প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে ভ্রমণ

নভেম্বর ১৫, ২০১৪

 

নৈনীতাল (প্রথমাংশ)

শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

(এই রচনাটি ২০০৯ সালের। স্কুল-কলেজের ম্যগাজিনে স্থান পাবার যোগ্য বলেই আমার মনে হয়। তবে অবসরে ভাসাবার দুঃসাহস করলাম এর তথ্যসমৃদ্ধতার কারণে। পাঠককুলই বলবেন ঠিক করেছি কি না।)

বেশ কিছু বছর আগে থেকে আমি হিমালয়ের তুলনামুলকভাবে দুর্গম স্থানগুলিতে ভ্রমণ করছি, তার মানে এই নয় যে সেই সমস্ত স্থান কেবল মাত্র ট্রেকাররাই গিয়ে থাকেন। ইদানীং অবশ্য এই স্থানগুলোয় ভ্রমণার্থী সমাগম বেশ বৃদ্ধি পেলেও চিরাচরিত শৈলাবাসগুলির তুলনায় তা এখনও কম আছে। বহু বছর আগে আমিও খুবই উৎসাহ সহকারে কুমাঁয়ুর কয়েকটি শহরে ঘুরে খুবই আনন্দ পেয়েছিলাম, তাই যখন প্রস্তাব এলো নৈনীতাল, আলমোড়া, রাণীক্ষেত, কৌশানি ইত্যাদি জায়গায় ভ্রমণের, ভাবলাম দেখাই যাক না প্রায় ২০ বছর আগের স্থান গুলোর অবস্থা এখন কেমন হয়েছে। তা ছাড়া যাঁদের কাছ থেকে ভ্রমণের এই প্রস্তাব, তাঁরা এ সমস্ত জায়গায় যাননি, কাজেই তাঁদের উৎসাহ আমার সেই পুরানো দিনের উৎসাহকে মনে করিয়ে দিলো। তবে একটা ব্যাপারে আমাকে কিছুটা মনঃকষ্ট ভোগ করতে হলো, আমার স্ত্রী যেতে রাজি হলেন না। কারণ, তাঁর বক্তব্য যে সমস্ত জায়গায় আমরা ইদানীং যাচ্ছি, সেগুলোর তুলনায় এগুলো কিছুই নয়।

আমার ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত হলো আমাদের এই ভ্রমণের সমস্ত কিছুরই ব্যবস্থা করা, অর্থাৎ এক কথায় ‘ট্যুর ম্যানেজার’। এইবার অবশ্য আমি বেশ মুস্কিলে পড়লাম। আমাকে বলা হলো যে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে আমরা যেন বাড়ি ফিরে আসতে পারি, অথচ যে জায়গাগুলো যাবার ব্যবস্থা করার জন্যে ঠিক করা হলো সেগুলো ঠিক মতো ঘুরতে গেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে অন্তত ১৩ বা ১৪ দিন লাগে। শেষ পর্যন্ত আমার কথাই মানতে বাধ্য হলো সকলে এবং ঠিক হল ২৭শে মার্চ বেরিয়ে ৯ই এপ্রিল, ২০০৯ আমরা বাড়ি ফিরবো। আমরা নৈনীতাল থেকে আরম্ভ করে পরপর রাণীক্ষেত, কৌশানি, বৈজনাথ, বাগেশ্বর, আলমোড়া, বিনসর, মুক্তেশ্বর হোয়ে ফেরার পথে লক্ষ্ণৌ থেকে বাড়ি আসবো। আমরা ফেরার পথে ট্রেন পছন্দ করলাম এমন ভাবে যে সকালে লক্ষ্ণৌ পৌঁছে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় সেখানে থেকে শহর দেখে সন্ধ্যায় ট্রেন চাপবো, তাতে একটা দিন বাঁচানো যাবে। সবাকটা জায়গাতে আমরা রাত কাটাবো না, কয়েকটা জায়গা আমরা পথে যেতে যেতেই দেখবো। যথাসময়ে সে বিষয়ে বলবো।

কুমাযুঁর এই সব অঞ্চলে মার্চের শেষের দিকে ভ্রমণার্থীদের ভীড় আরম্ভ তেমন ভাবে না হবার কারণে ট্রেনের শায়িকায় সংরক্ষণ পাওযা গেল এবং নৈনীতালে থাকবার হলিডে-হোম, কৌশানির ‘অনাশক্তি আশ্রম’, যেটাকে ভুল করে লোকে ‘গান্ধী আশ্রম’ বোলে থাকেন, সেখানে, আলমোড়ায ‘রামকৃষ্ণ কুটীর’ এবং আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের সৌজন্যে শতাব্দী প্রাচীন ‘ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রিসার্চ ইন্সটিটিউট, মুক্তেশ্বর’-এ থাকার বন্দোবস্ত করা গেল। এছাড়া, লালকুঁয়া থেকে লালকুঁয়া পর্যন্ত মোট দশ দিনের জন্যে একটা ১৪ সিটের ফোর্স কোম্পানির ট্র্যাভলার গাড়িও বেশ কম ভাড়ায় ব্যবস্থা হয়ে গেল। আর কী চিন্তা, জোর কদমে আমরা মোট ১৫ জন মহিলা-পুরুষ ভ্রমণের তোড়জোড় করতে লেগে গেলাম।

২৭শে মার্চ সন্ধ্যা বেলায় হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলাম অমৃতসর মেল ধরবার জন্যে। নির্বিঘ্নেই পরদিন সন্ধ্যায় খুবই অল্প সময় লেট করে ট্রেন লখনঊ পৌঁছল। ঘণ্টা কয়েক ওয়েটিং হলে বিশ্রাম করে, রাতের খাবার যে যার ইচ্ছে মতো খেয়ে নিয়ে উত্তর রেলের চবর্গ স্থিত স্টেশন ছেড়ে উত্তর-পূর্ব রেলের আয়েশবাগ স্থিত আয়েশবাগ স্টেশনে রিক্সা করে পৌঁছলাম। এখানে আমরা নৈনীতাল এক্সপ্রেস ট্রেন চাপবো। রাত ০৮:৪৫ মিনিটে ছেড়ে পর দিন ভোর ০৬:৩০ নাগাদ লালকুঁয়া পৌঁছাবে। লালকুঁয়া মিটার গেজ রেল লাইনের শেষ স্টেশন। পাশাপাশি ব্রড গেজ রেল লাইনও আছে। এই লাইনের এর পর ১৫ কিমি উত্তরে হলদ্বোয়ানি এবং আরও মাত্র ৫ কিমি উত্তরে কাঠগোদাম শেষ স্টেশন। এই তিনটে স্টেশনই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুমায়ুঁর যোগ সূত্র রক্ষা করে। অবশ্য আরও পূর্বে টনকপুর স্টেশনও ব্যবহার করা যায় এই কাজে। লখনঊ থেকে লালকুঁয়া/হলদ্বোয়ানি/কাঠগোদাম আসতে গেলে আয়েশবাগ থেকে নৈনীতাল এক্সপ্রেস না চেপে ব্রডগেজ লাইনেই হাওড়া থেকে বাগ এক্সপ্রেস কোরেও পৌঁছানো যায়। সে ক্ষেত্রে লখনঊ-এ না নেমেই কাঠগোদাম ইত্যাদি আসা যাবে। অবশ্য বাগ এক্সপ্রেস অনেকটা ঘুর পথে আসে বলে সময় প্রচুর লাগে। বেরিলি থেকেও নৈনীতাল বা কুমায়ুঁর দিকে ট্রেন, বাস বা নিজেদের গাড়ি করে আসতে পারেন। দিল্লি থেকেও সরাসরি ট্রেন বা উত্তরাখণ্ড স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস অথবা নিজস্ব গাড়ি করে জাতীয় সড়ক ২৪ ও ৮৭ হয়ে ৭/৮ ঘণ্টায় নৈনীতাল আসা সম্ভব। দেরাদুন-কাঠগোদাম ট্রেনও আছে।

হাওড়া-অমৃতসর এক্সপ্রেস ঠিক মতো সময়ে লক্ষ্ণৌ পৌঁছালে পাঁচ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পাওয়া যায় লখনঊ (আয়েশবাগ)- লালকুঁয়া নৈনীতাল এক্সপ্রেস ধরার জন্য। সময়টা যথেষ্ট, তবে অবস্থা বিরূপ হলে একই দিনে এই ট্রেন ধরা সম্ভব নাও হতে পারে। অনেক বছর আগে আমার নিজের এই অভিজ্ঞতা হতে পারতো, সৌভাগ্য ক্রমে আগে থেকেই আমি নৈনীতাল এক্সপ্রেসের পরের দিনের টিকিট করেছিলাম বলে সেই অবস্থা থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। এই বছরের প্রথম দিকে আমার এক প্রতিবেশীর এই ট্রেন ধরা সম্ভবই হয়নি অমৃতসর এক্সপ্রেস দেরিতে লখনঊ পৌঁছানোর কারণে।

এবার আমি আমাদের ভ্রমণের কথায় ফিরে আসি। আয়েশবাগ পৌঁছে, স্টেশন চত্বরের করুণ অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগলো। অপরিষ্কার, আলোর বেশ অভাব আর আছে প্রচুর মশা। শুনেছিলাম রেল প্রশাসন নাকি এই মিটার গেজ লাইন বন্ধ করে দেবার কথা ভাবছে, দেখে-শুনে এই খবর সত্য হবার সম্ভাবনার কথাই মনে হলো। নৈনীতাল এক্সপ্রেসের ফাঁকা গাড়ি প্লাটফর্মে দেওয়া রয়েছে, গাড়ি ছাড়ার অনেক দেরী তাই দরজাগুলোয় তালা দেওয়া। অবশ্য সময় মত রিজার্ভেশন চার্ট লাগানো, দরজা খোলা আর গাড়ির ভিতরে আলো জ্বালানো হলো। আমরা যে যার জায়গায় উঠে বসে পড়লাম। সময় মতো ট্রেন ছেড়ে দিল। ট্রেন ছাড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে পড়া হলো। একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করলাম, মশা চলন্ত ট্রেনে কামড়াচ্ছে না, কিন্তু থেমে থাকলেই তাদের স্বাভাবিক কাজ করে যাচ্ছে। আমার ট্রেনে ঘুম খুব একটা খারাপ হয় না। কিন্তু অনেকের বিশেষ করে যাঁদের মিটার গেজ ট্রেনে চাপার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না তাঁদের ঠিক মত ঘুম হলো না।

পরের দিন ঠিক সময়ে লালকুঁয়ায় ট্রেন পৌঁছালো। কথা মতো নৈনীতালের নৈনা ট্র্যাভেল্‌সের (+৯১ ৯৪১২০১৭৩৮৪, +৯১ ৫৯৪২ ২৩১২৩৪, naynatravels@yahoo.co.in) ট্র্যাভলার গাড়ি, ড্রাইভার মোহন সহ স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেই পাওয়া গেল। মোহনকে দেখে আমার বেশ আশঙ্কা হলো যে সে কেমন ড্রাইভ করবে, কেননা তার বয়স মনে হল ২৭ বা ২৮ বছর হবে। ওই যুবক ড্রাইভার কী ভাল হবে? সে কি ড্রাইভিং-এর সমস্ত নিয়ম মেনে চলবে, বিশেষ করে পাহাড়ি পথে? কী আর করা? অগত্যা যা হবার হবে এই ভেবে আমরা গাড়িতে মাল-পত্র, ছাদে, সিটের তলায় আর নিজেদের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন ক্যামেরা, জলের বোতল ইত্যাদি নিয়ে বসে পড়লাম। আমরা ট্রেনের মধ্যেই যথাসম্ভব পরিষ্কার হয়ে নিয়েছিলাম আর সঙ্গে নেওয়া খাবার কিছু খেয়ে নিয়েছিলাম, কেবল মাত্র চা পান করা হয়নি। আমি চা পান করি না, তাই আমার কোন অসুবিধে ছিল না। চা-খোরদের জন্যে মোহন সুরাহা করে দিল, ও বলল যে সময় মতো চা পানের ব্যবস্থা সে রাস্তাতেই করে দেবে। তাই লালকুঁয়াতেই আর অপেক্ষা না করে মোহন গাড়ি স্টার্ট করে দিলো সকাল ৬:৫০ মিনিটে।

গাড়ি ছাড়ার অল্প পরেই বুঝতে পারলাম যে মোহনের সম্পর্কে আমার আশঙ্কা ঠিক হয়নি। সে যথেষ্ট ভাল ও সাবধানী চালক। তবে যখনই সুযোগ পাচ্ছে, ওভারটেক করছে আর রাস্তা ভালো ও ফাঁকা পেলেই গাড়ির গতি বেশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি রাস্তাও সাধারণত বেশ ভালো, এবং ট্র্যাভলার গাড়ির সাসপেন্সন ভাল অবস্থায় রয়েছে, কাজেই গাড়ি বেশ সুন্দর চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই হলদ্বোয়ানি এবং কাঠগোদাম (৫৩৬ মি) পার হয়ে আমরা সমতল ভূমি ছেড়ে ক্রমশ: পাহাড়ি পথে উঠতে লাগলাম। আমাদের সকালে খাওয়া যথেষ্ট না হবার কারণে পাহাড়ি পথে গাড়ি চলার অল্প পর থেকেই অনেকের শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হতে আরম্ভ হলো। সৌভাগ্যক্রমে মোহন কিছুক্ষণের মধ্যেই চা পানের জন্যে গাড়ি থামালো। আশপাশে বেশ কয়েকটা চা ও জলখাবারের দোকান রয়েছে। এই রকম দোকানগুলোকে উত্তর ভারতে ধাবা বলা হয়। প্রয়োজন অনুসারে চা ও জলখাবার কিছু খাওয়া হলো। ধাবাতে অফুরন্ত কলের জল রয়েছে, উপরের ঝর্না থেকে পাইপে করে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘাড়ে-মুখে ঝর্নার ঠাণ্ডা জল দিয়ে বেশ আরাম লাগলো। ধাবা থেকে অল্প সময় পরেই গাড়ি ছেড়ে দিলো এবং এর পর সকলেই গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করতে আরম্ভ করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রানিবাগ পৌঁছে ওখান থেকে পশ্চিম দিকে মোড় নিয়ে উত্তর দিকে জেওলিকোট (১২১৯ মি) এবং আরও উত্তরে আমরা রামগড়ে এসে পড়লাম। নৈনীতালের পথে রামগড় (১৫১৮ মি) এক বেশ বড় জনপদ। এখানে প্রচুর সংখ্যক ফলের বাগান আছে, এবং সেই কারণে রামগড় উত্তরাখণ্ডের ফলের ঝুড়ি বা বাটিও বলা হয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি এখান থেকে বেশ ভালো দৃশ্যমান হয়। রবীন্দ্রনাথ এখানে বেশ কয়েকবার এসে ছিলেন এবং কয়েকটি বিখ্যাত রচনা এখানেই করেন। বিখ্যাত শিকারি এবং পরিবেশবিদ জিম কর্বেটের শিকার কাহিনীগুলিতে অনেক বার এই রামগড়ের উল্লেখ আছে। বিখ্যাত হিন্দি লেখিকা মহাদেবী বর্মা এখানে প্রায়ই আসতেন তাঁর রচনায় অনুপ্রেরণা পেতে। সৌন্দর্যপিপাসুদের জন্যে রামগড় নিশ্চয় এক থাকবার জায়গা, তবে আমাদের সময় বাঁধা, আমাদের গাড়িতে করেই দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হলো। এখান থেকে রাস্তা পশ্চিম দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে যাচ্ছে। মাত্র ১১ কিমি দূরেই নৈনীতাল। আমরা বাড়ি থেকে ২৭শে মার্চ বেরিয়ে ২৯শে মার্চ সকাল ৯টার মধ্যেই নৈনীতাল(১৯৩৮মি) পৌঁছে গেলাম।

চিত্র-১, অশোক হোটেল

নৈনীতালে আমাদের থাকবার জায়গা ঠিক ছিল এক হলিডে-হোমে, এই হোম এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের। এর অবস্থান, তাল্লিতালের অশোক হোটেলে, বাস টার্মিনাসের খুবই কাছে। তবে মোহন এই হোটেলের অবস্থান ঠিক মতো খেয়াল না করার জন্যে না জেনে আমাদের উপকার করে দিলো। ও গাড়ি নিয়ে লেকের ধার ধরে সোজা মল্লিতালে একেবারে ফ্লাট্‌সের কাছে চলে গেল। আমরা উৎসুক নয়নে নৈনী-তালের শোভা উপভোগ করতে করতে এগোচ্ছিলাম। আমার পূর্বের জ্ঞানের ভিত্তিতে মনে একটু খটকা লাগছিলো, তবে ভাবছিলাম যে বোধহয় একমুখী রাস্তা, তাই এমন ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। একেবারে ফ্লাট্‌সে পৌঁছে মোহনের সন্দেহ হলো আর আমার কাছে আবার হলিডে-হোমের ঠিকানা চাইলো। ঠিকানা শুনে ওর ভুল বুঝতে পেরে গাড়ি ঘুরিয়ে অশোক হোটেলে নিয়ে গে।

লালকুঁয়া থেকে নৈনীতাল

এই সুযোগে বলি যে তাল্লিতালে নৈনীতালের বাস ও ট্যাক্সির স্ট্যান্ড, বাজার ইত্যাদির অবস্থান এবং এটা তালের দক্ষিণ প্রান্তে। আর মল্লিতাল হলো শহরের উত্তর দিক যেখানে ফ্লাট্‌স, নৈনাদেবীর মন্দির আর ভ্রমণার্থীদের জন্য অন্যান্য আকর্ষণীয় জায়গার অবস্থান। শহরের প্রধান রাস্তা ম্যাল, তাল্লিতাল আর মল্লিতালের সংযোগ করেছে নৈনী-তালের পূর্ব পার ধরে। এই ম্যালের অন্য পারে বেশ কিছু সাজানো-গোছানো ভ্রমণার্থীদের মন ভোলানো দোকান ও অনেক নামি-দামি হোটেল আছে।

প্রায় ২০ বছর আগে (১৯৮৮-তে)এখানে এসেছিলাম। তখন ম্যালে রিক্সা ছাড়া আর কোন গাড়ি যাতায়াত করতে দেওয়া হতো না। রিক্সা চালকদের সংঘ ছিল, তারাই পরপর রিক্সা ছাড়ার অধিকার দিতো, রিক্সাওয়ালারা ইচ্ছে মতো ম্যালের উপর দিয়ে রিক্সা নিয়ে যেতে পারতো না। ম্যাল একেবারে হ্রদের ধারেই ছিলো, অবশ্য কিছুটা জায়গায় গাছপালায় ভরা ছিলো। এখন দেখলাম, হ্রদের পাড় আর ম্যালের মাঝে রাস্তার তলের অল্প নিচ দিয়ে পায়ে চলা পথ তৈরি এবং এই পায়ে চলা পথের দুই ধারে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ লাগানো হয়েছে হ্রদের ধারেও। এই সমস্ত গাছের মধ্যে অনেক চিনার গাছও রয়েছে। কাশ্মীরের বাইরে এত সংখ্যক চিনার গাছ আর কোথাও দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। আগের তুলনায় নিশ্চয় বলা যায় যে এই অঞ্চল অনেক মনোমুগ্ধকর হয়েছে। গত বার মে মাসে এসেছিলাম, ভ্রমণার্থীরা তখন বেশি আসেন, তাই মনে হয় তখন অনেক বেশি ভিড় পেয়েছিলাম। এবার মার্চের শেষ, সবে ভ্রমণার্থীরা আসতে আরম্ভ করেছেন, তাই বেশ ফাঁকা লাগলো। হ্যাঁ, একটা ব্যাপার, ম্যালে রিক্সা একেবারেই দেখতে পেলাম না। তবে শুনলাম, গ্রীষ্ম ও শরৎকালে যখন নৈনীতাল ও ম্যাল ভ্রমণার্থীদের ভিড়ে উপচে পড়ে, এখানে গাড়ি চলাচল সকাল ৬:০০ থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

মোহন আমাদের হলিডে-হোম, অশোক হোটেলে পৌঁছে দিয়ে পরের দিনের প্রোগ্রাম জেনে চলে গেল। আমরা সেখানে আমাদের জন্যে সংরক্ষিত যে যার ঘরে গিয়ে ঢুকে পড়লাম। আমরা তিন জন, আমি, সহকর্মী ও ভ্রাতৃপ্রতিম শ্রীসুজিত রেজ ও বন্ধুবর প্রদীপ কবিরাজ যেখানেই যাই, সে ত্রি- বা দ্বিশয্যা বিশিষ্টই হোক, একই ঘরে থাকি। এখানে আমাদের একটি তৃশয্যা বিশিষ্ট ঘর ঠিক ছিলো। মহা আনন্দে ঘরে ঢুকে স্নান পর্যন্ত কোরে নেওয়া হলো, অবশ্যই ঈষদোষ্ণ জলে। আমি ঘরে ঢুকবার আগেই সকলকে তাড়াতাড়ি করে মুখ-হাত-পা ধুয়ে জামা কাপড় পালটে এবং ছোট সোয়েটার ও মাফলার নিয়ে বেরিয়ে আসতে বলে দিলাম। আমরা তৈরি হয়ে বেরোবার মুখেই বেশ হাওয়া সহ ভালই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল, আকাশে মেঘ অবশ্য আগে থেকেই ছিলো। বৃষ্টি ঝরার সঙ্গে ঠাণ্ডাও বেশ জাঁকিয়ে নামলো। ফুল হাতা সোয়েটার আর বাঁদুরে টুপির প্রয়োজন পড়ে গেলো, আর আমরা মন মরা হয়ে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর বৃষ্টি কমে গেল তবে বাতাস বইতেই থাকলো। দুপুরের খাবার তো খেতেই হবে, তাই হু হু করা বাতাসের মধ্যেই হি হি করতে করতে খাবারের খোঁজে বেরোলাম।

চিত্র-২, বাস টার্মিনাসের ধারে

কাছেই বাস টার্মিনাস, কাছাকাছিই বেশ কয়েকটা রেস্তোঁরা পেয়ে গেলাম। তার মধ্যে একটা পছন্দ করে ঢুকে পড়লাম। দ্বিপ্রহরিক আহারের পর আমি বললাম আমরা ম্যাল রোড ধরে হাঁটতে শুরু করে মল্লিতাল যাবো এবং ফ্লাট্‌স, নৈনাদেবীর মন্দির আর আশপাশে ঘুরে বেড়াবো। এবার আমি বাধা পেলাম। আমাদের মধ্যে অনেকেই আমার মতোই অবসর প্রাপ্ত, তাঁরা দুপুরে খাবার পর বিশ্রাম করতে অভ্যস্ত, ভ্রমণে দেরিয়েও তাঁরা পুরানো অভ্যাস ত্যাগ করতে নারাজ, বিশেষ করে তখনও সেই হিমেল বাতাস বইছে। অনেক কষ্টে তাঁদের বোঝাই যে সেই প্রাচীন কথা, “সময়ের দাম আছে,” ভ্রমণে সেই বাক্য অনুযায়ী সময়=f(টাকা)এই সমীকরণের মান বের করা খুব সোজা, ইত্যাদি হিসাবশাস্ত্রের কথা। তা ছাড়া ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ঘরে থাকলে আরও ঠাণ্ডা লাগবে, এই সব বলার পর, শেষে সকলেই রাজি হলেন আমার অনুরোধ অনুযায়ী কাজ করতে। অমরা ম্যালের সমান্তরাল পায়ে চলা রাস্তা বরাবর হাঁটা আরম্ভ করলাম।

ঘণ্টা দুয়েক আগেই আমরা ম্যাল বরাবর গেছি, কিন্তু তা ছিলো গাড়ি করে। পায়ে হাঁটার আলাদা মূল্য। তীব্র বাতাসের দৌলতে হ্রদের জলে সমুদ্রের ঢেউ, অপরূপ দৃশ্য। উপরে ঘন নীল আকাশ। শরৎ কাল নয়, তাই পেঁজা তুলো মেঘ অবশ্য বিশেষ নেই আকাশে কিন্তু দূরে তিন পাশে গাঢ় সবুজ বনানী, আর পাহাড়ের গায়ে মাঝে মাঝে সাদা ছোট ছোট বাড়ি সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিয়েছে।(চিত্র-৩, নৈনী-তাল ১, DSC02983.JPG) আশেপাশেও সবুজ, পিছনে গাড়ি যাতায়াতের শব্দ বা মানুষের কোলাহল, মনকে বিভ্রান্ত করতে পারে না।

চিত্র-৩, নৈনী-তাল ১

একি দেখি? এ যে সাদা রাজহাঁসের সারি। অপূর্ব। মনে হলো এ কথা বললে লোকে বিশ্বাস করবে না। তাহলে তো অন্যদের ডেকে দেখাতে হয়। ডাকবার জন্যে মাথা ঘোরাতেই দেখি প্রায় সকলেই সেই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করছে। আমার হাসি আসলো আমার বোকামির জন্যে। আমি ভাবলাম আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু আমি তো সমানেই হ্যান্ডিক্যামে ছবি তুলেই যাচ্ছি এবং এই ছবিও তো তুলছি, আমার কাছেই তো প্রমাণ থাকছে। তা সত্যেও? অবশ্য, আরও একটা বোকামি করলাম, ভিডিও ছবি তোলার ব্যস্ততায় স্থির ছবি নিতে ভুলে গেলাম।

আমরা ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম। লক্ষ করলাম যে প্রত্যেকেই খুবই আনন্দ পাচ্ছেন ঘুরতে, যাঁরা ঘরে থাকতে চাইছিলেন তাঁরাও। আমার পূর্বতন অধ্যাপক ও সহকর্মী ড. অলোক কুমার দের স্ত্রী, চিত্রা বৌদি এইদিক থেকে হঠাৎ ম্যাল পার করে অন্য পারে চলে গেলেন, সঙ্গে অবশ্য কয়েকজন আরও মহিলা ও পুরুষ গেলেন এবং একটু পরে উদ্ভাসিত মুখে এদিকে চলে এলেন। এসেই তিনি তাঁর মাথা ঘুরিয়ে আনন্দোজ্জল মুখে দাঁড়ালেন। আমরা সকলেই দেখতে পেলাম তাঁর কান থেকে ঝুলছে লম্বা ঝোলা দুল। মনে পড়লো যে, ট্রেনে তাঁর এক কানের দুলটি হারিয়ে গেছলো। এখানে এসে তিনি সেটি পূরণ করে নিলেন। এই ঘটনা না জানালেও চলতো, কিন্তু না জানিয়ে পারছি না কারণ বৌদির সেই হাসি, কে বলবে যে তিনি তাঁর জীবনের অর্ধ শতাব্দী বেশ কয়েক বছর আগেই পার করে এসেছেন। মনে হল তাঁর বয়স দুই দশকও হয়নি। এই ঘটনা আমার মনে এক অপূর্ব শ্লাঘা এনে দিলো কেননা বৌদি এই ভ্রমণ করতে বীতরাগ ছিলেন তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না বলে। আমার দাবি বা জোর করার কারণেই তিনি এসেছেন।

নৈনী-তালের ধারে ধারে ১

এই রকম প্রাকৃতিক ও পার্থিব (না কি অপার্থিব?) দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমরা হ্রদের অন্য প্রান্তে, অর্থাৎ মল্লিতালে পৌঁছে গেলাম মোট ১.৫ কিমি হাঁটার পর। এই প্রাকৃতিক হ্রদের বর্তমান পরিধি ৩৬২৪মি.। এর আগে অনেক বার আমি ফ্লাট্‌স কথাটা উল্লেখ করেছি, এ হলো হ্রদের এই প্রান্তের এক সমভূমির নাম। এটি এখন নৈনীতালের খেলাধুলা, সভা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্যে ব্যবহার হয়। বর্তমানে এর নাম হয়েছে D(istrict) S(ports) A(ssociation) ফ্লাট্‌স। হ্রদ যেখানে সবথেকে দীর্ঘ, তার মান ১.৫৭০কিমি, এবং প্রস্থতম স্থানে ০.৩৬কিমি। গভীরতম বিন্দু ০.২৮কিমি। আমরা যখন ফ্লাট্‌সের ধার দিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে এক ক্রিকেট ম্যাচ চলছিলো। মাঠে ঘাসের চিহ্ন পর্যন্ত নেই, কারণ পুরোটাই নুড়িপাথরে ভর্তি। কি করে প্লেয়াররা ফিল্ডিং করছে কে জানে। তা ছাড়া ওই মাঠের পিচ্‌-এ বল হঠাৎ লাফিয়ে ওঠার কথা। মনে হলো আগের বার যেন নুড়িগুলো আরো বড় বড় ছিলো।

চিত্র-৪, নৈনাদেবীর মন্দির

ফ্লাট্‌সের অন্য প্রান্তে অর্থাৎ পশ্চিমে এবং হ্রদের ধারে নৈনীতালের অধিষ্ঠাত্রী, নৈনা দেবীর মন্দির। দেবীর নামেই স্থানের নাম, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। সতীপিঠের বর্ধিত তালিকার মধ্যে এক পিঠ এই স্থান। কথিত যে সতীর বাম চক্ষু এখানে পড়েছিল এবং সেই চক্ষুই এই সরোবরে পরিণত হয়। মন্দিরের আশপাশে যেমন সব জায়গাতেই হয়, এখানেও পূজা দেবার সামগ্রীর দোকান আছে। সেখানে কাগজ বা কাপড়ের বিভিন্ন আকারের এক বিশেষ ধরণের আঁকা চোখ পাওয়া যায়, ভক্তরা পূজায় তা ব্যবহার করেন। হ্রদের সাদৃশ্য অনেকে শিম-বীজের আকারের সঙ্গে পেয়ে থাকেন। এই নৈনা দেবী ও সতীর নয়নের কথা পাশের রাজ্য, হিমাচল প্রদেশেও আছে। এই রাজ্যের বিলাসপুর জেলায় শিমলা থেকে ৮৩ কিমি দুরের বিলাসপুর শহরের কাছে এক পাহাড়ের চুড়ায় নৈনাদেবীর মন্দির আছে, এবং এও এক সতী পিঠ। ২০০৮ সালে এই মন্দির এক অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার কারণে খবরের শিরোনামে উঠেছিলো। ওই বছর ৩রা অগাস্ট, রবিবার, নবরাত্রী উৎসবের এক দিনে পদ পিষ্ট হয়ে মন্দিরে যাবার সিঁড়িতে শতাধিক পূণ্যার্থী মারা যান।

সতীর ৫১ পিঠের মধ্য নয়ন পড়ার কথা পাকিস্তানের শর্করা বা করবিরপুরের সতীপিঠে আছে বলা হয়, সেখানে সতীর তিনটি নয়ন পড়েছিলো। পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বরে বলা হয় যে সতীর ভ্রুমধ্য পড়ে ছিলো। ভ্রুমধ্যকে আমরা তৃতীয় নয়ন বলতে পারি। তা হলে সতীর কত গুলো নয়ন ছিলো? যদি মেনে নেওয়া হয় যে কোনও কালে এই ঘটনা ঘটেছিলো তা হলে যে দেহাংশ গুলো যেখানে পড়েছিলো বলা হয় সব কি ঠিক? তা ছাড়া কেন প্রায় সমস্ত দেহাংশই উত্তর ভারতে পড়বে, দক্ষিণ ভারতে বা ভারতের বাইরে নয়? পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ তো কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভারতেরই অংশ ছিলো। আমার মনে হলো শিব তো কেবল মাত্র উত্তর ভারতের দেবতা নন, দক্ষিণ ভারতেও বেশ কিছু সংখ্যক শিবালয় আছে, তবে কি সতীর ব্যাপারটা মনে হয় তেমন ভাবে প্রাধান্য পায় না, তাই সেখানে সতী পিঠের অভাব?

হঠাৎ মনে হল যে আমি এই সমস্ত বিচার করার কে? আমার কি জ্ঞান আছে এই বিষয়ে? বেড়াতে এসেছো বেড়াও আর দুই চোখ মেলে আর মন দিয়ে দেখো আর অনুভব করো। আমি মন থেকে এই সমস্ত (কু)চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আবার নৈনীতালের ইতিহাস ঘাঁটতে আরম্ভ করলাম।

এই হ্রদের সৃষ্টি সম্পর্কে এক পৌরাণিক কাহিনীও শোনা যায়। স্কন্দ পুরাণের মানস খণ্ডে এই হ্রদের নাম তৃ-ঋষি হ্রদ। ঋষিত্রয় অত্রী, পুলস্থ ও পুলহ কোনও এক সময়ে তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এবং জল না পেয়ে নিজেদের ত্রিশূলের দ্বারা পাহাড়ের মাঝে খনন করে মানস সরোবর থেকে জল এনে ভর্তি করে এক হ্রদ গঠন করেন এবং তৃষ্ণা মেটান (যাঁদের এত ক্ষমতা তাঁরা মানস সরোবরের জলেই সোজাসুজিই তো তৃষ্ণা মিটিয়ে নেবেন, জল আনবার কি দরকার? আবার কু চিন্তা?)। নৈনী-তালই সেই হ্রদ। সেই কারণেই অনেকের বিশ্বাস যে এই হ্রদে স্নান করলে মানস সরোবরে স্নান করার পুণ্য অর্জন করা যায়। আমরা হ্রদের জল বেশ পরিষ্কার ও স্বচ্ছ লক্ষ করলাম, তবে কাউকেই হ্রদে স্নান করতে দেখলাম না। নৈনাদেবীর মন্দির চত্বরের সামনে কোনও কালে মনে হয় ঘাট ছিলো, কিন্তু এখন সেই দিকে বেশ দৃঢ় করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া রয়েছে। ফ্লাটস্‌-এর দিক থেকেও নৈনীতালের অপূর্ব ছবি পাওয়া গেল।

>

চিত্র-৫, নৈনী-তাল ২

সামনে কোনও কালে মনে হয় ঘাট ছিলো, কিন্তু এখন সেই দিকে বেশ দৃঢ় করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া রয়েছে। ফ্লাটস্‌-এর দিক থেকেও নৈনীতালের অপূর্ব ছবি পাওয়া গেল সতী পিঠ হওয়া সত্বেও তীর্থস্থান হিসাবে এখানে প্রাচীন কাল থেকে তীর্থযাত্রীর সমাগম এলাকার বাইরে থেকে তেমন ভাবে হতো কি না তার কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি প্রাচীন কালে এই এলাকা কোন্‌ রাজার রাজত্বের মধ্যে ছিল তার কোনও লিখিত বিবরণ পাওয়া যায়নি। কুমায়ুঁ অঞ্চল অবশ্য প্রধানত চাঁদ রাজাদের রাজত্ব ছিল, তাই ভাবা যেতেই পারে এঁদের দখলেই এই অঞ্চলও ছিল। এই স্থানে এলাকার বাইরের মানুষ আসার প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে গাড়োয়াল ও কুমায়ুঁ ব্রিটিশ সরকারের দখলে যায়, ব্রিটিশ-গোর্খা যুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়ের সুবাদে। ১৮১৭ সালে এক জন ব্রিটিশ সরকারি কর্মচারী, কুমায়ুঁর দ্বিতীয় কমিশনর, জি.ডাব্লু.ট্রেইল এখানে আসেন জমির খাজনা ইত্যাদি নির্ধারণ করার জন্যে। তিনি নৈনী-তালের সৌন্দর্য লক্ষ করা সত্বেও এর প্রচারের পক্ষপাতী ছিলেন না এলাকার ধার্মিক গুরুত্বের কথা বিচার করে। এই বছরেই বর্তমান মহারাষ্ট্রে আর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়। কিছু সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য তাদের অস্থায়ী বাসস্থানের জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ে জঙ্গলের মধ্যে এক সারি থাম ও তার উপরে ছাদ দেখতে পায়। সেই আবিষ্কার বিভিন্ন কারণে জগৎ সমক্ষে অজন্তা রূপে প্রকাশ পেতে প্রায় ৬০ বছর লেগেছিল। সেই তুলনায় মাত্র ২২ বছর পরেই বহির্বিশ্ব নৈনী-তাল সম্পর্কে জানতে পারে।

১৮৩৯ সালে এক চিনি ব্যবসায়ী, পি. ব্যারন তাঁর এক শিকারি বন্ধুর সঙ্গে শিকার করতে এসে পথ হারান। ঠিক রাস্তার খোঁজে এই তালের ধারে এসে পড়েন। তালের শোভা দেখে একেবারে মোহিত হয়ে পড়েন। ফলে তিনি তাঁর চিনির ব্যবসা ত্যাগ করে এই তালের ধারে ‘পিলগ্রিম কটেজ’ নামে এক কুটির তৈরি করেন ১৮৪২ সালে। ব্যবসায়ী ব্যারনের মতোই রাস্তা হারিয়ে আর এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ জনসমক্ষে এনেছিলেন নৈনীতাল থেকে ২০০ কিমির মধ্যে এবং প্রায় ১০০ বছর পর বদরিনাথধামের কাছে ১৯৩৬ সালে ফ্রাঙ্ক এস. স্মাইথ তাঁর ‘ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস’ আবিষ্কারের সুবাদে।

তবে ব্যারনের শরীরে ব্যবসায়ির রক্ত, কাজেই তাঁর আর এক উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়া, তা ক্রমশ: রূপায়িত হতে থাকে। উল্লেখ্য যে কলকাতার ‘ইংলিশম্যান’ কাগজে ১৮৪১ সালে আলমোড়ার কাছে এক অত্যন্ত সুন্দর হ্রদের আবিষ্কারের কথা ছাপা হয়। এই হ্রদ যে নৈনীতাল তা বুঝতে পারা খুবই সহজ। ভীষণ তাড়াতাড়ি নৈনীতালে নগরায়ণ হতে থাকে। ১৮৪৬ সালে বেঙ্গল আর্টিলারির ম্যাডক নামের এক ক্যাপ্টেন নৈনীতাল সম্পর্কে লিখেছেন যে চারিদিকে প্রচুর সংখ্যক বাড়ি তৈরি হচ্ছে যার মধ্যে অনেকগুলিই পাহাড়ের বেশ উঁচু স্তরে। ১৮৪৭-এর মধ্যেই বেশ কিছু সংখ্যক মানুষের বসবাসও আরম্ভ হয় এখানে এবং ভ্রমণার্থীদের ভিড় নৈনীতালে বেশ বেড়ে যায়। এমন কি ৩রা অক্টোবর ১৮৫০ সালে নৈনীতাল মিউনিসিপাল বোর্ড গঠিত হয়, যা সমগ্র উত্তর-পশ্চিম ভারতের মাত্র দ্বিতীয় বোর্ড। পরে এই বোর্ড এক সিদ্ধান্তের বলে আলমোড়ার ধনী শাহ পরিবারের হাতে জমি হস্তান্তরিত করে নৈনীতালের নগরায়ণ ত্বরান্বিত করতে। সম্ভবত বদরি শাহ এই পরিবারেরই সদস্য যাঁর বিষয়ে আমরা স্বামী বিবেকানন্দের আলমোড়া ভ্রমণ, থাকা এবং মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রম সংক্রান্ত ব্যাপারে জানি। নৈনীতালের উন্নতি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং ১৮৬২ সালে একে উত্তর-পশ্চিম ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী করা হয়। ফলে নগরায়ণের গতি অত্যন্ত বেড়ে যায়। অনেক বাংলো, বাজার, হোটেল, অনুষ্ঠান বাড়ি, সরকারি কার্যালয় ইত্যাদি তৈরি হয়। বেশ কিছু শিক্ষায়তনের স্থাপনাও হয়, যা প্রধানত ইউরোপিয়ান আর ভারতীয় ধনী সম্প্রদায়ের সন্তানদের কাজে ব্যবহার হতে থাকে।

আমরা জানি যে হিমালয় পাহাড় বেশ নরম, কারণ এতে মাটির ভাগ অনেকটাই। তাই সহজেই ভূস্থলণ হয়। নৈনীতালও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৮৬৬ এবং ১৮৭৯ সালে প্রায় একই জায়গায় ভূস্থলণ হয়েছিলো। তবে ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৮৮০ সালে যে ভূস্থলন হলো তার কোনও তুলনা পাওয়া যায় না। ওইদিন দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ বর্তমান ফ্লাট্‌সের পূর্ব দিকের পাহাড় থেকে মাটি ও পাথর নদীর স্রোতের মতো হ্রদের উত্তর প্রান্তের দিকে নেমে আসে। মুহূর্তের মধ্যে নৈনাদেবীর মন্দির, পাশে ভিক্টোরিয়া হোটেল এবং বেলস শপ মাটি ও পাথরে মিশে গেল। ১০৮ জন ভারতীয় আর ৪৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক নিমেষের মধ্যে সেই কাদা-পাথরে প্রোথিত হয়ে যান। আগের দুদিন মোট ৪০ ঘণ্টায় প্রায় ১৪০ সেমি বৃষ্টি হয়। সেই জল পাহাড়ের উপর থেকে নদীর স্রোতের মতো হ্রদে এসে পড়তে থাকে। স্রোতের পথে মন্দির ইত্যাদি বাঁচাবার জন্য ভারতীয় শ্রমিকরা নালা কাটার চেষ্টা করছিলো, সেই সময় এই ভূস্থলন হয় তাই সেই সমস্ত শ্রমিকরা মারা যান। মৃত ব্রিটিশরা তখন সম্ভবত হোটেল বা দোকানে ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে হ্রদের উত্তর দিকে মল্লিতালে যেখানে সেই কাদা ও পাথর জমা হয়, তা সরিয়ে ফ্লাট্‌সের জন্ম দেওয়া হয়, যদিও ওইখানে কিছুটা সমতল ভূমি আগে থেকেই ছিলো। জল নিষ্কাশনের স্থায়ী বন্দোবস্ত আর বাড়ি তৈরির কঠিনতর নিয়মেরও প্রবর্তন করা হয়। নৈনাদেবীর মন্দিরও নতুন করে আবার গঠন করা হয়। আগেকার মন্দির সম্ভবত ১৮৫০ সালের পর জখন নৈনীতাল পৌরসভা আলমোড়ার শাহ পরিবারের হাতে নৈনীতালের নগরায়ণ করার দায়িত্ব প্রদান করে, তার কয়েক বছরের মধ্যে সেই পরিবারের মতিরাম শাহ নির্মাণ করেন। অনেকে বলেন যে সেটা ১৮৬১ সাল। এই মন্দির বর্তমান বোট হাউসের কাছে ছিলো। ভূস্থলনে বিগ্রহ সহ মন্দির পাথর ও কাদার মধ্যে প্রোথিত হয়ে যায়। এই সুযোগে উল্লেখ করি যে দ্বিমতে ‘পিলগ্রিম কটেজ’ ব্যারন নয়, মতিরাম নির্মিত। কথিত যে নৈনাদেবী ইতিমধ্যে মৃত মতিরামের পুত্র অমরনাথকে স্বপ্নে তাঁর প্রথিত হবার স্থান জানিয়ে দেন। অমরনাথ তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্যে সেই প্রথিত বিগ্রহ উদ্ধার করেন ও ১৮৮৩ সালে নতুন মন্দির বর্তমান স্থানে গঠন করে সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী কালে অমরনাথের পুত্র উদয়নাথ এবং ও পৌত্র রাজেন্দ্রনাথ মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করতে থাকেন। ২১শে মে, ১৯৮৪ সালে রাজেন্দ্রনাথ অমর-উদয় ট্রাস্ট নামে এক ট্রাস্ট গঠন করে তাঁদের দায়িত্বে মন্দিরের কর্তৃত্ব তুলে দেন।

পাঠকগণ, যাঁরা এখনও ধৈর্য ধরে এপর্যন্ত এই কাহিনী পড়ছেন তাঁদের বলি যে আমরা ফ্ল্যাট্‌স বরাবর হেঁটে নৈনাদেবী মন্দির দ্বারে উপস্থিত হয়েছিলাম। আমার বড় সম্বন্ধীর কন্যা অনিতা হঠাৎ বলল, “পিসেমশায়, খাবেন নাকি?” দেখি সে কালো রং-এর ছোট লিচুর আকারে কোন এক ফলের ডাঁটি ধরে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রয়েছে। “এ কী ফল?” আমি প্রশ্ন করলাম। উত্তর পেলাম, “ব্ল্যাক বেরি”। খেলাম, বেশ টক-মিষ্টি স্বাদ, নরম, মুখে দিলে ভালো আমের মতো মিলিয়ে যায়। মনে পড়ল, ফ্ল্যাট্‌সের ধারে ঝুড়ি করে নিয়ে বিক্রি করতে দেখেছি এই ফল আর তার সঙ্গে স্ট্রবেরি।

এবার আমরা সকলে মন্দির চত্বরে নামলাম কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে। নামতেই সামনে দেখতে পেলাম এক মন্দিরে বেশ বড় হনুমান মূর্তি, ডান হাতে বরাভয় জানাচ্ছেন আর বাম হাতে তাঁর সেই বিখ্যাত গদা বাম কাঁধে রাখা। পাশে পিতলে নির্মিত গণেশের ছোট মূর্তি। পাশেই এক বোর্ডে মন্দির গঠনের ইতিহাস লেখা। পড়লাম। আমার অজানা কিছু তথ্য পেলাম না। মুখ্য মন্দির নৈনাদেবীর, পরিসরের বাম দিকে মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে। শ্বেত পাথরের বেদির উপর পাথরের দয়াল ঘেরা এবং দুই ধাপ টিনের চার-চালার ছাদ, লাল রং করা। মন্দিরের পরিধি ও উচ্চতা দুইই বেশি নয়। অবশ্য হ্রদের ধারে হবার কারণে দক্ষিণ দিকে ত্‌ল্লিতাল থেকে বেশ ভালই বোঝা যায়। সামনে, বেদির নিচে কাছেই ঢাকা যজ্ঞ-স্থল এবং সামনে এক বেশ বড় গাছ রয়েছে যার কাণ্ড ঘিরে ভক্তরা লাল কাপড় তাঁদের মনস্কামনা সিদ্ধির জন্যে বাঁধে। মন্দিরের গর্ভ গৃহ ছাড়া বেদির উপর অল্প জায়গাই আছে। এক মিটার মতো উচ্চতা, শ্বেত পাথরে গঠিত দেবীর বিগ্রহ। অবশ্য দেবীর মুখমণ্ডল ছাড়া কিছুই দেখা যায় না, সম্পূর্ণটাই কাপড়ে ঢাকা থাকে। নৈনা-দেবী, তাই তাঁর নয়ন বেশ চোখে পড়ে। বিভিন্ন দেব-দেবীর জন্যে বিভিন্ন প্রকার উৎসর্গের প্রথা হয়ে থাকে, নৈনাদেবীর জন্যে কাগজ, স্বর্ণ বা রৌপ্য নির্মিত নয়ন উৎসর্গের প্রথা প্রচলিত। মন্দিরের বাইরে কাগজের নয়ন কিনতে পাওয়া যায়, আগেই জানিয়েছি। প্রধান মন্দিরের পাশে ভৈরবনাথের মন্দির। ট্রাস্ট, মন্দির পরিসরের মধ্যে এক সভাকক্ষ এবং মাতা সন্তোষী, নবগ্রহ ও রাধা-কৃষ্ণের মন্দির নির্মাণ করেছে।মন্দির পরিসরের সামনে যেমন পূজা-সামগ্রীর দোকান, তেমনিই পোষাক, মনিহারি সামগ্রী এবং নৈনীতালের বিশেষত্ব, মোম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বস্তুর দোকানের এক মার্কেট। প্রধানত তিব্বতিদের দোকান এবং সেই কারণে একে লাসা-মার্কেট বলে থাকেন অনেকে। মন্দির থেকে বেরিয়েই চিত্রা বৌদি, আমার শালাজ শ্রাবণী বৌদি আর আমার বন্ধুবর ও সহকর্মী বিমানের স্ত্রী অর্চনা যে যার ইচ্ছে মতো দোকানে হারিয়ে গেলেন। তাঁদের স্বামীরা সুড়সুড় করে নিজের নিজের স্ত্রীদের খুঁজে মুখে মেকি হাসি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন নির্দিষ্ট দোকানের ধারে। আমি কিছুক্ষণ তাঁদের অবস্থা দেখলাম তার পর মার্কেটের সামনে রাস্তায় এসে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম।

লক্ষ্য করলাম যে মার্কেটের পাশ দিয়ে উত্তর দিকে একটি রাস্তা রয়েছে। জানতে পারলাম যে সেই রাস্তা দিয়ে নৈনা-পিক বা শিখরে (২৬৪০ মি.) যাওয়া যায়। কমবেশি সওয়া এক ঘণ্টা লাগে হাঁটলে এই ৬.৬৪ কিমি রাস্তা। ঘোড়া করেও যাওয়া যায়। কয়েকজনকে ঘোড়া চেপে যেতেও দেখলাম। আকাশ পরিষ্কার থাকলে হিমালয়ের বেশ কয়েকটা তুষার শৃঙ্গ যেমন নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল, নন্দাকোট ইত্যাদি দেখা যায় এই নৈনা-পিক থেকে। তবে পরিষ্কার আকাশ পাওয়া ভাগ্যের কথা, কিন্তু নৈনী-তাল ও শহরের বিহঙ্গম দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেনই। আগে এই পিকের নাম চিনা-পিক ছিল। অনেকে বলেন এখান থেকে নাকি চিন দেখা যায়। আমার মনে হয় সে সম্ভাবনা কিছুমাত্র নেই। এই পিকের উত্তর দিকে এর থেকে অনেক উঁচু পাহাড় আছে এবং এখান থেকে চিনের যা দূরত্ব, তাতে পৃথিবী পৃষ্ঠের স্বাভাবিক বক্রতার জন্যে চিন দিক্‌চক্রবালের নিচে চলে যাবে। আমদের মধ্যে অনেকেরই হাঁটা বা ঘোড়ায় চাপার শারীরিক সামর্থ্য নেই তাই নৈনা-পিক যাবার ইচ্ছা ছিল না, তাছাড়া সময়েরও অভাব। তবে দলের কম বয়সী সদস্যরাও দেখলাম আমাদের থেকেও আয়েশি, তারা এই ম্যালেই ঘুরতে আসেনি, হোটেলের ঘরেই ঠাণ্ডার কারণে শুয়ে বসে কাটালো। এ ছাড়া লরিয়াকান্তা, টিফিন-টপ, স্নো-ভিউ, ল্যান্ডস এন্ড ইত্যাদি দেখবার জায়গা আছে। হাতে সময় থাকলে দেখা যেতে পারে। এগুলো সবই নৈনীতালের আশপাশের পর্বত শৃঙ্গ। এ ছাড়া কাছেই বিখ্যাত পরিবেশবিদ ও শিকারি জিম কর্বেটের নিবাসস্থল ‘গারনি হাউস’ ‘তীর্থ-স্থান’ হিসাবেই গণ্য করা যায়, তাও আমার দর্শন করার সৌভাগ্য হলো না।

প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর একে একে দোকানশ্রেণী থেকে ছোট-বড় মোড়ক নিয়ে মহিলারা মোটামুটি হাসি মুখে বাইরে আসতে লাগলেন এবং আবার ম্যাল বরাবর হেঁটে হোটেলে ফেরা আরম্ভ হলো। কিছু সময় অবশ্য ম্যালের কয়েকটি দোকানেরও পাওনা হলো। আপনাদের মধ্যে কোনও পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন যে কেনাকাটার পরও মোটামুটি হাসি মুখ কেন, কেন পুরোপুরি হাসি মুখ নয়। পাঠিকাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এবং সেই সকল পাঠকদের বলছি যে আপনাদের নিশ্চয় ওনাদের নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবার অভিজ্ঞতা নেই, অথবা আপনাদের খুবই দুর্ভাগ্য যে আপনাদের তাঁরা নর্মাল স্বভাবের নন। আমার মনে হয় যে এই যে আমাদের আর ওনাদের স্বভাবের পার্থক্য, এটা যদি না থাকতো তাহলে বোধহয় জীবন বড়ই একঘেয়ে লাগতো। আপনাদের কি মনে হয়?

নৈনীতালের ধারে ধারে ২

বুঝতেই পারছেন হোটেলে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছলো। ঘরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে বাইরে বেরিয়ে রাতের খাবার খেয়ে এসে শোবার সঙ্গে সঙ্গেই গভীর ঘুম।

(শেষাংশ মার্চ ১৫-র সংখ্যায়)


লেখক পরিচিত - শিক্ষাবিদ। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন বহু বছর। নেশা হচ্ছে ভ্রমণ। অবসর-এর একজন নিয়মিত লেখক। ।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।