প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ছবিতে কামারপুকুর ও জয়রামবাটি (আগে যা প্রকাশিত হয়েছে)

১৯. মানিকরাজার প্রাসাদের ধবংসাবশেষ

আনুমানিক ১৭৬৪ খৃষ্টাব্দে ভুরসুবো গ্রামে মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত ভক্তিমান ও ধর্মপরায়ণ ছিলেন এবং দাতা হিসাবেও তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। এই কারণেই লোকে তাকে মানিকরাজা বলে ডাকত। তিনি গদাধরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এই সূত্র ধরেই বালক গদাধর মাঝে মাঝে তার বাড়ীতে যেতেন। মানিকরাজাও তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকলেই কাউকে পাঠাতেন গদাধরের খবর নেবার জন্য। শোনা যায় তিনি কোন এক সময়ে কলকাতায় গিয়ে মুহুরীর কাজে নিযুক্ত হন। পরে গোলমরিচের ব্যবসায় তার প্রচুর অর্থাগম হয়। ভুরসুবো গ্রামে তার অট্টালিকা ছিল রাজপ্রাসাদের মত। তিনি সুখসায়ের হাতীসায়ের নামে বড় বড় পুষ্করিণী খনন করান। একটি বৃহত্ আমবাগানও তিনি তৈরী করেছিলেন; গদাধর বালক বয়সে তার সঙ্গীদের নিয়ে অনেক সময়েই এখানে বেড়াতে এবং খেলাধূলা করতে আসতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই আমবাগানটি এখন আর নেই। কিন্তু মানিকরাজার অট্টালিকার ধবংসাবশেষ আজও বর্তমান। এখনও ভুরসুবো গ্রামে অট্টালিকার আশেপাশে মানিকরাজার বংশধরেরা বসবাস করছেন। ৪৮ নং চিত্রে অট্টালিকার ধবংসাবশেষ, ৪৯ নং চিত্রে অট্টালিকার মূল প্রবেশ দ্বার, ৫০ নং চিত্রে প্রাচীন দুর্গামন্দির এবং ৫১ নং চিত্রে সুখসায়ের নামক পুষ্করিণী দেখা যাচ্ছে। ৫২ নং ছবিতে যে ঘাটটি দেখা যাচ্ছে সেটি এক সময়ে মানিকরাজা ব্যবহার করতেন বলে শোনা যায়।

৪৮ নং চিত্র

৪৯ নং চিত্র

৫০ নং চিত্র

৫১ নং চিত্র

৫২ নং চিত্র


২০. অনুড় গ্রামের বিশালাক্ষ্মী

কামারপুকুরের প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে বিশালাক্ষ্মী (কারও মতে বিষলক্ষ্মী) দেবীর মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত বলে পরিচিত। ঠাকুরের সময়ে আশে পাশের গ্রাম থেকে অনেক লোক মনস্কামনা পূরণের জন্য মানত করে পূজা দিতে আসত। এক সময়ে মন্দিরটি খোলা আকাশের নীচে কোন আচ্ছাদন বিহীন অবস্থাতেই ছিল। এ সম্বন্ধে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ রচয়িতা সারদানন্দ স্বামী একবার মন্দির দর্শনে গিয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছিলেন তা লিখে গিয়েছেন। তার ভাষায় - " গ্রামের রাখাল বালকগণ দেবীর প্রিয় সঙ্গী; প্রাতঃকাল হইতে তাহারা এখানে আসিয়া গরু ছাড়িয়া দিয়া বসিবে, গল্প-গান করিবে, খেলা করিবে, বনফুল তুলিয়া তাহাকে সাজাইবে এবং দেবীর উদ্দেশে যাত্রী বা পথিকপ্রদত্ত মিষ্টান্ন ও পয়সা নিজেরা গ্রহণ করিয়া আনন্দ করিবে - এ সকল মিষ্ট উপদ্রব না হইলে তিনি থাকিতে পারেন না। এক সময়ে কোন গ্রামের এক ধনী ব্যক্তির অভিষ্টপুরণ হওয়ায় সে ঐ মন্দির নির্মান করিয়া দেয় এবং দেবীকে উহার মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা করে। পুরোহিত সকাল সন্ধ্যা নিত্য যেমন আসে, আসিয়া পূজা করিয়া মন্দিরদ্বার রুদ্ধ করিয়া যাইতে লাগিল এবং পূজার সময় ভিন্ন অন্য সময়ে যে-সকল দর্শনাভিলাষী আসিতে লাগিল, তাহারা দ্বারের জাফরির রন্ধ্রমধ্য দিয়া দর্শনী-প্রণামী মন্দিরের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়া যাইতে থাকিল। কাজেই কৃষাণবালকদিগের আর পূর্বের ন্যায় ঐ সকল পয়সা আত্মস্যাৎ করা ও মিষ্টান্নাদি ক্রয় করিয়া দেবীকে একবার দেখাইয়া ভোজন ও আনন্দ করার সুযোগ রহিল না। তাহারা ক্ষুণ্ণমনে মাকে জানাইল - মা, মন্দিরে ঢুকিয়া আমাদের খাওয়া বন্ধ করিলি? তোর দৌলতে নিত্য লাড্ডু মোয়া খাইতাম, এখন আমাদের আর ঐ সকল কে খাইতে দিবে?
সরল কৃষাণবালকদিগের ঐ অভিযোগ দেবী শুনিলেন এবং সেই রাত্রে মন্দির এমন ফাটিয়া গেল যে, পরদিন ঠাকুর চাপা পরিবার ভয়ে পুরোহিত শশব্যস্তে দেবীকে পুনরায় বাহিরে অম্বরতলে আনিয়া রাখিল ! তদবধি যে-কেহ পুনরায় মন্দিরনির্মাণের জন্য চেষ্টা করিয়াছে তাহাকেই দেবী স্বপ্নে বা অন্য নানা উপায়ে জানাইয়াছেন, ঐ কর্ম তাঁহার অভিপ্রেত নয়।" তবে এখন অবশ্য দেবী আচ্ছাদনের মধ্যেই রয়েছেন।

ঠাকুরের ছেলেবেলায় একবার কামারপুকুর গ্রামের মহিলারা দল বেঁধে বিশালাক্ষ্মী দেবীর মন্দিরে যাওয়া মনস্থ করেন। ঠাকুরের বাড়িরও কয়েকজন মহিলা ও ধর্মদাস লাহার বিধবা কন্যা প্রসন্নময়ী সেই দলে ছিলেন। বালক গদাধরের ইচ্ছা হল তিনিও সঙ্গে যাবেন। বালকের অসুবিধা হবে বলে প্রথমে সকলে আপত্তি করলেও পরে, পথে গদাইয়ের গান ও ভক্তিমুলক কথাবার্তা শোনা যাবে বলে সকলে রাজী হলেন। যেতে যেতে গদাধর সকলকে গান শোনাতে এবং ঠাকুর দেবতাদের কথা শোনাতে লাগল। কিন্তু বিশালক্ষী দেবীর মহিমা কীর্তন করে কিছুদূর যেতেই গদাই হঠাৎ থেমে গেল; তার শরীর আড়ষ্ট হয়ে পড়ল এবং অবিরাম অশ্রুপাত হতে লাগল। দেবীর ভর হয়েছে মনে করে প্রসন্নময়ী অন্যান্য মহিলাদের গদাধরের কানে দেবী বিশালাক্ষীর নাম শোনাতে বললেন। আশ্চর্যের কথা, সেই নামে শুনে গদাধর ক্রমশঃ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন।

৫৩ নং চিত্র

৫৪ নং চিত্র

৫৩ নং চিত্রে মন্দিরটি এবং ৫৪ নং চিত্রে মন্দিরের অভ্যন্তর্ভাগ দেখা যাছে। এখন মন্দিরের ছাদ টিনের, তিনদিকে গ্রিল পিছনের দেয়াল পাকা করা হয়েছে।

দীপক সেনগুপ্ত

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।