ছবিতে
কামারপুকুর ও জয়রামবাটি (আগে
যা প্রকাশিত হয়েছে)
৭. সীতানাথ পাইন ও দুর্গাদাস
পাইনের বাড়ী
ঠাকুরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ীর কিছুদূরে
বেনে পাড়ায় ছিল গ্রামের সম্পন্ন পরিবার সোনা-রূপার ব্যবসাদার
সীতানাথ পাইনের বাড়ী। সাত পুত্র ও আট কন্যার পিতা সীতানাথ
পাইনের সংসার ছিল প্রকাণ্ড বড়। নিজের পরিবারের লোকজন
ছাড়াও অনেক আত্মীয় তার বাড়ীতে বাস করতেন। শোনা যায় তার
সংসারের জন্য রোজ দশ খানা শিলে মশলা বাটা হত। ধর্মভীরু
সীতানাথ পাইনের স্ত্রী ও মাঝে মাঝে কন্যারাও বালক গধাধরের
বাড়ীতে যাতায়াত করতেন এবং গদাধরকেও তাদের বাড়ীতে আমন্ত্রণ
করতেন। গধাধরের অভিনয়, পাঠ ও সংগীত পরিবেশন তাদের বাড়ীর
প্রত্যেকেরই খুব প্রিয় ছিল। সীতানাথ নিজে বালক গদাধরকে
অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং তার সাধু প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক
ভাবকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের দেহত্যাগের পর ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ
লীলাপ্রসঙ্গ বইএর লেখক স্বামী সারদানন্দ ও স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ
প্রমুখ কয়েক জন সন্ন্যাসী কামারপুকুরে আসেন ঠাকুরের
জন্মস্থান পরিদর্শনে। সীতানাথ পাইনের মেয়ে রুক্মিণীর সঙ্গে
তখন তাঁদের দেখা হয়। গদাধরের সময়ের ১৭ বছরের রুক্মিণীর
বয়স তখন প্রায় ৬০ বছর। রুক্মিণী তখন তাদের বলেন, "
আমাদের বাড়ী এখান হইতে একটু উত্তরে - ঐ দেখা যাইতেছে।
আজকাল আমাদের বাড়ীর ভগ্নাবস্থা, পরিবারবর্গ একরূপ নাই
বললেই হয়। কিন্তু আমার বয়স তখন সতর-আঠার বত্সর ছিল,
তখন বাড়ীটি দেখিলে লক্ষীমন্তের বাড়ী বলিয়া বোধ হইত।
আমার পিতার নাম ঁসীতানাথ পাইন। ... গদাধর বাল্যকাল হইতেই
আমাদের সঙ্গে খেলা-ধূলা করিতেন ...বাবা তাঁহাকে বড় ভালবাসিতেন
- আপন ইষ্টের মত দেখিতেন ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করিতেন।"
সীতানাথ পাইনের খুড়তুতো ভাই দুর্গাদাস পাইনের বাড়ী
ছিল পাশেই। কিন্তু দুর্গাদাস দাম্ভিক প্রকৃতির
ছিলেন ও পরিবারের রক্ষণশীলতা সম্বন্ধে খুব সচেতন ছিলেন।
একদিনের এক ঘটনার মাধ্যমে গদাধর যে ভাবে তার দর্প চূর্ণ
করেছিলেন সেই কৌতূককর কাহিনী অনেকেরই জানা। সীতানাথ
ও দুর্গাদাসের বাড়ীর খড়ের চাল এখন আর নেই। তার বদলে
টিনের চাল হয়েছে। ১৮নং ছবিতে সীতানাথ পাইনের এবং ১৯নং
ছবিতে দুর্গাদাস পাইনের সেই বাড়ী দুটি দেখা যাচ্ছে।
১৮নং ছবি
১৯নং ছবি
৮. পাইনদের বিষ্ণুমন্দির
সীতানাথ পাইনের বাড়ীর সামনে ইঁটের তৈরী একটি শিবমন্দির
ছিল। সেই মন্দিরের বেদী ছাড়া আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
অনেকেই এই মন্দিরটিকে শিব মন্দির বলে অভিহিত করেন। শোনা
যায় মন্দিরের পূজারী ব্রাহ্মণ মূর্তিটি বরানগরে নিজের
বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। ২০ ও ২১ নং চিত্রে মন্দিরের বেদীর
বর্তমান অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
২০ নং ছবি (বড় করে দেখতে চাইলে ছবিতে
ক্লিক করুন)
২১ নং ছবি (বড় করে দেখতে চাইলে ছবিতে
ক্লিক করুন)
৯. শ্রীরামকৃষ্ণস্মৃতি নাট্যমঞ্চ
ধার্মিক সীতানাথ পাইন শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে বাড়ীর সামনে
যাত্রাগানের আয়োজন করতেন। একবার ১৮৪৬ খৃষ্টাব্দের ২৪
শে ফেব্রুয়ারী শিবরাত্রির সময়ে যাত্রার আয়োজন করা হয়।
যার শিব সাজবার কথা ছিল সে হাঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বালক
গদাধরকে শিবের ভূমিকায় অভিনয় করতে বলা হয়। যথাসময়ে শিবের
সাজে সজ্জিত হয়ে গদাধর মঞ্চে প্রবেশ করেন। জটাজুট সাজে
তার ভঙ্গী ও ভাব তন্ময়তা এত মর্মস্পর্শী হয়েছিল যে উপস্থিত
দর্শকেরা নিস্তব্ধ ভাবে গভীর আগ্রহে তার অভিনয় দেখার
জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু মঞ্চে উপস্থিত হয়েই গদাধর
শিবের ভাবে বিভোর হয়ে পড়েন এবং তার চোখ দিয়ে অবিরল ধারায়
অশ্রু নির্গত হতে থাকে। তিনি বাহ্যজ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ায়
সেদিন আর যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় নি। সেই স্মৃতি বিজড়িত
শিব মন্দিরটি এখন আর নেই। সে দিনের সেই অসাধারণ ঘটনার
স্মৃতি রক্ষার্থে সম্প্রতি এখানে শ্রীরামকৃষ্ণ স্মৃতিনাট্যমঞ্চ
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২২নং চিত্রে স্থানটির দিক নির্দেশ,
২৩নং চিত্রে নাট্যমঞ্চটি এবং ২৪নং চিত্রে ঘটানাটির ব্যাখ্যা
সম্বলিত বিবরণ দেখা যাচ্ছে।
২২ নং ছবি
২৩ নং ছবি (বড় করে দেখতে চাইলে ছবিতে
ক্লিক করুন)
২৪ নং ছবি (বড় করে দেখতে চাইলে ছবিতে
ক্লিক করুন)
দীপক
সেনগুপ্ত