ছবিতে
কামারপুকুর ও জয়রামবাটি (আগে
যা প্রকাশিত হয়েছে)
১০.
হালদার পুকুর
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের
কুটীরের অনতিদূরে উত্তর দিকে হালদার পুকুর। পুকুরটি
খুবই বড় এবং এক সময়ে এর জলে গ্রামের অনেকে স্নান করা
ছাড়াও রান্নার ও পানীয় জলের প্রয়োজনও মেটাতেন। এই হালদার
পুকুরে ঠাকুরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়, মাতা চন্দ্রমণি
দেবী, সারদা দেবী, ঠাকুর নিজে এবং অন্যান্য অনেক ভক্ত
একদা স্নান এবং অন্যান্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন। সে কারণে
এর জল আজও পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।
বিয়ের পর সারদা
দেবী যখন খুবই অল্প বয়সে কামারপুকুরে আসেন তখন একাকী
হালদার পুকুরে স্নান করতে যেতে তার খুবই ভয় করত। কিন্তু
তিনি দেখতেন স্নানের প্রয়োজনে বাড়ী থেকে বের হলেই কোথা
থেকে সামনে এবং পিছনে চার জন করে কিশোরী তার সঙ্গে গল্প
করতে করতে স্নানের ঘাট অবধি যেত এবং স্নানের পর আবার
বাড়ী পর্যন্ত আসত। গ্রামেরই বালিকা মনে করে সারদা দেবী
তাদের কিছু বলতেন না। কিন্তু প্রতিবারই তিনি দেখতেন
তার বাড়ী পৌঁছবার পরই তারা কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যেত।
অনেকেই এই দৈব প্রেরিত বালিকাদের অষ্টসখি বলে মনে করেন।
ঠাকুর পরবর্তী কালে ভক্তদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় অনেক
বারই নানা প্রসঙ্গে এই হালদার পুকুরের উল্লেখ করেছেন।
কামারপুকুর অঞ্চল
এক সময়ে গোস্বামীদের অধীনে ছিল। পরে তৎকালীন জমিদার
লাহারা গোস্বামীদের অধিকাংশ জমি কিনে নেন। তখন হালদার
বংশেরও যথেষ্ট খ্যাতি প্রতিপত্তি ছিল। বাংলার নবাব বাহাদুর
কোন সময়ে হাল্দারদের অনেকগুলি নিষ্কর জমি দান করেন।
কেবল্চন্দ্র হালদার ও তার ছোট ভাই ফকিরচন্দ্র হালদার
কামরপুকের পৃথকভাবে বাস করতেন। অষ্টাদশ শতাবদীর শেষে
বা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে ফকিরচন্দ্র হালদার পুকুরটি
খনন করান। পুকুরটিতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দুটি পৃথক
ঘাট আছে। মহিলাদের ঘাট সম্বন্ধে বালক গদাধরের কৌতূকপূর্ণ
মন্তব্য ও আনুসংগিক ঘটনা অনেকেই জানেন। ২৫নং চিত্রে
পুরুষদের ও ২৬নং চিত্রে মহিলাদের জন্য নির্দ্দিষ্ট ঘাটটি
দেখা যাচ্ছে।
২৫নং চিত্র
২৬নং চিত্র
১১. গোপেশ্বর শিবমন্দির
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পিতার বন্ধু সুখলাল গোস্বামী আনুমানিক
১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গোপেশ্বর শিবের
মন্দিরটি নির্মাণ করান। মন্দিরটি খুবই ছোট। ভিতরে গৌরীপট্ট
শোভিত শিবলিঙ্গ বর্তমান। অনেকের মতে গোপীলাল গোস্বামী
এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা। আবার অনেকে মনে করেন সুখলাল
গোস্বামীরই অপর নাম গোপীলাল গোস্বামী। কামারপুকুর এবং
পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন গোপেশ্বর শিবকে খুব জাগ্রত
বলে মনে করতেন। দক্ষিণেশ্বরে সাধনার সময়ে একবার ঠাকুরের
দিব্যোন্মাদ অবস্থা হয়। অনিদ্রা ও গাত্র দাহে তিনি খুবই
কষ্ট পান। গঙ্গাপ্রসাদ কবিরাজ তখন ঠাকুরের চিকিৎসা করতেন।
চিকিৎসায় বিশেষ ফল না হওয়ায় সকলেই চিন্তিত ছিলেন। দুর্গাপ্রসাদ
কবিরাজ বলেছিলেন, ঠাকুরের ব্যাধি যোগজ এবং চিকিৎসায়
তা সারবার নয়। ক্রমে এই খবর কামারপুকুরে ঠাকুরের মা
চন্দ্রমণি দেবীর কাছে পৌঁছয়। তিনি ব্যাকুল হয়ে পুত্রের
রোগ নিবারণের জন্য ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই গোপেশ্বর
শিবমন্দিরে প্রায়োপবেশনে পড়ে থাকেন এবং প্রত্যাদেশ লাভ
করেন, 'মুকুন্দ পুরের শিবের নিকট হত্যা দিলে তাঁহার
মনোভিলাষ পূর্ণ হইবে। '
২৭নং চিত্র
২৭
নং চিত্রে মন্দিরের সম্মুখ্ভাগ ও চন্দ্রমণিদেবীর হত্যা
দেবার ঘটনার বিবরণ এবং ২৮ নং চিত্রে মন্দিরের অন্ধকারময়
অন্তর্ভাগ দেখা যাচ্ছে।
২৮নং চিত্র
দীপক
সেনগুপ্ত
্ত