নতুন ধাঁধা
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
বহুদিন অবসর-এর ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা বিভাগে নতুন ধাঁধা যোগ করা হয় নি। কিছু কিছু আগ্রহী পাঠক নতুন ধাঁধার কথা মাঝে মাঝেই আমাদের বলছিলেন। সম্প্রতি সুমিত রায় বেশ কয়েকটি ধাঁধা খুঁজে পেতে, বাংলায় লিখে, সাজিয়ে গুছিয়ে এনে দিয়েছেন, সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রথম তিনটি ধাঁধা গতবারের সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছিল। এবার দেওয়া হল আরও তিনটি। খেয়াল করবেন এবারের ধাঁধাগুলি আগের থেকে একটু কঠিন। যাঁরা মাথা ঘামাতে ভালোবাসেন - তাঁরা নিরাশ হবেন না। পরের কিস্তিগুলো বানানো হচ্ছে আরো ঝাল-মশলা দিয়ে।
ধাঁধা ৪
একটা মাঠের মধ্যে বিজোড় সংখ্যক সৈন্য জড়ো হয়েছে, তাদের প্রতিটি জোড়ের পরস্পরের মধ্যে দূরত্বটা ভিন্ন। তাদের প্রত্যেকের কাজ হচ্ছে সবচেয়ে কাছের সৈন্যটির ওপর নজর রাখা। তাহলে অন্তত একজন সৈন্য আছে যার ওপর কেউ নজর রাখছে না -- এটা কি ঠিক?
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
সৈন্যদের পারস্পরিক দূরত্বের যে তালিকা তার মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বে যে দুই সৈন্য আছে তাদের দেখা যাক। তাদের ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে দেখতেই হবে। এখন তাদের মধ্যে একজনের ওপরেও যদি দলের অন্য কোনো সৈন্য নজর রাখে তাহলে অন্য কোথাও অন্তত একজন সৈন্য থাকতে হবে যার ওপর নজর রাখার জন্য কেউ নেই (একে পিজিয়ন হোল প্রিন্সিপল বলা হয়), আর তাহলে তো আমরা যা খুঁজছিলাম তা পেয়ে গেলাম। তা যদি না হয়, অর্থাৎ এই দুই সৈন্যের ওপর তারা ছাড়া আর কেউ নজর রাখছে না, এই যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা এই দুজন সৈন্যকে আমাদের সমস্যা থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে পারি, তাতে সমস্যার কোনো রদবদল হবে না। এখন দূরত্বের তালিকায় বাকি যা রইলো তার মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বের সংখ্যা একটাই পাওয়া যাবে, কেননা আমাদের বলা হয়েছে যে সব সংখ্যাই আলাদা আলাদা। সেই দূরত্বের দুই সৈন্যকে নিয়ে আবার আমরা আগের যুক্তি প্রয়োগ করতে পারি। এভাবে চলতে চলতে হয় আমরা অন্তত একজন সৈন্য পাবো যার ওপর কেউ নজর রাখছে না, নয় আমরা শেষ জোড়টিকেও বাদ দিতে পারবো। যেহেতু বলা হয়েছে দলে সৈন্যের সংখ্যা বিজোড়, তাহলে শেষ যে সৈন্যটি রইলো তাকে দেখার কেউ নেই, কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা সে যে নজর দেবে এমন কেউ আর বাকি নেই -- এতে অসঙ্গতি, contradiction আছে।
অতএব দলে অন্তত এমন একটা কোনো সৈন্য থাকবেই যার ওপর একাধিক সৈন্য নজর রাখছে, আর তাহলে পিজিয়ন হোল প্রিন্সিপল ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি যে আমাদের প্রতিপাদ্যটা ঠিক।
ধাঁধা ৫
একটা দেয়ালে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মার্কাওয়ালা আলো আর তার সুইচ আছে, সব আলো নিভে আছে। প্রথম একজন এসে সব কটি আলো জ্বালিয়ে দিলো। তার পরের লোকটি একটা অন্তর একটা (অর্থাৎ জোড় নম্বর) আলো নিভিয়ে দিলো। তৃতীয়জন এসে তিনের গুণিতক সব আলো জ্বেলে দিলো। এমনি ভাবে একশো নম্বর লোক চলে যাবার পর কোন কোন আলো জ্বলে থাকবে?
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
যে কোনো সংখ্যার সব গুণনীয়ক (factor) জোড়ে জোড়ে লেখা যায়, যেমন একটা গুণনীয়ক যদি হয় 'ক' তাহলে তার সঙ্গে জোড় বাঁধবে 'খ', যেখানে ক x খ = আমাদের আলোচিত সংখ্যা, ধরা যাক 'ন'। আমাদের ধাঁধায় এর প্রয়োগ হলো যে 'ক'-নং আর 'খ'-নং লোক, দুজনেই সুইচ টেপার পরে 'ন'-নং আলোর অবস্থায় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না। যদি 'ন' সংখ্যাটা বর্গফল (square) হয় তাহলে অবশ্য দুজন সুইচ টিপলো না, কাজেই আলোর অবস্থা বদলে থাকবে। এক থেকে একশোর মধ্যে বর্গ সংখ্যা হচ্ছে ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫, ৩৬, ৪৯, ৬৪, ৮১ আর ১০০, কাজেই সবাই চলে যাবার পর শুধু এই নম্বরের আলোগুলো জ্বলে থাকবে।
ধাঁধা ৬
পাঁয়তারার প্রশ্ন। যে ঘড়ি দুমিনিট স্লো আর যে ঘড়ি একেবারেই চলছে না, এ দুটোর মধ্যে কোন ঘড়িটা ভালো। উত্তর, যে ঘড়ি বন্ধ কেননা তাতে দিনে অন্তত দুবার ঠিক সময় দেখায়।
শিবঠাকুরের আপন দেশে ঘড়ির ঘণ্টার আর মিনিটের কাঁটা দুইই একেবারে একরকম দেখতে, আর সবই এখানকার মতো, যা হওয়া উচিত। কাঁটা ঘোরে নিরবচ্ছিন্নভাবে (continuously), টিকটিক করে লাফিয়ে লাফিয়ে নয়। বিস্ময়ের কথা এই যে এমন একটা ঘড়ি দেখেও প্রায় সব সময়েই ঠিক কটা বেজেছে তা বলা যায়, মাত্র কয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া। প্রশ্ন হচ্ছে, দিন না রাত্রি তা বলা দরকার যদি না থাকে তাহলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কতোবার এই ব্যতিক্রম, -- অর্থাৎ ঠিক কটা বাজে বোঝা যাচ্ছে না -- হতে পারে? বাকি সময় ঘড়ি দেখে ঠিক সময় বলা যাবে।
উত্তরের জন্যে ক্লিক করুন : জানতে চাইলে একবার, লুকোতে হলে আর
একবার
আমরা সব কোণ মাপবো কেন্দ্র থেকে বারোটার দাগ অবধি টানা লাইন থেকে, এটা আমাদের বেসলাইন। আমরা জানি যে মিনিটের কাঁটা ঘণ্টার কাঁটার বারোগুণ জোরে ঘোরে, তাই যে কোনো সময়ে বেসলাইনের সঙ্গে ঘণ্টার কাঁটার যতোটা কোণ (ধরা যাক 'ঘ'), মিনিটের কাঁটার কোণ (ধরা যাক 'ঙ') তার বারোগুণ বেশী। মনে রাখতে হবে যে মিনিটের কাঁটা এক একবার বেসলাইন ঘুরে এলেই আমরা মিনিটের কাঁটা বেসলাইনের সঙ্গে যে কোণ করে আছে বলে দেখতে পাচ্ছি (ধরা যাক 'ম') তা ঙ-র থেকে ৩৬০ ডিগ্রী করে করে কমে যাচ্ছে। তাহলে আমরা লিখতে পারি:
ঙ = ঘ x ১২ বা ঘ x ১২ = ম + ৩৬০ x ন, যেখানে ন = ০, ১, ২, ... এমন কোনো পূর্ণসংখ্যা।
এখন শিবঠাকুরের ঘড়িটা দেখা যাক, তার দুটো কাঁটা, 'ক' আর 'খ'। ধরা যাক কোনো এক সময় বেসলাইনের থেকে মেপে দেখা যাচ্ছে যে 'ক'-এর কোণ 'চ' আর 'খ'-এর কোণ 'ছ'। এবার আমরা দেখবো কোন সমীকরণটা ঠিক:
চ x১২ = ছ + ৩৬০ x ন নাকি ছ x১২ = চ + ৩৬০ x প, (ন বা প-এর জায়গায় কোনো পূর্ণসংখ্যা) ।
যদি প্রথমটা মেলে তাহলে ক হচ্ছে ঘণ্টার কাঁটা, খ মিনিটের কাঁটা আর দ্বিতীয়টা মিললে খ হচ্ছে ঘণ্টার কাঁটা, ক মিনিটের কাঁটা। ব্যস, আমরা সময় জেনে গেলাম।
কিন্তু যদি দুটো সমীকরণই ঠিক মিলে যায় তাহলে আমরা সঠিক সময় বলতে পারবো না (যদি না ক আর খ একই জায়গায় থাকে)। কখন এটা হবে? যখন ওপরের ওই দুটো সমীকরণই ঠিক। তার কারণ হবে ক যখন চ থেকে ছ-তে পৌঁছোবে, খ ততক্ষণে ছ থেকে চ-তে এসে যাবে। এবার দুটো সমীকরণ একসঙ্গে সমাধান করে আমরা পাচ্ছি:
ছ - চ = ন x ৩৬০/১৩ যেখানে ন =০, ১, ২, ৩, ... ( ন = ০ মানে দুটো কাঁটা এক জায়গায় আছে)।
এদিকে আবার ছ = ১২ x চ, তাহলে ছ - চ = ১১x চ, তাহলে চ = ন x ৩৬০/১৪৩, ন = ১,২,৩, ...। চ-কে আমরা ঘণ্টার কাঁটা ধরেছি।
এক ঘণ্টায় (মনে রাখতে হবে যে এক ঘণ্টায় ঘণ্টার কাঁটা ৩০ ডিগ্রী এগিয়েছে) কতবার এমন হতে পারে। একটু ভাবলেই আমরা পাবো ১২ বার। কিন্তু তার মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় একবার করে দুটো কাঁটা যখন এক জায়গায় থাকবে তখন আমরা ঠিক সময় বলতে পারবো। তাহলে চব্বিশ ঘণ্টায় আমরা (১২ - ১) x ২৪ = ২৬৪ বার
ঘড়ি দেখে ঠিক কটা বাজে বুঝতে পারবো না।
পরের তিনটে ধাঁধা
সুমিত রায়ের সৌজন্যে
উৎস - Mathematical Puzzles: A Connoissueur's Collection" - Peter Winkler, A.K.Peters, MA, 2004
লেখক পরিচিতি: পাঁচ দশক হোলো আমেরিকাবাসী। চাকরীজীবনে তথ্য- ও সংযোগপ্রযুক্তি বিপ্লবী, যদিও পদাতিকমাত্র। অবসর নেবার পর কিছু লেখালেখি করে থাকেন। ঘোর রবীন্দ্রপ্রেমী, নিউ জার্সিতে এক রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার স্কুল ও তিনটি সফল রবীন্দ্রমেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গীতবিতান.নেট রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর জ্ঞানকোষ মাত্রার এক বিস্ময়কর ওয়েবসাইট, সার্ধশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি। "অবসরের" সঙ্গে জন্মকাল থেকে নানাভাবে যুক্ত।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।