প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

দ্বারকানাথের মৃত্যুমুখোশ

সন ১৮৪৬, ১লা অগাস্ট। সময় সন্ধ্যা সওয়া ছটা। লণ্ডনের প্রাচুর্যপূর্ণ মেফেয়ার অঞ্চলের সুপ্রসিদ্ধ সেণ্ট জর্জ হোটেল। ঠিকানা ৩২ নম্বর অ্যালবিমার্ল স্টীট। ৫১ বছর বয়সের এক বাঙালী ভদ্রলোক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুশয্যাতেও তাঁর অগাধ সৌজন্যবোধের এতটুকু ঘাটতি দেখা যায় নি। তাঁর সদাহাস্য মুখে ছিল একটিই কথা “I am content”। এই ভদ্রলোকের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর – রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর সম্বন্ধে কবিগুরু চিরকাল এক রহস্যময় নীরবতা বজায় রেখেছেন।


দ্বারকানাথের নিজে হাতে লেখা শেষ চিঠির তারিখ ১৯শে মে, ১৮৪৬। পুত্র দেবেন্দ্রনাথকে মৃদু ভর্ৎসনা করে লিখেছেন,

“All that I have hithertoheard from other quarters, as much as what Mr. Gordon has written me about your Amlahs now convinces me of the truth of their reports. It is only a source of wonder to me that all my estates are not ruined. Your time, I am sure being more taken up in writing for the newspapers and in fighting with the missionaries than for watching over and protecting these important matters which you leave in the hands of your favorite Amlahs instead of attending to (them) yourself most vigilantly.”

তারপর একই চিঠিতে পুত্রকে বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছেন কি করে বর্তমান সংকটের মোকাবিলা করা যায়।

অন্যত্র লিখেছেন তাঁর পাঠানো শ্বেতপাথরের মূর্তি, ইতালীর বাদ্যযন্ত্র ও অন্যান্য উপভোগ্য সামগ্রী বেলগাছিয়া ভিলায় এবং অন্যাত্র কিভাবে সযত্নে রাখতে হবে। ব্রাহ্মধর্ম ও তত্ত্ববোধিনী সভা নিয়ে অত্যাধিক মাতামাতি করে দেবেন্দ্রনাথ, তাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও নিরাশ হন নি পিতা। ইতিমধ্যে দ্বারকানাথের এক মারাত্মক অসুস্থতা দেখা দিয়েছে – সে বছরই জুন মাসের শেষে তঁর এক বান্ধবী সেসিলিয়া আণ্ডারউডের (Duches of Iverness) বাড়ীতে পার্টি চলাকালীন। কাঁপুনি দিয়ে এসেছে সাংঘাতিক জ্বর। তারপর উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে তাঁর অবস্থা। চিকিৎসক ডাঃ মার্টিন তাঁকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্যে নিয়ে গেছেন ব্রাইটনে। হুলি নামক এক ভৃত্য বিশ্বস্তভাবে সেবা করছেন তাঁর মনিবের। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটে নি। ২৭শে জুলাই অতি সন্তর্পণে তাঁকে আবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর প্রিয় সেন্ট জর্জ হোটেলে।

সেণ্ট জর্জ হোটেল – বর্তমান নাম ব্রাউন হোটেল

ক্ষুরধার বুদ্ধি দ্বারকানাথের নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি ছিল না যে তাঁর জীবনাবসান আসন্ন। ছারখার হয়ে গেছে ‘ব্যারন’ উপাধিলাভের আশা বা দেশে ফিরে একক প্রচেষ্টায় অর্জিত প্রভূত সম্পত্তি উপভোগের সম্ভাবনা। বাঙালী মানসে যাঁর ভাবমূর্তি শুধুমাত্র এক অপব্যায়ী, ভোগবিলাসী, উড়নচণ্ডী ইংরেজদের আজ্ঞাধীন এক জমিদারের। তাহলে মৃত্যুকালে কী করে এসেছিল এই অদ্ভুত প্রশান্তি! তাঁর জীবনীকার কৃষ্ণ কৃপালানি লিখেছেন ,

“...yet he took this bitter disappointment, along with great physical pain, calmly, and would respond to each query about how he felt with a faint smile and murmur, “I am content.” This would indicate, despite his frankly worldly-minded and epicurean ways, a large reserve of inner spiritual resources.”

দ্বারকানাথের ডেথ সার্টিফিকেট (বড় করে দেখার জন্যে এইখানে ক্লিক করুন)

কিন্তু কী হয়েছিল দ্বরাকানাথের? প্রথমে ডাক্তাররা এক ধরণের ম্যালেরিয়া বলে সন্দেহ করেন। অথচ তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা আছে “Fever, disease ofright lung.”। সেই সময়ে এক গুজব রটে যে মহারানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে তাঁর সখ্যতা থাকায় তিনি বৃটিশ আমলাদের কয়েকজনে বিষনজরে আসেন এবং তাঁকে সরিয়ে ফেলতে চক্রান্ত করা হয়। (উল্লেখ্য যে সরকারীভাবে পড়াশুনো বিশেষ না করলেও দ্বারকানাথ মহারানীকে প্রথম দর্শনেই বিমোহত করেন। ৮ ই জুলাই, ১৮৪২ সালে ভিক্টরিয়া তাঁর ডায়রীতে লেখেন, “The Brahmin speaks English remarkably well, and is a very intelligent, interesting man.”)। এর সত্যি মিথ্যে যাচাই করা কঠিন, কিন্তু এমন একটু ধারণা ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহলেও অন্ততঃ কিছু লোক পোষণ করতেন। ইঙ্গিত মেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত “On the Edges of Time” গ্রন্থে। দ্বারকানাথ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন যে তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটেছিল “under somewhat mysterious circumstances.”।

প্রসঙ্গতঃ, দ্বারকানাথের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে লণ্ডনশহর জুড়ে খুব ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর বন্ধু প্রখ্যাত সাংবাদিক জে এইচ স্টকলার তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন,

“A terrific thunderstorm passed over the great city at the hour of his death, as if it were only natural that so truly great a man should pass away in a moment of striking solemnity.”

সে যুগে ইংল্যাণ্ডে শবদাহ করা বে-আইনী ছিল। তাই রাজা রামমোহন রায়ের মত দ্বারকানাথকেও সমাহিত করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। নানান ব্যবস্থাপনা, শবদেহ পরীক্ষা (পোস্ট মর্টেম) করতে কয়েকদিন সময় লাগে এবং ৫ ই আগস্ট তাঁর কবর দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়। গুণমুগ্ধ মহারানী ভিক্টোরিয়া চারটি রয়্যাল ক্যারেজ পাঠিয়েছিলেন। শবদেহের সঙ্গে চলেছিলেন পুত্র নগেন্দ্রনাথ, ভাগ্নে নবীনচন্দ্র ছাড়াও স্যার এডওয়ার্ড রায়ান, মেজর হেণ্ডার্সন, ডাঃ এইচ এইচ গুডিভ, প্রখ্যাত স্থপতি উইলিয়ান প্রন্সেপ, মোহনলাল প্রমুখ গণ্যমান্যরা। শবাধারে ঢাকনির ওপর রূপোর পাতে মৃতের পরিচিতি লেখা ছিল,

“Baboo Dwarakanauth Tagore, Zumindar,
Died 1st August, 1846, Aged 51 Years.”

গন্তব্যস্থল উত্তর লণ্ডনের কেনসাল গ্রীন সেমিটারি। উপস্থিত বন্ধুরা যে তাঁকে যথোচিত সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। পদমর্যাদায় এই শবস্থানটি ছিল ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবির ঠিক পরেই। ওয়েস্টমিনস্টারের রেওয়াজ ছিল “by invitation only”- এ কারণে কেনসাল গ্রীনে অনেক নামকরা ব্যক্তি তথা মনীষীর সমাধি হয়। যেমন ইংরেজ রাজপরিবারের অগাস্টাস ফ্রেডেরিক ও ডিউক অফ সাসেক্সের, এছাড়া চার্লস ব্যাবেজ (আধুনিক কম্পিউটারের পথিকৃত), উইলিয়াম মেকপীস থ্যাকারে, ইসম্বার্ড কিংডম ব্রুনেল, উইলিয়াম উইল্কি কলিন্স প্রমুখের। এই সেমিটারির প্রতিপত্তি সম্পর্কে কিছুটা কৌটুকভরে জি কে চেস্টারটন পরবর্তীকালে লিখেছিলেন,

“Before the Roman came to Rye, or out to Severn strode, The rolling English drunkard made the rolling English road. My friends we will not go again or ape an ancient rageOr stretch the folly of our youth to be the shame of age, But walk with clearer eyes and ears this path that wandereth And see undrugged in evening light the decent Inn of death; For there is good news yet to hear and fine things to be seen Before we go to Paradise by way of Kensal Green.”

পরবর্তীকালে অবহেলায় এই সমাধির অবস্থা নিতান্তই করুণ হয়ে দাঁড়ায়; তদুপরি এটি দেখতে এই নগণ্য ও বৈশিষ্ট্যহীম যে প্রথমবার গিয়ে খুঁজেও পাই নি! এমন কি ওখানে সমাহিত বিখ্যাত মনীষীদের তালিকায় দ্বারকানাথের নামও নেই। পরে জেনেছি আমি একা নই, দ্বারকানাথের জীবনীকার কৃষ্ণ কৃপালানি ও অধ্যাপক ব্লেয়ার ক্লিং প্রথমবার গিয়ে একই সমস্যার সম্মুখীন হন, এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।

৬ ই আগস্ট ১৮৪৬-এর লণ্ডন টাইমসের পাঁচ নম্বর পাতায় জানতে পারি আরো এক আশ্চর্য তথ্য -

“It is stated that the fine face and features of the deceased man were so little changed by death that the parties, called on to perform the usual offices on similar mournful occasions were with some difficulty persuaded that the spirit has fled. While in this state, a cast of the Baboo’s face was taken.”

মৃত ব্যক্তির মুখের ছাঁচ নেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল সে যুগে, বিশেষ করে তিনি যদি হতেন বিখ্যাত কোন মনীষী। মনে রাখতে হবে ফটোগ্রাফি জিনিসটা তখন সবে উদ্ভাবিত হয়েছে, ব্যবহার তখনো তেমন শুরু হয় নি। মুখের এই রকম ছাঁচকে বলা হত ‘ডেথমাস্ক’ বা ‘মৃত্যুমুখোশ’। ঠিক এমনটি করা হয়েছিল তেরো বছর আগে যখন ব্রিস্টলে মৃত্যুবরণ করেন রাজা রামমোহন রায়। (রামমোহনের মৃত্যুমুখোশের একটি কপি কলকাতায় পৌঁছয় শিবনাথ শাস্ত্রীর সৌজন্যে ১৮৮৬ সালে, যদিও মূল ছাঁচটির হদিশ হারিয়ে যায় রামমোহন-জিজ্ঞাসুদের কাছ থেকে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ওরিজিনালটা খুঁজে পাই স্কটল্যাণ্ডের এক মিইজিয়ামের গুদামঘরে। সুধী পাঠকবৃন্দ www.yourube.com-এ ‘Rammohun’ দিয়ে সার্চ করলে সহজেই একটা ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে এর কাহিনীটা জানতে পাবেন।) কিন্তু দ্বারকানাথের ক্ষেত্রে তাঁর মৃত্যুমুখোশের কি হল – তার কোন হদিশ মেলে না। দ্বারকানাথের জীবনীকার ও বিবাহসূত্রে ঠাকুর পরিবারের অন্তর্গত কৃষ্ণ কৃপালানি স্বীকার করেছেন, “what happended to the cast of the face thus taken is not known.”

লণ্ডন টাইমসের বিবরণ থেকে আরও জানতে পারি,

“The heart was subsequently removed from the body for transmission to India, there to be dealt with in accordance with the tenets of the sect to which the Baboo belonged.”

কার মাথা থেকে এসেছিল এই উদ্ভট বুদ্ধি? কেই বা মৃতদেহ থেকে হৃৎপিণ্ডটা নিষ্কর্ষণ করলেন? কারাই বা দাঁড়িয়ে দেখলেন এই বীভৎস কীর্তিকলাপ? মনে রাখতে হবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ডাঃ গুডিভ এবং তাঁর ছাত্ররা। এঁদের অন্ততঃ দুজনে বিলেতে এসেছিলেন দ্বারকানাথের দাক্ষিণ্যে। শিক্ষা বিস্তারে, বিশেষতঃ চিকিৎসাশাস্ত্রে, দ্বারকানাথের চরম উৎসাহ ছিল। বিলেতে ডাক্তারী পড়তে আসা প্রথম চারজন ভারতীয় ছাত্রের নাম ভোলানাথ বসু, দ্বারকানাথ বসু, গোপালচন্দ্র শীল ও সূর্য্যকুমার চক্রবর্তী। শোনা যায় গোঁড়া হিন্দু ছাত্রদের যাতে শব ব্যবচ্ছেদের ব্যাপারে সংকোচ না ঘটে তার জন্যে ব্রাহ্মণ দ্বারকানাথ ঠাকুর গোড়ার দিকে নিজে উপস্থিত থাকতেন। তাই ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। এই চারজন ছাত্র ও তাঁদের গুরুমশাই দাঃ গুডিভ দ্বারকানাথের সঙ্গে একই জাহাজে বিলেতে আসেন। কাজেই প্রয়োজনে এ কাজ তাঁদের মধ্যে কেউ একজন নিপুনভাবে করে থাকতে পারেন। কিন্তু কেন করলে্ন এই কাজ? শবদেহ থেকে নির্গত হৃৎপিণ্ড হিন্দু বা ব্রাহ্ম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কোন কাজে লাগে বলে বর্তমান লেখকের জানা নেই। তবে কি এর অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল? উপস্থিত ডাক্তারুরা কিছু সন্দেহ করেছিলেন কি? হয়তো কোন আছিলায় হৃৎপিণ্ডটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে? তাহলে কি তাদের সরকারি ডেথ সার্টিফিকেটে তাঁদের আস্থা ছিল না?

প্রসঙ্গতঃ সূর্য্যকুমার ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং ডাঃ গুডিভের অতি প্রিয় ছাত্র। Comparative anatomy-তে ছ’শ ইউরোপিয়ান ছাত্রকে পরাভূত করে প্রথম স্থান ও স্বর্ণপদক অধিকার করে তিনি ইংরেজদের অবাক করে দিয়েছিলেন। সারা নামে এক ইংরেজ মহিলাকে বিয়ে করে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং Soorjee Coomar Goodeve Chuckerbutty নাম নেন। পরে দেশে ফিরে ডাক্তারী প্র্যাকটিস করে খুব নাম করেন। অদৃষ্টের এমনই খেলা যে ইনিও বিলেত সফরকালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান এবং ওঁকেও কেনসাল গ্রীন সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়। ওঁর উত্তরসূরীদের মধ্যে cephologist প্রণয় রায় এবং লেখিকা অরুন্ধতী রায় আজ বিশ্ববিখ্যাত।

আশ্চর্যের ব্যাপার হৃৎপিণ্ডের কি হয়েছিল তাও জানা যায় না। কৃপালানি লিখছেন, “There is no record of what happened to the heart assuming as the Times reported, that it was removed.” তবে এ কথা জানা যায় যে বন্ধু ও আত্মীয়দের ইচ্ছে অগ্রাহ্য করে ব্রাহ্মমতে শ্রাদ্ধ করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। তিনি লিখেছেন, হিন্দুমতে পিতার শ্রাদ্ধ করতে মা পরলোক থেকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন। দ্বারকানাথ সংস্কারমুক্ত হলেও হিন্দু বাছবিচারে নিমজ্জিত দিগম্বরী দেবীর কাছে এটা আশা করা কি তাঁর জীবিতকালেও কি যুক্তিযুক্ত হত?

কেন আসছি এইসব অপ্রিয়, অস্বাস্থ্যকর ও বিষাদগ্রস্থ প্রসঙ্গে? ডেথমাস্ক বা শবদেহ থেকে নির্গত হৃৎপিণ্ড তুচ্ছ ব্যাপার নয় কি? কিন্তু আমার বক্তব্য যে, এই details গুলি আদৌ তুচ্ছ বা অবান্তর নয়। দ্বারকানাথের স্মৃতি মুছে ফেলার বা তাঁকে দমন করার এক বৃহত্তর প্রয়াসের এটি একটি ক্ষুদ্র অংশ বা নিদর্শন মাত্র। আর এর ধরণটাও বেশ চতুর ও সুক্ষ্ম। ‘দেশ’ পত্রিকার ১২ ই ফেব্রুয়ারীর ১৯৯৮ সংখ্যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ প্রবন্ধের রচয়িতা স্বর্গত সিদ্ধার্থ ঘোষ লিখেছেন, “দ্বারকানাথকে প্রিন্স আখ্যায় ভূষিত করে প্রকারান্তরে তাঁকে বাঙালী ভদ্রলোক জাত থেকে আলাদা করার পেছনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন, তাঁর পুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। পৌত্র রবীন্দ্রনাথের উদাসীনতা যুগিয়েছে বাড়তি ইন্ধন।“ ব্লেয়ার ক্লিং তাঁর রচিত দ্বারকানাথের জীবনী “Partner in Empire” বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন,

“I was intrigued by the discovery that the grandfather of the poet Rabindranath and the father of the saintly Debendranath was an astute business tycoon who owned a fleet of ships, coal mines, insurance companies, banks and indigo plantations. At once I sensed the likelihood of a dramatic conflict between the worldly father and his otherworldly son, and imagined Dwarkanath’s profound disappointment when Debendranath refused to carry on the hard-won business empire. In this case research confirmed my guess. I had anticipated that the adulaloy historians of the Tagore family had exaggerated Dwarkanath’s achievements, and I was surprised to discover that he was all they had said and more.”

ব্লেয়ার ক্লিং-এর সঙ্গে লেখকের ইন্টারিভিউ

ঠাকুরবাড়টির ইতিহাস যাঁর নখদর্পণে, এহেন কৃপালানি লিখেছেন,

“The Maharshi’s disinterestedness to the memory of his father is the more surprising when one considers that Ram Mohun Roy from whom the Maharshi derived his main religious inspiration, had great affection and regard for Dwarkanath … Poet Rabindranath grew up under the austere and domineering personality of his father from whom he acquired some of his inhibitions which he had overcome later before he could become the ‘myriad-minded’ genius. But his father’s disinterestedness to Dwarkanath’s memory he seemed to have acquired and cherished with a vengeance. Debendranath now and then made a respectful reference to his father, but Rabindranath hardly ever, in his voluminous writings and dialogues, refers to his grandfather. It would seem that what was disinterestedness in his father became almost antipathy in his case.”*

অনিরুদ্ধ সান্যাল


(শেষাংশ পরের সংখ্যায়)

* এই লেখাটি আগে উত্তর আমেরিকার স্তবক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।


(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।