প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে কামারপুকুর ও জয়রামবাটি (আগে যা প্রকাশিত হয়েছে)

কামারপুকুর ও জয়রামবাটি বেড়াতে গিয়ে কিছু ছবি তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে প্রেক্ষাপটের বর্ণনা জুড়ে দিয়ে যে 'সচিত্র ভ্রমণ কাহিনী' তৈরী হবে তার কোন আগাম পরিকল্পনা ছিল না। থাকলে ঠাকুর ও শ্রীশ্রীমায়ের স্মৃতি বিজড়িত সন্নিহিত আরও অনেক জায়গার ছবি ও কাহিনী লিপিবদ্ধ করে বিস্তৃত আকারে তা প্রকাশ করা যেত। বিভিন্ন বই ও প্রকাশিত প্রবন্ধে পরিবেশিত সূত্র থেকে চিত্র-পরিচিতি ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীমাকে নিয়ে বহু বই লেখা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কিছুটা গবেষণার কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সে চেষ্টা করা হয় নি। সেটা উদ্দেশ্যও নয়। শুধু তথ্যের বর্ণনা অনেক সময় নীরস হয়ে পড়ে। তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছবিটি সামনে রেখে যারা কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করতে এবং ভাবের জগতে বিচরণ করতে ভালবাসেন, এই সচিত্র কাহিনী সাধারণভাবে তাদের সাহায্য করবে বলে মনে হয়।

দীপক সেনগুপ্ত

(১) কামারপুকুরের পুকুর
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গে লিখিত আছে " হুগলী জেলার উত্তর পশ্চিমাংশ যেখানে বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলাদ্বয়ের সহিত মিলিত হইয়াছে, সেই সন্ধিস্থলের অনতিদূরে তিনখানি গ্রাম ত্রিকোণমণ্ডলে পরস্পরের সন্নিকট অবস্থিত আছে। গ্রামবাসীদের নিকট ঐ গ্রামত্রয় শ্রীপুর, কামারপুকুর ও মুকুন্দপুর রূপে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত থাকিলেও উহারা একমাত্র কামারপুকুর নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে।" কামারপুকুরের পূর্ব নাম ছিল সুখলালগঞ্জ। তখনকার জমিদার সুখলাল গোস্বামীর নামানুসারেই এই নামকরণ।

১ নং চিত্র

শোনা যায় জমিদার মানিকচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় কিছু বাস্তুচ্যুত কর্মকারকে এখানে বসবাসের অনুমতি প্রদান করে তাদের নানান কাজে নিয়োগ করেন এবং তাদের দ্বারা একটি পুকুরও খনন করান। এই পুকুরই কামারপুকুর নামে খ্যাত এবং এরই নাম অনুসারে গ্রামের নাম হয়েছে কামারপুকুর। তবে এই পুষ্করিণী খনন নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকের মতে গ্রামের কোনো ধণাঢ্য ব্যক্তি এটি খনন করান এবং কামারপুকুর গ্রামে অবস্থিত বলেই এর নাম কামারপুকুর। তবে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে কামারদের দ্বারা খনন করা পুকুরের নামেই গ্রামের নাম কামারপুকুর। এই পুকুরটি যথেষ্টই বড় এবং এর পাড়ে এখন অনেক বাসস্থান তৈরী হয়েছে। কামারপুকুরের দুটি ছবি ১ এবং ২ নং চিত্রে দেখা যাচ্ছে।

২ নং চিত্র
.
(২) ধনী কামারিনী ও ভবতারিনী মন্দির
মধুসূদন কর্মকারের কন্যার নাম ছিল ধনী। অপুত্রক বিধবা ধনী কামারিনী কামারপুকুরে একটি ক্ষুদ্র কুটীরে বাস করতেন। ঢেঁকিশালে ঠাকুরের জন্মের অব্যবহিত পরে অনবধানবশতঃ তিনি ধান সিদ্ধ করবার চুল্লীর ভিতর গড়িয়ে পড়লে ধনীকামারিনী তাকে ভস্ম মাখা অবস্থায় উনুনের ভিতর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসেন। ধনী শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মা চন্দ্রমণি দেবীকে নানা ভাবে সাহায্য করতেন এবং বালক গদাধরকে রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। গদাধর ধনীকে 'মা' বলে ডাকতেন। গদাধর কথা দিয়েছিলেন উপনয়নের সময় ধনীর কাছ থেকেই প্রথম ভিক্ষা গ্রহণ করবেন। নানান দিক থেকে আগত অনেক বাধা সত্বেও গদাধর তার কথা রেখেছিলেন। ভক্তিমতী ভিক্ষামাতা ধনীও গদাধরকে নিজের সন্তানের মত স্নেহ করতেন। বস্তুতঃ ধনীই মর্ত্যে আগত মহাপুরুষের সর্বপ্রথম মুখদর্শন করে ধন্য হন। অক্ষয়কুমার সেন তাঁর রামকৃষ্ণ পুঁথিতে কি লিখেছেন দেখা যাক :
" মরি কি সৌভাগ্য তব ধন্য কামারিনী।
  ভিক্ষা দিলে তাঁয় বিশ্বে ভিক্ষা দেন যিনি।।
  কড়ে রাঁড়ি অপুত্রক ধনী কামারিনী।
  না বিইয়ে হৈল এবে রামের জননী।।"
১৩৫২ বঙ্গাব্দের ২১শে ফাল্গুন (১৯৪৬ খৃষ্টাব্দের ৫ ই মার্চ) শ্রীরামকৃষ্ণের ধাত্রীমাতা ধনী কামারিনীর জন্মভিটার উপর একটি ছোট মন্দির তৈরী হয়। মন্দিরের দেয়ালে রামকৃষ্ণের জন্মকথা ও সেবাইত সম্বন্ধে লেখা রয়েছে। ৩নং চিত্রে মন্দিরটি এবং ৪ ও ৫ নং চিত্রে মন্দিরের গায়ে লেখা দেখা যাচ্ছে।

৩নং চিত্র

৪ নং চিত্র (মন্দিরের গায়ে লেখাগুলি পড়তে চাইলে ছবির উপর ক্লিক করুন)

৫ নং চিত্র (মন্দিরের গায়ে লেখাগুলি পড়তে চাইলে ছবির উপর ক্লিক করুন)

 

(চলবে)
.

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।