প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে কামারপুকুর ও জয়রামবাটি (আগে যা প্রকাশিত হয়েছে)

১৪. চিনু শাঁখারীর বাস্তুভিটা

কামারপুকুর গ্রামের গোপাল শাঁখারীর ছেলে চিনু (শ্রীনিবাস বা চিনিবাস) শাঁখারী একজন পরম বৈষ্ণব ভক্ত ছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণদেবের চেয়ে প্রায় ১৭ বছরের বড় ছিলেন। বালক গদাধরের দিব্যভাব ও ঐশ্বরিক আবেশ তাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি গদাধরকে দেখে মনে করতেন শ্রীচৈতন্যদেব পুণরায় আবির্ভুত হয়েছেন। গ্রামে শ্রীনিবাসের একটি মুদির দোকান ছিল। এবং গদাধর প্রায়ই সেখানে গিয়ে বসতেন। গদাধরকে খাওয়াতে তিনি খুবই ভালবাসতেন। পরবর্তী কালে শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে 'চিনে শাঁখারী ' বলেও উল্লেখ করেছেন। শ্রীনিবাসের আক্ষেপ ছিল তিনি গদাধরের পরিণত বয়সের লীলা হয়ত দেখতে পাবেন না। এ সম্বন্ধে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথিকার বলেছেন -

আগত হয়েছে কাল জরাযুক্ত তনু।
কত হবে লীলাখেলা দেখিতে না পেনু । ।
বড়ই রহিল দুঃখ আমার অন্তরে।
করুণ কটাক্ষে রেখ অধীন কিঙ্করে। ।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে ঠাকুরের দেহরক্ষার পরেও প্রায় সাত বছর শ্রীনিবাস বেঁচে ছিলেন। দক্ষিণেশ্বরেও ঠাকুরের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। স্ত্রীবিয়োগের পর তিনি পূজার্চনা, জপধ্যান, সংকীর্তন ইত্যাদি নিয়েই থাকতেন। ঠাকুর তার সরল বিশ্বাস ও ভক্তির প্রশংসা করেছেন। তার সিদ্ধাই ছিল বলে শোনা যায়। তিনি দীক্ষাদান করতেন এবং অনেক ভক্তশিষ্যও করেছিলেন। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে তার দেহাবসানের পর তার শিষ্যরা তাকে মুকুন্দপুরের শিবমন্দিরের কাছেই সমাধিস্থ করেন। বর্তমানে তার সেই মুদির দোকান দূরের কথা, তার বসত বাড়ীর কোন চিহ্ণই অবশিষ্ট নেই। কেবল তার বাস্তুভিটাটি রয়েছে এবং তা রামকৃষ্ণমঠ কর্তৃক অধিগৃহীত হয়েছে। ৩৩ নং চিত্রে চিনু শাঁখারীর বাস্তুভিটাটি দেখা যাচ্ছে।

৩৩ নং চিত্র

১৫. মুকুন্দপুরের শিবমন্দির

রামকৃষ্ণমঠের কিছুদূরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই শিবমন্দিরটি অবস্থিত। এটি বুড়ো শিবের মন্দির নামেও খ্যাত। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের সাধনাবস্থায় তাঁর দিব্যোন্মাদ অবস্থার কথা জানতে পেরে তাঁর মা চন্দ্রমণিদেবী পুত্র সত্যই উন্মাদ হয়ে গেছে মনে করে প্রথমে গোপেশ্বরের শিব মন্দিরে হত্যা দেন এবং পরে প্রত্যাদেশ পেয়ে এই বুড়ো শিবের মন্দিরে প্রায়োপবেশনে পড়ে থাকেন। এখানেই তিনি শিবের আদেশ পান, "ভয় নাই, তোমার পুত্র পাগল হয় নাই। ঐশ্বরিক আবেশে তাহার ঐ রূপ অবস্থা হইয়াছে। " তখন চন্দ্রমণিদেবী আশ্বস্ত হন। পূর্বে মন্দিরটির মাটির দেওয়াল ও খড়ের চাল ছিল। ১৩৯৪ বঙ্গাব্দের ২ রা ফাল্গুন ভক্তদের সমবেত চেষ্টায় মন্দিরটি পাকা করা হয়েছে। শোনা যায় গোকুল নায়ক নামে কোন এক ব্যক্তি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের পশ্চিম দিকে ভক্ত চিনু শাঁখারীর সমাধি স্থান। ৩৪ নং চিত্রে পাকা মন্দিরটি, ৩৫ নং চিত্রে চিনু শাঁখারীর সমাধি স্থানের পরিচয় জ্ঞাপক লেখা, ৩৬ নং চিত্রে মন্দির নির্মানে সাহায্যকারীদের নাম এবং ৩৭ নং চিত্রে মন্দিরের পাশে পুষ্করিণী দেখা যাচ্ছে।

৩৪ নং চিত্র

৩৫ নং চিত্র

৩৬ নং চিত্রে (বড় করে দেখতে চাইলে ছবির উপর ক্লিক করুন)

৩৭ নং চিত্র

১৬. বুধুই মোড়লের শ্মশান

কামারপুকুর গ্রামের পূর্বপ্রান্তে বুধুই মোড়লের শ্মশান। দশঘরা নিবাসী বুধুই মোড়লের নামে এই নামকরণ। তিনি এখানে একটি পুষ্করিণীও খনন করিয়েছিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কৈশোরে অনেক সময় ভূতির খালের শ্মশান ও বুধুই মোড়লের শ্মশানে অতিবাহিত করেছেন। এ দুটি স্থানকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নির্জনে তপস্যা করবার উপযুক্ত বিবেচনা করে। অনেকে বলেন ঠাকুরের সময়ে এই স্থান গভীর জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। কিন্তু শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথি পড়ে কিন্তু সেটা মনে হয় না। যেমন -

বুধুই মোড়ল নাম অন্তর প্রান্তরে।
অনেক গ্রামের মড়া সেইখানে পুড়ে। ।
ভীষণ শ্মশান লম্বা পূরব-পশ্চিমে।
দিনের বেলায় গেলে ভয় লাগে মনে। ।

এখন কিন্তু প্রান্তরের মাঝখানেই শ্মাশান। শ্মশানে কয়েকটি বহু পুরাণ গাছ দেখা যায়। হয় ত ঠাকুর এরই কোন একটির নীচে বসে ধ্যান করতেন। সবই অনুমান সাপেক্ষ। এখন এটার সত্যতা প্রমাণ করার মত কেউ আর নেই। এই শ্মশানের অদূরে পুরী যাবার রাস্তার পাশে প্রাচীন পান্থশালাটি ছিল। সেখানে অনেক সাধু সন্ন্যাসী এসে সাময়িক ভাবে বিশ্রাম করতেন। বালক গদাধর প্রায়ই এখানে এসে সাধুদের নানা কাজে সাহায্য করতেন এবং তারাও তাকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন। সেই পান্থশালাটি এখন ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। এখন শ্মশানের কাছে সাধুদের একটি আস্তানা আছে। ৩৮ নং চিত্রে শ্মশানে যাবার রাস্তার একাংশ, ৩৯ নং চিত্রে কয়েকটি প্রাচীন গাছ, ৪০ নং চিত্রে শ্মশানে একটি সমাধি স্থান ও পুকুর, ৪১ নং চিত্রে একটি সৎকার স্থান ও ৪২ নং চিত্রে সাধুদের একটি আস্তানা দেখা যাচ্ছে।

৩৮ নং চিত্র

৩৯ নং চিত্র

৪০ নং চিত্র

৪১ নং চিত্র

৪২ নং চিত্র

 

দীপক সেনগুপ্ত

 

.

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।