প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আজকের সন্ধ্যা কি বিনম্রতার? আজকের রাত কি বিশ্বাসঘাতকতার?

বিনম্র সন্ধ্যা।

আজকের সন্ধ্যায় ছিল সেই ভোজ যা ফি বছর য়িহুদীরা পালন করে আসছে মিশরের দাসত্বের দিনগুলো থেকে ছাড়া পাওয়ার দিনের স্মরণে ধর্র্মীয় উৎসব হিসাবে – সর্বময় জিহবা-কে ধন্যবাদ জানাতে।
প্রচলিত কিংবদন্তী বা বহুল-প্রচারিত কাহিনী অনুযায়ী একজন য়িহুদীর মতই যিশু বা ঈসা এই ভোজ-উৎসব পালন করেছিলেন তাঁর ১২জন শিষ্যের সাথে। সে রাতের ঘটনার ফেরে সেই ভোজ হয়ে দাঁড়ায় তাঁর শেষ খাবার, শেষ পানীয় এই জগতে। লিওনার্ড দা ভিনচি তাঁর তুলিতে অমর করে গেছেন এই ‘শেষ ভোজ’।

অন্যদের বা অন্য বছরের য়িহুদীদের এই ধর্র্মীয় ভোজ-উৎসবকে ঈসা দিয়েছিলেন এক নতুন মাত্রা। ভোজ শুরু হবার আগে তিনি উপস্থিত ১২জন শিষ্যের পা নিজের হাতে ধুইয়ে দিয়ে কাপড় দিয়ে পুঁছে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই সন্ধ্যা হয়ে গেছে বিনম্রতার সন্ধ্যা বা বিনম্রতার-প্রতীক-সন্ধ্যা।
বাংলায় আছে, ‘বড় যদি হতে চাও ছোট হও আগে’।

বিশ্বাসঘাতকতার রাত।

খাওয়া-দাওয়ার শেষে যিশু (তাঁর আসল স্থানীয় নাম, ঈসা) গিয়েছিলেন কাছেরই কিদ্রন নদীর ধারে পাহাড়ের গায়ে জলপাই গাছে ভরা একটি বাগানে উপাসনা করে নিজেকে আগামী দিনের জন্য তৈরী করার জন্য। শিষ্যরাও তাঁর সাথে।
আর সেখানেই ঘটে সেই কলঙ্কিত ঘটনা। বসন্তকালের সবে শুরু। মৃদুমন্দ বাতাসে পরিবেশটি খুবই মনোরম। ঈসা ধ্যানে রত। কিন্তু শিষ্যরা ভোজের পর ঘুমের কোলে। সেই অবসরে একজন শিষ্য সরে পড়ে। তার নাম, জুডাস ইসকারিয়ত্। কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরে আসে। সঙ্গে কয়েকজন গোঁড়া য়িহুদী আর তাদের প্রধান পুরোহিত ও একদল সাঙ্গপাঙ্গ। জুডাস ঈসার গালে একটি চুমু দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। মধ্য-প্রাচ্যের পুরুষরা আজও একে অন্যকে গালে চুমু দিয়ে রস্পরকে অভ্যর্থনা করে থাকে। কিন্তু জুডাসের এই চুমুটি দুনিয়ায় – অন্তত: ইংরাজী ভাষায় -- কূখ্যাত হয়ে আছে সাদর অভ্যর্থনার জন্য নয় বরঞ্চ চরম বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসাবে। ইংরাজীতে বলা হয়, ‘জুডাসের চুমু’।
একজন শিষ্য নিজের ছোরা বার করেছিল প্রতিরোধ করার জন্য। ঈসা তাকে নিরস্ত করতে বলেন, ‘করো না -- যে তলোয়ারের ভরসাতেই চলে সে তলোয়ারের ঘায়েই একদিন শেষ হয়’। তারপর য়িহুদীদের প্রধান পুরোহিতকে বলেন, ‘মন্দিরে‘ত আমাকে বহুবার দেখেছ; কৈ তখন‘ত আমাকে ধরবার চেষ্টা বা সাহস হয়নি’।

একটি বৃত্তান্ত অনুসারে, ঈসাকে চিহ্নিত বা চিনিয়ে দিয়ে, ধরিয়ে দেবার জন্য য়িহুদীদের প্রধান পুরোহিতের কাছ থেকে জুডাস পেয়েছিল সামান্য তিরিশটি রুপোর মুদ্রা। যেমনটি আজও হয়ে থাকে তেমনি সেই রাতেও জুডাসেরও ঘোর অনুশোচনা ও অনুতাপ হয়েছিল। কিন্তু বড় দেরী হয়ে গেছে ততক্ষণে। কালের ঘটনা কিদ্রন নদীর জলপ্রবাহ ঘোলা করে এগিয়ে গেছে বেশ অনেকদূর।

ঈসাকে ধরে নিয়ে চলেছে য়িহুদীদের প্রধান পুরোহিত কাইফাসের লোকেরা। সে আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে রোমান-রাজ্যপাল পিলাতের কাছে। ঈসা য়িহুদীদের চলতি প্রথার বিরোধিতা করে – পুরোহিতদের কাজের নিন্দা করে – নিজেকে নাকি ‘য়িহুদীদের রাজা’ বলে জাহির করে। ঈসার এই ধর্ম আর সমাজবিরোধী কাজ কিছুতেই বরদাস্ত করা যেতে পারে না।

রোমান-রাজার হোতে তুলে দেওয়া হবে কাল ভোরেই। বিচার হবে। রোমান-রাজ্যপালকে রায় দিতেই হবে য়িহুদীদের পুরোহিতদের ইচ্ছে মতোই।

পরের সংখ্যায় সমাপ্ত

তপন চট্টোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।