ছবিতে ভ্রমণ
অক্টোবর ৩০ , ২০১৫
ভুবনজোড়া আসনখানি
ঈশানী রায়চৌধুরী
কোনো রক্তমাংসের মানুষ যখন কারো শিরা আর ধমনীর রক্তে নেশার ঝিলিক আনে, সে বড় সর্বনেশে অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ ঠিক তেমন এক নেশা। আমার কাছে। দুর্দমনীয়। যাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা। সকাল হলেই একটা না একটা গানের কলি অবিরাম বেজে যায় মাথার ভেতরে। তারপর সারাদিনে যা ভাবি, বলি, লিখি, গুনগুন করি ..তাতে নিজস্বতা বলতে কিচ্ছু দেখি না। এই অধমর্ণ -জীবন, বেশ আছি। ঋণ বেড়ে চলে চক্রবৃদ্ধি নিয়মে, শোধ দেবার প্রশ্নই নেই।
এবার বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি, বর্ষায় যাব শান্তিনিকেতন। আরও একবার দেখে আসি। লোকে যেমন তীর্থ করতে যায়। তবে এবার শুধু পথেঘাটে ঘুরব। এবার শুধু লাল ধুলোমাটি ছুঁয়ে থাকা। ওই যে গেলেই দেখতে হবে ..রবি ঠাকুর কোথায় থাকতেন, খেতেন, ঘুমোতেন, লিখতেন ...তেমনটা এবার আর নয়। কারণ তিনি এই শান্তিনিকেতনের সর্বত্রই আছেন।
কিন্তু বর্ষাতেই কেন?
কারণ ...
এই সব বৃষ্টিদিনেই শান্তিনিকেতন যেতে হয়। এবং নিজস্ব কম্পাঙ্কের এক আধজন মানুষের সঙ্গে। না জুটলে স্রেফ একা। শ্রাবণ মাসটা এমন সর্বনেশে! যখন মাথার ওপরের নীল চিনেমাটির মস্ত বড় উল্টোনো বাটিটা কোনো রকম আগাম জানান না দিয়েই নিজের খামখেয়ালে রং বদলে ঘোলাটে বা আগুনের আভার মতো হালকা লালচে রঙের হয়ে যায়, তখনই জেনেশুনে বিষপানের সময়! পালাও। সুযোগ পেলে ভালো, না পেলে সুযোগ করে নিয়ে পালাও। ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, ঝিরঝির বৃষ্টি বুকে আগলে উঠে পড় ট্রেনে। একদম সকালবেলার ট্রেনে। জানলার ধারের সীটে। যেদিকে ট্রেন যাচ্ছে, তার উল্টোমুখের জানলায়। বৃষ্টির ছাঁট এলেও খবরদার সরে বসো না, জানলা বন্ধও করো না। দেখবে একটু পরে আকাশের রং রাগ পড়ে যাওয়া মেয়েদের মনের মতো খানিক স্বচ্ছ হয়ে আসবে। বৃষ্টি থাকবে, তবে খুব হালকা জলের চাদর হয়ে। মসলিন। দু -পাশে তোমার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাবে অনেক গাছ। তাদের অজস্র সবুজ চোখ জলে ভরা। ভিজে মাঠ, ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠা ঘাস, বৃষ্টিমাখা বাতাসে খুব সামান্য হেলে রয়েছে। আর জল।
অনেক জল। সে জল কোথাও পায়ের পাতা ভেজানো, কোথাও ঘাসের বা ধানক্ষেতের বুকভাসানো। এমন সঙ্গী বেছে নিতে হবে, যে ঠিক তোমার মতোই নীল সবুজের হুটোপাটি, জলের আলপনা, মেঘের ছায়াতে জেগে থাকা মুখের আদল ভালোবাসে বা খুঁজে পায়।
শান্তিনিকেতনে গিয়ে কী করার আছে? কিচ্ছুই করার নেই তো! সেই জন্যেই তো যাওয়া। চুপটি করে বৃষ্টি দেখার জন্যে। বারান্দায় বসে, জানলা দিয়ে, মস্ত বড় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে। এবার কোথাও যাওয়া নেই। একটা দুটো চেনা মুখের অচেনা বারান্দা আর বাগান ছাড়া। কালোর চায়ের দোকান, শ্যামলী, পাঠভবন, সঙ্গীতভবন, কলাভবন , সুবর্ণরেখা, রবি ঠাকুরের হাজার স্মৃতি ...কিচ্ছু না। এবারের শান্তিনিকেতন থাকুক শুধু শ্রাবণ মাস আর ভরা বাদলের জন্য। বৃষ্টির গন্ধ মাখা বাউল বাতাসের জন্য।
একটা কি বড়জোর দুটো রাত। তা তাই বা আমাকে দেয় কে? যে সব রাতে ভিজে মাঠে খুব নীচু দিয়ে উড়ে যায় অগুন্তি জোনাকি। চাঁদ থাকে পর্দানসীন। চোখের জলে জোয়ার তুলে খুব নীচু পর্দায় বেজে যায় বিক্রমের গান। একতলার বারান্দার একটা দুটো সিঁড়ি ভিজিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখে এগিয়ে আসে বৃষ্টির পায়ের জলছাপ।
যখন তখন বৃষ্টি হোক। ইচ্ছেমতো কান্না ঝরুক আকাশ জুড়ে। বড় বড় গাছ নিজেরাই হয়ে উঠুক কালচে সবুজ ঝড়। দুরন্ত দামাল বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাক পায়ের নীচের লালচে ধুলোর গালচেখানা। মাটি ভ'রে গন্ধ উঠুক। ভিজে ভিজে মাটির কী সুবাস! যদি বাগানে থাকি বা রাস্তায়, ফেরার পথে চুলে লেগে থাকুক জলের কুচি। হাওয়াই চটিতে নরম কাদা ...ক্ষতি কী!
বর্ষার ফুল সবই প্রায় সাদা হয় কেন? নিঝুম মেঘলা রাতের প্রেক্ষাপটে সাদা তারার মতো জমিতে আলো ছড়াবে বলে। আকাশের তারাদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে। হেরে গিয়ে তাই আকাশের তারারা ছুট লাগায় মেঘের ভুলভুলাইয়ার নিরাপদ ঘুপচি ঘরে। সেই সব ফুলের গন্ধে বিধুর হয়ে ওঠা এই একটা দুটোই তো পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা রাত আমার!
শুধু ...একজোড়া দুল কেনার আছে। হাট থেকে। ফুলঝুমকো। যে ঝুমকোজোড়ায় ....বৃষ্টির ঠিক পরে পরে যে আলো ফোটে আকাশে, নরম, মায়াবী চিকচিকে .... সেই আলো পড়ে রামধনু হয়ে যায়।
শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস। বড্ড আশা করেছিলাম, পথে ঝুমঝুমাঝুম বৃষ্টি পাব। হল না। তবে আদিগন্ত সবুজ ধানজমি ছিল, জায়গায় জায়গায় বৃষ্টির জল জমে কাকচোখ খুদে খুদে ঝিল। সেই জলে রোদ্দুর বিছিয়ে থাকে রুপোলি সরের মতো। মাঝে মাঝেই ত্রিভুজ নকশা এঁকে উড়ে যাচ্ছিল বক। দূরে ছবি হয়ে ছিল অচেনা বসতি। শুধু স্বপ্নের মাঝে তালভঙ্গ করছিল গ্রামের মানুষগুলোর পরনের নকল ছাপমারা নাইকে, রীবকের জামা। কী ভীষণ বেমানান! ভাগ্যিস মা বোনেরা শাড়িতে! ওতে বিশ্বায়ন উঁকিঝুঁকি মারেনি এখনও।
ঝালমুড়ি, লেবু চা ( মাটির ভাঁড় নেই, প্লাস্টিক চাপা পড়েই মরব আমরা ), জেলি ভরা রংবেরঙের লজেন্স। আমাদের লিস্টে চিটচিটে শোনপাপড়িও ছিল ( কপাল মন্দ! ওঠেনি।)। আমাদের মানে আমি আর ইন্দ্রাণীদি। সেই ইস্কুলের দিনে একবাসে বাড়ি ফিরতাম। এই এতদিন বাদে আবার! আমাদের উল্টোদিকে একটা বড় দল বসেছে। একজনের স্ত্রী তার স্বামীকে বলছেন, " ওগো শুনছ, এরা জিজ্ঞেস করছে আমাদের ঝগড়া হয় কিনা।'' ভদ্রলোক বললেন, " বলে দাও, হয় না।"
বোলপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিল অদিতিদি। গত তিন দশক এখানে শিক্ষকতা করছে। তাকেও চিনি সেই ইস্কুল থেকে। মাঝে যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু ওই যে! বেঁচে থাক মূখবই।
এত গরম, কিন্তু প্রাণের আরাম যেখানে, সেখানে সবসময়েই সুবাতাস। আমরা থাকব রতনকুঠিতে। সবে বর্ষামঙ্গল শেষ হয়েছে, তাই জায়গা পেতে অসুবিধা হয়নি। আমাদের নামিয়ে দিয়ে অদিতিদি ইস্কুলে যাবে। মিটিং একটা আছে বটে, কিন্তু আমরাও যে আছি! তাই ছুটি মিলেছে একটু আগেভাগে। আমরা খেয়েদেয়ে তৈরী থাকব। অদিতিদি নিয়ে যাবে। বিকেলে। সোনাঝুরির হাটে।
সোনাঝুরি পৌঁছলাম বিকেল বিকেল। খানিক গরম, খানিক পড়ন্ত রোদ, খানিক ঝলক দেয় বাতাস। ডোকরা আছে, আছে কাঁথা কাজ ( সিল্ক, সুতি আর খেসে ), পট, কাঠের চেয়ার, নীচু টেবিল, ছবি আঁকা লন্ঠন। পোড়ামাটির কাজ। আর দেখলাম ঘাসের গয়না। বুনে বুনে তৈরী। আমার সে দিন ভেসে গেছে ... দীর্ঘশ্বাস উড়ে যায় পথচলতি হাওয়ায়। হাতে নিয়েও তাই রেখে দিই। একজন ডোকরা শিল্পীর সঙ্গে গল্প জুড়েছিলাম। তিনি বললেন, " আমি নব্বই সালের কলাভবনের ছাত্রী। আমার স্বামী ব্যাঙ্কে চাকরি করত। কী যে ভূত চাপল মাথায় এই বাউল গানের, সব ছেড়েছুড়ে গান সম্বল করেছে। এখন আমি ডোকরার কাজ করি। সংসার চালাতে হবে তো!" কিনলাম। একজোড়া লক্ষ্মী -সরস্বতী। আসনপিঁড়ি হয়ে বসা। নিখুঁত ডাগর চোখে আমায় হাতছানি দিল যে তারা!
ফুচকা খেলাম আর কমলা জল আইসক্রীম এবং যথারীতি জামায় ফেলে। এইসব ...সত্যি, কেন যেন আজও ভদ্রলোকের মতো খেতে শিখলাম না!
গাড়ি অপেক্ষা করছিল একটু দূরে। ভাগ্যিস একটু দূরে! তাই হাঁ করে ক্যানালে জল ছাড়া দেখতে পেলাম। মনে মনে আমি ওকে ঝর্ণা বলে ধরে নিলাম।
" তোমায় একটা নাম দিই ঝর্ণা? না হলে ডাকব কী করে? "
"দাও।"
" আজ এক্ষুনি থেকে তোমার নাম ভালোবাসা।"
ঝর্ণায় ঘোলা গঙ্গাজল রঙা বিকেল ঘনিয়ে আসে। আমরা তিনজন কিছুটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এই সব আলো আঁধারির সন্ধিক্ষণে একা থাকতে জানতে হয়।
একদম নিশুতি রাত্রির মতো রেশমি শাড়ির খুব শখ ছিল আমার। ঘন নিকষ কালো অন্ধকার তার রং। পরলে মনে হবে রাত্রি জড়িয়ে আছে গায়ে। আর তাতে ফুটে থাকবে ফুল। অনেক ফুল।
ইচ্ছেঠাকরুন বললেন, " তাই হোক!"
রাত আটটার সময়ে মোহনদার সঙ্গে দেখা করার কথা। সময় আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। গেট খুলে ঢুকছি ... কানে ভেসে এল বন্দিশ। ভাবছি, ডাকঘন্টি বাজাব কিনা। দরজা খুলে গেল। ভেতরে গিয়ে প্রণাম করে বসলাম। কিছু টুকরো কথা, গল্প চলছে। মোহনদার গুনগুনানিও চলছে। রবিগানের আবহ ছিল না সেদিন। আমাদের জন্য ছিল বন্দিশ। আমার মুঠোফোনে উঠে যাচ্ছিল সেই লহরী। রবিগান নিয়ে কথা হচ্ছিল অনেক। আমি নিজে পরীক্ষা নিরীক্ষার পক্ষপাতী নই আদৌ। আমার ওই সাবেকী স্বরলিপিই ভালো। মোহনদাও একই কথা বললেন। অনেক প্রয়াত শিল্পীদের কথা উঠে আসছিল একে একে। যে সব কন্ঠের গান শুনে আমাদের রবিগানের বোধ তৈরী হয়েছে। মোহনদা বললেন, " গানের কথা ঠিক প্রতিমার কাঠামোর মতো। সুর হল মাটির প্রলেপ। আর তাতে রং মিশিয়ে প্রাণ দেবার দায়িত্ব শিল্পীর। যে গান এই সম্পূর্ণতা নিয়ে আমাদের সামনে আসে, তাই কিন্তু সত্যিকারের গান। ক'জনই বা পারে প্রতিমায় প্রাণসঞ্চার করতে?"
আরও কত কথা! গল্পে গল্পে ফুরিয়ে যায় অনেক সময়। রাত ঘন হয়।
পরের দিন সকালে আমরা শুধুই উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াব। চেনা অচেনা শান্তিনিকেতন। প্রথমে গেলাম একটি বিশেষ কেন্দ্রে। যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সেখানে নতুন করে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে মূল সুর ও লয়ের নৃত্যনাট্য আর তার আলোকচিত্র। যাতে কবি নিজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কবির কিছু পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপির অ্যালবাম, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আঁকা লালন ফকির, অবনীন্দ্রনাথের আঁকা রবীন্দ্রনাথ খঞ্জনী বাজাচ্ছেন ...এমন অনেক অমূল্য ছবির প্রিন্ট। আমার ঝুলি ভ'রে ওঠে।
এবার বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ। দুটি দুর্লভ সংযোজন আমার বইয়ের সংগ্রহে। একটি রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির অ্যালবাম --সাথে প্রতিটি ছবির পাশে পাশে কবির লেখা কয়েক ছত্র। সেই ছবিটিকে নিয়ে। আর ...শেষের কবিতার সম্পূর্ণ পান্ডুলিপি। বিশেষ সংস্করণ। আমার আজীবনের সম্পদ হয়ে রইল।
ছাতিমতলা। ব্রহ্মমন্দির। উপাসনা তো হয় শুধুই প্রতি বুধবার। আমরা বঞ্চিত হলাম। পাঠভবনে ক্লাস চলছে। হলুদ -সাদা পোশাকে। গাছের নীচে। বাঁধানো জায়গায় বসে। দমবন্ধ চার দেওয়াল নেই, জানলা দিয়ে আকাশ দেখতে হয় না লুকিয়ে। আকাশ আর মাটি ছুঁয়ে, প্রকৃতি ছুঁয়ে থাকা।
বিকেলে ছিল নীলাঞ্জনের বাগান দেখার নেমন্তন্ন। সে এক আশ্চর্য সবুজ নির্জনতা। চেনা গাছ কিছু, অচেনাই বেশি। ম্যাগ্নোলিয়া আর বুদ্ধ জুঁই-এর মাতাল করা সুবাস, চেরিগাছে সবুজ মিষ্টি মিষ্টি ফল ধরেছে, মালয়েশিয়ান আপেল গাছ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, একটা অন্য গাছ বেয়ে নেমে এসেছে ঘন সবুজ বিনুনি গাছ। তার পাতা যেন একেবারে মেয়েদের চুলের তিনগুছি বিনুনি। কত গাছ যে চিনিই না! শ্রীলঙ্কার দারুচিনি, থাইল্যান্ডের লেবুপাতা ..এমন আরও কত কী! আর এই সব কিছুর মাঝে একটি বাঁধানো পাথরের নীচে নীলাঞ্জনের প্রয়াত মাস্টারমশাইয়ের চিতাভস্মের পাত্রটি। যে পাত্রটি সুদূর জাপান থেকে নীলাঞ্জনের জন্য নিয়ে এসেছেন সেই অধ্যাপকের স্ত্রী। সেই পাথরের ওপর কিছু সাদা ঝুরো ফুলের আল্পনা।
বাগান দেখে নীলাঞ্জনের বাড়ি। জমাটি আড্ডা। আর নীলাঞ্জনের দুই পোষ্য কুরো আর শিরো। মুখবইতে শিরো -কুরোর অনুরাগী অসংখ্য।
রতনকুঠিতে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত। খেয়েদেয়ে ঘরে বসে আমরা আড্ডা দিচ্ছি, অদিতিদির ফোন।
" ঈশানী, তুই যে বৃষ্টি চেয়েছিলি! বাইরে যা।"
দরজা খুলে বারান্দায় এসে দেখি, বৃষ্টি এসেছে নূপুর পরে। গাছের সবুজ পাতার ঝালর ভিজিয়ে অন্ধকারের শরীর বেয়ে জলের ধারা। একপাশে তির্যকভাবে। অন্যপাশে যেন সোজা টানটান জলের চাদর। লাল ধুলো ভিজে যাচ্ছে। কালো সরু সাপের মতো পীচরাস্তা চিকমিক করছে, ছোট ছোট নুড়িপাথরে ছিটকে যাচ্ছে জলের মিশ্রিদানা। এতক্ষণ কিন্তু আকাশে কেমন আধখানা সোনালি পিরিচের মতো চাঁদ উঁকি দিচ্ছিল ওই উঁচু গাছের পাতার ভুলভুলাইয়া দিয়ে। কোথায় হারিয়ে গেল? এখন আকাশ আর বৃষ্টির একান্ত কথোপকথন। চাঁদ তারা সব বাইরের লোক!
চুপিচুপি আড়ি পেতেছি বারান্দায়। লাল সিমেন্টের ধাপিতে বসে। সেই না-বলা বাণী শোনার আশায়। আচমকা পেয়ে যাওয়া এই নিঝুম ঘন যামিনীর মাঝে। যে কথা শুধু রবীন্দ্রনাথ নামের আশ্চর্য মানুষটি চিরকাল শুনে এসেছেন .....
এবং একা একাই!
লেখক পরিচিত - বিজ্ঞানের ছাত্রী । কিন্তু প্রথম ভালোবাসা সাহিত্য । তিন দশক ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত । বেশ কিছু অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য আকাদেমি, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইত্যাদি বিখ্যাত সংস্থা থেকে । ভাষান্তরের পাশাপাশি নিজস্ব লেখালেখির ঝোঁক । তবে খুব নিয়মিত নয় । ভালোবাসেন টুকরো গদ্য, পদ্য লিখতে । নানা স্বাদের লেখা নিয়ে এবছর প্রকাশিত হয়েছে ওঁর আরেকটি বই 'ম্যাজিক লণ্ঠন'।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।