বড় মাপের মানুষটি চলে গেলেন

মে মাসের একেবারে শেষের দিকে সুজন দাশগুপ্তের একটি ফেসবুক পোস্টে দুঃসংবাদটি জেনে চমকে উঠেছিলাম। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল সুমিত রায় আর আমাদের মধ্যে নেই। ক্যানসারে ভুগছিলেন, অসুখের খবরটি আমি অবশ্য জানতাম না। পরে জেনেছি আমার মতো আরও অনেকেই জানতেন না। সামান্য যে কয়েকজন জানতেন, তাঁদের কাছে নাকি সুমিতবাবুর নির্দেশ ছিল খবরটি যেন অকারণে প্রচার না পায়। ভালোই করেছেন, মানুষটি শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে সজীব, প্রাণবন্ত, সুলেখক, সুরসিক, এবং রসগ্রাহী মানুষ হিসেবেই থেকে গিয়েছিলেন।

সুজনবাবুর সুবাদেই সুমিতবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয়। সম্পর্ক নিবিড় হয়েছিল টেলিফোনের কথাবার্তায় এবং ওঁর লেখাপত্র পড়ার পরে। সুমিত রায় এবং সুজন দাশগুপ্ত — এই দুই সম্পাদকের সম্পাদনায় অসামান্য ওয়েব পত্রিকা ‘অবসর’ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে, এখনও বার হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ভাস্কর বসুর সৌজন্যে। সম্ভবত অবসরের পাতাতেই সুমিতবাবুর লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। এবং প্রথম পাঠেই তাঁর লেখার প্রতি যে মুগ্ধতা তৈরি হয়, তা একটু একটু করে বেড়েই চলেছিল। মানুষটির পড়াশোনার পরিধি ছিল বিরাট, কিন্তু পাণ্ডিত্য তাঁর লেখার ওপর  ভার হয়ে চেপে বসেনি কখনো। বিষয়কে বুঝি আত্মস্থ করেই কলম খুলতেন তিনি। নিখুঁত পরিমিতি বোধ, রসজ্ঞান, এবং স্বচ্ছতা তাঁর সব লেখাকেই সুনির্দিষ্ট পরিণতির দিকে নিয়ে যেত। গল্প, কবিতা তিনি কখনো লেখেননি, কিন্তু আশ্চর্য এক সৃজনশীলতার আবেশ তাঁর প্রতিটি লেখাতেই পাওয়া যেত। পড়ুয়া মানুষটি পাঠক হিসেবে ছিলেন সর্বভুক। নানা বিষয়ের আগ্রহী পাঠক হওয়ার দরুন তাঁর লেখায় বুঝি বাড়তি একটি বর্ণময়তা সঞ্চারিত হত। একটি লেখার মধ্যে নানা বিষয়ের প্রক্ষেপ লেখার স্বাদ বাড়াত, কিন্তু কোনও অবস্থাতেই লেখার রাশ আলগা হত না। প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকত পুরোপুরি।

তাঁর লেখার আলাদা একটা শৈলী ছিল, এই শৈলী আচমকা আসে না। ভাষার ওপর দখল ও নিরবচ্ছিন্ন চর্চা দরকার। সেটি তাঁর অবশ্যই ছিল। তার ফলে একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিতে একটিমাত্র বাক্যেই অনেক কথা বলে ফেলতে পারতেন। ‘প্রসঙ্গঃ পরশুরাম’ রচনার অব্যর্থ সেই লাইনটি মনে পড়ছে — ‘রাজশেখর ছিলেন একাধারে বিজ্ঞ ও বিজ্ঞানী।’ বাক্যটি স্বাদু গদ্যে ধীরে ধীরে বিস্তারিত হয়েছে গোটা লেখায়। মনে পড়ছে সুকুমার রায়কে নিয়ে লেখা সরস ও তথ্যপূর্ণ লেখাটির কথাও। শুরুতেই লিখেছেন, “সুকুমার রায়ের ‘সুকুমার রায়’ হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায়ই ছিল না।” চমকপ্রদ এই কথাটি প্রসারিত হতে হতে তাঁর বক্তব্যকে যুক্তিগ্রাহ্য প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের বৈভব তাঁর বিশ্লেষণে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। ‘দৈলিপী’ বিশেষণটি দিলীপকুমার রায়েরই উদ্ভাবিত। ‘ভ্রমণঃ দৈলিপী’ রচনাটিতে সুমিতবাবু অকপটে বলে ফেলেছেন, গান ছাড়া দিলীপকুমারকে কল্পনা করাই দুষ্কর। কেন? তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আছে লেখাটিতে। গান, বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, মিশে গিয়েছিল সুমিতবাবুর মজ্জায়। শুনেছি, দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গানের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন নিরলস ভাবে। তারই বিস্ময়কর ফলশ্রুতি গীতবিতান ডট নেট। রবীন্দ্রনাথ গান লিখেছেন দু’হাজারেরও বেশি। প্রতিটি গান সম্পর্কে নানা তথ্য স্থান পেয়েছে এই সাইটে। যেমন, গানটি কবে, কোথায় লেখা হয়েছে; গানের রাগ, তাল, স্বরলিপি, কোন পর্যায়ের গান, অনুবাদ, পান্ডুলিপির ছবি; গান সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য, অনুবাদ ইত্যাদির হদিশ আছে এখানে। সুবিশাল, তথ্যবহুল এমন একটিমাত্র কাজের জন্যই তিনি অমরত্ব পেতে পারেন।

তাঁর টুপির আর একটি পালক হল বাংলা কম্পিউটার ফন্ট ‘হরফ’ নির্মাণ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সুমিতবাবু সম্পর্কে সুজনবাবু, যিনি নিজেও একজন ইঞ্জিনিয়ার, জানিয়েছেন – ইউনিকোড আসার আগে আশির দশকে সুমিত রায় তৈরি করেন ‘হরফ।’ ‘এই ফন্টের আগে ফোনেটিক ইনপুট ব্যবহার করে বাংলা লেখার পদ্ধতি আমি অন্তত দেখিনি। হরফ ফন্ট না থাকলে অবসর ডট নেট ওয়েবসাইট বানানো হত না।’ দুজনেই সত্তর সালে একই দিনে যোগ দিয়েছিলেন বেল্‌ ল্যাব-এ, তবে এঁদের সৃজনশীল কাজকর্ম নিবিড় ভাবে শুরু হয় আটের দশকের শুরুতে নিউ জার্সিতে বদলি হয়ে আসার পরে।

শুনেছি, প্রচুর জীবনীশক্তির অধিকারী সুমিতবাবু একবার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন; কিন্তু সেরে ওঠার পরেই আবার পুরনো জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। হৃদয়াবেগেও কোনও ঘাটতি দেখা দেয়নি। তবে বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন কানে শোনার সংকট দেখা দেওয়ার সময়। গানপাগল মানুষ, যদি তিনি শুনতেই না পান তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই দায়। গোড়ার দিকে হিয়ারিং এড-ও তেমন সুবিধে করতে পারছিল না। তাঁর কথাতেই বলিঃ ‘ওই যন্ত্র কানে গুঁজে ভীমসেন শুনলে মনে হত তিনি আগাগোড়া ভুল সুরে গাইছেন।’ বিটোভেন বদ্ধ কালা ছিলেন — এই ধরনের সান্ত্বনার কথাও কোনও কাজে আসেনি তাঁর। যন্ত্র বদলাতে বদলাতে শেষ পর্যন্ত সেটি কাজ চালাবার মতো হয়েছিল। এই সময় তিনি একটি অসাধারণ লেখা লেখেন, সেটির নাম ‘চেঁচিয়ে লাভ নেই।’ অবসরের পাতাতেই প্রকাশিত হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক বিভাগীয় সম্পাদক, যিনি নিজে বধিরতার শিকার, বধিরতা নিয়ে তাঁর পত্রিকার পাতায় একটি লেখা লিখেছিলেন। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘শাউটিং ও’ন্ট হেল্‌প,’ এই লেখাটির অনুপ্রেরণায় সুমিতবাবু লিখেছিলেন — ‘চেঁচিয়ে লাভ নেই।’ লেখকের কথায় লেখাটি প্রণোদিত, অনূদিত নয়। চমৎকার লেখা, ব্যক্তিগত সংকট বা ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ পড়েনি রচনার কোথাও। তথ্য আছে বিস্তর, আছে ছবি ও গ্রাফসমেত চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা কথাও। তবে লেখাটিতে যা খুব বেশি করে আছে তা হল সরসতা। এই সরসতা লেখকের অমলিন ব্যক্তিত্ব থেকেই উঠে এসেছে। একদম শেষের দিকে অবশ্য মর্মস্পর্শী একটি মন্তব্য আছে। লেখক জানিয়েছেনঃ ‘কবি লিখেছেন, ‘অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ,’ কিন্তু বধিরজনের কথা তো বলেননি।’

‘অবসর’ পত্রিকার সম্পদকদের আমন্ত্রণে ওঁদের পত্রিকার পাতায় আমি কিছু লেখালেখি করেছি। লেখার সংখ্যা খানদশেক তো হবেই। কিছু সাধারণ সংখ্যায়, কিছু বিশেষ সংখ্যায়। বিশেষ সংখ্যাগুলির একটি ছিল ‘বিকাশ রায় সংখ্যা।’ সংখ্যাটির প্রস্তুতি-পর্বে সুমিতবাবুর সঙ্গে টেলিফোনে আমার বেশ কয়েক দিন কথা হয়েছিল। অভিনেতা সম্পর্কে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল, তার সদুত্তর পেয়েছি। বড় অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর প্রাপ্য নানা পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন — এই কথাটি একদিন আমাকে জানাবার পরে সুমিতবাবু বলেছিলেন, সম্ভব হলে এই বিষয়টি যেন আমি আমার লেখায় রাখি। খুব খাঁটি কথা। আমরা যারা অভিনেতা বিকাশ রায়ের অনুরাগী, সেই সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে সুবিশাল, এককথায় সুমিতবাবুর ওই কথাটি মেনে নেবে। আমরা প্রত্যেকেই চাই প্রতিভা স্বীকৃতি পাক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত একবার সম্মাননা পাওয়ার পরে বলেছিলেনঃ সম্মাননা, পুরস্কার ক্ষেত্রে জলসেচের ন্যায়। জমি উর্বর হয়, ভালো ফসল ফলে। কিন্তু শিল্প-সাহিত্যে এই ঘটনা তো সব সময় ঘটে না। বহু যোগ্য মানুষ স্বীকৃতি পাননি। এমন দৃষ্টান্ত তো অনেক আছে। আমেরিকা, সুমিতবাবু যে দেশে পাঁচ দশকের অভিবাসী ছিলেন, সেই দেশে হেরমান মেলভিল স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর আশি বছর পরে। টলস্টয়ের ওই কথাটি অমোঘ — ‘গড সিজ দ্য ট্রুথ, বাট ওয়েটস।’ অনেক সময় সত্যের দিকে ঈশ্বরের চোখ পড়ে বড্ড দেরিতে।

বিকাশ রায়ের অভিনয়-ক্ষমতা আমাকে মুগ্ধ করেছে নানা ভাবে এবং দীর্ঘদিন ধরে, সেসব কথা আমি আমার মতো করে বলার চেষ্টা করেছিলাম ওই লেখাটিতে, কিন্তু তাঁর পুরস্কার পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়টির মধ্যে যেতে পারিনি। তার প্রথম কারণ হল, স্থানীয় চলচ্চিত্র-পুরস্কার সম্পর্কে আমার ধারণা স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয় কারণ, পুরস্কারের নিরিখে কোনও গুণী মানুষকে দেখতে ইচ্ছে করে না। আমার প্রিয় কোনও শিল্পী পুরস্কার পেলে অবশ্যই খুশি হব, তবে না পেলেও কিচ্ছু এসে যায় না। এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে সুমিতবাবুর আরও একটি ফোন পেয়েছিলাম। লেখাটি তাঁর ভালো লেগেছে সে-কথা জানাবার জন্যেই ফোন।

সিনসিনাটি, ওহিও থেকে শর্বরী গুপ্তের সম্পাদনায় ‘দুকূল’ নামের একটি মুদ্রিত মাসিক পত্রিকা সাড়ম্বরে প্রকাশিত হত। কলকাতা ও বাংলাদেশের আউটলেটেও পাওয়া যেত পত্রিকাটি। অধুনালুপ্ত ‘দুকূল’ বিকাশ রায়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। সেই সংখ্যায় সুমিতবাবু লিখেছিলেন ‘বাবার কথা,’ ভারী সুন্দর সেই লেখাটি। অকপট, অন্তরঙ্গ এই লেখায় অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস ছিল না। শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম ও ভালোবাসার সঙ্গে, একটু বুঝি দূরত্ব বজায় রেখে, মর্যাদাব্যঞ্জক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বাবাকে দেখার চেষ্টা করেছেন ছেলে। ‘দুকূল’-এর পাতায় আরও কিছু সুন্দর লেখা লিখেছেন সুমিতবাবু। ওই পত্রিকাটিতে আমিও কিছু লেখালেখি করেছি। একবার সম্পাদক পত্রিকাটিকে আরও ভালো করার জন্য আমার কিছু পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমার একটি পরামর্শ ছিল, সুমিত রায়কে দিয়ে যত পারেন লেখান। সেই সব পরামর্শ-দেওয়া লেখাটি বোধহয় দুকূলে ছাপাও হয়েছিল।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘যুগ’ নামের একটি পত্রিকায় লেখার জন্যে সুমিতবাবুকে অনুরোধ করেছিলাম আমি, কিন্তু অনিবার্য কোনও কারণে সেই সময় তিনি লিখে উঠতে পারেননি। তবে ওঁর স্ত্রী বীথি রায় ওঁকে লেখা সুরসিক, বিদগ্ধ সৈয়দ মুজতবা আলীর অপ্রকশিত দুটি চিঠি আমাদের পত্রিকায় ছাপতে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল চিঠিসংক্রান্ত নানান তথ্য, যা একটি উপভোগ্য রচনায় পরিণত হয়েছিল। ‘যুগ’ পত্রিকার প্রকাশ সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুমিতবাবুকে দিয়ে আর লেখাবার সুযোগ পাইনি।

এতদিন তো সুমিতবাবুর সঙ্গে ফোনে ফোনেই কথাবার্তা চলেছিল; সামনাসামনি দেখা ও গল্প করার সুযোগ মেলে ২০১৮ সালে নিউ জার্সির অ্যাটলান্টিক সিটি কনভেনশন সেন্টারে — একদিন নয়, পর-পর তিনদিন। সেবার উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলনের সাহিত্য সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে ওখানে গিয়েছিলাম। সঙ্গে আমার স্ত্রী শ্যামলীও ছিল। সম্মেলন চলেছিল তিনদিন—২৯ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত। কাজের দেশের মানুষরা পালাপার্বণ সারেন উইক-এন্ডে। সাহিত্য-সমাবেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পর-পর দুদিন। প্রথম দিন আলোচনা-সভা, দ্বিতীয় দিন রচনাপাঠ। প্রথমদিনের সঞ্চালক ছিলেন আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, দ্বিতীয় দিনে অলকেশ দত্তরায়। দুজনেই আমেরিকার বাসিন্দা। শ্রোতার আসনে ছিলেন ওই দেশের বেশ কয়েকজন গুণিজন। সুমিত রায় ও তাঁর স্ত্রী বীথি রায়, সুজন দাশগুপ্ত, শমীতা দাশ দাশগুপ্ত, স্বামীসহ নিনা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। সুজন-শমীতার চিকিৎসক-কন্যা সায়ন্তনী তো এখন আমেরিকার একজন গণ্যমান্য লেখিকা। তার ‘দি সারপেন্ট’স সিক্রেট, কিরণমালা অ্যান্ড দ্য কিংডম বিয়ন্ড’ নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বেস্টসেলার লিস্টে অনেকদিন ছিল। ফুটফুটে দুটি ছেলেমেয়ে নিয়ে সায়ন্তনীও উপস্থিত ছিল সম্মেলনে। আমাদের অনুষ্ঠানের শেষে এঁদের সঙ্গে বেশ  কিছুক্ষণ গল্প হয়েছিল। তৃতীয় দিন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার দায় ছিল না আমার ঘাড়ের ওপর, তার ফলে সেদিন আড্ডা চলেছিল একটু বেশি সময় ধরে। সুমিতবাবুর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প হয়েছিল, গল্পের বিষয় ছিল প্রধানত শিল্পসাহিত্য। আচমকা একটু অস্থির ভঙ্গিতে উনি বলে উঠেছিলেন, ‘দূর, এ ভাবে  গল্প করে সুখ নেই। একদিন একটু বিয়ারটিয়ার নিয়ে বসতে পারলে ভালো হত। সম্মেলনের পরে আপনার প্রোগ্রাম কী?’

বঙ্গসম্মেলনে সস্ত্রীক সুমিত রায়ের সঙ্গে।

মানুষটির সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারতে সত্যিই খুব লোভ হচ্ছিল, কিন্তু উপায় নেই। কাছের একটি হোটেলে চারদিন থাকার ব্যবস্থা করেছে সম্মেলন-কর্তৃপক্ষ। সম্মেলন শেষ হওয়ার পরদিনই সকালেই চলে যাব মন্টগোমারি, এক আত্মীয় আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে হোটেলেই চলে আসবে। তবে সামান্য সময়ের জন্য হলেও সুমিতবাবুর সঙ্গে এই মেলামেশা স্মরণীয় হয়ে আছে আমার কাছে।

সুজনবাবু, শমীতা প্রতি বছরই কলকাতায় আসেন। ওঁদের সঙ্গে দেখা হয়, গল্প হয়; কিন্তু সুমিতবাবু দেশে ফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন দীর্ঘদিন। ভবিষ্যতে আসার কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। সম্মেলনের সুবাদে ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গিয়েছিল, এটা আমার ব্যক্তিগত লাভ।

গুণী এবং বর্ণময় মানুষটির কথা এখন মনে পড়ছে খুব বেশি করে। ওঁর অবর্তমানে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে ঠিকই; তবে এ-কথা বলতে আমাদের কারুরই দ্বিধা নেই যে, এই মানুষটি তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকবেন দীর্ঘকাল।

 

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ছোটগল্পকার। কর্মজীবনে আনন্দবাজার পত্রিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বছর। এখন পুরো সময়টাই লেখালেখির কাজ করছেন। গত চল্লিশ বছরে উনি বহু গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও গোয়েন্দাকাহিনী লিখেছেন। এযুগের যুবক সম্প্রদায়ের অনেকেই বড় হয়েছেন ওঁর লেখা ছোটদের বই পড়ে।

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *