প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে ভ্রমণ

জুন ১৫, ২০১৬

 

কচ্ছে তিন দিন

শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

(১)

ভদোদরা অর্থাৎ বরোদা রেল স্টেশন থেকে বান্দ্রা-ভুজ এক্সপ্রেস করে গুজরাটের কচ্ছ জেলার প্রধান শহর ‘ভুজ’ রেল স্টেশনে পৌঁছলাম। শহরের প্রায় কেন্দ্রে, নিউ স্টেশন রোডে বাজার এলাকায় বেশ সস্তার হোটেল পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে, দশটার আগেই বেরিয়ে পড়লাম কাছাকাছি এক রেস্তোঁরায় ভাত খেয়ে নিয়ে ভুজের দ্রষ্টব্য স্থান দর্শনের উদ্দেশ্যে। তবে আমাদের এই তাড়াতাড়ি লাঞ্চে সব্জির পদের কথা বলতেই হয়। কলকাতায় অনেক রেস্তোঁরায় ‘চাট’-এ কাঠি ভাজা ছড়িয়ে দিয়ে থাকে। এখানে আলু আর তার সঙ্গে কিসের যেন এক ঘ্যাঁটে কাঠি ভাজা ছড়িয়ে দিয়েছে। এর পর অবশ্য কাঠি ভাজা ছড়ানো তরকারি সব সময়ই পেয়েছি। গুজরাটে বিভিন্ন ধরনের কাঠিভাজার স্বাদ গ্রহণ করেছি। কিছু কিছু বিশেষ ধরনের কাঠিভাজা খেতে বেশ ভালও লেগেছে। আমাদের এখানে যেমন তেলে-ভাজা এক লোভনীয় ও মুখ-রোচক খাবার, গুজরাটে তেমন বিভিন্ন ধরনের কাঠিভাজা বা ‘ভাজি’ লোকে আনন্দ করে খায় এবং বিভিন্ন ধরনের কাঠিভাজার নামও ভিন্ন ভিন্ন। সব জায়গায় ভাত না পেলেও ভাজি পাবেনই।

টেরাডেক্টাইলের কঙ্কাল ছবিঃ ধীরেন কুমার কর্মকার

হামিরসার লেক থেকে আমরা ভুজ দর্শন শুরু করলাম। যদিও এর থেকে অনেক বড়, তাহলেও হায়দরাবাদের হুসেন-সাগর ঘিরে যেমন আলোর মালা পরানো রাস্তা আছে, এই লেক ঘিরেও প্রায় তেমনই রাস্তা রয়েছে।  লেকের এক পারে বেশ বড় এবং প্রাকৃতিক ঢেউ খেলানো মাঠে সুন্দর সাজানো পার্ক, সেখানে রোদের মধ্যেই ঘুরলাম। এই পার্কে নির্মীয়মান এক বিরাট ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো হলে টেরাডেক্টাইলের কঙ্কাল রাখা দেখলাম।

স্বামীনারায়ণ মন্দির, প্রবশ তোরণ ছবিঃ ধীরেন কুমার কর্মকার

ভুজের পরবর্তী দ্রষ্টব্যে গেলাম স্বামীনারায়ণ মন্দিরে। পরে দেখছি যে স্বামীনারায়ণ মন্দির গুজরাটের হেন জায়গা নেই যে সেখানে নেই। অনেক দূরে দূরে শহর, এক শহর থেকে আর একটিতে যেতে ফাঁকা মাঠের মাঝে কোথাও ছোট বা কোথাও বড় মন্দির, স্বামীনারায়ণের। প্রায় সমস্ত মন্দিরই একই গঠন শৈলীর। উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গাতেও স্বামীনারায়ণের ভক্তরা মন্দির গড়ছেন আজকাল। কিছু বছর আগে দিল্লিতেও স্বামীনারায়ণের প্রকাণ্ড এক মন্দির নির্মিত হয়েছে, নাম তার ‘অক্ষরধাম।’ সম্প্রতি এক বই পড়ে (Transcendence: My Spiritual Experiences with Pramukh Swamiji, Abdul Kalam, A.P.J., HarperCollins, 2015) জানতে পারি যে ২০০১ সাল নাগাদ এই ‘ধামের’ নকশা সম্পূর্ণ হয়েছিল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম এই শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থার বর্তমান প্রধান প্রমুখ স্বামীজীর সংস্পর্শে এসে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। নেপালের মধ্য-উত্তরে মুস্তাঙ জেলায় মুক্তিনাথ মন্দিরের স্থান এই সম্প্রদায়ের মানুষের বদান্যতায় ঘেরা হয়েছে, সেই পাঁচিলের দৈর্ঘ্য অন্তত দুই কিমি। ওখানে অবশ্য মন্দির গঠন করেননি, কিন্তু স্বামীনারায়ণের এক মূর্তি মুক্তিনাথ মন্দিরের সামনেই স্থাপন করেছেন। গুয়াহাটিতেও আছে স্বামীনারায়ণ মন্দির। যাই হোক, স্থান পাওয়ার অনুসারে মন্দির পরিসরের আকার হয়ে থাকে। পরিসরের মাঝে গম্বুজ ও শিখরের মিশ্রণে বর্গাকার মন্দির, সভাগৃহ আর গর্ভগৃহের মধ্যে বিভাজনের দেয়াল, গর্ভগৃহে মধ্যমণি স্বামীনারায়ণের বিরাট মূর্তি, এই হল স্বামীনারায়ণ মন্দিরের বাঁধা ছক। তবে ভুজের এই মন্দির বেশ কিছুটা বিশিষ্টতা দাবি করে। এই মন্দির ১৮২২ সালে প্রথম নির্মিত হয় যা ভুজ তথা কচ্ছের অনেক পুরাকীর্তি সহ ২৬ জানুয়ারি ২০০১ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়। এখন আমরা যে মন্দির দেখছি, তা মাত্র ২০১০ সালের ১৮ মে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারা উদ্ঘাটিত হয়েছে। মন্দিরের প্রধান অংশ দোতলা, অর্থাৎ দোতলাতেই বিগ্রহ স্থাপিত। সম্পূর্ণ মন্দিরই মর্মরে নির্মিত এবং গর্ভগৃহ তিনটি অংশে বিভাজিত। প্রত্যেকটির উপর বেশ উচ্চ শিখর রয়েছে। সভামণ্ডপ কিন্তু একটিই এবং বিরাট কেননা তিনটি গর্ভগৃহকে এক প্রান্তে রেখে গঠিত। এর ছাদ গম্বুজাকার এবং নিচে, সিলিঙের মধ্য অংশে রঙিন ফ্রেস্কো। আরও বেশ কয়েকটা ফ্রেস্কো রয়েছে সিলিঙে। এক তলার দেয়ালে রামায়ণ ও মহাভারতের অত্যন্ত সুন্দর ও সূক্ষ্ম খোদাই করা ডায়োরামায় ভরা।



কচ্ছ মিউজিয়াম ছবিঃ আশা অধিকারী

এর পরই আমরা গেলাম লেকের কাছেই ভুজের মিউজিয়াম দেখতে। ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গুজরাটের প্রাচীনতম এই মিউজিয়াম। এর প্রতিষ্ঠাতা যদিও মহারাজা তৃতীয় খেঙ্গারজী, তা হলেও এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপক বম্বের তৎকালীন গভর্নরের নামে এই মিউজিয়াম ফর্‌গুসান মিউজিয়াম নামে পরিচিত ছিল।  অধুনা এ কচ্ছ মিউজিয়াম রূপেই বেশি পরিচিত। অন্যান্য সংগ্রহশালার মতই এখানেও পুরাকীর্তির নিদর্শন রাখা আছে, আর স্বাভাবিক ভাবেই প্রাচীন কচ্ছের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নিদর্শনের আধিক্য রয়েছে। আর কচ্ছের প্রাচীন মানে হরপ্পা সভ্যতার বা প্রাচীনতর কাল। উল্লেখ করার মত প্রদর্শন, কচ্ছের প্রাচীন লিপির পুঁথি ও কচ্ছের বিখ্যাত বয়ন শিল্পের উদাহরণ। আবার ফিরে আসি মিউজিয়ামে। অনেক প্রকারের এম্ব্রয়ডারি আর বাঁধনির কাজ, এমন কি চামড়ার উপরে চিত্রণ, যাকে আমরা শান্তিনিকেতনের চামড়ার ব্যাগে বাটিক বলে থাকি, সেই কাজও কচ্ছের বিশেষত্ব, এগুলোর প্রচুর সংখ্যক নিদর্শন এখানে রয়েছে। দেখতে খুবই ভালো লাগলো। জানি না, শান্তিনিকেতনের এই চামড়ার ব্যাগের শিল্প কি এখান থেকেই এসেছে? এই সমস্ত শিল্প-কর্ম কচ্ছের মহিলারাই করে থাকেন, পুরুষেরা এতে অংশ গ্রহণ করেন না, যা কিন্তু কাশ্মীরের পুরুষেরা করে থাকেন। বিখ্যাত হিমালয় ভ্রমণকারী ও লেখক, উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর বই, “আরব সাগর তীরে”-তে কচ্ছের মহিলাদের সূচের কাজের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

প্রাগ মহলে মিনার

রাজবাড়ি বেশ বড় তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বাইরে থেকে দেখে আমাদের অন্তত এমনই মনে হলো। রাজবাড়ি ‘প্রাগমহল‘ নামেও পরিচিত। এর কারণ এর নির্মাণ দ্বিতীয় রাও প্রাগমালজী ১৮৬৫ থেকে  ১৮৭৯-এর মধ্যে করেছিলেন। অবশ্য নির্মাণের শেষাংশ প্রাগমালজীর ১৮৭৫ সালে মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র তৃতীয় খেঙারজী করেন। প্রাসাদের গোথিক গঠনশৈলীতে তখনকার দিনের বিখ্যাত ইটালিয়ান স্থপতি কর্নেল হেনরি সেন্ট উইল্কিন্স প্রধানত ইটালিয়ান রাজমিস্ত্রীদের সাহায্যে নির্মাণ করেছিলেন। প্রাচীন ভুজ প্রাচীর বেষ্টিত ছিল, তাই রাজবাড়ি পৌঁছানোর পথে প্রাচীর পার হতে হলো। প্রাচীর তথা রাজবাড়ির বেশ কিছু অংশে ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতি দেখতে পেলাম। শুনলাম ২০০৬ সালে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মহলের মধ্য থেকে প্রচুর ধন-সম্পত্তি এবং মূল্যবান শিল্পকীর্তি চুরি হয়ে যায়। তার পরে মহলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। রাজবাড়ির ডান দিকে উঁচু ও চৌকো এক মিনারের চার দিকে চারটি ঘড়ি রয়েছে। এই মিনারের গঠন শৈলী বর্ণনার বদলে ছবি দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

 



 (২)


কচ্ছ জেলার মানচিত্র

ভুজ, কচ্ছ জেলার প্রায় পূর্ব প্রান্তে (কচ্ছ জেলার মানচিত্র দেখুন)। পরের দিন, ফেব্রুয়ারি ২০, সকাল ৯টা নাগাদ বেরোলাম পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগরের কোরি ক্রিকের (Kori Creek) ওপর স্থিত পাশাপাশি নারায়ণ সরোবর ও কোটেশ্বর মন্দির দেখতে। ভুজ থেকে নারায়ণ সরোবর ১৫০কিমি, আর আরও মাত্র ২কিমি উত্তর-পশ্চিম দিকে কোটেশ্বর মন্দির। গুজরাতের রাস্তার গুণগান অনেক সময় শুনেছিলাম। এই পথে তা প্রত্যক্ষ করলাম।

কোটেশ্বর মন্দির - কোরি ক্রিক থেকে ছবিঃ সুজিত কুমার ঘোষ

এই ১৫০কিমি পথে, বড় দূরের কথা, মাঝারিও বলা যায় না, ছোট শহর মাত্র গোটা তিন-চারেক পেলাম। আমাদের লোডেড গাড়ি সেই শহর অঞ্চল গুলো ছাড়া বেশির ভাগ সময় ৮০/৯০ কিমি বেগে দৌড় করাল কিরীটভাই, আমাদের বছর ৩০-এর গুজরাটি মৃদু, মিত-ভাষী ও সুস্বাস্থ্যবান যুবক। প্রায় সম্পূর্ণ রাস্তার ধার বরাবর বাবলা গাছে ভরা এবং খুব অল্প জায়গাতেই চাষ বা অন্যান্য গাছ-পালা দেখতে পেলাম। পরে শুনেছি এই বাবলা গাছ প্রথমে সবুজায়নের জন্যে বা মরু-আগ্রাসন রোধ করার জন্যে আমদানি করে লাগানো হয়েছিল কিন্তু এখন এ স্থানীয় ও দেশীয় গাছ-পালা নির্মূল করে দিচ্ছে। আমরা দুপুরের মধ্যেই নারায়ণ সরোবর পৌঁছে গেলাম।

আমাদের অঞ্চলে নারায়ণ সরোবর বা কোটেশ্বর মন্দির সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ জানেন না। তাই এই দুই জায়গার সম্পর্ক দু-চার কথা বলি। তবে অনেক ভ্রমণার্থী ভ্রমণ করা ছাড়া স্থানের বিষয় জানার প্রয়োজন বোধ করেন না। আমার অবশ্য যেখানে ভ্রমণ করছি তার কিছু ইতিহাস ও ভূগোল না জানলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে গেল বলে মনে হয়। তবে তীর্থস্থানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পৌরাণিক ইতিহাস ছাড়া কিছু জানা সম্ভব হয় না।
মানস-সরোবর, পম্পা সরোবর, বিন্দু-সরোবর, পুষ্কর-সরোবর আর নারায়ণ সরোবর, এই পাঁচটি সরোবর, পবিত্র সরোবর হিসাবে আদি কাল থেকে মেনে আসা হচ্ছে হিন্দু ধর্মে এবং এই সরোবর-স্থিত স্থানগুলো তীর্থস্থান হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই সরোবর গুলোর প্রতিষ্ঠা কি করে হয়েছে, নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারে না। এই সরোবর গুলোর সৃষ্টি পৃথিবীর আদি কালেই হয়েছে বলে হিন্দু মানুষের বিশ্বাস। তর্ক করা নিষ্প্রয়োজন। এই সরোবর গুলো কোথায় কোথায় আছে? নারায়ণ সরোবরের স্থিতির কথা প্রথমেই বলা হয়েছে। মানস সরোবর, কৈলাস পর্বতের কাছে চীনের তিব্বতে, আর পুষ্কর, রাজস্থানের আজমিরের কাছে। এগুলো বেশ পরিচিত। বিন্দু সরোবর আমেদাবাদের থেকে ১০৫কিমি উত্তরে সিদ্ধপুরে। বলা হয় কপিল মুনি সাধনা করে এখানেই সিদ্ধি লাভ করেন। আর পম্পা সরোবর দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের কোপ্পল জেলায় বিখ্যাত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের হাম্পির কাছে। উৎসাহী পাঠক অবসরের মেঘে বিজয়নগর-রাজধানী হাম্পি (তৃতীয় অংশ) পড়ে নিতে পারেন।   
শ্রীমদ্‌ভাগবতে লেখা আছে যে নারায়ণ সরোবরের জলে বসেই পৃথু-পৌত্র ও বর্হিসের পুত্র প্রচেতা (বর্হিসের স্ত্রী, সমুদ্র-কন্যা স্বর্ণার দশ পুত্র হয়, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রচেতা নামে খ্যাত) পিতৃ-আজ্ঞা পালন করার জন্যে দশ সহস্র বছর রুদ্রগীতের জপ করে শ্রীহরিকে প্রসন্ন করেন এবং শ্রীহরির আশীর্বাদের ফলে এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। সেই পুত্রই কালক্রমে দক্ষ-প্রজাপতি নামে পরিচিত হন। জৈন ধর্মের প্রবর্তক, আদিনাথ বা ঋষভদেবও নাকি এখানেই তপস্যা করেছিলেন। মাসেডোনিয়ার আলেকজেন্ডার, দি গ্রেট নাকি তাঁর বর্ণনায় এই সরোবরের কথা লিখেছেন। তবে আমার সন্দেহ হয় যে এ কথা সত্য কি না। স্থানীয় মানুষ এখানে অনেক মুনি-ঋষির নাম করেন, যাঁরা নাকি এরই তীরে তপস্যা করেছেন বা এখানে তীর্থ ভ্রমণে এসেছিলেন। শিখ ধর্মের প্রবর্তক, গুরু নানক তাঁর মক্কা-মদিনা সফরকালে এই নারায়ণ সরোবরের তীরে কিছু দিন কাটিয়ে যান। তীর্থ ভ্রমণার্থীদের সেই তালিকার মধ্যে তাঁরা স্বামী বিবেকানন্দের নামও উল্লেখ করেন আর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকেন।

নারায়ণ সরোবরের তীরে লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির ছবিঃ সুজিত কুমার ঘোষ

এবার কোটেশ্বরের কথা কিছু বলি। কোটেশ্বর মহাদেব লিঙ্গ আকারে স্থাপিত হবার সম্পর্কে এক স্থানীয় গাথা শোনা যায়। এই কাহিনির সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের স্থাপনার কাহিনির বিশেষ মিল লক্ষ করা যায়। এই বার লিঙ্গ স্থাপনের কাহিনি বর্ণনা করি।

লঙ্কাপতি রাবণ নিজ তপস্যা বলে শিবকে তুষ্ট করেন। ফল স্বরূপ তাঁর প্রার্থনা শিব লিঙ্গ নিজের রাজত্বতে প্রতিষ্ঠা করার সম্মতি লাভ করেন। শিব লিঙ্গ সঙ্গে নিয়ে কৈলাস থেকে নিজ দেশে যেতে থাকেন। দেবতারা তা হতে দিতে চান না। তাই তাঁরা ছলের আশ্রয় নেন। কোনও এক দেবতা গাভীর রূপ নিয়ে কাদায় আটকে পড়ার নাটক করতে থাকেন। রাবণ লঙ্কায় ফেরার পথে তাই দেখে এক হাতে শিব লিঙ্গ ধরে রেখে অন্য হাতে গাভীকে কাদা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করে বিফল হন। তখন শিব লিঙ্গ মাটিতে রেখে দুই হাতে টেনে গাভী উদ্ধার করেন। এবার শিব লিঙ্গ তুলতে গিয়ে দেখেন অসংখ্য শিব লিঙ্গ সেখানে রয়েছে। বাধ্য হয়ে রাবণ মায়া শিব লিঙ্গ নিয়ে চলে যান আর আসল, কোটি শিব লিঙ্গের মধ্যে ওখানেই পড়ে থাকেন। সেই কোটি শিব লিঙ্গের কারণে ‘কোটেশ্বর’ নামে বিখ্যাত হয়েছেন। তবে আমার মত সাধারণ মানুষ এই শিব লিঙ্গ ছাড়া অন্যান্যগুলো দেখতে পায়নি বা কেউ পেয়ে থাকে কি না তাও শোনেনি।

আপনি যদি খোঁজ করতে চান যে এই কাহিনি কোন ধর্ম গ্রন্থে লেখা আছে, তবে আমি বলি সে চেষ্টা করবেন না, কেন না এ কোনও ধর্ম গ্রন্থে নেই, লোক-গাথাতেই এই কাহিনি আছে। তবে এটা নিশ্চিত যে এই শিব লিঙ্গ তথা মন্দির বেশ প্রাচীন, যদিও সাল-তারিখ দিয়ে এর প্রতিষ্ঠার বিষয় আমি কিছু খোঁজ পাইনি। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তাঁর ভারত ভ্রমণ কালে এখানে এসে এই মন্দির দেখেছিলেন বলে বর্ণনা করেছেন। তবে বর্তমান এই মন্দিরই এবং এই শিব লিঙ্গ নিশ্চয় দেখেননি। প্রাচীনত্বর এবং বলতে গেলে একেবারে আরব সাগরের কোরি ক্রিক-এর জলের ওপরেই এই মন্দিরের অবস্থানের কারণে অনেক বার ভূমিসাৎ (জল-সমাধি?) হয়েছে আবার কিছু কাল পর পরেই কোনও রাজার প্রচেষ্টায় নতুন করে গঠিতও হয়েছে। ভূমিকম্পও এই মন্দির কয়েক বার ধ্বংস করেছে। ১৮১৯ সালে আর এই শতাব্দীর প্রথমে ২৬ জানুয়ারি ২০০১ সালের প্রচণ্ড ভূমিকম্পে এই মন্দির ধ্বংস হয়। এখন যে মন্দির আবার নতুন করে গড়া হচ্ছে তা পুরানো মন্দিরের ওপরেই। নির্মীয়মাণ মন্দিরের কারুকার্য বেশ কম করা হচ্ছে। কারণ কি শিল্পীর, না পয়সার অভাব, কে জানে।

সরোবরের নামে স্থানের নাম। থাকবার জন্যে ঠিক মতো জায়গা একটাই, ‘শ্রী নারায়ণ সরোবর অন্নক্ষেত্র ও ভোজনালয়।’ সরোবর থেকে কয়েক মিনিট হাঁটা দূরত্বে তিনতলা বাড়ি। বিরাট ব্যবস্থা। স্নানঘর সংলগ্ন অনেক ঘর, বেশির ভাগই চার শয্যা বিশিষ্ট, ভাড়া ৭০ টাকা দিন প্রতি। অন্নক্ষেত্র, কাজেই ভোজন পাওয়া যায়, বিনামূল্যেই। তবে কর্তৃপক্ষ কিছু সাহায্যের আশা করেন। অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব, অবশ্য অন্নক্ষেত্রে এর অভাব নেই। অন্নক্ষেত্রের অফিস ঘরের সামনে কিছু দেব-দেবীর মূর্তির সঙ্গে স্বামীজীর পূর্ণাবয়ব দণ্ডায়মান বেশ সুন্দর মূর্তি রয়েছে ।

সরোবরে যাবার জন্যে ঘরে জিনিস-পত্র রেখেই বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে পৌঁছলাম প্রশস্ত এক চত্বরে, যার দুই দিকেই অনেকগুলি মন্দির। সরোবর কোথায় দেখতেই পেলাম না প্রথমে। কারণ মন্দির পরিসর আর সরোবরের মাঝে বেশ উঁচু, একেবারে দুর্গের দেয়ালের মতো বুরুজ সহ দেয়াল। সেই দেয়ালের নিচে দেখা গেল দেয়ালের তুলনায় অনেক  ছোট এক দরজা। তবে দরজার মাথায় গুজরাটি হরফে লেখা আছে ‘সরোবর,’ বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হলো না। দরজা দিয়ে অন্য দিকে বেরোতেই দেখি সামনে পাথরে বাঁধানো কয়কটি সিঁড়ি আর প্রস্থে কম কিন্তু দৈর্ঘ্যে বেশ বড় চাতাল সহ মাঝারি আকারের এক সরোবর। অপর পারে কিছু বাড়ি ঘর রয়েছে আর পূর্ব দিকে ঘাটের ধারে এক বিরাট অশ্বত্থ গাছ। পশ্চিম ধারে রয়েছে বেশ বড় এক বাড়ি। জনা কয়েক মহিলা ও পুরুষ ঘাটে স্নান করছেন।  আমাদের মধ্যেও কয়েকজন স্নান করে নিলেন তাড়াতাড়ি, কেন না কোটেশ্বর মন্দিরে গিয়ে পূজা দিতে হবে। দেয়ালের উত্তর পারে আমরা ফিরে গেলাম। আগেই বলেছি সেখানে কয়েকটা মন্দিরের কথা। এক দিকে একটাই মন্দির, ত্রিবিক্রমরাই-এর । আর অন্য দিকে অনেকগুলো মন্দির সার দিয়ে একই চত্বরে, একই ছাদের নিচে। পরস্পর ঘর, সামনে লম্বা ও ঢাকা বারান্দা সহ। বারান্দার মাঝে একটা মাত্র দরজা খোলা। আলাদা আলাদা ঘরে পরস্পর লক্ষ্মী-নারায়ণ, আদিনারায়ণ, গোবর্ধননাথ, রনছোড়জী আর লক্ষ্মীর মূর্তি। প্রত্যেকটি মূর্তি কালো পাথরের আর মোটামুটি এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতার। মূর্তিগুলির গঠনশৈলী গুজরাট, বিশেষ করে কচ্ছের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, প্রত্যেকটির শৈল্পিক গুণ অসাধারণ।

ত্রিবিক্রমরাই মন্দির - নারায়ণ সরোবর ছবিঃ সুজিত কুমার ঘোষ

ত্রিবিক্রমরাই মন্দির ১৭৩৪ সাল নাগাদ প্রথম দেশলজীরাও-এর রাজত্বকালে তাঁর মহারানি ও মহারাও লাখপতিজীর মাতা বাইরাজবা বাঘেলা তাঁর স্ত্রী-ধন ব্যয় করে গঠন করেছিলেন। এই মন্দিরগুলো গঠনের কারণ সম্পর্কে এক চিত্তাকর্ষক কাহিনি আছে। দ্বারকাধামের দ্বারিকাধিশ মন্দিরের প্রধান পুরোহিতকে ‘দেখিয়ে দেবার’ ব্যাপার এই কাহিনির সঙ্গে জড়িত।  মহারানি একবার দ্বারকার তীর্থ যাত্রা করে দ্বারিকাধীশ মন্দিরে দ্বারিকাধীশ দর্শন করার জন্যে পৌঁছান। গিয়ে দেখেন যে মন্দির দ্বার বন্ধ। মহারানি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রধান পুরোহিতকে মন্দিরদ্বার খোলার অনুরোধ পাঠান। প্রধান পুরোহিত বলেন, “এটা কচ্ছের রাজত্ব নয়, গায়কোয়ারের রাজত্ব। যদি নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে দেবতা দর্শন করতে চান, তাহলে কচ্ছে এইরকম মন্দির তৈরি করে নিন।” মহারানি দর্শন বিনা ফিরে আসেন আর এসে এই মন্দির গঠন করেন। অবশ্য দ্বারিকাধীশ মন্দিরের বিশালতা আর নির্মাণ-শৈলীর সঙ্গে এর তুলনাই করা যায় না। দুর্গ-প্রাকারের মত যে দেয়ালের কথা বলেছি, সেই প্রাকারের নির্মাণ মন্দিরের সঙ্গেই হয়েছিল। ত্রিবিক্রমরাই-এর মন্দির ছাড়া অন্যান্য মন্দিরগুলো সম্ভবত পরবর্তী কোনও সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

আশপাশে আরও কিছু মন্দির রয়েছে, তবে সে সব দেখা বাদ রেখে আমরা কোটেশ্বরের দিকে যাত্রা আরম্ভ করি। নারায়ণ সরোবর থেকে কোটেশ্বর পর্যন্ত রাস্তা বেশিটাই সমুদ্রের ওপর দিয়ে, তবে মুম্বাই বা রামেশ্বরমের মতো কোনও সেতু নেই। সমুদ্রের ওপরই মাটি ফেলে উঁচুতে রাস্তা করা হয়েছে। সমুদ্র এখানে অত্যন্ত অগভীর, অর্থাৎ এই অঞ্চলও কচ্ছের রানের অংশ। দু পাশের ভূমি অবশ্য লবণের চাদর গায়ে দিয়ে নেই, ঢেউ হীন সমুদ্রের জলই রয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেও। মাছ ধরার ছোট ছোট লঞ্চ জলে বাঁধা অর্থাৎ নোঙর করা রয়েছে দেখা যাচ্ছে।

কোটেশ্বর মন্দির ছবিঃ আশা অধিকারী

মন্দিরের পূর্ব দিকে ঠিক নিচেই আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়ালো। মাত্র ১৫মি. উঁচু ছোট টিলার ওপরে মন্দির। পরিষ্কার বোঝা যায় যে আগে নিশ্চয় মন্দির এলাকা দ্বীপ ছিল। খাড়ি বা যে জায়গাকে আমরা গ্রেট রান অব কচ্ছের অংশ বলছি, সেখানে মাটি ফেলে রাস্তা করে এই দ্বীপকে কচ্ছের প্রধান ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের পিছনে, অর্থাৎ পূর্ব দিকে পৌঁছলাম । পশ্চিমমুখী মন্দির। সামনে ছোট নাটমন্দির, তার পর গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের মাঝে কালো পাথরের শিব লিঙ্গ, মাত্র ৩০/৪০ সেমি. মতো উঁচু এবং প্রায় ততটাই ব্যাস-যুক্ত। তবে যোনিপট্ট বেশ বড় এবং অনেকটা লম্বা ও সাদা। গর্ভগৃহ মোটেই অন্ধকার নয় বিশেষ করে পশ্চিমমুখী হবার কারণে এবং তখন বিকাল হয়েছে বলে আলোর তীব্রতা ভালই, কেন না সূর্যের কিরণ শিব লিঙ্গকে আলোকিত করছে। নাট মন্দির ও গর্ভগৃহ বেশ পরিষ্কার। মন্দির নতুন করে নির্মিত হচ্ছে, চারিদিকে তার চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে। চতুষ্কোণ ছোট নাট মন্দির। সামনে বসা নন্দী, অত্যন্ত সুন্দর ও জীবন্ত। ঠিক তার সামনে মেঝেতে কাছিমের প্রতিকৃতি কালো পাথরের। সব শিব মন্দিরে না হলেও বেশির ভাগেই কাছিমের প্রতিকৃতি থাকে। মনে হয় কূর্ম অবতার রূপে বিষ্ণুর উপস্থিতি বোঝাতে। মন্দিরের সামনেই উঁচু পাঁচিল ঘেরা পাথরের চত্বর একেবারে সমুদ্রের জল থেকেই উঠেছে যদিও এখন ভাটার কারণে জল দূরে সরে গেছে। তবে বোঝা গেল যে জোয়ারের জল মন্দির চরণ স্পর্শ করে। এই মন্দিরের চত্বরের মধ্যেই, যেমন হয়ে থাকে সাধারণত, আরও কয়েকটি মন্দির আছে। ঠিক পাশেই আর এক শিব মন্দির, নাম কল্যাণেশ্বর।

চত্বর থেকেই দেখা গেল যে উত্তর দিকে ৯/১০মি. চওড়া ও প্রায় ২০০মি. লম্বা ভূমি সমুদ্রের মধ্যে প্রায় অর্ধচন্দ্রাকারে ঢুকে গেছে। হঠাৎ আমার মনে পড়লো ছোট বেলায় ভূগোলে পড়া ‘Spit’-এর কথা, ‘Small narrow point of land that extends into the sea।’ এতো দিন পরে সেই বই-এ পড়া ‘Spit’-এর উদাহরণ চোখে দেখলাম। তার পরই আবার মনে হলো যে এখানে সমুদ্র তো নিজেই ‘Narrow stretch of water flowing inland from a coast,’ অর্থাৎ ‘Creek’ বা খাড়ি। তা হলে কি ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে Spit-এর কিছু পরিবর্তন হবে? যাই হোক, আবার পুরানো কথায় ফিরে আসি। দিকচক্রবালের উত্তর দিকে অস্পষ্ট ভূমি রেখা দেখা যাচ্ছে। শুনলাম তার অল্প দূরেই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং কাছেই বন্দর শহর করাচি। রাতে নাকি ওখানকার আলো দেখা যায়। এককালে যখন মরুতীর্থ হিংলাজ যেতেন এদিককার তীর্থযাত্রীরা, এই কোটেশ্বরের ওপর দিয়েই পথ ছিল (গুরু নানকের কথা আগেই বলেছি)। এখন ওখানে যাওয়াই প্রায় বন্ধ আর গেলেও ওয়াঘা ইত্যাদি কয়েকটা যায়গা দিয়েই সীমা পার হতে হয় স্থল পথে যেতে গেলে। এখানে প্রচলিত যে হিংলাজ তীর্থ সফল বা পূর্ণ হয় না যদি না তার পর কোটেশ্বর দর্শন করা হয়।

কোরি ক্রিক থেকে সূর্যাস্ত ছবিঃ সুজিত কুমার ঘোষ

সূর্যাস্তের সময় হয়ে আসছিল। আমরা ঠিক করলাম যে স্পিট থেকে সেই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করব। চলে এলাম সেখানে। এদিক থেকে কোটেশ্বর মহাদেব মন্দির সুন্দর দৃশ্যমান । স্পিটের মাঝামাঝি নতুন এক কমলা রং-এর ছোট মন্দির গড়া হয়েছে । মন্দিরে উঠে দেখলাম এক বোর্ডে লেখা রয়েছে যে সেখানে এক প্রাচীন মন্দির ছিল, গত ভূমিকম্পে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই স্থানের ওপরেই সেনাবিভাগ এই মন্দির গড়েছে। মন্দিরের সামনেই ছোট এক বাঁধানো কুণ্ড রয়েছে এবং এর পাড়ে রাবণের মূর্তি, কাদায় আটকে পড়া গাভী উদ্ধারে রত। স্পিটের দুধারেই ভাঁটার জল আপাতত কিছুটা দূরে তাই বেশ বড় বড় পাথরের বৌল্ডার পড়ে আছে নিচে তা দেখা যাচ্ছে। আর তার মধ্যে অনেক গুলো ছোট বড় ভাঙ্গা ও আস্ত মূর্তি পড়ে আছে। নিশ্চয় সেগুলো বিধ্বস্ত প্রাচীন মন্দিরে ছিল। বেশি নিচে নয় আর পাশ দিয়ে সেই জায়গাটায় পৌঁছানো যায়। তাই আমার স্ত্রী আর আমি নিচে নেমে গিয়ে কয়েকটা মূর্তি কাছ থেকে দেখে এলাম।

অনেক বছর ভ্রমণ করছি। অনেক দূর-দূর এবং সাধারণ ভাবে অগম্য স্থানেও গিয়েছি। তেমন জায়গায় যদি নিজ ভাষাভাষী স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়, অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে মনে। মনে থেকে যায় তেমন ঘটনা। কিছু কিছু  ঘটনা আবার বিস্মৃতির অতলে তলিয়েও যায়। কোটেশ্বর মন্দিরের টিলায় ওঠবার মুখে প্রায় সব মন্দিরের সামনে যেমন থাকে, পূজা দেবার জন্য ফুল-বেল পাতা, ধূপ ইত্যাদির দোকান এখানেও রয়েছে। যে কোনও মন্দিরের সামনে এমন দোকানের সঙ্গে ইদানিং স্থানীয় সিডি, ডিভিডি, স্থানমাহাত্ম্য বর্ণনা করা বই ইত্যাদির দোকানও দেখা যায়। দোকানের সংখ্যা যাত্রীর সমানুপাতেই হয়ে থাকে। যাত্রী এখানে কম কাজেই এমন দোকানের সংখ্যাও কম। আমাদের মধ্যে অনেকেই পূজার ফুল সংগ্রহে ব্যস্ত, আর আমি ও আরও কয়েক জন ব্যস্ত ডিভিডি ও বই দেখতে। যার কাছ থেকে আমি বই দেখছি সে আমাকে বলল, ‘এই বইটা ভাল, এটাই নিন।’ বলল হিন্দিতে নয় একেবারে পশ্চিম বঙ্গীয় টানে বাংলায়। চমকে গেলাম। ক্রমশ পরিচয় হলো। জানলাম নাম, শঙ্কর ব্যান্যার্জী। এখানে প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল এই ব্যবসা করছেন। এখন বয়স প্রায় ৩০। বাবা এই অঞ্চলেই বিএসএফ-এ কাজ করতেন। অবসর নেবার পর সংসার নিয়ে দেশে, বশিরহাটে ফিরে গেছেন। ছোট ছেলের স্কুলে পড়া ভাল লাগতো না। তাই সুযোগ পেয়ে পড়ার পাট অসম্পূর্ণ রেখে বাবার কাছে এসে এই ব্যবসা আরম্ভ করেছিল। ভালই চলছিল, কাজেই বাবা-মার হাত ধরে বাড়ি ফিরে যায়নি। মাসে হাজার বিশেক হয়ে যায়, বিশেষ বিশেষ মাসের রোজগার অনেক গুণ হয়। খরচ বেশি নয়। বছর দুয়েক আগে দেশে গিয়ে কিশোর বয়সের ভালবাসার পাত্রীকে জীবন সঙ্গিনী করে নিয়ে এসেছে। এত কথা তো আর ওইখানে দাঁড়িয়ে হয়নি। কথায় কথায় আমাদের রাত্রিবাসের স্থানের কথা জেনে নেয় আর বলে যে তার নিজের বাড়ি অন্নক্ষেত্রর কাছেই। তার বাড়িতে আমাদের রাত্রের আহারের জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ করে। শঙ্করবাবুর আন্তরিকতা দেখে আমরা বাধ্য হই সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে।

শঙ্করবাবুর কথা মতো অন্নক্ষেত্র থেকে আমাদের ডেকে নিয়ে নিজের বাড়ি নিয়ে গেলেন। মন্দিরের কাছ থেকেই উনি তাঁর স্ত্রী সমাপ্তিকে এক দল অচেনা মানুষদের মাছ-ভাতে আপ্যায়ন করার কথা শুধু জানিয়েই দেননি, পর্যাপ্ত সংখ্যায় তোপসে মাছ ও তার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক সামগ্রী কিনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজেই আমাদের আলু-পোস্ত ও তোপসে মাছ ভাজা দিয়ে ডাল-ভাত খেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আমি ওরই মাঝে সমাপ্তির কাছে জেনে নিয়েছিলাম যে বাড়ি থেকে এত দূরে সম্পূর্ণ অচেনা ও বাঙালিবিহীন জায়গায় ওর আসতে কোনও দ্বিধা বা ভয় হয়েছিল কি না। মাত্র বছর ২২-এর এই সুশ্রী কন্যার উত্তর শুনে আমি চমকিত হয়ে যাই, ‘আগে থেকেই কিছু জানা ছিল, এখানে এসে এই অপার শান্তি, এতটা আমি ভাবতেই পারিনি।’ অন্নক্ষেত্রে ফেরার পথে আমি আমাদের মধ্যে এক বয়োজ্যেষ্ঠার হাত দিয়ে আমাদের মেয়েকে মিষ্টি খেতে দিচ্ছি বলে কিছু অর্থ জোর করে গ্রহণ করতে বাধ্য করলাম।

জানি না পাঠক আমার এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা কেমন ভাবে নেবেন। আমার মনে শঙ্কর-সমাপ্তির মানসিক প্রসারতা অভূতপূর্ব লেগেছে তাই তাদের কথা জানাবার চেষ্টা করলাম। অবশ্য কেই বা পড়ে এই দেশীয় ভ্রমণের বর্ণনা। লিখে নিজেরই আনন্দ, তাই লেখা। 

 

(৩)


ফেব্রুয়ারি ২১ সকালে আবার পূর্ব দিকে ফেরার পথ ধরার কথা। কিন্তু ইচ্ছে হলো কিছুটা অন্য পথে গিয়ে ‘নারায়ণ সরোবর অয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি’ দেখে ‘মান্ডভি’-র পথ ধরবো (কচ্ছের মান-চিত্র দেখার অনুরোধ করি)। কিরীটভাই জানালও যে সে এই স্যাঙ্কচুয়ারির পথ জানেন না। আমিই নারায়ণ সরোবরে স্থানীয় লোকেদের কাছে এর খোঁজ নেবার চেষ্টা করে সৌভাগ্যবশত স্যাঙ্কচুয়ারির এক কর্মচারীর দেখা পেয়ে গেলাম। তিনি ওই স্যাঙ্কচুয়ারিরই আর এক কর্মচারীকে আমাদের পথপ্রদর্শন করতে বলে দিলেন। আমাদের গাড়িতে তাঁকে তুলে নেওয়া হলো। তাঁর পরিচালনায় আমাদের গাড়ি নারায়ণ সরোবর থেকে সকাল ৮:৪৫ মিনিটে ছেড়ে কিছুক্ষণ পরে প্রধান রাস্তা থেকে স্যাঙ্কচুয়ারির মাটির রাস্তায় উঠলাম। বাবলা গাছের মোটামুটি গভীর জঙ্গল হলেও মাঝে মাঝে ফাঁকা মাঠ দেখা যাচ্ছিল। শুনেছিলাম যে এই জঙ্গলে ‘ব্লাক-বাক্‌’ নামে হরিণের এক প্রজাতি দেখা যায়, তবে মনে হলো বেলা বেড়ে যাবার কারণে চারণরত বিরাট বিরাট গরুর দল ছাড়া আমাদের প্রায় ৪৫ মিনিট সফরের মাঝে আর কোনও পশু দেখতে পেলাম না। অবশ্য এক মাঠের ওপর দিয়ে একঝাঁক অচেনা পাখি উড়ে যেতে দেখেছিলাম। স্যাঙ্কচুয়ারি থেকে বেরোবার পর কিছু দূর পর্যন্ত পাকা রাস্তা দিয়ে এলাম। সেই রাস্তা যেখানে রাজ্য-সড়কের সঙ্গে মিশছে, সেখানে বেশ বড় এক জলাভূমি রয়েছে, হয়ত বা এটা কচ্ছের রণেরই অংশ। সেই জলায় বিরাট এক ঝাঁক ফ্লেমিঙ্গো পায়ে পা ঠেকিয়ে বসে থাকতে দেখলাম। অনেক দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন নীল সমতল ভূমিতে সাদা চাদর বিছানো রয়েছে। আমরা কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে জলের ধারে গেলাম। কিছু কাছে পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গেই সম্পূর্ণ ঝাঁক এক সঙ্গে উড়লো না, কয়েক সেকেণ্ড অন্তরে ঝাঁকের এক এক অংশ আকাশে বিরাট বিরাট ডানা মেলে দূরে অদৃশ্য হয়ে গেল। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে আমারা নির্নিমেষ নয়নে তাদের অদৃশ্য হবার আকাশ পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এই সুযোগে বলি, যে কচ্ছের আর এক বৈশিষ্ট্য, ঘুদকর বা বুনো গাধা দেখতে পায়নি। তবে তাদের এদিকে পাওয়ার কথাও নয়। তাদের প্রধানত ভুজের পূর্ব দিকে লিট্‌ল রাণ অব কচ্ছে পাওয়া যায়।  

রাজ্য সড়কের ওপর নারায়ণ সরোবর থেকে প্রায় ৭২কিমি. দূরে নালিয়া । সেখানে থেকে পথ ক্রমশ আরব সাগরের কচ্ছ-উপসাগরের দিকে গিয়ে প্রায় ৮০কিমি. দূরে মাণ্ডভির Wind Farm Sea Beach-এ পৌঁছে পৌঁছলাম। সারাটা পথের ধারে বাবলা গাছ রয়েছে অবশ্য সমুদ্রের কাছা-কাছি হবার কারণে কিছু নারকেল গাছও দেখলাম। মাণ্ডভির কাছে বাবলা গাছের সার কে সরিয়ে দিয়ে অন্যান্য গাছ জায়গা করে নিয়েছে।

এই সমুদ্র-তটের ধারে অসংখ্য wind-mill বসানো হয়েছে ১৯৮১ সালে। সেই কারণে তটের নাম এমন হয়ে গেছে। শতাব্দীর প্রথম ভূমিকম্পের পর এখানে এক লাইট-হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের এক সহযাত্রিণীর দাদা এই লাইট-হাউসে কাজ করেন। ছোট বোনের কাছেই উপস্থিতির কথা শুনে ছুটে আসলেন দেখা করতে। আমরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে আর অনেক দিন পরে ভাই-বোনের কাছাকাছি হবার সুন্দর ও সেন্টিমেন্টাল দৃশ্য দেখে খুবই আনন্দ উপভোগ করলাম। তট সুন্দর করার চেষ্টায় বেশ কিছু গাছ লাগানো হয়েছে, কিন্তু দেখলাম প্রত্যেকটি গাছই শুকিয়ে গেছে। জলের অভাব বলে মনে হলো না। মনে হয় গাছ গুলো তুলে আনার পদ্ধতি এবং স্থানীয় না হবার কারণেই এই অবস্থা। বেলাভূমি বেশ চওড়া, সমুদ্রে ঢেউ ছোট আকারের এবং মনে হল গভীর নয়। সমুদ্র স্নানের উপযুক্ত। তবে দুপুর বলে বেশি মানুষ নেই বেলাভূমিতে এবং কাউকেই স্নানরত দেখলাম না। পিঠে কৌচের আকারে দুজন করে বসা যায়, এমন ব্যবস্থা সহ কয়েকটা উঠ নিয়ে চালকেরা অপেক্ষা করছে সোয়ারির জন্যে। এত রোদ কে আর ঘুরবে এখন ।  বেলা-ভূমির পাশ দিয়েই সুন্দর রাস্তা।
এক জায়গায় রাস্তার পাশেই সমুদ্রের জল খাড়ির মতো চলে এসেছে। সেই খাড়িতেই সার দিয়ে কাঠের অসংখ্য ছোট বড় জাহাজ তৈরি হচ্ছে দেখতে পেলাম । এদিকে যদি না আসতাম রেস্তোঁরার খোঁজে তা হলে  শুধু দেখা কেন, জানতেই পারতাম না এমন কিছু হয়।

জাহাজ নির্মাণ - মাণ্ডভি ছবিঃ আশা অধিকারী

জাহাজ তৈরির প্রসঙ্গে মাণ্ডভি শহরের সম্পর্কে কিছু তথ্য পর্যালোচনা করা উচিত হবে। আনুষ্ঠানিকরূপে মাণ্ডভি শহরের পত্তন ১৫৮১ সালে কচ্ছের প্রথম যাদেজা রাজা, রাও খেঙার্জি দ্বারা হলেও নিশ্চিত রূপেই অনেক আগে থেকেই এখানে মানুষের বাস ছিল। তখনকার দিনে মশলা চলাচলের পথ এর ওপর দিয়ে তৈরি হয়। এখানকার ব্যবসায়ীরা সেই পথের সুবাদে বিখ্যাত হয়ে যান এবং ইউরোপিয়ান ছাড়া একমাত্র দেশীয় ব্যবসায়ী হিসাবে সমুদ্র পথে দেশের অন্যান্য জায়গা ছাড়া পারস্য, পূর্ব আফ্রিকা ইত্যাদি দেশের সঙ্গে ব্যবসায়ে লিপ্ত থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে কচ্ছীদের এই সামুদ্রিক পথে পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা ইত্যাদি দেশের সঙ্গে ব্যবসার সমান্তরাল ভাবে কচ্ছের উত্তর দিকের দেশের অর্থাৎ সিন্ধ, পাঞ্জাব ইত্যাদি স্থানের ব্যবসায়ীরা স্থলপথে পশ্চিম এশিয়া ও এমনকি রাশিয়ার সঙ্গেও ব্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন একই সময়ে (Caravans: Indian Merchants on the Silk Road, Scott C. Levi, Penguin, 2015)। আবার ফিরে আসি মাণ্ডভির প্রসঙ্গে। এখনকার সঙ্গে তখনকার দিনে আমদানির থেকে রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, অর্থাৎ এখানে মূল্য হিসাবে সোনা-রূপার আমদানি হতো। স্বাভাবিক, মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালই থাকতে বাধ্য। যান্ত্রিক বা বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহারের পূর্বে এখানে সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের শিল্প উৎকর্ষ লাভ করে। এখনও যে সেই শিল্প চালু আছে তা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। তবে নিশ্চয় এই সমস্ত জাহাজ দাঁড় টেনে সমুদ্রে ঘোরানও হয় না।

ভোজনের পর মাণ্ডভির এখনকার দিনের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান কচ্ছের ‘মহারাজধিরাজ মির্জা মহারাও শ্রী খেঙার্জী সওয়াই বাহাদুর’-এর নামে প্রাসাদ, “বিজয় বিলাস প্যালেস” দেখতে গেলাম। মাত্র ১৯২০ সালে এই প্রাসাদ সমুদ্রের তীরে রাজপুত স্থাপত্য শৈলীতে ইউরোপিয়ানদের বসত বাড়ির সুবিধাযুক্ত ব্যবস্থাপনা সহ সেই সময়কার মহারাও, অর্থাৎ মহারাজ, বিজয়রাজজী দ্বারা নির্মিত হয়েছে শহর এলাকা থেকে ৭কিমি. দক্ষিণে সমুদ্রের ধারে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে কচ্ছের অনেক প্রাসাদই ইউরোপের কোনও শৈলীতে গঠিত না হলেও ব্যবস্থাপনায় সেখানকার প্রভাব লক্ষ করা যায়। ভুজের প্রাগমহলের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ হয়নি, তাই সেখানকার ব্যবস্থাপনার কথা অবশ্য বলতে পারছি না। এর কারণ খুবই স্বাভাবিক। একটু আগেই আমি উল্লেখ করেছি যে প্রাচীন কাল থেকেই কচ্ছীদের সঙ্গে পশ্চিমের সংযোগ গড়ে উঠেছিল এনাদের সমুদ্র-পথে ব্যবসায়ের দৌলতে।

বিরাট এলাকা জুড়ে ফোয়ারা, ফুলের কেয়ারি ইত্যাদি যুক্ত বাগান এবং নিজেদের জন্যে সমুদ্র-বেলা (Private sea-beach) এই প্যালেসের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য এখন আধুনিক রাজারা রাজসিক মূল্যের বিনিময়ে এখানে কয়েকদিন হাস্য-লাস্যে কাটিয়ে যেতে পারেন। বেশ কিছু সিনেমার শুটিং এখানে হয়েছে, যার মধ্যে ‘লাগান’ উল্লেখযোগ্য। 

প্যালেস দর্শন করার জন্যে ওই সময়ে ২৫টাকা দর্শনী ছিল জন প্রতি। ক্যামেরার গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে টিকিটের মূল্য। হয়তো সকলকার এই কথা ভলো লাগবে না, তাহলেও বলি আমার এই ধরণের ব্যক্তিগত বিলাসিতার প্রদর্শন করে যে বাড়ি বা বস্তু, যা প্রধানত প্রজাদের শোষণ করা ধনের দ্বারা নির্মিত, দেখতে কেমন যেন বিতৃষ্ণা বা nauseating লাগে, তা যতই অপরূপ হোক না কেন।

পরদিন গান্ধিধামের হোটেল থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে উত্তর দিকে গ্রেট রান অব কচ্ছে খাদির দ্বীপে স্থিত ধোলাভিরার উদ্দেশে রওনা হলাম। সে আর এক কাহিনি। ‘অবসর’-এর মেঘেই তার বর্ণনা করেছি অনেক পক্ষ আগে।


লেখক পরিচিত - শিক্ষাবিদ। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন বহু বছর। নেশা হচ্ছে ভ্রমণ। অবসর-এর একজন নিয়মিত লেখক।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।