প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিদেশী লেখক

এপ্রিল ১৫, ২০১৬

 

সিলভিয়া প্লাথ : জীবন ও ভাবনা

ঈশানী রায়চৌধুরী

 

মানুষকে সবচেয়ে বেশি চেনা যায় কী থেকে? আমার মনে হয়, তার ডায়রি পড়লে; অবশ্য যদি তা প্রকাশ্যে আসে। কারণ ডায়রি মানে স্বগতকথন। একান্ত গোপন আর নিজস্ব ভাবনা আর ইচ্ছের আলোছায়ার প্রতিফলন। আমরা সে নিজে না চাইলে তার নিজের সঙ্গে নিজের কথায় আড়ি পাততে পারি না। কিন্তু যখন সেই লেখা দিনের আলোয় আসে, তখন তা সবার। সেরকম কিছু ভাবনাকুটো ভাগ করে নেব এখানে। ভাষান্তরে। সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সমেত।

সিলভিয়া প্লাথ। অক্টোবর ২৭, ১৯৩২ -- ফেব্রুয়ারী ১১, ১৯৬৩

এত অল্পদিন? এত হেলাফেলার জীবন? এভাবে নষ্ট করে ফেলা? সিলভিয়া প্রতিভাময়ী, সিলভিয়া কবি, সিলভিয়া ঔপন্যাসিক, সিলভিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। সিলভিয়া বলেছিলেন,

" কখনো পারব কি, এই যে এত বই; সব পড়ে শেষ করতে ? ইচ্ছে তো খুব, একার মধ্যে বহু হয়ে থাকার; জীবন কাটাব যখন যেভাবে খুশি। সাধ হয় সবকিছুতে পটু হতে, সাধ্য নেই। বাঁচতে ইচ্ছে করে সব রং, আলো, ছায়া, রস, রূপ, সুরভি নিয়ে। যত রকম মানসিক আর শারীরিক অস্তিত্ব সম্ভব। সবটুকু শুষে নিয়ে যেন সোচ্চারে বাঁচি। কিন্তু আমার যে কী নিদারুণ সীমাবদ্ধতা!"

তাই কি সব আলো ছাপিয়ে হতাশার কৃষ্ণছায়া? মাত্র ৩০ পেরোতে না পেরোতেই আত্মহনন? সিলভিয়ার কবিতা confessional poetry -র ধারক। তাঁর দুটি বিখ্যাত কবিতা সংকলন হল " The Colossus and other poems " আর "Ariel "।

১৯৮২ তে মরণোত্তর পুলিৎজার পুরস্কার। একটি আধা - আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস "The Bell Jar "। মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতৃহীন সিলভিয়া। এবং ঈশ্বরে আর বিশ্বাস করতে পারেননি। বাবার সমাধি দেখে ফিরে এসে সিলভিয়া লিখেছিলেন " Electra on Azalea Plath "। পরে প্লাথ লিখেছিলেন, তাঁর জন্মের পর প্রথম ৯ বছর

" যেন ওই স্বচ্ছ কাচের বোতলে বন্দী জাহাজের মতো। সুন্দর, ধরাছোঁয়ার বাইরে, বস্তাপচা। নজরকাড়া , সাদা এক দুরন্ত পুরাণকথা।"

স্কুলের পাট চুকিয়ে স্মিথ কলেজ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে স্নাতক। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কেমব্রিজের নিউনহ্যাম কলেজ। কবিতা আসে। বন্যার মতো। ১৯৫৬ সালে সিলভিয়া বিয়ে করেন কবি টেড হিউজেসকে। দু'টি ফুটফুটে ছেলেমেয়ে। ফ্রিডা আর নিকোলাস। কিন্তু হতাশা? সে তো সর্বক্ষণের সাথী। লেখা চলছে, লেখা চলছে। অক্টোবর ১৯৬২। কবিতা লিখছেন প্লাথ। একের পর এক। ইতিমধ্যে মন ভেঙে গেছে। স্বামী চলে গেছেন অন্য নারীর সঙ্গে। স্মিথ কলেজের মেধাবী ছাত্রী সিলভিয়া মাকে লিখেছিলেন,

“সারা পৃথিবী আমার পায়ের নীচে। ফেটে চৌচির। যেন পাকা রসালো তরমুজের লালিমা।”

কিন্তু চলার পথ আর সুগম হল কই? হতাশা এবং আত্মহত্যার চেষ্টা। ১৯৫৩-র অগাস্ট। একগাদা ঘুমের ওষুধ। তিন দিন ওভাবেই পড়ে থাকা। কিন্তু মৃত্যু আসেনি। এই প্রসঙ্গে লিখেছিলেন,

" আমি নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করলাম আমার চারপাশের এই অন্ধকারের ঘূর্ণির কাছে; যাকে ভেবেছিলাম এক চিরন্তন বিস্মৃতি মাত্র।”

পরের ছ'মাস মানসিক হাসপাতালে। আবার পড়াশুনোর জগতে ফেরা। ফ্রিডার বয়স দুই, নিকোলাস ন’ মাসের। কী ভীষণ ঠাণ্ডা লণ্ডনে। জল জমে বরফ, বাড়িতে দূরভাষ নেই। প্লাথ লিখছেন উপন্যাস " The Bell Jar"। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? Anti -depressant -এর ওপর বেঁচে থাকা। রোজ ডাক্তার এসে দেখে যান। তারপর একদিন। প্লাথের মাথা গ্যাসচুল্লিতে ঢোকানো, গ্যাসের নব খোলা, কার্বন মনোক্সাইডের তীব্র বিষক্রিয়ায় মৃত্যু। আর বাচ্চারা? অন্য ঘরে। নিরাপদে। প্লাথের চোখের পাতা কি কেঁপেছিল একটুও?

প্লাথের লেখায় বারবার এসেছে নানা চিত্রকল্প। এসেছে চাঁদ, রক্ত, হাসপাতালের গন্ধ, ভ্রূণ, করোটি। প্লাথের কবিতায় ডিলান টমাস, ইয়েটস, আর মারিয়ান মুরের প্রত্যক্ষ প্রভাব। ১৯৬০ -এর পর কবিতায় surrealistic নিসর্গচিত্র। সঙ্গে বন্দীদশার অব্যক্ত যন্ত্রণা আর মৃত্যুর নি:শব্দ পদসঞ্চার। প্লাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলভারেজ লিখেছিলেন,

"প্লাথের জীবন আরোই জটিল এই কারণে, যে, প্লাথ যখন পরিণতমনস্কতায়ও লিখছেন, তখন তিনি সচেতনভাবে নিজের সৃষ্টির মধ্যে নিয়ে আসছেন রোজের জীবনযাপনে নিত্যব্যবহার্য যত খুঁটিনাটি। যেমন, হঠাৎ করে আসা অতিথি, আচমকা টেলিফোন, অপ্রত্যাশিত শারীরিক আঘাত, কাটাছেঁড়া, কালশিটে কিংবা হয়ত একটা রান্নাঘরের সানকি, মোমদানি। সব কিছুই কেমন অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর লেখায়, অর্থবহ হয়ে, রূপান্তরিত অস্তিত্ব নিয়ে। তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে এমন সব প্রসঙ্গ বা চিত্রকল্প, যা সেই মুহূর্তে হৃদয়ঙ্গম করা না গেলেও কোনো বুদ্ধিমান মানুষ যিনি সিলভিয়ার অস্থির জীবনযাপনের খোঁজ রেখেছেন, তিনি ঠিক কবিতার শেষে পাদটীকা হিসেবে এই কবিতার আশ্রিত বিষয়ের ওপর চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম।”

সিলভিয়ার ডায়রির ছেঁড়া পাতা ................

আর তুমি যখন শেষ পর্যন্ত একজনকে খুঁজে পেলে, যার কাছে নিজের আত্মাকে বিকিয়ে দেওয়া যায় .....তখন সেই ভালোবাসার উচ্চারণে দেখবে শব্দরা কত জং ধরা, কুশ্রী, অবান্তর আর অর্থহীন। কারণ এতদিন যে ওরা ছিল নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে, অব্যক্ত।
কেউ কি আছ কোথাও, যে আমাকে একটুও বুঝতে পারো, একটুও ভালোবাসো?
আমি তো অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তোমার মোহে। এখনও তো! এই যে আমার শরীরে এত সোরগোল ; এমনটি আর তুলতেই পারেনি অন্য কেউ! তবু তোমায় আমি ছেঁটে ফেলেছি। কেন জানো? আমি যে তোমার কাছে ছিলাম শুধুই মুহূর্তসুখের খেলনা হয়ে। আমার শরীর? সে তুচ্ছ। আর আমার চিন্তন, আমার মনন, আমার স্বপ্ন? তুমি যে সেগুলোর কাছে পৌঁছতেই চাওনি কখনো!
আমি কাউকেই এমন পাইনি, যে আমার সোচ্চার ভালোবাসা আর তার দেখনদারি রূপটিও অক্লেশে গ্রহণ করে ঠিক একই তীব্রতায় আমাকেও তা প্রতিনিয়তই ফিরিয়ে দেবে!
আমি ভালোবাসি। প্রত্যেককেই। ঠিক যেমনভাবে ডাকটিকিট জমায় যে ...তার কী মায়া সব ক'টি ডাকটিকিটের ওপর ! তেমনই সব খুঁটিনাটি গল্প, ঘটনা, কথোপকথন আমার ভাবনার আর লেখার রসদ। নিজেকে দেখি নানা চেহারায়। বিকলাঙ্গ, মৃত্যুপথযাত্রী, বেশ্যা। তারপর ফিরে আসি আবার। নিজের শরীরের কুঠুরিতে। সেই আবেগের আনাগোনার যত কথকতা।
না না। মিথ্যে কথা। ভালোবাসি না আমি কাউকেই। নিজেকে ছাড়া কাউকে না। আমার এই ছোটখাটো সাদামাটা চেহারা, অপুষ্ট স্তন, ছিটেফোঁটা বুদ্ধি এই নিয়েই আছি বেশ! এর বেশি কিছুই তো নেই আমার। আমি তাই তাদেরকেই ভালোবাসতে ভালোবাসি, যারা আমার নিজস্ব জগতের ছায়ামুখ।
শুধু চাই আর চাই। অন্য কোনো মনকে চাই আশ্রয় হিসেবে, অন্য কোনো শরীর চাই নিজেকে উষ্ণ রাখতে, অশনে, ব্যসনে, ঘুমে, নির্ঘুমে অন্য কাউকে চাই। নিজেকে হেলান দিয়ে যাতে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। চাই সুস্থিতি, নির্ভরতা, বিশ্বাসের জায়গা। এমনকি মনের কথা উজাড় করে শোনানোর জন্যও অন্য কাউকে চাই।
আমার মস্তিষ্ক? সে তো এক উজ্জ্বল আলোর উৎসমাত্র। আমার চাই এমন এক প্রতিফলক, যা বাঙ্ময়। আমার লেখা তো তাই!
জানি তো! এখন জানি, নি:সঙ্গতা কী! মুহূর্তের মধ্যে একাকীত্ব উঠে আসে একেবারে মনের অন্ত:স্থল থেকে। এ এক রক্তের অসুখ। ছড়িয়ে যায় হু হু করে শরীর জুড়ে। খুঁজেই পাই না। কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়।সংক্রমণের কেন্দ্রটি ঠিক কোথায়!
একা একা নির্জন রাতে চাঁদের আলোয় হেঁটে যাই। ঝিমঝিমে ছায়া ছায়া আলো। পথবাতিরাও হাতে হাত। মঞ্চে একা আমি কুশীলব। নি:সঙ্গ সম্রাজ্ঞী। কেউ কি শোনে স্বগত সংলাপ? কথা বলি জোরে, মৃদু স্বরে। নিস্তব্ধতায় ঝংকার তোলে, বেজে যায় আমার এই মধ্যরাতের প্রলাপ।
আমার ভয় করে। খুব ভয় করে। আমি তো নিশ্ছিদ্র নই। নেহাত ফাঁপা। আমার দু'চোখের পেছনে এক অন্ধকারগহ্বর। সে এক বিচিত্র রৌরব। দাঁত বের করে বিদ্রূপ করা অসীম অন্ধকারময় শূন্যতা। আমি ঠিকঠাক ভাবতে পারিনি, বলতে পারিনি, লিখতে পারিনি ...যন্ত্রণার আগুনে পোড়াতেও পারিনি নিজেকে।
শেষ করে ফেলা নিজেকে এইবার। দায়িত্ব সর্বনাশা। দায়িত্ব ভয়াল রাক্ষস। আমি ফিরে যাব মাতৃগর্ভের ওই নিশ্চিন্ত নিরাপদ অন্ধকার তরলে। থেকে যাব ভাসমান আনন্দিত অস্তিত্ব হয়ে।

অস্থিরমনা যুবতী সিলভিয়া প্লাথ। একটি কবিতার নমুনা এখানে থাক। আমার অপটু প্রয়াসে। ভাষান্তরে।

এই ওড়নার আড়ালে ঠিক কী আছে ? কুশ্রীতা ? নাকি খুব সুন্দর কিছু ?
ঝিকমিক ঝিকমিক | স্তন আছে ? শরীরী বিভঙ্গ ?

আমি জানি , একেবারে অন্যরকম কিছু | আর এও জানি , এই আমি চাই |
যখন আমি রান্নাঘরে , আমার পিঠে বিঁধতে থাকে দুটো চোখ | আমায় পুড়িয়ে দেয় ওর অনুভবের উত্তাপে |


আমি নিজেও কি এই ? এই চেনা মুখ ?
সেই এক নির্বাচন , চোখের নীচে তমিস্রা , শুকনো ক্ষতের দাগ ?

ময়দা মাপছি পেয়ালায় , ঝড়তিপড়তি যা কিছু...বাতিল |
নিয়ম মানো আর নিয়ম মানো ...শুধু নিয়ম মেনে যাও..

এটাই কি দৈবাদেশ ?
হে ঈশ্বর ! ভাবলেও হাসি পায় !

কিন্তু তবু দেখো..ঝিকমিক ঝিকমিক..থামেও না ..আমাকে চাইছে খুব !
কী জানি..স্রেফ ফ্যাকাশে সাদা হাড় , কিংবা মুক্তোর বোতাম !

এবার উপহারে মন নেই আমার | অন্তত এই বছরে |
আর এই যে..বেঁচে আছি..নিছক দুর্ঘটনা !

সেই সময় খুশিমনে নিজেকে শেষ করে দিতে পারতাম | যে কোনো উপায়ে |
এখন তো চারপাশে শুধু ওড়না আর ওড়না | পর্দা হয়ে দোলে | ঝিকমিক ঝিকমিক |
স্বচ্ছ চিকন রেশমী শার্সি , জানুয়ারী মাস , শীতের জানালায়
এত সাদা , এত সাদা ! ঠিক যেন শিশুর শয্যাটি | উজ্জ্বল বিভায় আর মৃত্যুর নি:শ্বাসে |
ইস, ঠিক যেন হাতির দাঁতের মতো !

নির্ঘাৎ হাতিরই দাঁত ওটা, নাকি ভূতুড়ে স্তম্ভ ?
তুমি দেখতে পাও না ? একেবারেই ? অবশ্য তাতে আমি কিছুই মনে করি না ..

আমাকে দিতে পারো না ? ওটা ?
লজ্জা কিসের ? ছোট উপহার ? আমি কিচ্ছুটি মনে করব না ! দেখো !

সত্যি বড় কৃপণ তুমি ! আমার যে প্রস্তুতি অন্তহীন ..
এস, আমরা না হয় পাশাপাশি . কিংবা দু’জন দু'পাশে..এই দীপ্তিকে জড়িয়ে নিয়ে সাথে...

ঝাঁ চকচকে , ঠিক যেন আয়নার মতো
এস, শেষ সায়মাশ হোক আমাদের | হাসপাতালের রোগশয্যায় যেমন..

জানি , তুমি কেন আমায় দিতে চাও না !
তুমি আসলে ভয় পাও..

সারা পৃথিবী সোচ্চার হবে , তোমার মাথা কাটা যাবে
 ... কত কারিকুরি, পিতলের নকশাকাটা ..পুরনো বস্তাপচা বর্ম !

তোমার নাতিপুতিরা অবাক ! অবাক !
ভয় পেও না, ভয় কিসের ?

আমি শুধু চুপচাপ হাত পেতে নিয়ে চলে যাব ...
তুমি মোড়ক খোলার শব্দ পাবে না , কাগজের ফরফরানি শুনতে পাবে না ...

সোনালি ফিতে একটানে ছিঁড়ব না , এমনকি শেষে তীক্ষ্ণ চিৎকারও নয়
আমার তো মনে হয় না তুমি এই পরিণামদর্শিতার জন্য আমাকে কোনো বাড়তি মর্যাদা দেবে...

যদি জানতে কীভাবে এই ওড়নাগুলো আমার দিনগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে !
তোমার কাছে তো ওরা শুধুই স্বচ্ছতা , নির্মল বাতাস !

আর আমার কাছে ? ওই সব মেঘগুলো ভারী তুলোর মতো
রাশি রাশি ধেয়ে আসে | ওরা কার্বন মনোক্সাইড | বিষাক্ত |  মৃত্যুর  গন্ধ |

আমি বুক ভ'রে..বুক ভ'রে শ্বাস নিই
আমার শিরায় ধমনীতে অদৃশ্য বিষের কণা ছড়িয়ে যায় ...এক থেকে বহু হয়ে |

চোখের ওপর ধূলিকণা . আমার জীবন থেকে খসিয়ে ফেলে সোনালি বছর যত
তুমি তো রুপোলি মোড়কে রয়ে গিয়ে..শুধু যোগ করে যাও...

তুমি কি পারো না , কিছু ছেড়ে দিতে ? পুরোপুরি ?
সবকিছু কি বেগুনী রঙে দাগিয়ে দিতেই হবে ?

মারতে পারো বলেই মারতে হবে ?
আজ আমি তোমার কাছে একটিমাত্র জিনিস চাই...দেবে ?

ওই তো দাঁড়িয়ে আছে আমার জানালাটির পাশে নি:সীম আকাশ হয়ে
আমার বিছানার চাদর জুড়ে আতপ্ত দীর্ঘশ্বাস . কেন্দ্রবিন্দু মৃত ও শীতল...

ভাঙাচোরা জীবন.. চ্যাটচেটে হয়ে , শুকিয়ে...বাকি ইতিহাস
ওকে ডাকপিয়নের হাতে পাঠিও না , আমি আঙুল ছোঁয়াতে চাই না...

আমি মুখের কথাও চাই না. পুরোপুরি পেতে গেলে..
আমার যে ষাট পেরিয়ে যাবে ! তখন আমি অসাড় . ব্যবহারে অপারগ |

শুধু ওড়না সরিয়ে নাও...ওড়না...ওড়না ...
মৃত্যু ?

আশ্লেষ করব গভীর বিষাদ , গম্ভীর মূর্ছনা , সময় পেরিয়ে যাওয়া দৃষ্টিপথ ...
দেখো..ঠিক বুঝে নেব..তুমিও অচপল কিনা ...

তখনই তো হাতের মুঠোয় মহত্ত্ব , তখনই তো নতুন করে জন্মদিন ...
ছুরির ফলাটা আর নকশা করে কাটবে না ... সটান প্রবেশ ..

শুদ্ধতায় , পরিচ্ছন্নতায় ... ঠিক যেন শিশুর কান্না ,
আর আমার হাতের মুঠো থেকে একটু একটু করে খসে পড়বে

পৃথিবী ! 


(মূল কবিতা : A birthday present : Sylvia Plath 
)


লেখক পরিচিতি - বিজ্ঞানের ছাত্রী । কিন্তু প্রথম ভালোবাসা সাহিত্য । তিন দশক ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত । বেশ কিছু অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য অকাদেমি, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইত্যাদি বিখ্যাত সংস্থা থেকে । ভাষান্তরের পাশাপাশি নিজস্ব লেখালেখির ঝোঁক । তবে খুব নিয়মিত নয় । ভালোবাসেন টুকরো গদ্য, পদ্য লিখতে । নানা স্বাদের লেখা নিয়ে গত বছর প্রকাশিত হয়েছে ওঁর আরেকটি বই 'ম্যাজিক লণ্ঠন। এ বছর প্রকাশিত হচ্ছে আরও তিনটি বই।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।