁটে খায় ; তাদের পায়ে পরানো থাকে নীল সবুজ আংটি। উদাসীন অনাগ্রহে ঘুঘু পালকে ঠোঁট ডুবিয়ে ঝিমোয় গৃহস্থের বাগানে , চবুতরায় বা রংবেরং মরশুমী ফুলের আলপনা আঁকা কার্নিশে। এখানে রোম্যান্টিকতার সংজ্ঞা খুঁজতে অভিধান বা গুগুল সার্চ সময়ের অপব্যয়। এখানে শুধু শুষে নেওয়া। প্রকৃতির অকৃপণ দাক্ষিণ্য। স্বপ্ন চেনা, স্বপ্ন আঁকা। আর কবিতা। কবিতা স্বয়মাগতা। তাকে হাত ধরে আমাদের সামনে এনে অবগুন্ঠনটিকে অপসারণ করেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ , শেলী , কোলরিজ , বায়রন , কীটস।প্রেমিকের মতন যত্নে এবং মায়ায়।
লেক ডিস্ট্রিক্ট। অজস্র রোম্যান্টিক কবিতার জন্মভূমি। অসংখ্য কবির চারণভূমি। এখনও। এখনও ওয়ার্ডসওয়ার্থ ট্রাস্টের আনুকূল্যে কবিতার ওয়ার্কশপ হয়। দোকানে বিক্রি হয় স্ক্র্যাবলস -এর মতো দেখতে একরকম খেলনা..যা দিয়ে নিজের শব্দ সাজিয়ে কবিতা লেখার খেলা খেলতে শেখা যায়। এখনও ওয়ার্ডসওয়ার্থ ট্রাস্টের সংগ্রহশালায় নমুনা সাজানো থাকে টেবিলে..হাঁসের পালকের কলম..কীভাবে লিখতে হয় ...আনাড়ী আমরা সে যুগের কবিদের পাণ্ডুলিপি দেখে দেখে নকলনবিশী করার ব্যর্থ প্রয়াস করি।
ডাভ কটেজ। এবং সংগ্রহশালা। লেক ডিস্ট্রিক্ট -এর গ্রাসমেয়ার -এ। যে ছোট্ট বাড়িটিতে ওয়ার্ডসওয়ার্থ কাটিয়েছিলেন ৯ বছর। ১৭৯৯ থেকে ১৮০৮। যে বাড়িটিতে এক সময় নিত্য আনাগোনা ছিল তত্কালীন শ্রেষ্ঠ কবিকুলের। যে বাড়িতে কবির সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা ছাড়াও বাস করেছিলেন সেই বিখ্যাত গ্রাসমেয়ার জার্নালের লেখিকা কবির বোন ডরোথি ওয়ার্ডসওয়ার্থ। এই জার্নালের কথা একটু বিশদে বলব , এবং ডরোথির ভাষা ধার করেই ... কারণ তা না হলে সেই সময়ের লেক ডিস্ট্রিক্টকে চেনা যাবে না।
আমাদের আস্তানা ছিল লেক ডিস্ট্রিক্ট-এর অ্যাম্ব্লসাইডে। যেদিকেই চোখ ফেরাই , ৩৬০ ডিগ্রী জুড়েই ছবির মতো। রিসেপশনে এক ফুটফুটে মেমসাহেব। ক্যারল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম , " ডাভ কটেজ কোনদিকে ? ওয়ার্ডসওয়ার্থ থাকতেন।" সে লজ্জায় রাঙা হয়ে বলল , " আমি তো স্কট। ওনার লেখা পড়িনি। এখানেই থাকতেন বুঝি ? নাম শুনেছি ওই কবির।" আমি ওর মাথার ঠিক পেছনেই তাক জুড়ে সাজিয়ে রাখা নানান ফ্লায়ার থেকে ডাভ কটেজেরটা বের করে বললাম, " এই তো ! " সে বিধুমুখী মার্জারাক্ষী আরও লালিমারঞ্জিত হয়ে বলল , "কী কাণ্ড ! এ তো এখান থেকে হাঁটা পথ ! আমি জানতামই না।"
তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এবং ফুরোনো বিকেল।এ বৃষ্টি অদ্ভূত। গায়ে লাগে , আবার লাগেও না। ভেজায় , আবার ভেজায়ও না। ঠিক করলাম , পরের দিন দুপুর গড়ালে যাব। সব কিছু আবার ছটা বাজলেই ঝাঁপ ফেলে দেয়। খাবার জায়গা ছাড়া। যদিও দিনের আলো থাকে রাত নটা পর্যন্ত !
পরের দিন দুপুর দুটোয় ডাভ কটেজ। ছিমছাম সাদা বাড়ি। দোতলা। ফুলের ঝাড়ে ঢাকা। সঙ্গে সংগ্রহশালা। এবং দোকান। পাশে ক্যাফে। এখানেই প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠান , ওয়ার্কশপ হয়..আগেই বলেছি। প্রবেশমূল্য বরাদ্দ আছে। রক্ষণাবেক্ষণ নিপাট , সুন্দর , ঈর্ষনীয়। গাইড আছেন দেখানোর জন্য। আগে একটু বাইরের কথায় আসি। ডরোথির জার্নাল থেকে। তাহলে বোঝা যাবে...সেই সময় ছবি কেমন ছিল। কারণ ভেতরে সবকিছু ঠিক আগের মতোই যে সাজিয়ে রাখা।
৬ই মে, ১৮০২
" কী মিষ্টি এ সকাল। এখন বেলা একটা। আমরা বসে আছি ডাভ কটেজের বাগানে। আকন্ঠ এক অন্যরকম নির্জনতায় ডুব দিয়ে। দেওয়ালের গা ঘেঁষে একটি বসার জায়গা। ছায়া ছায়া , মায়াবী আলোয় ভরা। পাতার আড়ালে পাখিদের কাকলি। ভেড়াগুলো ডাকছে ..অনেকটা দূর থেকে। মুরগিগুলো এমন হট্টগোল করে ! কোকিল..কুহুকুহু। গাছ নুয়ে পড়েছে অজস্র ফুলের ভারে। মঞ্জরী এসেছে প্লাম আর ন্যাসপাতি গাছে। আপেল গাছের রং আবছা সবুজ। থমাসের কুঠার কী উদাসীন অনাগ্রহে উঠছে নামছে গাছের গুঁড়ি বেয়ে। পড়শিনীরা যে যার দরজায় ..অলস কথায়। পাখি আর ফুল। ফুল আর পাখি। ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে প্রিমরোজ গাছ। ভায়োলেটস , জেরানিয়াম আর প্যানজি ...দেওয়াল জুড়ে !"
আমরা যখন সেই দুপুরে .. ঠিক ২১২ বছর পর ... ছবি প্রায় এক। শুধু দুষ্টু মুরগিগুলো ছিল না। ছিল না থমাস। বাড়ির বাইরে।
ভেতরে ঢুকে দেখতে গেলে টিকিট কাটতে হয়। ভারতীয় মুদ্রায় নেহাত কম নয়। ওই টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ , ওয়ার্কশপ ইত্যাদি হয়। গাইড ছিলেন এক মহিলা। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ট্রাস্টের। দোতলা বাড়িটি। একতলায় ঢুকেই একটি পার্লার। জানলা ঘেঁসে একটি ওক কাঠের চেয়ার। সামান্য আসবাব। ফুলতোলা কুশন। আমরা জানলার পাটাতনে বসলাম। চেয়ারটি স্বয়ং কবির। আর এই ঘরে আরও কতজন যে এসেছেন। ফায়ারপ্লেসের ওপরে একটি বাদামী রঙের সারমেয়। ছবিতে। আমাদের দিকে তাকিয়ে। ওর নাম পেপার। স্যার ওয়াল্টার স্কটের পুষ্যি। এবং উপহার ওয়ার্ডসওয়ার্থকে। পেপার আমৃত্যু এবাড়িতেই ছিল। একতলার ছাদগুলি নীচু। দেওয়াল বিবর্ণ হলুদ। রান্নাঘরে কয়লা ভাঙার হাতুড়ি। স্টোভ। তখন তো ফ্রিজ ছিল না। ডরোথির ভাঁড়ার ঘরটি কী আশ্চর্য ঠাণ্ডা। অদ্ভূত লাগছিল আমার। ঠিক যেন ন্যাচারাল ফ্রিজ। মাংস কাটার টেবিল। শস্যদানা রাখার চিনেমাটির বয়াম।
মুখ হাত ধোয়ার দুটি বিচিত্রদর্শন বেসিন। সঙ্গে টানা ড্রয়ার দেওয়া। ভাই আর বোনের। পাশাপাশি। একটি চিনেমাটির আবছা হলদেটে পাত্রে দাঁতন রাখা। লালচে বাদামী কাঠের হাতল দেওয়া পাতলা বুরুশ। দেখতে অনেকটা আমাদের নিমের দাঁতনের মতো। আমি হাতে নিয়ে দেখলাম। কী যে যত্ন করে রেখেছে এরা। আর কী যে যত্ন করে দেখাচ্ছে ! ছাদ এত নীচু..তখন হয়ত তেমনই হত ! কী জানি কবির অসুবিধা হত কিনা। শুনলাম দৈর্ঘ্য ছিল ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। এই বাড়িতেই কবির স্ত্রী হয়ে আসেন মেরি হাচিনসন। এই বাড়িতেই দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাটিয়েছেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং কোলরিজ। এই গ্রাসমেয়ারেই লেখা হয় কোলরিজের রাইম অফ অ্যান এনশেন্ট মেরিনার। এই ডাভ কটেজে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ে। কবির ৫ টি সন্তানের তিনজন এখানেই জন্মায়।
দোতলাটি অপেক্ষাকৃত বড় পরিসরের। ডরোথির শোবার ঘর , কবির শোবার ঘর , স্টাডি , বাচ্চাদের ঘর , অতিথির ঘর। ওপরে আলো বাতাস বেশি। রোমাঞ্চও। কারণ কবির স্টাডিতে আলমারিতে রাখা কবির চশমা, কলম , টুকিটাকি ব্যবহারের জিনিস। শোবার ঘরটিতে পরিপাটি বিছানা পাতা। কবি লিখতেন কখনো স্টাডিতে , কখনো বাইরে বাগানে বসে। আছে ডরোথি আর মেরির সেলাই বাক্স , কবির কুড়িটি মাদার অফ পার্লের পদক , সোনার পকেট ঘড়ি , লেখার কলম। সিল্কের কুশনে কবির স্ত্রী ও মেয়ের স্বাক্ষর পড়া যায় পরিষ্কার। সীবনে কী দক্ষতা ! একটি দেওয়ালে কবির পাসপোর্ট। তখন কী অন্যরকম ছিল দেখতে ! ঘুরে ঘুরে দেখছি..কিছু কিছু জিনিস স্পর্শ করছি..আর মনে হচ্ছে এক্ষুণি ওপার থেকে কেউ এসে বলবে, " ছি , অন্যের জিনিসে হাত দেয় না !"
এমনটা তো দেশেও দেখেছি। আমাদের প্রাণের ঠাকুরের ব্যবহারের জিনিস। বিলিতি কবি..তাই এই উচ্ছ্বাস? না , তা নয়। কষ্ট হচ্ছিল খুব। সংগ্রহশালায় ঢুকে কষ্ট বেড়ে গেল। মুগ্ধ দর্শক। ছড়িয়ে রাখা পাণ্ডুলিপি দেখে দেখে হাঁসের পালকের কলম দিয়ে লেখা মকশো করছে। শুধু লেখা আছে..."এই দুর্মূল্য পৃষ্ঠাগুলি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন না অনুগ্রহ করে।" ব্যস, এইটুকুই। লুকোনো ক্যামেরা ? আছে হয়ত ! খুঁজে দেখিনি। কেউই দেখে না। কারণ কেউ ভাবেই না..এসব কারো ব্যক্তিগত। এ সবকিছু সবার। সব অনুরাগীদের। আছে অজস্র পাণ্ডুলিপি . অজস্র পোর্ট্রেট , অনেকের আঁকা ছবি …যাঁদের পদধূলিতে ডাভ কটেজ ধন্য হয়েছে। আছে কবির প্রিয় কন্যা ডোরার মাথার একগুচ্ছ সোনালি চুল। আরও কত কী ! সব মনেও নেই। শুধু মনে আছে আলমারিতে রাখা সেই সম্পূর্ণ পরিচ্ছদ , জুতো মোজা সমেত। যেটি পরিধান করে রাণীর দরবারে পোয়েট লরিয়েটের খেতাব আনতে গিয়েছিলেন সর্বকালের দুই সেরা ইংরেজ কবি। আলফ্রেড টেনিসন এবং উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ !
প্রসঙ্গত বলি , পোয়েট লরিয়েট হতে গেলে এক অলিখিত শর্ত থাকত..রাজকাহিনী লিখতে হবে। কবিতায়। ওয়ার্ডসওয়ার্থ একমাত্র পোয়েট লরিয়েট ..যিনি খেতাব নিতে স্বীকৃত হবার আগে রাণীকে জানিয়েছিলেন , তিনি নিজের তাগিদে লেখেন। নিজের জন্য লেখেন। নিজের আনন্দে লেখেন। ফরমায়েসী সভাকবি হতে তিনি অরাজী। সারা জীবন কবি সত্যিই কোনো রাজগাথা লেখেননি।
বেরিয়ে এসে বসেছিলাম ওই বাগানে। যে বাগানে বসতেন কবি। রোদ্দুরের ঝাঁঝ ছিল না। ডাভ কটেজে শীত ঋতু কেমন ..কে জানে ! আমার তো অগতির গতি ওই ডরোথির জার্নাল।
২৪ শে নভেম্বর , ১৮০১
" আমাদের বড় প্রিয় ..বার্চ গাছটা ..আর পারছে না উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। ওর নরম ডালপালাগুলো নুয়ে পড়ছে। আর যখন রোদ্দুর এসে স্পর্শ করছে ওকে .. ও তাকিয়ে আছে বাতাসের দিকে ..এলোমেলো উত্তাল সোনারং ঝাঁপালো ঝর্ণার মতো .. গাছ...গাছই তো.. ডালপালা নিয়ে যেমনটি হয়... কিন্তু কোথায় যেন ঝর্ণার মতো ..জলদেবীর মতো..এক অপার্থিব অফুরান স্বর্ণিম সৌন্দর্যে ...."
আর কিছু দিন পর... ২৯ শে ডিসেম্বর , ১৮০১
" আমরা উঠছিলাম পাহাড়ী পথ বেয়ে। ঠাণ্ডা , পিছল। মার্টিনডেলে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে খুব। বুনো লতাপাতায় ঢাকা কুঁড়েঘরগুলো ওলটপালট। পাহাড়টা কী ভীষণ আর ভয়াল। ঝড়ের তাণ্ডবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে।"
আমি বর্ষাও দেখলাম ডরোথির চোখ দিয়ে।
৫ই জুলাই , ১৮০২
" বৃষ্টি এল। অতিথি হয়ে। প্রথমে চুপিচুপি পায়ে। তারপর উদ্দাম। এল , ভাসিয়ে নিয়ে গেল। দুর্বার গতিতে। ফিরে গেল জলের ঘুঙুর পরে ...ঝমঝমিয়ে।"
বিকেল ফুরিয়ে এল। বাতাসে সামান্য হিমেল ভাব। পাশেই ক্যাফে। বাইরে বসি। চোখের ওপারে নীল সবুজের মেলা। মাথা দুলিয়ে হাসে ঝকঝকে সোনালি ফুল। অনেক অনেক। ক্যাফের মালিক নীল চোখের যুবকটি হালকা হেসে বলে, " মাদাম , ড্যাফোডিল।"
সারা জায়গা জুড়ে। আলো ছড়াচ্ছে। বিকেলের রোদ্দুর এক নিমেষেই উজ্জ্বল সোনালি হয়ে যায়। ডরোথিকে মনে পড়ে।
১৫ই এপ্রিল, ১৮০২
" খুব কুয়াশা আজ। শনশন হাওয়া বইছে। হ্রদের জল উত্তাল। আমরা ফিরছিলাম বনের পথটি দিয়ে। দেখি জলের কোল ঘেঁষে কয়েকটি ড্যাফোডিল। এগোচ্ছি...আরও ফুল...আরও আরও... শেষ প্রান্তে গাছের নির্জনতা খানখান করে ভেঙে দিয়ে ফুলেদের হাসি। বিস্তীর্ণ জমি জুড়ে ... আমি এত সুন্দর ড্যাফোডিল আগে তো দেখিনি ! শ্যাওলা দিয়ে সাজানো পাথুরে জমি .. কেউ কেউ যেন আয়েস করে ক্লান্তি থেকে মুক্ত হতে চাইছে পাথরের গায়ে লেপ্টে থেকে ...বাকিরা নাচছে, গাইছে, ফুর্তিতে মশগুল ...নাচের সঙ্গী ওই মাতাল বাতাস। এখান ওখানে সবখানে... এত সহজ এত সুন্দর ...বৃষ্টি এল বুঝি ? ঝিরঝিরিয়ে ? "
আমিও ছুঁতে পারছিলাম বৃষ্টিকে। সেই মুহূর্তে। জলের আতর !
অপরূপ রূপকথা
........................
চারটে খুদে খুদে খরগোশ ছানা ছিল। ফ্লপসি , মপসি , কটন টেইল আর পিটার। তারা থাকত একটা বিশাল বড় ফার গাছের নীচে , শিকড় যেখানটায় বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ..সেখানে। নরম বালির গদি দেওয়া বাড়িতে। মায়ের সঙ্গে। তিনটে খরগোশ ছানা ভারী লক্ষ্মী। কিন্তু পিটার? সে দুষ্টু , ডানপিটে।
একদিন সকালে তাদের মা বলল , " বাছারা , যাও , বাইরে মাঠে ঘুরে এস। পারলে চাট্টি কালোজাম এনো| কিন্তু খবদ্দার , ভুলেও মিস্টার ম্যাকগ্রেগরের বাগানের দিকে যেও না। ওখানেই তোমাদের বাবার ওই বিচ্ছিরি দুর্ঘটনা হয়েছিল। ম্যাকগ্রেগর গিন্নি তেনাকে দিয়ে মাংসের পিঠে বানিয়ে ফেলেছিলেন। সাবধানে যেও। আমিও বাজারে যাব।"
তা খরগোশ-গিন্নিও সাজুগুজু করে মাথায় ছাতাটি দিয়ে বেরোলেন, বাচ্চারাও চরতে গেল । ফ্লপসি , মপসি আর কটন টেইল তো লক্ষ্মীছানা , তারা কালোজাম খুঁজতে গেছে। আর ওই হতচ্ছাড়া দুষ্টুর শিরোমণি পিটার ...ঠিক গেটের তলা দিয়ে ঢুকেছে ম্যাকগ্রেগরের বাগানে। আর পড়বি তো পড় মিস্টার ম্যাকগ্রেগরের সামনে !
তারপর ? আর বলব না। কারণ আমি পিটারের কাণ্ডকারখানার গল্প ফাঁদতে বসিনি। সে বলতে গেলে দিন ফুরিয়ে রাত কাবার হয়ে মাস কাবার হয়ে যাবে। আর শুধু গল্প তো নয় ! ছবি ? ছবি ছাড়া পিটারের গল্প অচল। আমার এই পর্ব পিটারের স্রষ্টা বিয়াট্রিক্স পটারকে নিয়ে। আর তাঁর সেই আজব পৃথিবী , যা এতদিন শুধু দ্বিমাত্রিক উপস্থিতিতে আমার বইয়ের আলমারিতে ছিল।
বিয়াট্রিক্স জন্মেছিলেন ১৮৬৬ সালে। এক অভিজাত রক্ষণশীল ইংরেজ পরিবারে। নিয়মমাফিক স্কুলে যাওয়া হয়নি তাঁর। বাড়িতেই যা কিছু পড়াশুনো ..গভর্নেসের কাছে। বন্ধুবান্ধব নেই। সঙ্গী বলতে ছোট ভাই , একটা সবুজ ব্যাং , দুটো গিরগিটি , গুটিকয় গোসাপ , একটা হিলহিলে সাপ আর একটা খরগোশ। না-মানুষ সঙ্গীসাথীরা বেশ! একটি কথা বলেছিলেন বিয়াট্রিক্স। " ভাগ্যিস আমাকে ইস্কুলে পাঠানো হয়নি ! তাহলে নির্ঘাত আমার কিছুটা স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যেত।"
গ্রীষ্মের ছুটি হলে সবাই মিলে লেক ডিস্ট্রিক্ট। আপনমনে ঘুরে বেড়ায় বালিকা। জলের ধরে, বনের পথে। তার খুদে খুদে নোটবুক ভরে ওঠে পেন্সিল স্কেচে আর জলরঙে আঁকা ছবিতে। ছোট থেকেই আঁকার বড্ড শখ তার। জীবজন্তুর ছবি। কিন্তু তাদের আচার আচরণ মানুষের মতো। খরগোশ জামাকাপড় পরে স্কেট করছে। কিংবা ইঁদুর গাউন পরে মাথায় রুমাল বেঁধে বেতের ঝুড়ি হাতে বাজার যাচ্ছে। বালিকা বড় হল। এভাবেই। প্রকৃতিকে আশ্রয় করে।
বিয়াট্রিক্স প্রথম মডেল করেন তাঁর পোষা খরগোশকে। তাঁর আঁকা ছ’টি ছবি ব্যবহার করা হয় গ্রিটিংস কার্ডে। সম্মান দক্ষিণা পান ৬ পাউন্ড। ১৮৯০ সালের গ্রিটিংস কার্ড।
বিয়াট্রিক্স খুব ভালবাসতেন বাচ্চাদের চিঠি লিখতে। পিটারের গল্প শুরুই হয়েছিল চিঠিতে। পেন্সিল স্কেচ আর ছোট ছোট বাক্য দিয়ে। সেই যে ছোটবেলার গভর্নেস, তাঁর নাতি নোয়েল মুর ...অসুস্থ..তাকে চিঠি লেখেন বিয়াট্রিক্স। ৪ ঠা সেপ্টেম্বর , ১৮৯৩। এরও কয়েক বছর পর ওই চিঠির হাত ধরে এল পিটারের গল্প।
কপাল মন্দ। ছ'জন প্রকাশকের ঘর থেকে ফিরে এল পিটার। অবশেষে খরগোশের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। ফ্রেডেরিক ওয়ার্ন ছাপতে রাজি হলেন এই গল্পমালা। ১৯০২ সাল।
লেখিকার সাফল্যৰ পেছনে ছিল সহজ সরল ভাষা। মনভোলানো ছবি। গল্পের খসড়া করে বন্ধুবান্ধবদের ছানাপোনাদের শোনাতেন তিনি। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তাঁর লেখনীতে সমান্তরালে চোরাস্রোতে বয়ে যেত হাসি আর গাম্ভীর্যপূর্ণ কথা। পড়তে পড়তে তাই পিটারকে বাচ্চারা চিনে নিত নিজেদের দুষ্টুমীর অংশীদার হিসেবে। পিটার তো খরগোশ নয় ! সে তো ও বাড়ির বাচ্চু বা পিঙ্কু। আর পিটারের মা ? মা গো মা ...উফ ..বাড়িতে তো আমার মাও দেখি ওই একই ভাষায় কথা বলে। বকাবকি করে। অর্থাৎ এরা সবাই আমাদেরই মতো। তাই অবাধ্য পিটার গুচ্ছের লেটুস খেয়ে পেটের ব্যথায় কাতরায়। তার মা তাকে পাঁচন গেলায়। বিয়াট্রিক্স খুব সচেতন ছিলেন ..বইয়ের দাম যেন কম রাখা হয়। যাতে বাচ্চারা তাদের হাতখরচের টাকা দিয়ে স্বচ্ছন্দে কিনতে পারে। আর বই যেন মাপে ছোট হয়...নইলে খুদে খুদে হাতে তারা ধরে পড়বে কেমন করে?
১৯০৩ ফুরোবার আগেই ফুরিয়ে গেল পিটারের গল্পকথার ৫০,০০০ কপি। ১৯০৫ -এ পিটারের এই সাফল্য নিয়ে বিয়াট্রিক্স লিখেছিলেন, " সরাসরি সত্যিকারের শিশুদের গল্প বলা সহজ কাজ। এই গল্প সটান পৌঁছে দিয়েছি শিশুদের কাছে। নিজের তাগিদে। কথায় , চিঠিতে। এ তো ফরমায়েশী লেখা নয়। আসলে গল্পের শুরুটুকু লেখা খুব রোমাঞ্চকর। কারণ জানাই থাকে না..কোথায় গিয়ে পৌঁছব !"
এরপর এল পিটার ...পুতুল হয়ে। খরগোশ পুতুল। তুলির আঁশ ছিঁড়ে পিটারের গোঁফ তৈরী হল। ২৮ শে ডিসেম্বর ১৯০৩ লন্ডনে পিটারের পুতুল পেটেন্ট নেওয়া হয়। এরপর একে একে আসে ওয়ালপেপার , বোর্ড গেম ইত্যাদি। আর অবিশ্বাস্য সব মিনিয়েচার পোর্সেলীন ক্রকারি। তাদের গায়ে নিখুঁত ছবি আঁকা। আর ধার ঘেঁষে ২২ ক্যারেট সোনার জলরেখা।
এল বেঞ্জামিন বানি। তাকে আঁকা হয় লেখিকার পোষা খরগোশ বেঞ্জামিন বাউন্সারের আদলে...যার ঝোঁক খালি গরম গরম মাখন মাখানো টোস্ট আর মিষ্টি। সে আবার পিটারের সম্পর্কে ভাই।
ফ্লপসি বানিদের গল্প। ১৯১২ তে এল দ্য টেল অফ মিস্টার টড। সে এক রোমহর্ষক ছেলে থুড়ি খরগোশছানা ধরার গল্প। দুষ্টু টমি ব্রক খুদে খরগোশছানাদের ধরে আনে ভুঁড়ো শেয়াল মিস্টার টডের আস্তানায়। তাদের বাঁচাবে কে? বেঞ্জামিন আর পিটার ছাড়া? শুধু মজা নয় , বিয়াট্রিক্স লেখায় আনেন বাস্তবের খুঁটিনাটি সমস্যাও। প্রতীকী সূক্ষ্মতায়। আর ছবিতে..যা প্রথমে ছিল সাদা কালো..পরে রঙিন ...উঠে এসেছিল তখনকার লেক ডিস্ট্রিক্ট -এর নিখুঁত ছবি। ১৯০৫ -এ বিয়াট্রিক্স কেনেন হিল টপ ফার্ম ..ওই লেক ডিস্ট্রিক্ট -এই। কারণ এখানেই তাঁর প্রাণভোমরা। ১৯০৭ সালে শুরু হল দ্য টেল অফ টম কিটন। তিনটে বেয়াদব বেয়াড়া বেড়াল বাচ্চার গল্প। এল জেমাইমা পাডল ডাক .. জেমাইমা ওই খামার বাড়িরই হাঁস ..সত্যিকারের ..যে এদিক ওদিক গিয়ে ডিম পেড়ে আসত। এরা সবাই ছোট্ট ছোট্ট পেনিফ্রক , টাকার্স ..এসব পরে ফিটফাট থাকে সর্বদা।
খামারবাড়ির পশু পাখিরা বাস্তবের কাঠামোয় কল্পনার রং মেখে গয়নাগাঁটি পরে আমাদের কাছে আসে... এবং আমাদের জয় করে নেয় অনায়াসেই। এরপর একে একে আরও অনেকে। স্যামুয়েল হুইস্কার্স , পাই আর প্যাটি প্যান , জিনজার আর পিকলস , দুষ্টু ইঁদুর হুঙ্কা আর মুঙ্কা ..যারা পুতুলের বাড়িতে ঢুকে কুরুক্ষেত্র কাণ্ড করে ছেড়েছিল।
বিয়াট্রিক্স মারা যান ১৯৪৩ -এ। ততদিনে তিনি দেশকে দান করেছেন ৪০০০ একর জমি...ফল ফুল পশু পাখিদের অবাধ চারণক্ষেত্র। সত্তর বছর বয়সে তিনি লিখেছিলেন, " এই যে আমি শুয়ে আছি বিছানায় ...আমি মনে মনে হেঁটে যাই পায়ে পায়ে পাহাড়ী পথে..বনের শুঁড়িপথ ধরে...ঝর্ণার পাশে পাশে..নদীর পাশে। অমসৃণ বা মসৃণ জমিতে ..প্রতিটি নুড়ি , ফুল পাতা ..আমার আজন্মের চেনা ...| আর হয়ত আমার স্থবির জীর্ণ শরীর বাস্তবে আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে না কখনও।"
এবার তাই লেক ডিস্ট্রিক্ট যাব শুনেই আমি আহ্লাদে নেচে উঠেছিলাম। বোনেস অন উইন্ডারমেয়ার। দ্য ওয়ার্ল্ড অফ বিয়াট্রিক্স পটার। অবিকল সেভাবে সাজিয়ে রাখা। নিখুঁত, নিপাট। আর কী ভালো..ভেতরে ছবি তুলতে দেয় ! কে নেই সেখানে...পিটার, পিটারের পুরো পরিবার, কাঠবিড়ালি নাটকিন, জেমাইমা, মিস্টার টড, টম কিটন ...মোটমাট পুরো গুষ্টি ! আমি তো ..ওরে বাবা ..কী খুদে খুদে জামাকাপড় মেলে দিয়েছে দড়িতে মিসেস টিগী উইংকল , পিগলিং ব্ল্য্যান্ড গম্ভীর আলোচনা করে স্যার আইজ্যাকের সঙ্গে , ফ্লপসি বানিরা উঁকি মারে জানলা দিয়ে।মিস্টার টড আবার নাকে চশমা এঁটে খবরের কাগজ পড়ে ! মিস্টার জেরেমি ফিশার উড়ে যায় মেঘ পেরিয়ে। গম্ভীরভাবে তাকিয়ে থাকে ওল্ড ব্রাউন নামের প্যাঁচাটা।
এ এক অন্য জগৎ ! একে ঠিক পুতুলের জাদুঘর বলা চলে না .. যেমন আছে দিল্লিতে। তাতে পুতুল আছে , কিন্তু প্রাণ নেই। সাজানো গোছানো কিছু কাচের বাক্স বা আলমারি। দেশ বিদেশের পুতুল। বড়জোর রামায়ণ মহাভারতের কিছু কুশীলব। সে তো কিনে গুছিয়ে আলমারি ভর্তি করে বাড়িতেও রাখা যায়। এখানে আঁকাবাঁকা করিডোর ধরে এগোনো , অল্প আলো। একটু মোড় ঘুরতেই দেখি আমার দিকে গরাদের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে তিনটে দুষ্টু মিষ্টি কাঠবিড়ালি। লাল টুকটুকে ভেলভেটের জামা পরে। আমাকে ডেকে বলেছে , "এই যে , আমাদের না দেখেই চলে যাচ্ছিস যে বড় !" কিংবা ওই যে...খুদে খুদে জামা শুকোচ্ছে আর টিগী উইংকল … মুখটা দেখো.." বাবা গো , আর পারি না..সংসারের কাজ করতে করতে হাড় কালি !"
আমার এত আহ্লাদে আদেখলেপনা কেন? চোখের সামনে এত নিখুঁত গল্পের চরিত্ররা উঠে এসেছে, তাই? গল্পগুলো আমার খুব চেনা তাই? না। আমি দেখছিলাম আর মনে পড়ছিল গল্পগুলো..সত্যি..কিন্তু মনে মনে আরও হাজার গল্প তৈরী হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল...আরও অনেক গল্পকথা আছে ..এরা বলছে আমাকে ডেকে..যা বইতে লেখা নেই..যা আমি জানি শুধু। দর্শক ছিল আরও অনেকে। নানা বয়সের। বাচ্চারা উচ্ছ্বসিত ; কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা মোহিত। কারণ শিশুরা শুধু গল্পের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েই খুশি। বড়রা কুর্নিশ করছেন স্রষ্টাকে। সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে স্রষ্টার প্রতিভার এত মনোগ্রাহী দৃষ্টিনন্দন বহি:প্রকাশ সত্যিই দুর্লভ। কেউ যখন গল্প লেখেন , গল্পের গতিতে গল্প বয়ে যায় আপন খেয়ালে..কিছু বর্ণনা থাকে কুশীলবদের ...ওই পর্যন্তই। কিন্তু বিয়াট্রিক্স শুধু কলমে অক্ষর আঁকেননি , চরিত্রদের সাজিয়ে গুছিয়ে ঠিক কেমন দেখতে হবে..আমাদের সামনে এনে হাজির করেছেন। এরা সকলেই না-মানুষ..অথচ মানুষ। আমরা তাই শুধু পড়ার ঝোঁকে গল্প পড়েই থেমে থাকি না, এদের সঙ্গে কথা বলি, গল্প করি। চোখ বুজলে দেখি পিটার আসমানী রঙের জামা পরে স্লেজ গাড়ি টেনে নিয়ে যায় বা ভাবি , ইস , পিটার আবার জ্বর গায়ে শুয়ে আছে।
বিয়াট্রিক্স গল্পে , স্কেচে, রঙিন ছবিতে , মডেলে ...এক কমপ্লিট প্যাকেজ। ছোটদের কাছে তো বটেই , আমার মতো কিছু ছোটবেলার ক্যালাইডোস্কোপে সুযোগ পেলেই চোখ রেখে রঙের অজস্র কারিকুরি দেখতে চাওয়া আধ বা পুরো পাগল প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেও। তাই আমি ফিরে এসে বড়দের বই শিকেয় তুলে রেখে আপাতত বুঁদ হয়ে আছি বিয়াট্রিক্স -এর গল্পে আর ছবিতে। আবারও এবং এই বয়সেও !
বিয়াট্রিক্স পটারের কথা দিয়েই শেষ করি :
" এখন সব কিছু বদলে গেছে। অন্যরকম। চেনা মুখগুলো গেছে হারিয়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বদলে গেছি আমি। তখন ছিলাম নিতান্ত শিশু। জানতামই না , জগৎটা কেমনধারা। স্থলেই থাকি বা জলে যখন বা সমুদ্রে , নিজের ওপর আস্থা রাখতাম খুব। আমার চোখে সব কিছুই ছিল রোম্যান্টিকতার তুলিতে আঁকা। কল্পনা করতাম বনে জঙ্গলে থাকে রহস্যময় অগুণতি ভালো লোক। পুরাকালের রাজা রাণীরা ফুলে ঢাকা বনের পথে আমার পাশাপাশি হেঁটে যেত। আমার সাথে ফুল কুড়াত , ভরিয়ে নিত হাতের সাজি।
ছোট ছিলাম। বিশ্বাস করতাম , পরীরা আছে। মনে মনে খেলাও তো কত তাদের সাথে। আর কোন আশ্রয় আছে কি এমন, যা সারাটি জীবন আঁকড়ে থেকে বাঁচতে পারি ...ছোটবেলার সেই কল্পনার স্বর্গভূমি ছাড়া ? শুধু তাকে নতুন করে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে মানানসই করে নিতে হবে ... আমাদের ব্যবহারিক নিত্য নৈমিত্তিক দিনযাপনের সলমা চুমকি রাংতার টুকরোটাকরা দিয়ে ... তা যতই ছেঁড়াখোঁড়া বাতিল জঞ্জাল হোক ! এমনভাবে সাজিয়ে নেওয়া , এমনভাবে ... যে ফুটিফাটা বিবর্ণ বাস্তব কিছুক্ষণের জন্য হলেও যবনিকার অন্তরালে চলে যায়।"
লেখক পরিচিত - বিজ্ঞানের ছাত্রী । কিন্তু প্রথম ভালোবাসা সাহিত্য । তিন দশক ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত । বেশ কিছু অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য আকাদেমি, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইত্যাদি বিখ্যাত সংস্থা থেকে । ভাষান্তরের পাশাপাশি নিজস্ব লেখালেখির ঝোঁক । তবে খুব নিয়মিত নয় । ভালোবাসেন টুকরো গদ্য, পদ্য লিখতে । নানা স্বাদের লেখা নিয়ে এবছর প্রকাশিত হয়েছে ওঁর আরেকটি বই 'ম্যাজিক লণ্ঠন'।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।