সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

প্রথমেই আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি সকল ‘অবসর’ অনুরাগীদের কাছে। অনিবার্য কারণে এবারের উৎসব সংখ্যা প্রকাশে বিলম্ব হল। সেইসঙ্গে তাঁদের জানাই আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা। আশাকরি প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কাটিয়ে তাঁদের সকলের উৎসবের দিনগুলি আনন্দে কেটেছে।

তাঁর একটি গানে তিনি নিজেই লিখেছেন,

‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা’।

সত্যিই, বাংলার সঙ্গীত জগতে সলিল চৌধুরীর আবির্ভাবকে একেবারে ঝড়ের সঙ্গেই তুলনা করা যায়।
বাংলা গান রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে এক অসাধারণ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের সৃষ্টির অপূর্ণতা নিয়ে সংশয়াবিষ্ট ছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন তাঁর উত্তরসূরিকে,

আমার কবিতা, জানি আমি,
গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী।
কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন,
কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন,
যে আছে মাটির কাছাকাছি,
সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি।

কবিতার ক্ষেত্রে আগে হলেও তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি গানের ক্ষেত্র সেভাবে পূর্ণ হয়নি। সেই স্থান পূর্ণ করলেন তাঁর ভাবশিষ্য সলিল চৌধুরী। ‘মাটির কাছাকাছি’ মানুষের সংগ্রামের কথা, বিদ্রোহের কথা তিনি যে ধারাবাহিকতায় তাঁর গানে তুলে ধরলেন বাংলা গানে তা এর আগে সম্ভব হয়নি। ‘আজ হরতাল আজ চাকা বন্ধ’, ‘ভাঙা কুটীরের সমাধি’, ‘বিচারপতির (তোমার) বিচার’, ‘ছিন্নপালে জয়পতাকা তুলে সূর্যতোরণ’ হানা দেওয়া, ‘কাস্তেটা দাও শান’, ‘পথেই হবে পথ চেনা’ ইত্যাদি শব্দবন্ধের বহুল প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার জন্ম দিলেন।

পরবর্তী কালে আমরা তাঁর গানে আরও বিভিন্ন বাঁক লক্ষ করলাম। ধীরে ধীরে হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তাঁর সঙ্গীতচর্চার সমাদর হল। বিভিন্ন যন্ত্রানুষঙ্গের প্রয়োগে তিনি বৈচিত্র্য আনলেন। আজ সারা ভারতবর্ষই তাঁর গানে মোহিত।

আগামী ১৯শে নভেম্বর সলিল চৌধুরীর শতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। সেই উপলক্ষে ‘অবসর’ পত্রিকার এই সংখ্যায় তাঁকে নিয়ে রইল কিছু লেখা।

অমিত চক্রবর্তীর লেখায় রইল তাঁর কবিসত্তার সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন। ভাস্কর বসু ও তথাগত ভট্টাচার্যের লেখায় প্রচেষ্টা রইল তাঁর গীতিকাব্যের নতুন দিক উন্মোচনের। অনিন্দ্য রায়চৌধুরীর লেখায় রয়েছে তাঁর জীবনের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সলিলের গানের অঙ্গাঙ্গী অনুভব। অনীশ মুখোপাধ্যায়ের লেখাতে রয়েছে একটি বড় আক্ষেপ যার সঙ্গে আমরা অনেকেই সম্মত হতে পারব।

শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় এবং বাসবদত্তা কদম ফিরে দেখার চেষ্টা করেছেন সলিল চৌধুরীর পথযাত্রা। সমর্পিতা ঘটকের লেখায় রইল তাঁর জীবনে কৈশোর থেকেই কীভাবে তিনি আচ্ছন্ন সলিল সঙ্গীতে।

আমরা আশা করছি যে সলিল চৌধুরীর অবদানের প্রতি আমাদের এই বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য আমাদের পাঠকদের তৃপ্ত করবে।

এছাড়া অন্যান্য বিভাগেও রাখা হল কয়েকটি লেখা।
কলরব রায়ের লেখায় ক্রিকেটের ‘তিন নম্বর’ ব্যাটারের স্থানাধিকারী ভারতীয়দের মূল্যায়ন। ক্রিকেটের বাইরেও টেবিল টেনিসেও যে ভারতের ঔজ্জ্বল্য কিছু কম নয় তা জেনেছি অর্চন চক্রবর্তীর লেখায়। পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন দাবা খেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে।

সংযুক্তা রায়ের লেখায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রন্থাগার নিয়ে আলোচনা। সুনৃতা মাইতি লিখেছেন একটি সুন্দর রম্যরচনা।

ভারতীয় বইয়ের জগতে এখন সর্বালোচিত নাম ‘হার্ট ল্যাম্প’। লেখিকা ইতিমধ্যেই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। সেই বইয়ের পর্যালোচনা করেছেন নন্দিতা মিত্র।

আশা করি এবারের উৎসব সংখ্যা আমাদের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের মন জয় করতে পারবে।

জন্ম কলকাতায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিণ চব্বিশ-পরগনার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলে। ১৯৮৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে। শখের মধ্যে অল্প-বিস্তর বাংলাতে লেখা - অল্প কিছু লেখা রবিবাসরীয় আনন্দবাজার, উনিশ-কুড়ি, নির্ণয়, দেশ, ইত্যাদি পত্রিকায় এবং বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন (সৃষ্টি, অবসর, অন্যদেশ, পরবাস ইত্যাদিতে) প্রকাশিত। সম্প্রতি নিজের একটি ব্লগ চালু করেছেন – www.bhaskarbose.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *