নববর্ষের নতুন প্রভাতে

নববর্ষের নতুন প্রভাতে

সে ছিল এক সময়। তখন পয়লা বৈশাখে প্রভাতফেরি বার হত, আগের চড়ক সংক্রান্তির দিন থেকেই উৎসবের সূচনা হয়ে যেত। গাজনের বাজনা শোনা যেত, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা-মা’র হাত ধরে চড়কের মেলাতে নতুন জিনিষের আবদার করত। এখন একটু অন্যরকম!
বিগত ইংরেজি বছরের দুর্বিষহ স্মৃতিকে পিছনে ফেলে পেরিয়ে এলাম আমরা এই বছরের আরও এক-তৃতীয়াংশের বেশি সময়। কিন্তু তাও কি আমরা সফলভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি আমাদের আপাতবিপন্ন অস্তিত্বকে? তবে আমরা প্রত্যয়ী – জানি এই ব্যর্থতা সাময়িক, ক্ষণকালের মধ্যেই আমাদের জীবনে আসবে নতুন সূর্যের আলো। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন আসে – ‘আর কতদূর এই পথচলা?’ কিন্তু মানব সভ্যতা আবার এগিয়ে চলবে, অতি শীঘ্রই ‘এই বঞ্চনার দ্বীপ পার’ করে আমরা দেখতে পাবো ‘জনসমুদ্রের ঠিকানা।’
সেই আশা নিয়েই আমাদের বাংলা নববর্ষের নতুন প্রভাতে প্রতিশ্রুতিমতই এসে গেল ‘অবসর’ পত্রিকার নববর্ষ ১৪২৮ সংখ্যা। সেখানে ‘নব রবি কিরণে’ জেগে ওঠার, ‘নব আনন্দে’ মেতে ওঠার আহ্বান।
নতুন বছরের প্রথম সংখ্যা! পাঠকদের নবান্নের ভোজ দিতে আমরা যোগ করেছি চার-চারটি নতুন বিভাগ – ভ্রমণ, রম্যরচনা, বই-টই, এবং পুরনো অবসর
ভ্রমণ বিভাগে আমরা পেয়েছি দুটি লেখা – সুষ্মিতা রায়চৌধুরী লিখেছেন ভগবানের নিজস্ব দেশ কেরালা নিয়ে। ব্রততী সেন দাস বর্ণনা দিয়েছেন সবুজ টিয়ারঙা দ্বীপ আন্দামানের।
রম্য রচনাতে রইল তিন-তিনজন লেখকের লেখা – বিষয় বৈচিত্র্যেও লেখাগুলি অনুপম। লেখকেরা যথাক্রমে, সাহানা ভট্টাচার্য্য, মধুমিতা রায় চৌধুরী, এবং তপশ্রী পাল।
‘বই-টই’ বিভাগে আমরা এবারে তিনটি বই নিয়ে আলোচনা রাখলাম – আলোচনায় রাহুল ঘোষ, শরণ্যা মুখোপাধ্যায়, রিয়া ভট্টাচার্য।
‘অবসর’ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শ্রী সুমিত রায় আমাদের অনুমতি দিয়েছেন তাঁর পূর্ব প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য। আমরা কৃতজ্ঞ তাঁর প্রতি। প্রবন্ধটির বিষয় – সুকুমার রায়ের নাটক।
‘সাহিত্য’ বিভাগে রইল দুটি অত্যন্ত মূল্যবান সংযোজন।  অমিত চক্রবর্তীর প্রবন্ধে আলোচিত হল গদ্য কবিতার কথা। দার্শনিক কার্ল মার্কসের প্রেমের কবিতার আলোচনা করলেন তথাগত ভট্টাচার্য।
‘বিজ্ঞান’ বিভাগে রইল ভারতের একটি বিজ্ঞানশিক্ষার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান আই আই এসসি নিয়ে একটি বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ আলোচনা। আলোচক অমিতাভ প্রামাণিক।
এবারের ‘ক্রীড়াজগৎ’ কে আলোকিত করেছে সমীক্ষণ সেনগুপ্তের প্রবন্ধ;  ক্রিকেটের বর্ণ বৈষম্যকে ফিরে দেখা হয়েছে। রয়েছে আপাত ম্লান ওঃ ইন্ডিজের পূর্ব গৌরবের উত্থান কাহিনি।
নাট্যকর্মী সূর্য সেনগুপ্ত স্মরণ করেছেন বাংলা নাট্যজগতের জন্মদাতা গিরিশচন্দ্র ঘোষকে। তাঁর অমূল্য অবদানকে মনে রেখে এই মনোগ্রাহী তর্পণ।
দর্শন – দেখার ভঙ্গী। ভারতীয় দর্শনের একটি বিশেষ শাখা – সাংখ্য। দিলীপ দাসের লেখায় খুব সহজ সরল ভাবে বিধৃত হল এই দর্শনটি।
‘অবসর’ পত্রিকার তরফ থেকে তাদের পাঠকমণ্ডলীর জন্য রইল অশেষ শুভকামনা। এই পত্রিকা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠতে চায়। আমরা আপনাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই আমাদের লেখাগুলি নিয়ে আপনাদের বিশেষ মতামত দেবার জন্য। পত্রিকার মন্তব্য বিভাগে আপনাদের সাদর আহ্বান। তা ছাড়াও আপনাদের পরামর্শ আমাদের জানান নির্দ্বিধায়।

শুভ ১৪২৮!

জন্ম কলকাতায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিণ চব্বিশ-পরগনার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলে। ১৯৮৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে। শখের মধ্যে অল্প-বিস্তর বাংলাতে লেখা - অল্প কিছু লেখা রবিবাসরীয় আনন্দবাজার, উনিশ-কুড়ি, নির্ণয়, দেশ, ইত্যাদি পত্রিকায় এবং বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন (সৃষ্টি, অবসর, অন্যদেশ, পরবাস ইত্যাদিতে) প্রকাশিত। সম্প্রতি নিজের একটি ব্লগ চালু করেছেন – www.bhaskarbose.com

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • তপশ্রী পাল , April 15, 2021 @ 4:21 pm

    সুলিখিত সম্পাদকীয়।

  • পল্লব চট্টোপাধ্যায় , April 18, 2021 @ 10:18 am

    এবারের সংখ্যাটিতে বেশ কিছু উন্নত ও পরিণতমনস্ক লেখা পেলাম, সব মিলিয়ে উপদেষ্টা-মণ্ডলী ও সর্বোপরি সম্পাদক বেশ খানিকটা কৃতিত্বের অংশীদার। সুধী পাঠকদের আশা ছাপিয়ে যাচ্ছে, আশা করি উত্তরোত্তর উন্নতি করবে নতুন আঙ্গিকের এই ‘অবসর’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *