উস্তাদ
সলামত আলি খান
(জন্ম: ১৯৩৪ মৃত্যু: ২০০১)
ঘরানা: সাম চুরাশিয়া
পাঞ্জাবের
জলন্ধর শহরে প্রতি বছর ২৭- শে ডিসেম্বর থেকে ৩০- শে ডিসেম্বর হরবল্লভ
সঙ্গীত সম্মেলন হয়। ১৯৪১ সালের (এই সঙ্গীত সম্মেলনটি ১৮৭৫ সন থেকে
অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে) সঙ্গীত মেলায় দুটি নিতান্তই কচি বালক (তারা
এতই ছোট যে তাদের কোলে করে মঞ্চে তুলতে হয়) খেয়াল পরিবেশন করতে
ওঠে। বড়টির বয়স ৯ আর ছোটটির বয়স ৭ মাত্র। তাদের পরিবেশন করা মিঞা
কি তোড়ী রাগে সমবেত শ্রোতারা বিস্ময়ে আপ্লুত ! এত ছোট বয়সে স্বর,
তান, লয়কারী- তে এত দক্ষতা ! বড়টির নাম নজাকত আলি খান আর ছোটজন
সলামত আলি খান। তখনও তারা উস্তাদ শিরোপা পায় নি। শ্রোতাদের মধ্যে
আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে ছিলেন উস্তাদ আবদুল আজিজ খান, পণ্ডিত
কৃষ্ণরাও শঙ্কর, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, উস্তাদ উমীদ আলি খান,
উস্তাদ তওয়াক্কল হুসেন খান, উস্তাদ মালং খান, উস্তাদ বড়ে গুলাম
আলি খান প্রভৃতি তৎকালীন প্রথিতযশা গায়করা। সঙ্গীত রসিকরা সেই
দিন থেকে এই বিস্ময়কর প্রতিভার পূর্ণ বিকাশের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন।
উস্তাদ সলামত আলি খানের জন্ম
পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার সাম চুরাশি গ্রামে এক তৎকালীন সঙ্গীত
পরিবার তথা ঘরানায়। পিতা উস্তাদ বিলায়েত আলি খান সাম চুরাশি ঘরানার
একজন প্রতিষ্ঠিত ধ্রুপদ গায়ক ছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে ষোড়শ
শতাব্দীতে বাদশাহ্ আকবরের শাসনকালে অর্থাৎ মিঞা তানসেনের সময়ে
ঘরানাটি প্রতিষ্ঠা করেন মিঞা চাঁদ খান ও মিঞা সুরজ খান। অঞ্চলের
৮৪- টি গ্রাম পরিবারকে বাদশাহী ফরমানে দেওয়া হয় যার থেকে ঘরানার
নামটি এসেছে। তৎকালীন রিওয়াজ অনুযায়ী পরিবারটি ধ্রুপদ গায়কীর চর্চা
করতেন (খেয়াল গায়ন রীতি তখনও সমাদৃত হয় নি) এবং যুগলবন্দী পরিবেশন
পরিবারের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। সাম চুরাশিয়ারর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য
নাম: মিঞা করিম বক্স মহ্জুব, উস্তাদ আহমেদ আলি খান, উস্তাদ নিয়াজ
হুসেন শামি, উস্তাদ বিলায়েত আলি খান প্রভৃতি।
সলামত আলি খানের সঙ্গীত শিক্ষার
শুরু পিতা বিলায়েত আলি খানের কাছে পাঁচ বছর বয়সে অগ্রজ নজাকত আলি
খানের সঙ্গে। তালিমের শুরু ধ্রুপদের চর্চা দিয়েই, কিন্তু ক্রমে
তাঁরা খেয়াল গায়নের দিকেই মন দেন। খেয়াল গায়ন রীতি ততদিনে নিশ্চিত
ভাবেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিচ্ছে। শিল্পী, বিশেষ করে উচ্চ
মানের শিল্পীর কাছে অনেক বেশী সৃষ্টিসম্ভাবনাময়, অনেক স্বাধীন
বিস্তারের সুযোগ-- অথচ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ
থাকছে। এ যেন মুক্ত বিহঙ্গের পাখা মেলে অসীম শূন্যে ভাসা। খুব
শীঘ্রই দুই ভাই- এর ডাক আসতে লাগল বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও রেডিয়ো থেকে।
এই রকম একটি রেডিয়ো অনুষ্ঠানে দুই ভাই বসন্ত রাগ পরিবেশন করেন--
সময় সম্ভবত ১৯৪৩ সাল-- প্রকৃত অর্থেই বলা যায় সেই হল বালক বীরের
বেশে তুমি করলে বিশ্বজয়।
এর পর আর ফিরে তাকাতে হয় নি। নিয়মিত ডাক আসতে লাগল রেডিয়ো ও সঙ্গীত
সম্মেলন থেকে এবং সেই অল্প বয়সেই সলামত আলি খানের দুটি গ্রামোফোন
রেকর্ড প্রকাশিত হল। ১৯৪৪ সালে দুই ভাই বিহারের চম্পানগরের মহারাজার
কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর দুই ভাই এলাহাবাদ,
গোয়ালিয়র প্রভৃতি সহরে সঙ্গীত সম্মেলনগুলিতে সঙ্গীত পরিবেশন করলেন
এবং অবধারিত ভাবেই তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত গায়কদের নজরে এলেন। এইরকম
ভাবে সলামত দেওয়াসের উস্তাদ রজব আলি খানের নজরে আসেন। এই উস্তাদ
রজব আলি খানের প্রভাব সলামতেরর সঙ্গীত জীবনে অনেক খানি। ১৯৪৫ সালে
কলকাতায় অল ইণ্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে উস্তাদ ফৈয়াজ খন, পণ্ডিত
ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, উস্তাদ রজব আলি খান, উস্তাদ বিলায়ত হুসেন খান,
উস্তাদ আমির খান, কেসরবাই কেরকর, উস্তাদ আলাউদ্দিন খান ও পণ্ডিত
রবি শঙ্কর প্রভৃতি দিকপাল শিল্পীদের সঙ্গে একই মঞ্চে গাইলেন দুই
ভাই এবং সকলেই বিস্ময়কর প্রতিভাকে সহর্ষ স্বীকৃতি দিলেন। এর পর
১৯৪৬ সালে দুই ভাই সারা ভারতে বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে গোয়ালিয়র,
হায়দ্রাবাদ, পাতিয়ালা প্রভৃতি শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইলেন ও
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত মহলে পাকাপাকি স্থান করে নিলেন-- যখন সলামতের
বয়স মাত্র বারো।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ
তথা দেশ ভাগের পর, আলি ভ্রাতৃযুগল পাকিস্তানের মুলতানে গিয়ে বসবাস
করতে লাগলেন। এর পরের কয়েক বছর দুই ভাই কঠোর পরিশ্রমসাধ্য রিওয়াজে
মন দিলেন যা পরবর্তী জীবনে তাঁদের দক্ষতার ও সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে
সাহায্য করে। পারিবারিক সাম চুরাশিয়া ঘরানা ছাড়াও আরও কিছু কিছু
ঘরানা তথা গুণী উস্তাদের গায়ন রীতি তাঁর গায়কীতে প্রভাব ফেলেছে,
যথা কিরানা ঘরানার আবদুল ওয়াহীদ খান, পাতিয়ালা ঘরানার বড়ে গুলাম
আলি খান প্রভৃতি। এই দুটি নাম বিশেষ করে উল্লেখ করলাম কারণ আলাপ-
বিস্তারে আবদুল ওয়াহীদ খানের যত্ন তিনি অনুসরণ করতেন আবার তান
বা সরগমের ক্ষেত্রে বড়ে গুলাম আলি খানের ছায়া অবধারিত ভাবেই ফুটে
উঠত। সলামত খান (ও অগ্রজ নজাকত খান) পিতা উস্তাদ বিলায়েত আলি খানের
কাছে বেশী দিন তালিম নিতে পারেন নি- আট বছর বয়সেই পিতাকে হারান।
উত্তরকালে সলামত খান একমাত্র নিজের পিতাকেই তাঁর গুরু বলে মেনেছেন
যদিও স্বীকার করেন যে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন ও নিয়েছেন তৎকালীন আরও
কিছু উস্তাদের কাছে যাঁরা হলেন উস্তাদ নিয়াজ হুসেন শামি (পিতৃব্য),
উস্তাদ বড়ে গুলাম অলি খান, উস্তাদ আশিক আলি খান, উস্তাদ তওয়াক্কল
হুসেন খান, বাবা নাথ্থু খান (শ্বশুর), পণ্ডিত প্রাণ নাথ, উস্তাদ
হাবিব খান, উস্তাদ ফতে আলি খান কাওয়াল (বিখ্যাত উস্তাদ নসরত ফতে
আলি খানের পিতা)। এঁদের মধ্যে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খানের গায়ন
রীতি ও উস্তাদ ফতে আলি খান কাওয়ালের গায়ন রীতি বিশেষ ভাবে প্রভাব
ফেলেছে তাঁর সঙ্গীতজীবনে ও পরিবেশনে। গৌড় মল্লার রাগে একটি খেয়াল
এখানে দেওয়া হল। [
১ ]
১৯৫৩ সালে ভ্রাতৃযুগল ভারত
পরিভ্রমণ করেন এবং হরবল্লভ মেলায় অনুষ্ঠান করেন। এর পর থেকে তাঁরা
ভারতের বিভিন্ন সঙ্গীত সম্মেলনে নিয়মিত ভাবে অংশ নিতে থাকেন, বিশেষ
করে কলকাতায় ও মুমবাই সহরে। সত্তরের দশক পর্যন্ত এই আসা চলে। এর
মধ্যে ১৯৫৫ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত অল ইণ্ডিয়া মিউসিক কনফারেন্সের
কথা বিশেষ ভাবে করা যায় যেখানে উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি, উস্তাদ আমীর
খান, উস্তাদ আলাউদ্দীন খান, উস্তাদ হাফিজ আলি খান, পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ
ঠাকুর, বিদুষী কেশরবাই কেরকর, উস্তাদ আহ্মেদজান থিরাকুয়া প্রভৃতি
দিকপাল শিল্পীদের সাথে একই মঞ্চে তাঁরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং
উস্তাদ শিরোপা পান। সর্বত্রই তাঁরা শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। বিদেশেও
(আমেরিকা, ইউরোপ ও ইংলণ্ড) বহু অনুষ্ঠান করেছেন এই সময়টিতে।
মুলতানে থাকাকালীন দুই ভাই
মুলতানি কাফি গায়ন শৈলীর সান্নিধ্যে আসেন। মুলতানি কাফি সঙ্গীতধারা
সুফি দর্শন- তত্ত্বের প্রভাবে গড়ে উঠেছে। সুফি দর্শনের অতি সমৃদ্ধ
কাব্য নিয়ে রচিত সঙ্গীত পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে বহুল প্রচলিত।
মূল আরবী ও পারসিক ভাষায় রচিত সূফী কাব্য পরবর্তী কালে উর্দু,
পাঞ্জাবী, সিন্ধী ভাষায়, এমনকি ব্রজবুলি ও লৌকিক বাংলা ভাষায় অনুসৃত
হয়েছে। সুফী গীতি কাওয়ালী ও গজল এই দুই গায়নশৈলীতে মুখ্যত পাওয়া
যায় এবং বহু প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের মধ্যে দুটি নাম সকলেই অবহিত--
এঁরা হলেন নসরৎ ফতে আলী খান ও গুলাম আলী খান। সুফি কবিবৃন্দ (যাঁর
মধ্যে খওয়াজা গুলাম ফরিদ, আবদুল শাহ্ লতিফ, শাহ্ হুসেন, বাবা
বুল্লে শাহ্ প্রভৃতি কবির নাম করা যায়) রচিত গানে খান ভ্রাতৃযুগল
আকৃষ্ট হন এবং মুলতানে থাকা কালীন কিছু কাল উস্তাদ নসরৎ ফতে আলী
খানের পিতা উস্তাদ ফতে আলী খান কাওয়াল ও পিতৃব্য উস্তাদ মুবারক
আলি খান, এ দুজনের কাছে তালিম নেন। এই পরিবারের সাথে সলামতের ঘনিষ্ঠতা
ও শ্রদ্ধা শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। নসরৎ ফতে আলি খানের প্রয়াণে তিনি
নসরতের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি বন্দিশ রচনা করেন। সলামতের পরিবেশন
করা একটি সুফি সংগীত এখানে তুলে দিলাম; এটি একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান।
ভিডিওটি ভালোভাবে নজর করলে প্রসিদ্ধ গজল গায়ক গুলাম আলিকে দেখতে
পাবেন। [
২ ]
সলামতের জীবনে অগ্রজ নজাকতের
অবদান অনেকখানি। দুই ভাই যুগলে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দ্বৈত-সঙ্গীত
পরিবেশন করেছেন। এঁদের সাফল্যের মূলে ছিল নিরলস রেওয়াজ ও একাগ্র
নিষ্ঠা। এ চাড়া তাঁদের নিজেদের মধ্যে এক অসীম সমঝদারী কাজ করত
আর ছিল তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনে সলামতের অবিশ্বাস্য দক্ষতা। নজাকত রাগের
মূল কাঠামো তৈরী করতেন আর সেই কাঠামোতে সলামত জুড়ে দিতেন সূক্ষ্ম
কারুকার্য যা অবিশ্বাস্য কৃতিত্বের পর্যায়ে চলে যেত। সঙ্গীতের
ব্যাপারে রেষারেষির বদলে তাঁদের মধ্যে কাজ করত পরিপূরক ভাব যা
তাঁদের অতুলনীয় স্থানে প্রতিষ্ঠা করেছে। যেসব রাগে তাঁরা অবিস্মরণীয়
পরিবেশন করেছেন তার মধ্যে গোরখ কল্যাণ, রাগেশ্রী, কলাবতী, আভোগী
কানাড়া, মালকোষ, দরবারি, মিঞা-কি-তোড়ী প্রভৃতি রাগের কথা বিশেষ
ভাবে উল্লেখ করা যায়, যদিও যে কোন রাগেই তাঁদের দক্ষতা অনির্বচনীয়
মাত্রা পেত এবং খেয়াল, ঠুংরী, তরানা প্রভৃতি যে কোন গায়ন শৈলীতে।
[ ৩ ]
[ ৪ ]
দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যক্তিগত কারণে ১৯৭৪ সালে এঁদের ছাড়াছাড়ি হয়।
১৯৮৩ সালে নজাকত মারা যান। কিছুদিন সলামত একক সঙ্গীত পরিবেশন করার
পর পুত্র শরাফত আলি খান ও শফকৎ আলী খানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। পারিবারিক
পথে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পী তৈরী করে গেছেন যার মধ্যে আছেন
তাঁর পুত্রেরা-- শরাফত, সখাওত, লতাফত ও শফকত আলি; প্রথা ভেঙে কন্যা
রিফতকেও তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যা কট্টর ইসলামী শাসনের বিরোধী। এ
ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্য যথা হুসেন বক্স গুলু, ইমতিয়াজ আলি খান,
রিয়াজ আলি খান, রফকত আলি খান প্রমুখ তাঁর কাছে তালিম পেয়েছেন।
পুত্রদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানের নমুনা দেওয়া হল। [
৫ ]
১৯৭৮ সালে লন্ডনে সঙ্গীত
পরিবেশনকালীন সলামত আলির স্ট্রোক হয় যাতে তাঁর বাকশক্তি ব্যাহত
হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে গান ছেড়ে দিতেই বলেছিলেন। অদম্য সাহস ও পরিশ্রমে
সলামত সঙ্গীত জীবনে ফিরে আসেন, তবে প্রকৃতির শাসনেই আগের দুর্লভ
দক্ষতা আর ফিরে আসে নি। শেষ জীবনে ডায়াবেটিস ও তজ্জনিত হার্টের
অসুখে তিনি ভুগেছেন এবং ১৯৯৮ সালে শেষ পর্যন্ত সঙ্গীত পরিবেশনে
ইতি টানেন। অবশেষে ২০০১ সালের ২১- শে জুলাই এই পৃথিবী থেকে বিদায়
নিলেন। তাঁর আগে বহু শিল্পী এবং পরেও বহু শিল্পী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত
জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন কিন্তু সলামত আলি খানের মত এমন নাড়া দিতে
খুব কম জনেই পেরেছেন। সঙ্গীতে অপরিসীম অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে
পাকিস্তান সরকার President's Pride of Performance Award প্রদানে
সলামত আলিকে সম্মানিত করেন।
রাগের আলাপ- বিস্তার- তান-
সরগম সব বিভাগেই তাঁর অবিশ্বাস্য দক্ষতা ছিল। নিজে কয়েকটি রাগ
সৃষ্টি করেছেন যাদের মধ্যে আছে মধুকোষ, সামবতী, নন্দেশ্বরী, যোগ
কানাড়া, রূপবতী কল্যাণ, মিলন গান্ধার [
৬ ] প্রভৃতি রাগ।
মানুষ হিসেব তিনি ছিলেন অত্যন্ত
নরম ও সহৃদয়। তামাক বা সুরা-- এ সবের নেশা তাঁর ছিল না; তবে পানাসক্ত
(শিবরাম চক্রবর্তীর ভাষায়), অর্থাৎ পান খেতে তিনি খুব ভালোবাসতেন।
শিল্পী হিসেবে তিনি মনে করতেন শিল্পীর কাজ শ্রোতাদের মনকে রঞ্জিত
করা (বস্তুত রঞ্জন করে বলেই রাগ সৃষ্ট); তাৎক্ষণিক অলঙ্কার সৃজনে
তিনি ছিলেন অতুলনীয়। এর মধ্যে কোন চমক দেবার স্পৃহা ছিল না-- পাখীর
স্বচ্ছন্দে উঁচু আকাশে চলে যাওয়া আবার দ্রুত নেমে আসা-- এর মধ্যে
কি চমক থাকে। সমকালীন শিল্পীদের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ছিল।
এ দেশে এলে, বিশেষ করে মুম্বাই সহরে তিনি লতা মঙ্গেশকরের অতিথি
হিসেবে ঘরোয়া অনুষ্ঠান করেছেন। শ্রোতাদের প্রতি ছিল তাঁর অসীম
শ্রদ্ধা। যারা তাঁর গান শুনতে আসতেন তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন-
'যো শুনেঙ্গে উও বহুত উঁচে লোগ হোঙ্গে'; আর যারা শুনতে আসেন নি,
তারা-- 'উনকো ভি আল্লাহ্ সলামত রাখে যো নহি আতে'। আর তাঁর সম্বন্ধে
রসজ্ঞ শ্রোতা কি বলেছেন- রেডিও পাকিস্তানের হামীদ নাসীমের মুখেই
শোনা যাক- 'তানসেন ইসি তরা গাতা হোগা'। সলামত আলি চলে গেছেন, সঙ্গীতজগতে
তাঁর স্থানটি চিরকালের করে গেছেন যেটি হয়তো চিরকালই খালি থাকবে।
গঙ্গাজলে গঙ্গা পূজা করার মত তাঁর স্মৃতিতে নিবেদন করি তাঁরই গাওয়া
একটি খেয়াল যা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর চলচ্চিত্রতে ছিল। [
৭ ]
পুষ্পেন্দু
সুন্দর মুখোপাধ্যায়
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
Copyright
© 2011 Abasar.net. All rights reserved.