প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

সাধারণ মশলা ও তাদের ভেষজগুণ  

সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় রন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানারকম মশলা । শুধুমাত্র রসনার পরিতৃপ্তির জন্যই নয়, এই সব মশলার মধ্যেই রয়েছে পরিপাকক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় এবং অতি অবশ্যিক কিছু ভেষজ উপাদান । এইভাবে রান্নার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে এইসব ভেষজ উপাদান গ্রহণের একটা সহজ উপায় খুঁজে নিয়েছিলেন প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদাচার্যগণ । রান্নার উপকরণের প্রকৃতির সঙ্গে উপযুক্ত মশলার চয়নের মধ্যে মিশে রয়েছে হাজার বত্সরের অভিজ্ঞতা ও সাধনার ফল - যা আমাদের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ জাতীয় সম্পদ । রান্নার সঙ্গে মিশে এইসব মশলাগুলি অনেকক্ষেত্রে রান্নার উপকরণে উপস্থিত অবাঞ্ছিত বিষক্রিয়াগুলি বিনষ্ট করে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে । আজকের দিনে গৃহস্থের বাড়িতে নানা কারণে এইসব পাকপ্রণালীর সরলীকরণ ঘটেছে এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে বাদ পড়েছে বা কমেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মশলার ব্যবহার । জৈব বৈচিত্রতা যেমন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম, রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্রতা তেমনই সত্য । সাধারণের ঘরে বাজারে প্রচলিত নানাপ্রকার ওষুধের স্বাভাবিক সঞ্চয় যেমন অসম্ভব তেমনই আমাদের জ্ঞাত বিপুল সংখ্যক বনৌষধির পরিচর্যা, প্রতিপালন এবং উপযুক্ত সংরক্ষণ স্বল্প পরিসরে সহজ নয় । নিত্য ব্যবহার্য মশলাগুলির চাহিদা যেমন বাজারে রয়েছে তেমনই, এগুলির অধিক পরিমাণে সঞ্চিত করে রাখার সুবিধা রয়েছে । ভেষজ হিসাবে এগুলির ব্যবহার আমাদের জানা থাকলে মশলারূপে এর চাহিদার পাশাপাশি বনৌষধি হিসাবে এগুলি নিত্যপ্রয়োজনে লাগবে । গ্রামাঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত কৃষিজমির সুযোগ রয়েছে সেখান থেকে যদি শহরাঞ্চলের দিকে তাকাই যেখানে বহুতলের আধিক্য, সেখানেও আপনার রান্নাঘরটি বা বারান্দার গুটিকয়েক টবগুলি হয়ে উঠতে পারে একটি সমৃদ্ধ ভেষজ ঔষধাগার । দ্রব্যগুণের তারতম্য নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মশলাগুলির নানাপ্রজাতি বিদ্যমান । সেগুলির উপযুক্ত সংরক্ষণ আশু প্রয়োজন । ইতিমধ্যে বাজারে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষিত মশলার বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি পাওয়া যাচ্ছে এবং আগামী দিনে দেশের বাজার বিদেশী সংস্থাগুলির দ্বারা অধিকৃত হবার সম্ভাবনাও প্রবল হচ্ছে । এখনই উপযুক্ত সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে এগুলির অব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা হারাবো একটি সমৃদ্ধ জাতীয় সম্পদের ইতিহাসও। নীচে কতকগুলি পরিচিত মশলা সম্বন্ধে আলোকপাতের চেষ্টা করা হল ।


এলাচ ( দ্রাবিড়ী )

বড় এলাচ ...Amomum aromaticum
... Amomum subulatum
ছোট এলাচ ... Elettaria cardamomum


বেদে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে সুশ্রুত সংহিতায় সূত্রস্থানের ৩৮ অধ্যায়ে 'দ্রাবিড়ীণাং ফলং' নামে এর উল্লেখ আছে । এটি দ্রাবিড় অঞ্চলে হয়ে থাকে বলে এর নাম দ্রাবিড়ী ; উত্তরবঙ্গ ও সিকিমেও এটিকে পাওয়া যায় ।

নামকরণ- ফল বহণকারী পুষ্পমঞ্জরীদুটি 'এলাইয়া পড়ে' বলে এর নাম 'এলাচ' হয়েছে । দ্রাবিড়-ভাষায় এই রকম অবস্থাকে 'এলা' বলে । এলাচের আরেকটি নাম 'এলা' ।

ব্যবহার্য অংশ - এলাচের কাত্থ, এলাচ চূর্ণ, এলাচের তৈল ।
এলাচ কাত্থের প্রস্তুত প্রণালী - ২টি বড় এলাচ খোসা সমেত চন্দনের মতন বেটে, এক কাপ জলে গুলে, ছেঁকে সেই জলটি খেতে হবে ।

ব্যবহার :-

১। বাতজীর্ণে - পেটে বায়ু জমে নিঃসারিত না হলে এলাচের কাত্থ এক কাপ সকালের দিকে একবার খেতে হবে ।

২। হজমের গোলযোগ - খালি পেটে এক কাপ এলাচের কাত্থ ।

৩। কোষ্ঠবদ্ধতা - এক গ্লাস ইষত্ ঊষ্ণ এলাচের কাত্থ, একবার ।

৪। শ্বাসকষ্টে ( ব্রঙ্কিয়াল এজমা ) - ২টি ছোট এলাচের এবং ২টি বড় এলাচের একসঙ্গে কাত্থ করে, এক কাপ সেবন ।

৫। হাঁপানি বা কার্ডিয়াক এজমা - সমপরিমাণ পিপুল- ও ছোট এলাচ- চূর্ণ অল্প ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে ।

৬। গা-হাত-পায়ে ব্যাথায় বা যন্ত্রণায় - বড় এলাচের কাত্থ দিনে দু'বার খেতে হবে ।

৭। খিঁচ ধরা ব্যথায় - ছোট বা বড় এলাচের কাত্থ ।
বাহ্য ব্যবহার - চুলকানিতে বড় এলাচের কাত্থ বা বাটা গায়ে মেখে ঘণ্টাখানেক পর ধুয়ে ফেলতে হবে ।

রাসায়নিক উপাদান - Cineol, Terpineol, Terpinene, Limonene, etc.

প্রজ্জ্বল দত্ত
(শঙ্কর সেনের সৌজন্যে)

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।