আমার
স্বাস্থ্য, আমার সত্তা (সূচী)
২০০৯
সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের অনুদানে শমীতা দাশ দাশগুপ্তের
সম্পাদনায় আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা বইটি
প্রকাশিত হয়। ১৫০০ কপি ছাপা হয়েছিল বিভিন্ন এনজিও-র
মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণের জন্যে, এখন এটি দুষ্প্রাপ্য।
বইটির উৎস ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত
মেয়েদের স্বাস্থ্য ও যৌনতা নিয়ে প্রামাণ্য বই আওয়ার
বডিজ, আওয়ার সেলভস (OBOS)। বইটিতে অবসর-এ প্রকাশিত কিছু
কিছু লেখাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অবসর-এ বইটি প্রকাশ
করার অনুমতি আমরা পেয়েছি। এই সংখ্যায় মেয়েদের যৌন স্বাস্থ্য
বিষয়ক অলোচনার একাংশ প্রকাশিত হল।
[মেয়েদের জীবনের
কথা, তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা বলতে গেলে
পরিবার তথা সমাজে তাদের সঠিক অবস্থান কোথায় তা বোঝা
দরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিত
থেকে উঠে আসে মেয়েদের অধিকারের কথা, যে অধিকার মানুষকে
মানুষের মত বাঁচতে শেখায়। সেই অধিকার মেয়েদের নিজেদের
লড়ে নিতে হবে। প্রাচীন ভারতে মেয়েদের নিজস্ব সত্তা ছিল
না। মেয়েদের মতামত জানানোর পরিধি ছিল সীমিত, তার বাইরে
তাদের কণ্ঠস্বর থাকতো অশ্রুত, উপেক্ষিত। মেয়েদের ব্যক্তিত্ব
প্রকাশের অধিকার সমাজে মর্যাদা পেত না। নিজেদের ইচ্ছেয়
বিয়ে করা, সঙ্গী পছন্দ করা তাদের পক্ষে ছিল অনৈতিক,
অন্যায়। মেয়েরা ছিল অন্যের সম্পত্তি। বিয়ের পর মালিকানা
বদলাত বাপের বাড়ী থেকে শ্বশুর বাড়ী। তারা ছিল যৌন যন্ত্র,
পুত্রার্থে...। নিজের ইচ্ছের মূল্য তাদের দিতে হত 'চরিত্রহীনা',
'কুলত্যাগিনী' বিশেষণে ভূষিত হয়ে। পারিবারিক নির্যাতনের
শিকার হলে সমাজ তাদের ঘৃণার চোখে দেখত, এমনকি নিজের
পরিবার কোন দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করত। এখনও সেই ঐতিহ্য
অনেকটাই বজায় আছে। এখন মেয়েদের শুভার্থে কিছু আইন হয়েছে
- মেয়েদেরই লড়াইয়ের ফসল। সমাজের কিছু অংশের মহিলারা
অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা স্বাধীনও হয়েছেন। তবুও মেয়েদের
নিজস্ব ইচ্ছে এখনও স্তিমিত রাখতে হয়। এখনও নিজেদের শরীর
ও যৌনতা অস্বীকার করে তাদের 'ভাল মেয়ে' হতে হয়। মেয়েদের
শিক্ষা, কর্মজীবন, স্বাস্থ্য এখনও পরিবারে ও সমাজে গৌণ
হয়েই আছে। মেয়েদের মূল্য তাদের রূপে, এবং প্রচলিত সৌন্দর্যের
মাপকাঠিতে তার পরিমাপ। আমার স্বাস্থ্য, আমার সত্তা মেয়েদের
শরীর, যৌনতা, সুস্থ জীবনের তথ্য তাদের হাতে পৌঁছে দেবে।
বইটিতে মানসিক, শারীরিক সুস্থতা, ও সার্বিকভাবে প্রতিজন
মেয়ের নিজেকে একজন সুস্থ নারী হিসেবে তৈরী করার প্রয়াস
রইল।...]
মেয়েদের
যৌন স্বাস্থ্য
যৌনাঙ্গের
গঠনতন্ত্র, প্রজনন, ও মাসিক ঋতুচক্র
যৌনাঙ্গের গঠনতন্ত্র,
প্রজনন, ও মাসিক ঋতুচক্র নারী শরীরের বাইরের ও ভেতরের
যৌনাঙ্গগুলির গঠন সম্পর্কে মহিলাদের অনেকেরই ধারণা তেমন
পরিষ্কার নয়। এই অধ্যায়ের প্রথম অংশে প্রত্যঙ্গগুলির
নাম, সেগুলি শরীরের কোথায় অবস্থিত, সেগুলির কাজ কি,
এ সব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যৌনাঙ্গগুলি একে অপরের
থেকে কিভাবে আলাদা, সেগুলি একসাথে কিভাবে কাজ করে, এবং
সেগুলির স্বাভাবিক অবস্থা কি - এই সমস্ত বিষয়েও ছোট
করে আলোচনা করা হয়েছে। অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশে মাসিক
ঋতুচক্র এবং গর্ভাধান সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
এই অংশে মাসিক ঋতুচক্র কিভাবে চলে এবং তার সংশ্লিষ্ট
বাস্তব বিষয়গুলি, যেমন ঋতুকালে ব্যবহৃত উপকরণ, ঋতুচক্রের
সমান্তরাল শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, এবং স্বতঃপ্রণোদিত
ভাবে ঋতুচক্র থামিয়ে দেওয়া বাবদে চলতি বিতর্ক বিষয়ে
তথ্যসমৃদ্ধ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নিজের
শরীর চেনা
নিজের শরীরকে চেনার
এক উপায় হল আয়নায় তা ভালভাবে দেখা। একটা টর্চ আর হাত-আয়না
নিয়ে নিভৃতে বসুন। একটু সময় যেন আপনার হাতে থাকে। যেমন
করে আপনার সুবিধে তেমন করে নিজের জননেন্দ্রিয় আয়নায়
দেখুন। এই পুস্তিকায় যে সমস্ত প্রত্যঙ্গের ব্যাখ্যা
করা হয়েছে তা আগে থেকে ভাল করে পড়ে নিন। লজ্জা পাবেন
না। এ আপনার শরীর। একে ভালভাবে চিনতে বা বুঝতে না পারলে
অসুখ বিসুখ হলে জানতে পারবেন না আর নিজেকে রক্ষাও করতে
পারবেন না।
নিজের শরীর সম্পর্কে
সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। নীচে মেয়েদের যৌনাঙ্গ
এবং জননাঙ্গ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানা
আমাদের ক্ষমতায়নের নিরিখে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। নিজের
শরীরকে জানতে পারলে তবেই আমরা তার সুরক্ষার সুযোগ পাব,
তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। এই আলোচনা আমরা ছয়ভাগে
ভাগ করেছি:
১) প্রবেশ এবং
নির্গমনের পথ - যোনিদ্বার, মূত্রদ্বার, এবং পায়ু;
২) শরীরের বাইরের প্রত্যঙ্গগুলি যা আমরা চোখে দেখতে
পাই - যোনিপ্রদেশ (ভালভা), যৌনকেশ (প্যুবিক হেয়ার),
বৃহৎ ভগোষ্ঠ (লেবিয়া মেজরা), ক্ষুদ্র ভগোষ্ঠ (লেবিয়া
মাইনরা), কামাদ্রি (মন্স), যৌনাঙ্গের হাড় (প্যুবিক সিমফিসিস),
বিটপ বা যোনি এবং পায়ুর মধ্যবর্তী অংশ (পেরিনিয়াম),
এবং যোনিরন্ধ্র (ভেস্টিব্যুল );
৩) যোনি এবং তার আশেপাশের প্রত্যঙ্গগুলি - যোনি, সতীচ্ছদ
(হাইমেন), মূত্রদ্বার নিকটস্থ নরম অংশ (ইউরিথ্রাল স্পঞ্জ),
যোনিপ্রণালী (ফরনিক্স), জরায়ুগ্রীবা (সার্ভিক্স), এবং
বস্তি-গহবরের তলদেশের পেশী (প্যুবোকোস্যজিয়স);
৪) যৌনতৃপ্তির সন্ধানে - ভগ্নাঙ্কুর (ক্লিটোরিস) ও তার
বিভিন্ন অংশগুলি (যেমন হুড, গ্লান্স, শ্যাফট, ইত্যাদি),
শক্ত ও সূক্ষ্ম তন্তুময় বন্ধনী (সাসপেন্সারি লিগামেণ্ট),
যোনিরন্ধ্রের উপরিস্থিত নরম অংশ (বাল্ব), যোনিরন্ধ্রের
গ্রন্থি (ভেস্টিব্যুলার বা বার্থোলিন গ্ল্যাণ্ডস), ক্রুরা,
ইত্যাদি;
৫) যৌনাঙ্গের ভেতরের অংশগুলি - জরায়ু (ইউটেরাস), ডিম্বাণুবাহী
নল (ফ্যালোপিয়ান টিউব), এবং স্ত্রী-গ্রন্থি বা ডিম্বাশয়
(ওভারি), ইত্যাদি;
৬) স্তন এবং তার গঠনতন্ত্র - স্তন-বৃন্ত (নিপল) ও তার
চারপাশের গোলাকার চর্মাবরণ (অরিওলা), চর্মাবরণের উপরিস্থিত
তৈল উত্পাদক গ্রন্থিগুলি (সেবেশাস গ্ল্যাণ্ড), মেদ বা
চর্বি (ফ্যাট); সংযোগকারী তন্তু (কানেক্টিভ টিস্যু ),
এবং স্তনদুগ্ধ-উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলি (ম্যামারি গ্ল্যাণ্ড),
ইত্যাদি।
(১)
প্রবেশ এবং নির্গমনের পথ
(২) বাইরের প্রত্যঙ্গ
(৩)
যোনি ও আশেপাশের প্রত্যঙ্গ
(৪)
যৌনতৃপ্তির সন্ধানে
পরের পাতা
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)