সাধারণ
মশলা ও তাদের ভেষজগুণ ১
২ ৩
সুপ্রাচীনকাল
থেকে ভারতীয় রন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানারকম মশলা
। শুধুমাত্র রসনার পরিতৃপ্তির জন্যই নয়, এই সব মশলার মধ্যেই
রয়েছে পরিপাকক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় এবং অতি অবশ্যিক কিছু ভেষজ উপাদান
। এইভাবে রান্নার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে এইসব ভেষজ উপাদান গ্রহণের
একটা সহজ উপায় খুঁজে নিয়েছিলেন প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদাচার্যগণ
। রান্নার উপকরণের প্রকৃতির সঙ্গে উপযুক্ত মশলার চয়নের মধ্যে
মিশে রয়েছে হাজার বত্সরের অভিজ্ঞতা ও সাধনার ফল - যা আমাদের
একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ জাতীয় সম্পদ । রান্নার সঙ্গে মিশে এইসব
মশলাগুলি অনেকক্ষেত্রে রান্নার উপকরণে উপস্থিত অবাঞ্ছিত বিষক্রিয়াগুলি
বিনষ্ট করে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
আজকের দিনে গৃহস্থের বাড়িতে নানা কারণে এইসব পাকপ্রণালীর সরলীকরণ
ঘটেছে এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে বাদ পড়েছে বা কমেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ
মশলার ব্যবহার । জৈব বৈচিত্রতা যেমন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক
নিয়ম, রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্রতা তেমনই সত্য । সাধারণের
ঘরে বাজারে প্রচলিত নানাপ্রকার ওষুধের স্বাভাবিক সঞ্চয় যেমন
অসম্ভব তেমনই আমাদের জ্ঞাত বিপুল সংখ্যক বনৌষধির পরিচর্যা, প্রতিপালন
এবং উপযুক্ত সংরক্ষণ স্বল্প পরিসরে সহজ নয় । নিত্য ব্যবহার্য
মশলাগুলির চাহিদা যেমন বাজারে রয়েছে তেমনই, এগুলির অধিক পরিমাণে
সঞ্চিত করে রাখার সুবিধা রয়েছে । ভেষজ হিসাবে এগুলির ব্যবহার
আমাদের জানা থাকলে মশলারূপে এর চাহিদার পাশাপাশি বনৌষধি হিসাবে
এগুলি নিত্যপ্রয়োজনে লাগবে । গ্রামাঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত কৃষিজমির
সুযোগ রয়েছে সেখান থেকে যদি শহরাঞ্চলের দিকে তাকাই যেখানে বহুতলের
আধিক্য, সেখানেও আপনার রান্নাঘরটি বা বারান্দার গুটিকয়েক টবগুলি
হয়ে উঠতে পারে একটি সমৃদ্ধ ভেষজ ঔষধাগার । দ্রব্যগুণের তারতম্য
নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মশলাগুলির নানাপ্রজাতি
বিদ্যমান । সেগুলির উপযুক্ত সংরক্ষণ আশু প্রয়োজন । ইতিমধ্যে
বাজারে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষিত মশলার বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি
পাওয়া যাচ্ছে এবং আগামী দিনে দেশের বাজার বিদেশী সংস্থাগুলির
দ্বারা অধিকৃত হবার সম্ভাবনাও প্রবল হচ্ছে । এখনই উপযুক্ত সংরক্ষণের
পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে এগুলির অব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা
হারাবো একটি সমৃদ্ধ জাতীয় সম্পদের ইতিহাসও। নীচে কতকগুলি পরিচিত
মশলা সম্বন্ধে আলোকপাতের চেষ্টা করা হল ।
এলাচ ( দ্রাবিড়ী )
বড় এলাচ ...Amomum aromaticum
... Amomum subulatum
ছোট এলাচ ... Elettaria cardamomum
বেদে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে সুশ্রুত সংহিতায় সূত্রস্থানের
৩৮ অধ্যায়ে 'দ্রাবিড়ীণাং ফলং' নামে এর উল্লেখ আছে । এটি দ্রাবিড়
অঞ্চলে হয়ে থাকে বলে এর নাম দ্রাবিড়ী ; উত্তরবঙ্গ ও সিকিমেও
এটিকে পাওয়া যায় ।
নামকরণ- ফল বহণকারী পুষ্পমঞ্জরীদুটি
'এলাইয়া পড়ে' বলে এর নাম 'এলাচ' হয়েছে । দ্রাবিড়-ভাষায় এই রকম
অবস্থাকে 'এলা' বলে । এলাচের আরেকটি নাম 'এলা' ।
ব্যবহার্য অংশ - এলাচের
কাত্থ, এলাচ চূর্ণ, এলাচের তৈল ।
এলাচ কাত্থের প্রস্তুত প্রণালী - ২টি বড় এলাচ খোসা সমেত চন্দনের
মতন বেটে, এক কাপ জলে গুলে, ছেঁকে সেই জলটি খেতে হবে ।
ব্যবহার :-
১। বাতজীর্ণে - পেটে বায়ু
জমে নিঃসারিত না হলে এলাচের কাত্থ এক কাপ সকালের দিকে একবার
খেতে হবে ।
২। হজমের গোলযোগ - খালি
পেটে এক কাপ এলাচের কাত্থ ।
৩। কোষ্ঠবদ্ধতা - এক গ্লাস
ইষত্ ঊষ্ণ এলাচের কাত্থ, একবার ।
৪। শ্বাসকষ্টে ( ব্রঙ্কিয়াল
এজমা ) - ২টি ছোট এলাচের এবং ২টি বড় এলাচের একসঙ্গে কাত্থ করে,
এক কাপ সেবন ।
৫। হাঁপানি বা কার্ডিয়াক
এজমা - সমপরিমাণ পিপুল- ও ছোট এলাচ- চূর্ণ অল্প ঘিয়ের সঙ্গে
মিশিয়ে খেতে হবে ।
৬। গা-হাত-পায়ে ব্যাথায়
বা যন্ত্রণায় - বড় এলাচের কাত্থ দিনে দু'বার খেতে হবে ।
৭। খিঁচ ধরা ব্যথায় - ছোট
বা বড় এলাচের কাত্থ ।
বাহ্য ব্যবহার - চুলকানিতে বড় এলাচের কাত্থ বা বাটা গায়ে মেখে
ঘণ্টাখানেক পর ধুয়ে ফেলতে হবে ।
রাসায়নিক উপাদান - Cineol,
Terpineol, Terpinene, Limonene, etc.
প্রজ্জ্বল
দত্ত
(শঙ্কর সেনের সৌজন্যে)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)