একটি ক্যালেন্ডার ও কিছু বিতর্ক

একটি ক্যালেন্ডার ও কিছু বিতর্ক

ছোটোবেলায় দেখেছি নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে মূলত দু’ধরনের ছবি থাকত – দেবদেবীর ছবি, যেখানে যেতে আসতে অনেকে ‘রক্ষে করো ঠাকুর’ বলে ঢিপ করে একটা প্রণাম ঠুকত, কিংবা পাহাড় বা সমুদ্র ইত্যাদির কিছু দৃশ্য, দর্শনে মধ্যবিত্ত বাঙালীর চক্ষু সার্থক হত।

কিন্তু এই প্রবন্ধের শিরোনামের ক্যালেন্ডার এই দুই পর্যায়ে পড়ে না। খড়্গপুর আই-আই-টির Centre of Excellence for Indian Knowledge Systems থেকে ২০২২ সালে প্রকাশিত এই ক্যালেন্ডারে প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের অছিলায় কিছু তথ্য এমন ভাবে পরিবেশন করা হয়েছে, যাতে ইতিহাস কম, বিভ্রান্তি বেশি। এই ক্যালেন্ডারে যুক্তি প্রমাণ ও বিজ্ঞানের বদলে অপবিজ্ঞান, ভুল তথ্য এবং পল্লবিত ভাষা ব্যবহার করে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের এক নতুন ও মনগড়া ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। ক্যালেন্ডারটির বিষয়ে জানতে হলে পাদটীকার প্রতিবেদনগুলি দেখুন।[i]

ক্যালেন্ডারের মূল বক্তব্য

আই-আই-টির এই ক্যালেন্ডারের দাবি করা হয়েছে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে ‘আর্য আক্রমণ থিয়োরি’ (Aryan Invasion Theory) আসলে একটি ‘মিথ,’ যা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসকে বিকৃত করে। কিছু ইউরোপিয় পণ্ডিত Divide and Rule পন্থা ব্যবহার করে বলেছেন, আর্য তথা ইউরোপিয়ানরা ভারতের আদিম অধিবাসীদের চেয়ে উন্নত ছিল। এটি ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র (Colonial Conspiracy) ছাড়া কিছুই নয়। ইউরোপিয়ান পণ্ডিতরা বৈদিক সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা, দুটিকে আলাদা করে দেখিয়ে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বিকৃত করে, ২০০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ অবধি সীমিত রেখেছেন। আসলে এই ইতিহাস অনেক হাজার বছর বেশি পুরোনো।

এই দাবির প্রমাণ হিসেবে ক্যালেন্ডারে যে তথ্যগুলি পরিবেশন করা হয়েছে, তা হল সিন্ধু সভ্যতার কয়েকটি সীল বা ছবি, ঋগ্বেদের কিছু মন্ত্র, স্বামী বিবেকানন্দ ও ঋষি অরবিন্দের উক্তি, এবং কয়েকজন ইউরোপীয় পণ্ডিতের কঠোর সমালোচনা। ক্যালেন্ডারে উল্লেখিত বিষয়বস্তুর ব্যাপ্তি বিশাল, তাই এই প্রবন্ধ কেবলমাত্র ক্যালেন্ডারে উল্লেখিত ‘প্রমাণগুলির’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি।

আর্য আক্রমণ তত্ত্ব (Aryan Invasion Theory) অনুযায়ী ভারতের বাইরে থেকে এক গোষ্ঠী এসে সিন্ধু সভ্যতাকে (বা হরপ্পা সভ্যতা / সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা) আক্রমণ করে, অধিবাসীদের মেরে কেটে এই সভ্যতার পতন ঘটিয়েছিল। এই তত্বের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন জন মার্শাল[ii] এবং মর্টিমার হুইলার।[iii] এঁরা কিছু ছড়ানো ছিটানো কংকাল দেখে মনে করেছিলেন এগুলি বহিরাগতদের আক্রমণে নিহত মানুষ। হুইলার বিশ্বাস করেছিলেন এই আক্রমণ ছিল অতর্কিত, ফলে অধিবাসীরা সাবধান হবার সময় পায়নি। তাই এদের কংকাল ছড়ানো ছিটানো। মার্শাল ও হুইলার মনে করেছিলেন, আগ্রাসী বহিরাগতরা ছিল ‘আর্য’ নামক এক গোষ্ঠী।

প্রথম থেকেই আর্য আক্রমণের তত্ত্ব অনেকের নড়বড়ে মনে হয়েছিল, বিশেষত হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন স্তরের খোঁজ পাওয়ার পর।[iv],[v] পরে পুরাতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ ও গবেষণা যত এগিয়েছে, আর্য আক্রমণ তত্ত্ব ততই দুর্বল হয়েছে এবং আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেই পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়েছে।[vi] বর্তমান ঐতিহাসিকরা সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হিসেবে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের কথা বলেন না। এখন মনে করা হয় কোনো গোষ্ঠীর আক্রমণে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়নি; বরং এর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্তির প্রধান কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন, সিন্ধু নদীর গতিপথ বদল, ইত্যাদি।[vii],[viii] এর বিশদ আলোচনা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়।

কুরগান হাইপোথেসিস অনুযায়ী ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার মাইগ্রেশন (৪০০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

সংস্কৃতের পূর্বসূরি, ইন্দো-ইউরোপিয়ান আর্য ভাষাভাষী জাতির ভারতে আগমন বিষয়ে বর্তমান যে থিয়োরিগুলি প্রচলিত ও সাধারণভাবে গৃহীত, তাদের মধ্যে Kurgan Hypothesis অন্যতম। এই তত্ব অনুযায়ী আর্য ভাষাভাষী বিভিন্ন গোষ্ঠী, সম্ভবত ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি কোনো সময় থেকে পরের কয়েক শতাব্দী ধরে, ক্রমাগত বিভিন্ন ঢেউয়ে প্রাচীন ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বাস করতে আরম্ভ করেছিল।[ix] মূলত জেনেটিক্স, ভাষাতত্ত্ব, ও পুরাতত্ত্বর ওপর ভিত্তি করে এই অনুমান করা হয়েছে।[x] অর্থাৎ, কোনো লুটেরা গোষ্ঠী হঠাৎ সিন্ধু সভ্যতা আক্রমণ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি।

কাজেই ক্যালেন্ডারের প্রকাশক, ইতিহাসের দৃষ্টিতে বহুদিন আগেই পরিত্যক্ত এক তত্ত্বকে আবার নতুন করে ভুল প্রমাণ করেছেন, এবং ষড়যন্ত্র থিয়োরি কেন আমদানি করেছেন, তার যুক্তি বা প্রয়োজন ব্যাখ্যা করেননি।

ক্যালেন্ডারে আরো দাবি করা হয়েছে যে সিন্ধু সভ্যতা আদতে বৈদিক সভ্যতা, কিন্তু পাশ্চাত্যের পণ্ডিতেরা ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে আলাদা দেখিয়ে বৈদিক সভ্যতার প্রাচীনতা অস্বীকার করছেন। এই বিষয়ে প্রচুর বিতর্ক হচ্ছে ও হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ভাবে, অকাট্য তথ্য-প্রমাণ সহযোগে, সিন্ধু সভ্যতা যে বৈদিক সেকথা দাবি করতে পারেননি। তাই সিন্ধু সভ্যতা যে বৈদিক, অকাট্য যুক্তি ও তথ্য দিয়ে ক্যালেন্ডারে সেটা বোঝানো সম্ভব হয়নি।

সিন্ধু সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস কী ছিল এই বিষয়ে অনেক লেখা হয়েছে, কিন্তু সেসব এই প্রবন্ধের ব্যাপ্তির বাইরে তাই তাদের রেফারেন্স দিয়ে প্রবন্ধ দীর্ঘ করছি না। যতদিন না সিন্ধু-লিপি সুনিশ্চিত ও অবিতর্কিত ভাবে পাঠোদ্ধার করা হয়, ততদিন সিন্ধু সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস ও জনজীবন সম্বন্ধে অনেক কিছুই অজানা থাকবে। এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, সিন্ধু-লিপি Logo-syllabic, এই লিপির প্রতিটি অক্ষর একটি শব্দ বা syllable, এবং লেখা হয় ডান দিক থেকে বাঁদিকে।[xi] আমরা জানি বৈদিক সভ্যতার ভাষা সংস্কৃত – সেরকম ভাবে লেখা হয় না।

এবার ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন মাসের পাতায় প্রদত্ত কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।

জানুয়ারি মাসের বক্তব্য

জানুয়ারি মাসের পাতায় উল্লেখ আছে, 7000 BCE প্রাক-হরপ্পা সভ্যতা থেকে 1000 BCE হরপ্পা-পরবর্তী সভ্যতা গড়ে উঠেছিল মূলত সিন্ধু ও ‘ব্রহ্মপুত্র নদীর’ অববাহিকায়। বেদে নৈমিষারণ্যের উল্লেখ আছে, যা লক্ষণপুর বা বর্তমান লখনৌ নগরীর কাছে অবস্থিত ছিল। ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিকরা (Colonial Historians) এইসব তথ্য লুকিয়ে ভারতের ইতিহাসের প্রাচীনত্ব অস্বীকার করেছেন।

জানুয়ারি পাতার তথ্য সঠিক নয়। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক কোনো সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আজও পাওয়া যায়নি। ক্যালেন্ডারে লেখা ‘সাংপো’ (ব্রহ্মপুত্রর তিব্বতি নাম) উপত্যকায় ‘রিয়োচে’ ঘোড়া পাওয়া গিয়েছে। এবং যেহেতু ঘোড়া বৈদিক সভ্যতার নিদর্শন, অতএব ‘ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সভ্যতা’ অবশ্যই বৈদিক সভ্যতা, যা ইউরোপীয় পণ্ডিতরা চেপে দিয়েছেন। রিয়োচে ঘোড়া একরকম ছোট্ট ঘোড়া, ১৯৯৫ সালে যার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে উত্তর তিব্বতে, সাংপো উপত্যকার থেকে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার উত্তরে। রিয়োচে ঘোড়ার সঙ্গে সাংপো বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার তথাকথিত বৈদিক সভ্যতার কোনো সম্বন্ধ নেই। কাজেই তথ্য চেপে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ক্যালেন্ডারে ধরে নেওয়া হয়েছে, যেহেতু বেদে ঘোড়ার উল্লেখ আছে, তার মানে ঘোড়া পাওয়া গেলেই সেটি বৈদিক সভ্যতা হতে হবে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে আজ থেকে ৬০০০ বছর আগেই কাস্পিয়ান ও উত্তর কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ঘোড়াকে পোষ মানানো হয়েছিল।[xii]

রিয়োচে ঘোড়া

ক্যালেন্ডারে আরও লেখা, পুরাণে বর্ণিত নৈমিষারণ্য (যেখানে ঋষিরা থাকতেন ও মহর্ষি সূতের কাছে পুরাণের কাহিনী শুনতেন), লখনৌ নগরীর কাছে। এসব তথ্য ইউরোপিয় পণ্ডিতেরা উপেক্ষা করেছেন। বৈদিক সাহিত্যে, যেমন পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ, কাঠক সংহিতা বা ছান্দোগ্য উপনিষদে নৈমিষ (অরণ্য কি?) নামে এক দেশের উল্লেখ আছে।[xiii] এর অবস্থান উত্তরপ্রদেশের নিমসর বলে মনে করা হয় যা লখনৌ নগরী থেকে প্রায় ৮৫ কিমি দূরে। এই সব তথ্য একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে,[xiv] কোনো তথ্য কেউ চেপে যায়নি এবং অযথা ষড়যন্ত্র থিয়োরি আমদানিরও প্রয়োজন নেই।

ফেব্রুয়ারি মাসের পাতায়, কোনো যুক্তি বা প্রমাণ ছাড়াই, হরপ্পায় পাওয়া স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত সিল-এর সঙ্গে জন্মান্তরবাদ, কর্মবাদ, গুরুবাদ জুড়ে অস্পষ্টভাবে কিছু বলার প্রচেষ্টা হয়েছে। সেই বক্তব্য এতই অস্পষ্ট যে এই নিয়ে আলোচনা করা বৃথা। এই পাতায় ‘জাতবেদঃ’ শব্দের অর্থ বলা হয়েছেঃ Rig Veda confirms that the life principle of Agni as a chain (Vayu or Sutra-atman) over many lives (Jataveda) carrying its subtle repository of experiences.ক্যালেন্ডারে প্রকাশিত ‘জাতবেদঃ’ শব্দের এই অর্থ ঠিক নয়। জাতবেদঃ শব্দের প্রকৃত অর্থ ‘যাহার নিমিত্ত বেদসমূহ জাত’ (হরিচরণ প্রণীত অভিধান), অথবা “All-possessor, knowing [or known by] all created beings; having whatever is born or created as his property” (Williams, M. Sanskrit-English Dictionary), – অর্থই প্রচলিত এবং সঠিক।

ফেব্রুয়ারি মাসের বক্তব্য

মার্চ মাসের পাতায় ঠিক একই ভাবে তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই, যোগক্ষেম এবং সিন্ধু সভ্যতার সিলের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছে। বলা হচ্ছে ‘যোগ’ ও ‘সমাধি’ এই উপলব্ধিগুলি সিন্ধু সভ্যতার মতোই পুরোনো এবং তার দুই ভাগ, কৃষ্ণ ও শুক্ল। যোগসমাধি হচ্ছে কৃষ্ণ, আর ক্ষেম, তন্ত্র, মহাযোগী, সপ্তর্ষি, এইগুলি হচ্ছে শুক্ল অংশ। এই ধোঁয়াটে ও বিভ্রান্তিপূর্ণ তথ্যে কিছুই প্রমাণ হয় না। এমনকি যোগক্ষেমের প্রসঙ্গে ঋগ্বেদের যে শ্লোকটির উদ্ধৃত করা হয়েছে (১০.১৬৭-১) তাতে যোগক্ষেম বা যোগসমাধির কোনো উল্লেখই নেই! এই ভুল অমার্জনীয়। এই প্রসঙ্গে বলতে চাই যে ঋগ্বেদের ‘যোগ’-এর সঙ্গে ক্যালেন্ডারে বর্ণিত যোগসমাধি সম্পর্কশূন্য। ঋগ্বেদে ‘যোগ’-এর ধারণা, পতঞ্জলির বা গীতার ‘যোগ’-এর থেকে আলাদা। যোগসমাধির উল্লেখ ঋগ্বেদে নেই। এর বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে পতঞ্জলির যোগসূত্রে (তৃতীয় অধ্যায় -সমাধিপাদ) যা ঋগ্বেদের প্রায় হাজারখানেক বছর বা তারও পরে লেখা।

আর্য আক্রমণ তত্ত্ব যে ভুল তা প্রমাণের চেষ্টা হয়েছে এপ্রিল-মে মাসের দুই পাতার মধ্যবর্তী একটি বাড়তি পাতায় – স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে।

And what your European Pundits say about the Aryan’s swooping down from some foreign land, snatching away the lands of the aborigines and settling in India by exterminating them, is all pure nonsense, foolish talk! Strange, that our Indian scholars, too, say amen to them; and all these monstrous lies are being taught to our boys! This is very bad indeed.

In what Veda, in what Sukta, do you find that the Aryans came into India from a foreign country? Where do you get the idea that they slaughtered the wild aborigines? What do you gain by talking such nonsense? Vain has been your study of the Râmâyana; why manufacture a big fine story out of it?

(ওই যে ইউরোপীয় পণ্ডিত বলছেন যে, আর্যেরা বিদেশ থেকে উড়ে এসে ভারতের ‘বুনো’ আদিবাসীদের মেরে-কেটে জমি ছিনিয়ে নিয়ে আবাস স্থাপন করল—ও-সব আহাম্মকের কথা।

কোন্ বেদ, কোন সূক্ত-এ, কোথায় দেখছ যে, আর্যরা বিদেশ থেকে এদেশে এসেছে? কোথায় পাচ্ছ যে, তারা আদিবাসীদের মেরে ধ্বংস করেছে? খামোকা আহাম্মকির প্রয়োজন কী? আপনাদের রামায়ণ অধ্যয়ন বিফল হয়েছে – কিন্তু তার ওপর ভিত্তি করে এক বৃহৎ গল্প কেন বানাচ্ছ?) (স্বামী বিবেকানন্দ, “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য,” স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী, ষষ্ঠ খণ্ড)

ক্যালেন্ডারের প্রকাশক নিজের সুবিধেমত বেছে বেছে স্বামীজীর উদ্ধৃতিগুলি ব্যবহার করেছেন (Cherry picking)। স্বামীজী ছিলেন একজন প্রগাঢ় দেশভক্ত। এই প্রবন্ধে তিনি বলতে চেয়েছেন, ভারতবাসীরা পাশ্চাত্যবাসীদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। মনে রাখতে হবে যে স্বামীজী এগুলি লিখেছিলেন ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি। তখন সিন্ধু-সভ্যতা আবিষ্কার বা আর্য আক্রমণ তত্ত্ব ভবিষ্যতের গর্ভে। ভাল করে পড়লে বোঝা যাবে যে তিনি প্রথম অনুচ্ছেদে আর্য আক্রমণ তত্ত্বের অসারতাই প্রকাশ করেছেন, যা পরবর্তীকালের পণ্ডিতরাও বলে গেছেন। প্রবন্ধের অন্য জায়গায় স্বামীজী লিখেছেনঃ

আর্যরা শান্তিপ্রিয়, চাষবাস ক’রে, শস্যাদি উৎপন্ন ক’রে শান্তিতে স্ত্রী-পরিবার পালন করতে পেলেই খুশী। তাতে হাঁপ ছাড়বার অবকাশ যথেষ্ট; কাজেই চিন্তাশীলতার, সভ্য হবার অবকাশ অধিক। আমাদের জনক রাজা স্বহস্তে লাঙ্গল চালাচ্ছেন এবং সে কালের সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মাবিৎও তিনি। (স্বামী বিবেকানন্দ)

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে স্বামীজী লিখেছেন, “আর্য নামক গোষ্ঠীর কথা বেদে লেখা নেই।” এটি সঠিক। বেদে ‘আর্য’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সম্মানার্থে, কোনো গোষ্ঠী হিসেবে নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে স্বামীজীর সময় বিভিন্ন Migration Hypothesis, আধুনিক জিনগত গবেষণা, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, অথবা ভাষাভিত্তিক গবেষণা আবিষ্কৃত তথ্য – কিছুই ছিল না।

ভেনাস অফ ভিলেন্ডর্ফ

এর পর, মে মাসের পাতাটি একটি খিচুড়ি। এখানে সিন্ধু সভ্যতার বহুখ্যাত ব্রোঞ্জ নারীমূর্তি (Dancing Girl), ঋগ্বেদের দেবীসূক্ত ও রাত্রিসূক্ত, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা সব মিলিয়ে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে মাতৃপূজা ভারতবর্ষের একান্ত নিজস্ব। ক্যালেন্ডারের প্রকাশক ভুলে গেছেন সব প্রাচীন সভ্যতাতেই নারীদেবতা ও মূর্তি পাওয়া গেছে এবং প্রায় ২৫-৩০ হাজার বছর পুরোনো গর্ভিণী মূর্তি Venus of Willendorf পাওয়া গেছে ইউরোপে। ঋগ্বেদের দেবীসূক্ত ও রাত্রিসূক্তের এমন অপব্যাখ্যা কোথাও দেখিনি। এই অপব্যাখ্যা আলোচনা করে একে সম্মানিত করতে চাই না।

জুন মাসের বক্তব্য

জুন মাসের পাতায় সেই ভুলের ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এখানে ক্যালেন্ডারের প্রকাশক এক আজগুবি প্রস্তাবের অবতারণা করেছেন। ক্যালেন্ডারের মতে সিন্ধু-সভ্যতার সিলমোহরে Unicorn বা একশৃঙ্গ পশুটি আদতে হচ্ছে পুরাণে বা রামায়ণ-মহাভারতে বর্ণিত ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি, যাঁর নাকি একটি শিং ছিল। সিলমোহরের ছবিটি যে আসলে কী ধরনের পশু, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এটি কল্পকাহিনীর Unicorn, না কোনো দুই শিংওয়ালা ষাঁড়, গাধা বা ঐ জাতীয় কোনো পশু যা এক পাশ থেকে দেখা হচ্ছে (তাই একটি শিং দেখা যাচ্ছে), এই নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। বর্তমানে মনে করা হয় এটি সম্ভবত সিন্ধু সভ্যতার কোনো Cult Object।[xv] Unicorn-কে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি আখ্যা দেওয়া প্রকাশকের কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। মনে রাখতে হবে পুরাণ বা মহাকাব্যগুলি সিন্ধু সভ্যতার থেকে প্রায় দুহাজার বছর পরে রচিত। সুতরাং ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিকে সিন্ধু সভ্যতার সমকালীন করে তোলা সম্পূর্ণ অর্থহীন।

ইউনিকর্ন সিল

জুলাই মাসে একটি ইন্টারেস্টিং বিতর্ক অবতারণা করা হয়েছে শিব ও তার উৎপত্তি নিয়ে। ক্যালেন্ডার প্রকাশক বলছেন পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা নাকি শিবকে অবৈদিক দেবতা বলেন। কিন্তু শিবের পূর্বসূরি রুদ্র যে বেদের অন্যতম দেবতা সেটা সবাই জানেন। তাহলে এখানে বিতর্ক কোথায়? মহেঞ্জোদারোর সিলের একটি বিখ্যাত মূর্তিকে ক্যালেন্ডার প্রকাশক পশুপতি শিব বা ‘Proto-Shiva’ বলছেন। কিন্তু বৈদিক শিব ছিলেন গৃহপালিত পশুর দেবতা, তাহলে এই বন্য জন্তু পরিবেষ্টিত মূর্তিটি পশুপতি শিব কী করে হয়? বর্তমান পণ্ডিতদের মতে এই মূর্তিটির সঙ্গে শিবের কোনো সম্পর্ক নেই।[xvi],[xvii]

‘পশুপতি’ সিল

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের পাতা জুড়ে কয়েকজন ইউরোপিয়ান ব্যক্তিকে ঘিরে ষড়যন্ত্র থিয়োরির আমদানি করা হয়েছে। ক্যালেন্ডারে লেখা হয়েছে এরা ভারতীয়দের হেয় ও ইউরোপিয়ানদের শ্রেষ্ঠতর প্রমাণ করার জন্য ‘আর্য’ গোষ্ঠী এবং ‘আর্য আক্রমণ তত্ত্বের’ আমদানি করেন। ক্যালেন্ডার সবচেয়ে ধারালো তীরটা তাক করা হয়েছে ম্যাক্সমুলারের দিকে, যিনি ১৮৬১ সালে দুই আর্য জাতির কথা উল্লেখ করেন, যার একটি ইউরোপীয় আর্য জাতি ও অন্যটি ভারতের। তিনি আর্য কথাটি প্রধানত ভাষার ভিত্তিতে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন, যদিও কিছু জায়গায় তিনি জাতিভিত্তিক প্রয়োগ করেছেন, যেমন রাজা রামমোহন রায়কে তিনি আর্য জাতির এক পণ্ডিত হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।[xviii] কিন্তু তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর্য শব্দটি বর্ণবিদ্বেষী (Racist) তকমা পেয়ে যাওয়াতে তিনি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন।[xix] মনে রাখতে হবে, ম্যাক্সমুলারই প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি নিজের সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত শিখে, সায়নাচার্যের ভাষ্য অনুযায়ী বেদের ইংরেজি অনুবাদ করে, বিশ্বের দরবারে ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে “একজন পৃথিবী-আড়োলনকারী পণ্ডিত ও দার্শনিক” আখ্যা দিয়েছিলেন (“ভারতবন্ধু অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার,” স্বামী বিবেকানন্দ, বিবেকানন্দ রচনাবলী, ১০ম খণ্ড)। এবং লন্ডনে তাঁর সঙ্গে দেখা করে স্বামী বিবেকানন্দর মনে করেছিলেন তিনি প্রাচীন ভারতের ব্রহ্মর্ষি ও রাজর্ষির যুগে ফিরে গেছেন। সেই মহান ব্যক্তিকে racist বলা খুবই দুঃখজনক।

ক্যালেন্ডারের বিষয়বস্তু সমালোচনা করে এই প্রবন্ধের সারাংশ হলঃ

১) ক্যালেন্ডারে যে Aryan Invasion Theory কে কঠোর ভাবে সমালোচনা করা হয়েছে, সেই থিয়োরিটাই বহুবছর আগে পরিত্যক্ত হয়েছে। বর্তমানে এই তত্ত্বকে সিন্ধু সভ্যতার অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে ধরা হয় না। ক্যালেন্ডারের প্রকাশকরা সেটা জেনেও উপেক্ষা করেছেন।
২) ক্যালেন্ডার দাবি করছে সিন্ধু সভ্যতা বৈদিক সভ্যতা। কিন্তু এই বিতর্কের এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি এবং যতদিন না সিন্ধু-লিপির নির্ভুল পাঠোদ্ধার হয়, তা জানা যাবে না। এই সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস এখনও কেউ বলতে পারেননি। কাজেই এবিষয়ে নিশ্চয়াত্মক দাবি ভিত্তিহীন।
৩) ক্যালেন্ডারের পাতায় বেদের বিভিন্ন শ্লোকের ও শব্দের অস্পষ্ট অপব্যাখ্যা দিয়ে, তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই, কেবল মাত্র পল্লবিত ভাষার সাহায্যে, অনেক কিছু দাবি করা হয়েছে, যা অর্থহীন।
৪) স্বামী বিবেকানন্দ ও ঋষি অরবিন্দের মতো মহান ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি সুবিধে মত প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে, পছন্দের জায়গাগুলি তুলে (Cherry picking) ক্যালেন্ডারের প্রকাশক নিজের বক্তব্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
৫) ক্যালেন্ডার দাবি করছে পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরা ষড়যন্ত্র করে ভারতের ইতিহাস বিকৃত করেছেন ও তার প্রাচীনত্ব অস্বীকার করেছেন। এই দাবি সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে যে ইউরোপ বা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইন্দোলজির চর্চা ভারতের থেকে বেশি। সেখান থেকে ইন্দোলজির সবচেয়ে সেরা জার্নালগুলি প্রকাশিত হয় এবং ইন্দোলোজির প্রধান গবেষকদের মধ্যে সিংহভাগই বিদেশি।

এই ক্যালেন্ডারের উপদেষ্টামণ্ডলীর তালিকাতে একজনও ইতিহাসবিদ বা ইন্দোলজিস্ট চোখে পড়ল না। ভারতে কি ইতিহাসবিদ বা ইন্দোলজিস্ট ‘কম পড়িয়াছে?’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে এই ক্যালেন্ডার কি হিন্দুত্ববাদীদের প্রোপ্যাগান্ডা?[xx],[xxi],[xxii] হিন্দু তথা সনাতন ধর্ম নিজস্ব স্বকীয়তা ও গভীরতার গরিমায় সদা উজ্জ্বল। তার প্রাচীনতা সর্বজনবিদিত। গীতা ও উপনিষদের বাণী সারা বিশ্বকে প্রেরণা যোগায়। তাহলে সনাতন ধর্মকে গরিমান্বিত করার জন্য প্রোপ্যাগান্ডার প্রয়োজন হল কেন?

এখানে প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, এই রকম ভ্রমে ভরপুর একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশের প্রয়োজন কি? এর একটা উত্তর হতে পারে যে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ষড়যন্ত্র থিয়োরি আমদানি করে ক্যালেন্ডারের চাহিদা ও বিক্রি বাড়ানো।[xxiii] কিন্তু অন্য ভাবে দেখলে ক্যালেন্ডারের ভুল তথ্যের সমস্যাটা আরো গভীর। খড়্গপুর আই আইটির মত সম্মানীত প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডার যদি এতটা বিভ্রান্তিমূলক হয় তাহলে ভারতে পঠনপাঠনের  সিলেবাস, গুণমান ও তার ত্রুটিহীনতা নিয়ে সারা বিশ্বেই ভুল ধারণার সূত্রপাত হয় না কি?

*****

ছবিঃ লেখক

পাদটীকা ও তথ্যসূত্র

[i] Bhattacharya, S. (2021, December 30). “With IIT Kharagpur calendar, the Hindutva Right takes another step away from science.” The Wire. Available: https://thewire.in/education/with-iit-kharagpur-calendar-the-hindutva-right-takes-another-step-away-from-science; Express News Service. (2021, December 26). “Chronology of Indian civilization is ‘dubious’, says IIT-Kharagpur calendar.” The Indian Express. Available: https://indianexpress.com/article/cities/kolkata/chronology-of-indian-civilisation-is-dubious-says-iit-kharagpur-calendar-7690601/; IIT Kharagpur. (2021, December 28). “Calendar 2022 IIT Kharagpur – recovery of the foundations of Indian knowledge systems.” eSamskriti. Available: https://www.esamskriti.com/e/Culture/Indian-Culture/Calendar-2022-IIT-Kharagpur~Recovery-of-the-Foundations-of-Indian-Knowledge-Systems-1.aspx

[ii] Marshall, J. H. Sir, (Ed). (1931). Mohenjo-Daro and Indus Civilization, Vol 1, (pp. 110-111). London: Probsthain.  

[iii] Wheeler, M. (1953). Indus Valley Civilization (1st Ed), (pp. 27, 108-109). Cambridge, England: Cambridge University Press.

[iv] Lal, B. B. (1953). Prehistoric investigations. Ancient India, Vol 7, p. 88.

[v] Dales, G. F. (1964). Mythical massacres of Mohenjodaro. Expeditions, Vol. 6, p. 43.

[vi] Lal, B. B. (2005). Aryan Invasion of India: Perpetuation of a myth. In E. Bryan and L. Patton (Eds.), The Indo Aryan controversy, Ch. 2. London & NY: Routledge.

[vii] Chakrabarty, D. K. (1997). Ancient Indian cities (pp. 130-140). Oxford, UK: Oxford University Press.

[viii] Singh, U. (2019). A history of ancient and early medieval India, (pp. 179-180). Noida, India: Pearson India.

[ix] Renfrew, C. (1987). Archaeology and language: The puzzle of Indo-European origins (pp. 37–38). Cambridge, UK: Cambridge University Press.

[x] Jacobson, R. (2018, March 1). “New evidence fuels debate over the origin of modern languages. Scientific American. Available: https://www.scientificamerican.com/article/new-evidence-fuels-debate-over-the-origin-of-modern-languages/

[xi] Singh, (p.170), op. cit.

[xii] Cothran, G. E. (Updated: 2022, March 7). “Horse.” Britannica. Available: https://www.britannica.com/animal/horse/Evolution-of-the-horse

[xiii] McDonnel, A. A. and Keith, A. B. (1912). Vedic index of names and subjects, Vol. I, p. 460. London: Andesite Press.

[xiv] Pandeya, R. B. (1964). Naimiṣāraṇya in Literature. Journal of the American Oriental Society, 84 (4), 405-8. Available: https://doi.org/10.2307/596777

[xv] Atre, S. (1985). The Harappan riddle of ‘unicorn.’ Bulletin of the Deccan College Post-Graduate and Research Institute, 44, 1–10. Available: http://www.jstor.org/stable/42930107

[xvi] Srinivasan, D. (1984). Unhinging Śiva from the Indus Civilization. Journal of Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, (1), pp 77-89.

[xvii] Hitlebietel, A. (1978). Indus valley ‘Proto Śiva’ reexamined through reflections on the goddess, the buffalo, and the symbolism of vāhanas. Anthropos, LXXIII, 769-770.

[xviii] Thaper, R. (1996, Jan–Mar). Theory of Aryan race and India: History and politics. Social Scientist, 24(1/3), 3-29.

[xix] Esleben, J., Kraenzle, C., and Kulkarni, S. (2008). Mapping channels between Ganges and Rhein: German-Indian cross-cultural relations. Newcastle, UK: Cambridge Scholars publication.

In later years, especially before his death, he was deeply saddened by the fact that these classifications later came to be expressed in racist terms”

[xx] Chowdhury, S. (2022, January 14). “IIT Kharagpur calendar ‘devoid of scientific evidence.” The Telegraph Online, My Kolkata. Available: https://www.telegraphindia.com/my-kolkata/news/iit-kharagpur-calendar-devoid-of-scientific-evidence/cid/1847521 (retrieved March 16, 2022).

[xxi] Kochhar, R. and Majumder, P. (2022, January 31). “A terrible bargain.” The Statesman. Available: https://www.thestatesman.com/opinion/a-terrible-bargain-1503042485.html (retrieved March 16, 2022).

[xxii] Ibid.

[xxiii] Shamsi, Md. S. (2022, January 4). “IIT Kharagpur calendar refuting Aryan invasion seeing high demand.” Deccan Herald. Available: https://www.deccanherald.com/national/iit-kharagpur-calendar-refuting-aryan-invasion-seeing-high-demand-1067917.html (retrieved March 16, 2022).

প্রাচীন ভারতের শাস্ত্র, দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। ‘অবসর’-এ নিয়মিত লেখেন। ‘দেশ’ ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশিত। বহু বছর ধরে আমেরিকার সেন্ট লুইস (মিসৌরী) শহরের প্রবাসী বাঙালী। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *